Posts Tagged ‘ ভিন্নমতাবলম্বী ’

গাদ্দাফি-অধ্যায়ের অবসান

১৯৬৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রায় ৪২ বছর ধরে তেলসমৃদ্ধ দেশ লিবিয়া শাসন করেছেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহ দানা বাঁধতে শুরু করার পর প্রতিটি ঘর খুঁজে খুঁজে বিদ্রোহীদের দমন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন এই স্বৈরশাসক। কিন্তু এই হুমকিতে দমে না গিয়ে গাদ্দাফি সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক প্রতিরোধ শুরু করে বিদ্রোহীরা। টানা সাত মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংঘর্ষের পর পতন ঘটে গাদ্দাফি সরকারের। লিবিয়া পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ (এনটিসি)। এর পর থেকেই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান গাদ্দাফি। তাঁর জন্মশহর সারতে গাদ্দাফি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার তিনি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে এনটিসি।

১৯৪২ সালে সারতের উপকূলীয় অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন গাদ্দাফি। বেনগাজি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হলেও পরে সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য পড়াশোনায় ইতি টানেন তিনি। ১৯৬৯ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে রক্তপাতহীন এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতা দখল করেন। ইসলামী মূল্যবোধ ও সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতার মিশেলে তিনি গড়ে তোলেন তাঁর রাজনৈতিক দর্শন। তিনি তাঁর নতুন প্রণীত এই রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের বিকল্প হিসেবেই বর্ণনা করেছিলেন। তাঁর প্রস্তাবিত ‘ইউনাইটেড স্টেটস অব আফ্রিকা’র ধারণাটা বাস্তবে রূপ না পেলেও ২০০২ সালে আফ্রিকান ইউনিয়ন গঠনে বেশ ভালোই প্রভাব রেখেছিল। ২০০৯-২০১০ সাল পর্যন্ত এই ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন গাদ্দাফি।

নিজ দেশে ভিন্নমতাবলম্বীদের কঠোর হস্তে দমনের জন্য কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন এই সামরিক স্বৈরশাসক। তাঁর শাসনামলে হাজার হাজার লোককে মৃত্যুদণ্ড ও কারাগারে পাঠানো হয় বলে অভিযোগ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর।

পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বরাবরই বৈরীভাবাপন্ন ছিলেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি। কলম্বিয়ার ফার্ক বা আয়ারল্যান্ডের আইআরএর মতো ‘সন্ত্রাসী’ চিহ্নিত অনেক সংগঠনকে সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ১৯৮৬ সালে বার্লিনের একটি নাইট ক্লাবে বোমা হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ত্রিপোলি ও বেনগাজিতে বোমা হামলা চালালে ৩৫ লিবীয় নাগরিক নিহত হয়। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রিগান গাদ্দাফিকে অভিহিত করেছিলেন ‘পাগলা কুকুর’ হিসেবে। ১৯৮৮ সালে লকারবিতে একটি বিমানে বোমা হামলার জন্য দায়ী করা হয় গাদ্দাফিকে। অনেক বছর ধরে তা অস্বীকার করলেও ২০০৩ সালে এই হামলার দায়দায়িত্ব স্বীকার করে গাদ্দাফি সরকার।

২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তৃতা করতে গিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে আল-কায়েদার মতোই সন্ত্রাসী সংগঠন বলে উল্লেখ করেন গাদ্দাফি। সেই সঙ্গে আফ্রিকার ঔপনিবেশিক শাসকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবেও দাবি করেন তিনি। ২০১০ সালে ইতালি সফরে গিয়ে হাজার হাজার তরুণীকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পরামর্শ দিয়েও তিনি বেশ আলোচিত হয়েছিলেন। চলতি বছরে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর তিনি এটাকে আল-কায়েদা ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেন। বিদ্রোহীরা ত্রিপোলি দখল করার আগে তাঁর শেষ ভাষণে তিনি এই বিদ্রোহকে লিবিয়া ধ্বংসের জন্য আল-কায়েদা ও পশ্চিমা বিশ্বের যৌথ কারসাজি বলে উল্লেখ করেছিলেন। আল-জাজিরা।

চীনে জনপ্রিয় ব্লগার নিঁখোজ!

চীনের জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্লগার ও বিশ্লেষক ইয়াং হেনজুনকে গত রবিবার থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভিন্নমত প্রকাশের জন্য চীনা সরকার তাঁকে আটক করেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। খুব দ্রুত তাঁর অবস্থান সম্পর্কে সবাইকে জানানোর জন্য চীনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

চীনা বংশোদ্ভূত ইয়াং হেনজুন বর্তমানে একজন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। গত রবিবার তিনি গুয়ানংজু এয়ারপোর্ট থেকে তাঁর ব্লগ পরিচালককে ফোন করে জানান যে, তিনজন লোক তাঁকে অনুসরণ করছে। এরপর থেকেই তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চীনা কর্তৃপক্ষই তাঁকে আটক করেছে বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে জানিয়েছেন হেনজুনের ঘনিষ্ঠরা।

হেনজুনের এই নিঁখোজ হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অ্যামনেস্টির এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সহ পরিচালক ক্যাথরিন বাবের। তিনি বলেছেন, ‘হেনজুনের উধাও হওয়ার ঘটনাটা খুবই উদ্বেগজনক। গত কয়েক মাসে শান্তিপূর্ণ সংস্কারবাদী অনেক রাজনৈতিক কর্মী এভাবে উধাও বা গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন।’

মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বিক্ষোভ-বিদ্রোহে অনুপ্রাণিত হয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে চীনের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা অনলাইনের মাধ্যমে ‘জেসমিন বিপ্লবে’র ডাক দিয়েছেন। তারপর থেকেই ইন্টারনেটের উপর নিয়ন্ত্রণ ও অনলাইন প্রতিরোধ কর্মীদের উপর হয়রানির ঘটনা আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়ে গেছে।

এক মাস বিনা বিচারে আটক রাখার পর গতকাল ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বিরুদ্ধে তত্পরতা’ চালানোর অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে চীনের আরেক জনপ্রিয় ব্লগার রান উনফেইয়ের বিরুদ্ধে। এখনও কমপক্ষে ২০ জন আইনজীবী, ব্লগার, প্রতিরোধকর্মী আটক আছেন বিনা বিচারে। ব্লগার গু চুয়ান এদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আটকে রাখা হয়েছে প্রায় এক মাস ধরে। তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছে অ্যামনেস্টি।

চীনা ভিন্নমতাবলম্বীকে মুক্তির আহ্বান অ্যামনেস্টির

চীনের গণতন্ত্রপন্থী সংগঠক লিউ জিয়ানবিনকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার জন্য চীনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। চীনা সরকারের সমালোচনা করে ভিন্নমতাবলম্বী লেখালেখি করার জন্য জিয়ানবিনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে উসকানি’ দেওয়ার অভিযোগে চীনের শিনচুয়ান প্রদেশের একটি কোর্ট জিয়ানবিনকে এই সাজা দেয়। ভিন্নমতাবলম্বী রাজনৈতিক তত্পরতা চালানোর জন্য এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো তাঁকে কারাবন্দী করা হলো।

১৯৮৯ সালে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য জিয়ানবিন আড়াই বছর কারাবন্দী ছিলেন। এরপর ১৯৯০ সালে ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বিরুদ্ধে তত্পরতা’ চালানোর দায়ে আবারও তাঁকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নয় বছর কারাবন্দী থাকার পর তিনি মুক্তি পান।

২০০৮ সালে শেষবারের মতো কারামুক্তির পর তিনি চীনে আইনি ও রাজনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্যে ‘চার্টার ০৮’ প্রস্তাবে সাক্ষর করেন। নোবেল বিজয়ী লিউ জিয়াওবোও এই সংস্কার প্রস্তাবটির সহ-লেখক। চীনা সরকারের দমননীতির সমালোচনা করে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে তিনি অনেক পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করেছেন।

অ্যামনেস্টির এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সহ-পরিচালক ক্যাথেরিন বাবের বলেছেন, ‘শুধু লেখালেখি করার জন্য ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়াটা একটা আতঙ্কজনক ব্যাপার। এবং বিচারব্যবস্থার নামে একটা প্রহসনও বটে। লিউ জিয়ানবিন কোন অপরাধেই অপরাধী নন। তিনি বন্দী হতে পারেন শুধু নিজের বিবেকের কাছেই। তাঁকে খুব দ্রুত মুক্তি দেওয়া উচিত।’ তিনি জিয়ানবিনকে কারাবন্দী করার এই ঘটনাটাকে বর্ণনা করেছেন ‘কোন বার্তার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার বদলে বার্তাবাহককেই গুলি করে ফেলা’ হিসেবে।