Posts Tagged ‘ জেফ টমসন ’

দৌড় সংস্কৃতির ব্যাখ্যা? ঠিক হলো কী?

১.
ফিচারের শুরুটা হয়েছে খুবই মজার একটা গল্প দিয়ে। ‘দৌড় সংস্কৃতি’টা যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন হাস্যকর ঘটনার জন্ম দেয়, সেটা পাঠককে শুরুতেই বলার জন্য। এরপর ‘দৌড়-সংস্কৃতি’ বলতে এখানে আমি কী বলতে চেয়েছি সেটা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। জিনিসটার একটা সাধারণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
২.
এই ‘দৌড় সংস্কৃতি’, ‘দৌড় দেওয়ার রেওয়াজ’টা যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিপত্তিও ডেকে আনে সেটার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। এই দৌড় সংস্কৃতির একটা বড় বিপত্তির কথা বলা হয়েছে প্রথমেই। দর্শকরা খেলার পুরো পরিসি’তি না বুঝেই যে ‘দৌড়’টা দিয়ে ফেলল, তার ফলে অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেল। এই সময়টা কিন্তু আমাদের বাস্তব জীবনে অনেক জরুরি একটা ব্যাপার। তাই না? এই ব্যাপারটা অবশ্য অনেকে সমর্থনও করতে পারেন। ‘মানুষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ’, ‘খেলাটার সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা’ ইত্যাদি বিষয়-আশয়ের দিক দিয়ে অনেকেই এটাতে লাইক দিতে পারেন। কিন্তু ‘সম্পৃক্ততা’টা একটু মাখামাখি পর্যায়ে চলে গেলে সেটা খুব সুফল বয়ে আনে কী? এই অতি আবেগের আতিশয্যটা কখনো কখনো বিপত্তিই ডেকে আনে বলে আমার ধারণা। আমরা বোধহয় নিজেদের প্রতিদিনের জীবন দিয়েই এটা টের পাই। ফলে শিরোনামটা দেওয়া হয়েছে ‘দৌড় সংস্কৃতির বিপত্তি। বিপত্তিটা যে সত্যিই ঘটে সেটা বর্ণনা করা হয়েছে পরবর্তীতে।
৩.

দ্বিতীয় লক্ষ্যণীয় বিষয়টা হলো ডেনিস লিলি আর জেফ টমসনের কীর্তি। এটাও কিন্তু একধরণের ‘দৌড় সংস্কৃতি’ই বটে। কোন নিয়ম নীতির বালাই নাই, যতো পারো শুধু দৌড়াও। যে যত বেশি দৌড়াতে পারবে, সে তত বেশি ‘রান’ আশা করতে পারবে। আপনি চাইলে এখানে রানের জায়গায় সাফল্য, টাকাপয়সা, মান-যশ ইত্যাদি পছন্দসই শব্দ বসিয়ে নিতে পারেন। লিলি কিন্তু এই কাজটাই করেছে। এবং আরেকটা খুবই খেয়াল করার মতো বিষয় যে, তাঁরা এই ‘সারা দুপুর ধরে’ দৌড়াচ্ছেন একটা ভুলবোঝাবোঝির সুযোগ নিয়ে, অন্যায় করে, নিয়ম-নীতির পরোয়া না করে। আমরাও কী ‘এখন’ এই জিনিসটাই করছি না? আমরাও কী একটা ‘দৌড় সংস্কৃতি’রই চর্চা করছি না? ‘চাই চাই আরো চাই’ করছি না?, ‘এ দিল মাঙ্গে মোর’ করছি না? ফলে এখানেও কিন্তু একটা বড় ধরণের বিপর্যয় ঘটে যাচ্ছে বলে আমার ধারণা।
৪.
এবং মজার ঘটনা হলো, শেষপর্যন্তু লিলির ঐ ‘দৌড়’গুলো কিন্তু গোণায় আসেনি। তারা ১৭ রানের মতো দৌড়ে চার রানই পেয়েছেন। বাকিগুলো বৃথা, পণ্ডশ্রম। আমাদেরও কী সেরকমই ঘটছে? আমাদের এই পণ্ডশ্রমের হতাশা বাড়ছে? সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে?
৫.
শেষ লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো কেইথ বয়েসের বুদ্ধিটা। তাঁর পরিস্থিতি আঁচ করার ক্ষমতা। খেলা শেষের পরিস্থিতি সম্পর্কে অনুমান করতে পারার ক্ষমতা। এটা তার বেশি ছিল বলেই তিনি নিজের জুতোজোড়া বাঁচাতে পেরেছিলেন। এখান থেকেও কী আমরা কোন ইঙ্গিত পেতে পারি?

টমসনের আগুনের গোলা

ওয়ানডে ক্রিকেটের শুরুর দিকে ক্রিকেট জগতের সবচেয়ে বিধ্বংসী বোলিং জুটি হিসেবে গণ্য করা হতো দুই অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার ডেনিস লিলি ও জেফ টমসনকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তী ক্লাইভ লয়েড তাঁর দেখা সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলারের নাম বলতে গিয়ে বলেছেন টমসনের কথা। ১৫০ কিমি বেগে থমসন যে বলগুলো ছুঁড়তেন সেগুলোকে বুলেট গতিতে ছুটে যাওয়া এক একটা আগুনের গোলার সঙ্গেও তুলনা করা যায় অনায়াসে। আর সে আমলে তো এখনকার মতো সুরক্ষা ব্যাটসম্যানদের ছিল না। হেলমেট, হ্যান্ডপ্যাড ছাড়া এই বিধ্বংসী বোলারের মুখোমুখি হয়ে অনেকেই শুধু যে উইকেটটি খুইয়েছেন তাই নয়। বরং শারিরীকভাবেও আহত হয়েছেন-এমন উদাহরণ প্রচুর পাওয়া যাবে। এ ধরণেরই একটা ঘটনা ঘটেছিল প্রথম বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার তৃতীয় ম্যাচটাতে। টমসনের গোলার আঘাতে আহত হয়ে রীতিমতো হাসপাতালে যেতে হয়েছিল দুই শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান সুনীল ওয়েট্টিমুনি ও দিলীপ মেন্ডিসকে।

টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর বাইরে শুধু শ্রীলঙ্কা আর পূর্ব আফ্রিকাই অংশ নিয়েছিল প্রথম বিশ্বকাপে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আগে কখনো টেস্ট না খেলার কারণে ডেনিস লিলি বা জেফ টমসনের বিধ্বংসী বোলিং সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না লঙ্কানদের। বিশ্বকাপে তাদের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে তারা হারে ৯ উইকেটে। দ্বিতীয় ম্যাচে অ্যান্ডি রবার্টস, বার্নার্ড জুলিয়েন, কেইথ বোয়েসদের সামনে তারা গুটিয়ে যায় মাত্র ৮৬ রানে। এই ম্যাচটাও তাদের হারের ব্যবধান ৯ উইকেট। তৃতীয় ম্যাচে এবার আর আগে ব্যাট করতে নামতে হয় নি শ্রীলঙ্কাকে। টসে জিতে প্রথমে বল করাটাকেই সুবিধাজনক মনে করেছিলেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক আনুরা টেন্নেকুন। অ্যালান টার্নারের সেঞ্চুরির সুবাদে শ্রীলঙ্কাকে ৩২৯ রানের (৬০ ওভারে) লক্ষ্য বেঁধে দেয় অস্ট্রেলিয়া।

প্রথম দুই ম্যাচের মতো এবার আর অতটা হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়লেন না লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। বেশ ভালোই লড়তে লাগলেন লিলি-টমসনদের বিধ্বংসী বোলিংয়ের সামনে। ৩২ ওভারে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে তারা সংগ্রহ করেছিলেন ১৫০ রান। কিন্তু তারপর যেন একেবারে রুদ্রমুর্তি ধারণ করলেন জেফ টমসন। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে যেন আগুন ঝড়াতে লাগলেন ওভালের বাউন্সি উইকেটে। ৩২ রান করে ঐ গোলার আঘাতে একেবারে হাসপাতালে চলে যেতে হয় মেন্ডিসকে। অপরপ্রান্তে দাঁড়ানো ওয়েট্টিমুনির মানসিক অবস্থাটা তখন কেমন ছিল, তা অনুমান করাই যায়। কিন্তু ৫২ রান করে তখনও বেশ ভালোই লড়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বেশ কয়েকবার তাঁর গায়ে বল লাগলেও হার মানেন নি। কিছুক্ষণ সেবাশুশ্রুসার পর আবার ব্যাট হাতে দাঁড়িয়েছেন। এতেই যেন বলের গতি আরো বাড়িয়ে দিলেন টমসন। কিছুক্ষণ পরে এবার আর শেষরক্ষা করতে পারলেন না ওয়েট্টিমুনি। মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে মেন্ডিসের পিছু পিছু তাকেও যেতে হলো হাসপাতালে। তবে তার আগে তিনি পূর্ণ করতে পেরেছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক।

ওয়েট্টিমুনি পরে টমসনের সেই স্পেলটার কথা স্মরণ করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ঐ বলগুলো ছিল একেকটা আলোর ঝলকানির মতো। আমি সেগুলো একটাও দেখতে পাই নি।’ আর মেন্ডিস বলেছিলেন, ‘সে বল করছিল ১০০ মাইল গতিতে। আমি এরচেয়ে দ্রুতগতির বল কখনো মোকাবিলা করিনি।’ টমসন অবশ্য তার বাউন্সারগুলোকে সত্যিকারের বাউন্সার বলতে রাজি নন। তাঁর মতে তিনি স্বাভাবিকভাবেই বল করছিলেন! শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদের গড় উচ্চতা অনেক কম বলে ওগুলো নাকি বাউন্সার বলে মনে হয়েছিল! সেই ম্যাচে ১২ ওভার বল করে মাত্র ২২ রান দিয়ে একটি উইকেট নিয়েছিলেন টমসন। তাঁর উইকেট একটা গণ্য হলেও কার্যত তিনি আরো দুইজনকে সাজঘরে (হাসপাতালেই বলা ভালো) পাঠিয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত সেই ম্যাচটা শ্রীলঙ্কা হেরেছিল ৫২ রানে।

‘দৌড় সংস্কৃতি’র বিপত্তি

 

১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল। খেলা তখনো শেষ হয়নি, কিন্তু মাঠে হাজারো দর্শকের ভিড়

১৯৭৬ সালের দিকে একদিন বাসে করে দক্ষিণ লন্ডনের দিকে যাচ্ছিলেন কিংবদন্তী আম্পায়ার ডিকি বার্ড। হঠাৎ কন্ডাক্টরের মাথার হ্যাটটা তাঁর খুব পরিচিত মনে হলো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন হ্যাটটা সে কোনখান থেকে পেয়েছে। কন্ডাক্টরের জবাব, ‘ওহ! তুমি কী কখনো ডিকি বার্ডের নাম শোনোনি? এটা তার হ্যাট। আমি এটা তার কাছ থেকে নিয়েছিলাম বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচের সময়। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর আমরা সবাই মাঠে দৌড় দিয়েছিলাম। আর বুঝতেই পারছ, রেসটা আমিই জিতেছিলাম!’
খেলা শেষ হলে উল্লাসিত জনতার এভাবে মাঠে দৌড় দেওয়ার রেওয়াজটা এখন আর নাই। কিন্তু ওয়ানডে ক্রিকেটের শুরুর দিকে এটা ছিল খুবই নিয়মমাফিক একটা ব্যাপার। এখনকার মতো এত নিরাপত্তার কড়াকড়িও ছিল না সেসময়। খেলা শেষ হলেই বিজয়ী দলের সদস্যদের অভিনন্দন জানাতে বা সবাই মিলে একসঙ্গে জয় উদযাপন করার জন্য মাঠে দৌড় দিতেন দর্শকরা। তবে তখনকার এই ‘দৌড়-সংস্কৃতি’র ফলে খেলাটা সুষ্ঠভাবে শেষ করতে অনেক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, এমন উদাহরণও আছে প্রচুর। দেখা গেল, দর্শকরা ধরেই নিয়েছে যে, খেলাটা শেষ হয়ে গেছে। মুহূর্তেই তারা দৌড়ে এসে ভরিয়ে দিল গোটা মাঠ। কিন্তু আসলে হয়তো তখনও খেলা কিছুটা বাকিই থেকে গেছে। ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালটাই এটার সবচেয়ে যুৎসই উদাহরণ। যেখানে আম্পায়ার ডিকি বার্ডকে তাঁর হ্যাট খোয়াতে হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার জেফ টমসন হারিয়েছিলেন তার প্যাড। আর অতিকষ্টে মাঠ ছাড়ার পর উইন্ডিজ অলরাউন্ডার কেইথ বয়েস খুঁজে পান নি তার জুতোজোড়া।
প্রথম বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাইনাল ম্যাচটা শুরু হয়েছিল এক রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে। ১১টার সময়। আর শেষ হয়েছিল প্রায় ১০ ঘন্টা পর। রাত পৌনে নয়টায়। কারণ দুই তিনবার খেলোয়াড়-আম্পায়ারদের সামলাতে হয়েছিল উৎসুক দর্শকদের জোয়ার। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়াকে ২৯২ রানের দুরুহ টার্গেট ছুঁড়ে দিয়েছিল ক্লাইভ লয়েড বাহিনী। ক্লাইভ লয়েড নিজে খেলেছিলেন ৮৫ বলে ১০২ রানের এক অসাধারণ অধিনায়কোচিত ইনিংস।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভালোই লড়াই চালাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু পাঁচ পাঁচটা রানআউট আর কেইথ বয়েসের আগুন ঝড়ানো বোলিং অসহায় করে দিল অস্ট্রেলিয়াকে। স্কোরবোর্ডে ২৩৩ রান জমা করেই ফিরে গেলেন নয়জন ব্যাটসম্যান। কিন্তু শেষ উইকেট জুটিতেই টানটান উত্তেজনা সৃষ্টি করে ফেললেন জেফ টমসন আর ডেনিস লিলি। এক রান, দুই রান করে আসে- আসে- স্কোরবোর্ডে ৩৩ রান জমা করে ফেললেন এই দুই উদ্বোধনী বোলার। শেষ দুই ওভারে দরকার ২৬ রান। ৫৯তম ওভারের প্রথম বলে দুই রান নেওয়ার পর দ্বিতীয় বলেই কাভারে দাঁড়ানো রয় ফ্রেডরিকের হাতে ধরা পড়লেন  থমসন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ উদযাপন করতে মুহূর্তের মধ্যে জনসমুদ্রে পরিণত হলো লর্ডস স্টেডিয়াম। ২২ ইয়ার্ডের পিচটুকু বাদ দিয়ে পুরো মাঠটাই চলে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সমর্থকদের দখলে। কিন্তু ওদিকে আম্পায়ার যে একটা হাত তুলে নো বলের ইশারা করেছেন সেটার দিকে কেউ নজরই দেয় নি। মজার ঘটনাটা শুরু হলো এখানেই।
উইকেটের এক প্রান্তে ডেনিস লিলিকে সীমানার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্ট্যাম্প লক্ষ্য করে বল ছুঁড়লেন ফ্রেডরিক। লক্ষ্যভ্রষ্ট। বল চলে গেল দর্শকদের মাঝে। এই অপ্রত্যাশিত-লাভজনক পরিস্থিতির সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইলেন না লিলি। ইচ্ছেমতো দৌড়াতে লাগলেন উইকেটের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। তিন রান নেওয়ার পর থেমে যেতে চেয়েছিলেন টমসন। কিন্তু লিলি শান্ত হলেন আরো অনেকক্ষণ দৌড়ানোর পর। শেষপর্যন্ত একসময় দর্শকরা পরিসি’তি সম্পর্কে অবগত হয়ে আবার চলে গেল দড়ির বাইরে। লিলি, আম্পায়ার টম স্পেনসারের কাছে জানতে চাইলেন তিনি কত রান পাচ্ছেন? এতবার দৌড়ানোর পরও তাকে মাত্র দুই রান দেওয়া হবে শুনে তিনি ভয়ানক চটে গেলেন। ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, ‘অসম্ভব, আমরা সারা দুপুর ধরে এই উইকেটের এপার-ওপার করছি।’ ডিকি বার্ডও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসলেন। লিলিকে জিজ্ঞাসা করলেন তারা আসলে কয় রান নিয়েছে। লিলি তখনো তাঁর এতখানি পরিশ্রম বৃথা যাবে, এটা ভাবতেই পারছিলেন না। বললেন, ‘এটা তো তোমাদেরই গোনার কথা। কিন্তু আমি ১৭ রানের মতো নিয়েছি।’ যদিও কিংবদন্তী এই দুই পেসারের ঐ দৌড়গুলো শেষপর্যন্ত গোনায় আসেনি। তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল মাত্র চার রান। খেলাটাও এরপর চলেছিল আর মাত্র তিন বল। প্রথম দুই বলে দুইটা সিঙ্গেল নেওয়ার পর তৃতীয় বলে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ে গেলেন টমসন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেল ১৭ রানের জয়। এবার দ্বিগুন গতিতে মাঠের দিকে ধেয়ে আসল উল্লাসিত উইন্ডিজ সমর্থকদের স্রোত। মাঠে উপস্থিত ক্রিকেটার-আম্পায়ারদের হাল কী হয়েছিল সেটা তো শুরুতেই বলা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি এরকম হতে পারে আন্দাজ করে বুদ্ধিমানের মতো কাজ করেছিলেন কেইথ বয়েস। চা বিরতির সময়ই তিনি তাঁর নতুন জুতাটা পাল্টে পড়ে নিয়েছিলেন একজোড়া পুরোনো জুতা। যেন জুতার মায়া ছেড়েই ভোঁ-দৌড় দেওয়া যায় সাজঘরের দিকে!