চোখ আপনার সম্পর্কে কী বলে?
যখন আপনি এই লেখাটা পড়ছেন বা অন্য কোন জায়গায় নজর দিচ্ছেন, তখন সাধারণত আপনি আপনার চোখের নড়াচড়াটা খেয়াল করেন না। আপনি যখন এই লেখায় চোখ রাখছেন, আশেপাশের বিজ্ঞাপনগুলোর দিকে তাকাচ্ছেন বা আপনার ঘরের চারপাশে চোখ বুলাচ্ছেন তখন আপনার চোখ প্রতিনিয়ত কিছু সংক্ষিপ্ত বিরতি দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আমাদের এই চোখের নড়াচড়া নিয়ে গবেষণা করেছেন— আমরা কোথায় তাকাই, কতক্ষণ ধরে তাকাই ইত্যাদি। আর এই গবেষণা থেকে তাঁরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করেছেন, কিভাবে আমরা পড়ি, কিভাবে আমরা শিখি— তা নিয়ে। এমনকি এসব গবেষণা থেকে তাঁরা আলোকপাত করেছেন আমরা কেমন ধরণের মানুষ সে সম্পর্কেও।
চোখের গতিবিধি রেকর্ড করার প্রযুক্তির কল্যানে গবেষকরা কিছু বৈশিষ্ট্য সনাক্ত করতে পেরেছেন। মহাশূন্যে নভোচারীদের দৃষ্টি অভিজ্ঞতা রেকর্ড করার জন্য যেধরণের ভিডিও ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়, তেমন ক্যামেরা দিয়ে বিজ্ঞানীরা মানুষের চোখের গতিবিধি রেকর্ড ও বিশ্লেষণ করতে পেরেছেন। আর এর ফলে বিজ্ঞানীরা এখন বলতে পারেন যে, কিভাবে আমরা আমাদের চোখ নড়াচড়া করি এবং কোন ধরণের জিনিস আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং কোনগুলো আমাদের মনোযোগ ভিন্নমুখী করে। বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও জানতে চাচ্ছেন যে, কিভাবে আমরা কোন লেখা বা ছবি থেকে শিক্ষাগ্রহণ করি।
ফিনিশ গবেষকরা পরীক্ষা করেছিলেন, অনলাইনে কোন কিছু পড়ার সময় কোন ধরণের বিজ্ঞাপন আমাদের মনোযোগ ভিন্নমুখী করে তোলে, যা আমাদের কোনকিছু পড়ার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটায়। গবেষণামূলক মনোবিজ্ঞানের জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা থেকে জানা যায়, কোন বিজ্ঞাপনের আকস্মিক আগমন বা গতিশীল বিজ্ঞাপন, কোন কিছু পড়ার সময় আমাদের মনোযোগে বিঘা্ন ঘটায়। আরও সুনির্দিষ্ট করেও ব্যাপারটা বর্ণনা করেছেন সৃজনশীলতার বিজ্ঞানী জানা সিমোলা। তিনি জানিয়েছেন যে, যে বিজ্ঞাপনগুলো কোন লেখার নিচে বা ডানপার্শ্বে থাকে সেগুলো তুলনামূলকভাবে মনোযোগের বিঘ্ন ঘটায় বেশি। যে পাতায় গতিশীল ও স্থির, উভয় প্রকার বিজ্ঞাপনের সমাবেশ থাকে সেগুলো অগ্রাহ্য করা বেশি কঠিন হয়ে পড়ে, সবগুলোই স্থির বা সবগুলোই গতিশীল বিজ্ঞাপনের তুলনায়।
চোখের গতিবিধি কিভাবে আমাদের চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে সেটা নির্ধারণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের করনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা আরও একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন। সেখানে কিছু সংখ্যক মানুষকে একটা রেখাচিত্র দেখানো হয়। এবং তাদের কাছে একটা সমস্যার সমাধান চাওয়া হয়। সমস্যাটা ছিল: যদি আপনি একজন ডাক্তার হন, তাহলে আলোকরশ্মি ব্যবহার করে কিভাবে আশেপাশের কোন সুস্থ কোষ ধ্বংস না করে পাকস্থলির টিউমার নিরাময় করবেন? যারা এই সমস্যাটার সঠিক সমাধান দিয়েছিল, দেখা গেছে যে তাঁরা রেখাচিত্রটির একটা নির্দিষ্ট অংশে বেশি তাকিয়েছেন। এই গবেষণা থেকে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছেন যে, একটা মানুষের চোখের গতিবিধি, তার চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রেও অনেক প্রভাব ফেলে।
একটা চিত্রের প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোতে দৃষ্টি দিতে পারার ক্ষমতাটাই একজন বিশেষজ্ঞ ও একজন অনভিজ্ঞ ব্যক্তির মধ্যে প্রধান পার্থক্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই ক্ষমতাটা গড়ে ওঠে বছরের পর বছর ধরে একই ধরণের অগুনিত জিনিস দেখতে দেখতে। কিন্তু যদি বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের চোখের গতিবিধি রেকর্ড করে তা অনভিজ্ঞদের দেখানো হয়, যে কিভাবে আর কোথায় দেখতে হবে? তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে? ব্রিটেনের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ঠিক এই কাজটাই করেছিলেন গত বছর। অপারেশনের সময় একজন অভিজ্ঞ শল্যচিকিত্সকের চোখ কোথায় কিভাবে ঘোরাফেরা করে, এটা রেকর্ড করে দেখানো হয়েছিল প্রশিক্ষণার্থী শল্যচিকিত্সকদের। আর তারপর এই গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, প্রশিক্ষণার্থীরা এভাবে চোখের গতিবিধির ভিডিও দেখে শিখতে পারছেন অনেক তাড়াতাড়ি।
আমরা কিভাবে চিন্তা ও কাজ করি তার সঙ্গে চোখের নড়াচড়া এত ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত যে, এটা আমাদের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কেও অনেক তথ্য উন্মোচন করতে পারে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। অ্যারিজোনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইভান রিসকো এবং তাঁর সহযোগীরা এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সম্প্রতি একটা গবেষণা চালিয়েছিলেন। তাঁরা প্রথমে কিছু ব্যক্তিকে একটা প্রশ্নপত্র দিয়েছিলেন তাদের কৌতুহলের পরিমাণ যাচাই করার জন্য। তাদের নতুন জিনিস জানা ও নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার চাহিদা কেমন এটা বোঝার জন্য। এরপর বিজ্ঞানীরা চোখের গতিবিধি রেকর্ড করার জন্য তাদের একগুচ্ছ ছবি দেখান। যে মানুষগুলো খুবই বেশি কৌতুহলী বলে আগেই বিবেচিত হয়েছিল, দেখা যায় যে তারা ছবিতে যত বেশি সম্ভব উপাদান দেখার চেষ্টা করেছে। বিরামহীনভাবে তারা ঐ ছবিগুলোর উপরে নিজেদের চোখ নড়াচড়া করেছে। তাই শেষপর্যন্ত ইভান রিসকোর সিদ্ধান্ত, ‘একজন ব্যক্তি কেমন, সেটা কিভাবে সে নিজের চোখের ব্যবহার করে, তার সঙ্গে সম্পর্কিত।’— টাইম অবলম্বনে
অনেক ভালো লিখেছেন। এই সব তথ্য আমাদের অনেকেরই অজানা। এইসব মজার বিষয় নিয়ে আগামীতে আরো লিখবেন। ধন্যবাদ।