Posts Tagged ‘ মানসিক অসুস্থতা ’

চিকিৎসা যেখানে হায়েনার সঙ্গে বসবাস

somalia chained man

যুদ্ধবিধ্বস্ত সোমালিয়ায় মানসিক অসুস্থতার হার খুবই বেশি। পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটির প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন ভোগে মানসিক অসুস্থতায়। বিশ্বজুড়ে যে হারটা দশজনে একজন। বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধের ফলে সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাও আছে খুবই বিপর্যস্ত অবস্থায়। বেশিরভাগ রোগীই কোনো চিকিৎসা সাহায্য পায় না। প্রথাগত নিয়ম অনুসারে এই ধরনের ব্যক্তিদের উপর চালানো হয় নিষ্ঠুর চিকিৎসা পদ্ধতি।

সোমালিয়াতে সামাজিকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ব্যক্তিদের উপর কোনো আত্মা ভর করেছে। এবং তাদের সামনে একমাত্র পথটাই থাকে যে, ঐ ব্যক্তিকে জোরপূর্বক বেঁধে ফেলা ও শেখকে (স্থানীয় ওঝা) খবর দেওয়া। এই শেখরা এরপর ঐ ব্যক্তির উপর প্রয়োগ করতে থাকেন বিচিত্র সব চিকিৎসা পদ্ধতি। শেকল দিয়ে বেঁধে রাখাটা খুবই সাধারণ ব্যাপার। কাউকে কাউকে এমনকি সারাজীবনই বেঁধে রাখা হয় বলে জানতে পেরেছে ইতালিয়ান একটি এনজিও। কখনো কখনো আত্মাকে তাড়ানোর জন্য রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় হায়েনার সঙ্গে একই খাঁচায় রাত কাটানোর জন্য।

caged_hyena_somalia
সোমালিয়ানরা বিশ্বাস করে যে, হায়েনা মানুষের সবকিছুই দেখতে পায়, অশুভ আত্মার উপস্থিতিও। আর হায়েনারাই এই মানসিক সমস্যায় ভোগা মানুষদের মধ্যে থেকে অশুভ শক্তিকে বিতাড়িত করতে পারবে, তাদেরকে খামচে, কামড়ে দিয়ে। নির্মম এই পদ্ধতির শিকার অনেক মানুষ প্রাণও হারিয়েছেন।
আশ্চর্য্যজনক ব্যাপার যে, বর্বর এই চিকিৎসা পদ্ধতিটা বেশ দামীও বটে। পরিবারের প্রিয়জনকে হায়েনার সঙ্গে একই খাঁচায় ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য খরচ করতে হয় ৫৬০ ডলার। যেটা সোমালিয়ানদের গড় বাৎসরিক আয়ের চেয়েও বেশি।
সহিংসতায় পূর্ণ দেশটির যে অংশগুলো বেশি যুদ্ধবিধ্বস্ত, সেখানকার বেশিরভাগ মানুষই মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। খুবই খারাপ কোনো অভিজ্ঞতার পর চাপজনিত মানসিক ব্যাধি হয়ে পড়ে খুবই সাধারণ ব্যাপার। আর সোমালিয়ার সমাজে মানসিক বিপর্যস্ততা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় প্রথাগত পদ্ধতির পথেই হাঁটতে হয় সেখানকার মানুষদের। কারো মধ্যে অস্বাভাবিকতার কোনো ছাপ অনুমান করলেই সবাই উত্তেজিত হয়ে পড়ে তাকে বেঁধে ফেলতে। মোগাডিশুর রেডিও স্টেশনে দিনে তিনবার করে চলা বিজ্ঞাপনটাতে যেমন দেখানো হয়েছে: সবাই চিৎকার করে বলছে, “ও পাগল হয়ে গেছে! ও দৌড়ে পালাচ্ছে! বেঁধে ফেল, বেঁধে ফেল!” সোমালিয়াতে এই দৃশ্যটা খুবই সুপরিচিত।
তবে বিজ্ঞাপনের পরের দৃশ্যটি কিছুটা অন্যরকম, যেটা আশার সঞ্চার করেছে আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে। যেখানে একটি কণ্ঠকে বলতে শোনা যায়, “শেকল দিয়ে বেঁধ না। তাকে ডা. হাবের হাসপাতালে নিয়ে চল! কেউ যদি মানসিক সমস্যায় ভোগে, তাহলে তাকে বেঁধ না, নিয়ে যাও ডা. হাবের কাছে। তিনি সাহায্য করবেন।”

dr hab_Somalia
ডা. হাবের এই কর্মকা-টা শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালে এরকম একটা ঘটনা স্বচক্ষে দেখার পর। তিনি দেখেছিলেন কিছু নারীকে সড়কে তাড়া করছে একদল তরুণ। এই ঘটনাটাই নাড়া দিয়েছিল হাবকে। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ‘আমি সোমালিয়ার প্রথম মানসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করব।’ মোগাডিশুতে হাবের পাবলিক হেলথ হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সোমালিয়ার ছয়টি আলাদা জায়গায় এটার শাখা আছে।
ডা. হাবের পুরো নাম আবদি রহমান আলি আওয়ালে। সত্যিকারের কোনো মানসিক রোগের চিকিৎসকও তিনি নন। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে তিন মাসের একটা বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ নিয়েই তিনি মিশনটা শুরু করেছিলেন। এবং তাঁর দাবি অনুযায়ী, তিনি বহুবিধ বিষন্নতা থেকে শুরু করে স্কিজোফ্রেনিয়া পর্যন্ত চিকিৎসা করতে পারেন। একই সঙ্গে এসম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজটাও করে যাচ্ছেন ডা. হাব। তিনি বলেছেন, ‘আমরা সবাইকে দেখানোর চেষ্টা করছি যে, (প্রথাগত পদ্ধতিগুলো) একেবারেই অর্থহীন। মানুষ আমাদের রেডিও বিজ্ঞাপন শুনছে আর তারা জানছে যে, মানসিক অসুস্থতাও অন্য একটা অসুখের মতো যেটার চিকিৎসা প্রয়োজন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসারে।’- বিবিসি অনলাইন

Somaliya mental illness treatment

অপটোজেনেটিকস: মস্তিস্ক নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার নাকি মনোবিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত?

optogenetics-neuron-640x353গত দশকে বিজ্ঞান জগতের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র ছিলস্নায়ুবিজ্ঞান। মানুষের মস্তিস্ক সম্পর্কে জানা-বোঝা তৈরি হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণাকর্ম ব্যাপকভাবে শুরু হয় ৯০-এর দশকে নতুন এক প্রযুক্তি আবিস্কারের পর। এমআরআই নামক এই প্রযুক্তির কল্যানে আমরা এখন মস্তিস্কের সকল কার্যকলাপের পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাই। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেই গত বছরের শেষে প্রথমবারের মতো মানব মস্তিস্কের পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র হাজির করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এবার স্নায়ুবিজ্ঞানের জগতে হয়তো আরেকটি নতুন বিপ্লব সাধিত হতে যাচ্ছে। যুগান্তকারী এই নতুন প্রযুক্তির ব্যপকতা হতে পারে অনেক অনেক বেশি। ‘অপটোজেনেটিকস’ নামের এই প্রযুক্তিটির মাধ্যমে যে কোন প্রাণীর মস্তিস্কের নির্দিষ্ট কোন কোষ বা নিউরনের কার্যকলাপ ইচ্ছামাফিক বন্ধ বা চালু করা সম্ভব হবে। আক্ষরিক অর্থেই মস্তিস্ক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে এই প্রযুক্তি দিয়ে। আবার রহস্যময় মস্তিস্ক সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়ার পরিধি অনেকখানি বাড়িয়ে দিতে পারে এই প্রযুক্তির ব্যবহার। নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে মনোবিজ্ঞানে।

অপটোজেনেটিকস এর ভাবনাটা প্রথম আসে ১৯৭৯ সালে। যখন ডিএনএর গঠন আবিস্কারকারী তিন বিজ্ঞানীর একজন ফ্রান্সিস ক্রিক বলেছিলেন যে, মস্তিকের একটা নির্দিষ্ট কোষকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এটা শেখার চেষ্টা করা উচিৎ স্নায়ুয়ুবিজ্ঞানীদের। কল্পনা করুন যে, একটা প্রাণীর মস্তিস্কের কোন কোন নিউরন আপনি চালু অথবা বন্ধ করে দিতে পারছেন, বাইরে থেকে। শুনে মনে হচ্ছে যেন, একটা জলজ্যান্ত প্রাণীকে রোবট বানিয়ে ফেলার মতো বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মতো। তাই না? কিন্তু ৩০ বছর পরের কথা কল্পনা করুন, হয়তো এই অপটোজেনেটিকসের অস্তিত্বটাই হবে বাস্তবতা।
বর্তমান সময়েই আমরা কোন প্রাণীর মস্তিস্কে কিছু ছোট ইলেকট্রোড বসিয়ে তার স্নায়ুগুলোকে উদ্দীপ্ত করতে পারি। এটা করা হয় তড়িৎপ্রবাহের মাধ্যমে। খুবই ছোট, সুক্ষ ইলেকট্রোডও আমাদের কাছে আছে। কিন্তু এগুলো দিয়ে কাজ করাটা খুবই নির্দয়ের মতো ব্যাপার হয়ে যায়। ক্রিক অনুমান করেছিলেন যে, আলোকরশ্মি ব্যবহার করে এই কাজটা করা যায়। সেটাই সত্যি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপটোজেনেটিকস প্রযুক্তিতে প্রথমে কোন প্রাণীর মস্তিস্কে একটা ফাইপার অপটিক যন্ত্র স্থাপন করা হয়। তারপর সেখান থেকে আলোকরশ্মি পাঠিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয় মস্তিস্কের নির্দিষ্ট কোন নিউরনকে।
কিন্তু শুধু মস্তিস্কে আলোকরশ্মি নিক্ষেপ করতে পারাটাই যথেষ্ট নয়। এই পদ্ধতিতে কাজ করতে গেলে প্রথমেই নিউরনগুলোকে নতুনভাবে বিন্যস্ত করতে হবে যেন তারা আলোক সংবেদী হয়ে ওঠে। কারণ সাধারণ অবস্থায় মানুষের নিউরণে এই আলোক সংবেদী প্রোটিনের উপস্থিতি থাকে না। এই অধ্যায়ের কাজটা সম্ভব হয়েছে নতুন ধরণের এই প্রোটিনের বিস্ময়কর আবিস্কারের পর। এই প্রোটিন ব্যবহার করে নিউরনগুলোকে আলোক সংবেদনশীল করে তোলা সম্ভব, যেন তাদেরকে চালু বা বন্ধ করা যায়।
ফলে এবার বিজ্ঞানীদের ভাবতে হলো যে, কিভাবে এই প্রোটিন নিউরনে প্রবেশ করানো যায়। এই অধ্যায়ের কাজটা করা হয় একধরণের জিন প্রকৌশলীর মাধ্যমে। যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘ট্রান্সফেকশন’। এই প্রক্রিয়ায় নিউরনের মধ্যে ‘ভেকটর’ নামক একধরণের ভাইরাসের মতো উপাদান ঢোকানো হয় এবং এর মাধ্যমে নিউরণে কিছু জীনগত উপাদান প্রবেশ করানো হয়। যার ফলে নিউরনগুলো এই আলোক সংবেদী প্রোটিন তৈরি করা শুরু করে।
এই পুরো প্রক্রিয়ার ফসল হচ্ছে একটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মতো প্রযুক্তি। জীবিত ও হেঁটেচলে বেড়ানো প্রাণীদের মস্তিস্কে থাকবে জীনগতভাবে পরিবর্তিত নিউরন, যেগুলো আমরা নিজেদের ইচ্ছামতো বন্ধ বা চালু করতে পারব। অপটিক ও জেনেটিক্স এর এই সম্মিলিত ব্যবহার থেকেই প্রযুক্তিটি তার নাম পেয়েছে, ‘অপটোজেনেটিকস’।

opto1
কিন্তু যুগান্তকারী এই প্রযুক্তিটা কিভাবে কাজ করে সেটার থেকেও উত্তেজনাকর বিষয় হলো, এই প্রযুক্তিটা দিয়ে কী করা হবে। বিজ্ঞানীরা এটা একারণে উদ্ভাবন করেননি যেন, কোন প্রাণীর মস্তিস্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়া যায়। এমআরআইয়ের মতো তাঁরা এটা বানিয়েছেন মস্তিস্ক সম্পর্কে আরও ভালো বোঝাপড়া তৈরি করার উদ্দেশ্যে। মস্তিকের নির্দিষ্ট কোন নিউরন উদ্দীপিত করে তাঁরা বুঝতে চান যে, কিভাবে এই মস্তিস্ক কাজ করে। ইতিমধ্যেই অপটোজেনেটিকস-এর প্রায়োগিক কিছু ব্যবহার করে সন্তোষজনক সাফল্যও অর্জন করেছেন স্নায়ু ও মনোবিজ্ঞানীরা।
মস্তিস্কে নিউরন কিভাবে ডোপামিন তৈরি করে এবং সেটা কিভাবে পুরস্কার বা আনন্দ পাওয়ার অনুভূতি জোগায় এটা বোঝার জন্য বিজ্ঞানীরা অপটোজেনেজিকসের ব্যবহার করেছেন। এটা ভালোমতো বুঝতে পারলে বিষন্নতা জনিত চিকিৎসায় ঔষুধের কার্যকারীতা সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাবেন চিকিৎসকরা।
আরেকটি ক্ষেত্রে, পার্কিনসন রোগে আক্রান্ত একটি প্রাণী মস্তিস্কের নির্দিষ্ট কিছু কোষ উদ্দীপ্ত করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। যে রোগে মস্তিস্কের তথ্য প্রক্রিয়াকরণের সময় ব্যাঘাত ঘটে। এই গবেষণা থেকে বিজ্ঞানীরা নতুন ধারণা পেয়েছেন রোগটি সম্পর্কে এবং এর চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে।
স্কিজোফ্রেনিয়া এধরণেরই আরেকটি মানসিক ভারসাম্যহীনতা যেখানে মস্তিস্কের তথ্য প্রক্রিয়াকরণ পর্বটি জড়িত। মস্তিকের অভ্যন্তরীণ একটা কার্য্যসাধন পদ্ধতি কাজ না করার কারণেই একজন মানুষ বুঝতে পারে না যে, কাল্পনিক কোন চরিত্রের উপস্থিতি, কারও কণ্ঠস্বর শুনতে পাওয়া এই জাতীয় ভ্রমগুলো বাস্তব না, একান্তই তাঁর কল্পনাপ্রসূত। স্বাভাবিক একটা মানুষের মস্তিস্কে ‘গামা অসকিলেশন’ নামক একটি ক্রিয়ার উপস্থিতি থাকে। স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত মানুষের মস্তিস্কে এটি থাকে ভারসাম্যহীন অবস্থায়। অপটোজেনেটিকস প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই গামা অসকিলেশনের কার্যকলাপ সম্পর্কে আরও পরিস্কার বোঝাপড়া তৈরি করা সম্ভব বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। যার ফলে বিভিন্ন ধরণের মানসিক ভারসাম্যহীনতা সম্পর্কে ভালো ধারণা তৈরি করতে সক্ষম হওয়া যাবে।
অপটোজেনেটিকস প্রযুক্তি দিয়ে আমরা বদলে ফেলতে পারি আমাদের মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসা পদ্ধতি। এমনকি আমরা জানা শুরু করতে পারি যে, কেন আমরা মানুষ হিসেবে এইরকম স্বতন্ত্র হয়ে উঠতে পেরেছি। বুঝে ওঠা শুরু করতে পারি আমাদের মস্তিস্কের অকল্পনীয় ও রহস্যময় কর্মক্ষমতাকে।

কিছুটা পাগলাটে হওয়া প্রসঙ্গে জোসুয়া ওয়াল্টার্স

বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত কৌতুকাভিনেতা জোসুয়া ওয়াল্টার্স হেঁটেছেন মানসিক অসুস্থতা আর মানসিক দক্ষতার মাঝে সূক্ষ দড়ির উপর। তাঁর এই রসাত্মক, চিন্তার উদ্রেগকারী বক্তৃতায়, তিনি প্রশ্ন করেছেন: ঔষুধপত্রের মাধ্যমে উন্মাদনা নিয়ন্ত্রণে রাখা আর ম্যানিক পর্বের সৃজনশীলতার উপর সওয়ার হওয়ার মধ্যে সঠিক সামঞ্জস্যটা কী হতে পারে?

আমার নাম জোসুয়া ওয়াল্টার্স। আমি একজন শিল্পী।

কিন্তু এই শিল্পী হওয়ার পাশাপাশি, আমাকে সনাক্ত করা হয়েছে একজন বাইপোলার ডিসঅর্ডার হিসেবে। আমি এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছি। কারণ মঞ্চে যত বেশি পাগলাটে হই, ততই বেশি আনন্দদানকারী হয়ে উঠি আমি। আমার বয়স যখন ১৬ বছর, তখন সান ফ্রান্সিসকোতে প্রথমবারের মতো আমার উন্মাদনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে, যেখানে আমার নিজেকে মনে হয়েছিল যীশু খ্রীষ্ট। হয়তো আপনারা এটাকে খুবই ভীতিকর বলে ভাবছেন। কিন্তু সত্যি কথা হলো, এমন কোন ড্রাগস নেই, যা আপনাকে সেই উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে, যেখানে আপনার নিজেকে যীশু খ্রীষ্ট মনে হবে। (হাসি)

এরপর আমাকে একটা মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। আর সেখানে, সবাই নিজেদের এক-মানুষের অনুষ্ঠান উপস্থাপন করছে। (হাসি) সেখানে এখানকার মতো কোন দর্শক নেই, তাদের প্রস্তুতিমূলক মহড়ার সময় নির্ধারণ করার জন্য। তারা শুধুই অনুশীলন করছে। একদিন হয়তো তারা এখানে আসতে পারবে। তো, আমি যখন সেখান থেকে বের হলাম, তখন আমার রোগ নির্নয় করা হলো আর মনোরোগ চিকিত্সক আমাকে ঔষুধপত্র দিলেন। “আচ্ছা, জোস, তোমাকে কিছু, তোমাকে কিছু জাপ্রেক্সা দেওয়া যাক। ঠিক আছে? আপাতত আমার কলমে তো এটাই আসছে!” (হাসি) আপনাদের মধ্যেও অনেকে এই লাইনে আছেন। আমি দেখতে পাচ্ছি। আমি আপনাদের গুঞ্জন শুনতে পাচ্ছি। তো, আমার স্কুলের প্রথমার্ধটা ছিল এই ম্যানিক পর্বের সঙ্গে সংগ্রাম, আর দ্বিতীয় পর্বে ছিল এইসব ঔষুধপত্রের অধিক প্রয়োগ। যার ফলে আমি হাই স্কুলের অনেক সময় ঘুমিয়েই পার করেছি। দ্বিতীয়ার্ধটা ছিল একটা তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থা, ক্লাসেও। যখন আমি সেখান থেকে বের হলাম, তখন আমার সামনে সুযোগ আসল বেছে নেওয়ার। হয় আমি অগ্রাহ্য করতাম আমার মানসিক অসুস্থতাকে বা সাদরে গ্রহণ করতাম আমার মানসিক দক্ষতাকে।

ইদানিং একটা আলোড়ন উঠেছে এই মানসিক অসুস্থতাকে ইতিবাচক হিসেবে পূর্ণবিবেচনা করার জন্য। অন্ততপক্ষে এটার হাইপোম্যানিক এলাকাটাকে। আপনাদের মধ্যে যারা জানেন না যে, এই হাইপোম্যানিয়া কী, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, এটা একটা নিয়ন্ত্রণহীন ইঞ্জিনের মতো। হয়তো একটা ফেরারি গাড়ির ইঞ্জিন, যেখানে কোন ব্রেক নেই। এখানকার অনেক বক্তার মধ্যে, আপনাদের অনেকের মধ্যেই এই সৃজনশীল প্রান্তটা আছে। আপনি হয়তো জানেন আমি কী নিয়ে কথা বলছি। আপনি এমন কোন কিছু করার জন্য তাড়িত হয়েছেন, যেটা সবাই আপনাকে বলেছে, সম্ভব না।

জন গার্টনারের একটা বই আছে। বইটার নাম “The Hypomanic Edge”। যেখানে তিনি বলেছেন, ক্রিস্টোফার কলোম্বাস, টেড টার্নার, স্টিভ জবস আর তাঁদের মতো প্রায় সব বিজনেস গুরুদেরকেই এই প্রান্তসীমাটার সঙ্গে পাল্লা দিতে হয়েছে। ৯০ এর দশকের মধ্যভাগে আরেকটা বই লিখেছিলেন কে রেডফিল্ড জ্যামিসন। সেটার নাম ছিল “Touched With Fire”। সেখানে তিনি একটা  সৃজনশীলতার দৃষ্টিকোন থেকে দেখছিলেন যে, কিভাবে মোজার্ট, বিটোফেন, ভ্যান গগ এই ম্যানিক ডিপ্রেসনের সঙ্গে জীবন কাটিয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছিলেন। তো, এই অসুস্থতার সবকিছুই খুব ইতিবাচক নয়। এখন, খুব সম্প্রতি, এই এলাকাটাতে আরও কিছু অগ্রগতি হয়েছে। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটা লেখা এসেছিল, যার শুরুটা হয়েছিল “কিছুটা পাগলাটে হওয়া” দিয়ে। যেখানে বলা হয়েছিল, কিছু বিনিয়োগকারী এমন ধরণের কিছু ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা খুঁজছেন, যাদের মধ্যে এই ধরণের কিছু পাগলামির ধাঁচ আছে, আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি কী বলতে চাচ্ছি। তাদেরকে হয়তো সম্পূর্ণ বাইপোলার ডিসঅর্ডারের লক্ষণযুক্ত না হলেও হবে। কিন্তু তাদের এই বাইপোলার ধারাটা থাকতে হবে। একদিকে আপনি নিজেকে যীশু খ্রীষ্ট ভাবতে পারেন। আর অন্যদিকে তারা হয়তো আপনাকে অনেক টাকার মালিক বানিয়ে দিতে পারে। (হাসি) এবার আপনার সিদ্ধান্ত। আপনার বেছে নেওয়ার পালা। আর সবাই এর মাঝখানেই আছে। সবাই আছে এর মাঝামাঝিতে।

তো, হয়তো, উন্মাদ হওয়ার মতো কোন জিনিস আসলে নেই। আর আপনার কোন একটা মানসিক অসুস্থতা সনাক্ত করা হয়েছে মানেই আপনি পাগল, তা না। কিন্তু হয়তো এর মানে আপনি সেইসব বিষয়ে অনেক স্পর্শকাতর, যেগুলো অন্য মানুষ দেখতে পায় না বা অনুভব করতে পারে না। হয়তো কেউই সত্যি সত্যি উন্মাদ না। হয়তো আমাদের সবারই কিছু পরিমাণ পাগলামির ধাঁচ আছে। কার কী পরিমাণ আছে, সেটা নির্ভর করে আপনি এই ধারার কোথায় আছেন তার উপরে। আর আপনি কী পরিমাণ ভাগ্যবান, তার উপরে। ধন্যবাদ (হাততালি)