Posts Tagged ‘ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ’

রাবি ছাত্রলীগ: মিউমিউ করা বিড়াল থেকে বাঘ হওয়ার ইতিহাস

র‍্যাব-পুলিশের মতো ছাত্রলীগেরও একটা মুখস্ত প্লট আছে। তারা শিবির প্রতিহত করতে যান। যেখানে-সেখানে তারা শিবির খুঁজে পান। এমনকি নিজেদের দলের মধ্যেও খুঁজে পান। ছাত্রলীগের মধ্যে কেউ কোনো আকাম করলে বলা হয় সেটা শিবিরের অনুপ্রবেশকারী।
———————–
র‍্যাব-পুলিশের ক্রসফায়ার গপ্পো মানুষ যেমন আর খাচ্ছে না, তেমনি ছাত্রলীগের এই ‘শিবির জুজ’ও আর খাওয়ার যোগ্য থাকছে না। সেজন্যই তারা এভাবে তোতলাচ্ছেন।
———————–

শিবির কী জিনিস দেখেছেন আপনারা? কোনোদিন গেছেন শিবির প্রতিহত করতে? শিবিরের স্বর্গখ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। শিবিরের রমরমার সময়। জীবনে কোনোদিন ছাত্রলীগকে শিবির প্রতিহত করতে যাইতে দেখি নাই। এখন তারা যেটা করছেন সেটা ক্ষমতার নির্লজ্জ আস্ফালন। এই জিনিস বেশিদিন টেকার না।
————————-
২০০৫ সালে ভর্তি হয়েছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন শিবিরের বিশাল বিশাল সব মিছিল দেখতাম। এ মাথায় দাঁড়ালে ও মাথা দেখা যাইত না। ক্লাস নিতে নিতে শিক্ষককে থেমে থাকতে হতো মিনিট দশেক। এখনকার এইসব লুটপাটের চেতনায় উদ্বুদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সম্ভবত সেসব দেখেননি।
তো, সেই শিবির রাজত্বে ছাত্রলীগ ছিল বিড়ালের মতো। মিউমিউ করত। এখনকার ক্ষুদ্র কোনো বাম ছাত্র সংগঠন যে অবস্থায় আছে- ছাত্রলীগের অবস্থাও কমবেশি একই রকম ছিল। শিবিরের সঙ্গে গ্যাঞ্জাম কিছু হলে, সেটা হতো ছাত্রদলের।
কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সেসময় সাংস্কৃতিকভাবে ছিল প্রচণ্ড তৎপর। প্রাণবন্ত-উচ্ছল একটা পরিবেশ ছিল ক্যাম্পাসের। প্রতি সপ্তাহেই এখানে-ওখানে হতো পথনাটক। শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সভা-সেমিনার; পত্র-পত্রিকা, গান-আড্ডায় মুখর থাকত বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতার পরিসরটা ছিল অনেক বড়। যার ছিটেফোটাও কিছু নেই এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সরকারের আমলে।
—————————
এরপর আসল ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এখনকার ছাত্রলীগ নেতারা, যে নেত্রীর নাম নিতে নিতে, মহামান্য বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন- সেই শেখ হাসিনা কারাবন্দী হয়েছিলেন। তাদের আরও অনেক নেতা গিয়েছিলেন গারদের ওপাশে। কিন্তু ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মীকে আওয়াজ তুলতে দেখিনি। আওয়াজ কি— তারা ছিলেনই না অত্র অঞ্চলে।
এরপর আগস্ট বিক্ষোভ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে তাদের কেউ কেউ যোগ দিয়েছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের তৈরি করা পাটাতনে।
আমরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা- যারা বন্ধুত্বের সূত্রে, রাজনৈতিক চিন্তা-চর্চার সূত্রে সংগঠিত হয়েছিলাম, তারাই আওয়াজ তুলেছিলাম সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনায্য-অগণতান্ত্রিক কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের কেউ কেউ আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন মাত্র।
————————-
ছাত্রলীগ নামের এই বিড়ালটা দুম করে গায়ে ডোরাকাটা দাগ কেটে বাঘ হয়ে গেল ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর। সেই ‘ভোট বিপ্লবের’ চেতনীয় জোশে তারা মারামারি বাধিয়ে দিলেন শিবিরের সঙ্গে। কারণ তখন তাদের জানাই ছিল যে, পুলিশ তাদের সঙ্গে আছে। প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের কিছু বলবে না। অনেক ক্ষমতার বলে বলিয়ান হয়ে তারা শিবির প্রতিহত করতে গেলেন!!!
————————-
ছাত্রলীগের কাছে ব্যাপারটা ছিল শুধুই ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার। শিবির প্রতিহত করার নামে সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জারি করেছিল নয়া জরুরি অবস্থা। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সব ধরণের স্বাধীন তৎপরতার বিরুদ্ধে। সভা-সেমিনার-মিছিল-সমাবেশ-লিফলেট সব বন্ধ।
অন্যদিকে ছাত্রলীগকে দেওয়া হয়েছিল অবাধ স্বাধীনতা। কোমড়ে অস্ত্র গুঁজে প্রক্টরের সঙ্গে হাঁটা শুরু করেছিলেন ছাত্রলীগ নেতারা। সেই যে শুরু… ২০০৯ সালের দিক থেকে… তারপর থেকে সেভাবেই প্রশাসনের ছত্রছায়ায়-প্রশ্রয়ে দানব হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগ। আরও বিস্তারিত জানার আগ্রহ থাকলে পড়তে পারেন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফ্রাংকেনস্টাইন’ কাহিনী

—————————-
কিন্তু শিবির কি প্রতিহত করতে পেরেছে তারা? ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের শুরুর দিকে যখন পুরো দেশ কেঁপে কেঁপে উঠছিল- তখন অভিভাবকশূণ্য হয়ে পড়ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। শিবির সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন সেসময়ের কর্মকর্তা-হর্তাকর্তারা। তারা ভয়ে ছিলেন। আরও বিস্তারিত জানার আগ্রহ থাকলে পড়তে পারেন: কেমন আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়?

তো, এই হলো তাদের শিবির প্রতিহত করার নমুনা। এই হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষিতে গত এক যুগে ছাত্রলীগের ইতিহাস। মিউমিউ করা বিড়াল থেকে বাঘ হয়ে ওঠার ইতিহাস।
—————————-
বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠ পরিবেশ, জ্ঞানচর্চা, তর্ক-বিতর্ক, গান-্আড্ডার পরিবেশ তৈরি হতে পারে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্ত-স্বাধীন তৎপরতার মাধ্যমে। শিক্ষার্থীরা যত বেশি কথাবার্তা বলবেন, নানাবিধ তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত হবেন- তত বাড়তে থাকবে স্বাধীনতার পরিসর। কমতে থাকবে দানবদের দৌরাত্ম।

বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত আরও লেখাপত্র

মুক্ত-বিশ্ববিদ্যালয় নাকি মুক্ত-বাজার?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা… শিখব কি?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফ্রাংকেনস্টাইন’ কাহিনী

১৮১৮ সালে ইংলিশ ঔপন্যাসিক ম্যারি শেলি রচিত ‘ফ্রাংকেনস্টেইন’ বেশ সাড়া জাগিয়েছিল পশ্চিমা বিশ্বে। পরে রুপালি পর্দাও কাঁপিয়েছে এটির চলচ্চিত্ররূপ। যেখানে দেখা যায় ভিক্টর ফ্রাংকেনস্টেইন নামের এক খ্যাপা বিজ্ঞানী গবেষণাগারে প্রাণ সৃষ্টি করে কীভাবে এক দানবের জন্ম দেন। এবং পরবর্তীকালে এই দানব একের পর এক বিধ্বংসী সহিংস কর্মকাণ্ড করতে থাকে। শেষটায় এই দানবকে থামাতে গিয়ে বহু পথ ছুটতে হয় বিজ্ঞানীকে। সফল হতে পারেন না। প্রাণ হারান ক্লান্তশ্রান্ত হয়ে। চরিত্র আর পরিস্থিতি একটু ওলটপালট করে দিলে অবাক বিস্ময়ে দেখতে পাওয়া যায় যে, ঠিক ঠিক এ রকম একটা ঘটনার পুনরাবৃত্তিই হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপটে।

শিবির আধিপত্যের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সময় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের কোনো প্রকাশ্য তৎপরতা প্রায় ছিলই না। সেখান থেকে কীভাবে এটার পুনর্জন্ম হলো; কীভাবে সে শক্তিশালী হয়ে উঠল এবং কীভাবে দানবীয় সব কর্মকাণ্ড করে নিজের পালন-পোষণকারীর অঙ্গহানি ঘটাতে থাকল; তা দারুণভাবে মিলে যায় ম্যারি শেলির ফ্রাংকেনস্টেইন উপন্যাসের সঙ্গে। যার একেবারে শেষ পর্যায়টা বোধহয় এখন রচিত হচ্ছে।

প্রাণসঞ্চার পর্ব

২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জরুরি অবস্থা জারির আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল ছাত্রশিবিরের আধিপত্য। বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো যেমন সব সময়ই একটা ক্ষুদ্র অবস্থান নিয়ে থাকে তেমনটা ছিল। মাঝে কিছু সময় জাসদ ছাত্রলীগও ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ছাত্রলীগের তৎপরতা সেভাবে চোখে পড়ত না বললেই চলে। জরুরি অবস্থার মধ্যে নিজ দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা এবং পরে তাদের জেলহাজতে থাকতে হলেও ছাত্রলীগের ব্যানার সম্বলিত কোনো মিছিল বা মানববন্ধন বা অন্য কোনো কর্মসূচি ক্যাম্পাসে ছিল না। এমন একটা জিনিসে প্রাণসঞ্চার করে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ ঘটায় ‘ভোট বিপ্লব’! আর সেই বিপ্লবী জোসে চাঙ্গা হয়ে ক্যাম্পাস থেকে শিবিরকে সরিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার তাগিদ বোধ করতে থাকে ছাত্রলীগ।

অবশেষে ১৩ মার্চ ছাত্রলীগ (আওয়ামী ও জাসদ) ও ছাত্রমৈত্রীর সঙ্গে শিবিরের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। মারা যান ছাত্রশিবিরের নেতা নোমানী। ক্যাম্পাস ‘অস্থিতিশীল’ হয়ে ওঠায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। আড়াই মাস বন্ধ থাকার পর ১ জুন খুলে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়।

কিন্তু শিবির মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে, আবার ক্যাম্পাসে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে- এমন দোহাই দিয়ে ক্যাম্পাসে জারি করা হয় ‘নয়া জরুরি অবস্থা’। যে কোনো ধরনের সভা-সমিতি-সমাবেশ-সেমিনার-জমায়েত-লিফলেট-প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা হয়।

ভয়াল মূর্তিধারণ পর্ব

ক্যাম্পাসকে শিবিরমুক্ত করার মিশন নিয়ে ছাত্রলীগকে অবাধ স্বাধীনতা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রলীগের সশস্ত্র ছেলেদের নিয়ে ক্যাম্পাস দাবড়ে বেড়াতে দেখা গেছে সেসময়ের সহকারী প্রক্টরকে। শিবির জুজ দেখিয়ে সবার মুখ বন্ধ করে দিয়ে ছাত্রলীগকে আদতে দেওয়া হয়েছিল অবাধ স্বেচ্ছাচারের সুযোগ। তার পরিণাম কী হয়েছে সেটা বোঝার জন্য অনেক অনেক ঘটনার মধ্য থেকে অল্প কিছু উল্লেখ করা যেতে পারে :

  •  ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট দলের অন্তঃকলহের জের ধরে খুন হন ছাত্রলীগকর্মী নাসরুল্লাহ নাসিম। এ ঘটনায় নয় ছাত্রলীগকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা হলেও আসামিরা জামিনে মুক্তি পায়।
  •  ২০১২ সালের ১৫ জুলাই পদ্মা সেতুর টাকা ভাগাভাগির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আহমেদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু গ্রুপের কর্মীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ছাত্রলীগকর্মী আব্দুল্লাহ আল হাসান সোহেল। সেই ঘটনায় দুজনকে বহিষ্কার করা হলেও পরে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
  •  ২০১৪ সালের ৩ এপ্রিল হলের রুমে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী আকন্দ। ছাত্রলীগ এই খুনের জন্য দায়ী করে শিবিরকে। কিন্তু এটাও সংগঠনটির পদ-ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফল বলে অভিযোগ আরো অনেকের। (তথ্যসূত্র : সাপ্তাহিক এই সময়)

এ ছাড়া ক্যাম্পাসে অস্ত্রবাজি-টেন্ডার-চাঁদাবাজি নিয়ে অনেকবার নেতিবাচকভাবে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে ছাত্রলীগ। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে থেকেছে। আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। বিনিময়ে নিজেরাও সাহায্য নিয়েছে এই ছাত্রসংগঠনটির। ব্যবহার করেছে শিক্ষার্থীদের স্বাধীন তৎপরতা, ন্যায্য দাবির আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়ার কাজে।

আত্মঘাত পর্ব

ছাত্রলীগকে এই অবাধ স্বেচ্ছাচারে মেতে ওঠার সুযোগ করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে নিজেদেরই আত্মঘাতী পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল সেটাও টের পাওয়া গেল সাম্প্রতিক সময়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তি উপাচার্য লাঞ্ছিত-অপমানিত হয়েছেন ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের হাতে। ভিসির পদত্যাগের দাবিতে মাঠে নেমেছেন ছাত্রলীগের ‘বিতর্কিত’ নেতাকর্মীরা। (তথ্যসূত্র : ২১ এপ্রিল, ২০১৫; যুগান্তর)

কীভাবে ও কেন ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াল, তা জানার জন্য আবারও একটু পেছনে ফিরতে হবে। ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাবির ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সোবহানকে উপাচার্য, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নুরুল্লাহকে উপ-উপাচার্য ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবদুল বারীকে রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল চার বছরের জন্য। সে অনুযায়ী ২০১৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তাঁদের মেয়াদ শেষ হয়। তার আগ দিয়ে চলে গণনিয়োগের ধুম। ২০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৪৪৭তম সভায় দলীয় ভিত্তিতে ১৮৪ জন কর্মচারী, ২৬ জন কর্মকর্তা, ২০ জন শিক্ষক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩১ জনকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। কিন্তু এতেও সন্তুষ্ট করা যায়নি চাকরিপ্রত্যাশী সরকার সমর্থকদের। তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে উপ-উপাচার্যের দপ্তরে হামলা চালান। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মাসুদ রানার নেতৃত্বে সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রশাসন ভবনে তালা লাগিয়ে দেন। সে সময় কিছুদিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ‘অভিভাবকত্বহীন’ অবস্থার মধ্যেও কাটিয়েছে। (তথ্যসূত্র : কালের কণ্ঠ; ২৫ ও ২৮  ফেব্রুয়ারি, ২০১৩)

নতুন করে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় মুহম্মদ মিজানউদ্দিনকে। এই আমলেও ছাত্রলীগ থেকে যায় বল্গাহীন ঘোড়া। ছুটতে ছুটতে একসময় তারা আবার চড়াও হয়ে বসে প্রশাসনের ওপর। ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল রাজশাহী-১ আসনের সাংসদ ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী টেবিল চাপড়ে উপাচার্যকে শাসান। একদিন পর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতারা উপাচার্যের দপ্তরে ঢুকে তাঁকেসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষককে গালাগাল ও হুমকি দেন। গায়ে হাত তোলার অভিযোগও শোনা গেছে। এতদিন যাদের ছত্রছায়ায়, প্রশ্রয়ের আলো-হাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগ ফুলেফেঁপে উঠেছে, তারা এবার দাঁড়িয়ে গেছে সেই প্রশাসনের বিরুদ্ধেই। আর প্রশাসনবিরোধী এই তৎপরতার নেতৃত্ব দিচ্ছে বিভিন্ন সময়ে অপকর্মের দায়ে ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত ও অস্ত্রবাজরা। (তথ্যসূত্র : যুগান্তর; ২১ এপ্রিল ২০১৫)

সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি-নিপীড়ন পর্ব

এই পর্বটি চলমান আছে দীর্ঘদিন ধরেই। ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষ, ছাত্রলীগের অন্তঃকলহের ফলে সংঘর্ষ, নিয়োগবাণিজ্য, নিষেধাজ্ঞার বেড়ি সব সময়ই রুদ্ধ করেছে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিকাশ, স্বাধীন তৎপরতা। ন্যায্য দাবির কথা বলতে গিয়ে খেতে হয়েছে লাঠি-গুলি-হুমকিধমকি। তার কিছু নমুনা :

  •  ২০১২ সালের ২ অক্টোবর : ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে গোলাগুলি চলাকালে পুলিশকে দর্শকের ভূমিকায় দেখা যায়। সংঘর্ষ চলাকালীন ছাত্রলীগের দুই নেতাকে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে পিস্তলে গুলি ভরতে এবং গুলি করতে দেখা যায়। আহত হয় বেশ কয়েকজন। অথচ তিন-চারদিন পরেই ভর্তি পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট মিছিল করলে সেখানে বাধা দেয় ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে পুলিশ। ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে এবং ছাত্রফ্রন্টের চার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে। (তথ্যসূত্র : ৩ ও ১১ অক্টোবর, প্রথম আলো)
  • ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি-বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও পুলিশের যৌথ হামলার প্রতিবাদে মিছিল করলে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের মিছিলে হামলা করে পুলিশ। আহত হয় ১০-১২ জন। গ্রেফতার করা হয় পাঁচজনকে। (তথ্যসূত্র : ১১ অক্টোবর, প্রথম আলো)
  • ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি ও বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্সবিরোধী আন্দোলনে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর শান্তিপূর্ণ সমাবেশে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে গুলি চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন শতাধিক শিক্ষার্থী। মামলা দেওয়া হয় ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনকারী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর নামে।
  • ২০১৫ সালের ৩ মার্চ মুক্তচিন্তক অভিজিৎ রায়কে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে মিছিল বের করলে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সহকারী কমিশনার রকিবুল আলম বলেন, ‘ক্যাম্পাসে শুধুই ছাত্রলীগ মিছিল করতে পারবে, আর কেউ না।’ (তথ্যসূত্র : ৪ মার্চ, ২০১৫; যুগান্তর)

এ ছাড়া বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগের স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ডের বলী হতে হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পঙ্গু হয়ে গেছে সাংস্কৃতিকভাবে। ক্যাম্পাসে এখন আর তেমন কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গান-পথনাটক-কবিতা-আলোচনা সভা-সেমিনার হয় না বললেই চলে। অথচ ১০-১২ বছর আগে শিবিরের রমরমার যুগে দারুণ সরব ছিলেন সাংস্কৃতিককর্মীরা। কোনো কোনো দিন একই সময়ে ক্যাম্পাসের দু-তিন জায়গায় পথনাটক আয়োজিত হতেও দেখা গেছে। আলোচনা-সেমিনার বন্ধ করে দিয়ে তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে মুক্তজ্ঞান চর্চার পরিবেশও রুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। এখানে-সেখানে এখন শুধু দেখা যায় অযাচিত নিষেধাজ্ঞার  দেয়াল-বেড়া-কাঁটাতার।

ভবিষ্যৎ পর্ব

এই পর্বটিই এখন রচিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটা হতে পারে পচে-গলে যাওয়ার পর্ব। বা হতে পারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ পর্ব। প্রশাসন ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি আরো দুর্বিষহ হতে উঠতে পারে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি আরো বাড়তে পারে। আর শিক্ষার্থীরা যদি নিজেদের ভালোমন্দের বিবেচনা করে সক্রিয় হন, কথা বলা শুরু করেন তাহলে শুরু হতে পারে নষ্ট ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত, প্রতিরোধের কাল।

ম্যারি শেলির উপন্যাসের খ্যাপা বিজ্ঞানী ভিক্টর ফ্রাংকেনস্টেইন তাঁর তৈরি করা দানবটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। পিছু ধাওয়া করতে করতে শেষটায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পরিণতিও হয়তো তেমনটাই হতে পারে। আর সেই উপন্যাসের দানবসত্তার মতো ছাত্রলীগও শেষটায় কোথায় চলে যাবে, তা কারোরই জানা থাকবে না। একমাত্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্ত-স্বাধীন তৎপরতাই পারে বিশ্ববিদ্যালয়কে আবার প্রাণবন্ত, মুক্ত জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রে পরিণত করতে। সে জন্য তুলে নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা। বন্ধ করতে হবে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ, পুলিশি নিয়ন্ত্রণ। তাহলেই কেবল আবার গান-বাজনায়, নাটক-কবিতায়, মুক্ত জ্ঞানচর্চার তর্ক-বিতর্কে মুখরিত হতে পারবে মতিহার চত্বর।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা…; শিখব কি?

কয়েকদিন আগেই আরিফ রেজা মাহমুদ লিখেছিলেন যে,

রাষ্ট্র, ক্রমাগত সমাজকে ক্ষত্রশক্তি শুন্য করে ফেলছে। সমাজের হাজার বছরের সংহতি, পারস্পারিক সহযোগিতা-প্রতিরোধ সব চুরমার করে ফেলছে রাষ্ট্র। ক্রমাগত এক নিষেধাজ্ঞারআঁধারে নিমজ্জিত করে রাখছে আমাদের। উদাহরণ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ৭ বছর ধরে অব্যাহত আছে নিষেধাজ্ঞা। শিবির জুজু দেখিয়ে এই নিষেধাজ্ঞা চালু হলেও তা আসলে বলবৎ প্রগতিশীল শক্তিরই উপরে। শিবির এখন আউট অফ ক্যাম্পাস-চোরাগোপ্তা দল। তাহলে শিবির ঠেকাতে প্রগতিশীল সংগঠনগুলোকে কর্মকান্ড করতে না দেয়ার অর্থ খুব সোজা। শিবির বিরোধী শক্তির নিক্ষত্রীয়করণ। একই পদ্ধতি সবখানে বিস্তৃত হচ্ছে। হত্যার শিকার হচ্ছেন অভিজিৎরা। সমাজ-প্রতিরোধ না বাঁচলে যে কেউ ষড়যন্ত্র করতে পারবে।
সামাজিক প্রতিরোধ এমন দুর্বল হয়ে পড়ার পরণতি একটাই– দাসত্ব-দীর্ঘ মেয়াদী দাসত্ব।

RU1

সেই অভিজিৎ হত্যার বিচার চাইতে গিয়েই আবার পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের। শিবির-মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার নামে রাবিকে নিষেধাজ্ঞার বেড়ি পড়ানো হয়েছিল ২০০৯ সালে। তারপর থেকে ঘটা এমন কয়েকটি ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন Sohraab Hossaiin…

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং পুলিশ কাহিনীঃ

০২ অক্টোবর ২০১২।
ছাত্রলীগ এবং ছাত্রশিবিরের মধ্যে গোলাগুলি চলাকালে পুলিশকে দর্শকের ভূমিকায় দেখা যায়। সংঘর্ষ চলাকালীন ছাত্রলীগের ২ নেতাকে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে পিস্তলে গুলি ভরতে এবং গুলি করতে দেখা যায়।

০৬ অক্টোবর ২০১২। ভর্তি পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট রাবি শাখা মিছিল করলে সেখানে বাধা দেয় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, ব্যানার ছিড়ে ফেলে এবং ছাত্র ফ্রন্ট এর চার নেতাকর্মিকে (সোহরাব, সুজন, রিহান, তৌফিক) গ্রেফতার করে।

১০ অক্টোবর ২০১২।
বাকৃবিতে বর্ধিত ফি বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও পুলিশের যৌথ হামলা এবং আন্দোলনকারি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এর ১১ নেতাকর্মির নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা ও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে রাবি ক্যাম্পাসে প্রগতিশীল ছাত্রজোট মিছিল করলে মতিহার থানার এসি হাসানাত এর নেতৃত্বে হামলা করা হয়, আহত হন ১০/১২ জন জোট নেতাকর্মি, গ্রেফতার করা হয় ৫জনকে (ছাত্র ফ্রন্ট এর সোহরাব, সুজন, সাদিক; বাসদ এর দেবাশীষ রায়, ছাত্র ফেডারেশন এর মোসাদ্দেক)

২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
বর্ধিত ফি ও বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বিরোধী আন্দোলনে রাবি প্রশাসনিক ভবনের সামনে দশ সহস্রাধিক শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে এবং নির্দেশে পুলিশ এবং ছাত্রলীগের গুলি। সাংবাদিকসহ শতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ। ফলাফলঃ আন্দোলনকারিদের নামে মামলা।

[চলবে]

RU2

ক্যাম্পাসে রাষ্ট্রীয় কলকব্জা ঢুকিয়ে দেওয়ার, পুলিশি পাহাড়া বসানোর, নায্য কথা বলতে আসা শিক্ষার্থীদের মারধর করার পরিণামে ক্রমাগত প্রাণহীন হয়ে পড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে গিয়ে তো সরাসরি ডাণ্ডা-বেড়ির ঘা খেতে হচ্ছে। মতিহার চত্বর নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ছে সাংস্কৃতিকভাবেও। ক্যাম্পাসে এখন কি ১০ বছর আগের মতো সেমিনার-আলোচনা সভা হয়? পথনাটক-মঞ্চনাটক হয়? গান-বাজনা হয়? হাঁফ ছাড়ার মতো মুক্ত পরিবেশ আছে? উত্তর নেতিবাচকই হওয়ার কথা।

অথচ ১০ বছর আগে শিবিরের দাপুটে উপস্থিতির মধ্যে, তাদের ভয়- ভীতি প্রদর্শনের মুখেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হাজার গুনে সরব ছিল রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিকভাবে…

শিবির দমনের নামে “মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী”রা নিজেদের ক্ষমতা একচেটিয়াকরণ করেছেন শুধু। স্রেফ ফায়দা লুটেছেন অন্য সবার মুখ বন্ধ করে দিয়ে। এদিকে শিবির কিন্তু মাঝেমধ্যেই জানান দিয়েছে নিজেদের উপস্থিতি। সেগুলো ঠেকাতে পারেননি রাষ্ট্রের পাণ্ডারা।

বাংলাদেশের বৃহত্তর পরিসরেও এমন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। জাতীয় পরিস্থিতিতে যদি সবার মুখ বন্ধ করে দিয়ে, কাউকে কোনোরকম কথা বলতে না দিয়ে, সভা-সমিতি-মিছিল-মিটিং সব বন্ধ করে দিয়ে মৌলবাদ নির্মুল বা জঙ্গি দমন শুরু করা হয়… তাহলে পরিণতি কী হতে পারে সে ধারণা পাওয়ার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকানোই যায়

মুক্ত-বিশ্ববিদ্যালয় নাকি মুক্ত-বাজার?

গত ২০ জানুয়ারী থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি ছিল বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহার ও সান্ধকালীন বাণিজ্যিক মাস্টার্স কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত বাতিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যিকীকরনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী। কোনো আন্দোলনে এত বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ বহুদিন পর দেখা গেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ১ ফেব্রুয়ারী বর্ধিত ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি সাময়িকভাবে স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু শুধু স্থগিত না, সিদ্ধান্তটা পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং সান্ধকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। এই কয়দিন ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ধৈর্য্য ধরে মোকাবিলা করছিল নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি’। কিন্তু এবার ভেঙ্গে গেল তাদের ধৈর্য্যর বাঁধ। বেরিয়ে পড়ল সেই চিরাচরিত নিপীড়ণমূলক চেহারা। এক দিন পরেই শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর লেলিয়ে দেওয়া হলো পুলিশ আর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের। প্রকাশ্যে বন্দুক-পিস্তল নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হলো আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী আর প্রশাসনের পেটোয়া বাহিনী। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে আহত করা হলো শতাধিক শিক্ষার্থীকে। আর চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হলো বিশ্ববিদ্যালয়।

8_1
ইতিমধ্যে পত্রপত্রিকা-টেলিভিশন মারফত গোটা জিনিসটা যখন জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হলো, তখন দেখা গেল মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজের বৃহদাংশই, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজটা কী, সেটাই প্রায় ভুলতে বসেছে। আলু-পটলের মতো শিক্ষাকেও, মুক্ত জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রকেও এখন ফেলে দেওয়া হয়েছে পণ্যের কাতারে। ফলে এই যুক্তি অহরহই শুনতে পাওয়া যায় যে, ‘বেতন তো বাড়বেই। পাঁচ বছর আগে যেই জিনিসের দাম ছিল দুই টাকা এখন সেটা দশ টাকা। সেই তুলনায় তো বাড়েই নি বলা চলে।’ বা ‘সান্ধকালীন কোর্সটা তো কতজনকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছে, ফলে ক্ষতি কী? বরং ভালোই তো।’ আর যেভাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বাড়ছে, গোটা সমাজটাই যখন শুধু কেনাবেচার উপরেই চলছে, তখন এমনটা হওয়াই যে স্বাভাবিক, তাতে অবাক হওয়ারও আসলে কিছু নাই। ফলে একটা দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নামের সায়ত্ত্বশাসিত বস্তুটা আছে কেনÑ এই প্রশ্নটাই এখন তোলার দরকার।

‘শিক্ষা-ব্যবসা, একসাথে চলে না’
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে খেটে খাওয়া মানুষের করের টাকায়। একদম গোড়ায় দেখলে দেখা যায় যেটা আসলে কৃষক-শ্রমিকদের প্রত্যক্ষ শ্রমের ফসল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্নে এই মানুষগুলোর শ্রম-ঘামের কথা শুরুতেই মাথায় রাখতে হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ সমাজকে এমন ধরণের জ্ঞানের যোগান দেওয়া যা দিয়ে উন্নতি-অগ্রগতির পথে হাঁটা যাবে। যে জ্ঞান সহায়ক হবে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা কাজে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সেই সমাজ-প্রগতি অর্জনের জন্য জ্ঞানচর্চা করার কথা, নতুন নতুন জ্ঞান সৃজন করার কথা। শুধু চাকরি-বাকরি পাওয়ার জন্য একটা সার্টিফিকেট প্রদান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ না। প্রদান বলছি কেন, এখন তো তারা সার্টিফিকেট বেচতেই শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু জ্ঞান-বিদ্যা তো বিক্রির জিনিস না। শিক্ষকদের যদি উচ্চশিক্ষা না পাওয়াদের জন্য এতই উদ্বেগ থাকে, তাহলে তারা নিয়মিতভাবেই আরেকটা সান্ধকালীন শিফট চালু করুক। সরকারের কাছ থেকে বেশি টাকা দাবি করুক। কিন্তু সেটা না করে, ‘অনেককে সুযোগ করে দিচ্ছি’, এই মহান দোহাই দিয়ে তারা নগদ নারায়নের পূজা করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়কেও বাজার বানাবেন।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেতনাবিরোধী এই বাণিজ্যিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অনেকবারই আওয়াজ তুলেছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ‘শিক্ষা-ব্যবসা, একসাথে চলে না’, এই শ্লোগানে এর আগেও অনেকবার মুখরিত হয়েছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যারই সর্বশেষ সংযোজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আন্দোলন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈশ/সান্ধকালিন বা বৈকালিক; কোনো ধরণের বাণিজ্যিক কোর্সই গ্রহণযোগ্য না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই দাবিটাই তুলেছিলেন। তারা কোনো ‘নৈরাজ্য’ করছিলেন না। শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের দাবিদাওয়ার কথা তুলে ধরছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর আর্থিক ভার রাষ্ট্রকেই নিতে হবে

রাষ্ট্র যদি বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর ব্যয়ভার পরিপূর্ণভাবে বহন না করে আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে পা দিয়ে সেই টাকাটা তুলবার চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেটাই রীতিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েদের তখন সেই টাকাটা জোটানোর সামর্থ্য নাও থাকতে পারে। ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বড়লোকীকরণ অনেক ক্ষেত্রেই শুরু হয়ে গেছে। কয়েক বছর আগেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা এমন শিক্ষার্থীদের দেখা যেত, যাদের আর্থিক অবস্থা খুবই অসচ্ছল। ছেলে বা মেয়েকে শিক্ষিত করার বাসনা নিয়ে অতি কষ্টে অর্থের যোগান দিতেন তাদের বাবা-মা। এখন এমন ঘরের ছেলেমেয়েদের খুব বেশি দেখা যাবে কিনা, সন্দেহ আছে। নতুন করে বেতন-ফি বাড়ানো হলে সংখ্যাটা আরও অনেক কমে যাবে। বেতন-ফি না বাড়িয়ে রাষ্ট্রকেই বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করতে বলা হোক না কেন? শিক্ষকদের তো উচ্চকণ্ঠে বলা উচিৎ যে, অনুৎপাদনশীল খাতগুলোতে বরাদ্দ কমিয়ে শিক্ষাখাতে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হোক। কিন্তু সেই দাবি, এমনকি নিজেদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিও তারা কখনো তোলেননি। তারা রাষ্ট্রক্ষমতার পদলেহন করে চলেছেন; শিক্ষার্থীদের বলির পাঁঠা বানিয়ে। শিক্ষার্থীরা যখন ক্রমাগত চিপা খেতে খেতে ফুঁসে উঠছেন, তখন তারা পুলিশ-পেটোয়া বাহিনী নামিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টাই দিচ্ছেন বন্ধ করে। কিন্তু এভাবে আর কত?

আর কত শিবির জুজু?
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা চালিয়েছে সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও হতে দেখা গেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। পুলিশ সেসময় পাশে দাঁড়িয়ে থেকেও তাদের কিছু বলেনি। ছাত্রলীগের ভাষ্যমতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে নাকি শিবির ঢুকে গিয়েছিল। এই শিবির জুজু দেখানো হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে পচিয়ে ফেলা হয়েছে এই শিবির জুজ দেখিয়ে। শিবির দমনের নাম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাধে দুর্নীতি, দলীয়করণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অবাধে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি করে এসেছে ছাত্রলীগ। দেশের অন্যতম প্রধান একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেসব ন্যাক্কারজনক ঘটনার কথা অনেকেই জেনেছেন পত্রপত্রিকা মারফত। নতুন করে বলার কিছু নেই। আর এসবের প্রতিরোধ করতে গেলে বরাবরই দেখানো হয়েছে শিবির জুজ। এটা যে নিজেদের দুর্নীতি-লুটপাট আড়াল করার জন্যই করা হয় সেটা বুঝতে কারো আর বাকি নেই। হাজার হাজার শিক্ষার্থী, যারা নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচানোর জন্য প্রতিবাদে সামিল হয়েছে, তারা শিবির না। শিবির প্রতিরোধের জন্য ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে মহড়া দেয় নি। প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজস করে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বানচাল করার জন্যই চড়াও হয়েছিল প্রশাসনের গুন্ডারা। শিবির প্রতিরোধ তো দূরে থাক, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগই যদি শিবিরের সঙ্গে হাত মেলায় তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

‘শিবঠাকুরের আপন দেশে/আইনকানুন সর্বনেশে’!
গুলি খেয়ে, স্বল্প সময়ের নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেও নিস্তার পাচ্ছে না আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এবার তাদের ওপর নেমে আসছে আইনি সন্ত্রাসের খাঁড়া। বেআইনি সমাবেশ, মারামারি, সরকারি কাজে বাধাদান ও ভাঙচুরের অভিযোগে চারটি মামলা করেছে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমনকি প্রকাশ্যে সন্ত্রাস করা ছাত্রলীগও একটা মামলা করেছে তাদের মিছিলে হামলা করার জন্য। সবগুলো মামলায় নামে-বেনামে অসামী করা হয়েছে ৭৯০ জন শিক্ষার্থীকে। মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের পরিচয়টুকু পর্যন্ত জানাচ্ছে মতিহার থানা। তদন্তের স্বার্থে নাকি ক্ষতি হবে। বুঝতে কিছুই বাকি থাকে না যে, ‘শিবিরের চর’, ‘চক্রান্তকারী’, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টারত বিশেষ মহল’Ñ ইত্যাদি নাম দিয়ে এখন আইনি জুলুম নেমে আসবে আন্দোলনকারীদের ওপর। পুলিশ তাদেরকে খুঁজে খুঁজে বের করবে যারা উচ্চকণ্ঠে আওয়াজ তুলেছিলেন ন্যায়ের পক্ষে। আর বেশুমার ঘুরে বেড়াবে অস্ত্র হাতে মহড়া দেওয়া সন্ত্রাসীরা। এ তো সেই ‘শিবঠাকুরের আপন দেশে/আইনকানুন সর্বনেশে’!
বরাবরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেদের মতো করে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। হাস্যকর হলেও সত্যি যে বাংলাদেশে স্বৈরশাসন থাকার সময় পর্যন্তই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র-সংসদ চালু ছিল। ১৯৯১ সালে ‘গণতান্ত্রিক’ সরকার আসার পর থেকেই সেটা উবে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে অংশগ্রহণের একমাত্র পথ, ছাত্র সংসদ আর চালু থাকেনি। ফলে নিজেদের দাবির কথাটা জানাতে হলে এভাবেই কাসরুম ছেড়ে রাস্তায় নামতে হয় শিক্ষার্থীদের। নিজেদের স্বার্থবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে এভাবে আন্দোলন করা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় থাকে না। আর এই আন্দোলন করতে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনোরকম সহিংস আচরণ করেনি। মারামারি-ভাঙচুর করেনি। বরং তারাই হুমকিধামকি-মারধোরের শিকার হয়েছে, গুলি খেয়েছে। কিন্তু উল্টো এখন তাদেরই পড়তে হবে নানাবিধ নিপীড়ণের মধ্যে।

বিশ্ববিদ্যালয়ই আশা
বাংলাদেশের ইতিহাসে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বরাবরই একটা বাতিঘর হিসেবে কাজ করেছে। হাজারো অবক্ষয় সত্ত্বেও এখনো ন্যায়-সাম্য-স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিপরায়ন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণা আছে বলেই সমাজে কিছু আশা আছে।
ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ চরমভাবে বাড়িয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত পরিসর অনেকটাই সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। রাষ্ট্রকর্তৃত্বের শুঁড় আষ্টেপৃষ্টে পেঁচিয়ে ধরেছে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়কে। যার পরিণতি হিসেবে আমরা প্রতিনিয়তই বিশ্ববিদ্যালয়ের লজ্জাজনক সব দুর্নীতি-লুটতরাজের খবর পত্রপত্রিকায় দেখি। এত কিছুর পরও সমাজকে প্রগতির পথে নিয়ে যেতে পারে এমন একটা প্রতিষ্ঠান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া একটা ‘তুচ্ছ ঘটনা’ই কিন্তু কাঁপিয়ে দিয়েছিল মহা দাপুটে সেনা সমর্থিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভিত। খুব সাম্প্রতিক কালেরটা বললাম। আগে আরও কত বড় বড় ঘটনা ঘটেছে সেটা সবাই জানেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে আরও একবার সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার পক্ষে আওয়াজ তুলেছেন, সেজন্য তাদেরকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধকোর্স বিরোধী আন্দোলন আরও একবার সুযোগ করে দিয়েছে সমাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা কী হবে সেটা নিয়ে কথা তোলার। বিশ্ববিদ্যালয়ে কী শুধু সার্টিফিকেট বিক্রি হবে? জামাত-শিবির দমনের নামে অবাধে দুর্নীতি-দলীয়করণ, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজী হবে? নাকি এটা স্বাধীন-সায়ত্ত্বশাসিত একটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে? সমাজকে প্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে? তেমনটা করতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনভাবে জ্ঞানচর্চা-অনুশীলনের সুযোগ থাকতে হবে। কোনোভাবেই সেটাকে পুলিশি প্রহরায় পরিচালিত একটা বাজার বানানো যাবে না।