হোসনি মোবারক: ক্ষমতার প্রাসাদ থেকে কারাগারে
৩১ বছর আগে প্রায় আকস্মিকভাবেই মিশরের রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষমতা পেয়ে গিয়েছিলেন হোসনি মোবারক। তখন কেউ হয়তো অনুমানই করতে পারেননি যে, পরবর্তী ৩০ বছর মিশর শাসনের ক্ষমতা থাকবে তাঁরই হাতে। কিন্তু শেষপর্যন্ত সেটাই হয়েছিল। প্রায় আড়াই যুগ মিশরের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বহাল ছিলেন এই স্বৈরশাসক। তবে দীর্ঘদিনের এই ক্ষমতা ভোগের শেষ পরিণতিটা ভালো হয় নি হোসনি মোবারকের। গত বছরের শুরুতে টানা ১৮ দিনের তুমুল গণ আন্দোলনের মুখে অবসান ঘটে হোসনি মোবারক শাসনামলের। আর সেসময় দেশবাসীর উপর চরম নিপীড়নমূলক আচরণ করায় এখন জীবনের বাকি সময়টা কারাগারের অন্ধকারেই কাটাতে হবে তাঁকে। আজ শনিবার মিশরের একটি বিশেষ আদালত সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসনি মোবারককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে।
১৯৮১ সালে মিশরের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন হোসনি মোবারক। সেসময় তেমনভাবে পরিচিতও ছিলেন না তিনি। কিন্তু তত্কালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত গুপ্তহত্যায় নিহত হওয়ার পর অপ্রত্যাশিতভাবেই ক্ষমতা পেয়ে যান মোবারক। কায়রোর একটি সামরিক কুচকাওয়াচে ইসলামী জঙ্গীদের চালানো এই হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান হোসনি মোবারক। আর তার ঠিক আটদিন পরে তিনি বসেন মিশরের প্রেসিডেন্টের আসনে। তারপর থেকে এই স্বৈরশাসককে হত্যার জন্যও অন্ততপক্ষে ছয়টি হামলার পরিকল্পনা করেছিল গুপ্তঘাতকরা। এর মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য হামলাটি হয় ১৯৯৫ সালে। সেসময় আফ্রিকান সামিটে অংশ নেওয়ার জন্য ইথিওপিয়ার রাজধানীতে যাওয়ার পর সেখানে হামলাকারীদের মুখে পড়েছিলেন হোসনি মোবারক।
গুপ্তঘাতকদের এতবার ফাঁকি দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য নানা কৌশল ও নীতি অবলম্বন করে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ক্ষমতা ধরে রাখতে সফল হয়েছিলেন সাবেক বিমান বাহিনীর প্রধান হোসনি মোবারক। আর এর পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেছে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে বিশ্বস্ত মিত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ। আর সেই সঙ্গে নিজ দেশে বিরোধীদের আন্দোলনও তিনি দমন করে গেছেন কঠোর হাতে। গত বছরের ফেব্রুয়ারীতে যে চূড়ান্ত আন্দোলনে তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন, সেখানে তার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয় প্রায় নয় শতাধিক ব্যক্তি।
কিন্তু তাসত্ত্বেও কায়রোতে ব্যপক গণআন্দোলনের মুখে ২০১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী ক্ষমতা ছাড়ার ঘোষণা দেন হোসনি মোবারক। পরের দিনই সামরিক বাহিনীর সুপ্রিম কাউন্সিলের হাতে দেশ পরিচালনার ভার দেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর সুলেইমান। ২৪ মে হোসনি মুবারক ও তাঁর দুই ছেলেকে বিচারের মুখোমুখি করার ঘোষণা দেয় দেশটির বিচারব্যবস্থার কর্মকর্তারা। আর ২ জুন বিক্ষোভকারী জনতাকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যাস্ত করা হয় এই স্বৈরশাসককে।— বিবিসি