Posts Tagged ‘ বিস্ফোরণ ’

ঘুমন্ত দৈত্য

আপনাকে যদি বলা হয় আপনি বসে আছেন এমন এক জায়গায় যেখান থেকেই একবার এই পৃথিবীর বুকে ঘটে গেছে প্রলয়ঙ্করী এক বিস্ফোরণ? কেমন লাগবে আপনার? আসলে এ ধরণের প্রশ্নের সম্মুখিন হওয়ার কথা আমরা হয়তো মনেও আনি না। কি রাশিয়ার কিছু অঞ্চলের অধিবাসীদের দিকে সত্যিই এমন একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সমপ্রতি তাঁরা এক গবেষণায় দাবি করেছেন যে, ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর প্রায় সকল প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছিল বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এক অতিকায় আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে। আর সেই ঘুমন্ত দৈত্যটার অবস্থান রাশিয়ার আশপাশ জুড়ে। যার আয়তন গোটা ইউরোপ মহাদেশের চেয়েও কিছুটা বড়! সম্প্রতি স্তব্ধ করে দেওয়ার মতো এই খবরটা দিয়েছে ডেইলি মেইল অনলাইন।

পার্মিয়ান যুগে ( ২৯৯-২৫১ মিলিয়ন বছর আগে) পৃথিবীর সর্বশেষ প্রলয়ঙ্করী দুর্যোগে প্রায় সকল প্রাণির বিলুপ্তি ঘটেছিল বলে আগে থেকেই বিশ্বাস করতেন ইতিহাসবিদ ও বিজ্ঞানিরা। এটা গ্রেট ডাইয়িং নামেও পরিচিত। ধারণা করা হয় পৃথিবীর জলজ প্রাণীর প্রায় ৯৫% ও ভূমির ৭০% প্রাণী এসময় বিলুপ্ত হয়েছিল। এই ধারণাটা বিজ্ঞানীমহলে একপ্রকার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করলেও তারা শক্ত কোন প্রমাণ পাচ্ছিলেন না যে, আসলে এর সঠিক কারণটা কী? সমপ্রতি কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দাবি করেছেন যে, পার্মিয়ান যুগের ঐ মহাপ্রলয়ের কারণটা ছিল ভয়াবহ আকারের অস্নুৎপাত। কানাডায় প্রাপ্ত এক পাথরের গায়ের কয়লার স্তর বা আবরণ থেকে বিজ্ঞানীরা এর প্রমাণ পেয়েছেন। ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. স্টিভ গ্রাসবে বলেছেন, ‘এটা খুব ভালোভাবেই পার্মিয়ান যুগের প্রাণী বিলুপ্তির কারণটা ব্যাখ্যা করে। আমাদের এই গবেষণাটাই প্রথম প্রমাণ করতে পারবে যে, পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই অস্নুৎপাতের ফলে যে ব্যাপক পরিমাণ কয়লা দহন হয়েছিল সেটাই আজকের গ্রিনহাউজ গ্যাস সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ।’
ড. গ্রাসবি পাথরের গায়ে অদ্ভুত ধরণের এই কয়লার আবরণটা আরো ভালোমতো পরীক্ষা করার জন্য ভূবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. বেনোইট বিউচ্যাম্প ও পরিবেশ ভূ-রসায়নের অধ্যাপক ড. হামিদ সানেইয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এবং সম্মিলিতভাবেই তাঁরা উপরোক্ত ঐ সিদ্ধানে- পৌঁছেছেন। তাঁরা এটাও চিহ্নি‎ত করেছেন যে, আদি বিলুপ্তির কারণ ভয়াবহ এই আগ্নেয়গিরির অবস্থান বর্তমান রাশিয়ার উত্তরে। জায়গাটা সাইবেরিয়ান ফাঁদ নামেও পরিচিত। উত্তর রাশিয়া, তুরা, উকুটস, নোরিলস্ক ও ইরাকুটস্ক অঞ্চল ঘিরে এই আগ্নেয়গিরির বিস্তৃতি। পুরো এলাকাটার আয়তন দুই মিলিয়ন স্কয়ার কিলোমিটার। যা ইউরোপ মহাদেশের চেয়েও খানিকটা বড়। এই অস্নুৎপাতের ছাই গিয়েই জমা হয়েছিল কানাডায় বিজ্ঞানীদের প্রাপ্ত কয়লার আস্তরণজমা ঐ পাথরে। ড. বেনোইট বিউচ্যাম্প বলেছেন, ‘আমরা ঐ পাথরটাতে প্রচুর পরিমাণ জৈব উপাদান পেয়েছি। আর এগুলো থেকে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি যে, এগুলো কয়লা-ছাইয়ের স্তর। আধুনিক কয়লা পোড়ানোর পাওয়ার প্লান্টগুলোতে যেমনটা দেখা যা। ড. সানেই আরো যোগ করেছেন, ‘আমাদের এই আবিস্কারটাই প্রথম এই নিশ্চয়তা দিতে পারবে যে, আদি বিলুপ্তির ঐ সময়ে কয়লা ছাইয়ের উদগিরন হয়েছিল যা আগে চি‎হ্নত করা যায় নি।’
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন যে, সেসময়ের সেই ছাই উদগিরনটাই বর্তমান সময়ের এই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, পরিবেশ বিপর্যয়ের আদি কারণ। ঐ আগ্নেয়গিরি থেকে যে ছাই উদগিরন হয়েছিল সেটা ছিল খুবই বিষাক্ত।
তবে এখন আবার এই আগ্নেয়গিরি থেকে নতুন করে অস্নুৎপাতের সম্ভাবনা আছে কিনা সে সম্পর্কে এখনো কিছু জানান নি বিজ্ঞানীরা। তবে পরিবেশের যা হালচাল তাতে কিছুটা সাবধান হওয়ার সময় বোধহয় এসেছে। সময় এসেছে পরিবেশ নিয়ে বাণিজ্য-রাজনীতি না করে সত্যিই যেন ভয়ঙ্কর সুপ্ত এই দৈত্যটা জেগে না ওঠে সেদিকে নজর দেবার।

দ্বিতীয় সূর্য?!

স্টার ওয়ার্স সিনেমাতে লুক স্কাইওয়াকারকে দেখা গিয়েছিল দুই সূর্যওয়ালা কল্পিত এক গ্রহে। বাস্তবে পৃথিবীর মানুষও পেতে পারেন এ ধরণের বিরল অভিজ্ঞতা।

এ বছরই একটা অভূতপূর্ব বিরল ঘটনার সাক্ষী হতে পারেন পৃথিবীর বাসিন্দারা। প্রত্যক্ষ করতে পারেন দ্বিতীয় সূর্যের উপস্থিতি। ফলে রাতেও টের পাওয়া যাবে সূর্যের উজ্জ্বলতা। কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব? তাহলে কী প্রকৃতির নিয়ম ভেঙে প্রলয়ংকরী কোনো ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে পৃথিবীর বুকে? না, ব্যাপারটা সে রকম কিছু নয়। বিজ্ঞানীদের নতুন একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল অনলাইন জানিয়েছে, বহু দূরে একটা উজ্জ্বল নক্ষত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় পৃথিবীবাসীর এই বিরল অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ৬৪০ আলোকবর্ষ দূরে ‘বেটেলগুস’ নামের একটি নক্ষত্র খুব তাড়াতাড়িই প্রচুর শক্তি বিকিরণ করে ধীরে ধীরে ঢলে পড়বে মৃত্যুর কোলে। আর নক্ষত্রটি শক্তি বিকিরণের শেষ মুহূর্তে এমন এক বিস্ফোরণ ঘটাবে যার ফলে প্রায় এক বা দুই সপ্তাহ ধরে পৃথিবীর মানুষ প্রত্যক্ষ করতে পারবে দ্বিতীয় সূর্যের উপস্থিতি। তবে এই ঘটনাটি ঠিক কবে ঘটতে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। জ্যোর্তিবিজ্ঞানের নিয়মানুয়ায়ী অনুমান করা হচ্ছে, ‘বেটেলগুস’ অদূর ভবিষ্যতেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। তবে তার মানে এই না যে, আপনাকে এখনই সানগ্লাস কেনার জন্য দৌড়াতে হবে।
অস্ট্রেলিয়ার সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্রাড কারটেল বলেছেন, ‘২০১২ সালের আগেই এই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটতে পারে। নক্ষত্রটি খুব দ্রুতই তার কেন্দ্রের জ্বালানি শক্তি হারাচ্ছে। এই জ্বালানির জন্যই নক্ষত্রটি আলো বিকিরণ করতে পারে। জ্বালানি ভান্ডার শেষ হয়ে গেলে আক্ষরিক অর্থেই এটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কিন্তু পুরোপুরি শেষ হয়ে যাওয়ার আগে এটি একটা প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটাবে। এই বিস্ফোরণের ফলে আমরা পৃথিবীতে কয়েক সপ্তাহব্যাপী অবিশ্বাস্য আলোকিত একটা পরিবেশ পাব। তারপর এটা আস্তে আস্তে মিইয়ে যেতে শুরু করবে। এবং একসময় এটিকে আর দেখাই যাবে না।’
নতুন এই বিস্ময়কর খবরে অবশ্য ‘মহাপ্রলয়’, ‘পৃথিবীর শেষ’ ইত্যাদি নানাবিধ জল্পনা-কল্পনায় তোলপাড় হচ্ছে ইন্টারনেট দুনিয়া। মায়ান দিনপঞ্জী অনুয়ায়ী ২০১২ সালেই পৃথিবীতে একটা মহাপ্রলয় হবে, এমন ধারণা আগে থেকেই বেশ চালু আছে। তার ওপর ‘বেটেলগুস’ নামের অর্থ শয়তান, এই তথ্যটি এসব কল্পনায় যোগ করেছে নতুন মাত্রা। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এ ধরনের সম্ভাবনা একেবারেই আমল দেননি। তাঁরা বেশ স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন, নক্ষত্রের বিস্ফোরণটা পৃথিবী থেকে এত দূরে হবে যে, তাতে পৃথিবীর কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। ডেইলি মেইল অনলাইন।