Archive for the ‘ বিস্ময়কর ’ Category

কাজাকিস্তানের ঘুমন্ত মায়াপুরী!

Teaser sleeping

এ যেন ঠিক সেই রুপকথার মায়াপুরী। অদ্ভুত কোনো এক জাদুর মায়ায় দিনের পর দিন ঘুমিয়ে থাকছেন সেই মায়াপুরীর বাসিন্দারা। রুপকথার গল্প সত্যি হয়ে ফুটে উঠেছে কাজাকিস্তানের ছোট্ট শহর কালাচিতে। সোভিয়েত ইউনিয়ন আমালের একটি ইউরেনিয়াম খনির পাশে অবস্থিত এই শহরে কোনো এক রহস্যময় নিদ্রা অসুখে আক্রান্ত হয়ে দুই থেকে ছয় দিন পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকছেন সেখানকার অধিবাসীরা। জেগে ওঠার পর ভুগছেন স্মৃতিবিভ্রমে।

২০১০ সালে প্রথম দেখা যায় এই অদ্ভুত ব্যাপারটি। আর ২০১৩ সালের মার্চ মাস থেকে সেটা ক্রমেই বাড়ছে। ঘুমিয়ে যাওয়া ছাড়াও রহস্যময় এই রোগের অন্য উপসর্গগুলো হচ্ছে ঝিমঝিম ভাব, দাঁড়িয়ে থাকতে না পারা ও চরম শারিরীক অবসাদ। রাশিয়ান টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একদিন এক স্কুলে হঠাৎ করেই আটজন শিশু ঘুমিয়ে পড়ে। কয়েক মাস পরে দেখা যায় একই দিনে ৬০ জন হঠাৎ করে নিদ্রার কোলে ঢলে পড়ে।

ম্যাশেবলের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে, এই রহস্যের কিনারা করার জন্য কিছু বিজ্ঞানী ও ডাক্তার উড়ে যান কালাচিতে। কিন্তু পরিবেশ থেকে শুরু করে রোগীর তথ্য উপাত্ত পরীক্ষা করেও কোনো উপসংহারে পৌঁছাতে পারেননি তারা। ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাল পরীক্ষার ফল নেতিবাচক। আফ্রিকান ট্রাইপানোসোমিয়াসিস নামের একটি অসুখে এধরণের উপসর্গ দেখা যায়। কিন্তু সেটা যে কারণে হয়ে থাকে তার কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি কালাচির মানুষদের মধ্যে।

ইউরেনিয়াম খনির তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানিরা। কিন্তু সেটারও কোনো পাকাপোক্ত তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে পারছেন না তাঁরা। কাজাকিস্তানের জাতীয় নিউক্লিয়ার সেন্টারের রেডিয়শন সেফটি এন্ড ইকোলজি ইন্সটিটিউটের পরিচালক সার্গেই লুকাশেঙ্কো বলেছেন যে তিনি মনে করেন ব্যাপারটি বর্ণহীন, তেজস্ক্রিয় গ্যাস রোডনের কারণে হচ্ছে না। সার্বিয়ান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘এটা কার্বন মনোক্সাইডের কারণে হতে পারে। এই অঞ্চলের অদ্ভুত অবস্থান ও আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে আমাদের কেউ কেউ এমন সন্দেহ করছে। এখানে চিমনির ধোঁয়া ওপরে উঠে যাওযার বদলে নিচে ও চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। কার্বন মনোক্সাইডের কারণে প্রায়ই মাথাব্যাথা, বমি ও অবসন্ন ভাব আসতে পারে। কিন্তু এই উদ্ভট ঘুমিয়ে পড়ার ব্যাপারটা সেটা দিয়েও ব্যাখ্যা করা যায় না।’

Uranium_mine

অদ্ভুত এই রোগের কারণে কালাচি শহরের অনেকেই পাড়ি জমিয়েছেন অন্য কোথাও। যারা আছেন তাঁরাও এখন অন্য কোথাও চলে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তেমনই একজন ওলগা সামুসেঙ্কো জানালেন নিজের ভয়াল অভিজ্ঞতার কথা, ‘সেপ্টেম্বরের এক তারিখে আমরা ছেলেমেয়েদের স্কুল প্যারেডে গিয়েছিলাম। আমার বাচ্চাটা ছোট। ফলে আমরা শুধু দেখতেই গিয়েছিলাম। তারপর (দুই বছর বয়সী) স্টানিস্লাভ বাড়ির উঠোনে কিছুক্ষণ খেলে ৪টা নাগাদ বাড়িতে ফিরেছে। ফিরেই সে ঝুপ করে মাটিতে পড়ে যায়। সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না। বসতেও পারছিল না। আমি তাকে দাঁড়া করানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সে বারবার পড়ে যায়। তার দৃষ্টি ছিল অন্য কোথাও। মনে হচ্ছিল যেন মাতাল হয়ে আছে। খুবই ভয় পেয়েছিলাম। আমাদের এখন এখান থেকে চলে যেতে হবে। এখানে কোনো ভবিষ্যৎ নেই। সবাই চলে যাচ্ছে। অনেকেই তাদের ছেলেমেয়েকে দূরে অন্য কোনো শহর বা গ্রামে রেখে এসেছে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। কেউ কিছু ব্যাখ্যাও করতে পারছে না। আমরা কেউই জানি না কী ঘটছে।’

Sleeping Disorder

দেড় বছরেই পেশাদার ফুটবলার!

মাত্র ১৩ বছর বয়সে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার সঙ্গে পেশাদারী ফুটবলার হিসেবে চুক্তি করেছিলেন এসময়ের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি। তারচেয়েও কম, মাত্র ১২ বছর বয়সে বলিভিয়ার ক্লাব অরোরার হয়ে পেশাদারী ফুটবল খেলা শুরু করেছিলেন মাউরিসিও বালডিভিয়েসো। তবে সম্প্রতি মনে হয় এই সবধরণের রেকর্ডই ভেঙ্গে দিয়েছে নেদারল্যান্ডের বায়ের্কে ভন ডার মেইজ। ডাচ ক্লাব ভেনলোস ভোয়েটবল ভেরেইনিং ভেনলোর (ভিভিভি-ভেনলো) হয়ে তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন মাত্র ১৮ মাস বয়সে। গত ২৬ এপ্রিল বেশ জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়েই ১০ বছরের জন্য এই চুক্তি সাক্ষরের অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করেছে ডাচ ক্লাবটি।

বিশ্বজুড়ে যে তাকে নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে এটা হয়তো ভালোমতো জানেই না দেড় বছরের ভন ডার মেইজ। এখনো ভালোমতো কথা বলাও শেখে নি শিশুটি। তবে চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানে নিজের কাজটা নিজেই করেছে ক্ষুদে ফুটবলার। চুক্তিপত্রে নিজ হাতেই কলম দিয়ে আঁঁকিবুকি করে পেশাদারী ফুটবলের জগতে নিজের নাম লিখিয়েছে এই বিস্ময় বালক। উল্লেখ করা হয়তো অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, আশ্চর্যজনকভাবে ‘বল’ শব্দটি বেশ জোড়ালোভাবেই উচ্চারণ করতে পারে সে।

ইউটিউবের প্রকাশিত একটি ভিডিওর মাধ্যমে প্রথম সবার নজর কাড়েন বায়ের্কে ভন ডার মেইজ। ভিডিওটিতে দেখা যায় যে, সদ্যই একপা দুই পা হাঁটতে শেখা এই শিশুটি শতভাগ নির্ভূলতার সঙ্গে পরপর তিনটি বল চমত্কার দক্ষতায় নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পাঠাতে সক্ষম হয়। মাত্র দেড় বছর বয়সী পেশাদার ফুটবলারের এই ফুটবল দক্ষতা ইউটিউবের মাধ্যমে প্রকাশ করেন তার বাবা। এরপর থেকেই রীতিমতো তারকাখ্যাতি পেয়ে যায় ছোট্ট শিশুটি। এখন পর্যন্ত ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ বার। ভবিষ্যতে এই শিশুটিই হয়ে উঠবে ডাচ কিংবদন্তী ইয়োহান ক্রুইফ বা ডেনিস বার্গক্যাম্পের মতো বিশ্বমানের ফুটবলার, এমন প্রত্যাশা থেকেই হয়তো এই ছোট্ট শিশুটিকে পেশাদারী ফুটবলের জগতে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাচ ক্লাব ভিভিভি-ভেনলো। তবে এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না যে, ভবিষ্যতে সে স্ট্রাইকার হবে নাকি ডিফেন্ডার। চুক্তি সাক্ষরের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ার পর এক সংবাদ বিবৃতির মাধ্যমে ক্লাবটি জানায়, ‘শিশুটির পছন্দনীয় পজিশন এখনো নিশ্চিত না। যদিও আমরা নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি যে, ডানপায়ের এই খেলোয়াড়ের চমত্কার কৌশল, অধ্যাবসায় আছে।’

কিন্তু শিশুটি সত্যিই বড় হয়ে ওঠার পর ফুটবল খেলবে কিনা বা এত ছোট বয়সেই কোন শিশুর খেলোয়াড়ী সক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া যায় কিনা, এমন প্রশ্ন তুলেছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা ও আচরণগত বিজ্ঞানীরা। ওরেগন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক স্টুয়ার্ট ট্রোস্ট বলেছেন, ‘বাচ্চাদের অগ্রগতিটা একেক ধাপে একেক রকম হয়। প্রত্যেকটা ধাপে অনেক বৈচিত্র্যও লক্ষ্য করা যায়। কিছু বাচ্চার কোন কোন সঞ্চালক পেশি খুব দ্রুতই বিকশিত হয়। বা অন্যদের তুলনায় তাড়াতাড়ি বিকশিত হয়। কিন্তু যদি কোন বাচ্চা তাড়াতাড়ি হাঁটা শেখে, তার মানে এই না যে, সে বড় হয়ে ম্যারাথন চ্যাম্পিয়ন হবে। এত কম বয়সেই কারও এরকম খেলোয়াড়ি সক্ষমতার পরিমাপ করা যায়না।’

অন্য বিশেষজ্ঞরাও এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন। ‘শারিরীক অবস্থা ও শৈশব-কর্মের ম্যানুয়্যাল’ শীর্ষক  বইয়ের লেখক রবার্ট এম. মালিনা বলেছেন, ‘শৈশবের কোন পারদর্শীতা ও বাস্তবে মাঠে খেলোয়াড়ী দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারার ভেতরে অনেক পার্থক্য আছে।’ প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময়ই বাচ্চারা কোন নির্দিষ্ট একটা খেলায় নিজের সক্ষমতা প্রমাণের সবচেয়ে ভালো সুযোগ পায় বলে মত দিয়েছেন তিনি। এরপরই তিনি তুলেছেন সবচেয়ে মোক্ষম প্রশ্নটা, ‘কী হবে যদি বাচ্চাটা বড় হওয়ার পরে ফুটবলের উপর তার কোন আগ্রহ না জন্মায়?’

এতকিছুর পরেও দেড় বছর বয়সী এই শিশুটিকে পেশাদার ফুটবলারদের কাতারে নিয়ে এসেছে ডাচ ক্লাব ভিভিভি-ভেনলো। অনেকেরই বিশ্বাস যে, শুধুমাত্র নিজেদের প্রচার বাড়ানোর জন্যই এই অভূতপূর্ব কাজটা করেছে ক্লাবটি। তবে এই চুক্তি সাক্ষরটাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘প্রতিকী’ বলে ঘোষণা করলেও হয়তো সত্যিই ক্লাব কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে যে, এই শিশুটি একদিন বড় ফুটবলার হবে। কারণ শিশুটির পিতামহ, জান ভন ডার মেইজও ছিলেন একজন ফুটবলার। তিনিও খেলতেন এই ক্লাবের পক্ষে। ভন ডার মেইজ ছিলেন একজন মিডফিল্ডার। ১৯৫৮-৬০ ও ১৯৬৪-৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি সামলেছেন এই ডাচ ক্লাবটির মাঝমাঠ। তাঁর এই ফুটবল উত্তরাধিকার নাতির রক্তেও বইছে বলে বিশ্বাস ক্লাবটির। তাদের মতে, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, পিতামহের ফুটবল প্রতিভা নিয়েই সে বেড়ে উঠছে।’

অবশ্য সবকিছুর পরে আপাতত ক্ষুদে এই ফুটবলারকে আগামীর জন্য শুধু শুভকামনাই জানিয়ে রাখতে পারে ক্লাবটি। ভবিষ্যতে সে আদৌ ফুটবল মাঠে পা রাখবে কিনা, সেটা জানার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হবে সবাইকে। তবে নজিরবিহীন এই কাজটি করে ক্লাবটি যে বিশ্বজোড়া আলোড়নটা বেশ ভালোমতোই তুলতে পেরেছে, তা একেবারে নিঃসন্দেহেই বলা যায়।

সভ্যতার আদল গড়া নিউরনগুলো

স্নায়ুবিজ্ঞানী বিলয়ানুর রামাচন্দ্রন কথা বলেছেন মিরর নিউরনের আকর্ষণীয় কার্যাবলী নিয়ে। খুব সাম্প্রতি আবিস্কৃত হয়েছে যে, এই নিউরণগুলোর মাধ্যমে আমরা কিভাবে জটিল সামাজিক আচরণবিধিগুলো দ্রুত শিখে ফেলি। যেগুলোর কিছু কিছু আমাদের চেনাজানা মনুষ্য সভ্যতারই ভিত্তি গড়ে দিয়েছে।

আমি আজ আপনাদের সামনে কথা বলতে চাই মনুষ্য মস্তিস্ক নিয়ে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এই বিষয়টা নিয়েই গবেষণা করি। এক মুহূর্তের জন্য এই সমস্যাটা নিয়ে একটু ভাবুন। এই হল একটা মাংস পিণ্ড। মোটামুটি তিন পাউন্ড ওজনের, যেটা আপনি আপনার হাতের তালুর মধ্যেই ধরতে পারেন। কিন্তু এটা এই আর্ন্তনক্ষত্রিক জগতের বিশালত্বকেও ধারণ করতে পারে। এটা অসীমের অর্থকে ধারণ করতে পারে। আপনি আপনার নিজের অস্তিত্বের অর্থ নিয়েও প্রশ্ন করতে পারেন। প্রশ্ন করতে পারেন ঈশ্বরের প্রকৃতি নিয়েও।

আর এটা সত্যিই এই দুনিয়ার সবচেয়ে বিস্ময়কর জিনিস। এটা্ই মনুষ্য প্রজাতির কাছে একটা বিশাল রহস্য। কিভাবে এ-সব কিছু এল? তো, এই মস্তিস্কটা, যেমনটা আপনি জানেন, তৈরি হয়েছে নিউরন দিয়ে। আমরা এখানে নিউরনগুলোকে দেখছি। পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের মস্তিস্কে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরন থাকে। আর মস্তিস্কের মধ্যে এই প্রতিটি নিউরন প্রায় ১০০০ বা ১০,০০০ অন্যান্য নিউরনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এটা মাথায় রেখে, মানুষ হিসেব করেছে যে, এই পরিমাণ মস্তিস্ক কার্যকলাপের permutation ও combination -এর অঙ্কটা মহাবিশ্বের সব মৌলিক কনিকার সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যায়।

তো, আপনি কিভাবে এই মস্তিস্ক নিয়ে জানাবোঝাটা শুরু করবেন? একটা পদ্ধতি হলো, সেইসব রোগীদের নিয়ে পরীক্ষা করা যাদের মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশে ক্ষত আছে, এবং এটার উপর নির্ভর করে তাদের আচরণের পরিবর্তন পর্যালোচনা করা। এটা নিয়েই আমি TED এ গতবার কথা বলেছি। আজ আমি একটা ভিন্ন ধরণ নিয়ে কথা বলব। যেটা হলো: মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশে ইলেকট্রোড লাগানো। যেন সত্যি সত্যিই মস্তিস্কের একেকটা স্বতন্ত্র স্নায়ুকোষের কার্যকলাপ রেকর্ড করা যায়।

এখন, খুব সমপ্রতি একটা আবিস্কার সাধিত হয়েছে ইতালির পারমায়। জিয়াকোমো রিজোলাত্তি ও তাঁর সহকর্মী গবেষক দলের দ্বারা। সেটি হলো, এক ধরণের গুচ্ছ নিউরণের উপস্থিতি। যাদেরকে বলা হয় মিরর নিউরন। যেগুলো থাকে মস্তিস্কের সামনে, ফ্রন্টাল লোবসে। এখন, এই আবিস্কারটা এতদিন ধরে জানা একটা ধারণাকে উল্টে দেয় যে, মস্তিস্কের সামনে থাকা নিউরনগুলো সাধারণ মোটর কমান্ড নিউরন। এটাই আমরা জানি বিগত ৫০ বছর ধরে। এই নিউরনগুলো সক্রিয় হবে, যখন কোন ব্যক্তি কোন নির্দিষ্ট একটা কাজ করতে যাবেন। উদাহরণ হিসেবে, যদি আমি এটা করতে যাই, একটা আপেলের কাছে পৌঁছাতে চাই ও সেটা ধরতে চাই, তাহলে আমার মস্তিস্কের সামনে থাকা একটা মোটর কমান্ড নিউরন সক্রিয় হবে ও আমাকে নির্দেশ দিবে সেই বস্তুটা ধরে ফেলতে। এইগুলো হলো মোটর কমান্ড নিউরন। এটাই আমরা জানি একটা লম্বা সময় ধরে।

কিন্তু রিজোলাত্তি যা পেয়েছেন, তা হলো এই নিউরনগুলোরই একটা সাবসেট। সম্ভবত এগুলোর ২০ শতাংশ মতো। এই নিউরনগুলো সক্রিয় হবে, যখন আমি অন্য কাউকেও ঐ একই কাজ করতে দেখব। তো, এগুলো সেই নিউরন, যেটা সক্রিয় হবে যখন আমি নিজে কোন কাজ করতে যাব এবং তখনও, যখন আমি জো-কে কোন একটা বস্তুর কাছে পৌঁছাতে ও ধরতে দেখব। আর এটা সত্যিই তাক লাগানোর মতো। কারণ ব্যাপারটা এরকম যে, এই নিউরনগুলো অন্য মানুষদের দৃষ্টিভঙ্গিটাও গ্রহণ করছে। এই নিউরনগুলো মস্তিস্কের মধ্যে অন্য মানুষদের কার্যকলাপের একটা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি স্টিমুলেশন তৈরি করে।

এখন, এই মিরর নিউরনগুলোর গুরুত্বটা কোথায়? একটা হলো, এগুলো নিশ্চিতভাবেই কোন ব্যক্তিকে অনুকরণ ও তার সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা করা জাতীয় জিনিসের সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ একটা জটিল কাজ অনুকরণ করতে হলে আমার মস্তিস্ককে অন্য মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে পারতে হবে। তো, এটা অনুকরণ করা ও কারও সমকক্ষ হতে পারার জন্য জরুরি। আচ্ছা, এটা গুরুত্বপূর্ণ কেন? এবার আমরা নজর দেই পরবর্তী স্লাইডে। তো, আপনি কিভাবে এই অনুকরণ করেন? কেনই বা এটা গুরুত্বপূর্ণ? মিরর নিউরন আর অনুকরণ, কারও সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা?

এখন আমরা একটু নজর দেই সংস্কৃতির দিকে। মনুষ্য সংস্কৃতি প্রত্যয়টার দিকে। আপনি যদি প্রায় ৭৫ হাজার থেকে একশ হাজার বছর পিছিয়ে গিয়ে মানুষের বিবর্তনটা দেখেন, তো দেখবেন, প্রায় ৭৫ হাজার বছরের কাছাকাছি সময়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটেছিল। আর সেটা হলো একটা তড়িত্ উত্থান ও দ্রুতই খুব দক্ষতাপূর্ণ কর্মকাণ্ড, যেগুলো মানুষেরই বিশেষত্ব, যেমন হাতিয়ার, আগুন, বাসস্থানের ব্যবহার এবং অবশ্যই ভাষার ব্যবহার। এবং অন্য কোন মানুষের চিন্তা অনুমান করতে পারার ও সেই মানুষের আচরণ অনুধাবন করতে পারার ক্ষমতা। এই সবকিছুই হয়েছিল তুলনামূলক দ্রুততার সঙ্গে।

যদিও মনুষ্য মস্তিস্ক তার বর্তমান আকারটা পেয়েছিল প্রায় তিন বা চারশ হাজার বছর আগে। কিন্তু একশ হাজার বছর আগে এই সবকিছু ঘটেছিল খুবই খুবই দ্রুত। আর আমার দাবি হলো, এ সবকিছুর মূলে ছিল একটা সুক্ষ মিরর নিউরন ব্যবস্থার উদ্ভব। যেটা আপনাকে অন্য মানুষদের কাজের অনুকরণ ও তার সমকক্ষ হতে সামর্থ্য যোগায়। তো, তার ফলে যখন কোন গোষ্ঠীর একজন সদস্য একটা আকস্মিক আবিস্কার করে ফেলে, ধরেন, আগুনের ব্যবহার বা নির্দিষ্ট কোন হাতিয়ারের ব্যবহার আবিস্কার করে ফেলে, তখন পরবর্তীতে তা বিস্মৃত হয়ে যাওয়ার বদলে এটা দ্রুতই সমগ্র জনমানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত হয়।

তো, এর ফলে বিবর্তনটা হঠাত্-ই ডারউইনিয়ান বিবর্তন না হয়ে, হয়ে পড়ে লামারকিয়ান বিবর্তন। ডারউইনিয়ান বিবর্তন খুব ধীরগতির, এটা নেয় কয়েকশ হাজার বছর। একটা পোলার বিয়ার থেকে কোট বানাতে এটা নেয় কয়েক হাজার প্রজন্ম। হয়ত একশ হাজার বছর। কিন্তু একটা মানুষ, একটা বাচ্চা, শুধু তার মা-বাবাকে একটা পোলার বিয়ার মেরে ফেলে সেটার চামড়াটা গায়ে জড়াতে দেখে। আর একধাপেই সেটা শিখে ফেলে। একটা পোলার বিয়ার যা শিখতে একশ হাজার বছর সময় নেয়, সেটা একটা মানুষের বাচ্চা ৫ মিনিটেই শিখতে পারে। বা ১০ মিনিটে। আর যখন এটা শেখা হয়ে গেল, তখন তা বাকি জনসমষ্টির মধ্যে ছড়িয়ে যায় গানিতিক হারে।

এটাই হলো ভিত্তি। জটিল কাজগুলোর অনুকরণ করতে পারাই হলো, যেটাকে আমরা বলি সংস্কৃতি আর এটাই সভ্যতার ভিত্তি। এখন, মস্তিস্কে আরেক ধরণের মিরর নিউরণ আছে, যেগুলো কিছুটা ভিন্ন ধরণের কাজে সম্পৃক্ত থাকে। কোন কাজের জন্য যেমন মিরর নিউরন থাকে। তেমনি কিছু মিরর নিউরন আছে স্পর্শ অনুভবের ক্ষেত্রে। অন্যভাবে বলা যায়, যদি কেউ আমাকে স্পর্শ করে, আমার হাত স্পর্শ করে, তাহলে মস্তিস্কের, সেনসোরি অঞ্চলের স্টোমাটোসেন্সরি কোরটেক্স-এর নিউরন সক্রিয় হবে। কিন্তু, এই একই নিউরন, কিছু ক্ষেত্রে সক্রিয় হয়ে উঠবে, যখন আমি অন্য কোন মানুষকেও স্পর্শ পেতে দেখবে। তো, এটা অন্য মানুষের স্পর্শ পাওয়ার অনুভূতির সঙ্গেও একাত্ম বোধ করছে।

তো, এই নিউরনগুলো বেশিরভাগই সক্রিয় হবে, যখন আমি শরীরের বিভিন্ন অংশে স্পর্শানুভূতি লাভ করব। ভিন্ন ভিন্ন অংশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিউরন সক্রিয় হবে। কিন্তু এগুলোর একটা সাবসেটও সক্রিয় হবে, যদি আমি শুধু অন্য কাউকে শরীরের সেই একই অংশে স্পর্শ পেতে দেখি। তো, এখানে আবার আমরা কিছু নিউরন পাচ্ছি, যেগুলো অন্য কারো স্পর্শানুভূতির সঙ্গে একাত্মতা জানাচ্ছে। এখন, তাহলে প্রশ্নটা ওঠে যে: যদি আমি শুধু অন্য একজন ব্যক্তিকে স্পর্শ পেতে দেখি, তাহলে আমি কেন কনফিউসজড হয়ে যাই না, আর কেন শুধু অন্য ব্যক্তির স্পর্শানুভূতি দেখে আমি আক্ষরিকভাবেই সেই স্পর্শ অনুভব করি না? আমি বলতে চাচ্ছি যে, আমি ঐ ব্যক্তির আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলাম, কিন্তু আমি তো সত্যি সত্যিই সেই স্পর্শটা অনুভব করলাম না। এর কারণ হচ্ছে, আপনার ত্বকে কিছু রিসেপটর আছে। স্পর্শ ও ব্যাথা অনুভবের রিসেপটর। এগুলো আপনার মস্তিস্কে ফিরে যায়, আর গিয়ে বলে, “চিন্তা করো না, তোমাকে স্পর্শ করা হয় নি।” তো, অন্য ব্যক্তির আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের মাধ্যমে আপনি সত্যি সত্যিই স্পর্শ অনুভব করেন না। এছাড়া হয়তো আপনি বিভ্রান্ত হয়ে পড়তেন ও তালগোল পাকিয়ে ফেলতেন।

আচ্ছা। তো, এই রিসেপটরগুলোর ফিরতি সাড়া, মিরর নিউরনের সিগন্যালগুলোকে বাতিল করে দেয়। ফলে আপনি সচেতনভাবে সেই স্পর্শ অনুভব করেন না। কিন্তু যদি আপনি আপনার একটা হাত সড়িয়ে ফেলেন, আপনি হাতটাকে অবশ করে ফেলেন, আপনি আমার হাতে একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে ব্রাচিয়াল প্লেক্সাস অবশ করে ফেললেন, এখন আমার হাত একেবারে সাড়হীন। এর মধ্য দিয়ে আর কোন অনুভূতি প্রবাহিত হচ্ছে না। এখন যদি আমি আপনাকে স্পর্শ পেতে দেখি, তাহলে আমি সত্যি সত্যিই আমার হাতে সেই স্পর্শ অনুভব করতে পারব। অন্যভাবে বললে, আপনি আপনার ও অন্য মানুষদের মধ্যে বিদ্যমান ব্যারিয়ার সড়িয়ে দিয়েছেন। তো, আমি এদেরকে ডাকি গান্ধি নিউরন বলে। বা একাত্মতার নিউরন (হাসি)

আর এটা কোন বিমূর্ত রূপক অর্থে না। আপনাকে, তার কাছ থেকে অন্য মানুষদের কাছ থেকে দূরে সড়িয়ে রেখেছে আপনার ত্বক। ত্বকটা সড়িয়ে ফেলুন, আপনি আপনার মাথায় অন্য মানুষদের স্পর্শানুভূতিও অনুভব করতে পারবেন। আপনি আপনার ও অন্য মানুষদের মধ্যে বিদ্যমান ব্যারিয়ার সড়িয়ে ফেলতে পারবেন। আর এটাই, বেশিরভাগ প্রাচ্য দর্শনের ভিত্তি, যে, অন্য মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সত্যিকারের কোন স্বাধীন-স্বতন্ত্র মনুষ্য সত্তা নেই। আপনারা, বস্তুত শুধু ফেসবুক বা ইন্টারনেট দিয়েই যে সংযুক্ত আছেন, তা-ই নয়। বরং আপনারা সত্যিকার অর্থে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত আছেন আপনাদের নিউরন দিয়ে। আর এই মুহূর্তে এই ঘরে এই নিউরনগুলোর একটা বন্ধন আছে। তারা কথা বলছে পরস্পরের সঙ্গে। আর সত্যিই আপনার সচেতনতা ও অন্য কারও সচেতনতার মধ্যে কোন ভিন্নতা নেই।

আর এটা কোন আউল-ফাউল দর্শন না। এটা গড়ে উঠেছে আমাদের স্নায়ুবিজ্ঞানের গোড়ার দিককার বোঝাপড়া থেকে। তো, আপনার কাছে অলীক হাতওয়ালা কোন ব্যক্তি আছে। যদি হাতটা সড়িয়ে দেওয়া হয় আর আপনার কাছে ঐ অলীক হাতটা আসে, তখন যদি আপনি অন্য কাউকে স্পর্শ পেতে দেখেন, তাহলে আপনি আপনার ঐ অদৃশ্য হাতে সেই স্পর্শ অনুভব করবেন। আরও মজার জিনিস হলো, যদি আপনি আপনার ঐ অলীক হাতটাতে ব্যাথা অনুভব করেন, তাহলে আপনি অন্য কোন ব্যক্তির হাত মালিশ করে দিতে দেখলেও আপনার ব্যাথার নিরাময় অনুভব করতে পারবেন। একদম যেন, এই নিউরনগুলো আপনাকে ব্যাথার উপশম করে দিচ্ছে শুধুই অন্য কারও হাত মালিশ করতে দেখে।

তো, এবার আমার শেষ স্লাইড। দীর্ঘদিন যাবত মানুষ বিজ্ঞান ও মানবিক— এই দুইটাকে জ্ঞানচর্চার দুইটা পৃথক শাখা হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে। সি.পি.স্নো বলেছেন দুইটা ভিন্ন সংস্কৃতির কথা। একদিকে বিজ্ঞান, অন্যদিকে মানবিক। কখনোই এই দুইয়ের মিলন হয়নি। মিরর নিউরন ব্যবস্থার কার্যকলাপের উপর দৃষ্টিপাত করে আমি বলতে চেয়েছি, এটা আপনাকে সুযোগ করে দেয় সচেতনতা, আত্মসত্তার উপস্থাপন, কী আপনাকে অন্য মানুষদের থেকে পৃথক করে রাখে, কিভাবে আপনি অন্য মানুষদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আরেকবার চিন্তা করার। এমনকি সংস্কৃতি ও সভ্যতার উদ্ভব কেমন করে হলো তা নিয়েও। যে বিষয়গুলো খোদ মনুষ্য প্রজাতিরই বিশেষত্ব। ধন্যবাদ। (হাততালি)

কাল্পনিক ‘অমরত্ব ফলের’ বাস্তব রুপ

চীনের ক্লাসিক উপন্যাস “জার্নি টু দ্য ওয়েস্ট”-এ এমন একটা কাল্পনিক ফলের দেখা পাওয়া যায়, যেটা খেলে মানুষ অমরত্ব লাভ করে। ফলটি দেখতে একটা শিশুর মতো। ১৬শ শতাব্দীর চীনা সাহিত্যে বর্ণিত এই শিশুসদৃশ কাল্পনিক ফলটিকেই বাস্তব রুপ দিয়েছেন চীনের কৃষক হাও জিয়ানজাং। অমরত্বের সন্ধান না দিতে পারলেও, উত্তরাঞ্চলের হেবেই প্রদেশে নিজের ফলবাগানে তিনি এমন এক ধরণের নাশপাতির চাষ করেছেন, যেটা দেখতে একেবারে একটা শিশু বুদ্ধের মতো।

২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে চীনা কৃষকের এই অদ্ভুত কীর্তিটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সেসময় পর্যন্ত প্রতিটি ৭ ডলার মূল্যে প্রায় ১৮ হাজার বুদ্ধ-সদৃশ নাশপাতি তিনি বিক্রি করে ফেলেছিলেন। ভিন্ন ধরণের এই ব্যবসায়িক উদ্যোগটিতে সাফল্য পেলেও শুরুর দিকে সবাই কিন্তু পাগল-ই ভেবেছিল জিয়ানজাংকে। প্রথম দিককার কথা স্মরণ করে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘মানুষ আমাকে পাগল ভেবেছিল। তারা বলেছিল, আমি বাতিকগ্রস্থ আর গাছে শিশু-সদৃশ ফল ফলানো কোনভাবেই সম্ভব না। তারা বলেছিল, আমি শুধু অর্থ আর সময়ই নষ্ট করছি।’ সবাই যে ভুল ছিল, সেটা তো জিয়ানজাং প্রমাণই করে দিয়েছেন।

২০০৩ সালে, সুপারমার্কেটগুলোতে বিভিন্ন জিনিসের আকারে জেলি বিক্রি করতে দেখে গাছের ফলকেও এ ধরণের আদল দেওয়ার চিন্তাটা মাথায় আসে জিয়ানজাংয়ের। তারপর নিরলস শ্রম ও গবেষণার মাধ্যমে তিনি তাঁর নাশপাতি বাগানের ফলগুলোকে শিশু-বুদ্ধের আদলে উত্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন। ২০১০ সালের জন্য প্রায় ৭০-৮০ হাজার ফলের অর্ডার পেয়েছিলেন এই চীনা কৃষক। তবে এখন তিনি শুধু এখানেই থেমে যেতে রাজি নন। আগামীতে তাঁর এই বিচিত্র ফলগুলো বিদেশেও রপ্তানীর আশা রাখেন জিয়ানজাং। আর তাঁর ফলগুলোকেও তিনি দিতে চান নতুন রুপ। ভবিষ্যতে নিজের বাগানে, বাইবেলের বিভিন্ন চরিত্র ও বিখ্যাত অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের আদলে ফল ফলানোর স্বপ্নও আছে তাঁর।— রয়টার্স

জিল বোলটে টেলরের শক্তিশালী অর্ন্তদৃষ্টিপূর্ণ স্ট্রোক

আমি মস্তিস্ক নিয়ে পড়াশোনা করার জন্যই বড় হয়েছিলাম কারণ আমার ভাই দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছিল: সিজোফ্রেনিয়া। আর তার বোন হিসেবে ও পরে একজন বিজ্ঞানী হিসেবে, আমি বুঝতে চেয়েছিলাম যে কেন আমি স্বপ্ন দেখতে পারি, আমার স্বপ্নগুলোকে মেলাতে পারি বাস্তবের সঙ্গে, এবং কিভাবে আমি আমার স্বপ্নগুলোকে সতি্য করতে সমর্থ হই? আর আমার ভাইয়ের মস্তিস্ক আর তার সিজোফ্রেনিয়ায় কী আছে যে, সে তার স্বপ্নগুলো মেলাতে পারে না একটা সর্বজনগ্রাহ্য বাস্তবতার সঙ্গে, বরং সেগুলো ভ্রমে পরিণত হয়?

তাই আমি আমার পেশাগত জীবনকে উৎসর্গ করেছি গবেষণায় গুরুতর মানসিক ব্যাধিগুলো নিয়ে। আর আমার দেশের বাড়ি ছেড়ে পাড়ি জমালাম ইন্ডিয়ানা থেকে বোস্টনে, ওখানে আমি কাজ করা শুরু করলাম হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের, প্রফেসর ড. ফ্রান্সাইন বেনেসের গবেষণাগারে মনোবিজ্ঞান বিভাগে। আর ঐ গবেষনাগারে আমরা প্রশ্ন তুলছিলাম যে, “বিভিন্ন ব্যক্তিদের মস্তিস্কের মধ্যে জৈব পার্থক্যটা কী যাদেরকে স্বাভাবিক মানুষ বলে বিবেচনা করা হয় তাদের তুলনায় সেইসব মানুষের মস্তিস্কের পার্থক্যটা কী যাদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে সিজোফ্রেনিয়া, সিজোএফেক্টিভ বা বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগী হিসেবে?”

তো উত্তরের খোঁজে আমরা মস্তিস্কের সুক্ষ-সার্কিটগুলো সনাক্ত করছিলাম। মস্তিষ্কের কোন কোষটা কোন কোষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে কোন কোন রাসায়নিক পদার্থ এখানে যুক্ত হচ্ছে, কী পরিমাণে যুক্ত হচ্ছে? তো আমার জীবনটা অনেক অর্থবহ হয়ে উঠেছিল কারণ সারাদিন আমি এই ধরণের গবেষনার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম এরপর সন্ধ্যায় ও সপ্তাহিক ছুটিতে আমি কাজ করতাম ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব মেন্টাল ইলনেস (NAMI)-র প্রবক্তা হিসেবে। কিন্তু ১৯৯৬ সালের ১০ ডিসেম্বর হঠাত করেই সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর আবিস্কার করলাম যে, আমার নিজেরই একটা মানসিক বিপর্যয় চলছে। আমার মস্তিস্কের বাম পার্শ্বে একটা রক্তনালী ছিঁড়ে যায়। আর এরপর চারটা ঘন্টা আমি দেখলাম আমার মস্তিস্ক পুরোপুরি টালমাটাল হয়ে গেছে কোন তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ব্যাপারে। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের ঐ সকালে আমি হাঁটতে, কথা বলতে, পড়তে, লিখতে এমনকি আমার জীবনের কোন ঘটনা মনে করতেও পারছিলাম না। আমি যেন হয়ে গিয়েছিলাম একজন পূর্ণ বয়স্ক নারীর শরীরে একটা ছোট্ট শিশু।

আপনারা যদি কখনো একটা মানুষের মস্তিস্ক দেখেন তাহলে দেখতে পাবেন যে, এখানে দুইটা অংশ একে অপরের থেকে পুরোপুরিই আলাদা। আর আমি আপনাদের জন্য একটা সত্যিকারের মস্তিস্ক নিয়ে এসেছি। তো, এটা হচ্ছে একটা সত্যিকারের মনুষ্য মস্তিস্ক।

এইটা সামনের দিকের অংশ। আর এই পেছনের দিকে স্পাইনাল কর্ড ঝুলছে। এভাবেই এটা আমার মাথার মধ্যে বসানো থাকে। আর আপনি যদি এই মস্তিষ্কের দিকে তাকান, তাহলে স্পষ্টতই দেখতে পাবেন যে দুইটা সেরেব্রাল করটেক্স একে অপরের থেকে পুরোপুরিই আলাদা।আপনাদের মধ্যে যারা কম্পিউটারের কার্যপ্রণালী বোঝেন, আমাদের ডান অংশটা কাজ করে প্যারালাল প্রসেসরের মতো অন্যদিকে বাম অংশের তুলনা দেওয়া যায় সিরিয়াল প্রসেসরের সঙ্গে। এই দুইটা অংশ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে করপাস কোলোসামের মাধ্যমে।যেটা তৈরি হয়েছে ৩০০ মিলিয়ন এক্সোনাল ফাইবার দিয়ে। কিন্তু এছাড়া মস্তিস্কের এই দুইটা অংশ একে অপরের থেকে পুরোপুরিই ভিন্ন ধরণের। কারণ তারা তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে ভিন্নভাবে দুইটা অংশের চিন্তাধারাও পুরোপুরি ভিন্ন ধরণের তাদের কাজ করার জায়গাও ভিন্ন ধরনের। আর সাহস নিয়ে বললে তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও আলাদা রকমের।

আমাদের মস্তিস্কের ডানদিকের অংশটার কাজকারবার সবকিছুই বর্তমান সময়টাকে নিয়ে।এর সবকিছুই “এখন এবং এই মুহূর্ত” নিয়ে। ডানদিকটা চিন্তা করে ছবির মাধ্যমে।সবকিছু শেখে কাইনেসথেটিক্যালি, আমাদের দেহের নড়াচড়া অনুযায়ী। এখানে ক্রমাগতভাবে তথ্য, শক্তিতরঙ্গ আকারে সমগ্র স্নায়ুতন্ত্রের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর তারপর এটা সুবিশাল একটা কোলাজ নিয়ে বিস্ফোরিত হচ্ছে এই বর্তমান মুহূর্তটা দেখতে কেমন, বর্তমান মুহূর্তটার গন্ধ কেমন? স্বাদ কেমন, এটার অনুভূতি কেমন, এটা শুনতে কেমন। আমি একটা শক্তিসত্তা রুপে সংযুক্ত আছি আমার চারপাশের সব শক্তিসমূহের সাথে,আমার এই ডান মস্তিস্কের সচেতনতা দিয়ে। আমরা একেকটা শক্তিসত্তা হিসেবে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত আছি একটা মনুষ্য পরিবার হিসেবে, এই ডান মস্তিস্কের সচেতনতা দিয়ে। আর এখন, এই মুহূর্তে এই দুনিয়ার আমরা সবাই ভাই ও বোন। এখানে এসেছি দুনিয়াটাকে আরও সুন্দর একটা জায়গা বানাতে। আর এই মুহূর্তে আমরা পরিপূর্ণ, আমরা একক, আর আমরা সুন্দর।

আমার বামদিকের অংশটা, আমাদের বামদিকের অংশটা পুরোপুরিই আলাদা জায়গা এটা চিন্তা করে রৈখিক ও পদ্ধতিগতভাবে এর কাজকারবার অতীত ও ভবিষ্যত নিয়ে। এটা তৈরি হয়েছে এমনভাবে যেন তা বর্তমানের বিশাল কোলাজটার ভার নিতে পারে সে প্রতিটা তথ্যের বিস্তারিত তথ্য, তার সম্প্রসারণ, এবং সেগুলোর আরও বিস্তারিত ব্যখ্যা হাজির করে। তারপর এটা সেই তথ্যগুলোকে শ্রেনীবদ্ধ ও সুবিন্যস্ত করে। অতীতে আমরা যা শিখেছি, তার সঙ্গে এগুলোকে মেলায় ও তার উপর ভিত্তি করে ভবিস্যতে আমাদের কী কী সুযোগ তৈরি হয় সেগুলোর হিসাব করে। আমাদের বাম মস্তিস্কটা চিন্তা করে ভাষার মাধ্যমে।মস্তিস্কের এই অংশটাই সংযোগ তৈরি করে দেয় আমার অন্তর্জগত ও বর্হিজগতের এইটাই সেই আওয়াজ, যা আমাকে বলে, “শোন মনে রাখো তোমাকে বাড়ি ফেরার পথে কলা কিনে নিয়ে যেতে হবে। আর সকালে সেটা খেতে হবে।

এই হিসাবমাফিক বুদ্ধিমত্তাটাই আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে, কখন আমাকে কাপড় কাচতে হবে। কিন্তু সম্ভবত তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এই ছোট্ট কণ্ঠটাই আমাকে বলে যে, ”আমি আছি” ”আমি আছি”। আর যতক্ষণ আমার বাম মস্তিস্ক আমাকে বলে যে, ”আমি আছি”,আমি আলাদা হয়ে যাই। আমি হয়ে যাই একটা একক দৃঢ় ব্যক্তিসত্তা। আমার চারপাশের শক্তি প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই আপনাদের থেকেও। আমি আমার মস্তিস্কের এই অংশটাই হারিয়ে ফেলেছিলাম।

আমার স্ট্রোকের সেই সকালে আমি ঘুম থেকে উঠেছিলাম আমার বাম চোখের পেছনে প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে।পুড়ে যাওয়ার মত ব্যাথাটা সেইরকম যেমনটা আমাদের হয় ঠান্ডা আইসক্রিমে কামড় দিলে। ব্যথাটা আমাকে জাপটে ধরছে,– আবার ছেড়ে দিচ্ছে। তারপর আবার জাপটে ধরছে,আবার ছেড়ে দিচ্ছে। আর এই ধরণের ব্যাথার অভিজ্ঞতা আমার জন্য ছিল খুবই অস্বাভাবিক। তো, আমি ভাবলাম, ঠিক আছে। আমি স্বাভাবিকভাবে আমার রোজকার রুটিন শুরু করি।

কাজেই আমি উঠলাম আর আমার কার্ডিও গ্লিডারে চড়ে বসলাম। এটা পুরো শরীরের ব্যায়ামের একটা যন্ত্র। আর আমি সেটাতে ব্যায়াম শুরু করার পর, উপলব্ধি করলাম,মেশিনের বারগুলোকে আঁকড়ে ধরে থাকা নিজের হাতগুলোকে আমার মনে হতে থাকল আদিম নখরযুক্ত পশুর হাতের মতো আমি ভাবলাম, “এটা খুবই অদ্ভুত।” নিচের দিকে পুরো শরীরের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, ‘ওয়াও! আমি একটা কিম্ভুত সদৃশ জিনিস।’ আমার চেতনা দুরে সরে যাচ্ছে আমার সাধারণ– বাস্তবতার উপলব্ধি থেকে, যেখানে আমি সেই ব্যক্তি মেশিনের উপরে দাঁড়ানো এইসব অভিজ্ঞতার সম্মুখিন, রহস্যময় একটা যায়গায় যেখানে আমি নিজেই এইসব অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ করছি

আর সবকিছু মিলিয়ে ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত, সেই সাথে আমার মাথাব্যাথা আরও চরম আকারে বাড়তে থাকল। তো, আমি মেশিন থেকে নেমে এলাম। বসার ঘরের মেঝেতে হাঁটাহাটি করতে লাগলাম। আর তখন আমি উপলব্ধি করলাম যে, আমার দেহের ভিতরের সবকিছুইখুব ধীরগতির হয়ে গেছে। আমার প্রত্যেকটা ধাপই পড়ছে খুব ধীরগতিতে এবং সুচিন্তিতভাবে। আমার গতির কোন প্রবাহ নেই, আর আমার উপলব্ধির ক্ষমতার জায়গাটা এতই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছিল, তো, আমি আমার অভ্যন্তরীন ব্যবস্থার দিকে মনোনিবেশ করলাম বাথরুমে এসে গোসলের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময় আমি বাস্তবিকই আমার শরীরের ভিতরের কথাবার্তা শুনতে পেলাম আমি শুনলাম, একটা ছোট্ট স্বর বলছে, “ঠিক আছে। তুমি পেশি, তোমাকে শুরু করতে হবে। তুমি পেশি, তুমি আরাম কর।”

আর তারপর আমি আমার নিয়ন্ত্রণ হারালাম আর দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেলাম। আর আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম যে, আমি আর কোনভাবেই আমার দেহের সীমানা নির্ধারণ করতে পারছি না। মনে করতে পারছি না যে, আমার শুরু কোথায় আর শেষ কোথায়, কারণ মনে হচ্ছিল আমার হাতের অনু পরমানুগুলো মিশে গেছে দেয়ালের অনু পরমানুগুলোর সঙ্গে। আর একটা জিনিসই আমি সনাক্ত করতে পারছিলাম তা হলো একটা শক্তি — শক্তি

আমি নিজেকেই প্রশ্ন করলাম, “আমার সমস্যা টা কী? কী হচ্ছে এসব?” আর এই মুহূর্তে আমার মস্তিস্কের কাথাবার্তা — আমার বাম অংশের কথাবার্তাগুলো — পুরোপুরি নিশ্চুপ হয়ে গেল। যেন কেউ রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে মিউট বাটন চেপে দিয়েছে। পুরোপুরি শব্দহীন। আর প্রথমে আমি প্রথমবারের মতো নিজেকে একটা নিশ্চুপ মস্তিস্কের মধ্যে পেয়ে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারপর খুব দ্রুতই আমার চারপাশের শক্তির চমৎকারীত্বে মজেছিলাম।আর আমি যেহেতু আমার দেহের সীমানা নির্ধারণ করতে পারছিলাম না, তাই আমার নিজেকে বিশাল ও সুবিস্তৃত মনে হচ্ছিল। চারপাশের সব শক্তির সাথে নিজেকে একাত্ম মনে হচ্ছিল।আর সেটা ছিল খুবই সুন্দর অনুভূতি।

তারপর হঠাৎই আমার বাম মস্তিস্ক জীবিত হয়ে অনলাইনে আসল আর আমাকে বলল, “হেই! আমাদের সমস্যা হয়েছে। আমাদের সমস্যা হয়েছে। আমাদের সাহায্য নিতে হবে।” আর আমি শুরু হয়ে গেলাম, “আহ্হ্! আমার সমস্যা হয়েছে। আমার সমস্যা হয়েছে।” তো এটা এরকম, “আচ্ছা আচ্ছা। আমার সমস্যা হয়েছে।”

কিন্তু তারপরেই আমি আবার ডান মস্তিস্কের সচেতনতায় ফিরে গেলাম। আমি এই জগতটাকে আদর করে তাইরে নাইরে দুনিয়া বলতে পছন্দ করি। কিন্তু এটা ছিল খুবই সুন্দর। চিন্তা করেন, বাহ্যিক দুনিয়ার সাথে মস্তিস্কের যে কথোপকথনকারীটা আপনাকে সংযুক্ত রাখে, সেটা আপনার থেকে পুরোপুরিই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে কেমন লাগতে পারে।

তো, এই জায়গায় থাকা আমার কাছে, আমার চাকরি চাকরি সংক্রান্ত যে কোন চাপ-দুশ্চিন্তা, সব হাওয়া হয়ে গেছে। আর আমার শরীরের মধ্যে নিজেকে খুব হালকা লাগছে। আর ভাবেন যে, বাহ্যিক দুনিয়ার সঙ্গে সব সম্পর্ক, সেগুলোর মধ্যকার চাপ দুশ্চিন্তার কথাগুলোও সব গায়েব হয়ে গেছে। আর আমি এই শান্তিপূর্ণ অবস্থাটা অনুভব করছি। একবার ভাবুন যে, ৩৭টা বছরের সব আবেগপূর্ণ লটবহর ঝেড়ে ফেলতে পারলে কেমন লাগত! (হাসি)। আমি খুবই ফুর্তিতে ছিলাম — স্ফুর্তি। এটা খুবই সুন্দর একটা অনুভূতি ছিল

আর তারপর আবার আমার বাম মস্তিস্ক অনলাইনে চলে আসল আর বলল, “হেই! তোমাকে মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের সাহায্য নিতে হবে।” আর আমি ভাবছি, “আমাকে সাহায্য নিতে হবে। মনোযোগ দিতে হবে।” তো, আমি বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। আর খুবই যান্ত্রিকভাবে পোশাক পরে হাঁটতে লাগলাম। ভাবছিলাম, ‘আমাকে কাজে যেতে হবে। কাজে যেতে হবে। আমি কি গাড়ি চালাতে পারব? গাড়ি চালাতে পারব?

আর এইসময় আমার ডানহাত পুরোপুরি প্যারালাইজড হয়ে গেল। তারপর আমি বুঝতে পারলাম, “ওহ! ঈশ্বর! আমার চৈতন্য লোপ (স্ট্রোক) হচ্ছে। আমার স্টোক হচ্ছে!”

আর তার পরের ঘটনা হলো, আমার মস্তিস্ক বলছে, “বাহ! এটা কী চমৎকার! (হাসি) এটা কী মজার! কতজন মস্তিস্ক বিজ্ঞানী নিজেই নিজের মস্তিস্কটা এভাবে ভেতর থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পায়?” (হাসি)

তারপরেই আমার মাথায় আসল যে, “কিন্তু আমি খুবই ব্যস্ত একটা মহিলা! (হাসি) আমার কোন স্ট্রোকের সময় নাই!”

তো, তারপরে ভাবলাম, “ঠিক আছে, আমি এই স্ট্রোক হওয়া আটকাতে পারব না। তো, এটা এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে সামলিয়ে তারপর আমি আমার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসব। ঠিক আছে, তাহলে আমাকে সাহায্য নিতে হবে। আমার অফিসে ফোন করতে হবে।”কিন্তু সেখানকার নাম্বারটা আমার মনে পড়ল না। তখন মনে হলো আমার অফিসে কিছু ভিজিটিং কার্ড আছে সেখানে আমার নম্বরটা লেখা আছে। তারপর আমি আমার কাজের ঘরে গেলাম, আর তিন ইঞ্চি মোটা কার্ডের বান্ডিলটা বের করলাম। আর আমি কার্ডের উপরের দিকে দেখলেও আমার বিজনেস কার্ডটা দেখতে কেমন, সেটা আমি মনের চোখে পরিস্কার দেখতে পেলেও আমি কিছুতেই বলতে পারছিলাম না যে, এটা আমার কার্ড কি না, কারণ আমি যা দেখতে পাচ্ছিলাম তার সবই শুধু পিক্সেল আর বর্ণগুলোর পিক্সেল মিশে যাচ্ছিলপ্রতীকগুলোর পিক্সেল ব্যাকগ্রাউন্ডের পিক্সেলের সঙ্গে মিশে যাচ্ছিল, আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না তারপর আমাকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে আমি যাকে বলি একটা ‘স্পষ্টতার ঢেউ’ এর জন্য আর তখন হয়তো আমি আবার স্বাভাবিক বাস্তবতায় পুনরায় সংযুুক্ত হতে পারছি। আর বলতে পারছি যে, এই কার্ডটা নয়। এই কার্ডটা নয়। এই কার্ডটা নয়।এভাবে তিন ইঞ্চি পুরু বান্ডিলটার এক ইঞ্চি পর্যন্ত যেতে আমার সময় লাগল ৪৫ মিনিট।আর এই ৪৫ মিনিটের মধ্যে আমার বাম মস্তিস্কের রক্তক্ষরিত অংশটা আরও বড় হয়েছে।আমি নাম্বার বুঝতে পারছি না। টেলিফোন বুঝতে পারছি না। কিন্তু আমার এই একটা পরিকল্পনাই আছে। কাজেই আমি ফোন প্যাডটা নিলাম আর এখানে রাখলাম, বিজনেস কার্ডটা নিলাম, আমি এইখানে রাখলাম, আর এখন আমি কার্ডের হিজিবিজি আকৃতিগুলোর সঙ্গে মেলাতে থাকলাম ফোনপ্যাডের হিজিবিজি আকৃতিগুলোকে। কিন্তু তারপর আবার হয়তো আমি চলে গেলাম সেই তাইরে নাইরে দুনিয়ায়, পরে আবার সচেতন হয়ে আর মনে করতে পারলাম না যে আমি ইতিমধে্যই কোন নাম্বারের বোতাম চেপেছি। তাই (কোন পর্যন্ত চেপেছি এটা মনে রাখার জন্য) আমি প্যারালাইজড ডানহাতটাকে ফোনপ্যাডের ওপর রেখে একটা স্ট্যাম্পের মতো ব্যবহার করতে হলো যেন, আমি স্বাভাবিক বাস্তবতায় ফিরে আসার পরে বলতে পারি যে, “হ্যাঁ, আমি এই নাম্বারটা ইতিমধ্যেই ডায়াল করেছি।”

এভাবে, পুরো নাম্বারটা ডায়াল করা যখন শেষ হলো আমি ফোন ধরে শুনছি। আর আমার সহকর্মী ফোনটা ধরল আর বলল, “হুউ্ হুউ্ হুউ্ হুউ্” (হাসি)। আর আমি নিজে নিজে ভাবলাম, “ওহ! ঈশ্বর! তাকে একটা সোনালী শিকারী কুকুরের মতো শোনাচ্ছে!”

আর তারপর আমি তাকে বললাম আমার স্পষ্ট মনে আছে। আমি বললাম, “আমি জিল! আমার সাহায্য দরকার!” আর কথাটা আমার কানে শোনালো, “হুউ্ হুউ্ হুউ্ হুউ্”আমি ভাবলাম, “ওহ! ঈশ্বর! আমাকে একটা সোনালী শিকারী কুকুরের মতো শোনাচ্ছে!” চেষ্টা না করার আগ পর্যন্ত আমি বুঝতেই পারিনি, জানতামই না যে আমি ভাষা বলতে বা বুঝতে পারব না। কিন্তু সে বুঝেছিল যে, আমার সাহায্য লাগবে। আর সে তা করেওছিল।

তার কিছুক্ষণ পরে, আমি বস্টনের এক হাসপাতাল থেকে ম্যাসাচুসেটস-এর আরেকটা হাসপাতালে যাচ্ছিলাম অ্যাম্বুলেন্সে করে। আর আমি যেন একটা ছোট ভ্রুণের বলের মতো কুঁকড়ে গেলাম। যেন শেষ কিছু বাতাস নিয়ে উড়তে থাকা একটা বেলুন। আর ঐ সেই বেলুনের মতো, আমার মনে হলো, আমার শক্তি আমাকে ছেড়ে যাচ্ছে। মনে হলো, আমার আত্মা আত্মসমর্পণ করল

আর সেই মুহূর্তে, আমি জেনেছিলাম যে, আমি আর আমার জীবনের নির্দেশক নই। আর যদি চিকিৎসকেরা আমার দেহটা রক্ষা না করে ও আমাকে জীবনের দ্বিতীয় সুযোগ না দেয় তাহলে এটাই হয়তো আমার পারাপারের মুহূর্ত।

সেই দিন দুপুরে যখন সজাগ হলাম, তখন এটা আবিস্কার করে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম যে,আমি এখনও বেঁচে আছি। যখন মনে হয়েছিল আমার আত্মা আত্মসমর্পন করছে তখনই আমি জীবনকে চিরবিদায় বলে দিয়েছিলাম। ি ভিন্ন বাস্তবতার জগত নিয়ে ফিরে এসেছে। স্নায়ুতন্ত্র বাহিত যেসব তরঙ্গ মস্তিস্কে আসছিল, সেগুলো মনে হচ্ছিল বিশুদ্ধ যন্ত্রণা। আলো আমার মস্তিস্ক যেন পুড়িয়ে দিচ্ছিল দাবানলের মতো। আর শব্দগুলোও এত জোরে আর বিশৃঙ্খল মনে হচ্ছিল যে, আমি ঐ চেঁচামেচি থেকে একটা স্বরও আলাদাভাবে সনাক্ত করতে পারছিলাম না। আমি শুধু চাইছিলাম পালিয়ে যেতে। কারণ আমি অন্য আরেকটা জগতেআমার দেহের অবস্থান নির্ধারণ করতে পারিনি, নিজেকে মনে হয়েছিল বিশাল ও বিস্তির্ণ যেন একটা জ্বীন এই মাত্র প্রদীপ থেকে মুক্তি পেয়েছে। আর আমার আত্মা উড়ে বেড়াচ্ছিল মুক্তভাবে। যেন একটা বিশাল তিমি সাঁতড়ে বেড়াচ্ছে শব্দহীন আনন্দময় সমুদ্রে। নির্বান আমি নির্বান লাভ করেছিলাম। আমি সেই চিন্তাটাও মনে করতে পারলাম যখন আমি ভেবেছিলাম আর কোনভাবেই এই সুবিশাল নিজেকে আমার এই ছোট্ট দেহটার মধ্যে ফেরাতে পারব না।

কিন্তু তারপরই আমি উপলব্ধি করলাম, “কিন্তু আমি এখনও বেঁচে আছি। এখনও বেঁচে আছি। আর আমি নির্বান প্রাপ্ত হয়েছি। আর যদি আমি নির্বান লাভ করে এখনও বেঁচে থাকতে পারি, তাহলে জীবন্ত অন্য সবাই-ই নির্বান লাভ করতে পারে। আর আমি এমন একটা দুনিয়ার ছবি কল্পনা করলাম যেটা সুন্দর, শান্তিপূর্ণ, করুনাময়, সৌহার্দপূর্ণ মানুষে পরিপূর্ণ, যারা সবাই জানে যে, তারা যে কোন সময়ে এই জগতটাতে আসতে পারে তারা ইচ্ছানুযায়ী মস্তিস্কের ডান অংশে আসতে ও এই শান্তি লাভ করতে পারে। আর তখন আমার উপলব্ধি হলো যে, এই অভিজ্ঞতাটা কী অসাধারণ একটা উপহার হতে পারে এই স্ট্রোকের অন্তদৃষ্টিটা কত বড় ভূমিকা রাখতে পারে আমরা কীভাবে আমাদের জীবন ধারণ করব তা বুঝতে। এটাই আমাকে সুস্থ হওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছে।

আমার মস্তিস্কের রক্তক্ষরণের আড়াই সপ্তাহ পরে, চিকিৎসকেরা অপারেশন করে একটা গল্ফ বলের আকৃতির রক্তপিণ্ড বের করে যেটা আমার মস্তিস্কের ভাষা কেন্দ্রের দিকে চাপ দিচ্ছিল।এখানে, আমি আমার মা এর সঙ্গে, তিনি আমার জীবনের একজন সত্যিকারের দেবী। পুরোপুরি সুস্থ হতে আমার আট বছর লেগেছিল

তো, আমরা কে? আমরা হলাম এই বিশ্বব্রক্ষাণ্ডের জীবনী-শক্তি ক্ষমতা, দুইটা কার্জক্ষম হাত ও দুইটা সৃজনশীল মস্তিস্ক সমৃদ্ধ। আর আমাদের সেই ক্ষমতা আছে, প্রতিমুহূর্তে বেছে নেওয়ার যে, কিরুপে বা কিভাবে আমরা দুনিয়ায় বাঁচতে চাই। এখনই এইমূহূর্তে আমি সচেতনভাবে আমার ডানমস্তিস্কের জগতে পা রাখতে পারি। যেখানে আমরা আছি। আমি এই বিশ্বব্রক্ষাণ্ডের জীবনী-শক্তি ক্ষমতা। আমি এই ৫০ ট্রিলিয়ন চমৎকার অনুগুলোর জীবনী-শক্তি ক্ষমতা যা দিয়ে আমি গড়ে উঠেছি। এই পুরোটার সাথে আমি একাত্ম। বা আমি আমার বাম মস্তিস্কের সচেতনতায় প্রবেশ করতে পারি যেখানে আমি একটা একক ব্যাক্তিসত্তায় পরিণত হই, একটা নিরেট বস্তু। চারপাশের প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন, আপনাদের থেকে বিচ্ছিন্ন, আমি ড. জিল বোলটে টেলর: বুদ্ধিজীবী, স্নায়ুঅনুতাত্ত্বিক। আমার মাথার ভেতরে এই রকমের ‘আমরা’-রা আছি। আপনি কোনটা বেছে নেবেন? কোনটা বেছে নেবেন আপনি? আর কখন? আমি বিশ্বাস করি যত বেশি সময় আমরা ডান মস্তিস্কের গভীর আত্ম শান্তি লাভ প্রক্রিয়া চালাতে পারব তত শান্তিপূর্ণ জীবন আমরা দুনিয়াকে দিতে পারব।আর ততই বেশি শান্তিময় হবে আমাদের পৃথিবীটা।

আর আমি ভাবছিলাম, এইটা একটা ধারণাটা প্রচারের দাবি রাখে।
জিল বোলটে টেলরের শক্তিশালী অর্ন্তদৃষ্টিপূর্ণ স্ট্রোক

অ্যামাজনের বিস্ময়!

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী আমাজন। দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় ৭০ লক্ষ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আাঁাকাবাকা পথে বয়ে চলেছে রহস্যাবৃত আমাজন জঙ্গলের এই নদীটি। কিন্তু শুধু এটুকুই না। আরও অনেক বিস্ময় এতদিন লুকিয়েই রেখেছিল আমাজন। নদীটির ভূমিপৃষ্টের চার কিলোমিটার নিচে আরও বড় আয়তনের একটি নদী বয়ে চলেছে বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় দাবি করেছেন ব্রাজিলের বিজ্ঞানীরা। রিও ডি জেনিরোতে গত সপ্তাহে জিওফিজিক্যাল সোসাইটির এক সম্মেলনে এই বিস্ময়কর দাবিটি করেন ব্রাজিলের ন্যাশনাল অবসারভেটরির জিওফিজিক্স বিভাগ।

আমাজন ভূপৃষ্ঠের ৪ কিলোমিটার নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদীটির নামকরণ করা হয়েছে এই গবেষক দলের প্রধান ভালিয়া হামজার নাম অনুসরণে। নবআবিস্কৃত এই হামজা নদীটি বয়ে চলেছে আমাজনের মতোই পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে। আমাজন ও হামজা, দুই নদীই দৈর্ঘ্যে সমান (৬ হাজার কিলোমিটার) হলেও প্রস্থে অনেক গুন বড় ভূগর্ভস্থ নদীটি। আমাজন প্রবাহিত হয় প্রস্থে ১ কি.মি থেকে ১০০ কি.মির মধ্যে। যেখানে কোথাও কোথাও হামজার প্রস্থ একশ গুনেরও বেশি। প্রায় ২০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার। ব্রাজিলের আক্রে প্রদেশ থেকে শুরু হয়ে সালিমোস, আমাজোনাস ও মারাজু শাখানদীগুলো দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এই নদীটি। শেষ হয়েছে আটলান্টিক মহাসমুদ্রে। তবে আমাজনের তুলনায় হামজা নদীর পানিপ্রবাহের গতি অনেক ধীর। আমাজন নদীতে পানিপ্রবাহের গতি সেকেন্টে ১,৩৩,০০০ মিটার৩। আর হামজা নদীর গতি সেকেন্ডে ৩,৯০০ মিটার৩।

তেল উত্তোলনের জন্য আমাজন অঞ্চলে স্থাপন করা ২৪১টি অকার্যকর গভীর কুপের তাপমাত্রা তারতম্যের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে সম্প্রতি এই ভূগর্ভস্থ নদীটির সন্ধান পায় ব্রাজিলের জিওফিজিক্স বিভাগ। ১৯৭০ ও ১৯৮০-র দশকে এই কুপগুলো স্থাপন করেছিল দেশটির পেট্রো-কেমিকেল কোম্পানি পেট্রোব্রাস।

আমাজন নদীর মুখগুলোতে লবন সল্পতার কারণ হিসেবে এই হামজা নদীর উপস্থিতিই বড় ভূমিকা পালন করেছে বলে অনুমান করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এখনও এই নদীর বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতির উপর এর অবদান ইত্যাদি বিষয়ে পরিস্কার করে কিছু বলতে পারছেন না তাঁরা। আমাজনের এই নতুন বিস্ময়ের স্বরুপ বুঝতে আরও তিন/চার বছর সময় লাগতে পারে বলে ধারণা গবেষকদের।— টেলিগ্রাফ 

কাকাতুয়ার কীর্তি

কাকাতুয়ার কথা শুনে তাক লেগে গেছেন, এমন মানুষ হয়তো অনেকই পাওয়া যাবে। কিন্তু নাচ জানা কাকাতুয়ার কথা শোনা যায় নি কখনো। সেই অদ্ভুত কীর্তিটি করেই ইন্টারনেটে রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছে ১৩ বছর বয়সী স্নোবল নামের এই কাকাতুয়াটি। পপ ও রক সঙ্গীতের সঙ্গে একদম নিখুঁত ছন্দে নেচে স্নোবল নজর কেড়েছে বিজ্ঞানীদেরও। এখন পাখিদের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে নতুন করে হচ্ছে তাঁদের। বলা ভালো, মনুষ্য প্রজাতীর বাইরে পশু-পাখিদেরও নৃত্য বোধ থাকতে পারে, বিজ্ঞানীদের এমনটা ভাবতে বাধ্য করেছে এই বিস্ময়কর কাকাতুয়াটি।

ব্যাকস্ট্রিট বয়েজ, লেডি গাগাসহ অন্যান্য অনেক শিল্পীর গানের সঙ্গে একদম নিখুঁত তালে নাচতে পারে স্নোবল। তার নৃত্য পারদর্শীতা প্রমাণের জন্য গবেষকরা ব্যাপারটি বৈজ্ঞানিকভাবেও পরীক্ষা করে দেখেছেন। বলাই বাহুল্য, সেই পরীক্ষায় বেশ ভালোমতোই উতরে গেছে কাকাতুয়াটি। এমনকি গানের লয় বাড়িয়ে বা কমিয়ে দিলেও সে তার সঙ্গে নাচের গতি সমন্বয় করে নিতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার নিউরোসায়েন্স ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. অনিরুদ্ধ পাটেল বলেছেন, ‘আমি একেবারে হতবাক হয়ে গেছি। আমার জীবনে আমি এমন ব্যাপার দেখিনি। আমরা দেখেছি যে, যদি গানের লয় অনেক বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেওয়া হয়, তাহলেও সে সেটার সঙ্গে নাচের সমন্বয় করে নিতে পারে।’

এর আগে অন্যান্য অনেক পশুপাখিরই সঙ্গীতে সাড়া দেওয়ার উদাহরণ পাওয়া গেলেও এরকম নৃত্য পারদর্শী পাখি এটাই প্রথম বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। ইউটিউবে প্রায় এক হাজারেরও বেশি ভিডিও খোঁজাখোঁজি করে গবেষকরা দেখেছেন যে, মাত্র ১৪ প্রজাতির টিয়া ও এক প্রজাতির হাতি গানের সঙ্গে কিছুটা তাল মেলাতে পারে। কুকুর, বিড়ালের মতো গৃহপালিত প্রাণী বা মানুষের নিকটবর্তী প্রজাতি শিম্পাঞ্জি বা বানরের কোন সঙ্গীতজ্ঞানই নেই।

বিস্ময়কর এই কাকাতুয়াটির বাস যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা রাজ্যে পাখিদের একটা আশ্রয়স্থলে। মানুষের বাইরে এখন পর্যন্ত তাকেই গণ্য করা হচ্ছে একমাত্র ছন্দ জ্ঞানসম্পন্ন প্রাণী হিসেবে।

এলিস কী নিঃসঙ্গই থেকে যাবে?

এলিস কারো সঙ্গেই মেশে না, কারো সঙ্গেই বেড়াতে যায় না। এলিস সেসব কিছুই করে না, যা তার বয়সী অন্য সবাই করে। সে নিজেকে কোন মতেই মেলাতে পারে না, অন্য কারো সঙ্গে। যখন সে এটা করতে চায়, তখন মনে হয় যেন, অন্য কেউই তার কথাটা শুনতে পাচ্ছে না। না, এলিস নাম্নী কোন ছেলে বা মেয়ের কথা না, বলা হচ্ছে প্যাসিফিক মহাসমুদ্রের সেই নিঃসঙ্গ তিমিটির কথা। যে কি না বছরের পর বছর ধরে এই বিশাল মহাসমুদ্রে সঙ্গীর আকাঙ্ক্ষায় গান গেয়ে বেড়াচ্ছে ভুল সুরে… ভুল কম্পাঙ্কে…

২০০৪ সালে নিঃসঙ্গ এলিসের এই করুন কাহিনীটি সবার সামনে নিয়ে আসে নিউ ইয়র্ক টাইমস। তবে তার খোঁজ পাওয়া যায় আরও আগে। ১৯৯২ সালে এলিসের এই নিঃসঙ্গতার কারণ খুঁজে বের করতে সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশানিক এন্ড অ্যাটমোসফোরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নোয়া)। সাধারণত যে যন্ত্রটি তারা শত্রু সাবমেরিনের অবস্থান জানতে ব্যবহার করে, সেই বিশেষ ধরণের হাইড্রোফোন দিয়ে তারা প্রথম এলিসের গানের কম্পাঙ্ক নির্নয় করে। দেখা যায়, তার গানের কম্পাঙ্ক ৫২ হার্জ। যা তার সমগোত্রীয় অন্যান্য তিমিদের (১৫-২৫ হার্জ) তুলনায় অনেক বেশি। ফলে তার মিলনাকাঙ্ক্ষা অন্যদের কাছে পৌঁছাতেই পারে না।

আরও একভাবে নিজের দুর্ভাগ্যটা আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে এলিস নিজেই। কোন এক অদ্ভুত কারণে সে অন্যান্য তিমিদের সঙ্গে চেনা পথে দূরভ্রমণে যায় না। এতে করে তার নিঃসঙ্গতা বেড়েই যায়, কমে না। সিয়াটলের ন্যাশনাল মেরিন ম্যাম্যাল ল্যাবরেটরির গবেষক ড. কেট স্ট্যানফোর্ড ব্যাপারটা বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘নিঃসঙ্গ তিমিটা বলতেই থাকে, ‘হেই! এই যে, আমি এখানে!’ কিন্তু কেউই তাকে ফোন করে না!’

ক্রিপ্টোজোলোজিস্ট অল লুইস সন্দেহ করেছেন যে, হয়ত এলিস দুইটা ভিন্ন প্রজাতির তিমির একটা সংকর। অথবা হতে পারে যে, সে কোন অজানা প্রজাতির শেষ সদস্য। তাহলে কী এলিস নিঃসঙ্গই থেকে যাবে?— টাইমস

‘বাহ! ওস্তাদ… বাহ!’

'বাহ! ওস্তাদ... বাহ!'

ওস্তাদ জাকির হোসেন সন্ধ্যা। সত্যিই সন্ধ্যাটা ছিল জাকির হোসেনেরই। বিরক্তিকর ট্রাফিক জ্যামের না, দশটা পাঁচটা অফিসের পর ক্লান্তিতে ভেঙ্গে পড়ার না, দমবন্ধকরা মানুষের ভিড়ের না। সন্ধ্যাটা শুধুই জাকির হোসেনের। ওস্তাদ জাকির হোসেনের।

সবার জন্য না অবশ্য! বিশ্বখ্যাত তবলাশিল্পী জাকির হোসেনের সঙ্গে বিরল এই সন্ধ্যা কাটানোর সুযোগটা জুটেছিল ঢাকা শহরের খুবই ভাগ্যবান কিছু লোকের কপালে। সুযোগটা করে দিয়েছিল প্রথম আলো ও ট্রান্সকম গ্রুপ। স্বাধীনতার চার দশক পূর্তি উপলক্ষ্যে জাকির হোসেনের ‘কিংবদন্তীতূল্য পিতা ওস্তাদ আল্লারাখা খানকে’ সম্মান জানানোই ছিল এই অসাধারণ আয়োজনটির অন্যতম উদ্দেশ্য। ১৯৭১ সালে নিউ ইয়র্কে আয়োজিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে রবিশংকর, জজ হ্যারিসন, বব ডিলানদের সঙ্গে ওস্তাদ আল্লারাখা খানও ছিলেন অন্যতম প্রধান শিল্পী। তাঁর তবলার বোলেও সেদিন বেজে উঠেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-ধ্বনি। তাঁরই যোগ্য সন্তান জাকির হোসেনকে সম্মান জানানোটা যেন সেই ঋণ শোধ করারই একটা প্রচেষ্টা।

প্রাশ্চাত্যের কোন এক নামকড়া শিল্পী একবার ভারত সফরে এসে বলেছিলেন, ভারত তিনটা জিনিসের জন্য অনন্য। তাজমহল, লতা মুঙ্গেশকর এবং ওস্তাদ জাকির হোসেন। যথার্থই বলেছিলেন বোধহয়। কেন যথার্থ বলছি, সেটা হাতেকলমেই দেখিয়ে দিয়ে গেলেন বিশ্ব-সঙ্গীতের এই জীবন্ত কিংবদন্তী।

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মঞ্চে এসে দাঁড়িয়েছিলেন ওস্তাদ জাকির হোসেন। করতালি, অভিনন্দনের পালা শেষ হলে ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো প্রিয় বাদ্যযন্ত্রটির সামনে বসলেন। দর্শকদের উদ্দেশ্যে তাঁর প্রথম কথাটি ছিল, ‘নমস্কার, কেমন আছেন?’ কিছুক্ষণ ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলা বললেন। এরপর আস্তে আস্তে পাঞ্জাবির হাতা গোটালেন… প্রস্তুতি নিতে থাকলেন হাতের আঙ্গুলগুলো দিয়ে দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে দেওয়ার জন্য। দুইটা ঘন্টা সত্যিই উপস্থিত দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধই করে রাখলেন ওস্তাদজি। আঙ্গুলের জাদু দিয়ে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের মিলনায়তনটিতে কখনো নামিয়ে আনলেন ঝড়-বৃষ্টি-মেঘের গর্জন, কখনো বা ট্রেনের ‘কু ঝিক ঝিক’ তালে তালে নিয়ে গেলেন দূর মায়াবী দেশে…।

অনেক সময় মনে হয়েছে, তিনি যেন কথা বলছেন ডুগি-তবলার টোকায়। শুধু মনে হওয়াই না, তবলার বোল দিয়ে যে কথা বলাও যায়, সেটা তো তিনি অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে এসে দেখিয়েও দিলেন। ‘ধা ধিন ধিন ধা’, ‘ধা তেরে কেটে তা’ দিয়ে যে কোন একটা কিছু বর্ণনা করা যায়, গল্প করা যায়, সেটা তো উপস্থিত দর্শকরা ভালোভাবেই টের পেয়েছেন। শুধু দুই ঘন্টার জন্য গুটিকয়েক মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখাই না, হয়তো ঐ তবলার তালে তালে আরো অনেক কিছু বলে গেছেন ওস্তাদ জাকির হোসেন। একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে চার দশক পার করেছি বলে আমাদের হয়তো অভিনন্দন জানিয়েছেন। কিংবা হয়তো জানতে চেয়েছেন, ৪০ বছর পর আমরা স্বাধীনতা পাচ্ছি তো? ভালোভাবে বেঁচেবর্তে আছি তো?

সবচেয়ে বড় কাহিনী, যা এখনো বলা হয় নি…

আসলে আধ্যাত্মিকতা হলো নির্দিষ্ট ধরণের এমন একটা বিষয়, যার মূল কাজকারবার হচ্ছে ‘ধারণা করতে পারা, অনুমান করতে পারা’র সঙ্গে। ঈশ্বরবিশ্বাসী ঐতিহ্যে একটা ধারণা আছে যে, .. .. .. । এখানে কিছু কিছু কাজকে বিবেচনা করা হয়, ঈশ্বরিক নিয়মনীতি না মানা হিসেবে। আবার কিছু কিছু কাজকে সন্তোষজনক বলে গণ্য করা হয়, ঈশ্বরিক কোনো কিছুর কাছে। কিন’ ঈশ্বরে বিশ্বাসী না, এমন ঐতিহ্যর ধারণায়, এটা খুবই সোজাসাপ্টা/সরলসোজা ব্যাপার যে, ঐতিহাসিক পরিসি’তি আসলে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। আসল গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটা হলো ‘এখানে-এখন’। এখন মানে কিন্তু এখনই। কোন একটা কাজ করতে গিয়ে আমরা আগে দেখার চেষ্টা করি আমাদের কাছে এই মুহূর্তে কী কী পথ খোলা আছে। আমাদের এরকম ভাবার কোনই সুযোগ নাই যে, অতীতের কোন একটা সময় যদি এখন আবার পেতাম! এটা এখন। এই মুহূর্তটাই। কোন রহস্য না, খুব সোজা-সরাসরি শুধু এই ‘এখন’। বিস্তারিত পড়ুন