রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফ্রাংকেনস্টাইন’ কাহিনী

১৮১৮ সালে ইংলিশ ঔপন্যাসিক ম্যারি শেলি রচিত ‘ফ্রাংকেনস্টেইন’ বেশ সাড়া জাগিয়েছিল পশ্চিমা বিশ্বে। পরে রুপালি পর্দাও কাঁপিয়েছে এটির চলচ্চিত্ররূপ। যেখানে দেখা যায় ভিক্টর ফ্রাংকেনস্টেইন নামের এক খ্যাপা বিজ্ঞানী গবেষণাগারে প্রাণ সৃষ্টি করে কীভাবে এক দানবের জন্ম দেন। এবং পরবর্তীকালে এই দানব একের পর এক বিধ্বংসী সহিংস কর্মকাণ্ড করতে থাকে। শেষটায় এই দানবকে থামাতে গিয়ে বহু পথ ছুটতে হয় বিজ্ঞানীকে। সফল হতে পারেন না। প্রাণ হারান ক্লান্তশ্রান্ত হয়ে। চরিত্র আর পরিস্থিতি একটু ওলটপালট করে দিলে অবাক বিস্ময়ে দেখতে পাওয়া যায় যে, ঠিক ঠিক এ রকম একটা ঘটনার পুনরাবৃত্তিই হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপটে।

শিবির আধিপত্যের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সময় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের কোনো প্রকাশ্য তৎপরতা প্রায় ছিলই না। সেখান থেকে কীভাবে এটার পুনর্জন্ম হলো; কীভাবে সে শক্তিশালী হয়ে উঠল এবং কীভাবে দানবীয় সব কর্মকাণ্ড করে নিজের পালন-পোষণকারীর অঙ্গহানি ঘটাতে থাকল; তা দারুণভাবে মিলে যায় ম্যারি শেলির ফ্রাংকেনস্টেইন উপন্যাসের সঙ্গে। যার একেবারে শেষ পর্যায়টা বোধহয় এখন রচিত হচ্ছে।

প্রাণসঞ্চার পর্ব

২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জরুরি অবস্থা জারির আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল ছাত্রশিবিরের আধিপত্য। বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো যেমন সব সময়ই একটা ক্ষুদ্র অবস্থান নিয়ে থাকে তেমনটা ছিল। মাঝে কিছু সময় জাসদ ছাত্রলীগও ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ছাত্রলীগের তৎপরতা সেভাবে চোখে পড়ত না বললেই চলে। জরুরি অবস্থার মধ্যে নিজ দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা এবং পরে তাদের জেলহাজতে থাকতে হলেও ছাত্রলীগের ব্যানার সম্বলিত কোনো মিছিল বা মানববন্ধন বা অন্য কোনো কর্মসূচি ক্যাম্পাসে ছিল না। এমন একটা জিনিসে প্রাণসঞ্চার করে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ ঘটায় ‘ভোট বিপ্লব’! আর সেই বিপ্লবী জোসে চাঙ্গা হয়ে ক্যাম্পাস থেকে শিবিরকে সরিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার তাগিদ বোধ করতে থাকে ছাত্রলীগ।

অবশেষে ১৩ মার্চ ছাত্রলীগ (আওয়ামী ও জাসদ) ও ছাত্রমৈত্রীর সঙ্গে শিবিরের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। মারা যান ছাত্রশিবিরের নেতা নোমানী। ক্যাম্পাস ‘অস্থিতিশীল’ হয়ে ওঠায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। আড়াই মাস বন্ধ থাকার পর ১ জুন খুলে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়।

কিন্তু শিবির মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে, আবার ক্যাম্পাসে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে- এমন দোহাই দিয়ে ক্যাম্পাসে জারি করা হয় ‘নয়া জরুরি অবস্থা’। যে কোনো ধরনের সভা-সমিতি-সমাবেশ-সেমিনার-জমায়েত-লিফলেট-প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা হয়।

ভয়াল মূর্তিধারণ পর্ব

ক্যাম্পাসকে শিবিরমুক্ত করার মিশন নিয়ে ছাত্রলীগকে অবাধ স্বাধীনতা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রলীগের সশস্ত্র ছেলেদের নিয়ে ক্যাম্পাস দাবড়ে বেড়াতে দেখা গেছে সেসময়ের সহকারী প্রক্টরকে। শিবির জুজ দেখিয়ে সবার মুখ বন্ধ করে দিয়ে ছাত্রলীগকে আদতে দেওয়া হয়েছিল অবাধ স্বেচ্ছাচারের সুযোগ। তার পরিণাম কী হয়েছে সেটা বোঝার জন্য অনেক অনেক ঘটনার মধ্য থেকে অল্প কিছু উল্লেখ করা যেতে পারে :

  •  ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট দলের অন্তঃকলহের জের ধরে খুন হন ছাত্রলীগকর্মী নাসরুল্লাহ নাসিম। এ ঘটনায় নয় ছাত্রলীগকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা হলেও আসামিরা জামিনে মুক্তি পায়।
  •  ২০১২ সালের ১৫ জুলাই পদ্মা সেতুর টাকা ভাগাভাগির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আহমেদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু গ্রুপের কর্মীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ছাত্রলীগকর্মী আব্দুল্লাহ আল হাসান সোহেল। সেই ঘটনায় দুজনকে বহিষ্কার করা হলেও পরে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
  •  ২০১৪ সালের ৩ এপ্রিল হলের রুমে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী আকন্দ। ছাত্রলীগ এই খুনের জন্য দায়ী করে শিবিরকে। কিন্তু এটাও সংগঠনটির পদ-ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফল বলে অভিযোগ আরো অনেকের। (তথ্যসূত্র : সাপ্তাহিক এই সময়)

এ ছাড়া ক্যাম্পাসে অস্ত্রবাজি-টেন্ডার-চাঁদাবাজি নিয়ে অনেকবার নেতিবাচকভাবে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে ছাত্রলীগ। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে থেকেছে। আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। বিনিময়ে নিজেরাও সাহায্য নিয়েছে এই ছাত্রসংগঠনটির। ব্যবহার করেছে শিক্ষার্থীদের স্বাধীন তৎপরতা, ন্যায্য দাবির আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়ার কাজে।

আত্মঘাত পর্ব

ছাত্রলীগকে এই অবাধ স্বেচ্ছাচারে মেতে ওঠার সুযোগ করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে নিজেদেরই আত্মঘাতী পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল সেটাও টের পাওয়া গেল সাম্প্রতিক সময়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তি উপাচার্য লাঞ্ছিত-অপমানিত হয়েছেন ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের হাতে। ভিসির পদত্যাগের দাবিতে মাঠে নেমেছেন ছাত্রলীগের ‘বিতর্কিত’ নেতাকর্মীরা। (তথ্যসূত্র : ২১ এপ্রিল, ২০১৫; যুগান্তর)

কীভাবে ও কেন ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াল, তা জানার জন্য আবারও একটু পেছনে ফিরতে হবে। ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাবির ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সোবহানকে উপাচার্য, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নুরুল্লাহকে উপ-উপাচার্য ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবদুল বারীকে রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল চার বছরের জন্য। সে অনুযায়ী ২০১৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তাঁদের মেয়াদ শেষ হয়। তার আগ দিয়ে চলে গণনিয়োগের ধুম। ২০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৪৪৭তম সভায় দলীয় ভিত্তিতে ১৮৪ জন কর্মচারী, ২৬ জন কর্মকর্তা, ২০ জন শিক্ষক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩১ জনকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। কিন্তু এতেও সন্তুষ্ট করা যায়নি চাকরিপ্রত্যাশী সরকার সমর্থকদের। তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে উপ-উপাচার্যের দপ্তরে হামলা চালান। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মাসুদ রানার নেতৃত্বে সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রশাসন ভবনে তালা লাগিয়ে দেন। সে সময় কিছুদিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ‘অভিভাবকত্বহীন’ অবস্থার মধ্যেও কাটিয়েছে। (তথ্যসূত্র : কালের কণ্ঠ; ২৫ ও ২৮  ফেব্রুয়ারি, ২০১৩)

নতুন করে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় মুহম্মদ মিজানউদ্দিনকে। এই আমলেও ছাত্রলীগ থেকে যায় বল্গাহীন ঘোড়া। ছুটতে ছুটতে একসময় তারা আবার চড়াও হয়ে বসে প্রশাসনের ওপর। ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল রাজশাহী-১ আসনের সাংসদ ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী টেবিল চাপড়ে উপাচার্যকে শাসান। একদিন পর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতারা উপাচার্যের দপ্তরে ঢুকে তাঁকেসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষককে গালাগাল ও হুমকি দেন। গায়ে হাত তোলার অভিযোগও শোনা গেছে। এতদিন যাদের ছত্রছায়ায়, প্রশ্রয়ের আলো-হাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগ ফুলেফেঁপে উঠেছে, তারা এবার দাঁড়িয়ে গেছে সেই প্রশাসনের বিরুদ্ধেই। আর প্রশাসনবিরোধী এই তৎপরতার নেতৃত্ব দিচ্ছে বিভিন্ন সময়ে অপকর্মের দায়ে ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত ও অস্ত্রবাজরা। (তথ্যসূত্র : যুগান্তর; ২১ এপ্রিল ২০১৫)

সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি-নিপীড়ন পর্ব

এই পর্বটি চলমান আছে দীর্ঘদিন ধরেই। ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষ, ছাত্রলীগের অন্তঃকলহের ফলে সংঘর্ষ, নিয়োগবাণিজ্য, নিষেধাজ্ঞার বেড়ি সব সময়ই রুদ্ধ করেছে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিকাশ, স্বাধীন তৎপরতা। ন্যায্য দাবির কথা বলতে গিয়ে খেতে হয়েছে লাঠি-গুলি-হুমকিধমকি। তার কিছু নমুনা :

  •  ২০১২ সালের ২ অক্টোবর : ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে গোলাগুলি চলাকালে পুলিশকে দর্শকের ভূমিকায় দেখা যায়। সংঘর্ষ চলাকালীন ছাত্রলীগের দুই নেতাকে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে পিস্তলে গুলি ভরতে এবং গুলি করতে দেখা যায়। আহত হয় বেশ কয়েকজন। অথচ তিন-চারদিন পরেই ভর্তি পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট মিছিল করলে সেখানে বাধা দেয় ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে পুলিশ। ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে এবং ছাত্রফ্রন্টের চার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে। (তথ্যসূত্র : ৩ ও ১১ অক্টোবর, প্রথম আলো)
  • ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি-বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও পুলিশের যৌথ হামলার প্রতিবাদে মিছিল করলে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের মিছিলে হামলা করে পুলিশ। আহত হয় ১০-১২ জন। গ্রেফতার করা হয় পাঁচজনকে। (তথ্যসূত্র : ১১ অক্টোবর, প্রথম আলো)
  • ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি ও বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্সবিরোধী আন্দোলনে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর শান্তিপূর্ণ সমাবেশে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে গুলি চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন শতাধিক শিক্ষার্থী। মামলা দেওয়া হয় ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনকারী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর নামে।
  • ২০১৫ সালের ৩ মার্চ মুক্তচিন্তক অভিজিৎ রায়কে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে মিছিল বের করলে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সহকারী কমিশনার রকিবুল আলম বলেন, ‘ক্যাম্পাসে শুধুই ছাত্রলীগ মিছিল করতে পারবে, আর কেউ না।’ (তথ্যসূত্র : ৪ মার্চ, ২০১৫; যুগান্তর)

এ ছাড়া বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগের স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ডের বলী হতে হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পঙ্গু হয়ে গেছে সাংস্কৃতিকভাবে। ক্যাম্পাসে এখন আর তেমন কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গান-পথনাটক-কবিতা-আলোচনা সভা-সেমিনার হয় না বললেই চলে। অথচ ১০-১২ বছর আগে শিবিরের রমরমার যুগে দারুণ সরব ছিলেন সাংস্কৃতিককর্মীরা। কোনো কোনো দিন একই সময়ে ক্যাম্পাসের দু-তিন জায়গায় পথনাটক আয়োজিত হতেও দেখা গেছে। আলোচনা-সেমিনার বন্ধ করে দিয়ে তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে মুক্তজ্ঞান চর্চার পরিবেশও রুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। এখানে-সেখানে এখন শুধু দেখা যায় অযাচিত নিষেধাজ্ঞার  দেয়াল-বেড়া-কাঁটাতার।

ভবিষ্যৎ পর্ব

এই পর্বটিই এখন রচিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটা হতে পারে পচে-গলে যাওয়ার পর্ব। বা হতে পারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ পর্ব। প্রশাসন ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি আরো দুর্বিষহ হতে উঠতে পারে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি আরো বাড়তে পারে। আর শিক্ষার্থীরা যদি নিজেদের ভালোমন্দের বিবেচনা করে সক্রিয় হন, কথা বলা শুরু করেন তাহলে শুরু হতে পারে নষ্ট ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত, প্রতিরোধের কাল।

ম্যারি শেলির উপন্যাসের খ্যাপা বিজ্ঞানী ভিক্টর ফ্রাংকেনস্টেইন তাঁর তৈরি করা দানবটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। পিছু ধাওয়া করতে করতে শেষটায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পরিণতিও হয়তো তেমনটাই হতে পারে। আর সেই উপন্যাসের দানবসত্তার মতো ছাত্রলীগও শেষটায় কোথায় চলে যাবে, তা কারোরই জানা থাকবে না। একমাত্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্ত-স্বাধীন তৎপরতাই পারে বিশ্ববিদ্যালয়কে আবার প্রাণবন্ত, মুক্ত জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রে পরিণত করতে। সে জন্য তুলে নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা। বন্ধ করতে হবে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ, পুলিশি নিয়ন্ত্রণ। তাহলেই কেবল আবার গান-বাজনায়, নাটক-কবিতায়, মুক্ত জ্ঞানচর্চার তর্ক-বিতর্কে মুখরিত হতে পারবে মতিহার চত্বর।

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

%d bloggers like this: