Posts Tagged ‘ বাছাইপর্বের বাধা ’

মেক্সিকোর ফুটবলারদের দিকে তাকিয়ে ব্যবসায়ীরাও

mexico-gold-cup-fans

বিশ্বকাপে অংশ নিতে না পারলে মেক্সিকোর ফুটবলপ্রেমীরা হতাশ তো হবেনই, বিশ্বকাপের সময়টা তাঁদের কাটবে আফসোস আর হা-হুতাশ করেই। কিন্তু বিশ্বকাপে একটি দলের জায়গা না পাওয়া শুধু সমর্থকদের হতাশার ফ্রেমে আবদ্ধ নয়, বরং এর পেছনে আছে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ। মেক্সিকো হতে পারে এর ভালো উদাহরণ। আগামী বিশ্বকাপের টিকিট না পেলে প্রায় ৬৫ কোটি ডলার ক্ষতির মুখে পড়বে উত্তর আমেরিকার দেশটি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যেটি পাঁচ হাজার ৬৬ কোটি টাকারও বেশি!

দেশটির ফুটবল সংস্থা তো বটেই, মেক্সিকোর সম্ভাব্য বিশ্বকাপ-ব্যর্থতা ভাবিয়ে তুলেছে দেশটির গণমাধ্যমকেও। বিশেষ করে মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের যেসব টেলিভিশন নেটওয়ার্কের হাতে বিশ্বকাপের সম্প্রচার স্বত্ব আছে, মেক্সিকান ফুটবলাররা বিশ্বকাপে না থাকলে নিশ্চিতভাবেই ক্ষতির মুখে পড়বে তারা। এ ছাড়াও যেসব কোম্পানি জাতীয় দলের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করছে, তারাও আছে হুমকির মুখে।

শুধু বিশ্বকাপ চলাকালেই নয়, দীর্ঘ মেয়াদেও এটি মেক্সিকান ফুটবলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করছেন ক্রীড়াভিত্তিক বিপণন প্রতিষ্ঠান ড্রেয়াম্যাচ সলিউশনের পরিচালক রোয়া। সম্প্রতি রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, ‘ক্রীড়া ও বাণিজ্যিক দিক থেকে মেক্সিকোর ব্যর্থতা হবে হতাশাজনক। আমাদের ওপর এর প্রভাবটাও পড়বে মারাত্মকভাবে। এটা হবে ফুটবল অর্থনীতির জন্য খুবই বিপর্যয়পূর্ণ পরিস্থিতি। দীর্ঘ মেয়াদে এটা প্রভাব ফেলবে মেক্সিকান লিগের ওপর। সেখানে স্পন্সরশিপ ও ব্র্যান্ড মর্যাদা অনেক কমে যাবে।’

মেক্সিকোর বিশ্বকাপ যাত্রার অনেক প্রস্তুতিই ইতিমধ্যে সেরে ফেলেছে জাতীয় দলের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলো। তৈরি করা হয়ে গেছে নতুন জার্সিও। বাছাইপর্বের শেষ দুটি ম্যাচে এই নতুন জার্সি গায়েই মাঠে নেমেছিলেন মেক্সিকান ফুটবলাররা। আর ব্যর্থতার মুখ দেখলে বিশ্বকাপ চলাকালে যে এই জার্সি ও অন্যান্য ফুটবল সামগ্রী দেদারসে বিক্রির আশা করা হচ্ছে, সেটা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মেক্সিকোজুড়ে ২৩০টি দোকান পরিচালনাকারী ক্রীড়াসামগ্রী প্রতিষ্ঠান গ্রুপো মারতির বিপণন পরিচালক এমিলিও ট্রাবালসে বলেছেন, ‘এখন শুধু বাদ পড়ার আশঙ্কাটা অনুমানই করা হচ্ছে। এটা এখনো ঘটেনি। যদি মেক্সিকো প্লে-অফের বাধা উতরে যায়, তা হলে সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলবে। আর কোনো কারণে যদি সেটা না ঘটে, তা হলে আমাদের ভাবতে হবে যে, জাতীয় দলের পণ্যগুলো নিয়ে আমরা কী করব।’

মেক্সিকো বিশ্বকাপে অংশ নিতে না পারলে সেটা খারাপ প্রভাব ফেলবে আয়োজক ব্রাজিলের ওপরও। মেক্সিকোতে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত খুব করেই চাইছেন যেন তেমনটা না ঘটে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বকাপ চলার সময় ছয় লাখ বিদেশি পর্যটক আশা করছি, যার মধ্যে ৫০ হাজারই হতে পারে মেক্সিকান। বন্ধুত্ব ও বাণিজ্যিক স্বার্থে আমরা একসঙ্গেই সমর্থন করব মেক্সিকান ফুটবলারদের, যেন তারা বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পায়।’

১৯৯০ সালের পর থেকে প্রতিবারই বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে মেক্সিকো। কিন্তু এবার বাছাইপর্বের বাধা সরাসরি ডিঙাতে পারেনি। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশটির বিশ্বকাপ আশা এখন ঝুলে আছে প্লে-অফে। দুই লেগের এই আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফে মেক্সিকোর প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। প্রথম লেগের খেলা ১৩ নভেম্বর। আশাবাদীরা অবশ্য মেক্সিকোর বাদ পড়ার আশঙ্কা খুব একটা দেখছেন না। তাঁরা আশাবাদী, দুই লেগের খেলায় নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েই বিশ্বকাপের টিকিট কাটবে মেক্সিকো।

বর্তমান পরিস্থিতিটাকে তারা বর্ণনা করেছেন স্নায়ুপরীক্ষা হিসেবে। দেশটির রাস্তায় একটা বিজ্ঞাপনে যেমনটা লেখা হয়েছে, ‘বাদ পড়ব? আমরা শুধুই আমাদের স্নায়ুপরীক্ষা করছি। মেক্সিকানরা সবকিছুই ছেড়ে দেয় শেষ মুহূর্তের ওর।’— রয়টার্স।