‘ইংল্যান্ডকে হারাতেই হবে’
মাত্র কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নে একটা বড়সড় আঘাত দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুধু আঘাত বললেও কম বলা হয়। দেশের যে কোন চরম ক্রান্তিকালিন পরিস্থিতির সঙ্গেই তুলনা দেওয়া যেতে পারে সেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতির। মাত্র ৫৮ রানেই অলআউটের লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সমর্থকরা হতাশা চেপেও রাখতে পারেন নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিম বাসে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে কলঙ্কিত করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রীড়া অঙ্গনের ভাবমুর্তি। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজই কিনা হয়ে গেল বাংলাদেশের পরম মিত্র! যে কোমার রোচ, সুলেমান বেনদের নির্মম আঘাতে বাংলাদেশ ধুলোয় লুটিয়েছিল, তারা আবারও তেমনভাবেই জ্বলে উঠুক, ক্রিস গেইল, কাইরন পোলার্ডরা ব্যাটে ঝড় তুলুক, এটাই এখন বাংলাদেশ সমর্থকদের একান্ত প্রার্থনা। ইংল্যান্ডকে যে হারাতেই হবে!
‘বি’ গ্রুপ থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার হিসাব-নিকাশটা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ইতিমধ্যেই পা রেখেছে শেষ আটের আঙ্গিনায়। ভারতেরও কোয়ার্টার ফাইনাল প্রায় নিশ্চিতই বলা যায়। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে বাংলাদেশ, উইন্ডিজ আর ইংল্যান্ডের মধ্যে। কাগজে-কলমে তিন দলেরই জোর সম্ভাবনা আছে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার। কিন্তু এত হিসাব-নিকাশের খাতা খুলে বসে থাকতে হবে না যদি আগামীকাল ইংল্যান্ডকে হারের স্বাদ দিতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। উপমহাদেশে আয়োজিত এবারের বিশ্বকাপ থেকে একেবারেই শূণ্য-রিক্ত হাতে ফিরে যেতে হবে এ অঞ্চলের এককালীন শাসক ইংল্যান্ডকে। তারচেয়েও বড় কথা, নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের পরবর্তী রাউন্ড। এরকম অবস্থায় বাংলাদেশের মানুষ তো স্যামি, গেইল, ব্রাভোদের পেছনে দাঁড়াবেই।
ঢাকার এক হোটেল কর্মকর্তা এনামুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সমর্থন দেব। ইংল্যান্ডকে হারাতেই হবে।’ শুধু এনামুর রহমানই না, বাংলাদেশের ক্রিকেট পাগল কোটি কোটি মানুষের মুখে এখন একই কথা। ‘ইংল্যান্ডকে হারাতে হবে।’ অতি উত্সাহী দু-একজন তো বলছেন, ‘ইস, খেলাটা যদি বাংলাদেশে হতো, গলা ফাটিয়ে চিত্কার করেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিতিয়ে দিতাম।’ একেবারে কিন্তু ফেলেও দেওয়া যায় না কথাটা। বাঙ্গালীর গলার জোরের পরিচয় কিন্তু ইংল্যান্ড কয়েকদিন আগে ভালোমতোই পেয়েছিল!
তবে সমর্থকদের ভাবনা যাই হোক, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিশ্চয়ই শুধু অপরের দিকে তাকিয়েই দিন পার করছেন না। ইতিমধ্যেই তাঁরা নিশ্চয়ই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের জন্য জোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২ উইকেটের অসাধারণ জয় দিয়ে নিজেদের সামর্থ্য তো ভালোমতোই প্রমাণ করেছেন সাকিব-তামিমরা। হল্যান্ডের বিপক্ষেও খেলেছেন অনেক পরিণত ক্রিকেট। কাজেই গত বিশ্বকাপের মতো এবারও প্রোটিয়া-বধের স্বপ্ন তো বাংলাদেশ দেখতেই পারে। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছেন, ‘আমরা ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচটার দিকে খুব আগ্রহভরে তাকিয়ে থাকব। এটা ঠিক। কিন্তু আমাদের নিজেদের ভাগ্য নিজেদেরই গড়ে নিতে হবে। আসল কথা হলো, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে হবে।’ বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের অন্যতম প্রধান ভরসা আব্দুর রাজ্জাকও গলা মিলিয়েছেন অধিনায়কের সঙ্গে। বলেছেন, ‘দলের সবাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটার দিকেই তাকিয়ে আছে। কেউই পয়েন্ট তালিকার জটিল হিসাব-নিকাশ নিয়ে ভাবছে না। আমরা পরের ম্যাচটা জিতেই কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে চাই।’
আগামীকালের ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলাটা বাংলাদেশের না হয়েও এক অর্থে বাংলাদেশেরই। গোটা খেলাটার উপরই নির্ভর করবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ সম্ভাবনা। ১২ দিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল এদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে ক্ষুব্ধ ক্রিকেট পাগল সমর্থকদের হতাশার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ দেখেছে। আতঙ্কিত হয়েছে। কিন্তু তারপর “We are Sorry” লেখা প্ল্যাকার্ডগুলোও তো দেখেছে। আর এবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের প্রাণঢালা শুভকামনা আর ভালোবাসাও নিশ্চয়ই উইন্ডিজ ক্রিকেটাররা দেখছেন। ক্রিস গেইলরা কী এই ভালোবাসার প্রতিদান দেবেন না?