Posts Tagged ‘ এল ক্লাসিকো ’

বার্সেলোনার রাজনীতি, রাজনীতির বার্সেলোনা

 

ইউরোপের অন্যতম সেরা ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার খেলাগুলোতে দর্শকসারিতে প্রায়ই দেখা যায় একটা ব্যানার: “কাতালোনিয়া স্পেন না”। হ্যাঁ, স্পেন থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন একটা রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখছে কাতালোনিয়ার মানুষ। সত্যিই তেমনটা হয়ে গেলে ছোট আকারের একটা সশস্ত্র সামরিক বাহিনী গড়ার পরিকল্পনাও করছেন কাতালান রাজনীতিবিদরা। তবে কাতালোনিয়ার একটা নিরস্ত্র সেনাদল দীর্ঘদিন ধরে ছিল এবং এখনও আছে। আর তা হলো বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের সমর্থক। যারা প্রতি সপ্তাহান্তে ৯৯ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ন্যু ক্যাম্প স্টেডিয়ামকে সাজিয়ে দেন লাল-নীলের প্রতীকি সাজে। যেটা কাতালোনিয়ার জাতীয় পতাকাকে ইঙ্গিত করে। নতুন রাষ্ট্র হিসেবে কাতালোনিয়ার নাম সত্যিই যদি আসে, তাহলে বার্সেলোনা শহর হবে এই নতুন দেশের রাজধানী।

&MaxW=640&imageVersion=default&AR-150929622

আগামী রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে কাতালোনিয়া প্রদেশের পার্লামেন্ট নির্বাচন। ভোটাভুটিতে স্বাধীন কাতালোনিয়ার পক্ষের শক্তি জিতে গেলে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের কর্মকাণ্ড শুরু করা হবে বলে জানানো হয়েছে স্বাধীনতাকে ‘হ্যাঁ’ বলা জোটের নেতারা। কাতালোনিয়া যদি স্বাধীন হয়ে যায় তাহলে বার্সেলোনা আর স্প্যানিশ লিগে খেলতে পারবে না বলে জানিয়েছেন লা লিগার প্রেসিডেন্ট।

আন্তর্জাতিকভাবে যেভাবেই দেখানো হোক না কেন, বার্সা দীর্ঘদিন ধরেই বহন করছে কাতালান জাতীয়তাবাদের পতাকা। ন্যু ক্যাম্পে বার্সেলোনার খেলাগুলোতে দর্শকসারিতে দেখা যায় কাতালোনিয়ার পতাকার মতো লাল-নীলের আধিক্য। বার্সার প্রধান তারকা লিওনেল মেসির চেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় স্বাধীনতার ধ্বনি। সর্বশেষ স্প্যানিশ কাপ ফাইনালে ন্যু ক্যাম্পে স্পেনের জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর সময় দুয়োধ্বনি দিয়েছিলেন বার্সার সমর্থকেরা। এজন্য ৭৪ হাজার ডলার জরিমানা করা হয়েছিল বার্সাকে। ন্যু ক্যাম্প স্টেডিয়ামের এক পার্শ্বে পাকাপাকিভাবে একটা ব্যানার লাগানো থাকে। যেখানে লেখা আছে: “কাতালোনিয়া স্পেন না”।

catalonia

স্প্যানিশ লেখক মানুয়েল ভাজকেজ মোনতালবান বার্সাকে বর্ণনা করেছেন একটা ‘প্রতিকী ও নিরস্ত্র কাতালান সেনাবাহিনী হিসেবে।’। বিশেষত ১৯৩৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত, জেনারেল ফ্রাঙ্কোর সামরিক শাসনের সময়। ফ্রাঙ্কো চরমভাবে অবদমিত করে রেখেছিলেন কাতালান জাতীয়তা, ভাষা-সংস্কৃতির চর্চাকে। ইতিহাসবিদ চার্লেস সান্তানা বলেছেন, ‘বার্সেলোনা ক্লাব ছিল কাতালানদের স্বাধীনতার ঘাঁটি। এখানে এসে মানুষ নির্ভয়ে কাতালান ভাষায় কথা বলতে পারত। এমনকি গানও গেতে পারত।’ ১৯১৮ সালে কাতালোনিয়াকে স্ব-শাসনের ব্যবস্থা দেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছিল বার্সেলোনার পক্ষ থেকে। ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জোন লোপার্তা, বার্সেলোনার সভাপতি থাকার সময়ও স্বাধীন কাতালোনিয়ার পক্ষে সক্রিয় অবস্থায় দেখা গেছে ইউরোপের অন্যতম সফল ক্লাবটিকে। লোপার্তা খোলাখুলিভাবে স্বাধীন কাতালোনিয়ার সমর্থনে কথাবার্তা বলতেন। ২০১২ সালেও স্পেনের কেন্দ্রিয় সরকার দেশের প্রতিটি স্কুলে স্প্যানিশ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব তোলার পর কড়াভাবে এর সমালোচনা করেছিল বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব

তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা ভিন্ন অবস্থানে দেখা যাচ্ছে বার্সেলোনাকে। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের জন্য বার্সেলোনা কোনো পক্ষ নেবে না বলে জানিয়েছেন ক্লাব সভাপতি হোসেপ মারিয়া বার্তেমোউ। তিনি বলেছেন, ‘বার্সেলোনা এটা দেখিয়েছে যে তারা এই নির্বাচনী প্রচারণার বাইরে আছে। যা করার সেটা রাজনীতিবিদেরই করতে হবে। বার্সা নিরপেক্ষ থাকবে।’ বার্সার কিংবদন্তি ফুটবলার জাভিও মত দিয়েছেন ক্লাবকে রাজনীতির বাইরে রাখার পক্ষে। তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় বার্সাকে রাজনীতির সঙ্গে জড়ানো ঠিক হবে না। এই ক্লাবকেও না, ফুটবলকেও না। কিন্তু পরিস্থিতি ব্যাপারটাকে অনিবার্য করে তুলেছে।’

তবে বার্সার আরেক তারকা জেরার্ড পিকে বেশ জোরেসোরেই কথা বলছেন কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে। ১১ সেপ্টেম্বর কাতালোনিয়ার জাতীয় দিবসের র‍্যালিতে দেখা গেছে পিকেকে। সেসময় বার্সার এই ডিফেন্ডার বলেছিলেন, ‘এখানে খুবই বড় একটা আন্দোলন হচ্ছে। আর এটা সবার শোনা উচিৎ।’ সম্প্রতি স্পেনের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলার সময় পিকেকে দুয়োধ্বনিও শুনতে হয়েছে স্পেনেরই সমর্থকদের কাছ থেকে।

11setembre-14-pique

কাতালোনিয়া সত্যিই আলাদা হয়ে গেলে ইউরোপের ফুটবল অঙ্গনে বেশ বড় ধরণের তোলপাড় শুরু হবে। স্পেনের জাতীয় দলে খেলেন বেশ কয়েকজন বার্সেলোনার খেলোয়াড়। তারা তখন আর খেলতে পারবেন না স্পেনের হয়ে। বার্সেলোনাও যে তাহলে লা লিগায় অংশ নিতে পারবে না সেটাও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন স্প্যানিশ পেশাদার ফুটবল লিগের প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের তেবাস, ‘খেলার আইন খুব পরিস্কার: লা লিগায় স্পেনের ক্লাবগুলো ছাড়া অংশ নিতে পারবে শুধু আনডোরান ক্লাবগুলো। লা লিগা অনুষ্ঠিত হবে কাতালান ক্লাবগুলোকে বাদ দিয়েই।’ বার্সেলোনার সঙ্গে লা লিগার আরেক ক্লাব এসপানিওলেরও হবে একই দশা।

তাহলে কি সত্যিই আর দেখা যাবে না দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার ঐতিহ্যবাহী দ্বৈরথ? ফুটবল বিশ্ব কী বঞ্চিত হবে ‘এল ক্লাসিকো’র রোমাঞ্চ থেকে? উত্তরের জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে বার্সেলোনার রাজনীতির দিকে।

কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা, ইউরোপের মাথাব্যাথা

ইউরোপের ফুটবল অঙ্গনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় লড়াই, স্পেনের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার দ্বৈরথ। বিশ্ব ফুটবলে যা পরিচিত ‘এল ক্লাসিকো’ নামে। ইউরোপের সবচেয়ে সফল দুইটি ক্লাবও রিয়াল-বার্সা। ফলে ফুটবলের কারণে পুরো বছরজুড়েই বিশ্বের অনেক মানুষের নজর থাকে স্পেনের দিকে। এবার বিশ্বের দৃষ্টি স্পেনের দিকে পড়তে পারে রাজনৈতিক কারণেও। এখানেও একে-অপরের প্রবল প্রতিপক্ষ মাদ্রিদ (স্পেন) ও বার্সেলোনা (কাতালোনিয়া)।

Screen-Shot-2015-03-31-at-16.40.53

সম্প্রতি দীর্ঘদিন ধরে জারি থাকা স্বাধীনতার দাবিতে আবার মুখরিত হয়েছে কাতালোনিয়ার রাজপথ। ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কাতালোনিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচন। আর এই ভোটাভুটিকে দেখা হচ্ছে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ নির্ধারণী নির্বাচন হিসেবে। পার্লামেন্ট নির্বাচনে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষ জয়ী হলে জোরতালে শুরু হবে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কর্মকাণ্ড। বার্সেলোনা হবে সেই নতুন দেশের রাজধানী।

অন্যদিকে সমূহ বিপদের আশঙ্কায় কাতালানদের এই দাবি মেনে নিতে নারাজ স্প্যানিশ সরকার। কাতালোনিয়া স্বাধীন হয়ে গেলে খুবই ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে আগে থেকেই টালমাটাল অবস্থার মধ্যে থাকা স্প্যানিশ অর্থনীতি। খুব কাছেই সতর্কবার্তা হয়ে ঝুলে আছে গ্রীস ট্রাজেডি। গ্রীসের মতো ঋণগ্রস্থ স্পেনও আছে দেউলিয়া ঘোষণা হবার আশঙ্কায়। স্পেনের পাশাপাশি ইউরোপের মোড়লরাও হয়তো চাইবেন না কাতালোনিয়ার আলাদা হয়ে যাওয়া। কারণ তাহলে নতুন করে আরেকটি বড় সংকটের মধ্যে পড়তে হবে ইউরোপের নীতিনির্ধারকদের। এমনিতেই গ্রীস ও সাম্প্রতিক অভিবাসী পরিস্থিতি বেশ জর্জরিত করে রেখেছে তাদের। কিন্তু কাতালানরাও নাছোড়বান্দা। বহু দিনের লালিত স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে এবার বাস্তবে রূপ দিতে বদ্ধপরিকর কাতালোনিয়ার মুক্তিকামী মানুষ।

catalonia-map

১১৬৪ সাল পর্যন্ত খুবই শক্তিশালী একটা স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল কাতালোনিয়া। তারপর এটি যুক্ত হয় অ্যারাগনের সঙ্গে। আর ১৪৬৯ সালে অ্যারাগনের রাজা ফার্দিনান্দ ও স্পেনের রানী ইসাবেলার বিবাহবন্ধনের মধ্য দিয়ে স্পেনের সঙ্গে মিলন ঘটে অ্যারাগন ও কাতালোনিয়ার। তখন থেকেই ধীরে ধীরে স্পেনের কেন্দ্রীয় শাসনের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে থাকে কাতালানরা। ১৭১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করে দেওয়া হয় কাতালান রাষ্ট্র। তারপর থেকেই নিজেদের স্বকীয় সংস্কৃতি-ঐতিহ্য-ভাষা চর্চার স্বাধীনতা হারাতে হয়েছে বলে অভিযোগ কাতালোনিয়ার মানুষদের। যে নিপীড়ণের চরম রূপ দেখা গেছে জেনারেল ফ্রাঙ্কোর সামরিক শাসনের (১৯৩৯-১৯৭৫) সময়। ১৯৭০-এর দশকের শেষে স্পেনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর কাতালোনিয়াকে দেওয়া হয় স্পেনের ১৭টি স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা। তবে ভেতরে ভেতরে স্বাধীনতার সুপ্ত বাসনাটাও সবসময় লালন করে গেছে কাতালানরা। সেই দাবি আরও জোড়ালো হয়েছে ২০০৭-০৮ সালের অর্থনৈতিক ধ্বসের পর। নানাবিধ কৃচ্ছতানীতি যারপরনাই অসন্তোষ তৈরি করেছে কাতালোনিয়ায়। ২০১০ সালে কাতালানরা স্প্যানিশ সরকারকে কর দিয়েছে ৬১.৮৭ বিলিয়ন ইউরো। আর তাদের কাছে এসেছে ৪৫.৩৩ বিলিয়ন। কেন্দ্রীয় স্প্যানিশ সরকারের হাতে বিপুল পরিমাণ টাকা চলে না গেলে আরও উন্নয়ন করা যেত বলে কড়া মন্তব্য করেছিল কাতালোনিয়া সরকার।

গত বছরের নভেম্বরে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল একটি অনানুষ্ঠানিক গণভোট। মাদ্রিদে স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার অনেক চেষ্টা করেছিল সেটা রুখে দিতে। কিন্তু শেষপর্যন্ত সফল হয়নি। ২.২ মিলিয়ন ভোটারের ভোটে বিপুলভাবে জয়ী হয়েছিল স্বাধীনতার দাবি। ৮০.৭ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছিলেন কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে।

এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে অনেকখানি আনুষ্ঠানিক রূপ পেতে যাচ্ছে সেই স্বাধীনতার দাবি। কাতালোনিয়ান পার্লামেন্টের ১৩৫টি আসনের মধ্যে ৬৮টি আসনে জয়লাভ করলেই স্পেন থেকে পৃথক হওয়ার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে দেবে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিরা। ইতিমধ্যে তারা গঠন করেছে ‘জান্টস পেল সি’ বা ‘টুগেদার ফর ইয়েস’ নামের একটি জোট। যেখানে আছে কাতালোনিয়ার বর্তমান ও সাবেক তিন তিন প্রধানমন্ত্রীর পার্টি। এই জোট থেকে নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন বার্সেলোনার সাবেক কোচ পেপ গার্দিওলাও। এই জোটের সঙ্গে আলাদাভাবে কাজ করবে বামপন্থী দল সিইউপি। আর স্বাধীনতার বিপক্ষে লড়বে স্পেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মারিনো রাহোর পার্টি পার্তিদো পপুলার (পিপি) ও কাতালোনিয়ার সোশ্যালিস্ট পার্টি (পিএসসি)।

২৭ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হলে দ্রুতই স্বাধীন হওয়ার কাজ শুরু করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ‘টুগেদার ফর ইয়েস’ জোটের প্রার্থী রাউল রোমেভা। এল পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমরা স্বাধীনতার ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। আর সবাইকে এটা বুঝতে হবে যে আমরা সত্যিই এই প্রক্রিয়া শুরু করব। আমরা সম্ভাব্য সকল উপায়ে এটা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা (স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার) এটা আমাদের করতে দেয়নি। ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বরের গণভোটের পর আমরা যেটা করতে পারিনি সেটা করার সময় এবার এসে গেছে।’ নিজেদের স্বাধীন সব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন কাতালোনিয়ার প্রেসিডেন্ট আর্থার মাস। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, কর কর্তৃপক্ষ, কূটনৈতিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ছোট আকারের একটা সেনাবাহিনীও গড়ে তোলার কথা ভাবছেন মাস।

গত ১১ সেপ্টেম্বর কাতালোনিয়ার জাতীয় দিবসে বার্সেলোনার রাজপথ আবার মুখরিত হয়েছিল স্বাধীনতার দাবিতে। প্রায় ১.৪ মিলিয়ন মানুষ কাতালোনিয়ার পতাকা নিয়ে বর্ণিল র‍্যালি করেছিলেন বার্সেলোনার রাজপথে। তরুণ-তরুণীরা নেচে-গেয়ে উদযাপন করেছিলেন কাতালানদের স্বকীয় ঐতিহ্য-সংস্কৃতি। স্বাধীনতার দাবিতে গলা চড়িয়েছেন অনেক প্রবীনও। ফ্রাঙ্কোর একনায়ক শাসনামলে স্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে দীর্ঘদিন জেল খাটতে হয়েছিল ৯১ বছর বয়সী জোয়াকিম ব্যাটলকে। এখন তিনি হাঁটেন ক্রাচে ভর দিয়ে। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্রও কমেনি তাঁর স্বাধীনতার স্পৃহা। ব্যাটল বলেছেন, ‘আমি প্রবল আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার দিকে। আমরা এজন্য অনেক শতক ধরে অপেক্ষা করছি। আর আমার বিশ্বাস এখন সেই সময় চলে এসেছে।’

Demonstrators wave "Esteladas" (pro-independence Catalan flag) during celebrations of Catalonia's National Day (Diada) which recalls the final defeat of local troops by Spanish king Philip V's forces in 1714, in Barcelona on September 11, 2015. Hundreds of thousands of Catalans were set to pour into the streets today demanding independence, ahead of a regional election billed as an indirect vote on breaking away from Spain. AFP PHOTO/ GERARD JULIEN

২৭ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের পর স্পেন যদি সত্যিই স্বাধীনতার পথে হাঁটা শুরু করে তাহলে আবার বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে স্প্যানিশ অর্থনীতি। কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থমন্ত্রী লুইস ডি গুইনডোস অবশ্য সবাইকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন যে, এমন কিছু হওয়া কখনোই সম্ভব না। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা এতে আস্থা পাবেন কিনা, শেয়ারবাজারে অস্থিরতা শুরু হবে কিনা, সেটা নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা তখন শুধু স্পেনের সমস্যা হয়ে থাকবে না। পুরো ইউরোপকেই আবার পড়তে হবে নতুন টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে।

কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা নতুন করে ভাবাবে ইউরোপিয়ান ফুটবল অঙ্গনকেও। কাতালোনিয়া স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে গেলে বার্সেলোনা-ভ্যালেন্সিয়ার মতো দলগুলো স্প্যানিশ লিগে খেলবে কিনা, বার্সেলোনা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগে অংশ নিতে পারবে কিনা- ইত্যাদি প্রশ্ন ঝুলে আছে ইউরোপের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে।

প্রাসঙ্গিক: 

রাজনীতিতেও চলছে বার্সা-রিয়াল লড়াই

স্বাধীন কাতালোনিয়ার দাবি বার্সেলোনারও

এল ক্লাসিকো কি শুধুই ফুটবলীয় লড়াই?

যখন বার্সার ওপর ছিল মাদ্রিদের রাজত্ব

 

এল ক্লাসিকো কি শুধুই ফুটবলীয় লড়াই?

ফুটবল বিশ্বে ‘ডার্বি’ বলতে বোঝানো হয় ‘একই শহর বা এলাকার দুইটা দলের দ্বৈরথ’। যেমন একই শহর ম্যানচেস্টারের দুই ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও সিটির লড়াই। বা ইতালির মিলান শহরের এসি মিলান ও ইন্টার মিলানের লড়াই। সেই অর্থে রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনার ধ্রুপদী লড়াইকে কেন ডার্বি বলা হবে; তা ভেবে অবাক হতে হয়। দুইটা দল এক শহরের না, এক এলাকার না; এমনকি তাদের ‘জাতীয়তা’ও আলাদা।

স্বাধীনতার দাবিতে যুগ যুগ ধরে তোলপাড় হয়ে আসছে কাতালোনিয়া। ফ্রান্স ও ভূমধ্যসাগরীয় সীমান্তবর্তী কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনা। অন্যদিকে কেন্দ্রীভূত স্প্যানিশ রাষ্ট্রের মধ্যমনি মাদ্রিদ। স্পেনের ম্যাপের একেবারে মাঝামাঝি মাদ্রিদের অবস্থান। কিন্তু ভৌগলিকভাবে অনেক দুরত্ব থাকার পরও রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনার দ্বৈরথ কেন এমন ধ্রুপদী লড়াই হয়ে উঠল, তা জানার জন্য আমাদের নজর দিতে হবে দেশটির রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসের দিকে।

স্প্যানিশ ফুটবলের সঙ্গে দেশটির রাজনীতি খুব ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। ইউরোপের অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে স্পেনেই সম্ভবত দুইয়ের মিশেলটা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। ‘এল ক্লাসিকো’ বা রিয়াল-বার্সার ধ্রুপদী লড়াইয়ের সঙ্গে রাজনীতি-সংস্কৃতি, নিপীড়ণ আর প্রতিরোধগাথা এত অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে, যেটা আর অন্য কোনো ফুটবল ম্যাচে দেখা যায় না।

বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব সবসময় ছিল কাতালোনিয়া জাতীয়তাবাদের প্রতীক। ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত, তিন বছরের রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের পর স্বৈরশাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো যখন ক্ষমতা দখল করলেন তখন বার্সেলোনার ওপর নেমে আসে নির্মম অত্যাচার। এর একটা অন্যতম প্রধান কারণ: ১৯৩৬ সালে ফ্রাঙ্কোর সেনাবাহিনীর ক্যু’র বিরুদ্ধে প্রথম আওয়াজ এসেছিল বার্সেলোনা থেকে। সেবছর বার্সার সভাপতি জোসেফ সুনিয়োলকে গ্রেপ্তার করে হত্যা করে ফ্রাঙ্কোর সেনাবাহিনী। ১৯৩৬ সালের পর ফ্রাঙ্কোর শাসনামলে নিষিদ্ধ করা হয় কাতালান ভাষা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় কাতালান ভাষায় লেখা বহু বই। সামরিক শাসনামলে এসবের প্রতিবাদ জানানোর মঞ্চ হিসেবে কাতালোনিয়ার মানুষ বেছে নিয়েছিল ফুটবল মাঠকে। বার্সেলোনার মাঠ ন্যু ক্যাম্প পরিণত হয়েছিল নিপীড়ত মানুষের মুখ খোলবার জায়গা। এখানেই কোনো দ্বিধা-ভয় ছাড়াই তারা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারত মাতৃভাষায়। এভাবেই সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিল একটা ফুটবল মাঠ ও ক্লাব। বার্সেলোনা এখনও সেই উত্তরাধিকার বহন করে। এখনও তাদের শ্লোগান: ‘ক্লাবের চেয়েও বেশি কিছু’।

Catalonia vs Argentina

অন্যদিকে ফ্রাঙ্কোর মদমপুষ্ট হয়ে রিয়াল মাদ্রিদ পরিণত হয় শাসকদের আভিজাত্যের প্রতীককে। উঁচু পদ পাওয়ার আশায় জেনারেল ফ্রাঙ্কোর দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য রিয়ালের স্যান্টিয়াগো বার্নাব্যু স্টেডিয়ামে হাজির হতেন স্পেনের অভিজাতরা। সেনা কর্মকর্তা-ব্যবসায়ীরা। ফ্রাঙ্কোও রিয়াল মাদ্রিদের সাফল্যকে ব্যবহার করতেন নিজের ক্ষমতার যৌক্তিকতা টিকিয়ে রাখার জন্য। এর জন্য নিজের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকে নগ্নভাবে ব্যবহার করতেও পিছপা হতেন না স্পেনের কুখ্যাত স্বৈরশাসক। বার্সেলোনার খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখানো, রেফারিদের কিনে নেওয়া ইত্যাদি নানা উপায়ে বার্সার ওপর আধিপত্য বজায় রেখেছে মাদ্রিদ। ১৯৭৫ সালের ২০ নভেম্বর ফ্রাঙ্কোর মৃত্যুসংবাদ শুনে কুখ্যাত এই স্বৈরশাসকের মূর্তি নিয়ে আনন্দে লোফালুফি করেছিলেন বার্সেলোনার সেক্রেটারি জাউম রোসেল ও পরিচালক হুয়ান গ্রানাডোস। একটা নিপীড়ণ-নির্যাতনমূলক যুগের অবসান হওয়ায় তাঁরা যে কী পরিমাণ খুশি হয়েছিলেন তা স্পষ্টই বোঝা যায়।

ফুটবলে রিয়াল-বার্সার লড়াই যে মহা গুরুত্বপূর্ণ তা নতুন করে বলার কিছু নেই। একই সঙ্গে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিকভাবেও নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইউরোপের অন্যতম সেরা দুই ক্লাব। খুব সাম্প্রতিক সময়েও, ২০১৩ সালে স্বাধীন কাতালোনিয়ার দাবিতে ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ জায়গা জুড়ে মানববন্ধন করেছেন সেখানকার অধিবাসীরা। হাতে-হাত রেখে এই প্রতিবাদের ঢেউ বয়ে গেছে বার্সেলোনার ন্যু ক্যাম্প স্টেডিয়ামের ভেতর দিয়েও। তার আগের বছর স্বাধীন কাতালোনিয়া ও তার ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিও দিয়েছে বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব।

CATALONIA Human chain

তাই ‘ডার্বি’র প্রথাগত সংজ্ঞার সঙ্গে ঠিকঠাক না মিললেও রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনা লড়াই পরিণত হয়েছে ইউরোপের অন্যতম প্রধান দ্বৈরথে। এর সঙ্গে মেসি-রোনালদো, বেল-নেইমারের ফুটবলীয় লড়াইয়ের উন্মাদনা যেমন আছে। ঠিক তেমনি আছে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের উত্তাপ-উত্তেজনা।

রাজনীতিতেও চলছে বার্সা-রিয়াল লড়াই

catalonia human chain 

‘রিয়াল মাদ্রিদ যখন বার্সেলোনার বিপক্ষে খেলে তখন বিশ্ব থেমে যায়।’- এল ক্লাসিকোর জনপ্রিয়তা বর্ণনা করতে গিয়ে ঠিক এই বাক্যটিই ব্যবহার করেছিলেন রিয়ালের সাবেক কোচ হোসে মরিনহো। খুব বেশি বাড়িয়ে হয়তো বলেননি এই পর্তুগিজ কোচ। গত বছরের অক্টোবরে রিয়াল-বার্সা দ্বৈরথে অংশ নিতে স্পেনে ছুটেছিলেন ২৮টি দেশের ৬৮০জন সাংবাদিক। খেলাটি সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার ৩০টিরও বেশি দেশে। খেলাটি একযোগে দেখেছিল ৪০ কোটি মানুষ। ফুটবলপ্রেমী, অথচ এল ক্লাসিকোর নাম শোনেননি এমনটা হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না। রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনার দ্বৈরথটা শুধু স্পেনেই না, সমগ্র ফুটবল বিশ্বেরই আকর্ষণ।

স্প্যানিশ এই দুইটি শহরের মধ্যে চলমান আরও একটি লড়াই হয়তো অচিরেই কেড়ে নিতে পারে সমগ্র বিশ্বের মনোযোগ। কারণ শুধু ফুটবলেই না, স্পেনের রাজনীতিতেও চলছে বার্সা-মাদ্রিদ লড়াই। সম্প্রতি স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা দাবি করে একটি মানববন্ধন করেছিলেন কাতালোনিয়ার বাসিন্দারা। স্বাধীনতার দাবি হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছিল প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। স্প্যানিশ সরকারের প্রতি কাতালানদের দাবি, খুব তাড়াতাড়ি একটা গণভোট আয়োজন করতে হবে, যা থেকে নির্ধারিত হবে যে, তাদের একটা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ে তোলার অধিকার আছে কিনা।

catalan1

‘কাতালোনিয়া স্পেন নয়’, ‘আমরা স্বাধীন হতে চাই’ ইত্যাদি ব্যানার লিখে লাখ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন এই মানববন্ধনে। লাল-হলুদের এই ঢেউটা অতিক্রম করেছে বার্সেলোনার বিখ্যাত ন্যু ক্যাম্প স্টেডিয়ামের ভেতর দিয়েও। কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনায় উপস্থিত ছিলেন সরকারি চাকুরিজীবী ইস্টার সারামোন। এখানকার অন্য অনেক বাসিন্দাদের মতো সারামোনও মনে করেন যে, কেন্দ্রিয় সরকার কাতালানদের উপর অনায্য আচরণ করছে। ট্যাক্স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে, ভাষার অধিকারসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক ইস্যুর ক্ষেত্রে। তিনি বলেছেন, ‘স্বাধীনতার পক্ষে সংখ্যাগরীষ্ঠ মানুষ আছে কিনা, সেটা দেখার জন্য আমরা একটা গণভোট চাই। কিন্তু সমস্যা হলো স্পেন এটা শুনবে না। আমাদের একটাই আশা যে, ইউরোপ আর বাকি বিশ্ব এটার জন্য স্প্যানিশ সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে পারে।’

স্বাধীন কাতালোনিয়ার দাবিটা অনেকদিন ধরেই ছিল। সেটা আরও জোরদার করেছে ইউরোপের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। ইউরো অঞ্চলের আর্থিক সংকটের সর্বশেষ শিকারে পরিণত হয়েছে স্পেন। যার ফলে এখন আন্তর্জাতিক সাহায্য চাওয়ার চিন্তাভাবনাও আছে ইউরোপের অন্যতম বড় অর্থনীতির এই দেশটির। নানা ধরনের কৃচ্ছনীতি আরোপের ফলে স্পেনের কেন্দ্রিয় সরকারও হয়ে পড়েছে ব্যপকভাবে অজনপ্রিয়। ট্যাক্স বৃদ্ধি, জনসেবামূলক খাতে বরাদ্দ ঘাটতির বিষয়গুলো মেনে নিতে পারছে না কাতালানরা। সেই সঙ্গে কাতালান ভাষার উপর আধিপত্যশীল আচরণও ক্ষুব্ধ করেছে এই অঞ্চলের মানুষদের। গত বছরের শেষের দিকে স্পেনের প্রতিটা স্কুলে স্প্যানিশ ভাষায় পাঠদানের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করার একটি প্রস্তাবও উস্কে দিয়েছে কাতালানদের স্বাধীকার আন্দোলন। সব মিলিয়ে বেশ খারাপ পরিস্থিতিতেই আছে স্পেনের কেন্দ্রিয় সরকার।

কিন্তু স্পেনের সবচেয়ে ধনী ও অন্যতম শিল্পায়িত অঞ্চলটিকে খুব সহজে স্বাধীনতাও দিতে চাইবে না মাদ্রিদের নীতিনির্ধারকরা। অর্থনৈতিক দিকগুলো বাদ দিয়ে শুধু ফুটবল দলটার দিকে তাকালেও স্পষ্ট বোঝা যায় কাতালানরা স্পেনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কাতালোনিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে দিলে স্পেনকে দল গঠন করতে হবে কার্লোস পুয়োল, জরডি আলবা, সেস ফেব্রিগাস, জেরার্ড পিকে, জাভি, সার্জিও বুসকেটস, ক্রিশ্চিয়ান টেলোদের ছাড়া। তেমনটা হলে ফুটবল বিশ্বে সর্বজয়ী স্পেনের আধিপত্য কতটা বজায় থাকবে সন্দেহ আছে।

barcelona

যদিও স্বাধীন কাতালোনিয়ার দাবি দিনদিন বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে কাতালোনিয়ার ৭.৫ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ৮১ শতাংশই চায় স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। বার্সেলোনা ফুটবল দলও গত ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছিল স্বাধীন কাতালোনিয়া ও তার ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণের দাবি, ‘আমাদের স্বাধীন দেশের পরিচয় তৈরির একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আমাদের ভাষা। ঠিক যেমনটা আমাদের ক্লাব। আমরা খুব দৃঢ়ভাবে কাতালান ভাষা চর্চা ও শিক্ষার অধিকার রক্ষা করতে চাই।’

কাতালোনিয়া আর স্পেনের এই লড়াইয়ের কেন্দ্রে রয়েছে বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদ। দুইটি শহরই দুই অঞ্চলের রাজধানী। তাই এখন হয়তো সমান্তরালেই চলতে পারে ফুটবলের ধ্রুপদী লড়াই আর রাজনীতির মারপ্যাঁচটা। মাঠের লড়াইয়ে আগামী মাসেই মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ¦ী এই দুই ফুটবল ক্লাব। ন্যু ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত হবে এবারের মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো। সেদিন হয়তো ঘুঁচেও যেতে পারে খেলা আর রাজনীতির সীমানা। স্বাধীনতার দাবি সম্বলিত ব্যানার নিয়েই হয়তো হাজির হয়ে যেতে পারেন বার্সেলোনার সমর্থকেরা।