Archive for the ‘ পরিবেশ ’ Category

যে বিষয়গুলোতে ঐক্যমত্য চাই প্যারিস সম্মেলনে

Protect Mother Earth

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রচণ্ড ঝুঁকির মুখে থাকা বিশ্ব পরিবেশ নিয়ে আলাপ-আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন বিশ্বনেতারা। ২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের এই শীর্ষ জলবায়ু সম্মেলনকে বিবেচনা করা হচ্ছে পৃথিবীর প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার অন্তিম সময় হিসেবে। এবার যদি পরিবেশ বিষয়ে একটা বৈশ্বিক আইনি চুক্তি না করা যায়, তাহলে অনেক দেরি হয়ে যাবে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিগত তিন দশক ধরে নানামুখী আলাপ-আলোচনায় অনেক কিছু জমা হয়েছে এজেন্ডা হিসেবে। তবে এবার প্যারিসে মূল কিছু বিষয়ে অবশ্যই ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে হবে বিশ্বনেতাদের।

paris_cop21_501868

গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস

পুরো বিশ্ব একমত হয়েছে যে, গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনের মাত্রা কমাতে হবে। যেগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করে পৃথিবীকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু এই নির্গমন কি হারে কমানো হবে?

জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুযায়ী, প্রাক শিল্পায়ন যুগের সাপেক্ষে বৈশ্বিক উষ্ণতা কোনোভাবেই দুই ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। তবে বিশ্বের গরীব ও নিচু স্থানে থাকা ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলো (যারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রথম ও প্রবল শিকার হবে) বলেছে, দুই ডিগ্রীও যথেষ্ট না।…

View original post 504 more words

পরিবেশ দূষণ রোধে শিশুদের পিটিশন!

সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়া অঙ্গীকার কবিরা কতই না করেছেন। কিন্তু আধুনিক বিশ্ব কবির সংকল্প অনুযায়ী চলছে না। দুনিয়াকে শিশুর বাসযোগ্য করে তোলা তো দূরের কথা; ক্রমাগত ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়ছে পৃথিবীর পরিবেশ। বায়ু দূষণের ফলে বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণের মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। ফলে বড়দের ওপর আস্থা হারিয়ে শিশুরাই দিচ্ছে পরিবেশ রক্ষার ডাক। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী, দিল্লির বায়ুদূষণ বণ্ধের আহ্বান জানিয়ে ভারতের শীর্ষ কোর্টে একটি পিটিশন দায়ের করেছে তিন শিশু।

ছয় মাসের এই তিন শিশুর পক্ষে রিট পিটিশনটি দায়ের করেছেন তাদের অভিভাবকরা। বায়ু দুষণকারী পটকা ও আতশবাজি নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে এই পিটিশনে। তাদের দাবি, পরিস্কার বাতাসে শ্বাস নেওয়াটা শিশুদের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু বায়ু দূষনের ফলে তাদের পড়তে হচ্ছে অনেক জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধির কবলে। অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে ফুসফুস ও নানাবিধ স্নায়ুজনিত রোগে। আর এই দুষণের জন্য অত্যাধিক পরিমান পটকা ও আতশবাজি পোড়ানোকে দায়ী করে সেটা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে পিটিশনকারী তিন শিশু ও তাদের অভিভাবকরা। ভারতের সুপ্রিম কোটও বিষয়টিকে শিশুদের মৌলিক অধিকারের জন্য হুমকি বিবেচনা করে পিটিশন গ্রহণ করেছে।

ব্যাপক হারে পটকা ও আতশবাজী পোড়ানোয় দূষিত হচ্ছে দিল্লির বায়ু

ব্যাপক হারে পটকা ও আতশবাজী পোড়ানোয় দূষিত হচ্ছে দিল্লির বায়ু

গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এই পিটিশন দায়ের করা হয়েছে দিওয়ালির ছয় সপ্তাহ আগে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান এই উৎসবে প্রচুর পটকা ও আতশবাজি পোড়ানো হয় ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। যা তৈরি করে একটা ঝাঁঝালো ধোঁয়া। পিটিশনে বলা হয়েছে, ‘উৎসবগুলোতে যে বিপুল পরিমাণে আতশবাজি পোড়ানো হয় তা পরিস্কারভাবে এই আবেদনকারী ও দিল্লির অন্যান্য শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। আতশবাজি পোড়ানোর মাধ্যমে হয় ক্ষণস্থায়ী ও অগভীর একটা আনন্দ পাওয়া যায়। কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাবগুলো দীর্ঘমেয়াদে পড়ে ফুসফুস ও স্নায়ুর ওপর, যা স্থায়ীভাবে ক্ষতির কারণ হয়।’

গত বছর পৃথিবীর ১৬০০টি শহরের ওপর গবেষণা চালিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা। সেখানে দেখা গেছে বায়ুবাহিত একধরণের ছোট্ট কণার পরিমাণ দিল্লিতেই সবচেয়ে বেশি। পিএম২.৫ নামে পরিচিত এই কণাগুলো খুব সহজেই ফুসফুসে প্রবেশ করে। এমনকি রক্তের মধ্য দিয়েও প্রবাহিত হতে পারে। তৈরি করে ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুস ক্যান্সার ও বিভিন্ন হৃদরোগ।

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন: গাছেরাও কি যাচ্ছে ধর্মঘটে?

জীবাশ্ম জ্বালানি আহরণের তাগিদে পরিবেশের প্রতি অবিচারই করে ফেলেছে মানব সভ্যতা। কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেনের মতো গ্রীনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ উত্তপ্ত করে ফেলেছে পৃথিবীর পরিবেশ। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে গাছ। শুষে নিচ্ছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতির চরম বন্ধু গাছও যেন নিয়েছে বিরুপ অবস্থান। ফলে বিজ্ঞানীরা প্রশ্ন তুলছেন যে: গাছেরাও কী যাচ্ছে ধর্মঘটে?

trees

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে বিগত কয়েক দশক ধরেই মধ্য ইউরোপে বসন্ত শুরু হচ্ছে আগেভাগেই। সেখানকার গাছগুলোও এতদিন সাড়া দিয়ে এসেছে প্রকৃতির এই পরিবর্তনে। আগে-ভাগেই ফোটাতে শুরু করেছে বসন্তের নতুন পাতা। ফলে কার্বন ডান অক্সাইড শুষে নেওয়ার কাজটাও তারা করেছে অনেক লম্বা সময় ধরে। এতদিন ব্যাপারটি বেশ ইতিবাচকভাবেই উপস্থাপিত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষক আলোচনাগুলোতে। কিন্তু বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ন্যাচারে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা লিখেছেন যে, গাছগুলো আগেভাগেই বসন্তের পাতা ফোটানোর হার কমিয়ে দিয়েছে। এ থেকে তাঁরা আশঙ্কা করছেন যে, এক সময় হয়তো তা পুরোপুরি বন্ধই হয়ে যেতে পারে। বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওনগোশুয়ো ফু বলেছেন, ‘আগাম বসন্তের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গাছগুলোর ধীর হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি ইঙ্গিত করে যে ভবিষ্যতে তারা আর বেশি কার্বন শুষে নিতে পারবে না। কারণ গাছগুলোর তাপমাত্রা সংবেদশীলতা কমে যাচ্ছে।’

গবেষণাটি পরিচালনার জন্য বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল বেছে নিয়েছিলেন ১২৪৫টি স্থানের খুব পরিচিত গাছগুলোকে। তাঁরা গবেষণা চালিয়েছেন ডেনমার্ক থেকে বসনিয়া পর্যন্ত মধ্য ইউরোপের অনেকগুলো স্থানে। গবেষণাটিতে তাঁরা ভাগ করেছেন দুইটি পর্যায়ে। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৪ সাল ও ১৯৯৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়কে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে গত তিন দশক ধরে গাছগুলো অগ্রিম বসন্তকে স্বাগত জানিয়ে আগেভাগেই নতুন পাতার জন্ম দিয়েছে। গড়ে প্রায় ১৩ দিন আগেভাগে শুরু হয়েছে নতুন পাতা আগমনের প্রক্রিয়া।

কিন্তু দুইটা সময়ের পর্যায়কে আলাদাভাবে বিবেচনায় নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। ১৯৯৯ থেকে ২০১৩ সাল সময় পর্যন্ত নতুন পাতা জন্মানোর হার কমে গেছে ৪০ শতাংশ হারে। ওনগোশুয়ো বলেছেন, ‘আমরা দেখেছি যে গত তিন দশকে আগাম বসন্তের প্রতি গাছদের সংবেদনশীলতা কমে গেছে। আর শীতের সময় আবহাওয়া আরও উষ্ণ থাকলে এটা আরও কমে যেতে পারে।’

শিল্পবিপ্লবের পর থেকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সেটা কোনোভাবেই যেন দুই ডিগ্রী সেলসিয়াসে না পৌঁছায়, সেজন্য তৎপরতা চালাচ্ছে জাতিসংঘ। বিজ্ঞানীদের ধারণা মধ্য ইউরোপের গাছগুলো চরম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকেই নিজেদের রক্ষা করতে চাচ্ছে।

গাছ লাগিয়ে মেয়েশিশুর আবাহন

piplantriধর্ষণ আর নারী নির্যাতনের কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে ভারত। বিবিসি নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র নিয়েও হৈচৈ কম হয়নি বিশ্বজুড়ে। কিন্তু সেই ভারতেরই একটি গ্রামে দেখা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। রাজস্থানের পিপলান্ত্রি নামের একটি গ্রামে প্রতিটি মেয়েশিশুর জন্ম উপলক্ষে রোপণ করা হয় ১১১টি গাছ। গ্রামের সবাই মেয়েশিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য জমা রাখেন নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ।

১১১টি গাছ লাগিয়ে মেয়েশিশুর জন্ম উদযাপনের পাশাপাশি গ্রামের সবাই মিলে জমা করেন ২১ হাজার রুপি। শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে জমা করা হয় ১০ হাজার রুপি। এই অর্থ ব্যাংকে জমা রাখা হয়। ২০ বছরে পা দিলে সেই অর্থের দাবিদার হয় মেয়েটি। এ ছাড়া শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করা ও প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তার বিয়ে না দেওয়ার বিষয়েও একটি চুক্তি সই করেন মেয়ের বাবা-মা।

নিজের ছোট্ট মেয়েকে হারানোর কষ্ট ভুলতে ২০০৭ সালে এই অভিনব উদ্যোগটি নিয়েছিলেন সেই গ্রামেরই বাসিন্দা শ্যামসুন্দর পালিওয়াল। তারপর গত ছয় বছরে পিপলান্ত্রি গ্রামে লাগানো হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার গাছ। প্রতিটা মেয়েকন্যার জন্য ১১১টি ও প্রতিজন মৃত ব্যক্তির জন্য ১১টি। গ্রামের সব সদস্য মিলেই দেখভাল করেন এই অভিনব সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের। সাধারণত ঔষুধি গাছ লাগিয়ে থাকেন গ্রামের অধিবাসীরা। সেখান থেকে অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন তাঁরা।

অভিনব এই উদ্যোগের ফলে গ্রামটি হয়ে উঠেছে সবুজ। পাল্টেছে নারীসংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, সেই গ্রামে অপরাধপ্রবণতা কমে গেছে ব্যাপক হারে। গত সাত বা আট বছরে সেই গ্রামের কাউকে পুলিশের কাছে গিয়ে মামলা করতে হয়নি।

piplantri2

পিপলান্ত্রির অনুকরণে অনেক গ্রামই এখন মেয়েশিশুর জন্ম উদযাপন করছে গাছ লাগিয়ে। বুডানিয়া গ্রামে প্রতিটি মেয়েশিশুর জন্মের সময় লাগানো হয় ১০০টি গাছ। লুহাভাদ গ্রামও উদ্যোগটি নিয়েছে অনেক ছোট পরিসরে। সেখানে লাগানো হয় একটি গাছ।

এ দৃশ্যে মরুভূমি সাগরের ধায়

এ দৃশ্যে মরুভূমি সাগরের ধায়/এ দৃশ্যে পাতাগুলি ঝড়ে যেতে চায়… কবিকে প্রণতি জানাই…

06Aral Sea fishing boats

কোজাবে এমন একজন জেলের নাম যিনি বাস করেন মরুভূমিতে। শুধু তিনি না, তাঁর গ্রামের প্রায় সবাই মাছ ধরাকেই জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছে। কিন্তু ১৯৭০-এর দশকে তাদের মাছ ধরার বিচরণক্ষেত্রগুলো শুকিয়ে যেতে থাকে। মাছগুলো মরে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে গত ৪০ বছরে মরুভূমি গ্রাস করে নেয় আরাল সাগরের প্রায় ৬০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা। কাজাকিস্তানের আরাল সাগরের কোথাও কোথাও ৪০মিটার পর্যন্ত গভীর। বিশাল-বিপুল এই জলরাশি বাষ্প হয়ে মিলিয়ে গেছে গরম বাতাসের মধ্যে।

মধ্য এশিয়ার এই আরাল সাগর, আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর মধ্যে চতুর্থ। কাস্পিয়ন সাগর, লেকস সুপেরিয়র ও ভিক্টোরিয়ার পরেই তার স্থান। কিন্তু এখন তার ১০ ভাগও অবশিষ্ট আছে কিনা, সন্দেহ। গত কয়েক দশকের মধ্যে এটি জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম নাটকীয় ঘটনা।

কোজাবের গ্রাম, কাজাকিস্তানের জালানাস নামক এলাকাটি ছিল এই আরাল সাগরের উত্তরবর্তী কূলে। এখন সেখানে কোথাও জলের দেখা নেই। যেদিকে দুচোখে যায়; শুধু বালি আর বালি। নিজের চারপাশটা দেখিয়ে কোজাবে বলেন, ‘একটু সামনেই ছিল সাগরটা। আমরা গিয়ে সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। একটা সৈকত ছিল। সেখানে বাচ্চারা রৌদ্রস্নান করত।’

01. aral197302 aral198703 aral199904 aral_then05 aral_now

সমুদ্রের উপস্থিতি জানান দেওয়ার জন্য এখনও আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক মাছ-ধরা ট্রলার, নৌকা। একটা বড় নৌকা দেখিয়ে ৮৬ বছর বয়সী কোজাবে জানান সেটাতে ২০ থেকে ৪০ জন মানুষ উঠতে পারে। আকস্মিক এই পরিবর্তনের কথা মনে করে তিনি বলেন ‘এখানে জেলেরা থাকত, পাচক থাকত, নাবিক, প্রকৌশলী থাকত। কিন্তু সাগর যখন শুকিয়ে যেতে থাকল তখন নৌকাগুলো আর কম জলের বন্দরে আর আসতে পারত না। এক এক করে সেগুলো আটকে যেতে থাকল নরম কাদার মধ্যে। আর সেই কাদাই এখন পরিণত হয়েছে এই বালিতে।’

এই আরাল সমুদ্র থেকে কোজাবেরা এত মাছ মারতেন, যা দিয়ে সোভিয়েত রাশিয়ার ছয়ভাগের একভাগ মৎস চাহিদা পূরণ হতো। একবারের খ্যাপে ৪০০ কেজির বেশি মাছও ধরেছেন কোজাবে। আহ! সেগুলো ছিল সুখের দিন! সাত কেজি ওজনের মাছও ধরা পড়েছে কোজাবের জালে। কিন্তু ১৯৭৬ সালে কোজাবের জালে উঠে আসে এক ঝাঁক মরা মাছ। দিনের পর দিন এভাবেই চলতে থাকায় কোজাবের মতো অনেকেই পাড়ি জমান অন্যত্র।

আরাল সাগরের এই বাঁচা-মরার প্রশ্নটি কোনো দীর্ঘমেয়াদী প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হয়নি। এটা মনুষ্যসৃষ্ট কিছু মুনাফা সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের প্রত্যক্ষ পরিণতি। সাগর শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে যাওয়ার নেপথ্যে আছে ভূ-রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ।

মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে বড় দুই নদীর জলধারা এসে মিশত আরাল সাগরে। উত্তর থেকে সির ডারয়া ও দক্ষিণ থেকে আমু ডারয়া। এই দুই নদীই পড়েছে কাজাকিস্তানের প্রতিবেশী উজবেকিস্তানের বাধার মুখে।

১৯৭০, ৮০-র দশকে সোভিয়েত রাশিয়ার তুলা-শিল্পের বৃহত্তম ক্ষেত্র ছিল উজবেকিস্তান। মধ্য এশিয়াকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় তুলা উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের। ৮০-র দশকে অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি তুলা উজবেকিস্তানেই উৎপাদিত হয়েছে। উজবেকিস্তান এখনও আছে তুলা উৎপাদনকারী শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে।

বাণিজ্যিক বা রাজনৈতিক কারণে গড়ে ওঠা সেই তুলার জমিতে সেচের ব্যবস্থা করতে গিয়ে থমকে গেছে আরাল সাগরের দুই সখা-নদী সির ডারয়া এ আমু ডারয়ার জলপ্রবাহ।

পামির পর্বতমালা থেকে ২৪১৪ কিলোমিটার লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে আসা আমু ডারয়া নদীর বৃহদাংশই শুষে নেয় উজবেক তুলা চাষের জমিগুলো। বিগত পাঁচ বছর ধরে এটা আরাল সমুদ্র পর্যন্ত এসে পৌঁছাতেও পারছে না। ঠিক কবে থেকে এটা শুরু হয়েছে সেটা জানাও যায়নি। কারণ উজবেক কর্তৃপক্ষ এটা প্রকাশ করতে চায় না।

এককালে মহাবীর আলেক্সান্ডার যে নদীকে বর্ণনা করেছিলেন তাঁর দুর্ধর্ষ সেনাদলের জন্য একটা দ্রুত-বহমান বাধা হিসেবে, সেই সির ডারয়া নদীর প্রবাহও অনেক কমে গেছে। এককালে যেখানে থইথই করত বিপুল জলরাশি, সেটা প্রথমে ভাগ হয়ে যায় দুইটা লবনাক্ত হ্রদে। দক্ষিণে বড় আরাল। সেটার অর্ধেক অংশ আছে উজবেকিস্তানে। আর কাজাকিস্তানে আছে ছোট আরাল। বড় আরালটাও আবার পরবর্তীতে ভাগ হয়ে যায় পূর্ণ ও পশ্চিম বেসিনে। ২০১৪ সালের অক্টোবরে এই পূর্ব বেসিনও পুরোপুরি উধাও হয়ে গেছে।

মধ্য এশিয়ার স্কুলপড়ুয়া বাচ্চারা আমু ডারয়া নদীকে চিনত এই অঞ্চলের আমাজন হিসেবে। এমন প্রমত্ত একটা নদীর ধারা রোধ করা হয়েছে তুলা ও ধানক্ষেতে সেচ দেওয়ার কাজে। লাখো মানুষের জীবনও জড়িয়ে আছে এই চাষবাষের সঙ্গে। সেটা বাধাগ্রস্থ করাও সম্ভব না বলে মন্তব্য করেছেন সেভ দ্য আরাল সি ফাউন্ডেশনের প্রধান মেদাদ অসপানোভ, ‘আপনি যদি পুরো আরাল সমুদ্রকে বাঁচাতে চান তাহলে এই অঞ্চলে (উজবেকিস্তানে) সেচকার্য বন্ধ করতে হবে। কিন্তু এটা হবে অসম্ভব।’

তবে নদীগুলো বাঁচানোর জন্য উজবেক সরকারের আন্তরিকতা ছিল না বলেও অভিযোগ করছেন কেউ কেউ। কারণ শুমিয়ে যাওয়া সাগরের বুকে পাওয়া গেছে তেল ও গ্যাসের সন্ধান। খনিজ সম্পদ উত্তোলনের কাজে জলের নিচের চেয়ে শুকনো জায়গাতেই বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। রাশিয়ান ও কোরিয়ান কিছু এনার্জি কোম্পানি ইতিমধ্যে তাদের কাজ শুরুও করে দিয়েছে।

সাগর বাঁচানোর চেয়ে মরুভূমির আশেপাশ বসবাসরত মানুষদের জীবনযাত্রার মান কিভাবে উন্নয়ন করা যায়, সেদিকেই মনোযোগ দিচ্ছে উজবেক সরকার।