রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা…; শিখব কি?

কয়েকদিন আগেই আরিফ রেজা মাহমুদ লিখেছিলেন যে,

রাষ্ট্র, ক্রমাগত সমাজকে ক্ষত্রশক্তি শুন্য করে ফেলছে। সমাজের হাজার বছরের সংহতি, পারস্পারিক সহযোগিতা-প্রতিরোধ সব চুরমার করে ফেলছে রাষ্ট্র। ক্রমাগত এক নিষেধাজ্ঞারআঁধারে নিমজ্জিত করে রাখছে আমাদের। উদাহরণ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ৭ বছর ধরে অব্যাহত আছে নিষেধাজ্ঞা। শিবির জুজু দেখিয়ে এই নিষেধাজ্ঞা চালু হলেও তা আসলে বলবৎ প্রগতিশীল শক্তিরই উপরে। শিবির এখন আউট অফ ক্যাম্পাস-চোরাগোপ্তা দল। তাহলে শিবির ঠেকাতে প্রগতিশীল সংগঠনগুলোকে কর্মকান্ড করতে না দেয়ার অর্থ খুব সোজা। শিবির বিরোধী শক্তির নিক্ষত্রীয়করণ। একই পদ্ধতি সবখানে বিস্তৃত হচ্ছে। হত্যার শিকার হচ্ছেন অভিজিৎরা। সমাজ-প্রতিরোধ না বাঁচলে যে কেউ ষড়যন্ত্র করতে পারবে।
সামাজিক প্রতিরোধ এমন দুর্বল হয়ে পড়ার পরণতি একটাই– দাসত্ব-দীর্ঘ মেয়াদী দাসত্ব।

RU1

সেই অভিজিৎ হত্যার বিচার চাইতে গিয়েই আবার পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের। শিবির-মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার নামে রাবিকে নিষেধাজ্ঞার বেড়ি পড়ানো হয়েছিল ২০০৯ সালে। তারপর থেকে ঘটা এমন কয়েকটি ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন Sohraab Hossaiin…

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং পুলিশ কাহিনীঃ

০২ অক্টোবর ২০১২।
ছাত্রলীগ এবং ছাত্রশিবিরের মধ্যে গোলাগুলি চলাকালে পুলিশকে দর্শকের ভূমিকায় দেখা যায়। সংঘর্ষ চলাকালীন ছাত্রলীগের ২ নেতাকে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে পিস্তলে গুলি ভরতে এবং গুলি করতে দেখা যায়।

০৬ অক্টোবর ২০১২। ভর্তি পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট রাবি শাখা মিছিল করলে সেখানে বাধা দেয় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, ব্যানার ছিড়ে ফেলে এবং ছাত্র ফ্রন্ট এর চার নেতাকর্মিকে (সোহরাব, সুজন, রিহান, তৌফিক) গ্রেফতার করে।

১০ অক্টোবর ২০১২।
বাকৃবিতে বর্ধিত ফি বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও পুলিশের যৌথ হামলা এবং আন্দোলনকারি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এর ১১ নেতাকর্মির নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা ও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে রাবি ক্যাম্পাসে প্রগতিশীল ছাত্রজোট মিছিল করলে মতিহার থানার এসি হাসানাত এর নেতৃত্বে হামলা করা হয়, আহত হন ১০/১২ জন জোট নেতাকর্মি, গ্রেফতার করা হয় ৫জনকে (ছাত্র ফ্রন্ট এর সোহরাব, সুজন, সাদিক; বাসদ এর দেবাশীষ রায়, ছাত্র ফেডারেশন এর মোসাদ্দেক)

২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
বর্ধিত ফি ও বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বিরোধী আন্দোলনে রাবি প্রশাসনিক ভবনের সামনে দশ সহস্রাধিক শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে এবং নির্দেশে পুলিশ এবং ছাত্রলীগের গুলি। সাংবাদিকসহ শতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ। ফলাফলঃ আন্দোলনকারিদের নামে মামলা।

[চলবে]

RU2

ক্যাম্পাসে রাষ্ট্রীয় কলকব্জা ঢুকিয়ে দেওয়ার, পুলিশি পাহাড়া বসানোর, নায্য কথা বলতে আসা শিক্ষার্থীদের মারধর করার পরিণামে ক্রমাগত প্রাণহীন হয়ে পড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে গিয়ে তো সরাসরি ডাণ্ডা-বেড়ির ঘা খেতে হচ্ছে। মতিহার চত্বর নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ছে সাংস্কৃতিকভাবেও। ক্যাম্পাসে এখন কি ১০ বছর আগের মতো সেমিনার-আলোচনা সভা হয়? পথনাটক-মঞ্চনাটক হয়? গান-বাজনা হয়? হাঁফ ছাড়ার মতো মুক্ত পরিবেশ আছে? উত্তর নেতিবাচকই হওয়ার কথা।

অথচ ১০ বছর আগে শিবিরের দাপুটে উপস্থিতির মধ্যে, তাদের ভয়- ভীতি প্রদর্শনের মুখেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হাজার গুনে সরব ছিল রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিকভাবে…

শিবির দমনের নামে “মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী”রা নিজেদের ক্ষমতা একচেটিয়াকরণ করেছেন শুধু। স্রেফ ফায়দা লুটেছেন অন্য সবার মুখ বন্ধ করে দিয়ে। এদিকে শিবির কিন্তু মাঝেমধ্যেই জানান দিয়েছে নিজেদের উপস্থিতি। সেগুলো ঠেকাতে পারেননি রাষ্ট্রের পাণ্ডারা।

বাংলাদেশের বৃহত্তর পরিসরেও এমন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। জাতীয় পরিস্থিতিতে যদি সবার মুখ বন্ধ করে দিয়ে, কাউকে কোনোরকম কথা বলতে না দিয়ে, সভা-সমিতি-মিছিল-মিটিং সব বন্ধ করে দিয়ে মৌলবাদ নির্মুল বা জঙ্গি দমন শুরু করা হয়… তাহলে পরিণতি কী হতে পারে সে ধারণা পাওয়ার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকানোই যায়

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

%d bloggers like this: