Posts Tagged ‘ বিশ্বকাপ ’

মেক্সিকোর ফুটবলারদের দিকে তাকিয়ে ব্যবসায়ীরাও

mexico-gold-cup-fans

বিশ্বকাপে অংশ নিতে না পারলে মেক্সিকোর ফুটবলপ্রেমীরা হতাশ তো হবেনই, বিশ্বকাপের সময়টা তাঁদের কাটবে আফসোস আর হা-হুতাশ করেই। কিন্তু বিশ্বকাপে একটি দলের জায়গা না পাওয়া শুধু সমর্থকদের হতাশার ফ্রেমে আবদ্ধ নয়, বরং এর পেছনে আছে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ। মেক্সিকো হতে পারে এর ভালো উদাহরণ। আগামী বিশ্বকাপের টিকিট না পেলে প্রায় ৬৫ কোটি ডলার ক্ষতির মুখে পড়বে উত্তর আমেরিকার দেশটি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যেটি পাঁচ হাজার ৬৬ কোটি টাকারও বেশি!

দেশটির ফুটবল সংস্থা তো বটেই, মেক্সিকোর সম্ভাব্য বিশ্বকাপ-ব্যর্থতা ভাবিয়ে তুলেছে দেশটির গণমাধ্যমকেও। বিশেষ করে মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের যেসব টেলিভিশন নেটওয়ার্কের হাতে বিশ্বকাপের সম্প্রচার স্বত্ব আছে, মেক্সিকান ফুটবলাররা বিশ্বকাপে না থাকলে নিশ্চিতভাবেই ক্ষতির মুখে পড়বে তারা। এ ছাড়াও যেসব কোম্পানি জাতীয় দলের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করছে, তারাও আছে হুমকির মুখে।

শুধু বিশ্বকাপ চলাকালেই নয়, দীর্ঘ মেয়াদেও এটি মেক্সিকান ফুটবলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করছেন ক্রীড়াভিত্তিক বিপণন প্রতিষ্ঠান ড্রেয়াম্যাচ সলিউশনের পরিচালক রোয়া। সম্প্রতি রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, ‘ক্রীড়া ও বাণিজ্যিক দিক থেকে মেক্সিকোর ব্যর্থতা হবে হতাশাজনক। আমাদের ওপর এর প্রভাবটাও পড়বে মারাত্মকভাবে। এটা হবে ফুটবল অর্থনীতির জন্য খুবই বিপর্যয়পূর্ণ পরিস্থিতি। দীর্ঘ মেয়াদে এটা প্রভাব ফেলবে মেক্সিকান লিগের ওপর। সেখানে স্পন্সরশিপ ও ব্র্যান্ড মর্যাদা অনেক কমে যাবে।’

মেক্সিকোর বিশ্বকাপ যাত্রার অনেক প্রস্তুতিই ইতিমধ্যে সেরে ফেলেছে জাতীয় দলের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলো। তৈরি করা হয়ে গেছে নতুন জার্সিও। বাছাইপর্বের শেষ দুটি ম্যাচে এই নতুন জার্সি গায়েই মাঠে নেমেছিলেন মেক্সিকান ফুটবলাররা। আর ব্যর্থতার মুখ দেখলে বিশ্বকাপ চলাকালে যে এই জার্সি ও অন্যান্য ফুটবল সামগ্রী দেদারসে বিক্রির আশা করা হচ্ছে, সেটা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মেক্সিকোজুড়ে ২৩০টি দোকান পরিচালনাকারী ক্রীড়াসামগ্রী প্রতিষ্ঠান গ্রুপো মারতির বিপণন পরিচালক এমিলিও ট্রাবালসে বলেছেন, ‘এখন শুধু বাদ পড়ার আশঙ্কাটা অনুমানই করা হচ্ছে। এটা এখনো ঘটেনি। যদি মেক্সিকো প্লে-অফের বাধা উতরে যায়, তা হলে সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলবে। আর কোনো কারণে যদি সেটা না ঘটে, তা হলে আমাদের ভাবতে হবে যে, জাতীয় দলের পণ্যগুলো নিয়ে আমরা কী করব।’

মেক্সিকো বিশ্বকাপে অংশ নিতে না পারলে সেটা খারাপ প্রভাব ফেলবে আয়োজক ব্রাজিলের ওপরও। মেক্সিকোতে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত খুব করেই চাইছেন যেন তেমনটা না ঘটে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বকাপ চলার সময় ছয় লাখ বিদেশি পর্যটক আশা করছি, যার মধ্যে ৫০ হাজারই হতে পারে মেক্সিকান। বন্ধুত্ব ও বাণিজ্যিক স্বার্থে আমরা একসঙ্গেই সমর্থন করব মেক্সিকান ফুটবলারদের, যেন তারা বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পায়।’

১৯৯০ সালের পর থেকে প্রতিবারই বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে মেক্সিকো। কিন্তু এবার বাছাইপর্বের বাধা সরাসরি ডিঙাতে পারেনি। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশটির বিশ্বকাপ আশা এখন ঝুলে আছে প্লে-অফে। দুই লেগের এই আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফে মেক্সিকোর প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। প্রথম লেগের খেলা ১৩ নভেম্বর। আশাবাদীরা অবশ্য মেক্সিকোর বাদ পড়ার আশঙ্কা খুব একটা দেখছেন না। তাঁরা আশাবাদী, দুই লেগের খেলায় নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েই বিশ্বকাপের টিকিট কাটবে মেক্সিকো।

বর্তমান পরিস্থিতিটাকে তারা বর্ণনা করেছেন স্নায়ুপরীক্ষা হিসেবে। দেশটির রাস্তায় একটা বিজ্ঞাপনে যেমনটা লেখা হয়েছে, ‘বাদ পড়ব? আমরা শুধুই আমাদের স্নায়ুপরীক্ষা করছি। মেক্সিকানরা সবকিছুই ছেড়ে দেয় শেষ মুহূর্তের ওর।’— রয়টার্স।

স্পেন হতে চায় ‘সব পেয়েছির দেশ’

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, বিশ্বকাপ, অলিম্পিকের সোনা—কী নেই স্পেনের ট্রফি কেসে। ফুটবলের প্রায় সব কটি বড় শিরোপা জয়েরই স্বাদ পেয়েছে ইউরোপের ফুটবলের বর্তমান সম্রাটরা। কিন্তু তার পরও একটা আফসোস আছেই স্পেন-সমর্থকদের মনে। এখন পর্যন্ত ফিফা কনফেডারেশনস কাপের শিরোপাটা যে ঘরে তুলতে পারেনি এই সময়ের সেরা এ দলটি। ২০০৯ সালে সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েও বিফল হতে হয়েছিল স্পেনকে। এবার সেই আক্ষেপটা ঘোচাতে চান ভিসেন্তে দেল বস্কের শিষ্যরা। হয়ে যেতে চান ‘সব পেয়েছির দেশ’।

MK-BE444_SP_WC1_G_20100711184931

২০০৮ সালে স্পেনের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ভিসেন্তে দেল বস্ক। ওই বছর থেকে বিশ্বমঞ্চে স্পেনের জয়যাত্রারও শুরু। ২০০৮ সালে স্পেনকে ইউরো জিতিয়েই বিদায় নেন কোচ লুইস আরাগোনেস। ১৯৬৪ সালের পর প্রথম কোনো ট্রফি জেতে স্পেন। এত দীর্ঘ অপেক্ষা ছিল বলেই হয়তো ফুটবল-দেবী দুই হাত উপচে দিতে শুরু করে লা ফুরিয়া রোজাদের। ২০১০ সালে আজন্ম আরাধ্যের প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফির স্বাদ পায় স্পেন। ২০১২ সালে গড়ে অনন্য ইতিহাস। ইউরোপ-সেরার মুকুট ধরে রেখে প্রথম দল হিসেবে ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো—এই শিরোপাত্রয়ী জেতে।

Euro-2012-final-Spain-v-Italy-Spain-celebrating-victory-spain-national-football-team-31321204-594-412

সবই আছে। নেই শুধু কনফেডারেশনস কাপটাই। এবারই সেই আক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগ এসেছে স্পেনের সামনে। ২০১০ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের ১২ জন খেলোয়াড় নিয়েই সেই শূন্যস্থান পূরণের মিশনে নামছেন দেল বস্ক। এখন ক্রমাগত জিততে থাকা এই মেশিনটাকে ঠিকমতো সচল রাখতে পারলেই বাজিমাত করতে পারবেন। তবে কাজটা যে খুব একটা সহজ না, সেটাও বুঝতে পারছেন স্পেনের সফলতম এই কোচ। সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে দেল বস্ক বলেছেন, ‘আমরা জানি যে, ফুটবলে প্রতি এক বা দুই বছর পর অনেক কিছুর বদল ঘটে। আর আমরা ২০০৮ সাল থেকে যে জয়যাত্রা অব্যাহত রেখেছি, সেটার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখাটাও খুব কঠিন। তার পরও ক্রমাগত চেষ্টা করে যাওয়াটাই আমাদের বাধ্যবাধকতা।’

বরাবরের মতো স্পেন জাতীয় দলের মেরুদণ্ড গড়ে উঠছে বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলারদের দিয়ে। মোট ১৩ জন খেলোয়াড় থাকছেন স্পেনের শীর্ষ এই দুই ক্লাব থেকে। কিন্তু এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল থেকে এই দুই দলেরই বিদায় স্পেনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ হয়তো কিছুটা বাড়িয়ে দেবে। এর পাশাপাশি আছে সদ্যই শেষ হওয়া দীর্ঘ, স্নায়ুখরা মৌসুমের উপজাত হিসেবে পাওয়া ইনজুরির সমস্যা। কুঁচকির চোটের কারণে এরই মধ্যে ছিটকে পড়েছেন মাঝমাঠের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড় জাবি আলোনসো। সার্জিও রামোস, আলভারো আরবেলোয়া, জাভি ও সার্জিও বুসকেটসও ভুগছেন ইনজুরির সমস্যায়।

আক্রমণভাগের রণকৌশলও কিছুটা ভিন্নভাবে সাজাতে হতে পারে দেল বস্ককে। কারণ, এবারের ইউরোপিয়ান ফুটবল মৌসুমে খুব একটা ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি স্পেনের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ডেভিড ভিয়া। সেস ফেব্রিগাস আর ফার্নান্দো তোরেসও ভুগেছেন ফর্মহীনতায়। তাই দেল বস্কের ভরসা হয়ে উঠতে পারেন ভ্যালেন্সিয়ার স্ট্রাইকার রবার্তো সলদাদো। লা লিগার এবারের মৌসুমে ২৪টি গোল করে কোচের নজর কেড়েছেন ২৮ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার। তাঁর আক্রমণাত্মক মানসিকতা, দ্রুতগতি আর হেড থেকে গোল করার দক্ষতাকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন দেল বস্ক। তবে এক জায়গায় তাঁর আস্থার কোনো সমস্যা নেই। রিয়ালের মরিনহো-জমানায় ব্রাত্য হয়ে পড়লেও অধিনায়কের বাহুবন্ধনীটা ইকার ক্যাসিয়াসের হাতেই তুলে দেবেন বস্ক।

ফেবারিটের তকমা এঁটেই এবারের কনফেডারেশনস কাপে অংশ নিতে যাচ্ছে স্পেন। গ্রুপ পর্বে তাদের প্রতিপক্ষ উরুগুয়ে, নাইজেরিয়া ও নবাগত দল তাহিতি। ২০০৯ সালে সেমিফাইনাল থেকে স্পেনের বিদায়টা অঘটন হিসেবেই বিবেচিত হয় ফুটবল বিশ্বে। সেবার গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচ জিতলেও শেষ চারের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২-০ গোলে হেরে গিয়েছিল তারা। এবার হয়তো তাই ‘চুনোপুঁটিদের’ নিয়ে একটু বেশিই সতর্ক থাকবে স্পেন। কে জানে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আর্জেন্টিনা আর ফ্রান্সের মতো তারাও এবারই হয়ে যেতে পারে ‘সব পেয়েছির দেশ’।

স্বপ্নের পিছু ছাড়া যাবে না: শচীন

বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে শততম শতকটির দেখা পেয়েছেন শচীন টেন্ডুলকার। আজ এশিয়া কাপের চতুর্থ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষেই ক্রিকেট বিশ্বকে নতুন এই মাইলফলকটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান।

এই একটি সেঞ্চুরির জন্য দীর্ঘ এক বছরের প্রতীক্ষা যে পাহাড় সমান চাপ তৈরি করেছিল, সেটা অস্বীকার করেননি শচীন। ক্যারিয়ারের শততম শতকটি পূর্ণ করার পর যেন ৫০ কেজি ওজনের ভার কমে গেছে বলে সাংবাদিকদের জানান ভারতের এই ব্যাটিং কিংবদন্তী। অনন্য এই কীর্তিটি করে শচীন দেখিয়ে দিয়েছেন অসম্ভব বলে আসলে কিছুই নেই। দীর্ঘ ২২ বছরের ক্যারিয়ারে ব্যাটিং রেকর্ডের প্রায় সবকিছুই নিজের দখলে নিয়ে আসার পর তরুণ ক্রিকেটারদের প্রতি শচীনের আহ্বান, ‘স্বপ্নের পিছু কখনো ছাড়া যাবে না।’

গত বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করা ৯৯তম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির পর থেকেই শচীনের ব্যাটের দিকে উত্সুক চোখে তাকিয়ে ছিল গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। শচীনের সেঞ্চুরির আশায় ‘এবারই হবে!’, ‘এই ম্যাচেই তাহলে হচ্ছে!’ ইত্যাদি লিখতে লিখতে ক্রীড়া সাংবাদিকরা ক্লান্তই হয়ে পড়েছিলেন বলা যায়। কিন্তু শচীনের এই শততম সেঞ্চুরিটির দেখা পেতে পার হয়ে গেছে পুরো একটা বছর। চারপাশের এই ধরণের আলোচনা-সমালোচনা যে প্রচণ্ড চাপ তৈরি করেছিল সেটা নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন শচীন। তবে তিনি যে শুধু সেঞ্চুরির জন্যই মাঠে নামেন না, বরং দলের সামষ্টিক পারফরমেন্সই যে তাঁর প্রধান বিবেচ্য বিষয়, সেটাও সাংবাদিকদের মনে করিয়ে দিয়েছেন লিটল মাস্টার। ভারতীয় ইনিংস শেষ হওয়ার পর এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, ‘সত্যি বলতে, একদম এক বছর আগে আমি যখন ৯৯তম সেঞ্চুরিটি করেছিলাম, তখন এ নিয়ে কেউই খুব বেশি কথা বলেনি। কিন্তু এরপর গণমাধ্যমগুলোই প্রথমে এটা শুরু করেছিল। তারপর সব জায়গাতেই যেখানে আমি গিয়েছি, আমাকে এই শততম সেঞ্চুরির কথাই শুনতে হয়েছে। এটা খুবই কঠিন পরিস্থিতি। আমি তো শুধু শততম সেঞ্চুরির জন্যই খেলি না। আমি সবসময়ই দলের সামগ্রিক পারফরমেন্সই প্রধান হিসেবে বিবেচনা করেছি।’

ছোটরা, যারা ব্যাট হাতে হয়ে উঠতে চায় আগামীর শচীন, তাদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন এমন প্রশ্নের জবাবে ভারতের ব্যাটিং আইকন বলেছেন, ‘খেলাটা উপভোগ করো, আর নিজের স্বপ্নের পিছু করো। স্বপ্ন সত্যি হয়। আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ২২ বছর। স্বপ্নের পিছু করা কখনোই বাদ দিও না।’

নিজের উপর আত্মবিশ্বাস আর নিজের স্বপ্নের পিছনে ছুটতে ছুটতেই ক্রিকেটের রেকর্ড বুকে শচীন এমন এক জায়গা করে নিয়েছেন, যেখানে অন্য কারও পৌঁছানো আর সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। কাজেই এমন উপদেশ এখন শচীনের মুখেই মানায়। আগামীতে এই উপদেশ অনুসরণ করেই কেউ হয়ত তাঁর তৈরি করা মাইলফলকগুলো ছুঁয়ে ফেলতে পারবে।

বাংলাদেশকেই বেছে নিলেন শচীন

বাংলাদেশকেই বেছে নিলেন শচীন

এ মাসের ১২ তারিখে সেঞ্চুরি-খরার এক বছর পূর্ণ করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। গত বছরের ১২ মার্চ ক্যারিয়ারের ৯৯তম সেঞ্চুরি পাওয়ার পর থেকেই শচীনের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু এক বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে বহু আকাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ভারতের এই ব্যাটিং আইকন। আর শততম সেঞ্চুরির অনন্য এই রেকর্ডটি করার জন্য বাংলাদেশকেই বেছে নিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। এশিয়া কাপের চতুর্থ ম্যাচে ক্রিকেট বিশ্বকে নতুন এই মাইলফলক উপহার দিলেন লিটল মাস্টার।

বাংলাদেশের বিপক্ষে যেন শচীনের সেঞ্চুরিটি না হয়, এটা অবশ্য খুব করেই চেয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘আমি খুব করে চাই, শচীনের শততম সেঞ্চুরিটি হোক, কিন্তু আমাদের বিপক্ষে নয়।’ কিন্তু মুশফিকুরের এই আশা শেষ পর্যন্ত পূরণ হলো না। দীর্ঘদিন পর শচীনের ব্যাট আবার ঝলসে উঠল ঢাকাতেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম থেকেই খুব সাবধানে ব্যাটিং করেছেন টেন্ডুলকার। শততম সেঞ্চুরিটি পূর্ণ করতে তিনি খেলেছেন ১৩৮টি বল। এর মধ্যে ছিল একটি ছয় ও ১০ টি চার।

গত বছর অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শচীনকে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল হেলমেট খুলে দুই হাত উপরে তুলে আকাশের দিকে তাকানোর ভঙ্গিমায়। এরপর টেস্ট, ওয়ানডে মিলিয়ে ২৩টি ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন ৩৯ বছর বয়সী এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। খেলেছেন ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। কিন্তু অনেক সম্ভাবনা জাগিয়েও ক্রিকেট প্রেমীদের অপেক্ষাতেই রেখেছিলেন শচীন। অবশেষে সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষেই চিরচেনা ভঙ্গিমায় শতক উদযাপন করতে দেখা গেল কিংবদন্তি এই ব্যাটসম্যানকে। মুশফিকুর রহিমের অনিচ্ছা সত্ত্বেও শচীনের এই সেঞ্চুরিটির সঙ্গেই ইতিহাসের অংশ হিসেবে রেকর্ড বুকে জায়গা করে নিল বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের উপস্থিত দর্শকেরাও হয়তো পরবর্তীকালে স্মৃতি রোমন্থন করে আনন্দ পাবেন যে, ‘শচীনের ইতিহাস গড়া এই দিনটিতে সেখানে আমিও ছিলাম।’

বার্মিংহামের সেই ম্যাচটি

৭৬ বলে ৬১ রানের হার না মানা ম্যাচজয়ী ইনিংসটি খেলার পথে ডারেক মারে

সবাই জানেন, ১৯৭৫ সালে প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপটা জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু এটা হয়তো অনেকেরই অজানা যে, বিশ্বকাপে তাদের দ্বিতীয় ম্যাচটাই হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যেতে বসেছিলেন ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডসরা।  পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচটাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভালোমতোই প্রমাণ করেছিল যে, ক্রিকেট ‘অনিশ্চয়তার খেলা’। এখানে অনেক কিছু অনুমান করা সম্ভব হলেও শেষ বলটার আগ পর্যন্ত জোর দিয়ে কিছুই বলা যায় না।

এখনো পর্যন্ত বিশ্বকাপের অনেক উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচই তাঁবু গেড়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতিতে। স্থান করে নিয়েছে ক্রিকেট ইতিহাসে। প্রথম বিশ্বকাপে বার্মিংহামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-পাকিস্তানের এই ম্যাচটিকেও নিঃসন্দেহে জায়গা দেওয়া যায় সেই তালিকার প্রথম সারিতে।

বার্মিংহামের রৌদ্রজ্জ্বল সকালে নিজেদের অজান্তেই এক স্মরণীয় ম্যাচের টস করতে নেমেছিলেন উইন্ডিজ অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড ও পাকিস্তান অধিনায়ক মজিদ খান। টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। অ্যান্ডি রবার্টস, কেইথ বয়েস, বের্নাড জুলিয়েনদের দুর্ধর্ষ পেস আক্রমণ বেশ ভালোমতোই মোকাবিলা করছিলেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা। অধিনায়ক মজিদ খান খেলেছিলেন ৬০ রানের এক অনবদ্য ইনিংস। পরে মুশতাক মোহাম্মদের ৫৫, ওয়াসিম রাজার ৫৭ বলে ৫৮ রানের ইনিংস দুটির সুবাদে নির্ধারিত ৬০ ওভারে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৬৬ রান।

গর্ডন গ্রিনিজ, আলভিন কালিচরন, রোহান কানহাই, ভিভ রিচার্ডসের মতো বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যান আছেন যে দলে, তাদের জন্য ২৬৭ রানের টার্গেটটা নিতান্ত মামুলিই বলা যায়। কিন্তু সে দিন সারফরাজ নেওয়াজ, নাসের মালিকদের অসাধারণ বোলিং পাল্টে দিল সব হিসেব নিকেশ। খুব বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারলেন না গ্রিনিজ, ফ্রেডরিক, কালিচরণ, কানহাই, ভিভ রিচার্ডস। তিন অঙ্কের ঘরে না পৌঁছাতেই সাজঘরে ফিরে গেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম সারির এই পাঁচ ব্যাটসম্যান। আশার আলো কিছুটা জাগিয়ে রেখেছিলেন ক্লাইভ লয়েড। কিন্তু ৫৮ বলে ৫৩ রানের লড়াকু ইনিংসটি খেলে তিনি জাভেদ মিঁয়াদাদের শিকারে পরিণত হলে হতাশায় ডুবে যায় উইন্ডিজ শিবির। স্কোরবোর্ডের চেহারা শোচনীয়। ৭ উইকেটে ১৫১ রান। টেনে হিঁচড়ে স্কোরটাকে ২০৩ পর্যন্ত নিয়ে যেতেই পতন হলো আরো দুইটি উইকেটের। জয়ের জন্য তখনো দরকার ৬৪ রান।

শেষ উইকেট জুটিতে এত রান সংগ্রহের কথা কেউ স্বপ্নেও ভাবে না। একদিকে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ডারেক মারে থাকলেও আরেক দিকে আছেন নবাগত ফাস্ট বোলার অ্যান্ডি রবার্টস, একদিনের ক্রিকেটে এটি ছিল যার দ্বিতীয় ম্যাচ। পাকিস্তানের জয় উদযাপনও শুরু করে দিয়েছিলেন অনেকে। তাদের জয়টা মনে হচ্ছিল শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু তারপর ইতিহাস গড়ার জন্যই যেন উইকেটে খুঁটি গেড়ে বসলেন উইন্ডিজ উইকেটরক্ষক ডারেক মারে আর অ্যান্ডি রবার্টস। সবাইকে হতবাক করে দিয়ে একে একে ঠিকই ৬৩ রান যোগ করে ফেললেন শেষ উইকেট জুটিতে। এরপরই এসে গেল সেই মহেন্দ্রক্ষণ। ওয়াসিম রাজার বল মিড উইকেটে ঠেলে দিয়েই অবিশ্বাস্য এক জয় ছিনিয়ে নিলেন রবার্টস। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত ছিলেন ২৪ রানে। আর ডারেক মারের ৭৬ বলে ৬১ রানের হার না মানা ম্যাচজয়ী ইনিংসটি এখনো উজ্জ্বল হয়ে আছে বিশ্বকাপের ইতিহাসে।

৭০-এর দশকে ক্রিকেট জগতে উইন্ডিজের একক আধিপত্যের কালে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে অনেক জয়ই পেয়েছিল ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু ওয়ানডে ক্রিকেটের ৪০ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় ম্যাচের কথা বলতে গিয়ে উইন্ডিজ কিংবদন্তী ক্লাইভ লয়েডের মনে সবার আগে ভেসে উঠেছিল এই ম্যাচটির কথাই।