Posts Tagged ‘ ভারত ’

গাছ লাগিয়ে মেয়েশিশুর আবাহন

piplantriধর্ষণ আর নারী নির্যাতনের কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে ভারত। বিবিসি নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র নিয়েও হৈচৈ কম হয়নি বিশ্বজুড়ে। কিন্তু সেই ভারতেরই একটি গ্রামে দেখা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। রাজস্থানের পিপলান্ত্রি নামের একটি গ্রামে প্রতিটি মেয়েশিশুর জন্ম উপলক্ষে রোপণ করা হয় ১১১টি গাছ। গ্রামের সবাই মেয়েশিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য জমা রাখেন নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ।

১১১টি গাছ লাগিয়ে মেয়েশিশুর জন্ম উদযাপনের পাশাপাশি গ্রামের সবাই মিলে জমা করেন ২১ হাজার রুপি। শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে জমা করা হয় ১০ হাজার রুপি। এই অর্থ ব্যাংকে জমা রাখা হয়। ২০ বছরে পা দিলে সেই অর্থের দাবিদার হয় মেয়েটি। এ ছাড়া শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করা ও প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তার বিয়ে না দেওয়ার বিষয়েও একটি চুক্তি সই করেন মেয়ের বাবা-মা।

নিজের ছোট্ট মেয়েকে হারানোর কষ্ট ভুলতে ২০০৭ সালে এই অভিনব উদ্যোগটি নিয়েছিলেন সেই গ্রামেরই বাসিন্দা শ্যামসুন্দর পালিওয়াল। তারপর গত ছয় বছরে পিপলান্ত্রি গ্রামে লাগানো হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার গাছ। প্রতিটা মেয়েকন্যার জন্য ১১১টি ও প্রতিজন মৃত ব্যক্তির জন্য ১১টি। গ্রামের সব সদস্য মিলেই দেখভাল করেন এই অভিনব সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের। সাধারণত ঔষুধি গাছ লাগিয়ে থাকেন গ্রামের অধিবাসীরা। সেখান থেকে অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন তাঁরা।

অভিনব এই উদ্যোগের ফলে গ্রামটি হয়ে উঠেছে সবুজ। পাল্টেছে নারীসংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, সেই গ্রামে অপরাধপ্রবণতা কমে গেছে ব্যাপক হারে। গত সাত বা আট বছরে সেই গ্রামের কাউকে পুলিশের কাছে গিয়ে মামলা করতে হয়নি।

piplantri2

পিপলান্ত্রির অনুকরণে অনেক গ্রামই এখন মেয়েশিশুর জন্ম উদযাপন করছে গাছ লাগিয়ে। বুডানিয়া গ্রামে প্রতিটি মেয়েশিশুর জন্মের সময় লাগানো হয় ১০০টি গাছ। লুহাভাদ গ্রামও উদ্যোগটি নিয়েছে অনেক ছোট পরিসরে। সেখানে লাগানো হয় একটি গাছ।

হুদহুদের নাম “হুদহুদ” কেন?

হুদহুদ। অদ্ভুত! সত্যিই, নামটা একটু অদ্ভুতই বটে! সম্প্রতি যে ঘূর্ণিঝড়টি ভারত-বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার লাখো মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে -এটা তারই নাম। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়টি কিভাবে পেল এই নাম? এর মানেই বা কী? কিভাবে করা হয় এই ঘূর্নিঝড়গুলোর নামকরণ?

Hudhud1

বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ আন্দামান সাগরে সৃষ্টি হয়ে মহা শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে। প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা। ১৭০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। অথচ প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ের নামটি কিন্তু এসেছে ওমান থেকে।
হুদহুদ আসলে একটি পাখির নাম। আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক অঞ্চলেই দেখতে পাওয়া যায় আকর্ষণীয় পালক, ঝুঁটি ও লম্বা ঠোঁটের এই পাখিটিকে। ‘হুপি’ নামের এই পাখিকেই ওমান ভাষায় ডাকা হয় হুদহুদ বলে। এটি ইসরায়েলের জাতীয় পাখিও বটে। ২০০৪ সালে যখন আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণের আহ্বান জানানো হয় তখন অন্য আরও কিছু নামের সঙ্গে এই হুদহুদ নামটাও যোগ করেছিল ওমান।

Hudhud
আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করা হয় ১৯৫৩ সাল থেকে। শুরুটা মিয়ামির জাতীয় হারিকেন সেন্টারে হলেও পরবর্তীতে এই নামকরণ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) তত্ত্বাবধানে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ প্রথা চালু হয়েছে ২০০৪ সাল থেকে। তার আগে এই অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়গুলো যা করার সেটা বেনামেই করত।
ঘূর্ণিঝড়গুলোর গতিপ্রকৃতি বোঝা, কার্যকরীভাবে সতর্কতা জারি, ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্নয় ইত্যাদির জন্য ঘূণিঝড়গুলোর নামকরণ করা উচিৎ বলে শক্ত পদক্ষেপ নেন আবহাওয়াবীদরা। অবশেষে ২০০৪ সালে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণের জন্য একজোট হয় আটটি দেশ। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড। প্রতিটি দেশ প্রস্তাব করে আটটি করে নাম। দেশের নামের আদ্যাক্ষর অনুযায়ী একের পর এক আসে র্ন্বিাচিত নামগুলো।
এ বছরের জুনে আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়, নানাউকের নামকরণ করেছিল মিয়ানমার। এবার এসেছে ওমানের পালা। ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের নামটিও এসেছিল ওমান থেকে। এই অঞ্চলের পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে নিলোফার। এটি এসেছে পাকিস্তান থেকে।
বাংলাদেশের প্রস্তাবকৃত পাঁচটি নাম ইতিমধ্যেই ব্যবহৃত হয়ে গেছে। অনিল (২০০৪), অগ্নি (২০০৬), নিশা (২০০৮), গিরি (২০১০) ও হেলেন (২০১৩)। বাংলাদেশের দেওয়া আরও তিনটি নাম ভবিষ্যতে ব্যবহার হবে। সেগুলো হলো: চপলা, অক্ষি ও ফনি।

Cyclone Names

Cyclone Names2
২০০৪ সাল পর্যন্ত যে এই ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করা যায়নি তার একটা অন্যতম প্রধান কারণ সনাক্ত করতে গিয়ে ভারতের ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা সেন্টারের প্রধান ড. এম মহাপত্র বলেছেন, ‘এই ধরণের বৈচিত্র্যময় একটা সাংস্কৃতিক অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করতে গিয়ে সবাইকে খুবই সতর্ক আর নিরপেক্ষ থাকতে হয়, যেন এটা কারও অনুভূতিতে আঘাত না করে।’
তবে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করার পরেও বিপত্তি যে বাধেনি, তা কিন্তু নয়। ২০১৩ সালের ঘূর্নিঝড় মহাসেনের নামকরণ করেছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এই নামটা নিয়ে প্রবল আপত্তি জানিয়েছিলেন দেশটির অনেক মানুষ। তারা বলেছিলেন যে, মহাসেন ছিলেন একজন শ্রীলঙ্কান রাজা, যিনি সেখানে এনেছিলেন শান্তি ও সমৃদ্ধি। তাঁর নামে এমন একটা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নামকরণ করাটা একেবারেই অনুচিত। পরবর্তীতে শ্রীলঙ্কান কর্তৃপক্ষ ঘূর্ণিঝড়টির নাম বদলে রেখেছিল ভিয়ারু।

পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ এক দিন ঝুলিয়ে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র

১৯৭১ সালে উপমহাদেশে পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে যে বেশ উত্তেজিত ছিল, তা সর্বজনবিদিত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ায় ভারতও। তবে সে সময় পরিস্থিতি যে আরও অনেক উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছিল, তা এতদিন সবার অগোচরেই ছিল।

সদ্যপ্রকাশিত গোপনীয় এক দলিলের সুবাদে জানা গেছে, ওই সময় ভারতকে আক্রমণের মাধ্যমে যুদ্ধে জড়ানোর পরিকল্পনা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও। মার্কিন বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস এন্টারপ্রাইজের ওপর ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আক্রমণের নির্দেশ ছিল। এ ছাড়া ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্তটাও প্রায় এক দিন ঝুলিয়ে রেখেছিল তত্কালীন নিক্সন প্রশাসন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এই ছয় পাতার দলিলটি প্রকাশ করেছে বলে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়।

গোপনীয় এই দলিল অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে পরিষ্কারভাবেই পাকিস্তানকে সমর্থন জুগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় ভারত বা পাকিস্তান—উভয় দেশকে কোনো ধরনের সামরিক অস্ত্র বা সহযোগিতা দেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। তা সত্ত্বেও পাকিস্তানকে অস্ত্রশস্ত্রের জোগান দিয়ে গেছে নিক্সন প্রশাসন। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাতে চেয়েছিল ওয়াশিংটন।

১৯৭১ সালের জুনে মার্কিন অস্ত্রবাহী তিনটি পাকিস্তানি জাহাজ আটক করার সম্ভাবনা তৈরি করেছিল ভারত। সেটা তারা করতে পারত জাহাজগুলো করাচি পৌঁছানোর আগেই—সেখানে আক্রমণ অথবা বঙ্গোপসাগরে অবরোধ জারি করে। এগুলোর কোনো একটা পদক্ষেপ নিলেই ভারতকে আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল মার্কিন সেনাবাহিনীকে। সে রকম কিছু করা হলে ভারতকে ‘আগ্রাসী’ আখ্যা দিয়ে সপ্তম নৌবহরকে এই আক্রমণ চালানোর নির্দেশটা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন নিজেই। সদ্যপ্রকাশিত এই দলিলে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাস আঁঁচ করেছিল যে যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে মার্কিন বিমানবাহিনী ভারতের ওপর হামলা চালাতে পারে। আর এ জন্য তাদের কাছে প্রেসিডেন্টের অনুমোদন আছে।’

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানে আটকে পড়া মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধার করার জন্য এই সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে পাঠানো হয়েছিল বলে আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু আসলে এটা ব্যবহার করে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আক্রমণের পরিকল্পনা ছিল ওয়াশিংটনের। ১৪ ডিসেম্বর তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল নিয়াজি ঢাকায় আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর এই আকাঙ্ক্ষার কথা তিনি ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে জানান। পাল্টা জবাব পেতে ১৯ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাঁকে। ভারতের জ্যেষ্ঠ রাষ্ট্রদূতদের সন্দেহ, হয়তো ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্যই ওই কালক্ষেপণ করা হয়েছিল।

‘ইংল্যান্ডকে হারাতেই হবে’

মাত্র কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নে একটা বড়সড় আঘাত দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুধু আঘাত বললেও কম বলা হয়। দেশের যে কোন চরম ক্রান্তিকালিন পরিস্থিতির সঙ্গেই তুলনা দেওয়া যেতে পারে সেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতির। মাত্র ৫৮ রানেই অলআউটের লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সমর্থকরা হতাশা চেপেও রাখতে পারেন নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিম বাসে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে কলঙ্কিত করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রীড়া অঙ্গনের ভাবমুর্তি। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজই কিনা হয়ে গেল বাংলাদেশের পরম মিত্র! যে কোমার রোচ, সুলেমান বেনদের নির্মম আঘাতে বাংলাদেশ ধুলোয় লুটিয়েছিল, তারা আবারও তেমনভাবেই জ্বলে উঠুক, ক্রিস গেইল, কাইরন পোলার্ডরা ব্যাটে ঝড় তুলুক, এটাই এখন বাংলাদেশ সমর্থকদের একান্ত প্রার্থনা। ইংল্যান্ডকে যে হারাতেই হবে!

‘বি’ গ্রুপ থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার হিসাব-নিকাশটা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ইতিমধ্যেই পা রেখেছে শেষ আটের আঙ্গিনায়। ভারতেরও কোয়ার্টার ফাইনাল প্রায় নিশ্চিতই বলা যায়। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে বাংলাদেশ, উইন্ডিজ আর ইংল্যান্ডের মধ্যে। কাগজে-কলমে তিন দলেরই জোর সম্ভাবনা আছে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার। কিন্তু এত হিসাব-নিকাশের খাতা খুলে বসে থাকতে হবে না যদি আগামীকাল ইংল্যান্ডকে হারের স্বাদ দিতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। উপমহাদেশে আয়োজিত এবারের বিশ্বকাপ থেকে একেবারেই শূণ্য-রিক্ত হাতে ফিরে যেতে হবে এ অঞ্চলের এককালীন শাসক ইংল্যান্ডকে। তারচেয়েও বড় কথা, নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের পরবর্তী রাউন্ড। এরকম অবস্থায় বাংলাদেশের মানুষ তো স্যামি, গেইল, ব্রাভোদের পেছনে দাঁড়াবেই।

ঢাকার এক হোটেল কর্মকর্তা এনামুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সমর্থন দেব। ইংল্যান্ডকে হারাতেই হবে।’ শুধু এনামুর রহমানই না, বাংলাদেশের ক্রিকেট পাগল কোটি কোটি মানুষের মুখে এখন একই কথা। ‘ইংল্যান্ডকে হারাতে হবে।’ অতি উত্সাহী দু-একজন তো বলছেন, ‘ইস, খেলাটা যদি বাংলাদেশে হতো, গলা ফাটিয়ে চিত্কার করেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিতিয়ে দিতাম।’ একেবারে কিন্তু ফেলেও দেওয়া যায় না কথাটা। বাঙ্গালীর গলার জোরের পরিচয় কিন্তু ইংল্যান্ড কয়েকদিন আগে ভালোমতোই পেয়েছিল!

তবে সমর্থকদের ভাবনা যাই হোক, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিশ্চয়ই শুধু অপরের দিকে তাকিয়েই দিন পার করছেন না। ইতিমধ্যেই তাঁরা নিশ্চয়ই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের জন্য জোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২ উইকেটের অসাধারণ জয় দিয়ে নিজেদের সামর্থ্য তো ভালোমতোই প্রমাণ করেছেন সাকিব-তামিমরা। হল্যান্ডের বিপক্ষেও খেলেছেন অনেক পরিণত ক্রিকেট। কাজেই গত বিশ্বকাপের মতো এবারও প্রোটিয়া-বধের স্বপ্ন তো বাংলাদেশ দেখতেই পারে। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছেন, ‘আমরা ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচটার দিকে খুব আগ্রহভরে তাকিয়ে থাকব। এটা ঠিক। কিন্তু আমাদের নিজেদের ভাগ্য নিজেদেরই গড়ে নিতে হবে। আসল কথা হলো, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে হবে।’ বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের অন্যতম প্রধান ভরসা আব্দুর রাজ্জাকও গলা মিলিয়েছেন অধিনায়কের সঙ্গে। বলেছেন, ‘দলের সবাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটার দিকেই তাকিয়ে আছে। কেউই পয়েন্ট তালিকার জটিল হিসাব-নিকাশ নিয়ে ভাবছে না। আমরা পরের ম্যাচটা জিতেই কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে চাই।’

আগামীকালের ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলাটা বাংলাদেশের না হয়েও এক অর্থে বাংলাদেশেরই। গোটা খেলাটার উপরই নির্ভর করবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ সম্ভাবনা। ১২ দিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল এদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে ক্ষুব্ধ ক্রিকেট পাগল সমর্থকদের হতাশার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ দেখেছে। আতঙ্কিত হয়েছে। কিন্তু তারপর “We are Sorry” লেখা প্ল্যাকার্ডগুলোও তো দেখেছে। আর এবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের প্রাণঢালা শুভকামনা আর ভালোবাসাও নিশ্চয়ই উইন্ডিজ ক্রিকেটাররা দেখছেন। ক্রিস গেইলরা কী এই ভালোবাসার প্রতিদান দেবেন না?

‘সাবধান ভারত, আগামীতে তোমরাই!’

অস্কার মনোনয়নপ্রাপ্ত ভারতীয় চলচ্চিত্র লগনের কথা নিশ্চয় মনে আছে অনেকের। ছবিটির নায়ক আমির খানের নেতৃত্বে ক্রিকেটের মাঠে ব্যাট-বলের লড়াই দিয়ে ব্রিটিশ শাসকদের অত্যাচার-শোষণের প্রতিশোধ নিয়েছিল ভারতের একটি গ্রামের অধিবাসীরা। রুপালি পর্দার মতো নাটকীয়তা না থাকলেও গত বুধবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের জয়টা কিন্তু কম রোমাঞ্চকর ছিল না। ভারতের মতো আয়ারল্যান্ডও দীর্ঘদিন ছিল ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে। রূপকথার মতো জয়টা দিয়ে যেন তারা লগন ছবির মতোই তাদের সাবেক শাসকদের একটু চোখ রাঙিয়ে নিল। বুঝিয়ে দিল, এককালে তোমরা আমাদের অধীন করে রাখলেও, এখন আমরাও পারি তোমাদের দমিয়ে দিতে। পরের সবগুলো ম্যাচ হেরে দেশে ফিরলেও আইরিশ ক্রিকেটাররা যে নায়কোচিত সংবর্ধনা পাবেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, তাঁরা খুব ভালোমতো চপেটাঘাত করতে পেরেছে ইংলিশদের জাত্যাভিমানে। এক আইরিশ সমর্থক বলেছেন, ‘আমরা যদি বিশ্বকাপের বাকি সবগুলো ম্যাচে হেরেও যাই, তাতে কিছুই যায় আসে না। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, আমরা হারাতে পেরেছি ইংলিশদের।’ শুধু এ একটা ম্যাচ দিয়েই আইরিশদের এবারের বিশ্বকাপ মিশন পুরোপুরি সফল বলে মন্তব্য করেছে অনেক সমর্থক। বাকি যা পাওয়া যাবে সেটা উপরি পাওনা। সমর্থকদের প্রত্যাশা অনেকাংশে পূরণ হয়ে গেলেও পোর্টারফিল্ড, ও’ব্রায়েনরা হয়তো তাদের স্বপ্নের গণ্ডি আরও কিছুটা বাড়িয়ে নিয়েছেন ঐতিহাসিক এ জয়ের পর। আর যেভাবে তারা ইংল্যান্ডকে পরাস্ত করেছে, তাতে সেই প্রত্যাশাটা খুব অন্যায্যও বলা যাবে না। বিশ্বকাপে আইরিশদের পরবর্তী প্রতিপক্ষ ভারত। একটা দিক দিয়ে মানসিকভাবে খুব কাছাকাছি আছে ভারতীয় উপমহাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের মানুষেরা। এ দুই অঞ্চলের মানুষই ইংল্যান্ডের অন্যায়-অন্যায্য বঞ্চনার শিকার হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। গত বুধবার বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামেও টের পাওয়া গেছে এ নৈকট্যটা। ও’ব্রায়েনের বাউন্ডারিগুলোর পর আইরিশদের সঙ্গে গলা ফাটিয়ে চিত্কার করতে দেখা গেছে ভারতীয়দেরও। খেলা শেষে এক আইরিশ সমর্থক ভারতীয়দের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘তারা খুবই ভালো, খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ।’ মানসিক দিক দিয়ে নৈকট্য থাকলেও মাঠে কিন্তু কেউই কাউকে ছাড় দেবে না। সেদিন কিন্তু এই চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামেই দুই দিকে থাকবে আয়ারল্যান্ডের ‘গ্রিন আর্মি’ আর ভারতীয় সমর্থকেরা। ইংল্যান্ড বধ করার পর এবার মহেন্দ্র সিং ধোনিদের দিকেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন এক আইরিশ সমর্থক। ‘সাবধান ভারত, পরবর্তীকালে তোমরাই!’ সত্যিই কিন্তু সাবধান হতে হবে ধোনিদের। ক্রিকইনফো।