Archive for the ‘ মাথায় কত প্রশ্ন আসে! ’ Category

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন: গাছেরাও কি যাচ্ছে ধর্মঘটে?

জীবাশ্ম জ্বালানি আহরণের তাগিদে পরিবেশের প্রতি অবিচারই করে ফেলেছে মানব সভ্যতা। কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেনের মতো গ্রীনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ উত্তপ্ত করে ফেলেছে পৃথিবীর পরিবেশ। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে গাছ। শুষে নিচ্ছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতির চরম বন্ধু গাছও যেন নিয়েছে বিরুপ অবস্থান। ফলে বিজ্ঞানীরা প্রশ্ন তুলছেন যে: গাছেরাও কী যাচ্ছে ধর্মঘটে?

trees

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে বিগত কয়েক দশক ধরেই মধ্য ইউরোপে বসন্ত শুরু হচ্ছে আগেভাগেই। সেখানকার গাছগুলোও এতদিন সাড়া দিয়ে এসেছে প্রকৃতির এই পরিবর্তনে। আগে-ভাগেই ফোটাতে শুরু করেছে বসন্তের নতুন পাতা। ফলে কার্বন ডান অক্সাইড শুষে নেওয়ার কাজটাও তারা করেছে অনেক লম্বা সময় ধরে। এতদিন ব্যাপারটি বেশ ইতিবাচকভাবেই উপস্থাপিত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষক আলোচনাগুলোতে। কিন্তু বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ন্যাচারে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা লিখেছেন যে, গাছগুলো আগেভাগেই বসন্তের পাতা ফোটানোর হার কমিয়ে দিয়েছে। এ থেকে তাঁরা আশঙ্কা করছেন যে, এক সময় হয়তো তা পুরোপুরি বন্ধই হয়ে যেতে পারে। বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওনগোশুয়ো ফু বলেছেন, ‘আগাম বসন্তের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গাছগুলোর ধীর হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি ইঙ্গিত করে যে ভবিষ্যতে তারা আর বেশি কার্বন শুষে নিতে পারবে না। কারণ গাছগুলোর তাপমাত্রা সংবেদশীলতা কমে যাচ্ছে।’

গবেষণাটি পরিচালনার জন্য বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল বেছে নিয়েছিলেন ১২৪৫টি স্থানের খুব পরিচিত গাছগুলোকে। তাঁরা গবেষণা চালিয়েছেন ডেনমার্ক থেকে বসনিয়া পর্যন্ত মধ্য ইউরোপের অনেকগুলো স্থানে। গবেষণাটিতে তাঁরা ভাগ করেছেন দুইটি পর্যায়ে। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৪ সাল ও ১৯৯৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়কে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে গত তিন দশক ধরে গাছগুলো অগ্রিম বসন্তকে স্বাগত জানিয়ে আগেভাগেই নতুন পাতার জন্ম দিয়েছে। গড়ে প্রায় ১৩ দিন আগেভাগে শুরু হয়েছে নতুন পাতা আগমনের প্রক্রিয়া।

কিন্তু দুইটা সময়ের পর্যায়কে আলাদাভাবে বিবেচনায় নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। ১৯৯৯ থেকে ২০১৩ সাল সময় পর্যন্ত নতুন পাতা জন্মানোর হার কমে গেছে ৪০ শতাংশ হারে। ওনগোশুয়ো বলেছেন, ‘আমরা দেখেছি যে গত তিন দশকে আগাম বসন্তের প্রতি গাছদের সংবেদনশীলতা কমে গেছে। আর শীতের সময় আবহাওয়া আরও উষ্ণ থাকলে এটা আরও কমে যেতে পারে।’

শিল্পবিপ্লবের পর থেকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সেটা কোনোভাবেই যেন দুই ডিগ্রী সেলসিয়াসে না পৌঁছায়, সেজন্য তৎপরতা চালাচ্ছে জাতিসংঘ। বিজ্ঞানীদের ধারণা মধ্য ইউরোপের গাছগুলো চরম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকেই নিজেদের রক্ষা করতে চাচ্ছে।

শিশুদের চলচ্চিত্রে শিশুরা কোথায়?

একটা সময় রুপালী পর্দায় শিশুরা, তাদেরই মতো দুষ্টু-সাহসী শিশুদের দেখে মজা পেত। কিন্তু এখনকার নির্মাতারা শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র বানাচ্ছেন শিশু চরিত্র বাদ দিয়েই। এমনকি কার্টুন-অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও। কেন এমনটা হচ্ছে, তা তথ্যসহ উপস্থাপন করেছেন কলিন হরগ্যান, নিজের ব্লগে। আর ব্লগের বরাত দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই বিশ্লেষণটি ছাপিয়েছে দ্য গার্ডিয়ানের অনলাইন সংস্করণ।

CLf1nUkXAAAuKFO

বিশালাকৃতির এক মিনিয়ন-বেলুন আটকে দিয়েছিল আয়ারল্যান্ডের মহাসড়কের যান চলাচল। সেটা কিন্তু একা একা ঐ সড়কে যায়নি। প্রচারণার জন্য খরচের কথাটা ভাবুন একবার! শিশুদের চলচ্চিত্র বা যেসব চলচ্চিত্র শিশুকিশোরদের লক্ষ্য করে নির্মিত হয়েছে, সেহুলো কখনোই এত বড় আকারে, প্রচুর অর্থ লগ্নি করে বানানো হয়নি। তারপরও অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রগুলো ভালোই দাপট দেখাচ্ছে বক্স অফিসে। ইউনিভার্সাল ও প্যারেন্টাল গাইডেন্স তকমা লাগানো সর্বকালের শীর্ষ ২০টি চলচ্চিত্রের দশটিই কিন্তু অ্যানিমেটেড ঘরানার। শীর্ষ দলের মধ্যে অ্যানিমেশন নিয়েছে ছয়টি স্থান। বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট (১৯৯৪) ছাড়া সব চলচ্চিত্রই প্রকাশ পেয়েছে এই শতাব্দী শুরুর পর।

সব ধরণের প্রাযুক্তিক উৎকর্ষ, ব্যবসা-বাণিজ্যের হিসেব ইত্যাদির বাইরে শিশুদের নিয়ে আধুনিক চলচ্চিত্রের অন্যতম লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, সেই চলচ্চিত্রগুলোতে খোদ শিশুদের উপস্থিতি খুবই কম। ১৯৮০ সাল থেকে শিশুদের জন্য যত চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলো দেখলে আমরা এই সত্যই দেখতে পাবো।

1

টেলিভিশনের জন্য নির্মিত, সরাসরি ডিভিডি আকারে প্রকাশিত ও অল্প কিছু বিদেশি চলচ্চিত্র বাদ দিয়ে আমরা পেয়েছি ৭৪৫টি চলচ্চিত্রের তালিকা। এটা নিশ্চিত যে শিশুদের জন্য নির্মিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা বেড়েছে। তালিকা অনুযায়ী দেখা যায়, ১৯৮০-এর দশকে নির্মিত হয়েছে ১০৬টি চলচ্চিত্র। ১৯৯০-এর দশকে ২২৪টি। নতুন শতাব্দীর প্রথম দশকে সংখ্যাটা আরও বেড়েছে- ২৬১টি। আর ২০১৫ সাল শেষ হতে হতে সংখ্যাটা ৩০০ ছাড়িয়ে যাবে। গত পাঁচ বছরে নির্মিত হয়েছে ১৫৪টি শিশুদের চলচ্চিত্র।

কিন্তু এত এত চলচ্চিত্রের মধ্যে শিশুরা কোথায়? প্রতি দশকে শিশুদের জন্য নির্মিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা বেড়ে চললেও একই ঘটনা যে চলচ্চিত্রে শিশুর উপস্থিতির ক্ষেত্রে ঘটেছে তা বলা যায় না। শিশুদের খুব বেশি দেখা যায়নি চলচ্চিত্রের মূল কোনো চরিত্রে। বা যেখানে শিশুরাই চলচ্চিত্রের ধারাবর্ণনা করছে। সাল ধরে ধরে জিনিসটা এভাবে হয়েছে:

2

চলচ্চিত্রের মূল চরিত্র থেকে শিশুর হারিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে, শিশুদের নিয়ে লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্রের সংখ্যা কমে যাওয়া। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝিতে (হয়ত এটাই শিশু চলচ্চিত্রের স্বর্ণালী সময়, যখন শিশুদের লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্র অনেক বেশি পরিমাণে বানানো হতো, তখন সেখানে শিশুদেরই প্রধান চরিত্র হিসেবে দেখা যেতো।

পরে লাইভ-অ্যাকশন শিশু চলচ্চিত্রে শিশুদেরকেই মূল চরিত্র হিসেবে দেখতে না পাওয়ার বিষয়টি আরও সংশয়পূর্ণ হয়ে ওঠে আরও দুইটা জিনিস বিবেচনা করলে। লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্র বানাতে খরচ কম হয় (টয় স্টোরি ৩ বানাতে খরচ হয়েছে ২০০মিলিয়ন ডলার। যেখানে হোম অ্যালোন বানাতে লেগেছে মাত্র ১৮ মিলিয়ন ডলার)। আর শিশু অভিনেতারা শুধু সর্বত্রই আছে এমন না, বরং তারা আগের চেয়ে আরও ভালো করছে।

3

কিন্তু এটা দিয়ে কী বোঝা যায়? শিশুরা চলচ্চিত্রে একটা সত্যিকারের শিশুকে দেখছে নাকি অ্যানিমেশন চরিত্র; তা কি কোনো পার্থক্য গড়ে দেয়? চলচ্চিত্রের পর্দায় শিশুরা অন্য শিশুদের কতখানি দেখতে চায়? চলচ্চিত্রের বার্তা বা নৈতিকতার শিক্ষা কী দুই আঙ্গিকেকই নেওয়া যায়?

এই প্রশ্নগুলো নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি বলেই প্রতিয়মান হয়। কিন্তু এটা ভেবে আমাদের মনে তো প্রশ্ন আসতেই পারে যে, চলচ্চিত্রের পর্দায় অ্যানিমেশন চরিত্র দেখতে দেখতে শিশুরা কি অন্য কোনো বাস্তব শিশুর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে অনিচ্ছুক হয়ে পড়বে?

১৯৮৫ সালের চলচ্চিত্র ‘দ্য গুনিজ’-এর মতো চলচ্চিত্রগুলো কমে যাচ্ছে কেন, এমন আলোচনা করতে গিয়ে একজন লিখেছেন, ‘গুনিজের মতো চলচ্চিত্র… এখন আর সম্ভব না। কারণ এ ধরনের চলচ্চিত্র নির্মানের জন্য শিশুদের জগতে অনুসন্ধান চালাতে হয়। যা বড়দের দুনিয়া থেকে অনেকটাই আলাদা। আর শিশুদের সেরকম জগতের এখন আর অস্তিত্বই নাই।’ তারা উপসংহারে এসেছিলেন যে, গুনিজের মতো চলচ্চিত্র শুধু স্বাধীনতাকেই উৎসাহিত করে না বরং স্বাধীন চিন্তাভাবনারও বিকাশ ঘটায়।

goonies

কিন্তু, এখনকার সময়ে শিশুদের জগতে অনুসন্ধান চালানোর ব্যাপার খুব বেশি ঘটে না। শিশুদের এমন একটা জগত আছে, যেটা বড়দের থেকে আলাদা। আর সেই জগত উপলব্ধি করার জায়গাও আছে। পার্থক্যটা হচ্ছে এই যে, আমরা সেই পার্থক্যটা এখন খুঁজতে যাই ফোন বা ট্যাব দিয়ে। যে কল্পিত জায়গায় কল্পনার কোনো স্থান আদৌ নেই। চলচ্চিত্র যেখানে একসময় শিশুদের চিন্তাভাবনার জগতে ঢুকতে চাইত, এখন সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে অবাস্তব কম্পিউটার স্টিমুলেশন। যেখানে শিশুদের উপস্থিতি খুব কমই দেখা যায়।

এখন সান্তনা এটাই যে, এসব চলচ্চিত্র বানিয়ে তাদের বিপণন বিভাগ অন্তত বড় বড় বেলুন বিক্রি করতে পারছে!

সুর কেন মানুষকে টানে

ফাহমিদা উর্ণি

তানসেনের কথা কে না জানি আমরা। গান গেয়ে তিনি নাকি বৃষ্টি নামাতেন। আর সুরের টানে পথে নামা কিংবা বৈরাগ্যসাধন; সেও আমাদের প্রাচ্যভূমির এক চেনাজানা ঐতিহ্য। সুরের মধ্য দিয়ে পরওয়ারদিগারের সঙ্গে নিজের সম্পর্কসূত্র আবিস্কারের চেষ্টা করেছেন ছেউড়িয়ার লালন ফকির। আমরা যারা সাধারণ তাদের ক্ষেত্রেও একই বাস্তবতা। আজন্ম-আমৃত্যু সুরের মূর্চ্ছনায় তাড়িত হয় মানুষ। সিক্ত হয়, আন্দোলিত হয়, বেদনার্ত হয়, আপ্লুত হয়। সঙ্গীত মানুষকে যেভাবে আকর্ষণ করে অন্য কোন স্বর-শব্দই তা পারে না। কিন্তু কেন? দীর্ঘদিন ধরে এর উত্তর খুঁজে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। নানা গবেষণার পর অবশেষে কিছু কারণ শনাক্ত করতে পেরেছেন তারা।

img_6829

মানুষের মস্তিষ্কে সঙ্গীতের প্রভাব কী; তা নিয়ে গবেষণা করছেন এমন একজন স্নায়ুবিজ্ঞানী ভ্যালোরি সালিমপুর। তাঁর মতে, সঙ্গীত মানুষের মস্তিষ্কের আবেগের এলাকার গভীরে উন্মাদনা তৈরি করে। তবে ভ্যালোরির দাবি; বিচ্ছিন্ন স্বর-শব্দের চেয়ে একত্রিত এবং গোছালো ধরনের স্বর-শব্দ অনেক বেশি কার্যকরী আর শক্তিশালী। ফাংশনাল এমআরআই প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ভ্যালোরি আর তার সহযোগীরা যেতে চাইলেন আরও গভীরে। খুঁজে পেলেন কিছু চমৎকৃত হবার মতো উত্তর।

সঙ্গীতের প্রতি মানুষের টান যৌনতার মতোই জৈবিক
ফাংশনাল এমআরআই মেশিনের মাধ্যমে একদল লোকের মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ড রেকর্ড করেন ভ্যালোরি এবং তার সহকর্মীরা। যাদের মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ড রেকর্ড করা হয় তারা সেসময় তাদের পছন্দের গান শুনছিলেন। দেখা যায়, গানের চূড়ান্ত আবেগঘন মুহূর্তগুলোতে শ্রোতার মস্তিষ্কের নিউক্লিয়াস একামেবনস্-এর মধ্যে আনন্দ উদ্রেককারী হরমোন ডোপামিন সচল হয়ে ওঠে। ভ্যালোরির মতে, ডোপামিনের এ ধরনের সচলতা খুবই বড় ব্যাপার। কারণ খাবার গ্রহণ কিংবা যৌনতার মত জৈবিকভাবে আনন্দ লাভের সময়গুলোতেই ডোপামিনের সচলতা বেড়ে যায়। এমনকি কোকেনের মত খুব আসক্তি তৈরিকারী মাদক গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেও ডোপামিন সচল হয়।

মানুষের মস্তিষ্কে আরেকটি অংশ আছে যা চূড়ান্ত আবেগঘন মুহূর্তেও আগের সময়টুকুতে ডোপামিনকে বয়ে নিয়ে যায়। মূলত আনন্দ লাভের জন্য প্রতীক্ষাজনিত অনুভূতি তৈরির কাজ করে এ নিউক্লিয়াস। অর্থাৎ যে পরিচিত গানটি আমরা শুনছি তার কোন অংশ আমাদের মধ্যে আবেগ তৈরি করবে তা আমরা আগে থেকেই জানি এবং সে অংশের জন্য অপেক্ষা করি। আর এ প্রতীক্ষা এবং আনন্দলাভ এ দুটির দারুণ সম্মিলনই বলে দেয়, মানুষ জৈবিকভাবেই নিজের পছন্দের গান শুনতে চায়।

সুরের আবেদন সার্বজনীন, ব্যাকরণ বিশ্বজনীন

পরবর্তী ধাপে শ্রোতাদের অপরিচিত গান শুনতে দেন ভ্যালোরি আর তার সহযোগীরা। আর এর মধ্যে যে গানটি ভালো লাগবে সে গানটি কেনার জন্য শ্রোতাদের টাকাও দেয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে গান শোনার সময় শ্রোতাদের নিউক্লিয়াস একামবেনস আর কর্টিক্যাল স্ট্রাকচারের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া বেড়ে যায়। মূলত কোন কিছু শনাক্তকরণ, নির্দিষ্ট সুরটি মনে রাখা এবং আবেগগত প্রক্রিয়ার কাজে নিয়োজিত থাকে কর্টিক্যাল স্ট্রাকচার। আর এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, মানুষ যখন অপরিচিত গান শোনে তখন মেমোরি সার্কিটের মাধ্যমে মস্তিষ্ক ওই সুরকে শনাক্ত করার চেষ্টা করে। গানটি কোন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাও অনুমান করতে চায় মস্তিষ্ক। গানটি একেবারেই ভীনদেশের কিংবা অবোধগম্য হলেও, ওই সুরের মধ্যে পরিচিত কোন উপকরণ অর্থাৎ পরিচিত কোন বিট বা মেলোডি থাকলে মানুষ সেই গান বা সুরের আবেশি মুহূর্ত সহজেই শনাক্ত করতে পারে এবং তা উপভোগও করে থাকে।

মানুষ কেন একই গান বার বার শোনে?

বিজ্ঞানীদের মতে সুরের পছন্দের অংশটির ব্যাপারে মানুষের মধ্যে যে আবেগজনিত তাড়না তৈরি হয় তা অনেক বছর পর্যন্ত থেকে যায়। আর তাই একই গান বার বার উন্মাদনা তৈরি করতে পারে মানুষের মস্তিষ্কে। অনেক বছর পরও সঙ্গীতস্মৃতি শুধুই আবেগ অনুভূত হওয়ার ব্যাপার।

সঙ্গীত কিভাবে স্নায়ুকে সুসংগত করে?

কানেকটিকাট ইউনিভার্সিটির সঙ্গীতবিষয়ক মনস্তাত্ত্বিক এড লার্জ এর মতে, ছন্দের ঊর্ধ্বগামীতা কিংবা নিম্নগামীতা কিংবা শান্ত অথবা জোরালো শব্দভেদে মানুষের মস্তিষ্কে আলাদা আলাদা অনুভূতি তৈরি হয়। লার্জ বলেন, মেলোডি একই থাকার পরও গান যখন তার বৈচিত্র্য হারিয়ে ফেলে তখন ওই গানের প্রতি আবেগ হারিয়ে ফেলেন শ্রোতা। তাঁর মতে, এক্ষেত্রে কাজ করে মিরর নিউরন। মানুষ বাইরে যা দেখে তা নিজের ভেতরে উপলব্ধি করতে সহায়তা করে ওই নিউরন।

একই গানে সবার আনন্দ একই রকমের হয় না কেন?

একই গান সবার মধ্যে একই প্রতিক্রিয়া তৈরী করে না কেন; সে প্রশ্নেরও উত্তর দিয়েছেন লার্জ। তিনি জানান, যে গানটি শোনা হচ্ছে তাতে শ্রোতার মস্তিষ্কে নিউরনগুলো কতটা যুক্ত, সেই শ্রোতার গান শোনা ও পরিবেশনের ব্যক্তিগত ইতিহাস কী; তার উপরই ওই গান নিয়ে শ্রোতার প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়। তাই ব্যক্তিভেদে প্রতিক্রিয়ার পার্থক্য হয়। লার্জের মতে, ছন্দ হলো অনুমানের ব্যাপার। একেবারে শৈশব থেকেই মানুষ নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশে ছন্দের দ্বারা তাড়িত হয়। আর গান শোনার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ অতীতের যে স্মৃতি ও আবেগ দ্বারা তাড়িত হয় তা একেক মানুষের ক্ষেত্রে একেক রকমের হতে পারে বলেও দাবি করেন তিনি। পছন্দের বিষয়টি একেবারেই মানসিক উল্লেখ করে লার্জ বলেন, অনেকসময় সামাজিক প্রেক্ষাপটও এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। সূত্র: ডেইলি গুডস

প্রাসঙ্গিক: কেন কিছু গান মনে গেঁথে যায়

‘সে-ও কি কোথাও বসে ছবি আঁকে?’

কয়েকদিন আগে সংসদ ভবনের সামনে বসে অনেক রাজা-উজির মারছিলাম আমি আর বন্ধু সুমন। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের তর্কে ঢেউ তুলছিলাম মানিক মিয়া অ্যাভেনিউয়ের প্রশস্ত সড়কটাতে। গল্পে-কথায় উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দিচ্ছিলাম দেশের সমাজ-রাজনীতি। হঠাৎ করে দেখলাম এক কেতাদুরস্ত মধ্যবয়সী দম্পতি তাদের দুই সন্তান নিয়ে সিএনজি বা ট্যাক্সি ধরার নিমিত্তে সামনে এসে দাঁড়ালেন।

সুমন তার পরিস্কার প্যান্টটা বাঁচানোর জন্য পশ্চাৎদেশের নিচে একপাটি স্যান্ডেল নিয়েছে। (কেতাদুরস্ত হওয়ার জন্য না, কাপড় কাচার ভয়ে) আরেক পা খোলা… রাস্তায়। আমার দুই পায়েরই স্যান্ডেল খোলা। দুই বন্ধু খালি পায়ে সড়ক দাপিয়ে বসে আছি।
কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, আমাদের সামনে দাঁড়ানো সেই চার প্রানী ধীক্কার-তিরস্কার আর সন্ধিৎসু জিজ্ঞাসা নিয়ে আমাদের দিকে একটু পর পর তাকাচ্ছে। তারা কদাকিঞ্চিৎ এমন করেন কিনা, সন্দেহ আছে। বাচ্চাগুলো হয়তো ভাবতেও পারে না যে এভাবে খালি পায়ে রাস্তায় বসেও থাকা যায়।

একই সময় আমাদের ঠিক বামপাশেই চায়ের দোকানের কোনা থেকে বোতল-কাগজ টোকাচ্ছে ঐ দম্পত্তির বড় কন্যার বয়সী একটি ছেলে। এই ছেলের কথা হয়তো ঐ মেয়েটা জানে না। তারা ‘বসে আঁকে’। ‘আল্পনা-লতাপাতা’ আঁকে। কদাকিঞ্চিত ‘মহেন্দ্র দত্তর ছাতা’ও আঁকে। কিন্তু যে ছেলেটা ‘কাগজ কুড়িয়ে, বস্তায় ভরে’ একা চলে যায় তার খবর মেয়েটির কাছে পৌঁছায় না।

আমাদের সমাজ-রাষ্ট্র মেয়েটিকেও যেমন বঞ্চিত করেছে খালি সড়কে-সবুজ ঘাসে নগ্ন পায়ে হাঁটার আনন্দ থেকে; ঠিক তেমনি নায্য অধিকার দেয়নি একা চলে যাওয়া ছেলেটাকেও।

এই ছেলেটাকেই হয়তো একদিন কোনো বড় রাস্তার মোড়ে লাল রঙের একটা নির্দোষ ফাঁকা কৌটো কুড়াতে দেখে বেদম মার দেবে ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী’। সেই দাগ শরীরে নিয়ে নিজের পেট বাঁচানো আর সস্তা কিছু নেশার তাড়নায় ‘কদাকার’ মুখওয়ালা ছেলেটি হয়তো হাতে তুলে নেবে হাত বা পেট্রোলবোমা। কোনো একদিন যদি সেটা ঐ মেয়েটির দিকেই ধেয়ে যায়? মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে?

কয়েক হাতের দুরত্বে থাকা দুইটি ফুটফুটে শিশু এভাবে একে-অপরের ঘাতক হয়ে অবস্থান করছে প্রতিনিয়ত।
মেয়েটিও হয়তো ভেবেছে কখনো কখনো: ‘সে-ও কি কোথাও বসে ছবি আঁকে???’ কিন্তু সেটা শোনানোর ফুরসত হয়নি… তার আগেই তারা একে-অপরের ঘাতক বনে গেছে…

হুদহুদের নাম “হুদহুদ” কেন?

হুদহুদ। অদ্ভুত! সত্যিই, নামটা একটু অদ্ভুতই বটে! সম্প্রতি যে ঘূর্ণিঝড়টি ভারত-বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার লাখো মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে -এটা তারই নাম। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়টি কিভাবে পেল এই নাম? এর মানেই বা কী? কিভাবে করা হয় এই ঘূর্নিঝড়গুলোর নামকরণ?

Hudhud1

বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ আন্দামান সাগরে সৃষ্টি হয়ে মহা শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে। প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা। ১৭০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। অথচ প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ের নামটি কিন্তু এসেছে ওমান থেকে।
হুদহুদ আসলে একটি পাখির নাম। আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক অঞ্চলেই দেখতে পাওয়া যায় আকর্ষণীয় পালক, ঝুঁটি ও লম্বা ঠোঁটের এই পাখিটিকে। ‘হুপি’ নামের এই পাখিকেই ওমান ভাষায় ডাকা হয় হুদহুদ বলে। এটি ইসরায়েলের জাতীয় পাখিও বটে। ২০০৪ সালে যখন আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণের আহ্বান জানানো হয় তখন অন্য আরও কিছু নামের সঙ্গে এই হুদহুদ নামটাও যোগ করেছিল ওমান।

Hudhud
আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করা হয় ১৯৫৩ সাল থেকে। শুরুটা মিয়ামির জাতীয় হারিকেন সেন্টারে হলেও পরবর্তীতে এই নামকরণ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) তত্ত্বাবধানে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ প্রথা চালু হয়েছে ২০০৪ সাল থেকে। তার আগে এই অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়গুলো যা করার সেটা বেনামেই করত।
ঘূর্ণিঝড়গুলোর গতিপ্রকৃতি বোঝা, কার্যকরীভাবে সতর্কতা জারি, ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্নয় ইত্যাদির জন্য ঘূণিঝড়গুলোর নামকরণ করা উচিৎ বলে শক্ত পদক্ষেপ নেন আবহাওয়াবীদরা। অবশেষে ২০০৪ সালে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণের জন্য একজোট হয় আটটি দেশ। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড। প্রতিটি দেশ প্রস্তাব করে আটটি করে নাম। দেশের নামের আদ্যাক্ষর অনুযায়ী একের পর এক আসে র্ন্বিাচিত নামগুলো।
এ বছরের জুনে আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়, নানাউকের নামকরণ করেছিল মিয়ানমার। এবার এসেছে ওমানের পালা। ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের নামটিও এসেছিল ওমান থেকে। এই অঞ্চলের পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে নিলোফার। এটি এসেছে পাকিস্তান থেকে।
বাংলাদেশের প্রস্তাবকৃত পাঁচটি নাম ইতিমধ্যেই ব্যবহৃত হয়ে গেছে। অনিল (২০০৪), অগ্নি (২০০৬), নিশা (২০০৮), গিরি (২০১০) ও হেলেন (২০১৩)। বাংলাদেশের দেওয়া আরও তিনটি নাম ভবিষ্যতে ব্যবহার হবে। সেগুলো হলো: চপলা, অক্ষি ও ফনি।

Cyclone Names

Cyclone Names2
২০০৪ সাল পর্যন্ত যে এই ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করা যায়নি তার একটা অন্যতম প্রধান কারণ সনাক্ত করতে গিয়ে ভারতের ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা সেন্টারের প্রধান ড. এম মহাপত্র বলেছেন, ‘এই ধরণের বৈচিত্র্যময় একটা সাংস্কৃতিক অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করতে গিয়ে সবাইকে খুবই সতর্ক আর নিরপেক্ষ থাকতে হয়, যেন এটা কারও অনুভূতিতে আঘাত না করে।’
তবে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করার পরেও বিপত্তি যে বাধেনি, তা কিন্তু নয়। ২০১৩ সালের ঘূর্নিঝড় মহাসেনের নামকরণ করেছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এই নামটা নিয়ে প্রবল আপত্তি জানিয়েছিলেন দেশটির অনেক মানুষ। তারা বলেছিলেন যে, মহাসেন ছিলেন একজন শ্রীলঙ্কান রাজা, যিনি সেখানে এনেছিলেন শান্তি ও সমৃদ্ধি। তাঁর নামে এমন একটা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নামকরণ করাটা একেবারেই অনুচিত। পরবর্তীতে শ্রীলঙ্কান কর্তৃপক্ষ ঘূর্ণিঝড়টির নাম বদলে রেখেছিল ভিয়ারু।

কেন কিছু গান মনে গেঁথে যায়

হঠাত্ হঠাত্ কিছু গান আমাদের মাথায় ঘুরতে থাকে। ঘুরেফিরে সেই গানটিই মাথার মধ্যে বারবার বাজতে থাকে। এমন অভিজ্ঞতা হয়তো অনেকেরই আছে। কিন্তু কেন এমন হয়, তা অনেকের কাছেই এক রহস্য। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন, কেন এমন হয়? কেন কিছু গান আমাদের মনে গেঁথে যায়? এখনো এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো গবেষণা পরিচালিত না হলেও উত্তর হিসেবে প্রাথমিক কিছু অনুমান দাঁড় করিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ ব্যাপারটিকে ভিন্ন ভিন্ন নামে আখ্যায়িত করছেন তাঁরা। কারও কারও মতে, মানুষের প্রজাতি হিসেবে বিবর্তনের সঙ্গে এর রয়েছে গভীর সম্পর্ক।

লন্ডনের গোল্ডস্মিথ কলেজের অধ্যাপক ভিকি উইলিয়ামস দুই বছর আগে এ বিষয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন। তিনি দেখেছেন, বিজ্ঞানীরা বিগত সময়ে একে বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করেছেন—‘মনে গেঁথে যাওয়া লক্ষণ’, ‘আঠালো সংগীত’, ‘সৃজনশীল অস্থিরতা’ প্রভৃতি। তবে কিছু গান মাথায় ঘুরতে থাকার বিষয়কে খুব সাধারণভাবে ‘কানপোকা’ বলে অভিহিত করেন অনেকে। এটা আক্ষরিক অর্থে কানের কোনো পোকা নয়। যে গানগুলো বেশির ভাগ মানুষের মনে গেঁথে যায়, সেগুলো বিবেচনা করা হয় ‘কানপোকা’ হিসেবে। সংগীত মনোবিজ্ঞানী উইলিয়ামস এ ধরনের প্রায় ২ হাজার ৫০০টি ‘কানপোকা’ গানের তালিকা করেছিলেন, এগুলোর ধরন বোঝার জন্য। কিন্তু তাতে খুব বেশি কাজ হয়নি।

একই গানের কথা একাধিক ব্যক্তি খুব কমই বলেছে। এ থেকে বোঝা যায়, একেকজনের ক্ষেত্রে একেকটা গান ‘কানপোকা’ হিসেবে কাজ করে। তবে কোন পদ্ধতিতে কিছু গান মানুষের মনে গেঁথে যায়, তার কিছুটা অনুমান দাঁড় করিয়েছেন উইলিয়ামস। তিনি কিছু সাধারণ প্রভাবক শনাক্ত করেছেন।

প্রথমত, উইলিয়ামসের মতে, প্রথম শোনা কোনো একটি গান একজন মানুষের মাথায় গেঁথে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, একই গান অনেকবার শোনা হলে সেটিও ‘কানপোকা’র ভূমিকা নিতে পারে। কিন্তু অনেক সময় দীর্ঘদিন শোনা হয়নি, এমন কোনো গানও আচমকা মাথায় ঘুরতে থাকে। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের অনুমান, হয়তো পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে গানটি মাথায় চলে আসে। উইলিয়ামস বলেছেন, ‘একদিন অফিসে একটা পুরোনো জুতার বাক্সের দিকে আমার নজর পড়ে। জুতার দোকানটির নাম ছিল “ফেইথ’। আর “ফেইথ” শব্দটি দেখেই আমার মাথায় চলে এসেছিল জর্জ মাইকেলের “ফেইথ” শিরোনামের গানটি। তারপর দীর্ঘক্ষণ গানটি আমার মাথায় ছিল।’ সদ্য-প্রকাশিত অনেক গানও কানপোকার ভূমিকা নিতে পারে।

কেন এমন হয়—এ প্রশ্নের উত্তরের সন্ধান দিতে উইলিয়ামস বলেছেন, হয়তো এই মনে গেঁথে যাওয়া গানগুলো মানুষের ‘অজ্ঞাত স্মৃতি’র একটা অংশ। স্মৃতির এ অংশের কারণে হঠাত্ করে আমাদের কোনো বিশেষ খাবার খেতে ইচ্ছে হয় বা বহুদিন না-দেখা কোনো বন্ধুর কথা মনে পড়ে। এ ছাড়া সংগীত মানুষের খুবই ব্যক্তিগত ও আবেগগত বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িত। এটি মানুষের মস্তিষ্কে বেশ কিছু পথে সংকেতবদ্ধ হয়ে থাকে, যার কারণে প্রাসঙ্গিক অনেক স্মৃতির সঙ্গে গানগুলোও জড়িয়ে থাকে।

অন্য গবেষকদের মতে, এ ঘটনার সঙ্গে বিবর্তনের সম্পর্ক আছে। আধুনিক মানুষের আবির্ভাব হয়েছিল প্রায় দুই লাখ বছর আগে। কিন্তু লিখিত ভাষা আবিষ্কৃত হয়েছে মাত্র পাঁচ হাজার বছর হলো। এর আগে দীর্ঘসময় মানুষকে সবকিছু মুখস্থ রাখতে হতো। এই মনে রাখার কাজটা সহজ করার জন্য তারা গান, ছড়া ও সুর ব্যবহার করত। মন্ট্রিলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল লেভিটিন বলেছেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে আমাদের অনেক তথ্য স্মরণ রাখতে হয়েছে—কোন খাদ্য বিষাক্ত, কোনটা বিষাক্ত নয়; কীভাবে প্রাথমিক চিকিত্সার মাধ্যমে ক্ষত সারাতে হয় প্রভৃতি অনেক ধরনের তথ্য।’ শুধু আদিম যুগে নয়, আজকের দিনেও পৃথিবীতে অনেক সংস্কৃতিতে এই শ্রুতিনির্ভর মৌখিক চর্চার চল বিদ্যমান। মানুষের ইতিহাসের অনেকটা সময় ধরে এই ছড়া-গান-ছন্দের মাধ্যমে তথ্য মনে রাখার অভ্যাসের কারণে গানগুলো মাথায় গেঁথে যাওয়ার ব্যাপারটি ঘটে বলে মনে করেন বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীরা। -বিবিসি অনলাইন

প্রাসঙ্গিক: সুর কেন মানুষকে টানে

কেন কিছু মানুষ প্রেমে ভয় পান?

প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে বা প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক নারী/পুরুষই আর কখনই প্রেমের সম্পর্কে না জড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এমন অনেকেও আছেন যারা এরকম কোন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন না হয়েও কখনো প্রেম করতে চাননা। এমনকি কেউ তাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসে, এমনটা জানার পরও তারা নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। মগ্ন থাকেন শুধু নিজের মধ্যেই। এই মানুষগুলো যেন অদৃশ্য একটা প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে এই দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন: ‘আমি প্রেমের জন্য নই’। শুধু কী কারো সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবেন না, এই কারণে? নাকি তারা বিপরীত লিঙ্গের মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হন, কিন্তু ভাবেন যে, ‘তাদেরকে ছাড়াই অনেক ভালো আছি?’ কেন তারা কখনও প্রেম না করার সিদ্ধান্ত নেন বা কোন প্রেম প্রস্তাবে সাড়া প্রদান করেন না? বিস্তারিত পড়ুন

চোখ আপনার সম্পর্কে কী বলে?

যখন আপনি এই লেখাটা পড়ছেন বা অন্য কোন জায়গায় নজর দিচ্ছেন, তখন সাধারণত আপনি আপনার চোখের নড়াচড়াটা খেয়াল করেন না। আপনি যখন এই লেখায় চোখ রাখছেন, আশেপাশের বিজ্ঞাপনগুলোর দিকে তাকাচ্ছেন বা আপনার ঘরের চারপাশে চোখ বুলাচ্ছেন তখন আপনার চোখ প্রতিনিয়ত কিছু সংক্ষিপ্ত বিরতি দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আমাদের এই চোখের নড়াচড়া নিয়ে গবেষণা করেছেন— আমরা কোথায় তাকাই, কতক্ষণ ধরে তাকাই ইত্যাদি। আর এই গবেষণা থেকে তাঁরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করেছেন, কিভাবে আমরা পড়ি, কিভাবে আমরা শিখি— তা নিয়ে। এমনকি এসব গবেষণা থেকে তাঁরা আলোকপাত করেছেন আমরা কেমন ধরণের মানুষ সে সম্পর্কেও। বিস্তারিত পড়ুন

মায়ের মন: গর্ভধারণ কিভাবে মস্তিস্কে বদল ঘটায়?

 

নারীদের কাছে, মাতৃত্ব একটা অনন্য অনুভূতি। দীর্ঘ ১০টা মাস ধরে একটা ভ্রুন ধীরে ধীরে মনুষ্য আদল পায় নারীর গর্ভে। নারীর গর্ভকালীন এই সময়ে মস্তিস্কে কী প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহ অনেকদিন ধরেই ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় এ নিয়ে এখনও কোন স্পষ্ট ধারণা গড়ে ওঠে নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গর্ভকালীন নারীদের হরমোন নিঃসরন; মস্তিস্কে কেমন প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে কিছু গবেষণার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, মায়ের মনের মস্তিস্ক কার্যকলাপ বুঝে ওঠার কাজটা হয়তো দ্রুতই শুরু করা যাবে। বিস্তারিত পড়ুন

গান্ধী উত্তরাধিকারের ভার বইতে পারছেন রাহুল?

ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কংগ্রেস আর গান্ধী পরিবারের নাম। জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী প্রত্যেকেই ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রেখেছেন অবিস্মরণীয় ভূমিকা। তবে গান্ধী পরিবারের সর্বশেষ প্রজন্ম রাহুল গান্ধী এখন সেই গান্ধী উত্তরাধিকারের ভার বইতে পারছেন কি না, তা একটা বড় প্রশ্ন আকারেই হাজির হয়েছে। বিশেষত সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর রাহুলের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হুমকির মুখেই পড়ে গেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। এমনকি উত্তর প্রদেশের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রধান ব্যক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর সেখানেই তাঁর রাজনৈতিক সমাধি রচিত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে। গান্ধী পরিবারের ঐতিহ্য অনুসারে দেশ গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে সফল রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা তো অনেক দূরের কথা, রাহুল গান্ধী এখন সঙ্গে পাচ্ছেন না কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদেরও। রাজনৈতিক অঙ্গনে কীভাবে এ রকম নিঃসঙ্গ হয়ে গেলেন সোনিয়া তনয়? বিস্তারিত পড়ুন

ঋণের বোঝা আমরা কেন নিতে যাব?

শেয়ারবাজারের বিশাল বিশাল ধ্বস, অস্থিরতা ইত্যাদি দেখে আঁঁচ করা যাচ্ছিল যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুব একটা ভালো না। কিন্তু অবস্থা যে খুবই খারাপ, সেটা এতদিন আমাদের অগোচরেই ছিল। ৩০ অক্টোবর প্রথম আলোর একটি খবর থেকে জানা গেল যে, সরকার মহাশয় ‘চরম আর্থিক সংকটে’ রয়েছেন এবং ঘাটতি মেটাতে এবার সার্বভৌম ঋণ বা বন্ড ছেড়ে বিদেশ থেকে টাকা সংগ্রহ করতে চলেছেন। বাংলাদেশের ৪০ বছরের ইতিহাসে এমন বাণিজ্যিক ঋণের নজির আগে কখনো দেখা যায় নি।

সরকার যদি সত্যিই এই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে, তাহলে বিপুল পরিমাণ উচ্চ সুদযুক্ত ঋণের বোঝা এক অর্থে আমাদের অর্থাত্ বাংলাদেশের সমস্ত মানুষের উপরই চাপতে যাচ্ছে। আমাদের কী এই ভার বহন করার মতো বাস্তব পরিস্থিতি আছে? এটা কী আদৌ কোন দীর্ঘমেয়াদী সুফল বয়ে আনবে? অর্থনীতিবীদ, বিশেষজ্ঞরা কিন্তু উত্তরটা না-ই দিচ্ছেন। সরকারের এই নতুন উদ্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁরা বলছেন, ‘এই জাতীয় ঋণের মধ্যে ঢুকলে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে তা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকেই ক্ষতিগ্রস্থ করবে।’ তাহলে আমরা কেন এই ঋণের বোঝা মাথায় নিতে যাব? সরকারের এই পদক্ষেপের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিটা নাগরিকেরই প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে। সেক্ষেত্রে নজিরবিহীন এই বিশাল উদ্যোগটির কথা আমাদেরকে জানানো হলো না কেন? সরকার কারও সঙ্গে কোন ধরণের আলোচনা-মতবিনিময় না করেই এই বিধ্বংসী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আসলে কী ধরণের পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে, সেই প্রশ্নটা এসেই যাচ্ছে। এটা কী ধরণের গণতন্ত্র? কোথায় এখানে সরকারের জবাবদিহিতা-স্বচ্ছতা? এভাবে একদিন দেনার দায়ে লাঞ্ছিত-অপমানিত হলেও আমাদের কিছুই বলার থাকবে না? বসে থাকব আমরা, পাঁচ বছর পর পর মহান ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য?

পত্রিকা সূত্রে জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই একটি বিদেশী ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী ও অর্থসচিবের কাছে এ ঋণ নেওয়ার বিভিন্ন দিক উপস্থাপনও করা হয়েছে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে দিতেও বলেছে। শ্রীলঙ্কার পথ অনুসরণ করে ৬.২৫% সুদ হারে ১০ বছর মেয়াদের ঋণ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে নিতে পারে বাংলাদেশ। ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার ঋণের জন্য বণ্ড ছাড়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর জন্য দেশের আর্থিক অবস্থার সূচকগুলো প্রদর্শন করে বর্হিবিশ্বে রোড শো করে বেড়াতে হবে সরকারকে। সরকারের নেওয়া ব্যাংক ঋণের কারণে মূল্যস্ফীতিসহ সামষ্টিক অর্থনীতিতে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে, স্থানীয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারকে আর অর্থের যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, বৈদেশিক লেনদেনের উপর চাপ পড়ছে, শেয়ারবাজারে বিগত ১ বছর ধরে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে— এই জাতীয় সূচকগুলোই নিশ্চয় দেখানো হবে এই রোড শো গুলোতে? এগুলো বিশ্লেষণ করেই নিশ্চয়ই বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার লাভ-ক্ষতির হিসাব-নিকাশ কষবে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশ, আন্তর্জাতিক ঋণ দেওয়া-নেওয়ার আইনকানুনের মারপ্যাঁচের মধ্যে না গিয়েও, শুধু নিজের আত্মসম্মানের জায়গা থেকেও বলার আছে যে, এই ধরণের পরিস্থিতি আমাদের জন্য অবমাননাকর। আমি অন্তত চাই না যে, বিশ্বদরবারে এভাবে নিজেদের দুর্বলতা প্রদর্শন করে ধার চেয়ে বেড়াতে। সরকার তাহলে এ ধরণের অপমানজনক পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের কেন ফেলে দিচ্ছে? কোন ধরণের কথাবার্তা-অবহিতকরণ ছাড়াই?

এই প্রশ্ন তোলাটা সম্ভবত এখন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি খোদ গণতন্ত্রের জন্মভূমি গ্রীস নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। দেনার দায় শোধ করতে না পেরে। পরিস্থিতি উত্তরণে ভর্তুকি কমানো, ট্যাক্স বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে অবিরাম রাষ্ট্র-জনতার সংঘর্ষ চলছে সেখানে। আমাদের পরিস্থিতিও কী সেদিকেই যেতে বসেছে? ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ঝলমল করবে নাকি দেনার দায়ে পেট শুকিয়ে থাকতে হবে? এই ঋণ যদি নেওয়াও হয়, তাহলে তা শোধ করার মতো বাস্তব-কার্যকরী পরিকল্পনা আছে কী আমাদের দিন বদলের সরকারের? কোন ধরণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকারের অবশ্যই এই প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়া উচিত্। আমাদেরও মনে হয় বারংবার প্রশ্নগুলো করে সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা প্রয়োজন।

 

 

আমরা কেন এরকম হয়ে যাচ্ছি?

কয়েকদিন আগে বাসে একটা অদ্ভুত ঘটনা দেখে এই প্রশ্নটা মাথায় এল: আমরা কেন এরকম হয়ে যাচ্ছি? শাহবাগ মোাড় থেকে বাস ছেড়েছে, গেটের কাছে প্রচণ্ড ভীড়, বাইরেই ঝুলছে ৩-৪ জন। আর ঐ সময়টাতে রাস্তায় এত ভীড় যে, যে কোন সময়েই ঐ বাইরে ঝোলা মানুষগুলো একটা ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। অথচ ভেতরের দিকে বেশ খানিকটা জায়গা ফাঁকা। ভিতরের মানুষগুলো আরও কিছুটা ভিতরে চলে গেলেই একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব। কন্ট্রাকটরও ক্রমাগত সেই কথা বলে যাচ্ছে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে এক মাঝবয়েসি ভদ্রলোক তাঁর পাশে দাঁড়ানো দুই ছেলের কাছে জানতে চাইলেন যে, তারা কোথায় যাবে। উত্তরটা গাবতলী শুনে তিনি ছেলেগুলোকে ভিতরে চলে যেতে বললেন। মোটামোটি ভদ্র পরিচ্ছিত পোশাক পরা এক ছেলে তার বন্ধুকে ইশারা করল না যেতে। আরেকজন কিছুক্ষণ পরে নিচুস্বরে বলল, “গ্যালেই বইস্যা পরব”। আমি তাদের ইঙ্গিতটা বুঝতে পেরে কিছুক্ষণ হতাবিহ্বল হয়ে বসে থাকলাম। তারা আসলে মনে করেছে যে, ঐ মাঝবয়েসি ভদ্রলোকটা একটা সিট দখল করার জন্য তাদেরকে ভেতরে ঠেলে দিতে চেয়েছে। বাসের ওপারে রাস্তাঘাটের চেহারাটা এমন, তারা ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলে বাইরে যে দু-একজন মরেও যেতে পারে সেটাও তারা গ্রাহ্য করছে না। সামান্য একটা সিট দখলের জন্য তারা সেখানেই দাড়িয়ে থাকছে। অল্প কিছুক্ষণ আরাম করার জন্য তারা দুই হাত দূরের একটা লোকের জীবন-মরণ নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছে না। আমরা কেন এরকম হয়ে যাচ্ছি? নিজের ছোট ছোট সুযোগ সুবিধা, আরাম আয়েশের জন্য আমরা বাকি দুনিয়ার কথা কিছুই ভাবছি না। বা অনেক সময় অগ্রাহ্য করছি। সামান্য সামান্য ব্যাপারে আমরা কেন এরকম স্বার্থপর আচরণ করছি?

মনুষ্য প্রজাতির কী এমনটা করার কথা? মানুষ না আশরাফুল মাখলুকাত? সৃষ্টির সেরা জীব? বহু সাধ-সাধনার পর নাকি এই মানব জন্ম পাওয়া যায়? এমনকি এই মানবজন্ম নেওয়ার জন্য নাকি দেব-দেবতারাও আরাধনা করেন??? এ যদি সত্যি হয় তাহলে এই মহামূল্যবান সময়টুকু কী আমরা এভাবে পার করে দেব? আচ্ছা মানব-জন্মের উদ্দেশ্য-বিধেয় যাচাই-বিচার তো আরও অনেক দূরের কথা। আমরা যদি শুধু নিজের কথাও ভাবি, তাহলেও কী এখন আমাদের একটু সমবেদনশীল, সহযোগিতামূলক মানসিকতা গড়ে তোলা দরকার না? আমরা যে খুব সংকটপূর্ণ একটা সময় পার করছি!!! আমরা এমন একটা সময় পার করছি, যখন আমাদের খোদ নিজের অস্তিত্বটাই বিপন্ন!

দৌড় সংস্কৃতির ব্যাখ্যা? ঠিক হলো কী?

১.
ফিচারের শুরুটা হয়েছে খুবই মজার একটা গল্প দিয়ে। ‘দৌড় সংস্কৃতি’টা যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন হাস্যকর ঘটনার জন্ম দেয়, সেটা পাঠককে শুরুতেই বলার জন্য। এরপর ‘দৌড়-সংস্কৃতি’ বলতে এখানে আমি কী বলতে চেয়েছি সেটা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। জিনিসটার একটা সাধারণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
২.
এই ‘দৌড় সংস্কৃতি’, ‘দৌড় দেওয়ার রেওয়াজ’টা যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিপত্তিও ডেকে আনে সেটার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। এই দৌড় সংস্কৃতির একটা বড় বিপত্তির কথা বলা হয়েছে প্রথমেই। দর্শকরা খেলার পুরো পরিসি’তি না বুঝেই যে ‘দৌড়’টা দিয়ে ফেলল, তার ফলে অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেল। এই সময়টা কিন্তু আমাদের বাস্তব জীবনে অনেক জরুরি একটা ব্যাপার। তাই না? এই ব্যাপারটা অবশ্য অনেকে সমর্থনও করতে পারেন। ‘মানুষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ’, ‘খেলাটার সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা’ ইত্যাদি বিষয়-আশয়ের দিক দিয়ে অনেকেই এটাতে লাইক দিতে পারেন। কিন্তু ‘সম্পৃক্ততা’টা একটু মাখামাখি পর্যায়ে চলে গেলে সেটা খুব সুফল বয়ে আনে কী? এই অতি আবেগের আতিশয্যটা কখনো কখনো বিপত্তিই ডেকে আনে বলে আমার ধারণা। আমরা বোধহয় নিজেদের প্রতিদিনের জীবন দিয়েই এটা টের পাই। ফলে শিরোনামটা দেওয়া হয়েছে ‘দৌড় সংস্কৃতির বিপত্তি। বিপত্তিটা যে সত্যিই ঘটে সেটা বর্ণনা করা হয়েছে পরবর্তীতে।
৩.

দ্বিতীয় লক্ষ্যণীয় বিষয়টা হলো ডেনিস লিলি আর জেফ টমসনের কীর্তি। এটাও কিন্তু একধরণের ‘দৌড় সংস্কৃতি’ই বটে। কোন নিয়ম নীতির বালাই নাই, যতো পারো শুধু দৌড়াও। যে যত বেশি দৌড়াতে পারবে, সে তত বেশি ‘রান’ আশা করতে পারবে। আপনি চাইলে এখানে রানের জায়গায় সাফল্য, টাকাপয়সা, মান-যশ ইত্যাদি পছন্দসই শব্দ বসিয়ে নিতে পারেন। লিলি কিন্তু এই কাজটাই করেছে। এবং আরেকটা খুবই খেয়াল করার মতো বিষয় যে, তাঁরা এই ‘সারা দুপুর ধরে’ দৌড়াচ্ছেন একটা ভুলবোঝাবোঝির সুযোগ নিয়ে, অন্যায় করে, নিয়ম-নীতির পরোয়া না করে। আমরাও কী ‘এখন’ এই জিনিসটাই করছি না? আমরাও কী একটা ‘দৌড় সংস্কৃতি’রই চর্চা করছি না? ‘চাই চাই আরো চাই’ করছি না?, ‘এ দিল মাঙ্গে মোর’ করছি না? ফলে এখানেও কিন্তু একটা বড় ধরণের বিপর্যয় ঘটে যাচ্ছে বলে আমার ধারণা।
৪.
এবং মজার ঘটনা হলো, শেষপর্যন্তু লিলির ঐ ‘দৌড়’গুলো কিন্তু গোণায় আসেনি। তারা ১৭ রানের মতো দৌড়ে চার রানই পেয়েছেন। বাকিগুলো বৃথা, পণ্ডশ্রম। আমাদেরও কী সেরকমই ঘটছে? আমাদের এই পণ্ডশ্রমের হতাশা বাড়ছে? সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে?
৫.
শেষ লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো কেইথ বয়েসের বুদ্ধিটা। তাঁর পরিস্থিতি আঁচ করার ক্ষমতা। খেলা শেষের পরিস্থিতি সম্পর্কে অনুমান করতে পারার ক্ষমতা। এটা তার বেশি ছিল বলেই তিনি নিজের জুতোজোড়া বাঁচাতে পেরেছিলেন। এখান থেকেও কী আমরা কোন ইঙ্গিত পেতে পারি?