এই মুহূর্তে মনে হয় সত্যিই পৃথিবী তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের দিকে। বা বলা যায় তাকানো শুরু করেছে, কিছুটা সংশয়, কিছুটা আশাবাদ, কিছুটা কৌতুহল-বিস্ময় নিয়ে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ আন্দোলন শুরু হওয়ার পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো থেকে আমরা সেরকমই একটা ইঙ্গিত পেয়েছি। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কাভারেজের পরিমাণ বা ধরণ নিয়ে অনেকেরই অনেক সমালোচনা আছে। আমার নিজেরও আছে। কিন্তু এর মধ্যেও, বাংলাদেশের এই গণজাগরণ যে পুরো বিশ্বের সামনেই একটা বিকল্প রুপকল্প দাঁড় করিয়েছে, সে কথা উঠেছে বর্হিবিশ্ব থেকেই। এবং বাংলাদেশ যে বিশ্বকে আরও অনেক শিক্ষা-বার্তা দিতে পারে; শাহবাগ চত্বর যে পুরো বিশ্বের সামনেই নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে, তেমন সম্ভাবনার কথাও উচ্চারিত হয়েছে বর্হিবিশ্বের মানুষদের মুখে। এবং তারা এই সম্ভাবনার কথা বলেছেন সম্ভ্রমের সঙ্গে, আশার সঙ্গে। কিন্তু কেন এই সম্ভ্রম, আশাবাদ? পুরো বিশ্ব কেন তাকিয়ে আছে শাহবাগ চত্বরের ঐক্যবদ্ধ তারুণ্যের দিকে?

১৯৭১ সালে যে হানাদার পাকসেনাদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, ৪২ বছর পর শাহবাগ আন্দোলন তার প্রথম শিক্ষাটা দিয়েছে এই পাকিস্তানকেই। দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে পাকিস্তানের শাসকেরা তাদের নাগরিকদের-শিক্ষার্থীদের শিখিয়েছে ভুল ইতিহাস। বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের এই মানুষগুলো যে সবক্ষেত্রে প্রচ্ল অনাচার-বৈষম্য-নির্যাতন-নিপীড়ণের শিকার হওয়ার পর স্বাধীনতার ডাক দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই ইতিহাসটা পাকিস্তানের বেশিরভাগ মানুষ জানে না। বা যারা জানে, তাদের বৃহদাংশ মনে করে শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশ একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে দাঁড়াতে পেরেছে। এবং অনেকেই মনে করেন যে, স্বাধীন বাংলার জন্ম না হলেই ভালো হতো।
কিন্তু এই রকমের ইতিহাস বিকৃতির ফলাফল যে ভালো হয় না সেটা খুব স্পষ্টভাবে বলেছেন পাকিস্তানের এক ইতিহাসের শিক্ষক। ১৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের ট্রিবিউন পত্রিকায় প্রকাশিত এক লেখায় ইয়াকুব খান বাঙগাস লিখেছেন,
‘১৯৭০-৭১ সালের ঘটনাগুলোর দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে না চাওয়ায় আমরা এখনো আমাদের অন্যান্য সাংবিধানিক প্রদেশগুলো নিয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে আছি। এবং আমরা নিজেদের পৃথক পৃথক পরিচিতি নিয়ে গর্ব বোধ করতে পারি না। আমরা ভয় পাই যে, সিন্ধু আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে কারণ সেখানকার মানুষেরা উর্দুর পাশাপাশি তাদের ভাষাটারও স্বীকৃতি চায়। আমরা বেলুচিস্থানে একটা সামরিক অপারেশন চালিয়েছি তার প্রধান কারণ হলো, সেখানকার মানুষেরা তাদের প্রদেশটি নিজেরাই পরিচালনা করতে চেয়েছে। আমরা অস্বস্তিতে আছি এটা ভেবে যে, দক্ষিণ পাঞ্জাব ও বাহাওয়ালপুর আলাদা প্রদেশ হয়ে যায় কিনা। সেখানে একটা আকস্মিক অভ্যুত্থান ঘটে যায় কিনা, এই ভয়ে আমরা ব্যাপারগুলো নিয়ে আলাপ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি এবং আমরা গিলগিট-বালিস্তানের মানুষদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার দেই নি। এগুলোর বেশিরভাগই হচ্ছে ঐ বিগত দিনের ঘটনাগুলোর ভূত। আমরা সেগুলো নিয়ে ভাবতে চাই না, অগ্রাহ্য করি আর আশা করি যে, আলৌকিকভাবে সেগুলো নিজে থেকেই গায়েব হয়ে যাবে।’
কিন্তু তেমনটা যে বাস্তবে হয় না, সেকথাও পরিস্কারভাবেই বলেছেন ইয়াকুব খান। এবং পাকিস্তান যদি এই সমস্যাগুলোর কার্যকর সমাধান করতে চায়, তাহলে দেশটির শাসকদের বাংলাদেশের কাছ থেকেই শিক্ষা নিতে হবে বলে মত দিয়েছেন ইতিহাস বিভাগের এই শিক্ষক। তিনি বলেছেন, ‘ ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু এই কারণে না যে, সেটা নিজে থেকেই পুনরাবৃত্তি ঘটায় বা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা আছে। বরং ইতিহাস এইজন্যও গুরুত্বপূর্ণ যে, বারংবার ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো অগ্রাহ্য করা একটা দেশের জাতিগত চেতনায় প্রভাব ফেলে। এবং পুরো দেশটাই পুরোনো ঐ ঘটনাগুলোর কবলে জিম্মি হয়ে থাকে।’ সমাধান হিসেবে তিনি পাকিস্তান সরকারকে দেখিয়েছেন ভুল স্বীকার করার পথ। লিখেছেন, ‘পাকিস্তানি সরকারের জন্য এটাই সুবর্ণ সময়, তত্কালিন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদের উপরে তারা যে বর্বরতা চালিয়েছিল সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করার। সত্য ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবে এমন ঐতিহাসিক দলিলগুলো এতদিন ধরে তারা লুকিয়ে রেখেছে। সেগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত করতে রাজি হতে হবে। সেমময়কার যেসব অপরাধী এখনো বেঁচে আছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে ন্যায়বিচার করতে হবে। জনসমক্ষে ঘোষণা দিতে হবে যে, ১৯৭০-৭১ সালে আমরা একটা জাতি হিসেবে, হ্যাঁ, আমরা, সামগ্রিকভাবে যা করেছি সেটার জন্য আমরা দুঃখিত।’ সেটা পাকিস্তান সরকার করবে কিনা, সেটা তাদের ব্যাপার।
আমাদেরকে তো এই মুহূর্তে দেশের পরিস্থিতি নিয়েই ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন থাকতে হচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৪২ বছর পরেও আমাদেরকে জিম্মি হয়ে থাকতে হচ্ছে খোদ স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীটির সহিংস হুমকির কাছে। যেখানে খোদ পাকিস্তানেই মুক্তিযুদ্ধের সময়কার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় হাজির করার দাবি উঠছে, সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশে এখনো তাণ্ডব চালিয়ে যেতে পারছে পাক বাহিনীর সহোদর জামায়াত-শিবির। এই কি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অর্জন?
যেখানে খোদ পাকিস্তানেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে এবারের একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হয়েছে বেশ সমাদরের সঙ্গে, সেখানে বাংলাদেশের একুশে ফেব্রুয়ারিতে জামায়াত-শিবির বিভিন্ন জায়গায় শহীদ মিনার ভেঙ্গেছে। ইতিহাসের কি নির্মম পরিহাস! মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ভেঙ্গে, বাস-ট্রেনে আগুন দিয়ে, বোমাবাজি-ককটেলবাজি করে জনমনে ত্রাস ছড়িয়েছে এই পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা। আর গণজাগরণকে অস্বীকার করে, পুরো দেশের মানুষের নায্য দাবীর আন্দোলনকে অস্বীকার করে নব্য রাজাকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। তারা যে শুধু নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই আন্দোলন করে, সেকথা এখন পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে দেশের মানুষের কাছে। তাহলে কি দেশে শুধু আওয়ামী লিগেরই রাজনীতি থাকবে? তখন বিরোধী দল কে হবে? বামদলগুলো নাকি ইসলামপন্থী দলগুলো? তৃতীয় শক্তির আবির্ভাব হবে? নাকি শক্তিশালী বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে দেশ চলে যাবে ফ্যাসিবাদী শাসনের কবলে? উত্তর এখন জানা নেই, ভাবতে হবে সবাইকেই।
তবে এই প্রশ্নগুলোর উপস্থিতি এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, বর্তমানে বাংলাদেশ একটা সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি পার করছে। কিন্তু অনেক খারাপ সংবাদ, মেনে নিতে না পারার মতো পরিস্থিতির মধ্যেও এবারের সংকটটা তৈরি হয়েছে অনেক অনেক আশা নিয়ে, অনেক অনেক স্বপ্ন নিয়ে। ৫২, ৬৯, ৭১, ৯০-এর মতো ২০১৩ সালের ইতিহাসটাতেও লিপিবদ্ধ হচ্ছে জনমানুষের উপস্থিতি। জনগণের সংঘবদ্ধতা, তারুণ্যের তীব্র দীপ্তি, মুক্তিকামী মানুষের সংহতি-সৃজনশীলতা দিয়ে ২০১৩-র ইতিহাস রচিত হচ্ছে। এটাই অনেক আশার কথা। অনেক বড় স্বপ্ন দেখার জায়গা। সত্যিকারের গণজাগরণে, মানুষের মুষ্ঠিবদ্ধ হাতের ঐক্যবদ্ধতায় ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এখন আমাদের সামনে, সাধারণ জনগণের সামনে সুবর্ণ সুযোগ এসেছে রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের নিমূল করে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন দেখার। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে সত্যিকারের স্বাধীন করার সময় বোধহয় এখনই। এবারের এই জেগে ওঠা তারুণ্য যদি আবার প্রতারিত হয়, তাহলে তার চেয়ে হতাশার বোধহয় আর কিছুই থাকবে না। আর আমাদের সামনে অনুপ্রেরণা হিসেবে তো অনেককিছু আছে। ৫২ আছে, ৬৯ আছে, ৭১ আছে, ৯০ আছে। আমরা তো অনেকখানি এগিয়েই গেছি। এখন আমাদের শুধু ইতিহাস থেকে শিক্ষাটা নিয়ে শুরু করে দিলেই হয়। তবে তার আগে আত্মসমালোচনা দরকার। আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া দরকার। ভুল স্বীকার করে নিতে পারার মানসিকতা দরকার। সবারই। ব্যক্তিমানুষেরও, সংগঠনেরও। সরকারেরও। এটাই বোধহয় আমাদের প্রকৃত মানবিকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। ভুল কারো হতেই পারে। কিন্তু ভুল প্রমাণিত হওয়ার পরে সেটা স্বীকার করে নিতে পারার মতো বিনীত আমাদের হওয়া উচিত্।
জামায়াত-শিবির এখন পর্যন্ত যেসব নাষকতা চালিয়েছে, তার সবকিছুই তারা করছে বিভ্রান্তিমূলক, প্রতারণামূলক প্রচারণার মাধ্যমে। যেগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাস্যরসেরও উপাদান হয়। কিন্তু এটা তো তারা করতে পারছে। কেন করতে পারছে? এটা কি আমাদেরই ব্যর্থতা না? কেন স্বাধীনতার ৪২ বছর পরেও যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াত-ই-ইসলামি এইভাবে ধর্মের নামে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলতে পারছে? শাহবাগের এই নায্য দাবী, এখানকার তরুণেরা একুশ-মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দ্বারা যেভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছে, ২য় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যেভাবে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন দেখছে, সেটা কি পুরো দেশের মানুষ অনুধাবন করছেন? সবার কাছে কী গণজাগরণের দৃপ্ত তারুণ্যের দিপ্তী পৌঁছাচ্ছে? আমরা কি ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে বিরাজমান শিক্ষাগত-সাংস্কৃতিক ব্যবধান-বৈষম্য ঘোঁচানোর কথা ভাবছি?
জামায়াত-শিবির স্বাধীনতার পর গত ৪২ বছরে যেভাবে পুরো দেশজুড়ে তাদের বহুবিধ বিস্তার ঘটিয়েছে সেটা হুট করে গায়েব করে দেওয়া সম্ভব না। নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে তাদেরকে অনেকটাই দুর্বল করে দেওয়া যায় কিন্তু পুরোপুরি নির্মুল হয়তো করা যাবে না। কারণ আজ চাঁদের গায়ে সাঈদী দেখাচ্ছে, কাল মেঘের গায়ে মওদুদীকে দেখাবে। এবং কে জানে, সেটা দেখেও হয়তো অনেক ধর্মভীরু মানুষ প্রাণের তোয়াক্কা না করে রাস্তায় বেরিয়ে আসবে বাস-ট্রেন পোড়াতে, বোমাবাজি করতে। সেধরণের পরিস্থিতি মোটেই কাম্য নয়। অহিংস গণজাগরণের মানসিকতায় সেই পরিস্থিতির ঠাঁয় নাই। ফলে আমার মতে, জামায়াত-শিবির নির্মূল করার জন্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির বৈষম্য ঘোঁচানোর কাজ শুরু করাটা খুবই জরুরি। সত্যিকার অর্থেই দেশের প্রতিটি কোনায় কোনায়, গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত্ ৭১-এর এই পুনরুদ্ধারিত চেতনার আগুন। মানুষ শুধু একবার এই শাহবাগের তরুণদের কথা শোনার অপেক্ষায় আছে। দেশ গড়ার যে তেজী প্রত্যয় নিয়ে অনেক তরুণ শাহবাগে পড়ে আছে দিনের পর দিন, তাদের দৃপ্ত মুখটা দেখলেই হয়তো এই শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে সংশয়ে ভোগা অনেক মানুষ প্রাণপণে দাঁড়িয়ে যাবেন জামায়াত-শিবিরের নাষকতার বিরুদ্ধে। দেশে একমাত্র সাংস্কৃতিক প্রচার দিয়েই শান্তির পায়ড়া ওড়ানো সম্ভব, অহিংস উপায়ে। এখন আমরা সম্মিলিতভাবে এই দায়িত্ব পালন করতে পারব কিনা, সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন।
এই মুহূর্তে আসলে শুধু বাংলাদেশই না, পুরো বিশ্বই একটা সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি পার করছে। আর সত্যিই হয়তো এই যুদ্ধপিড়ীত, বিপন্ন বিশ্ব তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের দিকে। এখন হয়তো বর্হিবিশ্বে এই শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি-সংশয়-নেতিবাচকতা আছে। ভবিষ্যত্ নিয়ে উত্কণ্ঠা আছে। কিন্তু অনেকেই শাহবাগ আন্দোলনের ভবিষ্যত্ দেখার জন্য তাকিয়ে আছেন প্রচ্ল কৌতুহল নিয়ে। তারা এখান থেকে পাচ্ছেন নতুন দিনের ইঙ্গিত, তারা খুঁজে বের করছেন এই আন্দোলনের অনন্যতা, এই আন্দোলনের সম্ভবনা। কে জানে!

এই আশাবাদের কারণ হচ্ছে, পুরো বিশ্বকেই পথ দেখানোর নজির বাংলাদেশের ইতিহাসে আগেও আছে। ভাষা যে মনুষ্য সমাজের খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, এবং এই ভাষার অধিকার ছাড়া যে একটা জাতির বিকাশ সম্ভব না, এই সত্যটা পুরো পৃথিবীকে রক্তের বিনিময়ে জানিয়েছিলেন ভাষা শহীদেরা। মনুষ্যবিকাশের পথে ভাষা-সংস্কৃতির যে অপরিহার্যতা, তার প্রতি এখন সহমত পোষণ করেছে পুরো বিশ্ব। ১৯৯৯ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। আর তারপর থেকে পুরো বিশ্বে নানাভাবে বেড়েছে ভাষা বিষয়ক গবেষণা, প্রতিবেদন, চিন্তাভাবনা। ২০০০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ভাষিক বৈচিত্র্য, বিপন্ন বা বিলুপ্তির হুমকির মুখে থাকা ভাষাগুলো সংরক্ষণ, মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের প্রয়োজনীয়তা, ব্রেইল ও সংকেত ভাষার উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি ও ভাষার সম্পর্ক, বহুভাষিক শিক্ষা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করেছে জাতিসংঘ। ফলে, বাংলাদেশ আরও একবার নতুন কিছু দিতেই পারে পুরো বিশ্বকে। শাহবাগ আন্দোলন থেকে আরও অনেক শিক্ষাবার্তা, সংকেত-ইশারা হয়তো আগামীতেও পেতে পারেন বর্হিবিশ্বের মুক্তমনা উত্সুক ব্যক্তি/সংগঠন। কে জানে, তারা বোধহয় তেমন কিছু একটা আশাও করছেন?