Posts Tagged ‘ হুদহুদ ’

হুদহুদের নাম “হুদহুদ” কেন?

হুদহুদ। অদ্ভুত! সত্যিই, নামটা একটু অদ্ভুতই বটে! সম্প্রতি যে ঘূর্ণিঝড়টি ভারত-বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার লাখো মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে -এটা তারই নাম। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়টি কিভাবে পেল এই নাম? এর মানেই বা কী? কিভাবে করা হয় এই ঘূর্নিঝড়গুলোর নামকরণ?

Hudhud1

বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ আন্দামান সাগরে সৃষ্টি হয়ে মহা শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে। প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা। ১৭০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। অথচ প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ের নামটি কিন্তু এসেছে ওমান থেকে।
হুদহুদ আসলে একটি পাখির নাম। আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক অঞ্চলেই দেখতে পাওয়া যায় আকর্ষণীয় পালক, ঝুঁটি ও লম্বা ঠোঁটের এই পাখিটিকে। ‘হুপি’ নামের এই পাখিকেই ওমান ভাষায় ডাকা হয় হুদহুদ বলে। এটি ইসরায়েলের জাতীয় পাখিও বটে। ২০০৪ সালে যখন আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণের আহ্বান জানানো হয় তখন অন্য আরও কিছু নামের সঙ্গে এই হুদহুদ নামটাও যোগ করেছিল ওমান।

Hudhud
আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করা হয় ১৯৫৩ সাল থেকে। শুরুটা মিয়ামির জাতীয় হারিকেন সেন্টারে হলেও পরবর্তীতে এই নামকরণ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) তত্ত্বাবধানে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ প্রথা চালু হয়েছে ২০০৪ সাল থেকে। তার আগে এই অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়গুলো যা করার সেটা বেনামেই করত।
ঘূর্ণিঝড়গুলোর গতিপ্রকৃতি বোঝা, কার্যকরীভাবে সতর্কতা জারি, ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্নয় ইত্যাদির জন্য ঘূণিঝড়গুলোর নামকরণ করা উচিৎ বলে শক্ত পদক্ষেপ নেন আবহাওয়াবীদরা। অবশেষে ২০০৪ সালে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণের জন্য একজোট হয় আটটি দেশ। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড। প্রতিটি দেশ প্রস্তাব করে আটটি করে নাম। দেশের নামের আদ্যাক্ষর অনুযায়ী একের পর এক আসে র্ন্বিাচিত নামগুলো।
এ বছরের জুনে আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়, নানাউকের নামকরণ করেছিল মিয়ানমার। এবার এসেছে ওমানের পালা। ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের নামটিও এসেছিল ওমান থেকে। এই অঞ্চলের পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে নিলোফার। এটি এসেছে পাকিস্তান থেকে।
বাংলাদেশের প্রস্তাবকৃত পাঁচটি নাম ইতিমধ্যেই ব্যবহৃত হয়ে গেছে। অনিল (২০০৪), অগ্নি (২০০৬), নিশা (২০০৮), গিরি (২০১০) ও হেলেন (২০১৩)। বাংলাদেশের দেওয়া আরও তিনটি নাম ভবিষ্যতে ব্যবহার হবে। সেগুলো হলো: চপলা, অক্ষি ও ফনি।

Cyclone Names

Cyclone Names2
২০০৪ সাল পর্যন্ত যে এই ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করা যায়নি তার একটা অন্যতম প্রধান কারণ সনাক্ত করতে গিয়ে ভারতের ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা সেন্টারের প্রধান ড. এম মহাপত্র বলেছেন, ‘এই ধরণের বৈচিত্র্যময় একটা সাংস্কৃতিক অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করতে গিয়ে সবাইকে খুবই সতর্ক আর নিরপেক্ষ থাকতে হয়, যেন এটা কারও অনুভূতিতে আঘাত না করে।’
তবে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করার পরেও বিপত্তি যে বাধেনি, তা কিন্তু নয়। ২০১৩ সালের ঘূর্নিঝড় মহাসেনের নামকরণ করেছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এই নামটা নিয়ে প্রবল আপত্তি জানিয়েছিলেন দেশটির অনেক মানুষ। তারা বলেছিলেন যে, মহাসেন ছিলেন একজন শ্রীলঙ্কান রাজা, যিনি সেখানে এনেছিলেন শান্তি ও সমৃদ্ধি। তাঁর নামে এমন একটা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নামকরণ করাটা একেবারেই অনুচিত। পরবর্তীতে শ্রীলঙ্কান কর্তৃপক্ষ ঘূর্ণিঝড়টির নাম বদলে রেখেছিল ভিয়ারু।