Posts Tagged ‘ সুকুমার রায় ’

এখনো ভাবায়, সুকুমার রায়!

বেড়ালটা এখনো ফ্যাঁচ্‌ ফ্যাঁচ্‌ করে হেসেই চলেছে! জোরে জোরে বানান করছে চশমার, “চন্দ্রবিন্দুর চ, বেড়ালের তালব্য শ, আর রুমালের মা- হল চশমা । কেমন, হল তো?'”

হিজিবিজ্‌বিজ্‌-এর হাসি থেমেছে ভাবছ? হাহ! সে হেসেই চলেছে পেট ফাটিয়ে। কখনো তকাই নামে, কখনো বিস্কুট নামে…

শ্রীব্যাকরণ শিং, বি. এ. খাদ্য বিশারদ এখন পত্রিকায় কলাম লেখেন। সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে তাঁর নিত্য উপস্থিতি।

রাগ করে তো কোনো লাভ নেই। ন্যাড়াটাও তাই গান শুনিয়ে চলেছে। “মিশিপাখা শিখিপাখা আকাশের কানে কানে” — দারুন হিট করেছিল গত মৌসুমে!

‘মানহানির মোকদ্দমা’ও চলছে। “কালো ঝোল্‌লা-পরা হুতোম প্যাঁচা”র চোখ এখনো বোজা। তা-ই বলে মনে করেন না যে, তিনি ঘুমোচ্ছেন। উনার চোখে ব্যারাম আছে। সবাই সেটা বোঝে। শুধু হিজিবিজ্‌বিজ্‌টা বোঝে না। এখনো সে বেআক্কেলের মতো বলে ওঠে, “আরও অনেক জজ দেখেছি, তাদের সক্কলেরই চোখে ব্যারাম।”

উধো-বুধোর ফাইট আর দোস্তি– সেও কী আর থামবার মতো জিনিস? তাদের বয়স কতবার কমল-বাড়ল হিসেব রাখাও দায়। সত্যিই তো। বয়স বাড়তে বাড়তে শেষটায় বুড়ো হয়ে মরবে নাকি!! বালাই ষাট! তাই ১০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যেই তাদের নিত্য ওঠানামা।

আর শ্রীকাক্কেশ্বর কুচ্‌কুচে? দারুণ জমে উঠেছে তার হিসেবের ব্যবসা। কার মন ভালো করা চিঠিতে এক ফোটা কান্নার জল পড়েছিল– সেই হিসেবটা নিয়েই যা একটু হয়েছিল ভ্যাজাল। এছাড়া কিন্তু দারুণ চলছে তার। সমস্যা শুধু একটাই। প্রায়ই সে অভ্যাসবসে বলে বসে, ‘লেগে যা, লেগে যা- নারদ নারদ !’

অ্যাঁ? আর কার কতা কইচ? সুকুমার? সে আবার কী? মৃত্যু? দিবস? এসব আবার কী? কেউ কখনো মরে নাকি? আ মলো যা!!! কী আদিখ্যেতা!!!
—————-
হযবরল– শুনিয়েছেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়– https://youtu.be/G_W0obTSLEw

গোঁফ দিয়ে যায় চেনা!

গোঁফ চুরি যাওয়ার অলীক কল্পনাতে কী ভয়ানক ক্ষ্যাপাটাই না ক্ষেপেছিলেন সুকুমার রায়ের সেই হেড অফিসের বড় বাবু! সব্বাইকে ইচ্ছেমতো গালমন্দ করে শেষে ভীষণ রেগে বিষম খেয়ে তিনি লিখে দিয়েছিলেন, ‘গোঁফকে বলে তোমার আমার- গোঁফ কী কারও কেনা? গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা।” সুকুমার রায়ের ‘গোঁফচুরি’ ছড়ার এই বড়বাবু নিছকই একটি কাল্পনিক চরিত্র। তবে গোঁফের প্রশ্নে সত্যিকারের দুনিয়াতেও কাউকে এমনভাবে উত্তেজিত হয়ে যেতে দেখলে অবাক হবেন না। নিজেদেরকে গোঁফ দিয়েই চেনানোর কাজটা কিন্তু সত্যিই করছে এই সময়ের একদল মানুষ।

movember

শুরুটা হয়েছিল ১০ বছর আগে এই নভেম্বর মাসেই। অস্ট্রেলিয়ার একটি পাবে বসে সমসামফিক ফ্যাশন নিয়ে কথা বলছিলেন দুই বন্ধু ট্রেভিস গারোনে আর লুক স্ল্যাটারি। হঠাৎই একজন মজা করে বলে বসেছিলেন গোঁফটাকেও ফ্যাশন হিসেবে ফিরিয়ে আনার কথা। সূত্রপাতটা এখানেই। ঠাট্টাচ্ছলে বলা এই কথাটাই পরে রুপ নিল পুরুষদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির মতো গুরুতর আলোচনায়। শুধু ফ্যাশন হিসেবে না, গোঁফ রাখার ব্যাপারটিকে তারা অচিরেই নিয়ে আসলেন প্রোস্টেট ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে, যেটা বিশেষভাবে পুরুষদেরই হয়ে থাকে। গোঁফের ইংরেজি মুশটাস (moustache)-এর ম, আর নভেম্বরের ভেম্বর মিলিয়ে এই মাসটাকেই এখন অনেকে ডাকেন মভেম্বর বলে। বিশ্বব্যাপি পুরো নভেম্বর মাস জুড়েই সচেতনভাবে গোঁফ রাখার অভ্যাস তৈরি করছেন তাঁরা।
শুরুটা হাসি-ঠাট্টাচ্ছলে হলেও এখন এটা শুধুই মজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এই তৎপরতার একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা যেমনটা বলেছেন, ‘পুরুষদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিস্থিতির পরিবর্তন করাই মভেম্বরের লক্ষ্য।’ ২০০৪ সালে গ্রারোনে আর স্ল্যাটারি প্রতিষ্ঠা করেছেন মভেম্বর ফাউন্ডেশন। অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠানটি প্রোস্টেট ক্যান্সার, টেস্টিকুলার ক্যান্সার ও বিষণœতা বিষয়ে বিশেষভাবে পুরুষদের মধ্যেই সচেতনতা তৈরির জন্য অর্থ সংগ্রহ ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। ২০১২ সালে তারা এই উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করেছিল ১৩০ মিলিয়ন ডলার। সেবছর এটা গ্লোবাল জার্নালের শীর্ষ ১০০ এনজিও-র তালিকাতেও স্থান পেয়েছিল। প্রাপ্ত অর্থের একটা বড় অংশ ব্যায় করা হয় প্রোস্টেট ক্যান্সার, টেস্টিকুলার ক্যান্সার নিয়ে গবেষণার পেছনে। ২১টিরও বেশি দেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে এই মভেম্বর ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম।
বিশ্¦ব্যাপী পুরুষদের মধ্যে প্রস্টেট ক্যান্সারটি খুবই পরিচিত ধরণের ক্যান্সার। পুরুষদের মধ্যে যতজন ক্যান্সার আক্রান্ত হয় তার ৩০ শতাংশই এই প্রস্টেট ক্যান্সার। আর ১৫-৩৪ বছর বয়সী পুরুষরা আক্রান্ত হয়ে থাকেন টেস্টিকুলার ক্যান্সারে। আর এটা ক্রমশই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। গত ৪০ বছরে টেস্টিকুলার ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে দুই গুন। প্রতি ২৭০ জন পুরুষের মধ্যে একজন জীবনের কোনো এক সময় ভোগেন এই ক্যান্সারে। মভেম্বর তৎপরতা পুরুষদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করার পথে সত্যিই বেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
২০০৩ সালের নভেম্বরে এই উদ্যোগটা নেওয়ার বছর তারা কোনো অর্থ সংগ্রহ করতে পারেননি। পরের বছর অস্ট্রেলিয়ার প্রোস্টেট ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের জন্য তাঁরা সংগ্রহ করেছিলেন ৫৪ হাজার ডলার। আর এখন পর্যন্ত ৩০০ মিলিয়ন পাউন্ড তারা সংগ্রহ করেছেন প্রোস্টেট ও টেস্টিকুলার ক্যান্সারের চিকিৎসা গবেষণার জন্য। আর এই সময়ের মধ্যে হাজার হাজার পুরুষ এই বিষয়ে সচেতন হয়েই গোঁফ রেখেছেন। রোগগুলো নিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন যেটার প্রচলন আগে অতটা ছিল না।

movember3
মভেম্বর তৎপরতার সবচেয়ে বড় প্রভাবটা পড়েছে গবেষণার ক্ষেত্রে। প্রতি বছর যুক্তরাজ্যের প্রোস্টেট ক্যান্সার মভেম্বরের কাছ থেকে পায় ১৫ মিলিয়ন পাউন্ড। যেটা ব্যয় করা হয় গবেষণা ও অন্যান্য সামাজিক সহায়তা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা বিভাগের প্রধান আইন ফ্রেমের মতে, এটা একটা বড় ধরনের বদল এনেছে, ‘এখন পর্যন্ত ব্রেস্ট ক্যান্সারের তুলনায় অনেক কম বিনিয়োগ আসত প্রস্টেট ক্যান্সার নিয়ে গবেষণার জন্য।’ কম বিনিয়োগের একটা কারণ হতে পারে যে, এটা খুবই জটিল একটা অসুখ। কিন্তু প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা গত ১০ বছরে দ্বিগুন হয়ে গেছে। আর আমরা দেখতে পাচ্ছি যে গত চার বছর ধরে মভেম্বরের প্রভাবটা কিভাবে পড়ছে। বিনিয়োগের পরিমাণ প্রচুর পরিমানে বাড়ার খতিয়ানটা দেখলেই সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়।