Posts Tagged ‘ যুক্তরাষ্ট্র ’

অলিম্পিকে অলৌকিকের প্রত্যাশায় ফিলিস্তিনি নারী

ওরোউদ সাওয়ালহা হয়তো জানেন যে অলিম্পিকে পদক জেতাটা কত কঠিন। আসন্ন লন্ডন অলিম্পিকে তাঁর পদক জেতার সম্ভাবনা যে কতটা ক্ষীণ-সেটাও খুব ভালো করেই জানেন তিনি। তার পরও অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়াই তাঁর আত্মবিশ্বাসকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। ফিলিস্তিনের এই নারী অ্যাথলেট এখন স্বপ্ন জাল বুনছেন, কিছু একটা করার। তবে আপাতত লন্ডন অলিম্পিকে ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়াতে পারাটাই একটা বিরাট সম্মানের বিষয়।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার মুখে এখনো একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়নি ফিলিস্তিন। তার পরও আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ও ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার বিশেষ অনুমতিক্রমে অলিম্পিকে ফিলিস্তিনের পতাকা বহনের অনুমতি পেয়েছে এই ভূখণ্ডের ক্রীড়াবিদেরা। ৮০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাওয়া ওরোউদ সাওয়ালহা বলেছেন, ‘আমার কাছে এটা অনেককিছু। আমি একটা মেয়ে আর আমি ফিলিস্তিনকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি।’

সাওয়ালহা এসেছেন ফিলিস্তিনের ছোট্ট গ্রাম, আসিরা আস-শামালিয়া থেকে। পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলের এই গ্রামে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ও ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ ও গুলি-বোমার ঘটনা প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে সেখানকার মানুষ ইসরায়েলি শাসকদের বিরুদ্ধে লড়ছে নিজেদের স্বাধীনতা আদায়ের দাবিতে। অলিম্পিকে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন এটা তিনি জানতেন না ছয় মাস আগেও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুযোগটা পাওয়ার পর সেটাকে ভালোভাবেই কাজে লাগাতে চান এই ফিলিস্তিনি অ্যাথলেট। আর সেই লক্ষ্যেই নিজেকে প্রস্তুত করে তুলছেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো পদক জিততে হলে যে অলৌকিক কিছুই ঘটতে হবে, সেটাও স্বীকার করেছেন সাওয়ালহা। বলেছেন, ‘অলৌকিক কত কিছুই তো ঘটে। আশা করছি, সৃষ্টিকর্তার সহায়তায় আমি ভালো একটা ফলাফলই পাব। অলিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর আমার টাইমিংয়ে এক মিনিটের মতো উন্নতি হয়েছে। এটাকে আমি একটা বড় অগ্রগতি হিসেবেই বিবেচনা করছি।’ সিএনএন

পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ এক দিন ঝুলিয়ে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র

১৯৭১ সালে উপমহাদেশে পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে যে বেশ উত্তেজিত ছিল, তা সর্বজনবিদিত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ায় ভারতও। তবে সে সময় পরিস্থিতি যে আরও অনেক উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছিল, তা এতদিন সবার অগোচরেই ছিল।

সদ্যপ্রকাশিত গোপনীয় এক দলিলের সুবাদে জানা গেছে, ওই সময় ভারতকে আক্রমণের মাধ্যমে যুদ্ধে জড়ানোর পরিকল্পনা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও। মার্কিন বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস এন্টারপ্রাইজের ওপর ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আক্রমণের নির্দেশ ছিল। এ ছাড়া ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্তটাও প্রায় এক দিন ঝুলিয়ে রেখেছিল তত্কালীন নিক্সন প্রশাসন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এই ছয় পাতার দলিলটি প্রকাশ করেছে বলে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়।

গোপনীয় এই দলিল অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে পরিষ্কারভাবেই পাকিস্তানকে সমর্থন জুগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় ভারত বা পাকিস্তান—উভয় দেশকে কোনো ধরনের সামরিক অস্ত্র বা সহযোগিতা দেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। তা সত্ত্বেও পাকিস্তানকে অস্ত্রশস্ত্রের জোগান দিয়ে গেছে নিক্সন প্রশাসন। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাতে চেয়েছিল ওয়াশিংটন।

১৯৭১ সালের জুনে মার্কিন অস্ত্রবাহী তিনটি পাকিস্তানি জাহাজ আটক করার সম্ভাবনা তৈরি করেছিল ভারত। সেটা তারা করতে পারত জাহাজগুলো করাচি পৌঁছানোর আগেই—সেখানে আক্রমণ অথবা বঙ্গোপসাগরে অবরোধ জারি করে। এগুলোর কোনো একটা পদক্ষেপ নিলেই ভারতকে আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল মার্কিন সেনাবাহিনীকে। সে রকম কিছু করা হলে ভারতকে ‘আগ্রাসী’ আখ্যা দিয়ে সপ্তম নৌবহরকে এই আক্রমণ চালানোর নির্দেশটা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন নিজেই। সদ্যপ্রকাশিত এই দলিলে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাস আঁঁচ করেছিল যে যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে মার্কিন বিমানবাহিনী ভারতের ওপর হামলা চালাতে পারে। আর এ জন্য তাদের কাছে প্রেসিডেন্টের অনুমোদন আছে।’

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানে আটকে পড়া মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধার করার জন্য এই সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে পাঠানো হয়েছিল বলে আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু আসলে এটা ব্যবহার করে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আক্রমণের পরিকল্পনা ছিল ওয়াশিংটনের। ১৪ ডিসেম্বর তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল নিয়াজি ঢাকায় আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর এই আকাঙ্ক্ষার কথা তিনি ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে জানান। পাল্টা জবাব পেতে ১৯ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাঁকে। ভারতের জ্যেষ্ঠ রাষ্ট্রদূতদের সন্দেহ, হয়তো ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্যই ওই কালক্ষেপণ করা হয়েছিল।

গাদ্দাফি-অধ্যায়ের অবসান

১৯৬৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রায় ৪২ বছর ধরে তেলসমৃদ্ধ দেশ লিবিয়া শাসন করেছেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহ দানা বাঁধতে শুরু করার পর প্রতিটি ঘর খুঁজে খুঁজে বিদ্রোহীদের দমন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন এই স্বৈরশাসক। কিন্তু এই হুমকিতে দমে না গিয়ে গাদ্দাফি সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক প্রতিরোধ শুরু করে বিদ্রোহীরা। টানা সাত মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংঘর্ষের পর পতন ঘটে গাদ্দাফি সরকারের। লিবিয়া পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ (এনটিসি)। এর পর থেকেই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান গাদ্দাফি। তাঁর জন্মশহর সারতে গাদ্দাফি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার তিনি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে এনটিসি।

১৯৪২ সালে সারতের উপকূলীয় অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন গাদ্দাফি। বেনগাজি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হলেও পরে সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য পড়াশোনায় ইতি টানেন তিনি। ১৯৬৯ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে রক্তপাতহীন এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতা দখল করেন। ইসলামী মূল্যবোধ ও সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতার মিশেলে তিনি গড়ে তোলেন তাঁর রাজনৈতিক দর্শন। তিনি তাঁর নতুন প্রণীত এই রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের বিকল্প হিসেবেই বর্ণনা করেছিলেন। তাঁর প্রস্তাবিত ‘ইউনাইটেড স্টেটস অব আফ্রিকা’র ধারণাটা বাস্তবে রূপ না পেলেও ২০০২ সালে আফ্রিকান ইউনিয়ন গঠনে বেশ ভালোই প্রভাব রেখেছিল। ২০০৯-২০১০ সাল পর্যন্ত এই ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন গাদ্দাফি।

নিজ দেশে ভিন্নমতাবলম্বীদের কঠোর হস্তে দমনের জন্য কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন এই সামরিক স্বৈরশাসক। তাঁর শাসনামলে হাজার হাজার লোককে মৃত্যুদণ্ড ও কারাগারে পাঠানো হয় বলে অভিযোগ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর।

পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বরাবরই বৈরীভাবাপন্ন ছিলেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি। কলম্বিয়ার ফার্ক বা আয়ারল্যান্ডের আইআরএর মতো ‘সন্ত্রাসী’ চিহ্নিত অনেক সংগঠনকে সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ১৯৮৬ সালে বার্লিনের একটি নাইট ক্লাবে বোমা হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ত্রিপোলি ও বেনগাজিতে বোমা হামলা চালালে ৩৫ লিবীয় নাগরিক নিহত হয়। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রিগান গাদ্দাফিকে অভিহিত করেছিলেন ‘পাগলা কুকুর’ হিসেবে। ১৯৮৮ সালে লকারবিতে একটি বিমানে বোমা হামলার জন্য দায়ী করা হয় গাদ্দাফিকে। অনেক বছর ধরে তা অস্বীকার করলেও ২০০৩ সালে এই হামলার দায়দায়িত্ব স্বীকার করে গাদ্দাফি সরকার।

২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তৃতা করতে গিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে আল-কায়েদার মতোই সন্ত্রাসী সংগঠন বলে উল্লেখ করেন গাদ্দাফি। সেই সঙ্গে আফ্রিকার ঔপনিবেশিক শাসকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবেও দাবি করেন তিনি। ২০১০ সালে ইতালি সফরে গিয়ে হাজার হাজার তরুণীকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পরামর্শ দিয়েও তিনি বেশ আলোচিত হয়েছিলেন। চলতি বছরে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর তিনি এটাকে আল-কায়েদা ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেন। বিদ্রোহীরা ত্রিপোলি দখল করার আগে তাঁর শেষ ভাষণে তিনি এই বিদ্রোহকে লিবিয়া ধ্বংসের জন্য আল-কায়েদা ও পশ্চিমা বিশ্বের যৌথ কারসাজি বলে উল্লেখ করেছিলেন। আল-জাজিরা।

নোম চমস্কি: ইসরায়েলের জন্য সুনামি সতর্কবার্তা

মে মাসে ইসরায়েলের ব্যবসায়িক নেতাদের এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ইদান ওফার সবাইকে সতর্ক করেছিলেন যে, ‘আমরা খুব দ্রুতই দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে যাচ্ছি। আন্তর্জাতিক আইনভঙ্গকারী হিসেবে আমাদের যে অর্থনৈতিক দণ্ডের সম্মুখীন হতে হবে, তার প্রভাব ইসরায়েলের প্রতিটা পরিবারের উপর পড়বে।’ এই ব্যবসায়িক নেতাদের প্রধান ভাবনার বিষয় ছিল, এই সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশন। যেখানে ফিলিস্তিনের মানুষ নিজেদের রাষ্ট্রসত্তার বৈধতার দাবি তোলার পরিকল্পনা করছে। ঐ বৈঠকে আরও একজনের মুখে সতর্কবার্তা উচ্চারিত হয়েছিল। জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের সাবেক রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনকে একটা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পরের দিন থেকেই ইসরায়েলের খুব কষ্টকর ও নাটকীয় একটা দক্ষিণ আফ্রিকাকরণ শুরু হবে।’ মানে, ইসরায়েল পরিণত হবে একটা অপরাধী রাষ্ট্রে। যার উপর আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী দণ্ড প্রযোজ্য হতে পারে।

এটা এবং এরকম আরও কিছু বৈঠকে ব্যবসায়িক গোষ্ঠী সরকারকে তাগাদা দিলেন বিগত দিনের মত দ্রুত এই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে। যেমনটা তারা আগে করেছিল সৌদি (আরব লীগ) প্রস্তাবসমূহ বা ২০০৩ সালে অনানুষ্ঠানিক জেনেভা চুক্তিসমূহের সময়। যেখানে উচ্চপর্যায়ের ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিন নেতাদের মধ্যে একটা দুই রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিষয়ে বিস্তারিত চুক্তি হয়েছিল। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এটাকে স্বাগতও জানিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের অবহেলা ও ইসরায়েলের বিরুপ মনোভাবের কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
গত মার্চ মাসে ইসরায়েরের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইহুদ বারাক সাবধানবানী শুনিয়েছিলেন যে, যদি জাতিসঙ্ঘ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ঘোষণা করে, তাহলে ইসরায়েলর জন্য “সুনামি” অপেক্ষা করছে। তাঁর ভয় ছিল, পুরো বিশ্ব ইসরায়েলকে অপরাধী বানাবে শুধু এই কারণে নয় যে, তাঁরা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। বরং এইজন্যও যে, তারা জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃত একটা রাষ্ট্রে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত করেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এটা রুখবার জন্য উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক তত্পরতা চালাচ্ছে। যদি তারা ব্যর্থ হয়, তাহলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বৈধতা অবশ্যম্ভাবী।
১০০টিরও বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে বৈধতা দিয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলো ফিলিস্তিনের সাধারণ ঘোষণাপত্রকে ‘কূটনৈতিক মিশন ও দূতাবাসের’ মর্যাদা দিয়েছে। যা সাধারণত শুধু কোন রাষ্ট্রের জন্যই সংরক্ষিত থাকে। আমেরিকান জার্নাল অব ইন্টারন্যালনাল ল-এ এই তথ্যটা সরবরাহ করেছেন ভিক্টর কাতান। ইউনেসকো ও ডব্লিউএইচও ছাড়া জাতিসঙ্ঘের সংগঠনগুলোতেও প্রবেশাধিকার পেয়েছে ফিলিস্তিন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অসহযোগিতার ভয়টাও পাত্তা দেয় নি।
যদি রাষ্ট্রসত্তার স্বীকৃতির দাবি থেকে সরে না আসে, তাহলে ফিলিস্তিনকে সাহায্য-সহযোগিতা বন্ধের হুমকি দিয়ে গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে একটি বিল পাস করা হয়। ডেইলি টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সুশান রাইস সবাইকে সতর্ক করেছিলেন এই বলে যে, ‘জাতিসঙ্ঘকে টাকা জোগানোটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুব বেশি হুমকি ছিল না, যতটা এখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বৈধরুপ প্রাপ্তির দিকসমূহ চিন্তা করে হচ্ছে। আর এটা হচ্ছে সহযোগী রাষ্ট্রসমূহের সহায়তাতেই।’ জাতিসঙ্ঘে ইসরায়েলের নতুন রাষ্ট্রদূত তার দেশের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে জাতিসঙ্ঘের স্বীকৃতি সহিংসতা ও যুদ্ধে রুপ নিতে পারে।
জাতিসঙ্ঘ হয়তো ফিলিস্তিনকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানা ধরেই রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে পারে। সেক্ষেত্রে এই রাষ্ট্রের মধ্যে গোলান হাইটস, পশ্চিম তীর ও গাজাও অন্তর্ভূক্ত হবে।
১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে, জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের আদেশ ভঙ্গ করে ইসরায়েল এই হাইটস অধিগ্রহণ করেছিল। পশ্চিম তীরে ইসরায়েলকে সমর্থন যোগানোর জন্য যে বন্দোবস্ত ও আইন-কানুন জারি আছে, তা পরিস্কারভাবেই আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক আদালত ও নিরাপত্তা পরিষদও এটা স্বীকার করেছে।
২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারীতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যৌথভাবে গাজার উপর অবরোধ জারি করে। এর কারণ ফিলিস্তিনের নির্বাচনে ‘ভুলপক্ষ’ হামাস জয়লাভ করেছিল। যাদের পরিচিতি স্বাধীনচেতা হিসেবে। ২০০৭ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত একটা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর এই অবরোধ আরও জোরদার করা হয়েছিল।
২০১০ সালে রেড ক্রস আন্তর্জাতিক কমিটি এই গাজা অবরোধের তীব্র নিন্দা জানিয়েছিল। যারা এ ধরণের ইস্যু নিয়ে খুব কমই কথা বলে। বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রেডক্রস অবরুদ্ধ গাজা পরিস্থিতির একটা বিষণ্ন চিত্র এঁকেছিল এভাবে, ‘হাসপাতালে প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই, প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুত্ থাকে না, পানযোগ্য পানির অপর্যাপ্ততা এবং অবশ্যই এই সমগ্র জনগোষ্ঠী কারারুদ্ধ।’
১৯৯১ সালে গাজাকে পশ্চিম তীর থেকে পৃথক করার পরিকল্পনা শুরু করার পর থেকেই এই ধরণের অপরাধমূলক অবরোধ যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের নীতি-নির্ধারণে বিস্তর প্রভাব রেখেছে। এর মাধ্যমে তারা এটা নিশ্চিত করে যে, যদি কখনো কোন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র মাথা তুলে দাঁড়ায়, তাহলে তার অংশগুলো যেন ইসরায়েল ও জর্ডানের মতো শত্রুতাপূর্ণ ক্ষমতার আওতায় থাকে। ১৯৯৩ সালে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) মধ্যে স্বাক্ষরিত অসলো চুক্তিতে গাজাকে পশ্চিম তীর থেকে পৃথক করার সুপারিশ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের এই প্রত্যাখ্যানবাদের ফলে আরও একটা আসন্ন হুমকির মুখে আছে ফ্লোটিলা, যারা চিঠিপত্র ও জনহিতকর সাহায্য নিয়ে এনে গাজার এই অবরোধকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চেয়েছিল। ২০১০ এর মে মাসে এ ধরণের একটা উদ্যোগ ইসরায়েলি কমান্ডোদের আক্রমণের মুখে পড়েছিল। গাজার আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমার মধ্যে পরিচালিত এই হামলায় মারা গিয়েছিল নয়জন যাত্রী। যা একটা বড় অপরাধ। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া প্রায় সবাই এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছিল।
ইসরায়েলের বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের বুঝিয়েছে যে, কমান্ডোরা নির্দোষ ছিল। হামলাকৃত ঐ জাহাজের যাত্রীরাই আগে আক্রমন চালিয়েছিল। কী ধরণের আত্মবিধ্বংসী অযৌক্তিকতা ইসরায়েলকে কুরে কুরে খাচ্ছে, এটা তার একটা চিহ্ন।
এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ফ্লোটিলা তত্পরতা বন্ধ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। হিলারি ক্লিনটন অপ্রত্যক্ষভাবে সহিংসতাকে আরও বৈধতা দিয়েছেন। বলেছেন, যদি ফ্লোটিলা ‘ইসরায়েলের জলসীমায় ঢুকে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করে’ তাহলে ‘ইসরায়েলিদের আত্মরক্ষা করার পূর্ণ অধিকার আছে।’
গ্রীস তাদের নৌবন্দর থেকে এই নৌযানগুলো ছেড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করার ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছিল। যদিও ক্লিনটনের মতো, গ্রীসও খুব সঠিকভাবেই গাজার সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করেছিল। অবশ্য ২০০৯ সালের জানুয়ারীতে গ্রীস একটা স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়েছিল। সেসময় গাজার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নৃশংস সহিংসতা চলাকালে তারা যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের বন্দর ব্যবহার করতে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
ফ্লোটিলা কোন উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জাতিসঙ্ঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান এজেন্সির মুখপাত্র ক্রিস গানেস বলেন, ‘যদি ফিলিস্তিনে কোন মানবাধিকার সংকট না-ই থাকে, যদি সেখানে কোন ধরণেরই সংকট না থাকে, তাহলে ফ্লোটিলারও কোন প্রয়োজন পড়বে না। গাজার ৯৫ ভাগ পানি পাণ করার উপযোগী না। সেখানে ৪০ ভাগ রোগই পানিবাহিত। শ্রমিকদের ৪৫.২ ভাগ বেকার। তাদের টিকে থাকার জন্য ৮০ ভাগেরও বেশি নির্ভর করতে হয় বাইরের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য। আর এই পরিস্থিতির করুণ অবনতি হয়েছে গাজায় অবরোধ জারির পর থেকে। এই অবরোধ তুলে নেওয়া হোক। তাহলে আর কোন ফ্লোটিলারও প্রয়োজন পড়বে না।’
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি বা সাধারণভাবে যে কোন অসহিংস কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ তাদেরকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়, যারা সহিংসতাকে একচেটিয়াভাবে দখলে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল, নিজেদের একেবারে ক্ষমার অযোগ্য একটা অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে: দখলদারিত্ব ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড এবং একটা কূটনৈতিক বন্দোবস্ত বা ঐক্যমত্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা।

যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি ইয়েলোস্টোন আগ্নেয়গিরি

২০১২ সিনেমায় দেখানো এই দৃশ্য বাস্তবেও তৈরি হওয়ার মতো অনেক উপাদান ইয়েলোস্টোন পার্কের সুপ্ত অতিকায় আগ্নেয়গিরিতে আছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ছবি: ওয়েবসাইট

বিশ্ব মোড়ল, পরাক্রমশালী ও মহাশক্তিধর—আরও কত উপাধি যুক্তরাষ্ট্রের! তাবত দুনিয়ায় আধিপত্যকারী এই দেশটির জন্য এক ভয়ংকর বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। আগ্নেয়গিরির প্রচণ্ড অগ্ন্যুত্পাতে কোনো একসময় তাদের সুখের রাজ্য বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে।
এটা কোনো জ্যোতিষীর ভবিষ্যদ্বাণী নয়, বিজ্ঞানীদের তথ্য-প্রমাণনির্ভর যুক্তি। একদল মার্কিন বিজ্ঞানী ও আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ বলছেন, আমেরিকার ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের অতিকায় আগ্নেয়গিরিটি ধীরে ধীরে তার পেট থেকে লাভা উদিগরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আগ্নেয়গিরিটির পাথরমিশ্রিত গলিত লাভাগুলো দীর্ঘদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও ২০০৪ সাল থেকে সেটা রেকর্ড হারে জেগে উঠছে। রেকর্ড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত তিন বছরে আগ্নেয়গিরির লাভাস্তর তিন ইঞ্চি করে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, ইয়েলোস্টোন আগ্নেয়গিরির লাভা উদিগরণে দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে। জ্বলন্ত লাভা ছড়িয়ে পড়বে আকাশজুড়ে। বিষাক্ত ছাইয়ের ১০ ফুট পুরু আস্তরণ তৈরি হবে আশপাশের প্রায় এক হাজার মাইলজুড়ে। কোটি কোটি মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়তে হবে। ভেঙে পড়তে পারে বিমান চলাচলের ব্যবস্থা।
ইয়েলোস্টোন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাতের ভয়াবহতা সাম্প্রতিক আইসল্যান্ড আগ্নেয়গিরি উদিগরণকেও বহুগুণে ছাড়িয়ে যেতে পারে। এমনকি ১৯৮০ সালে মাউন্ট হেলেনস আগ্নেয়গিরির উদিগরণ থেকেও হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী হবে ইয়োলোস্টোন আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ।
মানুষের ইতিহাসে ছয় লাখ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এ ধরনের একটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত না থাকায় এ মুহূর্তে তাঁরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
উথাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইয়েলোস্টোন আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ বব স্মিথ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, ‘আগ্নেয়গিরির লাভাস্তর ওপরে ওঠার ঘটনা খুবই আশঙ্কাজনক। প্রথম দিকে আমরা শুধু এটা থেকে উদিগরণ ঘটতে পারে কি না সেদিকেই নজর রাখছিলাম। একসময় আমরা দেখলাম, গলিত লাভাটা ১০ কিলোমিটার নিচে আছে। সে জন্য আমরা অত বেশি চিন্তিত ছিলাম না। কিন্তু গলিত লাভার এই স্তরটা যদি দুই বা তিন কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসে, তাহলে সেটা আমাদের জন্য বড় ধরনের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক রবার্ট স্মিথ সম্প্রতি এই আগ্নেয়গিরি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে, ভূগর্ভস্থ স্তরের পুরোটাই গলিত পাথর দিয়ে ভর্তি। কিন্তু আমাদের কোনো ধারণা নেই যে কবে বা কখন এই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাত ঘটতে পারে অথবা গলিত পাথরগুলোর চঞ্চলতা স্থিমিত হয়ে আগ্নেয়গিরিটা আবার ঘুমিয়ে পড়তে পারে।—ডেইলি মেইল অনলাইন।