Posts Tagged ‘ ফেসবুক ’

প্রযুক্তি জগতের পেটেন্ট যুদ্ধ

বর্তমানের প্রযুক্তি জগতে একটা যুদ্ধই শুরু হয়ে গেছে বলা যায়। আর এই যুস্ত্রের প্রধান অস্ত্র হিসেবে গণ্য হচ্ছে মেধাসত্ব আইন বা পেটেন্টকে। ব্যবসায়িকভাবে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে এই মেধাসত্ত্বের অধিকার। আদর্শিকভাবে, উদ্ভাবকদের স্বীকৃতি প্রদান করাই পেটেন্ট বা মেধাসত্ব আইনের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হলেও বর্তমান প্রযুক্তি দুনিয়ায় এগুলো কাজ করছে গুগল, অ্যাপল, মাইক্রোসফট, ইয়াহুর মতো বড় বড় কর্পোরেশনগুলোর গোলা-বারুদ হিসেবে। আর এই যুদ্ধে খোদ উদ্ভাবনী প্রক্রিয়াটাই সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পেটেন্ট বিশেষজ্ঞরা। বিস্তারিত পড়ুন

ফেসবুকে ফিরছেন ‘নার্সিসাস’!

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো মানুষকে নিজ ভুবনকেন্দ্রিক ভাবনার তাড়না যোগাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে একটা সন্দেহ-সংশয় বিশেষজ্ঞদের বেশ কিছুদিন যাবতই ছিল। আর সম্প্রতি এই সন্দেহের যথেষ্ট ভিত্তি আছে বলে জানান দিয়েছেন গবেষকরা। তাঁদের দাবি অনুসারে, একটা মানুষ কতখানি আত্মকেন্দ্রিক সেটা তার ফেসবুকের বন্ধু সংখ্যা এবং এর অন্যান্য ব্যবহার দেখে অনুমান করা সম্ভব। শুধু তাই না, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে গ্রীক দেবতা নার্সিসাস আবার নতুনভাবে ফিরে আসছেন বলে বলেও মন্তব্য করেছেন ওয়েস্টার্ন ইলিনিয়স বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষকরা। বিস্তারিত পড়ুন

সভ্যতার আদল গড়া নিউরনগুলো

স্নায়ুবিজ্ঞানী বিলয়ানুর রামাচন্দ্রন কথা বলেছেন মিরর নিউরনের আকর্ষণীয় কার্যাবলী নিয়ে। খুব সাম্প্রতি আবিস্কৃত হয়েছে যে, এই নিউরণগুলোর মাধ্যমে আমরা কিভাবে জটিল সামাজিক আচরণবিধিগুলো দ্রুত শিখে ফেলি। যেগুলোর কিছু কিছু আমাদের চেনাজানা মনুষ্য সভ্যতারই ভিত্তি গড়ে দিয়েছে।

আমি আজ আপনাদের সামনে কথা বলতে চাই মনুষ্য মস্তিস্ক নিয়ে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এই বিষয়টা নিয়েই গবেষণা করি। এক মুহূর্তের জন্য এই সমস্যাটা নিয়ে একটু ভাবুন। এই হল একটা মাংস পিণ্ড। মোটামুটি তিন পাউন্ড ওজনের, যেটা আপনি আপনার হাতের তালুর মধ্যেই ধরতে পারেন। কিন্তু এটা এই আর্ন্তনক্ষত্রিক জগতের বিশালত্বকেও ধারণ করতে পারে। এটা অসীমের অর্থকে ধারণ করতে পারে। আপনি আপনার নিজের অস্তিত্বের অর্থ নিয়েও প্রশ্ন করতে পারেন। প্রশ্ন করতে পারেন ঈশ্বরের প্রকৃতি নিয়েও।

আর এটা সত্যিই এই দুনিয়ার সবচেয়ে বিস্ময়কর জিনিস। এটা্ই মনুষ্য প্রজাতির কাছে একটা বিশাল রহস্য। কিভাবে এ-সব কিছু এল? তো, এই মস্তিস্কটা, যেমনটা আপনি জানেন, তৈরি হয়েছে নিউরন দিয়ে। আমরা এখানে নিউরনগুলোকে দেখছি। পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের মস্তিস্কে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরন থাকে। আর মস্তিস্কের মধ্যে এই প্রতিটি নিউরন প্রায় ১০০০ বা ১০,০০০ অন্যান্য নিউরনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এটা মাথায় রেখে, মানুষ হিসেব করেছে যে, এই পরিমাণ মস্তিস্ক কার্যকলাপের permutation ও combination -এর অঙ্কটা মহাবিশ্বের সব মৌলিক কনিকার সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যায়।

তো, আপনি কিভাবে এই মস্তিস্ক নিয়ে জানাবোঝাটা শুরু করবেন? একটা পদ্ধতি হলো, সেইসব রোগীদের নিয়ে পরীক্ষা করা যাদের মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশে ক্ষত আছে, এবং এটার উপর নির্ভর করে তাদের আচরণের পরিবর্তন পর্যালোচনা করা। এটা নিয়েই আমি TED এ গতবার কথা বলেছি। আজ আমি একটা ভিন্ন ধরণ নিয়ে কথা বলব। যেটা হলো: মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশে ইলেকট্রোড লাগানো। যেন সত্যি সত্যিই মস্তিস্কের একেকটা স্বতন্ত্র স্নায়ুকোষের কার্যকলাপ রেকর্ড করা যায়।

এখন, খুব সমপ্রতি একটা আবিস্কার সাধিত হয়েছে ইতালির পারমায়। জিয়াকোমো রিজোলাত্তি ও তাঁর সহকর্মী গবেষক দলের দ্বারা। সেটি হলো, এক ধরণের গুচ্ছ নিউরণের উপস্থিতি। যাদেরকে বলা হয় মিরর নিউরন। যেগুলো থাকে মস্তিস্কের সামনে, ফ্রন্টাল লোবসে। এখন, এই আবিস্কারটা এতদিন ধরে জানা একটা ধারণাকে উল্টে দেয় যে, মস্তিস্কের সামনে থাকা নিউরনগুলো সাধারণ মোটর কমান্ড নিউরন। এটাই আমরা জানি বিগত ৫০ বছর ধরে। এই নিউরনগুলো সক্রিয় হবে, যখন কোন ব্যক্তি কোন নির্দিষ্ট একটা কাজ করতে যাবেন। উদাহরণ হিসেবে, যদি আমি এটা করতে যাই, একটা আপেলের কাছে পৌঁছাতে চাই ও সেটা ধরতে চাই, তাহলে আমার মস্তিস্কের সামনে থাকা একটা মোটর কমান্ড নিউরন সক্রিয় হবে ও আমাকে নির্দেশ দিবে সেই বস্তুটা ধরে ফেলতে। এইগুলো হলো মোটর কমান্ড নিউরন। এটাই আমরা জানি একটা লম্বা সময় ধরে।

কিন্তু রিজোলাত্তি যা পেয়েছেন, তা হলো এই নিউরনগুলোরই একটা সাবসেট। সম্ভবত এগুলোর ২০ শতাংশ মতো। এই নিউরনগুলো সক্রিয় হবে, যখন আমি অন্য কাউকেও ঐ একই কাজ করতে দেখব। তো, এগুলো সেই নিউরন, যেটা সক্রিয় হবে যখন আমি নিজে কোন কাজ করতে যাব এবং তখনও, যখন আমি জো-কে কোন একটা বস্তুর কাছে পৌঁছাতে ও ধরতে দেখব। আর এটা সত্যিই তাক লাগানোর মতো। কারণ ব্যাপারটা এরকম যে, এই নিউরনগুলো অন্য মানুষদের দৃষ্টিভঙ্গিটাও গ্রহণ করছে। এই নিউরনগুলো মস্তিস্কের মধ্যে অন্য মানুষদের কার্যকলাপের একটা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি স্টিমুলেশন তৈরি করে।

এখন, এই মিরর নিউরনগুলোর গুরুত্বটা কোথায়? একটা হলো, এগুলো নিশ্চিতভাবেই কোন ব্যক্তিকে অনুকরণ ও তার সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা করা জাতীয় জিনিসের সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ একটা জটিল কাজ অনুকরণ করতে হলে আমার মস্তিস্ককে অন্য মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে পারতে হবে। তো, এটা অনুকরণ করা ও কারও সমকক্ষ হতে পারার জন্য জরুরি। আচ্ছা, এটা গুরুত্বপূর্ণ কেন? এবার আমরা নজর দেই পরবর্তী স্লাইডে। তো, আপনি কিভাবে এই অনুকরণ করেন? কেনই বা এটা গুরুত্বপূর্ণ? মিরর নিউরন আর অনুকরণ, কারও সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা?

এখন আমরা একটু নজর দেই সংস্কৃতির দিকে। মনুষ্য সংস্কৃতি প্রত্যয়টার দিকে। আপনি যদি প্রায় ৭৫ হাজার থেকে একশ হাজার বছর পিছিয়ে গিয়ে মানুষের বিবর্তনটা দেখেন, তো দেখবেন, প্রায় ৭৫ হাজার বছরের কাছাকাছি সময়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটেছিল। আর সেটা হলো একটা তড়িত্ উত্থান ও দ্রুতই খুব দক্ষতাপূর্ণ কর্মকাণ্ড, যেগুলো মানুষেরই বিশেষত্ব, যেমন হাতিয়ার, আগুন, বাসস্থানের ব্যবহার এবং অবশ্যই ভাষার ব্যবহার। এবং অন্য কোন মানুষের চিন্তা অনুমান করতে পারার ও সেই মানুষের আচরণ অনুধাবন করতে পারার ক্ষমতা। এই সবকিছুই হয়েছিল তুলনামূলক দ্রুততার সঙ্গে।

যদিও মনুষ্য মস্তিস্ক তার বর্তমান আকারটা পেয়েছিল প্রায় তিন বা চারশ হাজার বছর আগে। কিন্তু একশ হাজার বছর আগে এই সবকিছু ঘটেছিল খুবই খুবই দ্রুত। আর আমার দাবি হলো, এ সবকিছুর মূলে ছিল একটা সুক্ষ মিরর নিউরন ব্যবস্থার উদ্ভব। যেটা আপনাকে অন্য মানুষদের কাজের অনুকরণ ও তার সমকক্ষ হতে সামর্থ্য যোগায়। তো, তার ফলে যখন কোন গোষ্ঠীর একজন সদস্য একটা আকস্মিক আবিস্কার করে ফেলে, ধরেন, আগুনের ব্যবহার বা নির্দিষ্ট কোন হাতিয়ারের ব্যবহার আবিস্কার করে ফেলে, তখন পরবর্তীতে তা বিস্মৃত হয়ে যাওয়ার বদলে এটা দ্রুতই সমগ্র জনমানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত হয়।

তো, এর ফলে বিবর্তনটা হঠাত্-ই ডারউইনিয়ান বিবর্তন না হয়ে, হয়ে পড়ে লামারকিয়ান বিবর্তন। ডারউইনিয়ান বিবর্তন খুব ধীরগতির, এটা নেয় কয়েকশ হাজার বছর। একটা পোলার বিয়ার থেকে কোট বানাতে এটা নেয় কয়েক হাজার প্রজন্ম। হয়ত একশ হাজার বছর। কিন্তু একটা মানুষ, একটা বাচ্চা, শুধু তার মা-বাবাকে একটা পোলার বিয়ার মেরে ফেলে সেটার চামড়াটা গায়ে জড়াতে দেখে। আর একধাপেই সেটা শিখে ফেলে। একটা পোলার বিয়ার যা শিখতে একশ হাজার বছর সময় নেয়, সেটা একটা মানুষের বাচ্চা ৫ মিনিটেই শিখতে পারে। বা ১০ মিনিটে। আর যখন এটা শেখা হয়ে গেল, তখন তা বাকি জনসমষ্টির মধ্যে ছড়িয়ে যায় গানিতিক হারে।

এটাই হলো ভিত্তি। জটিল কাজগুলোর অনুকরণ করতে পারাই হলো, যেটাকে আমরা বলি সংস্কৃতি আর এটাই সভ্যতার ভিত্তি। এখন, মস্তিস্কে আরেক ধরণের মিরর নিউরণ আছে, যেগুলো কিছুটা ভিন্ন ধরণের কাজে সম্পৃক্ত থাকে। কোন কাজের জন্য যেমন মিরর নিউরন থাকে। তেমনি কিছু মিরর নিউরন আছে স্পর্শ অনুভবের ক্ষেত্রে। অন্যভাবে বলা যায়, যদি কেউ আমাকে স্পর্শ করে, আমার হাত স্পর্শ করে, তাহলে মস্তিস্কের, সেনসোরি অঞ্চলের স্টোমাটোসেন্সরি কোরটেক্স-এর নিউরন সক্রিয় হবে। কিন্তু, এই একই নিউরন, কিছু ক্ষেত্রে সক্রিয় হয়ে উঠবে, যখন আমি অন্য কোন মানুষকেও স্পর্শ পেতে দেখবে। তো, এটা অন্য মানুষের স্পর্শ পাওয়ার অনুভূতির সঙ্গেও একাত্ম বোধ করছে।

তো, এই নিউরনগুলো বেশিরভাগই সক্রিয় হবে, যখন আমি শরীরের বিভিন্ন অংশে স্পর্শানুভূতি লাভ করব। ভিন্ন ভিন্ন অংশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিউরন সক্রিয় হবে। কিন্তু এগুলোর একটা সাবসেটও সক্রিয় হবে, যদি আমি শুধু অন্য কাউকে শরীরের সেই একই অংশে স্পর্শ পেতে দেখি। তো, এখানে আবার আমরা কিছু নিউরন পাচ্ছি, যেগুলো অন্য কারো স্পর্শানুভূতির সঙ্গে একাত্মতা জানাচ্ছে। এখন, তাহলে প্রশ্নটা ওঠে যে: যদি আমি শুধু অন্য একজন ব্যক্তিকে স্পর্শ পেতে দেখি, তাহলে আমি কেন কনফিউসজড হয়ে যাই না, আর কেন শুধু অন্য ব্যক্তির স্পর্শানুভূতি দেখে আমি আক্ষরিকভাবেই সেই স্পর্শ অনুভব করি না? আমি বলতে চাচ্ছি যে, আমি ঐ ব্যক্তির আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলাম, কিন্তু আমি তো সত্যি সত্যিই সেই স্পর্শটা অনুভব করলাম না। এর কারণ হচ্ছে, আপনার ত্বকে কিছু রিসেপটর আছে। স্পর্শ ও ব্যাথা অনুভবের রিসেপটর। এগুলো আপনার মস্তিস্কে ফিরে যায়, আর গিয়ে বলে, “চিন্তা করো না, তোমাকে স্পর্শ করা হয় নি।” তো, অন্য ব্যক্তির আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের মাধ্যমে আপনি সত্যি সত্যিই স্পর্শ অনুভব করেন না। এছাড়া হয়তো আপনি বিভ্রান্ত হয়ে পড়তেন ও তালগোল পাকিয়ে ফেলতেন।

আচ্ছা। তো, এই রিসেপটরগুলোর ফিরতি সাড়া, মিরর নিউরনের সিগন্যালগুলোকে বাতিল করে দেয়। ফলে আপনি সচেতনভাবে সেই স্পর্শ অনুভব করেন না। কিন্তু যদি আপনি আপনার একটা হাত সড়িয়ে ফেলেন, আপনি হাতটাকে অবশ করে ফেলেন, আপনি আমার হাতে একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে ব্রাচিয়াল প্লেক্সাস অবশ করে ফেললেন, এখন আমার হাত একেবারে সাড়হীন। এর মধ্য দিয়ে আর কোন অনুভূতি প্রবাহিত হচ্ছে না। এখন যদি আমি আপনাকে স্পর্শ পেতে দেখি, তাহলে আমি সত্যি সত্যিই আমার হাতে সেই স্পর্শ অনুভব করতে পারব। অন্যভাবে বললে, আপনি আপনার ও অন্য মানুষদের মধ্যে বিদ্যমান ব্যারিয়ার সড়িয়ে দিয়েছেন। তো, আমি এদেরকে ডাকি গান্ধি নিউরন বলে। বা একাত্মতার নিউরন (হাসি)

আর এটা কোন বিমূর্ত রূপক অর্থে না। আপনাকে, তার কাছ থেকে অন্য মানুষদের কাছ থেকে দূরে সড়িয়ে রেখেছে আপনার ত্বক। ত্বকটা সড়িয়ে ফেলুন, আপনি আপনার মাথায় অন্য মানুষদের স্পর্শানুভূতিও অনুভব করতে পারবেন। আপনি আপনার ও অন্য মানুষদের মধ্যে বিদ্যমান ব্যারিয়ার সড়িয়ে ফেলতে পারবেন। আর এটাই, বেশিরভাগ প্রাচ্য দর্শনের ভিত্তি, যে, অন্য মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সত্যিকারের কোন স্বাধীন-স্বতন্ত্র মনুষ্য সত্তা নেই। আপনারা, বস্তুত শুধু ফেসবুক বা ইন্টারনেট দিয়েই যে সংযুক্ত আছেন, তা-ই নয়। বরং আপনারা সত্যিকার অর্থে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত আছেন আপনাদের নিউরন দিয়ে। আর এই মুহূর্তে এই ঘরে এই নিউরনগুলোর একটা বন্ধন আছে। তারা কথা বলছে পরস্পরের সঙ্গে। আর সত্যিই আপনার সচেতনতা ও অন্য কারও সচেতনতার মধ্যে কোন ভিন্নতা নেই।

আর এটা কোন আউল-ফাউল দর্শন না। এটা গড়ে উঠেছে আমাদের স্নায়ুবিজ্ঞানের গোড়ার দিককার বোঝাপড়া থেকে। তো, আপনার কাছে অলীক হাতওয়ালা কোন ব্যক্তি আছে। যদি হাতটা সড়িয়ে দেওয়া হয় আর আপনার কাছে ঐ অলীক হাতটা আসে, তখন যদি আপনি অন্য কাউকে স্পর্শ পেতে দেখেন, তাহলে আপনি আপনার ঐ অদৃশ্য হাতে সেই স্পর্শ অনুভব করবেন। আরও মজার জিনিস হলো, যদি আপনি আপনার ঐ অলীক হাতটাতে ব্যাথা অনুভব করেন, তাহলে আপনি অন্য কোন ব্যক্তির হাত মালিশ করে দিতে দেখলেও আপনার ব্যাথার নিরাময় অনুভব করতে পারবেন। একদম যেন, এই নিউরনগুলো আপনাকে ব্যাথার উপশম করে দিচ্ছে শুধুই অন্য কারও হাত মালিশ করতে দেখে।

তো, এবার আমার শেষ স্লাইড। দীর্ঘদিন যাবত মানুষ বিজ্ঞান ও মানবিক— এই দুইটাকে জ্ঞানচর্চার দুইটা পৃথক শাখা হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে। সি.পি.স্নো বলেছেন দুইটা ভিন্ন সংস্কৃতির কথা। একদিকে বিজ্ঞান, অন্যদিকে মানবিক। কখনোই এই দুইয়ের মিলন হয়নি। মিরর নিউরন ব্যবস্থার কার্যকলাপের উপর দৃষ্টিপাত করে আমি বলতে চেয়েছি, এটা আপনাকে সুযোগ করে দেয় সচেতনতা, আত্মসত্তার উপস্থাপন, কী আপনাকে অন্য মানুষদের থেকে পৃথক করে রাখে, কিভাবে আপনি অন্য মানুষদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আরেকবার চিন্তা করার। এমনকি সংস্কৃতি ও সভ্যতার উদ্ভব কেমন করে হলো তা নিয়েও। যে বিষয়গুলো খোদ মনুষ্য প্রজাতিরই বিশেষত্ব। ধন্যবাদ। (হাততালি)

ধ্যানমগ্ন ঋষি… এবং…

১.

বেশ কিছুকাল আগের কথা। দিকে দিকে শুধু যুদ্ধ। কোথাও শান্তি নাই। হিংসা জন্ম নিয়াছে মানুষের মনে। এক দেশের মানুষের সাথে আরেক দেশের মানুষের কোনো যোগাযোগ নাই। যেটুকু আছে, সেটা শুধুই যুদ্ধের। এইরকম পরিস্থিতিতে এক ঋষি কিছুতেই ইহা মানিয়া লইতে পারিতেছিলেন না। তিনি ইহা হইতে উত্তরণের পথ খুঁজিতে তৎপর হইলেন। অতঃপর “মানুষ পরস্পরের সহিত একটা অভিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ হইবে”- ঈশ্বরের নিকট এই প্রার্খণা করিবার লক্ষ্যে ধ্যানে বসিলেন তিনি।

২.

বহুদিন পরে ঋষির ধ্যান ভাঙ্গিল। ঋষি স্বপ্নে দেখিলেন, ঈশ্বর তাঁকে বলিতেছেন, “বৎস দ্যাখো, পৃথিবীর মানুষ একটা অভিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ হইয়াছে।” চরম একটা প্রশান্তি ঋষির মনে ছড়াইয়া পড়িল। ঋষি অতঃপর উঠিয়া এই নতুন দুনিয়া দেখিতে বাহির হইলেন। বন-জঙ্গল পার হইয়া ঋষি লোকালয়ে প্রবেশ করিলেন। দুনিয়া আসলেই বদলাইয়া গিয়াছে। ঋষি অবাক বিস্ময়ে এই নতুন দুনিয়া দেখিতে লাগিলেন। চারিদিকে আলো ঝলমল করিতেছে। উঁচু উঁচু বাড়িঘর। লোকজন ব্যস্ত পায়ে হাঁটাহাঁটি করিতেছে। ঋষি কোনো কিছুর মধ্যেই যুদ্ধ-বিগ্রহের কোনো ছাপ খুঁজিয়া পাইলেন না। ঋষি চরম আনন্দিত হইয়া এক সুবেশা তরুণের কাছে গিয়া এই নতুন জায়গার নাম জানিতে চাইলেন। তরুণটি কিছুক্ষণ অবাক বিস্ময়ে ঋষির দিকে তাকাইয়া তার হাতের একটা চৌকোনা যন্ত্রে কী যেন টেপাটেপি করিতে থাকিল। ঋষি বুঝিতে পারিলেন না ব্যাপারটা। তিনি অতঃপর আরো চার-পাঁচ জনের কাছে গিয়া একই কথা জানিতে চাহিলে, সেখানেও তিনি এই একই রকমের ব্যবহারই পাইলেন। ঋষি চরম বিস্মিত হইলেন। কিছুটা বিব্রতও হইলেন। ঈশ্বরের প্রতি কিঞ্চিত অভিমানও জন্মাইল তাঁর। এই নতুন দুনিয়ার আচার-ব্যবহার সম্পর্কে কেন ঈশ্বর তাঁকে কিছু বলিয়া দ্যান নাই? মানুষ কোন বন্ধনে আবদ্ধ হইয়াছে? তিনি তো তা দেখিতে পাইতেছেন না। এখন পযন্ত তিনি কোনো মানুষকে অন্য কোনো মানুষের সাথে কথা বলিতে দ্যাখেন নাই। সবাই শুধু কী একটা বাক্সের মতো জিনিস টেপাটেপি করে।

৩.

কয়েকটা দিন অতিবাহিত হবার পর… ঋষিকে দেখা গেল, তিনি ক্ষুব্ধভাবে একটা রাস্তার ধারে দাঁড়াইয়া আছেন। কিছুক্ষণ আগে তাহার সহিত এক সহৃদয় ব্যক্তির (ঋষির নিকট তিনি সহৃদয়, কিন্তু সবাই তাহাকে অর্ধ উন্মাদ বলিয়া সম্মোধন করিয়া থাকে) সাক্ষাৎ হইয়াছে। তিনি ঋষিকে এই নতুন পৃথিবী সম্মন্ধে কিঞ্চিত আলোকপাত করিয়াছেন। ঋষি তাহার নিকট হইতে জানিতে পারিয়াছেন, বর্তমান যুগের নাম “ফেসবুক যুগ”। এই যুগে সবাই একে অপরের “বন্ধু”। “ফেসবুক বন্ধু!” ইন্টারনেট নামক এক প্রযুক্তি আবিস্কৃত হইয়াছিল একসময় এই পৃথিবীতে। এবং তারপর ফেসবুক নামক একটা সাইট খোলা হয় সেখানে। এখন সবাই এই ফেসবুকের সদস্য। মানুষ এখন দোকানে গিয়ে কেনাবেচা করে ফেসবুক দিয়ে। সবকিছুর লেন-দেন হয় ফেসবুক দিয়ে। এমনকি সামনাসামনি দেখা হলেও যোগাযোগ করে ফেসবুকের চ্যাটিং অপশনে গিয়ে। এতো কিছু শোনার পর ঋষি আর শান্ত থাকিতে পারিলেন না। সামনে যে জনকেই পাইলেন, তাকেই এই অসুর দুনিয়া থেকে বেরিয়ে সত্যিকার দুনিয়ার দিকে তাকাতে বলিলেন। তিনি নানাভাবে সবাইকে বুঝাইতে লাগিলেন। কিন্তু লোকজন তাঁকে বলিল, আপনি শব্দদূষণ করিতেছেন… দয়া করে ফেসবুকে আসুন। অবশেষে কয়েকদিন ধরে নানাভাবে চেষ্টা করেও যখন তিনি এই দুনিয়ার কিছুই বদলাইতে পারিলেন না, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন ফেসবুকে প্রবেশ করেই তিনি এর একটা বিহিত করবেন। সুতরাং তিনি একটা দোকানে ঢুকিলেন মোবাইল নামক একটা বাক্স হাসিল করার উদ্দেশ্যে যার মাধ্যমে নাকি ফেসবুকে প্রবেশ করা যায়। অতঃপর মোবাইলটি হাতে পাইয়া খুশি হইয়া ভাবিলেন, এবার তিনি ফেসবুকে ঢুকিয়াই সবাইকে লইয়া ফেসবুকের দুনিয়া হইতে বাহির হইবেন।

৪.

কয়েক মাস পরের কথা। দেখা গেল ঋষি একটা মোবাইল হাতে নিমগ্ন হইয়া টেপাটেপি করিতেছেন। তার মোবাইল স্ক্রীনে লেখা উঠেছে, “কী অবস্থা”?

সহ লেখক: বাধন আহমেদ

ফেসবুকে থাকবে পুরো জীবনের কাহিনি!

আরও সহজে পরিচালনা করা যাবে—এমন প্রতিশ্রুতি নিয়েই নতুন একটা চেহারা হাজির করেছিল সামাজিক নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট ফেসবুক। ইন্টারনেট জায়ান্ট গুগলের নতুন নেটওয়ার্কিং সাইট গুগল প্লাসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতেই ফেসবুকের এই নতুন চেহারা দাঁড় করানো হয়েছে বলে অনুমান করেছিলেন অনেকে। তবে ফেসবুকের এই নতুন চেহারা, আরও বড় একটা পরিকল্পনার অংশ মাত্র। নতুন চেহারার ফেসবুকে এখন প্রতিটি ব্যবহারকারীর পূর্ণাঙ্গ জীবনকাহিনি লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করেছে সাইটটি। গতকাল সান ফ্রান্সিসকোতে ফেসবুকের বার্ষিক কনফারেনসে ‘টাইমলাইন’ নামের এই নতুন ফিচারটি যোগ করার ঘোষণা দিয়েছেন সাইটটির প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ।

ব্যবহারকারীর পূর্ণাঙ্গ দিনলিপি ফেসবুকে সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যেই এই ‘টাইমলাইন’ ফিচারটি গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা তাঁদের সারা জীবনের প্রতিটি ঘটনাই দিন-মাস-বছর ধরে লিপিবদ্ধ করতে পারবেন। শুধু বর্তমান সময় থেকেই নয়, ব্যবহারকারীরা যুক্ত করতে পারবেন তাঁদের শৈশব, কৈশোরের দিনগুলোর কথাও। বলা ভালো, জন্মের পরমুহূর্ত থেকেই। তাঁরা অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন নির্দিষ্ট বছরে বা সময়ে তাঁদের জীবনের স্মরণীয় মুহূর্তের ছবি, ভিডিও। পরবর্তী সময়ে কোনো তথ্য মুছে ফেলা বা বাড়তি তথ্য সংযোজনের সুযোগও থাকবে এই ফেসবুক টাইমলাইনে। জুকারবার্গের ভাষায়, ‘একটা ওয়েবপেজের মাধ্যমেই আপনি বলতে পারবেন আপনার পুরো জীবনের কাহিনি।’— টেলিগ্রাফ