ব্লগার গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে কিছু বললেন না ইউনুস
২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল জয়ের পর ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবার পেয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা, কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদক। ক্ষুদ্রঋণভিত্তিক গ্রামীন ব্যাংকের মাধ্যমে তিনি যা করে আসছেন সেটা যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনায়, ‘মানুষকে শ্রেয়তর জীবনের পথে এগিয়ে নেবে’। একারণেই ড. ইউনুসকে এই পুরস্কার দেওয়ার জন্য মনোনিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বাংলাদেশে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে, সে প্রসঙ্গে কোন মন্তব্য শোনা যায় নি ড. ইউনুসের কাছ থেকে। এবার হেফাজতে ইসলামের দাবিমাফিক সরকার যে তথাকথিত চার ‘নাস্তিক’ ব্লগারকে গ্রেপ্তার করেছে, সে বিষয়েও কোন মন্তব্য করেননি শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রথম বাংলাদেশী।
পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে ব্লগারদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনুস বলেন, ‘আমি এখন এই রকম ইস্যু নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না। আজকের সমস্ত আলোচনার কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানটাই থাকা উচিৎ।’ একথা বলেই তিনি দ্রুত সেখান থেকে চলে যান।
ইউনুসের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য সীমাবদ্ধ ছিল গ্রামীন ব্যাংককে ঘিরেই। দারিদ্র দূরীকরণে এই প্রতিষ্ঠানটি কত ‘চমৎকার’ ও ‘উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা’ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, সেটা বর্ণনা করেছেন তিনি। এছাড়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন সিনেটরদের সঙ্গে লবিং করার কথা উল্লেখ করেছেন ইউনুস। সেসময় তিনি আমেরিকায় থাকতেন। এবং এ কথা স্মরণীয় যে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল এবং পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের বিষয়টা প্রায় একদিন ঝুলিয়ে রেখেছিল।
নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে ডেমোক্রাট, রিপাবলিকান, উভয় পার্টিরই ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছেন ইউনুস। পুরস্কারটাও তিনি বাংলাদেশের লাখো নারীর পক্ষ থেকেই গ্রহণ করছেন বলে জানিয়েছেন। নারীরাই মূলত দারিদ্র দূরীকরণের এই স্বপ্নপূরণের পথে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করেন ইউনুস। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতে ইসলাম নামধারী একটি সংগঠন নারীদের স্বাধীনতা হরণের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করলেও সে বিষয়ে কোন মন্তব্য আসেনি ইউনুসের কাছ থেকে। শাহবাগ আন্দোলন সম্পর্কেও তিনি নিরব।
এইরকম পরিস্থিতির মধ্যে ইউনুসের নতুন এই পুরস্কারপ্রাপ্তির খবরটি সমালোচিত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে। অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের অনেকেই ভেবে পাচ্ছেন না যে, সমাজের খুবই গুরুত্বপূর্ণ সব ইস্যুতে কোন মতামত না দেওয়া সত্ত্বেও তিনি কিভাবে একের পর এক পুরস্কার জিতে যাচ্ছেন?
গত ২৫ বছরে অন্তত ১০৩টি পুরস্কার পেয়েছেন মুহাম্মদ ইউনুস। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল ও যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ছাড়াও ২০০৯ সালে ইউ.এস প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম পুরস্কার পেয়েছেন ইউনুস। ইউনুসের দর্শন প্রচারের জন্য ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছে ইউনুস সেন্টার।- হাফিংটন পোস্ট