Posts Tagged ‘ বার্সেলোনা ’

যখন বার্সার ওপর ছিল মাদ্রিদের রাজত্ব

স্প্যানিশ লিগে বরাবরই দেখা যায় বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদের আধিপত্য। ১৯৯৭-৯৮ সাল থেকে বর্তমান ফরম্যাটের প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পর ১৭টি মৌসুমের মধ্যে ১৩বারই শিরোপা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছে স্পেনের শীর্ষ এই দুই ক্লাব। এর মধ্যে আটবারই জিতেছে বার্সা। রিয়াল জিতেছে পাঁচবার।

সাম্প্রতিক সময়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালের চেয়ে বার্সেলোনা কিছুটা এগিয়ে থাকলেও একটা সময় বার্সেলোনার ওপর আক্ষরিক অর্থেই রাজত্ব করত মাদ্রিদ। ফুটবল মাঠে শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে তো বটেই, এমনকি রাজনৈতিকভাবেও।

১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পর ক্ষমতা দখল করেন স্বৈরশাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো। এবং সাধারণ মানুষের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য খুব দ্রুতই তিনি ফুটবল মাঠে রিয়াল মাদ্রিদের সাফল্যকে কাজে লাগাতে শুরু করেন। কিন্তু সেসময় তাদের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ছিল কাতালোনিয়া ও বাস্ক জাতিগোষ্ঠীর স্বকীয়তার প্রতীক দুই ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা ও অ্যাথলেটিক বিলবাও।

franco real madrid

১৯৩৬ সালে স্প্যানিশ রিপাবলিকের বিরুদ্ধে সামরিক অভুত্থান শুরু করেন ফ্রাঙ্কো। সেসময় এই ক্যু’র বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধটা এসেছিল বার্সেলোনা থেকে। ফলে কাতালান জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের প্রতি বিশেষভাবেই ক্ষুব্ধ ছিলেন ফ্রাঙ্কো। ফুটবল মাঠে বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদের ওপর আধিপত্য করবে এটা মানতে পারেননি এই স্বৈরশাসক। রিয়ালের সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য নিজের ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করতেও বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করেননি ফ্রাঙ্কো।

আদিতে বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের নাম ছিল কাতালান এফসি বার্সেলোনা। কিন্তু কাতালোনিয়ার স্বকীয়তা-স্বাধীনতার দাবি যেন মাথাচাড়া না দেয়, সেজন্য তিনি ক্লাবের নাম পরিবর্তন করতে বাধ্য করেন। তাদের নতুন নাম হয় বার্সেলোনা সিএফ।

রিয়াল মাদ্রিদের সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য ফ্রাঙ্কো নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার কিভাবে করেছেন, তার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ ১৯৪৩ সালে কিংস কাপের (এখনকার কোপা ডেল রে) সেমিফাইনাল। প্রথম লেগে ৩-০ গোলের জয় দিয়ে ফাইনালের পথে অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছিল বার্সা। কিন্তু দ্বিতীয় লেগের খেলায় অংশ নিতে বার্সার ফুটবলাররা যখন মাদ্রিদে গেলেন, তখন আকস্মিকভাবে তাদের সাজঘরে হাজির হয়েছিলেন স্পেনের স্টেট সিকিউরিটির ডিরেক্টর। বার্সার খেলোয়াড়দের যে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছিল, তা স্পষ্টই বোঝা যায় সেই ম্যাচের ফলাফল দেখলে। রিয়ালের মাঠে ১১-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল বার্সেলোনা।

1943 barcelona defeat1943 barcelona defeat2

রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি ফুটবলার আলফ্রেড ডি স্টেফানোকে দলে ভেড়ানো নিয়েও বেধেছিল বিপত্তি। ১৯৫৩ সালে আর্জেন্টাইন এই ফুটবলারকে প্রথমে দলে ভিড়িয়েছিল বার্সেলোনা। কিন্তু সেসময় ফ্রাঙ্কো একটা ডিক্রি জারি করেন যে বিদেশী কোনো খেলোয়াড় কেনা যাবে না। শেষপর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনা সমঝোতার ভিত্তিতে এমন ঐক্যমত্যে পৌঁছানো হয় যে, ডি স্টেফানো এক মৌসুম-এক মৌসুম করে খেলবেন দুই দলের হয়েই। এই ঘটনার কিছুদিন পরই বার্সেলোনার সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান এনরিক মার্টি কোয়েত্তো। কিছুদিন পরে ডি স্টেফানোকে এককভাবেই দখল করে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ।

di stefano

আর্জেন্টাইন এই জাদুকরের দুর্দান্ত নৈপুন্যে ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত, ১৪ মৌসুমের মধ্যে নয়বারই শিরোপা ওঠে রিয়ালের ঘরে। ১৯৩৩ সালের পর ১৯৫৩-৫৪ মৌসুমেই প্রথমবারের মতো লা লিগা শিরোপা ওঠে রিয়ালের ট্রফি কেসে। ১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হয় রিয়াল। সেসময় মাদ্রিদ সত্যিই রাজত্ব করত বার্সেলোনার ওপর।

রাজনীতিতেও চলছে বার্সা-রিয়াল লড়াই

catalonia human chain 

‘রিয়াল মাদ্রিদ যখন বার্সেলোনার বিপক্ষে খেলে তখন বিশ্ব থেমে যায়।’- এল ক্লাসিকোর জনপ্রিয়তা বর্ণনা করতে গিয়ে ঠিক এই বাক্যটিই ব্যবহার করেছিলেন রিয়ালের সাবেক কোচ হোসে মরিনহো। খুব বেশি বাড়িয়ে হয়তো বলেননি এই পর্তুগিজ কোচ। গত বছরের অক্টোবরে রিয়াল-বার্সা দ্বৈরথে অংশ নিতে স্পেনে ছুটেছিলেন ২৮টি দেশের ৬৮০জন সাংবাদিক। খেলাটি সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার ৩০টিরও বেশি দেশে। খেলাটি একযোগে দেখেছিল ৪০ কোটি মানুষ। ফুটবলপ্রেমী, অথচ এল ক্লাসিকোর নাম শোনেননি এমনটা হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না। রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনার দ্বৈরথটা শুধু স্পেনেই না, সমগ্র ফুটবল বিশ্বেরই আকর্ষণ।

স্প্যানিশ এই দুইটি শহরের মধ্যে চলমান আরও একটি লড়াই হয়তো অচিরেই কেড়ে নিতে পারে সমগ্র বিশ্বের মনোযোগ। কারণ শুধু ফুটবলেই না, স্পেনের রাজনীতিতেও চলছে বার্সা-মাদ্রিদ লড়াই। সম্প্রতি স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা দাবি করে একটি মানববন্ধন করেছিলেন কাতালোনিয়ার বাসিন্দারা। স্বাধীনতার দাবি হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছিল প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। স্প্যানিশ সরকারের প্রতি কাতালানদের দাবি, খুব তাড়াতাড়ি একটা গণভোট আয়োজন করতে হবে, যা থেকে নির্ধারিত হবে যে, তাদের একটা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ে তোলার অধিকার আছে কিনা।

catalan1

‘কাতালোনিয়া স্পেন নয়’, ‘আমরা স্বাধীন হতে চাই’ ইত্যাদি ব্যানার লিখে লাখ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন এই মানববন্ধনে। লাল-হলুদের এই ঢেউটা অতিক্রম করেছে বার্সেলোনার বিখ্যাত ন্যু ক্যাম্প স্টেডিয়ামের ভেতর দিয়েও। কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনায় উপস্থিত ছিলেন সরকারি চাকুরিজীবী ইস্টার সারামোন। এখানকার অন্য অনেক বাসিন্দাদের মতো সারামোনও মনে করেন যে, কেন্দ্রিয় সরকার কাতালানদের উপর অনায্য আচরণ করছে। ট্যাক্স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে, ভাষার অধিকারসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক ইস্যুর ক্ষেত্রে। তিনি বলেছেন, ‘স্বাধীনতার পক্ষে সংখ্যাগরীষ্ঠ মানুষ আছে কিনা, সেটা দেখার জন্য আমরা একটা গণভোট চাই। কিন্তু সমস্যা হলো স্পেন এটা শুনবে না। আমাদের একটাই আশা যে, ইউরোপ আর বাকি বিশ্ব এটার জন্য স্প্যানিশ সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে পারে।’

স্বাধীন কাতালোনিয়ার দাবিটা অনেকদিন ধরেই ছিল। সেটা আরও জোরদার করেছে ইউরোপের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। ইউরো অঞ্চলের আর্থিক সংকটের সর্বশেষ শিকারে পরিণত হয়েছে স্পেন। যার ফলে এখন আন্তর্জাতিক সাহায্য চাওয়ার চিন্তাভাবনাও আছে ইউরোপের অন্যতম বড় অর্থনীতির এই দেশটির। নানা ধরনের কৃচ্ছনীতি আরোপের ফলে স্পেনের কেন্দ্রিয় সরকারও হয়ে পড়েছে ব্যপকভাবে অজনপ্রিয়। ট্যাক্স বৃদ্ধি, জনসেবামূলক খাতে বরাদ্দ ঘাটতির বিষয়গুলো মেনে নিতে পারছে না কাতালানরা। সেই সঙ্গে কাতালান ভাষার উপর আধিপত্যশীল আচরণও ক্ষুব্ধ করেছে এই অঞ্চলের মানুষদের। গত বছরের শেষের দিকে স্পেনের প্রতিটা স্কুলে স্প্যানিশ ভাষায় পাঠদানের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করার একটি প্রস্তাবও উস্কে দিয়েছে কাতালানদের স্বাধীকার আন্দোলন। সব মিলিয়ে বেশ খারাপ পরিস্থিতিতেই আছে স্পেনের কেন্দ্রিয় সরকার।

কিন্তু স্পেনের সবচেয়ে ধনী ও অন্যতম শিল্পায়িত অঞ্চলটিকে খুব সহজে স্বাধীনতাও দিতে চাইবে না মাদ্রিদের নীতিনির্ধারকরা। অর্থনৈতিক দিকগুলো বাদ দিয়ে শুধু ফুটবল দলটার দিকে তাকালেও স্পষ্ট বোঝা যায় কাতালানরা স্পেনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কাতালোনিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে দিলে স্পেনকে দল গঠন করতে হবে কার্লোস পুয়োল, জরডি আলবা, সেস ফেব্রিগাস, জেরার্ড পিকে, জাভি, সার্জিও বুসকেটস, ক্রিশ্চিয়ান টেলোদের ছাড়া। তেমনটা হলে ফুটবল বিশ্বে সর্বজয়ী স্পেনের আধিপত্য কতটা বজায় থাকবে সন্দেহ আছে।

barcelona

যদিও স্বাধীন কাতালোনিয়ার দাবি দিনদিন বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে কাতালোনিয়ার ৭.৫ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ৮১ শতাংশই চায় স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। বার্সেলোনা ফুটবল দলও গত ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছিল স্বাধীন কাতালোনিয়া ও তার ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণের দাবি, ‘আমাদের স্বাধীন দেশের পরিচয় তৈরির একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আমাদের ভাষা। ঠিক যেমনটা আমাদের ক্লাব। আমরা খুব দৃঢ়ভাবে কাতালান ভাষা চর্চা ও শিক্ষার অধিকার রক্ষা করতে চাই।’

কাতালোনিয়া আর স্পেনের এই লড়াইয়ের কেন্দ্রে রয়েছে বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদ। দুইটি শহরই দুই অঞ্চলের রাজধানী। তাই এখন হয়তো সমান্তরালেই চলতে পারে ফুটবলের ধ্রুপদী লড়াই আর রাজনীতির মারপ্যাঁচটা। মাঠের লড়াইয়ে আগামী মাসেই মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ¦ী এই দুই ফুটবল ক্লাব। ন্যু ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত হবে এবারের মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো। সেদিন হয়তো ঘুঁচেও যেতে পারে খেলা আর রাজনীতির সীমানা। স্বাধীনতার দাবি সম্বলিত ব্যানার নিয়েই হয়তো হাজির হয়ে যেতে পারেন বার্সেলোনার সমর্থকেরা।

স্পেন হতে চায় ‘সব পেয়েছির দেশ’

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, বিশ্বকাপ, অলিম্পিকের সোনা—কী নেই স্পেনের ট্রফি কেসে। ফুটবলের প্রায় সব কটি বড় শিরোপা জয়েরই স্বাদ পেয়েছে ইউরোপের ফুটবলের বর্তমান সম্রাটরা। কিন্তু তার পরও একটা আফসোস আছেই স্পেন-সমর্থকদের মনে। এখন পর্যন্ত ফিফা কনফেডারেশনস কাপের শিরোপাটা যে ঘরে তুলতে পারেনি এই সময়ের সেরা এ দলটি। ২০০৯ সালে সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েও বিফল হতে হয়েছিল স্পেনকে। এবার সেই আক্ষেপটা ঘোচাতে চান ভিসেন্তে দেল বস্কের শিষ্যরা। হয়ে যেতে চান ‘সব পেয়েছির দেশ’।

MK-BE444_SP_WC1_G_20100711184931

২০০৮ সালে স্পেনের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ভিসেন্তে দেল বস্ক। ওই বছর থেকে বিশ্বমঞ্চে স্পেনের জয়যাত্রারও শুরু। ২০০৮ সালে স্পেনকে ইউরো জিতিয়েই বিদায় নেন কোচ লুইস আরাগোনেস। ১৯৬৪ সালের পর প্রথম কোনো ট্রফি জেতে স্পেন। এত দীর্ঘ অপেক্ষা ছিল বলেই হয়তো ফুটবল-দেবী দুই হাত উপচে দিতে শুরু করে লা ফুরিয়া রোজাদের। ২০১০ সালে আজন্ম আরাধ্যের প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফির স্বাদ পায় স্পেন। ২০১২ সালে গড়ে অনন্য ইতিহাস। ইউরোপ-সেরার মুকুট ধরে রেখে প্রথম দল হিসেবে ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো—এই শিরোপাত্রয়ী জেতে।

Euro-2012-final-Spain-v-Italy-Spain-celebrating-victory-spain-national-football-team-31321204-594-412

সবই আছে। নেই শুধু কনফেডারেশনস কাপটাই। এবারই সেই আক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগ এসেছে স্পেনের সামনে। ২০১০ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের ১২ জন খেলোয়াড় নিয়েই সেই শূন্যস্থান পূরণের মিশনে নামছেন দেল বস্ক। এখন ক্রমাগত জিততে থাকা এই মেশিনটাকে ঠিকমতো সচল রাখতে পারলেই বাজিমাত করতে পারবেন। তবে কাজটা যে খুব একটা সহজ না, সেটাও বুঝতে পারছেন স্পেনের সফলতম এই কোচ। সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে দেল বস্ক বলেছেন, ‘আমরা জানি যে, ফুটবলে প্রতি এক বা দুই বছর পর অনেক কিছুর বদল ঘটে। আর আমরা ২০০৮ সাল থেকে যে জয়যাত্রা অব্যাহত রেখেছি, সেটার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখাটাও খুব কঠিন। তার পরও ক্রমাগত চেষ্টা করে যাওয়াটাই আমাদের বাধ্যবাধকতা।’

বরাবরের মতো স্পেন জাতীয় দলের মেরুদণ্ড গড়ে উঠছে বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলারদের দিয়ে। মোট ১৩ জন খেলোয়াড় থাকছেন স্পেনের শীর্ষ এই দুই ক্লাব থেকে। কিন্তু এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল থেকে এই দুই দলেরই বিদায় স্পেনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ হয়তো কিছুটা বাড়িয়ে দেবে। এর পাশাপাশি আছে সদ্যই শেষ হওয়া দীর্ঘ, স্নায়ুখরা মৌসুমের উপজাত হিসেবে পাওয়া ইনজুরির সমস্যা। কুঁচকির চোটের কারণে এরই মধ্যে ছিটকে পড়েছেন মাঝমাঠের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড় জাবি আলোনসো। সার্জিও রামোস, আলভারো আরবেলোয়া, জাভি ও সার্জিও বুসকেটসও ভুগছেন ইনজুরির সমস্যায়।

আক্রমণভাগের রণকৌশলও কিছুটা ভিন্নভাবে সাজাতে হতে পারে দেল বস্ককে। কারণ, এবারের ইউরোপিয়ান ফুটবল মৌসুমে খুব একটা ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি স্পেনের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ডেভিড ভিয়া। সেস ফেব্রিগাস আর ফার্নান্দো তোরেসও ভুগেছেন ফর্মহীনতায়। তাই দেল বস্কের ভরসা হয়ে উঠতে পারেন ভ্যালেন্সিয়ার স্ট্রাইকার রবার্তো সলদাদো। লা লিগার এবারের মৌসুমে ২৪টি গোল করে কোচের নজর কেড়েছেন ২৮ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার। তাঁর আক্রমণাত্মক মানসিকতা, দ্রুতগতি আর হেড থেকে গোল করার দক্ষতাকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন দেল বস্ক। তবে এক জায়গায় তাঁর আস্থার কোনো সমস্যা নেই। রিয়ালের মরিনহো-জমানায় ব্রাত্য হয়ে পড়লেও অধিনায়কের বাহুবন্ধনীটা ইকার ক্যাসিয়াসের হাতেই তুলে দেবেন বস্ক।

ফেবারিটের তকমা এঁটেই এবারের কনফেডারেশনস কাপে অংশ নিতে যাচ্ছে স্পেন। গ্রুপ পর্বে তাদের প্রতিপক্ষ উরুগুয়ে, নাইজেরিয়া ও নবাগত দল তাহিতি। ২০০৯ সালে সেমিফাইনাল থেকে স্পেনের বিদায়টা অঘটন হিসেবেই বিবেচিত হয় ফুটবল বিশ্বে। সেবার গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচ জিতলেও শেষ চারের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২-০ গোলে হেরে গিয়েছিল তারা। এবার হয়তো তাই ‘চুনোপুঁটিদের’ নিয়ে একটু বেশিই সতর্ক থাকবে স্পেন। কে জানে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আর্জেন্টিনা আর ফ্রান্সের মতো তারাও এবারই হয়ে যেতে পারে ‘সব পেয়েছির দেশ’।

ওয়েম্বলিতেই কেন চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল?

২০১১ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ভেন্যু ছিল ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম। সেই আসর শেষ হওয়ার পর যখন ২০১৩ সালের ফাইনাল ভেন্যু হিসেবেও ঐ একই স্টেডিয়ামের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন হয়তো অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। কারণ এর আগে কখনোই এত অল্প সময়ের ব্যবধানে একই ভেন্যুতে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই প্রতিযোগিতার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়নি। বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে লন্ডনের এই ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামকেই কেন নির্বাচন করা হয়েছিল এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ভেন্যু হিসেবে?

Wembley-Stadium_All german final

বিশ্ববাসীকে ফুটবল নামক খেলাটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ড। ১৮৬৩ সালে ইংল্যান্ডই তৈরি করেছিল বিশ্বের প্রথম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। সেসময়ই গড়ে উঠেছিল আধুনিক ফুটবলের অনেক নিয়ম-কানুন। এবছর উদযাপিত হতে যাচ্ছে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটির ১৫০তম বার্ষিকী। ফুটবল ইতিহাসের প্রথম অ্যাসোসিয়েশন গঠনের ১৫০তম বার্ষিকীটি স্মরণীয় করে রাখার জন্যই, ব্যতিক্রমী উদাহরণ গড়ে এবছরের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ভেন্যু নির্বাচন করা হয়েছে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামকে। ২০১১ সালের জুনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে উয়েফা সভাপতি মিশেল প্লাতিনি বলেছিলেন, ‘১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনই (এফএ) ইতিহাসের সবচেয়ে পুরোনো জাতীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। আর ২০১৩ সালে এটি উদযাপন করবে তার ১৫০তম বার্ষিকী। এটা ফুটবল ইতিহাসেরই একটা স্মরণীয় মুহূর্ত। এই বছর আমরা এই খেলাটির অনেক নিয়মকানুনেরও ১৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করব। এসব মাথায় রেখে  বিশেষ উপায়ে এই বার্ষিকীটা উপযাপন করা আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করেছি। একারণেই আমরা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালটাকে ফুটবলের মাতৃভূমি ইংল্যান্ডে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশেষভাবে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে, যেটা ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের মূল স্টেডিয়াম।’ মিশেল প্লাতিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয় ইতিহাসের প্রথম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন গঠনের ১৫০তম বার্ষিকী উদযাপনটাকে সম্মান জানানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আজ এখানে সমবেত হয়েছি কারণ ১৫০ বছর আগে ইংল্যান্ডেরই কিছু মানুষ ফুটবলের নিয়ম-কানুনগুলো তৈরি করেছিলেন। আমি বিশ্বাস করি, এটা একটা সম্মান জানানোর মতো মুহূর্ত। যদি আমরা ইতিহাসকে স্মরণ না করি, তাহলে আমরা কোন ভবিষ্যত্ও পাব না।’

_67727320_zepwemb

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপনা হিসেবে নির্মান করা হয়েছিল ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম। সেসময় এটি পরিচিত ছিল এম্পায়ার স্টেডিয়াম হিসেবে। ১৯২৪ সালের ২৩ এপ্রিল এই স্টেডিয়ামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন ইংল্যান্ডের রাজা জর্জ-৫। তারপর থেকে ইংলিশ ফুটবলের মূলকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় এই স্টেডিয়াম। ২০০৩ সালে নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য ভেঙ্গে ফেলা হয় পুরোনো স্টেডিয়ামটি। নতুন স্থাপনার কাজ শেষ হয় ২০০৭ সালে। এটি ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্টেডিয়াম।

এর আগে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ছয়টি চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল। শেষবার ২০১০-১১ মৌসুমে স্বাগতিক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিল স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা।

স্বাধীন কাতালোনিয়ার দাবি বার্সেলোনারও

Barcelona_2419869b‘ক্লাবের চেয়েও বেশি কিছু’ এটাই ইউরোপের অন্যতম শীর্ষ ক্লাব বার্সেলোনার প্রধান শ্লোগান। সম্প্রতি সেটা বেশ ভালোমতোই প্রমাণ করেছে এই স্প্যানিশ জায়ান্ট। স্পেনে স্বাধীন কাতালোনিয়া রাষ্ট্রের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছে তারা। সেই সঙ্গে কাতালান ভাষাভাষী মানুষের উপরে অনায্যভাবে কেন্দ্রিয় ভাষা (স্প্যানিশ) চাপিয়ে দেওয়ারও কড়া সমালোচনা করেছে বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষ।

এক সপ্তাহ আগে স্পেনের শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন যে, দেশের সব স্কুলে যেন স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়,  সেই প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কাতালোনিয়ার মানুষেরা। এই সিদ্ধান্তের ফলে কাতালান ভাষার উপর অনায্যভাবে রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন চালানো হচ্ছে বলে মনে করেন তাঁরা। বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবও স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকারের এই ভাষিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। এক বিবৃতিতে ক্লাবটি বলেছে, ‘আমাদের স্বাধীন দেশের (কাতালোনিয়া) পরিচয় তৈরির একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আমাদের ভাষা। ঠিক যেমনটা আমাদের ক্লাব। বিগত ৩৪ বছর ধরে আমাদের স্বাধীন ভাষাচর্চা বাধার মুখে পড়েছে। আমরা খুবই দৃঢ়ভাবে কাতালান ভাষা চর্চা ও শিক্ষার অধিকার রক্ষা করতে চাই।’

বর্তমানে কাতালোনিয়া রাজ্যের স্কুলগুলোতে কাতালান ভাষাতেই পাঠ দান করা হয়। আলাদাভাবে স্প্যানিশ শেখার ব্যবস্থা সেখানে আছে। কিন্তু সেটা প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক না। ইউরোপের ম্যাপে স্বাধীন একটি দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন-বিক্ষোভ করে আসছে কাতালোনিয়া। স্পেনের আর্থিক সংকটের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে আরও জোরদার হয়েছে কাতালোনিয়ার স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি। এরই মধ্যে নতুন এই ভাষানীতি প্রনয়নের ঘোষণা দিয়েছেন স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ামন্ত্রী জোসে ইগনাসিও ওয়ের্ট। প্রতিটি স্কুলে স্প্যানিশ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার এই প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা জানিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে বেরিয়ে এসেছেন কাতালোনিয়া রাজ্যের শিক্ষা উপদেষ্টা ইরেনে রিগাউ। টুইটারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন বার্সেলোনার অধিনায়ক কার্লোস পুয়োল।

বার্সেলোনার এই রাজনৈতিক পদক্ষেপটি এসেছে স্প্যানিশ ইতিহাসের এক বিশেষ মুহূর্তে। ইউরো অঞ্চলের আর্থিক সংকটের সর্বশেষ শিকারে পরিণত হয়েছে স্পেন। যার ফলে এখন আন্তর্জাতিক সাহায্য চাওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে ইউরোপের অন্যতম বড় অর্থনীতির এই দেশটি। নানা ধরণের কৃচ্ছনীতি আরোপের ফলে স্পেনের কেন্দ্রিয় সরকারও হয়ে পড়েছে ব্যপকভাবে অজনপ্রিয়। আর এই সংকটময় পরিস্থিতি আরও উস্কে দিচ্ছে স্বাধীন কাতালোনিয়া রাষ্ট্রের দাবি। কাতালানরা মনে করে, এই অঞ্চলটি স্পেন থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবেই বেশি অগ্রগতি করতে পারবে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।

নভেম্বরের ২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হয় কাতালোনিয়া রাজ্যের সংসদীয় নির্বাচন। যেখানে ফলাফল নির্বাচনী প্রধান ইস্যু ছিল স্বাধীন কাতালোনিয়ার দাবিতে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে কিনা। আর বলাই বাহুল্য, নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে গণভোট-পন্থী প্রার্থীরা। কিন্তু এই গণভোট কিভাবে আয়োজন করা যাবে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ স্পেনের সংবিধান অনুযায়ী দেশটির কোন রাজ্য আলাদাভাবে একটি গণভোট আয়োজন করতে পারে না। তবে বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের এই সাম্প্রতিক বিবৃতি চলমান কাতালোনিয়া রাষ্ট্রের দাবি যে আরও জোরদার করবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।

বার্সেলোনা ক্লাবের সঙ্গে স্পেনের কেন্দ্রিয় সরকারের বিরোধটা অবশ্য নতুন কোন ব্যাপার না। ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের সময়ও দেখা গিয়েছিল এই দ্বন্দ্ব। সেসময় স্পেনের কুখ্যাত একনায়ক ফ্রাঙ্কোর অন্যায় আধিপত্যের শিকার হয়েছিল বার্সেলোনা। ১৯৩৬ সালে ক্লাবটির সভাপতি জোসেফ সুনিয়োলকে গ্রেপ্তার করে হত্যা করেছিল ফ্রাঙ্কোর সেনাবাহিনী। ফ্রাঙ্কোর শাসনামলে কাতালান ভাষার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এমনকি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল কাতালান ভাষায় লেখা বহু বই।— টেলিগ্রাফ

পরবর্তী প্রজন্মেও চলবে মেসি-রোনালদো দ্বৈরথ?

ফুটবল বিশ্বে মেসি-রোনালদো দ্বৈরথ খুবই আলোচিত একটা বিষয়। স্প্যানিশ লিগে তাঁরা খেলেনও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই ক্লাব বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। মেসি, নাকি রোনালদো—এ সময়ের সেরা ফুটবলার কে? এই প্রশ্নে প্রায়ই ঝড় ওঠে ফুটবল অঙ্গনে। আর এবার বিস্ময়করভাবে মাঠের এই দ্বৈরথ যেন চলে এসেছে ব্যক্তিগত পর্যায়ে। গতকাল বার্সেলোনার একটি হাসপাতালে ভূমিষ্ঠ হয়েছে মেসির প্রথম পুত্রসন্তান। এর আগে ২০১০ সালের জুন মাসে পিতা হয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এ সময়ের সেরা দুই ফুটবলারের পুত্রদের বয়সের ব্যবধান ৮৬৯ দিন। মেসি ও রোনালদোর বয়সের ব্যবধানও ঠিক ৮৬৯ দিন। কাকতালীয় ব্যাপার হলেও, অনেকেই মনে করছেন, এটা যেন মেসি-রোনালদো দ্বৈরথ আরও লম্বা সময় ধরে চলার ইঙ্গিত। তাহলে কি পরবর্তী প্রজন্মে পুত্রদের মাধ্যমেও শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই জারি রাখবেন তাঁরা?

বার্সেলোনার ন্যু ক্যাম্প স্টেডিয়ামের ৭০০ মিটার দূরের ডেক্সাস হাসপাতালে জন্ম নিয়েছে মেসির প্রথম সন্তান। পুত্রসন্তানের জনক হওয়ার পর ফেসবুকে মেসি লিখেছেন, ‘আজ আমি দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ। আমার পুত্রসন্তানের জন্ম হয়েছে। ঈশ্বরকে অনেক ধন্যবাদ চমত্কার এই উপহারের জন্য। আমাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য আমার পরিবারকেও ধন্যবাদ। সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা।’ মেসি দম্পতি তাদের পুত্রসন্তানের নাম রেখেছেন থিয়াগো।

এর আগে, ২০১০ সালের ১৭ জুন, জন্ম নিয়েছিল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পুত্রসন্তান। দুই তারকার এই দুই পুত্রের বয়সের ব্যবধান ৮৬৯ দিন। রোনালদোও মেসির ঠিক ৮৬৯ দিন আগে চোখ খুলেছিলেন পৃথিবীতে। এখন নিজ নিজ পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে থিয়াগো মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো জুনিয়রও যদি ফুটবলের জগতে পা রাখে, তাহলে হয়তো ক্রীড়াবিশ্ব আরও একটা প্রজন্ম উপভোগ করতে পারবে মেসি-রোনালদোর এই দ্বৈরথ।

মরিনহো কি সর্বকালের সেরা ক্লাব কোচ?

গত সপ্তাহে রিয়াল মাদ্রিদের স্প্যানিশ লিগ শিরোপা জয় নিশ্চিত করার মুহূর্তটাই, হয়তো ছিল কোচ হোসে মরিনহোর জীবনের সবচেয়ে তৃপ্তিদায়ক মুহূর্ত। দুই হাতের সাতটা আঙ্গুল তুলে তিনি সবাইকে জানিয়েছিলেন যে, এটা তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারের সপ্তম লিগ শিরোপা। সেটাও তিনি জিতেছেন চারটি ভিন্ন ভিন্ন দেশে, ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ-পরিস্থিতিতে। পোর্তো (পর্তুগাল), চেলসি (ইংল্যান্ড), ইন্টার মিলান (ইতালি) ও সর্বশেষ রিয়াল মাদ্রিদের (স্পেন) হয়ে। আর এই তাক লাগানো সাফল্যটাও মরিনহো পেয়েছেন মাত্র ১০ বছরের মধ্যে। তিনি যে ক্লাব ফুটবল জগতে এসময়ের অন্যতম সেরা কোচ, তা নিয়ে হয়তো আর দ্বিমত করবে না কেউই। নিজেকে অনেক আগেই ‘স্পেশাল ওয়ান’ বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন এই পর্তুগিজ কোচ। আর এবার হয়তো সার্বজনীনভাবেও নিজের বিশেষত্বের স্বীকৃতিটা পেয়ে যেতে পারেন মরিনহো। এসময়ের সেরা দল বার্সেলোনাকে পেছনে ফেলে রিয়াল মাদ্রিদকে লা লিগা শিরোপা এনে দেওয়ার পর ফুটবল বিশ্বে বেশ জোর বিতর্কই চলছে যে, মরিনহোকে সর্বকালের সেরা ক্লাব কোচ বলা যায় কিনা, তা নিয়ে। বিস্তারিত পড়ুন

স্বদেশীদের ভালোবাসা কেন পাননা লিওনেল মেসি?

একের পর এক তাক লাগানো সব কীর্তি করে ফুটবল বিশ্বকে হতবিহ্বল করে রাখছেন লিওনেল মেসি। মাঠে তাঁর পায়ের অসাধারণ কারুকাজ দেখে তাজ্জব বনে যায় ফুটবলপ্রেমীরা। ধারাভাষ্যকারেরা মেসির গোলের বর্ণনা দিতে গিয়ে বিশেষণ হারিয়ে ফেলেন! অবাক বিস্ময়ে ভাবেন, এরকম জাদুকরী ফুটবল খেলা কিভাবে সম্ভব? নিজের যোগ্যতার প্রমাণস্বরুপ মাত্র ২৪ বছর বয়সেই টানা তৃতীয়বারের মতো ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতেছেন বার্সেলোনার এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার জার্সি গায়ে করে চলেছেন একের পর এক গোল, জিতে চলেছেন একের পর এক শিরোপা। মেসি যে এসময়ের সেরা ফুটবলার, তা এখন মোটামুটি সুপ্রতিষ্ঠিত। ফুটবল বিশ্বে জোর বিতর্ক চলছে, তিনি সর্বকালেরই সেরা ফুটবলার কিনা, তা নিয়ে। এই বিতর্কের রসদ জুগিয়ে প্রায়ই গণমাধ্যমে সংবাদ শিরোনাম হন সর্বকালের সেরা দুই ফুটবলার হিসেবে খ্যাত পেলে-ম্যারাডোনা, সর্বকালের সেরা কোচ হিসেবে বিবেচিত স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন, ব্রিটিশ স্ট্রাইকার ওয়েইন রুনি, মেসির বার্সা সতীর্থ জাভি-পুয়োলসহ আরো অনেক অনেক ফুটবল তারকারা। পেলে ব্যাতিত অন্যান্য সবাই মেসিকে সর্বকালের সেরা বলে সরাসরি কোন রায় না দিলেও অন্তত সর্বকালের সেরার সংক্ষিপ্ত তালিকায় মনোনয়নটা দিয়েছেন জোড়ালো কণ্ঠে। ক্যারিয়ার শেষে মেসি অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে যাবেন, এমন বিশ্বাসও আছে অনেকের। তবে এত কিছুর পরেও এখনও কিন্তু একটা হতাশা কুরে কুরে খাচ্ছে লিওনেল মেসিকে। মন জয় করা তো অনেক দূরের কথা, এখনও নিজ দেশ আর্জেন্টিনার মানুষদের সমর্থনটাও ভালোমতো আদায় করতে পারেননি তিনি। তাঁর প্রতি অভিযোগ: তিনি কাতালানদের, আর্জেন্টিনার নন। দেশের প্রতি ভালোবাসার ঘাটতি আছে কিনা, এমন কটু প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে সমগ্র ফুটবল বিশ্বকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখা এই ফুটবলারকে। কেন স্বদেশীদের ভালোবাসা পাননা লিও মেসি? বিস্তারিত পড়ুন

রোমারিওর অন্য খেলা!

ব্যাংকারদের মতো ধূসর স্যুট পড়া, মাথায় কাঁচাপাকা চুলওয়ারা ছোট্ট মানুষটাকে দেখলে চেনাই যায় না। অনুমান করতেও কষ্ট হয় যে, এই মানুষটাই একটা সময় গোটা ফুটবল দুনিয়া দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। ১৯৯৪ সালে এই মানুষটার অসাধারন ফুটবল জাদুতেই ব্রাজিল জিতেছিল চতুর্থ বিশ্বকাপ শিরোপা। ৯৪-এর ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার রোমারিও আবার ফিরেছেন। তবে এবার খেলার মাঠে নয়। কিছুটা ভিন্ন জগতে। বিস্তারিত পড়ুন