বর্তমানের প্রযুক্তি জগতে একটা যুদ্ধই শুরু হয়ে গেছে বলা যায়। আর এই যুস্ত্রের প্রধান অস্ত্র হিসেবে গণ্য হচ্ছে মেধাসত্ব আইন বা পেটেন্টকে। ব্যবসায়িকভাবে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে এই মেধাসত্ত্বের অধিকার। আদর্শিকভাবে, উদ্ভাবকদের স্বীকৃতি প্রদান করাই পেটেন্ট বা মেধাসত্ব আইনের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হলেও বর্তমান প্রযুক্তি দুনিয়ায় এগুলো কাজ করছে গুগল, অ্যাপল, মাইক্রোসফট, ইয়াহুর মতো বড় বড় কর্পোরেশনগুলোর গোলা-বারুদ হিসেবে। আর এই যুদ্ধে খোদ উদ্ভাবনী প্রক্রিয়াটাই সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পেটেন্ট বিশেষজ্ঞরা। বিস্তারিত পড়ুন →
আরও সহজে পরিচালনা করা যাবে—এমন প্রতিশ্রুতি নিয়েই নতুন একটা চেহারা হাজির করেছিল সামাজিক নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট ফেসবুক। ইন্টারনেট জায়ান্ট গুগলের নতুন নেটওয়ার্কিং সাইট গুগল প্লাসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতেই ফেসবুকের এই নতুন চেহারা দাঁড় করানো হয়েছে বলে অনুমান করেছিলেন অনেকে। তবে ফেসবুকের এই নতুন চেহারা, আরও বড় একটা পরিকল্পনার অংশ মাত্র। নতুন চেহারার ফেসবুকে এখন প্রতিটি ব্যবহারকারীর পূর্ণাঙ্গ জীবনকাহিনি লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করেছে সাইটটি। গতকাল সান ফ্রান্সিসকোতে ফেসবুকের বার্ষিক কনফারেনসে ‘টাইমলাইন’ নামের এই নতুন ফিচারটি যোগ করার ঘোষণা দিয়েছেন সাইটটির প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ।
ব্যবহারকারীর পূর্ণাঙ্গ দিনলিপি ফেসবুকে সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যেই এই ‘টাইমলাইন’ ফিচারটি গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা তাঁদের সারা জীবনের প্রতিটি ঘটনাই দিন-মাস-বছর ধরে লিপিবদ্ধ করতে পারবেন। শুধু বর্তমান সময় থেকেই নয়, ব্যবহারকারীরা যুক্ত করতে পারবেন তাঁদের শৈশব, কৈশোরের দিনগুলোর কথাও। বলা ভালো, জন্মের পরমুহূর্ত থেকেই। তাঁরা অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন নির্দিষ্ট বছরে বা সময়ে তাঁদের জীবনের স্মরণীয় মুহূর্তের ছবি, ভিডিও। পরবর্তী সময়ে কোনো তথ্য মুছে ফেলা বা বাড়তি তথ্য সংযোজনের সুযোগও থাকবে এই ফেসবুক টাইমলাইনে। জুকারবার্গের ভাষায়, ‘একটা ওয়েবপেজের মাধ্যমেই আপনি বলতে পারবেন আপনার পুরো জীবনের কাহিনি।’— টেলিগ্রাফ
ইন্টারনেট জগতের একটা অবিচ্ছেদ্য নাম গুগল। বিশ্বজোড়া ব্যাপক জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়ে ২০০৬ সালে অক্সফোর্ড ডিকশনারীতেও নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে ভার্চুয়াল জগতের এই অগ্রণী প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু গ্রাহককে সার্চ ইঞ্জিন, মেইল, ইউটিউবের মতো জনপ্রিয় সেবাগুলো পৌঁছে দেওয়ার জন্য অবিশ্বাস্য পরিমাণ বিদ্যুত্ খরচ করতে হয় গুগল কর্পোরেশনকে। যা দিয়ে প্রায় এক থেকে দুই লাখ লোকের একটা শহর খুব অনায়াসেই চালানো যায়। গতকাল গুগল গ্রীন ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। তবে আরও বেশি পরিমাণ বিদ্যুত্ উত্পাদন করে নিজেদের ‘কার্বন-নিরপেক্ষ’ তকমাটাও টিকিয়ে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্টের এই প্রতিষ্ঠানটি।
তথ্যানুসারে দেখা যায়, গুগলের ডাটা সেন্টারে প্রায় ২৬০ মিলিয়ন ওয়াট বিদ্যুত্ খরচ হয়। যা দিয়ে উটাহর রাজধানী সল্ট লেক সিটির মতো একটা শহর অনায়াসে চালানো যায়। গুগলে ১০০ বার সার্চ দিলে যে পরিমাণ বিদ্যুত্ খরচ হয়, তা দিয়ে ৬০ ওয়াটের একটা বৈদ্যুতিক বাতি প্রায় ২৮ মিনিট জ্বালিয়ে রাখা যায়। তিন দিন ধরে ইউটিউব ভিডিও দেখার ফলে যে পরিমাণ বিদ্যুত্ ব্যবহার হয়, তা দিয়ে আস্ত একটা ডিভিডি-ই তৈরি ও সরবরাহ করা যায়। তবে অন্যান্য সাধারণ ডাটা সেন্টারের থেকে তারা অনেক কম বিদ্যুত্ খরচ করে বলে দাবি করেছে গুগল। এছাড়াও বাড়তি অনেক সবুজ শক্তি (১.৭ গিগাওয়াট) উত্পাদন করেও তারা এই বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের সরবরাহ বজায় রাখছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রাযুক্তিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান হোজলে। গতকাল একটি ব্লগপোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা বিদ্যুত্ খরচ কমানোর জন্য অনেক পরিশ্রম করছি। একমাসের জন্য গুগলের সেবাগুলো সবাইকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমাদের সার্ভারগুলো যে পরিমাণ বিদ্যুত্ ব্যবহার করে, তা অন্য সার্ভারের তুলনায় অনেক কম। এটা প্রতিটা ব্যবহারকারীর জন্য একটা বাল্ব প্রায় তিন ঘন্টা জ্বালিয়ে রাখার সমান।’
বৈশ্বিক উষ্ণতা ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা মাথায় রেখে ২০০৭ সালে নিজেদেরকে কার্বন-নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা দেয় গুগল। তবে ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুর’ করার পর এবারই প্রথমবারের মতো নিজেদের বিদ্যুত্ ব্যবহারের পরিমাণ প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যে পরিমাণ বিদ্যুত্ তারা খরচ করে তারচেয়ে অনেক বেশি পুনর’ত্পাদনশীল শক্তিও তারা উত্পাদন করে বলে দাবি এই ইন্টারনেট জায়ান্টদের। হোজলে আরও বলেছেন, ‘ক্যালিফোর্নিয়ায় গুগলের প্রধান অফিসের কাছে যে সৌরশক্তিও প্যানেলটি আছে, তা দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ বাড়িতে বিদ্যুত্ সংযোগ দেওয়া সম্ভব। আমরা নতুন ধরণের সার্ভারও গড়ে তুলছি, যেটা অন্যান্য ডাটা সেন্টারগুলোর তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুত্ খরচ করবে। ফিনল্যান্ডের হামিনাতে নতুন দুইটি ব্যবস্থা এই সপ্তাহেই চালু হবে। এখানে বিদ্যুত্ খরচ কমানোর জন্য বিশেষ ধরণের শিতলীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।’— ডেইলি মেইল