Posts Tagged ‘ বিবিসি অনলাইন ’

চিকিৎসা যেখানে হায়েনার সঙ্গে বসবাস

somalia chained man

যুদ্ধবিধ্বস্ত সোমালিয়ায় মানসিক অসুস্থতার হার খুবই বেশি। পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটির প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন ভোগে মানসিক অসুস্থতায়। বিশ্বজুড়ে যে হারটা দশজনে একজন। বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধের ফলে সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাও আছে খুবই বিপর্যস্ত অবস্থায়। বেশিরভাগ রোগীই কোনো চিকিৎসা সাহায্য পায় না। প্রথাগত নিয়ম অনুসারে এই ধরনের ব্যক্তিদের উপর চালানো হয় নিষ্ঠুর চিকিৎসা পদ্ধতি।

সোমালিয়াতে সামাজিকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ব্যক্তিদের উপর কোনো আত্মা ভর করেছে। এবং তাদের সামনে একমাত্র পথটাই থাকে যে, ঐ ব্যক্তিকে জোরপূর্বক বেঁধে ফেলা ও শেখকে (স্থানীয় ওঝা) খবর দেওয়া। এই শেখরা এরপর ঐ ব্যক্তির উপর প্রয়োগ করতে থাকেন বিচিত্র সব চিকিৎসা পদ্ধতি। শেকল দিয়ে বেঁধে রাখাটা খুবই সাধারণ ব্যাপার। কাউকে কাউকে এমনকি সারাজীবনই বেঁধে রাখা হয় বলে জানতে পেরেছে ইতালিয়ান একটি এনজিও। কখনো কখনো আত্মাকে তাড়ানোর জন্য রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় হায়েনার সঙ্গে একই খাঁচায় রাত কাটানোর জন্য।

caged_hyena_somalia
সোমালিয়ানরা বিশ্বাস করে যে, হায়েনা মানুষের সবকিছুই দেখতে পায়, অশুভ আত্মার উপস্থিতিও। আর হায়েনারাই এই মানসিক সমস্যায় ভোগা মানুষদের মধ্যে থেকে অশুভ শক্তিকে বিতাড়িত করতে পারবে, তাদেরকে খামচে, কামড়ে দিয়ে। নির্মম এই পদ্ধতির শিকার অনেক মানুষ প্রাণও হারিয়েছেন।
আশ্চর্য্যজনক ব্যাপার যে, বর্বর এই চিকিৎসা পদ্ধতিটা বেশ দামীও বটে। পরিবারের প্রিয়জনকে হায়েনার সঙ্গে একই খাঁচায় ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য খরচ করতে হয় ৫৬০ ডলার। যেটা সোমালিয়ানদের গড় বাৎসরিক আয়ের চেয়েও বেশি।
সহিংসতায় পূর্ণ দেশটির যে অংশগুলো বেশি যুদ্ধবিধ্বস্ত, সেখানকার বেশিরভাগ মানুষই মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। খুবই খারাপ কোনো অভিজ্ঞতার পর চাপজনিত মানসিক ব্যাধি হয়ে পড়ে খুবই সাধারণ ব্যাপার। আর সোমালিয়ার সমাজে মানসিক বিপর্যস্ততা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় প্রথাগত পদ্ধতির পথেই হাঁটতে হয় সেখানকার মানুষদের। কারো মধ্যে অস্বাভাবিকতার কোনো ছাপ অনুমান করলেই সবাই উত্তেজিত হয়ে পড়ে তাকে বেঁধে ফেলতে। মোগাডিশুর রেডিও স্টেশনে দিনে তিনবার করে চলা বিজ্ঞাপনটাতে যেমন দেখানো হয়েছে: সবাই চিৎকার করে বলছে, “ও পাগল হয়ে গেছে! ও দৌড়ে পালাচ্ছে! বেঁধে ফেল, বেঁধে ফেল!” সোমালিয়াতে এই দৃশ্যটা খুবই সুপরিচিত।
তবে বিজ্ঞাপনের পরের দৃশ্যটি কিছুটা অন্যরকম, যেটা আশার সঞ্চার করেছে আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে। যেখানে একটি কণ্ঠকে বলতে শোনা যায়, “শেকল দিয়ে বেঁধ না। তাকে ডা. হাবের হাসপাতালে নিয়ে চল! কেউ যদি মানসিক সমস্যায় ভোগে, তাহলে তাকে বেঁধ না, নিয়ে যাও ডা. হাবের কাছে। তিনি সাহায্য করবেন।”

dr hab_Somalia
ডা. হাবের এই কর্মকা-টা শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালে এরকম একটা ঘটনা স্বচক্ষে দেখার পর। তিনি দেখেছিলেন কিছু নারীকে সড়কে তাড়া করছে একদল তরুণ। এই ঘটনাটাই নাড়া দিয়েছিল হাবকে। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ‘আমি সোমালিয়ার প্রথম মানসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করব।’ মোগাডিশুতে হাবের পাবলিক হেলথ হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সোমালিয়ার ছয়টি আলাদা জায়গায় এটার শাখা আছে।
ডা. হাবের পুরো নাম আবদি রহমান আলি আওয়ালে। সত্যিকারের কোনো মানসিক রোগের চিকিৎসকও তিনি নন। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে তিন মাসের একটা বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ নিয়েই তিনি মিশনটা শুরু করেছিলেন। এবং তাঁর দাবি অনুযায়ী, তিনি বহুবিধ বিষন্নতা থেকে শুরু করে স্কিজোফ্রেনিয়া পর্যন্ত চিকিৎসা করতে পারেন। একই সঙ্গে এসম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজটাও করে যাচ্ছেন ডা. হাব। তিনি বলেছেন, ‘আমরা সবাইকে দেখানোর চেষ্টা করছি যে, (প্রথাগত পদ্ধতিগুলো) একেবারেই অর্থহীন। মানুষ আমাদের রেডিও বিজ্ঞাপন শুনছে আর তারা জানছে যে, মানসিক অসুস্থতাও অন্য একটা অসুখের মতো যেটার চিকিৎসা প্রয়োজন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসারে।’- বিবিসি অনলাইন

Somaliya mental illness treatment

ইউরোপে এখনো ক্ষমা নেই নাৎসি প্রতীকের!

দলের পক্ষে করা জয়সূচক গোলটি উদযাপন করতে গিয়ে যে এতটা সর্বনাশ হয়ে যাবে সেটা হয়তো কল্পনাও করেননি সদ্য ক্যারিয়ার শুরু করা গিওর্গিস কাতাদিস। কিন্তু গোল উদযাপনের সময় গ্রীক এই মিডফিল্ডার এমন এক ভঙ্গি করেছিলেন যেটার সঙ্গে জড়িয়ে আছে, ইউরোপের যুদ্ধকালীন নৃশংসতা-নির্মমতার রক্তাক্ত অধ্যায়ের দুঃখগাথা। জার্মানির নাৎসি পার্টির সেই সেলুটের ভঙ্গিটা যে এখনো পর্যন্ত ইউরোপ কতটা ঘৃণা করে সেটা খানিকটা হলেও টের পাওয়া যায় ২০ বছর বয়সী কাতাদিসের প্রতি শাস্তি আরোপের মাত্রা দেখে। নাৎসি সেলুটের ভঙ্গিতে গোল উদযাপন করার দায়ে আজীবনের জন্য গ্রীস জাতীয় দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে তরুণ এই ফুটবলারকে। কাজটা তিনি জেনেবুঝে করেননি, কোন নাৎসি মতাদর্শে তাঁর বিশ্বাস নেই, এসব বলেও কোন ক্ষমা পাননি গিওর্গিস কাতাদিস।

4578590-3x2-940x627

কয়েকদিন আগেও গ্রীসের অনুর্ধ্ব ১৯ দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন গিওর্গিস কাতাদিস। গত বছর যোগ দিয়েছিলেন বর্তমান ক্লাব এইকে অ্যাথেন্সে। গত শনিবার অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ভেরিয়ার বিপক্ষে তিনিই করেছিলেন দলের পক্ষে জয়সূচক গোলটি। উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে তার দল এইকে অ্যাথেন্স পায় ২-১ গোলের জয়। কিন্তু জয়সূচক গোলটি উদযাপন করতে গিয়েই গোল বাধান এই মিডফিল্ডার।

গ্রীক ফুটবল ফেডারেশনের কাছে এটা একটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। তাদের দৃষ্টিতে কাতাদিসের এই নাৎসি সেলুট দেওয়ার আচরণটা ‘খুবই উস্কানিমূলক’ এবং এটা ‘নাৎসিদের নির্মম নৃশংসতার শিকার হওয়া মানুষদের অপমান করার সামিল’।

কাটাডিসের এই গোল উদযাপন করার বিশেষ ভঙ্গিটা ব্যপকভাবে সমালোচিত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতেও। তবে এই কাজটা একেবারেই জেনেবুঝে করেননি বলে দাবি করেছেন কাতাদিস। নিজের টুইটার পেজে তিনি লিখেছেন, ‘আমি বর্ণবাদী নই আর যদি জানতাম যে এটা কী অর্থবহন করে তাহলে আমি কোনভাবেই এমনটা করতাম না।’ দর্শকসারিতে বসে থাকা এক সতীর্থর দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই তিনি এই নাৎসি সেলুটের ভঙ্গিটা করেছিলেন বলে পরবর্তীতে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন গ্রীসের এই ফুটবলার। এইকে অ্যাথেন্স ক্লাবের জার্মান কোচ ওয়াল্ড লিনেনও দাঁড়িয়েছেন কাতাদিসের পেছনে। তিনি শিষ্যের সমর্থনে বলেছেন, ‘সে খুবই তরুণ একটা ছেলে যার মধ্যে কোন রাজনৈতিক ধ্যানধারণা নেই। সে হয়তো এই ভঙ্গিটা ইন্টারনেট বা অন্য কোথাও থেকে দেখেছে আর সেটা অনুকরণ করেছে কোন অর্থ না জেনেই।’

গ্রীস ফুটবলের একজন প্রতিভাবান ফুটবলার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন কাতাদিস। ইতিমধ্যেই গ্রীসের অনুর্ধ্ব-১৭, অনুর্ধ্ব-১৯ ও অনুর্ধ্ব-২১ দলে খেলে ফেলেছেন এই মিডফিল্ডার। গত বছর অনুর্ধ্ব-১৯ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রীসকে ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পথেও ভালো অবদান রেখেছিলেন তিনি। খুব দ্রুতই হয়তো মূল জাতীয় দলেও ডাক পেতেন। তবে এই পরিমাণ সম্ভাবনাময় হয়েও কাতাদিসের অপরিসীম ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে ঐ একটি ভঙ্গি করার জন্য। ব্যাপারটা লঘু পাপে গুরু দণ্ড দেওয়ার মতো মনে হলেও এটা স্বীকার করতেই হবে যে, কাতাদিস এই নাৎসি সেলুটের ভঙ্গিটা করেছেন খুবই স্পর্শকাতর সময়ে।

Never Again

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গ্রীসে বসবাসকারী ইহুদিদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নির্বাসিত করার ৭০তম বার্ষিকী ছিল গত ১৫ মার্চ। সেদিন গ্রীসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর থেসালোনিকির ইহুদি বাসিন্দারা শহরের ফ্রিডম স্কয়্যারে সমবেত হয়েছিলেন দিনটি স্মরণ করতে। শহরের ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতা ডেভিড সালটিয়েল বলেছেন, ‘এই দিনটির স্মরণার্থে আয়োজিত অনুষ্ঠান থেসালোনিকি শহরের জন্য একটা সম্মান। কিন্তু কিছু মানুষ ঐ সময়টাকে দেখে স্মৃতিবিধুর ভাবে। তারাই ঐ নাৎসি প্রতীকগুলো ফিরিয়ে আনছে।’ সাম্প্রতিক সময়ে গ্রীসে উত্থান হয়েছে গোল্ডেন ডন নামের একটি উগ্র ডানপন্থী পার্টির। যাদের মধ্যে আছে নিও-নাৎসি মূল। আর গত বছরের জুনে দেশের চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে তারা প্রথমবারের মতো দেশের পার্লামেন্টেও ঢুকে পড়েছে।

Golden-Dawn3

১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই ন্যুরেমবার্গ ট্রাইবুন্যালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার করা হয় নািস পার্টি ও এর সঙ্গে জড়িতদের। ৬৭ বছর পরও ইউরোপ ভুলতে পারেনি হিটলারের নাৎসি পার্টির নৃশংসতা, নির্মমতা। এখনো কোনভাবেই যেন ইউরোপে পুনরায় নাৎসি পার্টির মতাদর্শ মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, তা সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে খেয়াল রাখে ইউরোপের দেশগুলো। এমনকি মাত্র একটিবার ঐ নাৎসি সেলুটের ভঙ্গি করার জন্য ২০ বছর বয়সী সম্ভাবনাময় তরুণ ফুটবলারকে আজীবন নিষিদ্ধ করে দিতেও কুণ্ঠা করে না প্রচুর সমস্যায় জর্জরিত, অর্থনৈতিকভাবে চরম বিপন্ন দেশ গ্রীস।

কী হবে তাহলে গিওর্গিস কাতাদিসের সম্ভাবনাময় ফুটবল ক্যারিয়ারটার? ক্ষণিকের ভুলটাই কী পুরো জীবনের নির্ধারক বনে যাবে? ক্লাব ফুটবলের অঙ্গনে কাতাদিসের ভবিষ্যত্টা হয়তো আগামী সপ্তাহে জানা যাবে। নিজের আচরণের পক্ষে যুক্তি দেখানোর জন্য পরবর্তী সপ্তাহে একটি সভা আয়োজন করতে যাচ্ছে এইকে অ্যাথেন্স। কিন্তু তাঁর আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ারটা? গ্রীস ফুটবল ফেডারেশন কি বন্ধ করা দরজাটা আবার খুলে দেওয়ার মতো উদারতা দেখাবে? নাকি নিজের ডানহাতটার দিকে তাকিয়ে সারাজীবন আক্ষেপই করতে হবে কাতাদিসকে?— বিবিসি অনলাইন ও ডেইলি মেইল

একটি ভোটের মূল্য ২০ ডলার

আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আমেরিকার ৫৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আমেরিকার ইতিহাসে এটিই হচ্ছে সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচন। প্রতিবারই একটু করে বাড়তে বাড়তে এবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২.৫ বিলিয়ন ডলার। হিসেব করে দেখা গেছে এতে ভোট প্রতি খরচ দাঁড়ায় ২০ ডলার। কোথায় থেকে আসছে এত টাকা? খরচটাই বা হচ্ছে কোথায়?

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এই ২.৫ বিলিয়ন ডলার আসছে মূলত চারটি উত্স থেকে। নির্বাচনী প্রচারণা চলার সময়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির কমিটি তহবিল সংগ্রহ করে। এখান থেকে এসেছে ৬৬১ মিলিয়ন ডলার। রিপাবলিকান কমিটি থেকে ৩৬৯ ও ডেমেক্রেটিক কমিটি থেকে ২৯২ মিলিয়ন ডলার। ৭০০ মিলিয়নেরও বেশি ডলার আসে আমেরিকান নাগরিকদের ছোট ছোট অর্থসাহায্য থেকে। বেশিরভাগ সাহায্যই থাকে ২৫০০ ডলারের কম। নির্বাচনী প্রচারণায় সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারবে না এমন গ্রুপগুলোও নির্বাচনী ফলাফল প্রভাবিত করার জন্য অর্থসংগ্রহ করে থাকে। এইসব গ্রুপকে ডাকা হয় ‘সুপার প্যাকস’ নামে। নিজ পছন্দের প্রার্থীকে সহযোগিতা করার জন্য বা প্রতিপক্ষকে সমালোচনার মাধ্যমে আঘাত করার উদ্দেশ্যে তারা এই অর্থ ব্যয় করে থাকে। এবারের নির্বাচনে এই ‘সুপার প্যাকস’ খাত থেকে এসেছে ৬০০ মিলিয়ন ডলার। এর অর্ধেকেরও বেশি অর্থ এসেছে মাত্র এক শতাংশ সাহায্যকারীর কাছ থেকে। আমেরিকার ক্যাসিনো ডেভেলপার শেলডন অ্যাডেলসন ব্যক্তিগতভাবে দিয়েছেন সবচেয়ে বেশি অর্থ। তাঁর কাছ থেকে এসেছে ৫৪ মিলিয়ন ডলার। বাকি অর্থের উত্স এখন পর্যন্ত থেকে গেছে পুরোটাই অজানা। তথাকথিত ‘সামাজিক উন্নয়ন গ্রুপ’গুলো তাদের অর্থদাতাদের পরিচয় উন্মোচন করতে চায়না। আর তারা নির্বাচনী ফলাফলকে প্রভাবিত করতে খরচ করেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই বিপুল অঙ্কের টাকা কোথায় যায়?

আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সংগ্রহীকৃত এই অর্থের সিংহভাগ খরচ হয় বিজ্ঞাপন নির্মান করতে। উত্তেজনাপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোতে গত এক মাসে নির্মিত হয়েছে প্রায় তিন লক্ষ টেলিভিশন বিজ্ঞাপন। এগুলোর মধ্যে বারাক ওবামার সমর্থনে ছিল এক লক্ষ ৬০ হাজার ও মিট রমনির সমর্থনে ছিল এক লক্ষ ৪০ হাজার বিজ্ঞাপন।— বিবিসি অনলাইন
A $2.5bn election: Where the money comes from

কারাগার থেকে প্যারা-অলিম্পিকে!

প্যারা-অলিম্পিক অনেক মানুষের জন্যই অনুপ্রেরণাদায়ক। শারীরিক নানা প্রতিবন্ধকতার বাধা পেরিয়ে অ্যাথলেটরা যেভাবে এখানে লড়াই করছেন, তা অনেকের কাছেই শিক্ষণীয়। তবে স্প্যানিশ সাঁতারু সাবেস্তিয়ান চানো রদ্রিগেজের কাহিনিটা শুধু অনুপ্রেরণাদায়কই নয়, একই সঙ্গে বিস্ময়েরও। এবারের লন্ডন প্যারা-অলিম্পিকে দুটি রুপা ও একটি ব্রোঞ্জ পদকজয়ী এই অ্যাথলেটের হাসি দেখলে অনুমান করতে কষ্ট হয়, দীর্ঘদিন তাঁকে কাটাতে হয়েছে কারাগারের অন্ধকারে, জীবন কেটেছে নানাবিধ সহিংস ও বিতর্কিত ঘটনাবলির মধ্যে। বিস্তারিত পড়ুন

কেন কিছু গান মনে গেঁথে যায়

হঠাত্ হঠাত্ কিছু গান আমাদের মাথায় ঘুরতে থাকে। ঘুরেফিরে সেই গানটিই মাথার মধ্যে বারবার বাজতে থাকে। এমন অভিজ্ঞতা হয়তো অনেকেরই আছে। কিন্তু কেন এমন হয়, তা অনেকের কাছেই এক রহস্য। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন, কেন এমন হয়? কেন কিছু গান আমাদের মনে গেঁথে যায়? এখনো এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো গবেষণা পরিচালিত না হলেও উত্তর হিসেবে প্রাথমিক কিছু অনুমান দাঁড় করিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ ব্যাপারটিকে ভিন্ন ভিন্ন নামে আখ্যায়িত করছেন তাঁরা। কারও কারও মতে, মানুষের প্রজাতি হিসেবে বিবর্তনের সঙ্গে এর রয়েছে গভীর সম্পর্ক।

লন্ডনের গোল্ডস্মিথ কলেজের অধ্যাপক ভিকি উইলিয়ামস দুই বছর আগে এ বিষয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন। তিনি দেখেছেন, বিজ্ঞানীরা বিগত সময়ে একে বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করেছেন—‘মনে গেঁথে যাওয়া লক্ষণ’, ‘আঠালো সংগীত’, ‘সৃজনশীল অস্থিরতা’ প্রভৃতি। তবে কিছু গান মাথায় ঘুরতে থাকার বিষয়কে খুব সাধারণভাবে ‘কানপোকা’ বলে অভিহিত করেন অনেকে। এটা আক্ষরিক অর্থে কানের কোনো পোকা নয়। যে গানগুলো বেশির ভাগ মানুষের মনে গেঁথে যায়, সেগুলো বিবেচনা করা হয় ‘কানপোকা’ হিসেবে। সংগীত মনোবিজ্ঞানী উইলিয়ামস এ ধরনের প্রায় ২ হাজার ৫০০টি ‘কানপোকা’ গানের তালিকা করেছিলেন, এগুলোর ধরন বোঝার জন্য। কিন্তু তাতে খুব বেশি কাজ হয়নি।

একই গানের কথা একাধিক ব্যক্তি খুব কমই বলেছে। এ থেকে বোঝা যায়, একেকজনের ক্ষেত্রে একেকটা গান ‘কানপোকা’ হিসেবে কাজ করে। তবে কোন পদ্ধতিতে কিছু গান মানুষের মনে গেঁথে যায়, তার কিছুটা অনুমান দাঁড় করিয়েছেন উইলিয়ামস। তিনি কিছু সাধারণ প্রভাবক শনাক্ত করেছেন।

প্রথমত, উইলিয়ামসের মতে, প্রথম শোনা কোনো একটি গান একজন মানুষের মাথায় গেঁথে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, একই গান অনেকবার শোনা হলে সেটিও ‘কানপোকা’র ভূমিকা নিতে পারে। কিন্তু অনেক সময় দীর্ঘদিন শোনা হয়নি, এমন কোনো গানও আচমকা মাথায় ঘুরতে থাকে। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের অনুমান, হয়তো পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে গানটি মাথায় চলে আসে। উইলিয়ামস বলেছেন, ‘একদিন অফিসে একটা পুরোনো জুতার বাক্সের দিকে আমার নজর পড়ে। জুতার দোকানটির নাম ছিল “ফেইথ’। আর “ফেইথ” শব্দটি দেখেই আমার মাথায় চলে এসেছিল জর্জ মাইকেলের “ফেইথ” শিরোনামের গানটি। তারপর দীর্ঘক্ষণ গানটি আমার মাথায় ছিল।’ সদ্য-প্রকাশিত অনেক গানও কানপোকার ভূমিকা নিতে পারে।

কেন এমন হয়—এ প্রশ্নের উত্তরের সন্ধান দিতে উইলিয়ামস বলেছেন, হয়তো এই মনে গেঁথে যাওয়া গানগুলো মানুষের ‘অজ্ঞাত স্মৃতি’র একটা অংশ। স্মৃতির এ অংশের কারণে হঠাত্ করে আমাদের কোনো বিশেষ খাবার খেতে ইচ্ছে হয় বা বহুদিন না-দেখা কোনো বন্ধুর কথা মনে পড়ে। এ ছাড়া সংগীত মানুষের খুবই ব্যক্তিগত ও আবেগগত বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িত। এটি মানুষের মস্তিষ্কে বেশ কিছু পথে সংকেতবদ্ধ হয়ে থাকে, যার কারণে প্রাসঙ্গিক অনেক স্মৃতির সঙ্গে গানগুলোও জড়িয়ে থাকে।

অন্য গবেষকদের মতে, এ ঘটনার সঙ্গে বিবর্তনের সম্পর্ক আছে। আধুনিক মানুষের আবির্ভাব হয়েছিল প্রায় দুই লাখ বছর আগে। কিন্তু লিখিত ভাষা আবিষ্কৃত হয়েছে মাত্র পাঁচ হাজার বছর হলো। এর আগে দীর্ঘসময় মানুষকে সবকিছু মুখস্থ রাখতে হতো। এই মনে রাখার কাজটা সহজ করার জন্য তারা গান, ছড়া ও সুর ব্যবহার করত। মন্ট্রিলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল লেভিটিন বলেছেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে আমাদের অনেক তথ্য স্মরণ রাখতে হয়েছে—কোন খাদ্য বিষাক্ত, কোনটা বিষাক্ত নয়; কীভাবে প্রাথমিক চিকিত্সার মাধ্যমে ক্ষত সারাতে হয় প্রভৃতি অনেক ধরনের তথ্য।’ শুধু আদিম যুগে নয়, আজকের দিনেও পৃথিবীতে অনেক সংস্কৃতিতে এই শ্রুতিনির্ভর মৌখিক চর্চার চল বিদ্যমান। মানুষের ইতিহাসের অনেকটা সময় ধরে এই ছড়া-গান-ছন্দের মাধ্যমে তথ্য মনে রাখার অভ্যাসের কারণে গানগুলো মাথায় গেঁথে যাওয়ার ব্যাপারটি ঘটে বলে মনে করেন বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীরা। -বিবিসি অনলাইন

প্রাসঙ্গিক: সুর কেন মানুষকে টানে

বোল্টের চেয়ে জোরে দৌড়ানো কি সম্ভব?

২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন উসাইন বোল্ট। ১০০ মিটার দৌড় তিনি শেষ করেছিলেন মাত্র ৯.৬৯ সেকেন্ডে। এক বছর পর রেকর্ডটা আবার নিজেই ভেঙেছেন এই জ্যামাইকান স্প্রিন্টার। ২০০৯ সালের বার্লিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি দৌড়ালেন মাত্র ৯.৫৮ সেকেন্ডে। এবার লন্ডন অলিম্পিকে গোটা ক্রীড়াবিশ্ব তাকিয়ে বোল্টের দিকে। আবারও কি নিজের রেকর্ড ভাঙবেন তিনি? বিজ্ঞানীরাও প্রশ্ন তুলেছেন, বিশ্বের এই দ্রুততম মানব কি এর চেয়েও জোরে দৌড়াতে পারবেন? প্রশ্ন উঠেছে, মানুষের পক্ষে এর চেয়ে জোরে দৌড়ানো সম্ভব কি না—এ নিয়েও।

বিগত বছরগুলোয় অ্যাথলেটদের পারফরম্যান্স বিচার করে মানুষের সক্ষমতা সম্পর্কে কিছুটা অনুমান দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিলেন গণিতবিদেরা। ১৯৯১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত পারফরম্যান্স বিচার করে দেখা গেছে, অ্যাথলেটদের গতি বেড়েছে। কিন্তু সেটা খুবই অপ্রত্যাশিতভাবে। ২০০৮ সালের আগে গণিতবিদ রেজা নোবারি বলেছিলেন, মানুষ সর্বোচ্চ ৯.৪৪ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড় শেষ করতে পারবে। কিন্তু ২০০৮ সালে বোল্টের বিশ্ব রেকর্ড গড়া দৌড়ের পর এই অনুমান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন নোবারি। বিস্তারিত পড়ুন