Posts Tagged ‘ লন্ডন অলিম্পিক ’

বোল্টের চেয়ে জোরে দৌড়ানো কি সম্ভব?

২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন উসাইন বোল্ট। ১০০ মিটার দৌড় তিনি শেষ করেছিলেন মাত্র ৯.৬৯ সেকেন্ডে। এক বছর পর রেকর্ডটা আবার নিজেই ভেঙেছেন এই জ্যামাইকান স্প্রিন্টার। ২০০৯ সালের বার্লিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি দৌড়ালেন মাত্র ৯.৫৮ সেকেন্ডে। এবার লন্ডন অলিম্পিকে গোটা ক্রীড়াবিশ্ব তাকিয়ে বোল্টের দিকে। আবারও কি নিজের রেকর্ড ভাঙবেন তিনি? বিজ্ঞানীরাও প্রশ্ন তুলেছেন, বিশ্বের এই দ্রুততম মানব কি এর চেয়েও জোরে দৌড়াতে পারবেন? প্রশ্ন উঠেছে, মানুষের পক্ষে এর চেয়ে জোরে দৌড়ানো সম্ভব কি না—এ নিয়েও।

বিগত বছরগুলোয় অ্যাথলেটদের পারফরম্যান্স বিচার করে মানুষের সক্ষমতা সম্পর্কে কিছুটা অনুমান দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিলেন গণিতবিদেরা। ১৯৯১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত পারফরম্যান্স বিচার করে দেখা গেছে, অ্যাথলেটদের গতি বেড়েছে। কিন্তু সেটা খুবই অপ্রত্যাশিতভাবে। ২০০৮ সালের আগে গণিতবিদ রেজা নোবারি বলেছিলেন, মানুষ সর্বোচ্চ ৯.৪৪ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড় শেষ করতে পারবে। কিন্তু ২০০৮ সালে বোল্টের বিশ্ব রেকর্ড গড়া দৌড়ের পর এই অনুমান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন নোবারি। বিস্তারিত পড়ুন

অলিম্পিকে অলৌকিকের প্রত্যাশায় ফিলিস্তিনি নারী

ওরোউদ সাওয়ালহা হয়তো জানেন যে অলিম্পিকে পদক জেতাটা কত কঠিন। আসন্ন লন্ডন অলিম্পিকে তাঁর পদক জেতার সম্ভাবনা যে কতটা ক্ষীণ-সেটাও খুব ভালো করেই জানেন তিনি। তার পরও অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়াই তাঁর আত্মবিশ্বাসকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। ফিলিস্তিনের এই নারী অ্যাথলেট এখন স্বপ্ন জাল বুনছেন, কিছু একটা করার। তবে আপাতত লন্ডন অলিম্পিকে ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়াতে পারাটাই একটা বিরাট সম্মানের বিষয়।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার মুখে এখনো একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়নি ফিলিস্তিন। তার পরও আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ও ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার বিশেষ অনুমতিক্রমে অলিম্পিকে ফিলিস্তিনের পতাকা বহনের অনুমতি পেয়েছে এই ভূখণ্ডের ক্রীড়াবিদেরা। ৮০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাওয়া ওরোউদ সাওয়ালহা বলেছেন, ‘আমার কাছে এটা অনেককিছু। আমি একটা মেয়ে আর আমি ফিলিস্তিনকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি।’

সাওয়ালহা এসেছেন ফিলিস্তিনের ছোট্ট গ্রাম, আসিরা আস-শামালিয়া থেকে। পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলের এই গ্রামে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ও ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ ও গুলি-বোমার ঘটনা প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে সেখানকার মানুষ ইসরায়েলি শাসকদের বিরুদ্ধে লড়ছে নিজেদের স্বাধীনতা আদায়ের দাবিতে। অলিম্পিকে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন এটা তিনি জানতেন না ছয় মাস আগেও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুযোগটা পাওয়ার পর সেটাকে ভালোভাবেই কাজে লাগাতে চান এই ফিলিস্তিনি অ্যাথলেট। আর সেই লক্ষ্যেই নিজেকে প্রস্তুত করে তুলছেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো পদক জিততে হলে যে অলৌকিক কিছুই ঘটতে হবে, সেটাও স্বীকার করেছেন সাওয়ালহা। বলেছেন, ‘অলৌকিক কত কিছুই তো ঘটে। আশা করছি, সৃষ্টিকর্তার সহায়তায় আমি ভালো একটা ফলাফলই পাব। অলিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর আমার টাইমিংয়ে এক মিনিটের মতো উন্নতি হয়েছে। এটাকে আমি একটা বড় অগ্রগতি হিসেবেই বিবেচনা করছি।’ সিএনএন

লন্ডন অলিম্পিকের পোশাক তৈরি: বঞ্চনার শিকার বাংলাদেশি পোশাকশ্রমিকেরা!

লন্ডন অলিম্পিকে পোশাক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পুমা, নাইকি ও অ্যাডিডাসের পক্ষে পোশাক তৈরির কাজে নিয়োজিত আছেন অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক। তঁাদের তৈরি পোশাক পরেই হয়তো এবারের অলিম্পিকে অংশ নেবেন অনেক দেশের অ্যাথলেট। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়ানুষ্ঠানের মাধ্যমে পুমা, নাইকি বা অ্যাডিডাস তাদের পণ্যের প্রসার বাড়ালেও বাংলাদেশে বসে এই পোশাকগুলো যঁারা তৈরি করছেন, সেই শ্রমিকেরা হচ্ছেন চরম বঞ্চনার শিকার। নূ্যনতম মজুরিরও কম টাকায় অনেক দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হচ্ছে এই শ্রমিকদের। শুধু তা-ই নয়, শারীরিক ও মানসিকভাবেও তঁাদের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ব্রিটিশ দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ার অন ওয়ান্ট’।

দ্য অবজারভারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পুমার পোশাক সরবরাহকারী একটা প্রতিষ্ঠানে, দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তঁাদের মারধর করা হয়, ধাক্কা দেওয়া হয় বা চুল ধরে টানা হয়।’ অ্যাডিডাসের জন্য পোশাক সরবরাহকারী আরেকটি প্রতিষ্ঠানের নারীশ্রমিকেরা অভিযোগ করেছেন, তঁাদের ওড়না খুলে ফেলতে বাধ্য করা হয়।

পুমার পোশাক সরবরাহকারী এক পোশাক কারখানার শ্রমিক হাজেরা খানম (৩২) বলেছেন, ‘তঁারা প্রায়ই আমাকে থাপ্পড় মারে, লাথি মারে, ধাক্কা দেয়। প্রায়ই আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। মানসিকভাবে আমাদের চরমভাবে আহত করা হয়।’ একই প্রতিষ্ঠানের আরেক শ্রমিক পপি আক্তার নিজের দুর্দশার কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘আমাকে খুবই বাজে বাজে নামে ডাকা হয়। প্রায়ই চড়-থাপ্পড় খেতে হয়। টেবিলের উপরে দঁাড় করিয়ে রাখা হয়। এমনকি চাকরি থেকে বরখাস্ত ও জেলে পাঠানোর হুমকিও দেওয়া হয়।’

অলিম্পিকের এবারের আসরে প্রায় ১০ কোটি ইউরোর ক্রীড়া পোশাকসামগ্রী বিক্রির আশা করছে অ্যাডিডাস। নাইকির দখলে রয়েছে যুক্তরাজ্যের ৪০০ কোটি ডলারের ক্রীড়াসামগ্রীর ১৮ শতাংশ। এবারের অলিম্পিকে তারা স্পনসর করবে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানিসহ প্রায় ২৫টি দেশের অ্যাথলেটদের। অন্যদিকে বিশ্বের দ্রুততম মানব উসাইন বোল্টসহ বেশ কয়েকটি দেশের অ্যাথলেটকে স্পনসর করবে পুমা। কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের প্রসার ও বিপুল পরিমাণ মুনাফার সুযোগ পেলেও তাদের পণ্যসামগ্রী উত্পাদনের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের বঞ্চনার খঁোজ রাখে না বলেই প্রতীয়মান হয়। ব্রিটিশ দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘ওয়্যার অন ওয়ান্টের’ ক্যাম্পেইন ও পলিসি ডিরেক্টর গ্রেগ মুট্টিট বলেছেন, অ্যাডিডাস, নাইকি, পুমার মতো কোম্পানিগুলো শ্রমিক বঞ্চনার সুযোগ নিয়ে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করে। কিন্তু এই কোম্পানিগুলো যদি অলিম্পিকে অংশ নেওয়া দল ও অ্যাথলেটদের স্পনসর করে মুনাফা করতে চায়, তাহলে তাদের অবশ্যই শ্রমিকদের সম্মানের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।’

তবে প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই সামগ্রিক বিষয় খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে কোম্পানিগুলো। নাইকির একজন মুখপাত্র এ প্রসঙ্গে বলেছেন, চুক্তিবদ্ধ পোশাক কারখানার কাজের পরিবেশ কেমন, তা নাইকি খুব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে। নাইকির সব সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই আমাদের নীতিমালা মেনে চলতে হয়। যে অভিযোগগুলো তোলা হয়েছে, তা আমরা তদন্ত করে দেখব এবং খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।’ অ্যাডিডাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত আমাদের সব সরবরাহকারী পোশাক কারখানা নিয়মিত নিরীক্ষণ করা হয়। সেখানকার শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলে কাজের পরিবেশ সম্পর্কেও খঁোজখবর নেওয়া হয় একটা এনজিওর মাধ্যমে।’ বাংলাদেশ থেকে পোশাক সরবরাহকারী একটা প্রতিষ্ঠান বেআইনিভাবে শ্রমিকদের দিয়ে দীর্ঘ সময় কাজ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে স্বীকার করেছে পুমা। তবে খুব দ্রুতই এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে  বলে জানিয়েছে পুমার একজন মুখপাত্র।