Posts Tagged ‘ গণজাগরণ মঞ্চ ’

রক্ত নিয়ে হোলি-খেলা, ফুরিয়ে গেছে তোদের বেলা

ছোট আকারে হলেও গতকাল ৬ এপ্রিল মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়েছে হেফাজতে ইসলাম ও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ। পুরো দেশজুড়ে এমন ঘটনা আরও কিছু ঘটেছে। গতকাল ৬ এপ্রিল যখন শাহবাগ আন্দোলনের কর্মীরা হেফাজতে ইসলামের হামলা প্রতিহত করার জন্য উত্তেজিতভাবে লাঠি-বাঁশ সংগ্রহ করছিলেন, ঠিক সেই সময় মঞ্চ থেকে নতুন এই শ্লোগানটি শুনতে পেলাম: ‘রক্ত নিয়ে হোলি-খেলা, ফুরিয়ে গেছে তোদের বেলা’। শুনে খুবই ভালো লাগল। আসলেই, রক্তের হোলি-খেলা বন্ধ করার সময় এখন। অপশক্তির দিক থেকে আক্রমণ আসলে সেটা প্রতিহত করার শক্তি আমাদের যেমন অর্জন করতে হবে, তেমনি যখন সংঘর্ষ চলছে না, সেসময় এই পেশিশক্তির লড়াই কিভাবে এড়ানো যায়, সেকথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। সমান গুরুত্ব দিয়ে। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের যে মেধাবী সন্তানরা জীবন তুচ্ছ করে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তাদের রক্তাক্ত লাশ কোন পরিস্থিতিতেই কাম্য না। তাদের মগজটাই আজকের লড়াইয়ে বেশি জরুরি।

17206_551344121575076_1574400579_n

কেন তৈরি হলো সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি?

পেশিশক্তির সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি এড়ানো যায় নি। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, এই মুখোমুখি সংঘর্ষের জন্য কোনভাবেই গণজাগরণ মঞ্চ বা শাহবাগ আন্দোলনের কর্মীদের দায়ি করার সুযোগ নেই। শাহবাগ আন্দোলনের কর্মীরা আগ বাড়িয়ে হেফাজতে ইসলামের উপর আক্রমণ করতে যায়নি। শাহবাগ যখন আক্রান্ত হয়েছে, তখন অনেকেই নিজ উদ্যোগে নিজেদের আত্মরক্ষার স্বার্থে লাঠি হাতে নিয়েছে।

অনেকেই হয়তো গণজাগরণ মঞ্চ ও ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ঢাকা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণাকে সমর্থন করতে পারেননি। কিন্তু যখন একথা বেশ ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠা করা গেছে যে, হেফাজতে ইসলাম আসলে জামায়েতী ইসলামকেই হেফাজত করতে চাচ্ছে, দেশের সব ভাস্কর্য-শহীদ মীনার ভেঙ্গে ফেলার কথা বলছে, নারী-পুরুষের প্রকাশ্য মেলামেশা বন্ধ করার দাবি তুলছে তখন তাদেরকে প্রতিহত করার দায়িত্ব কি মুক্তমনা-স্বাধীনচেতা মানুষরা অনুভব করবেন না? যেখানে আওয়ামী লিগ সরকারও তাদের কথা অনুযায়ী ৪ জন বগারকে গ্রেফতার করেছে এবং ১৩ দফার অধিকাংশ দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তখন এই হরতাল-অবরোধের পক্ষে যুক্তি দেখানোর অনেক জায়গা আছে।

২৬ মার্চ জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ সংক্রান্ত আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার পর যখন গণজাগরণ মঞ্চ থেকে কোন কঠোর কর্মসূুিচ আসেনি, শাহবাগে কিছুটা দ্বিধা-বিভক্তি, মতানৈক্য ইত্যাদি তৈরি হয়েছে। শহীদ রুমী স্কোয়াড আমরণ অনশনের ঘোষণা দেওয়ার পর আবার আশার আলো জ্বলছিল শাহবাগ চত্বরে। এরই মধ্যে বেশ কাঁপাকাঁপি দিয়ে ময়দানে আবির্ভাব ঘটে হেফাজতে ইসলামের। মধ্যযুগীয় কায়দার ১৩ দফা দাবি দিয়ে। ‘নাস্তিক ব্লগারদের’ ফাঁসির দাবি নিয়ে। সরকারও তাদের দাবির প্রতি নতজানু হয়ে ৪ জন ব্লগারকে গ্রেফতার করে। নজীরবিহীন কায়দায়। আমারব্লগ বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে শহীদ রুমী স্কোয়াডের সঙ্গে একরকম প্রতারণা করেই তাদের অনশন কর্মসূচি স্থগিত করানো হয়। প্রতারণা বললাম এই কারণে যে, মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার বলেছিলেন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবি মেনে না নিলে তিনি নিজেই অনশনে বসবেন। কবে সেটা? জানা যায় নি। ফলে অনেকেই মনে হয় কিছুটা হলেও আশাহত হয়েছিলেন, উদ্যোম হারিয়েছিলেন। ফলে সরকারও হয়তো ভাবতে শুরু করেছিল যে, ওদেরকে তো শান্ত করাই গেছে, এখন তাদের দাবির দিকে না তাকালেও হবে। বরং অন্যদিকটাই ট্যাকল দিই। এই পর্যায়ে শাহবাগ আন্দোলনের পক্ষ থেকেও সরকারকে জানিয়ে দিতে পারাটা দরকার ছিল যে, আমরাও আমাদের দাবি থেকে একচুল নড়িনি। আবার সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার দরকার ছিল যে, ‘আমরা বাড়ি ফিরছি না/রাজাকারদের ছাড়ছি না’। নিজেদের শক্তিমত্তা সম্পর্কে জানান দেওয়ার দরকার ছিল। নাহলে সবাই মনে করত যে, শাহবাগ আন্দোলন সতিই শেষের পথে।

আর রুমী স্কোয়াডের ৮দিনের আমরণ অনশন কর্মসূচিতেও যে সরকারের কোন ভ্রুক্ষেপ হয়নি সেটা তো বোঝাই যায়। এই পরিস্থিতিতে শাহবাগের অস্তিত্বের কথা সরকারকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য কঠোর কর্মসূচিরই প্রয়োজনীয়তা ছিল। দেশ পরিচালনায় নিযুক্ত রাজনীতিবিদরা এখনো হয়তো বুঝতে পারছেন না যে, শাহবাগ আন্দোলন ও হেফাজতে ইসলাম পুরোপুরি বিপরীতধর্মী দুইটা পক্ষ। দুই পক্ষ পরস্পরের পুরোপুরি উল্টাপথে হাঁটতে চায়। একপক্ষ চায় সামনে এগোতে, আরেক পক্ষ চায় পেছনে ফিরে যেতে। দুইটি আদর্শের মতভিন্নতা এতটাই বেশি যে, এটার মধ্যে কোন সমন্বয়ও সম্ভব কিনা, সন্দেহ আছে। ফলে সরকার যদি সবসময় ভোটবুদ্ধি না খাটিয়ে একটু যুক্তিবুদ্ধি খাটাতো তাহলে হেফাজতে ইসলামকে আস্কারা দেওয়ার আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত কখনোই নিত না। আফসোস যে, তারা সেটা করছেন না। ফলে শাহবাগ আন্দোলনের পক্ষ থেকে নব উদ্যোমে সংগঠিত হওয়ার এই সুযোগটা ইতিবাচকই হয়েছে বলে আশা করছি।

 শুধু হাতইয়ার নামনইয়ারও চাই

এই একবিংশ শতাব্দির পৃথিবীতে হেফাজতে ইসলাম যে ধরণের দাবিদাওয়া উঠিয়েছে, সেটা মেনে দেওয়া প্রায় অসম্ভব রকমের ব্যাপার। কিন্তু তাদেরকে সহিংস উপায়ে হাতিয়ারের সাহায্যে মোকাবিলা করার পথ বেছে নেওয়া মোটেই মনে হয় উচিত্ হবে না দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সৈনিকদের। একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, হেফাজতে ইসলামের ডাকে রাস্তায় বেরিয়ে আসা লোকের সংখ্যাও বাংলাদেশে কম না। এবং ধর্ম বিষয়টা আসলেও খুব স্পর্ষকাতর ইস্যু। তাই খুবই সাবধানতার সাথে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা প্রয়োজন।

হেফাজতে ইসলামের লংমার্চে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের অধিকাংশই জীবনে কখনো ইন্টারনেট, ফেসবুক-ব্লগ ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছেন কিনা সন্দেহ আছে। তারা ধর্মভিত্তিক বইগুলো ছাড়া অন্য কোন বই পড়ারও সুযোগ পেয়েছেন কিনা সন্দেহ আছে। ফলে শিক্ষিত-শহুরে মানুষদের থেকে তাদের মানসিক ব্যবধানটা যে অনেক বেশি থাকবে, এতে আশ্চর্যের কি আছে। কিন্তু ‘আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা করি, আমরা মুক্তমনা’ এই বলে আত্মপ্রসাদের ভোগাটাও বিপদজনক হবে অপর পক্ষের জন্য। বরং দুই পক্ষের সাংস্কৃতিক-মানসিক মেলবন্ধনটা কিভাবে হতে পারে সেটাই বিবেচনা করা দরকার।

গতকাল খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, আমার এক স্কুলবন্ধুর মনে জন্মেছে প্রচণ্ড ইসলাম বিদ্বেষ। ইসলাম ধর্ম মানবকল্যানের জন্য, শান্তির জন্য কোন অবদান রাখতে পারে না বলেই সে মনে করে। এই ধরণের আলট্রা মডার্ন দৃষ্টিভঙ্গিও কিন্তু আখেরে সমাজের কোন কল্যান বয়ে আনবে না। এই রকমের দৃষ্টিভঙ্গি বরং ঘৃণার বিপরীতে আরও ঘৃণাই ছড়াবে। সমাজকে শান্তির পথে নিয়ে নিয়ে যাবে না। স্বাধীনতা-সমবেদনার পথে নিয়ে যাবে না।

ধর্মচিন্তা-ধর্ম সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনাকে পরিহার-পরিত্যাগ করে অনেকদিন থাকা হয়েছে। প্রগতিশীলদের পক্ষ থেকে ধর্মীয় আলাপ দূরে সরিয়ে রাখার যে প্রবণতা, এতদিন সেটারই ফায়দা নিয়েছে কট্টরপন্থী, রক্ষণশীলরা। তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ইসলাম ধর্ম বা অতীতে আরও অনেক ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়েছে, এখনো দিচ্ছে। একদল মানুষ কিছু না বুঝেই মোল্লা-পুরোহিতদের সাথে সাথ মিলিয়ে গেছেন, পরকালের ভয়ে। অপরদিকে কিছু মানুষ এসব দেখে পুরো ধর্মটাকেই অবজ্ঞা করতে শুরু করেছেন। এটা এক ভয়াবহ দুষ্টচক্র। পুরো সমাজের কল্যানেই এর অবসান ঘটানো প্রয়োজন।

দুই পক্ষের সামজিক-সাংস্কৃতিক ব্যবধানটা ঘোঁচাতে হবে। সেটা জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিক থেকেও, ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিকতার দিক থেকেও। মানুষের জন্য, সমাজের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক অগ্রগতিটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মনুষ্যজন্মের মহিমা বোঝার জন্য আধ্যাত্মিক চর্চাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সেই আধ্যাত্মিকতার চর্চা ইসলাম ধর্ম দিয়েও হতে পারে, অন্যান্য ধর্ম-মতবাদ দিয়েও হতে পারে। আধ্যাত্মিক শূণ্যতা (Spiritual Vacuum) যে সামগ্রিকভাবে সমাজের জন্য ক্ষতিকর সেটা নিয়ে পশ্চিমে বেশ কথাবার্তা শুরু হয়েছে। কারণ তারা এটা টের পাওয়া শুরু করেছে। বাজার সংস্কৃতিতে সব কিছু কিনতে পাওয়া গেলেও মনের শান্তিটা এখনও পর্যন্ত কোন কোম্পানি বাজারজাত করে নাই। আর এই মনের শান্তি লাভের উপায়-উপাদানগুলো অনেকাংশে সংরক্ষিত আছে বিভিন্ন ধর্মীয় মতবাদগুলোর মধ্যে। পুরো ধর্মকেই খারিজ করে দেওয়ার প্রবনতা থেকে সরে এসে আমাদের বরং ধর্মীয় মতবাদগুলোর মুক্তিকামী উপাদানগুলো খুঁজে বের করা দরকার। সেগুলো প্রচার-প্রসার করা দরকার।

আর এটা করতে গেলে আমাদের ওঠাতে হবে মন-ইয়ার। অস্ত্রে নয়, শান দিতে হবে যুক্তিতে। মানবতার পক্ষে, সাম্য-স্বাধীনতার পক্ষে নিরন্তর প্রচারণা চালাতে হবে। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের কাছে যেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে যেতে হবে, জ্ঞান-বিজ্ঞান অগ্রগতির খবর নিয়ে যেতে হবে, তেমনি ইসলামসহ প্রতিটা ধর্মে বিরাজমান সাম্য-শান্তি-সমবেদনার বার্তাও পৌঁছে দিতে হবে। বর্তমানে দেশের যা পরিস্থিতি তাতে, ব্যাপক আকারের সাংস্কৃতিক প্রচারণার মাধ্যমেই কেবল রক্ত নিয়ে হোলি খেলা বন্ধ করা সম্ভব।

সরকারের স্ববিরোধীতা উন্মোচিত হচ্ছে

যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছিলেন রুমী স্কোয়াডের স্কোয়াডের কিছু স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণী। সরকারের তরফ থেকে তাদের দাবিটা উপেক্ষা করা হয়েছিল টানা ৬টা দিন। এর আগে সরকারকে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য এক মাসেরও বেশি সময় দিয়েছিল গণজাগরণ মঞ্চ। অনশনের সময় বেশ কয়েকজন অনশনকারী কয়েক দফায় হাসপাতালে গিয়েছে, প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে একটি পুরো রাত পার করেছে। অনুমান করতে পারি যে, এই কয় দিনে অনেক অনেক বাধা-বিপত্তির মুখে তাদের পড়তে হয়েছে। মৃত্যুকে তুচ্ছ করে কেন করছিলেন তাঁরা এইসব? কারণ তাঁরা মনে করছেন, নতুন বাংলাদেশ গঠনের কাজে হাত দেওয়ার আগে দেশের ক্যান্সারস্বরুপ জামায়াত-শিবিরকে আগে নির্মূল করা প্রয়োজন। আর দাবি আদায়ের জন্য তাঁরা কোন জ্বালাও-পোড়াও করছেন না, কাউকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন না, নিজেদের কথা সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা নিজেদেরকেই কষ্ট দিচ্ছেন। গতকাল ১ এপ্রিল পরিকল্পনা মন্ত্রী ও  মুক্তিযুদ্ধের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড এ.কে.খন্দকারের  আশ্বাসের প্রেক্ষিতে অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেছে শহীদ রুমী স্কোয়াড।

rumi

অন্যদিকে সহিংসতা-হরতাল-অবরোধের হুমকি আসছে হেফাজতে ইসলামের তরফ থেকে। যাদেরকে অনেকেই, এমনকি ইসলামী লোকজনই বলেছেন, জামায়াতেরই অন্য রুপ। তারা আসলে ইসলাম না, জামায়াতেরই হেফাজত করতে নেমেছে। ‘নাস্তিক’ ব্লগার ও ধর্মানূভূতিতে আঘাত দেওয়ার শাস্তির দাবিতে চলছে এই আন্দোলন। তাদের ১৩টি দাবি হলো:

১। সংবিধানে ‘আল্লাহ্‌্‌র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরান-সুন্নাহ্‌্‌ বিরোধী সকল আইন বাতিল করতে হবে।
২। আল্লাহ্‌, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।

৩। কথিত শাহবাগী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-র শানে জঘন্য কুৎসা রটনাকারী কুলাঙ্গার ব্লগার ও ইসলাম বিদ্বেষীদের সকল অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

৪। ব্যক্তি ও বাক-স্বাধীনতার নামে সকল বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সকল বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

৫। ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৬। সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সকল অপ-তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
৭। মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তির নগরীতে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে।

৮। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সকল মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে।

৯। রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি-টুপি ও ইসলামী কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে।

১০। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিস্টান মিশনারীদের ধর্মান্তকরণসহ সকল অপ-তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।

১১। রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র এবং তৌহিদী জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।

১২। সারা দেশের কওমী মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দানসহ তাদের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।

১৩। অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সকল আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র ও তৌহিদী জনতাকে মুক্তিদান, দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদেরকে বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

এই দাবি নিয়ে আগামী ৬ মার্চ ঢাকামুখী লংমার্চ করার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। এর ভেতরে বেশ কিছু দাবিই নাকি মেনে নেওয়ার বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে

পরষ্পরবিরোধী দুই পক্ষই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের চিন্তাচেতনাই শুধু না, দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কর্মসূচি বেছে নেওয়ার ধরণেও স্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। চট্টগ্রামে একবার হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দকে আলোচনায় বসার আহ্বানও জানানো হয়েছিল গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে। তারা কিন্তু সেবার আলোচনা করতে রাজি ছিলেন না। অহিংস ও সহিংস, দুই পক্ষেরই দাবি সরকারের কাছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কাদের দাবির কথাটা আগে বিবেচনা করবে? জামায়াতের লেবেলধারী সহিংসতাপন্থী হেফাজতে ইসলামের নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী অহিংস শাহবাগ আন্দোলনের?

জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকার এখনো আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য দেয়নি। সরকারদলীয় ব্যক্তিবর্গের কথাতে স্ববিরোধীতাও স্পষ্ট। দুই দিন আগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, পুরো দেশে দাবি উঠলে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করব। আজ ২ এপ্রিল আওয়ামী লিগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল হক হানিফ বলেছেন, সমগ্র দেশে এখন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এই দলকে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের ব্যাপার। তাদের নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া খুব দ্রুত শুরু হবে।’
খুব দ্রুতটা যে কবে, সেটা কিন্তু এখনো জানা গেল না। শুধু তাই না, শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে উষ্মাও প্রকাশ করেছেন দেশ পরিচালনার সঙ্গে জড়িত রাজনীতিবিদেরা।

অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের দাবি দ্রুত মেনে নেওয়ার উদ্যোগ দেখিয়েছে সরকার। ৬ এপ্রিলের লংমার্চের আগেই সরকার ‘আমারব্লগ’ বন্ধ করে দিয়েছে, তিনজন ব্লগারকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে। এবং এই ক্ষেত্রে জনমত যাচাইয়েরও কোন প্রয়োজনীয়তা মনে করেনি সরকার। এটা কি সরকারের স্ববিরোধীতা নয়? ত্বরিতগতিতে তিন ব্লগারকে গ্রেপ্তার-রিমান্ড, ব্লগ বন্ধ ইত্যাদি আলামত থেকে আশঙ্কা হয় যে. সরকার হেফাজতে ইসলামের দিকেই বেশি ঝুঁকে গেছে। কেন এমন হলো? আওয়ামী লিগ না মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি? আওয়ামী লিগ কি তাহলে শুধু ভোটের জন্যই তাহলে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে? সরকারের কর্মকাণ্ড মানুষের মনে এমন অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে ইমরানও ছয়টি প্রশ্ন রেখেছেন সরকারের উদ্দেশ্যে,

 ১. জামায়াত-শিবির চক্র ব্লগে এবং ফেইসবুকে মওদুদীবাদ প্রচারের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মকে নানাভাবে যখন প্রশ্নবিদ্ধ করে, তখন কোথায় থাকে রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞপ্তির ধর্মানুভূতি?

২. যখন জামায়াত জাতীয় মসজিদে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে তখন কী রাষ্ট্রের ধর্মানুভূতি শীতনিদ্রায় থাকে?

৩. যখন চট্রগ্রামে আলেম সমাজকে হত্যার হুমকি দেয় জামায়াত-শিবিরের শ্বাপদরা, তখন কি রাষ্ট্রের অভিধানে ধর্মানুভূতি শব্দটি অনুপস্থিত থাকে?

৪. যখন জামায়াত-শিবির পুলিশের উপরে নির্বিচারে হামলা চালায়, তাদের হত্যা করে, চিকিৎসককে আগুনে পুড়িয়ে মারে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধের হুমকি দেয়, রাষ্ট্র তখন কেন তদন্ত কমিশন বানায় না? তখন কি রাষ্ট্র আঘাতপ্রাপ্ত হয় না?

৫. হরতালের নৈরাজ্য সৃষ্টি করে জামায়াত-শিবির যখন দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেয়, ব্লগের ক্ষুদ্র গণ্ডি থেকে যে সব গণমাধ্যম ধর্মীয় অবমাননাকর বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসে, তখন রাষ্ট্র কেন কমিশন করে ‍উদ্যোগ নেয় না?

৬. যখন অনলাইন এবং ব্লগে জামায়াত-শিবির বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অপপ্রচার চালায়, তখন কেন মহাজোট সরকার তার বিরুদ্ধে উদ্যোগ নেয় না? আজ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার বিরুদ্ধে সরকার কি কোনো উদ্যোগ নিয়েছে?

সরকার এখন এইসব প্রশ্নের জবাব দেবে নাকি এই প্রশ্নগুলোর ড্রাফট কে লিখে দিয়েছে, সেটা তদন্ত করতে বসবে, সেটাই দেখার বিষয়।

সরকার শাহবাগ আন্দোলনের গণদাবির প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ তো করছেই না, উল্টো হেফাজতে ইসলামের রক্ষণশীল দাবিগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। সেই দাবি বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। সরকার একটি ব্লগ পর্যবেক্ষণ কমিটি বানিয়েছে, সেখানে ইসলাম বিশেষজ্ঞ হিসেবে দুইজন আলেমকে স্থান দেওয়া হলেও কোন ব্লগার সেখানে অন্তর্ভূক্ত হননি। কেন? সরকার শুধু তাদের দিকটাই শুনবে? আর সেটা শুনে যখন যেভাবে যাকে খুশি তুলে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে? এটা তো ভয়াবহ পরিস্থিতি। ককটেলবাজি-বোমা বিস্ফোরণ, খুন, গাড়ি পোড়ানো, ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত করা, ভিন্নধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া এইসব সহিংস ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ধীরেসুস্থে। যারা এগুলো করছে, তাদের নিষিদ্ধ করা হবে ধীরেসুস্থে আর কারো সাথে পাঁচে না থেকে শুধু নিজের মতটা প্রকাশের জন্য দণ্ড পেতে হবে ব্লগারদের? বন্ধ করে দেওয়া হবে মুক্তচিন্তার প্ল্যাটফর্মগুলো? এটা কিধরণের ন্যায়বিচার হলো? এটা তো পুরোপুরি স্বেচ্ছাচারী আচরণ। ডিজিটাল ফ্যাসিবাদের আগমনবার্তা।

এইটাই কি আওয়ামী লিগ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নমুনা? ব্লগ বন্ধ করে দিয়ে, ইন্টারনেটের উপর নিয়ন্ত্রণ এনে কিভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করতে চান আপনারা? ব্লগ-ওয়েবসাইট-ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তো জামায়াত-শিবিরও ব্যাপক মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। সেগুলোর ব্যাপারে তো সরকারের কোন বক্তব্য নেই। সেই মিথ্যা প্রচারণাগুলো কি কারও অনুভূতিতে আঘাত দেয় না? ধর্ম ছাড়া কি মানুষের আর কোন অনুভূতি নেই?

exposed

বিষয়গুলো প্রশ্ন আকারে উত্থাপিত হলেও সরকারের অবস্থান হয়তো ইতিমধ্যেই অনেকের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কারণ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আঁঁতাত করার ইতিহাস আওয়ামী লিগের আছে। ২০০৬ সালে খেলাফতে মজলিশের সঙ্গে তাদের চুক্তির কথাও আমরা জানি।

425125_10200974897117592_328957520_n

অতীতের এই ঘটনাগুলো আমাদের ইঙ্গিত দেয় যে, আওয়ামী লিগ সরকার আরও একবার আপোষরফা করেছে বা করতে চলেছে রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে। দুর্ভাগ্যবশত, এই আশঙ্কা যদি সত্যি হয় তাহলে শাহবাগ আন্দোলনকে আরও কঠোর-বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যেহেতু প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে, তাই সরকারকেও বিবেচনা করতে হবে শাহবাগ আন্দোলনের বিপরীতে দাঁড়ানোর পরিনামের কথা। মুক্তচিন্তা-মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপের পরিণামটা কি হবে, সেটার কথা।

শহীদ রুমী স্কোয়াডের ‘স্পিরিটকে’ শ্রদ্ধা জানাই

শাহবাগের পরিস্থিতিতে নিশ্চিতভাবেই খানিকটা পরিবর্তন এসেছে। অনেকেই অনেক রকমভাবে পরিস্থিতিটাকে বুঝতে চাইছেন, সামগ্রিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা ইতিবাচক হবে না নেতিবাচক হবে, এই বোঝাপড়া দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। এককথায় বর্তমান পরিস্থিতিটাকে শাহবাগ আন্দোলনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।

600237_508446495881318_1053862566_n

যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরুর আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল গত ২১ ফেব্রুয়ারী। সরকারকে সময় দেওয়া হয়েছিল গত ২৬ মার্চ পর্যন্ত। একমাসেরও বেশি সময়। নিষিদ্ধের প্রক্রিয়াটা কিভাবে হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময়টা মনে হয় পর্যাপ্তও ছিল। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে একটা কার্যকরী বাক্যও এখন পর্যন্ত উচ্চারণ করেনি। এতদিন ধরে আওয়ামী লিগ স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীকে প্রতিহত করার রাজনীতিই করে এসেছে। এখনই কি সেই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার মোক্ষম সময় নয়? যেখানে পুরো দেশের মানুষের এই পরিমাণ সমর্থন সরকার পাচ্ছে, তখন এই ৩৩ দিনের মধ্যেও সরকারের কাছ থেকে কেন কোন বক্তব্য পাওয়া গেল না? তাহলে কি তারা মুখেই শাহবাগের গণজাগরণের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছিলেন? জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার সদিচ্ছা তাদের নেই? এই প্রশ্নগুলো আমার ধারণা গতকাল শাহবাগ চত্বরে উপস্থিত অনেকের মনেই ছিল।

এর মধ্যেই শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি শোনা যায়। উপস্থিত অনেকেই তখন প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ চত্বরে মিছিল করে আন্দোলনরত বেশ কয়েকটি সংগঠন। আরও কিছুক্ষণ পরে রাত ১০:৩০ টার দিকে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেয় শহীদ রুমী স্কোয়াড। গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে শুরু থেকেই সম্পূরক-সহায়ক ভূমিকা অব্যাহত রেখেছিল আন্দোলনের ভেতর থেকেই গড়ে ওঠা এই সংগঠনটি। চার রাস্তার মোড়ে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের প্রতিকৃতিটি স্থাপন করে শাহবাগের নৈতিক ভিত্তিটাই যেন আরও পাকাপোক্ত করেছে শহীদ রুমি স্কোয়াডের সংগঠকেরা। তাহলে এখন কেন তাঁরা এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলেন যেটা গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে খানিকটা হলেও দ্বন্দ্বে জড়ায়?

579304_472954829441030_1378672163_n

গতকাল গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ঘোষিত পরবর্তী কর্মসূচি মেনে নিতে না পারা থেকেই এসেছে এই আমরণ অনশনের ঘোষণা। শহীদ রুমী স্কোয়াডের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখা হয়

“আরো এক স্মারকলিপি প্রদাণের ঘোষণা শুনলাম। আলটিমেটাম শেষ হল আজকে আর প্রধাণমন্ত্রীর কাছে পত্র নিয়ে-নিবেদন নিয়ে-কাকুতি মিনতি নিয়ে যাবেন ৪এপ্রিল, এইটা যদি হয় সর্বোচ্চ কঠোর কর্মসূচী, আমরা মনে করি সেটা এই তরুণ প্রজন্মের স্পিরিটের প্রতি অপমান।”

কি এই তরুণ প্রজন্মের স্পিরিট? কোথায় থেকে আসে এই স্পিরিট? কেন তারা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা না করাটাকে এই স্পিরিটকে অপমান করার সামিল মনে করছে? এই “স্পিরিট” জিনিসটা কি? এটা কী সেই স্পিরিট যেখান থেকে ১৯৭১ সালে বিলাসবহুল জীবনযাপনের হাতছানি ছেড়ে দিয়ে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন রুমীরা? এটা কি সেই স্পিরিট যেখান থেকে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম তাঁর প্রাণপ্রিয় ছেলেকে কোরবানি করে দিয়েছিলেন দেশের নামে? এটা কি সেই স্পিরিট যেখান থেকে পুরো দেশের মানুষ কোন আগে-পিছে না ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তির সংগ্রামে? আজকের এই শহীদ রুমী স্কোয়াড আর ১৯৭১ সালের রুমিদের স্পিরিটের মধ্যে কি তাহলে সাদৃশ্য আছে? মনে হয়, শহীদ রুমী স্কোয়াডের এই কর্মসূচির রাজনৈতিক বিশ্লেষণের পাশাপাশি তাদের সেই স্পিরিট অনুসন্ধানের কাজটাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

শহীদ রুমী স্কোয়াডের আমরণ অনশনের কর্মসূচি সামগ্রিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কিনা, এটা গণজাগরণ মঞ্চের সাথে দ্বন্দ্বে জড়ায় কিনা, এমন প্রশ্নের জবাব অনশনকারীরা বেশ স্পষ্টভাবে দিয়েছেন।

“স্কোয়াডের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হচ্ছে, আল্টিমেটাম না মানায় পরবর্তী সময়ের জন্য গণজাগরণ মঞ্চের তরফ থেকে যে সকল কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং সমর্থন দলটির আছে। বরাবরের মতোই প্রতিটি কর্মসূচিতে স্কোয়াডের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ থাকবে সক্রিয়ভাবেই।”

শুধু শহীদ রুমী স্কোয়াডের অনশনকারীরাই নয়, শাহবাগ চত্বরে আন্দোলনরত আরও অনেক সংগঠন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচির সঙ্গে একমত হতে পারেননি। আল্টিমেটামের পর আর স্মারকলিপি দেওয়ার কোন অর্থ হয় না মন্তব্য করে ঘেরাও কর্মসূচির দাবি জানিয়েছিলেন অনেকে। আগামী ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণাও করা হয়েছে। কেন তৈরি হলো এই কর্মসূচি নিয়ে মতভিন্নতা? এতদিন তো এ নিয়ে কোন দ্বিধা-বিভক্তি ছিল না! এখন কেন তৈরি হলো?

কারণ সরকারের ভূমিকা নিয়ে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন জমা হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান সরকারই বলেছেন, “দুঃখজনক হলেও সত্য, আল্টিমেটামের সময় পেরিয়ে গেলেও সরকারের টনক নড়েনি।” শুধু আল্টিমেটামের ক্ষেত্রেই না, আরও অনেক ক্ষেত্রে সরকারের টনক নড়েনি।  পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে রাষ্ট্রপক্ষের গাফিলতি-প্রস্তুতিহীনতা ছিল। প্রসিকিউটর তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। এবং এসময় বলা হয় রাষ্ট্রপক্ষ যদি যুক্তি দিয়ে বিচারকদের সন্তুষ্ট করতে না পারেন, তাহলে রায়ে তার প্রতিফলন ঘটবে। তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য এরকম যেন ভবিষ্যতে না হয়, সে ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষকে সচেতন করে দেওয়ার কাজটা কি শাহবাগ আন্দোলনের কর্মীদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? ট্রাইবুন্যাল গঠনের ৩ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে গত ২৫ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, ট্রাইবুন্যাল এখনো জনবল ও অবকাঠামোর দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনি। মানবতাবিরোধী অপরাধের সাড়ে পাঁচশ অভিযোগ এখনো তদন্তের অপেক্ষায় পড়ে আছে। তদন্ত সংস্থার পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো কার্যকর না থাকায় সেই কাজগুলো করা যাচ্ছে না। তদন্ত সংস্থার জন্য ৩৫১ জনের জনবলকাঠামো অনেক কষ্টে অনুমোদন হলেও সেটা শুধুই আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আটকে আছে গত চার মাস ধরে। তিন বছরেও ট্রাইবুন্যালের জন্য একটা ওয়েবসাইট তৈরি হয়নি। সরকার গত চার বছরে অনেক বিরোধী মতামতকে  যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছে। কিন্তু তারা কি যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য নিজেরা যথেষ্ট কর্মতৎপরতা দেখিয়েছেন? এখন তো দেখা যাচ্ছে তারা এতদিন অনেক গাফিলতি করেছেন যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে। অন্য অনেক জায়গায় যেখানে গণহারে নিয়োগবাণিজ্যের অনেক খবর আমাদের চোখে পড়ে সেখানে ট্রাইবুন্যালে কেন নিয়োগকার্য সম্পন্ন করা হচ্ছে না? কেন প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরও? এটা কি যুদ্বাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্থ করছে না? এই বিষয়গুলো নিয়ে কি সরকারকে প্রশ্ন করার জায়গা নেই?

শাহবাগ আন্দোলন শুরু হয়েছিল প্রশ্ন করার প্রবণতা থেকেই। সরকার যেভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য্যে অংশগ্রহণ করেছে এবং তার প্রেক্ষিতে আদালতে যে রায় ঘোষিত হয়েছিল তার প্রতিবাদ করতে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেই তৈরি হয়েছিল শাহবাগ চত্বর। পুনরুদ্ধারিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জয় বাংলা শ্লোগান। শহীদ রুমী স্কোয়াডের অনশনকারীরা তো এই চেতনা থেকে, মূল দাবি থেকে দূরে সরে যায়নি। তাহলে তাদেরকে মূল আন্দোলন থেকে পৃথক বা আলাদা কিছু ভাবা হবে কেন? তাদের পাশে দাঁড়াবো না কেন? বরং শহীদ রুমী স্কোয়াডের এই কর্মসূচি এটাই প্রমাণ করে দিল যে, ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তরুণ প্রজন্মের প্রতিবাদী চেতনা হারিয়ে যাবে না। কেউ যদি এই ‘দৃশ্যত পৃথক’ এই কর্মসূচিটির বিরোধীতাও করেন, তাদের প্রতি অনুরোধ সমালোচনা করার আগে প্লিজ অনশনকারীদের ‘স্পিরিট’কে শ্রদ্ধা জানাবেন, সম্মান জানাবেন। অনশন কর্মসূচির রাজনৈতিক ব্যবচ্ছেদ করার আগে বোধহয় এই ‘স্পিরিট’-এর উৎস অনুসন্ধানটাই জরুরি।

524931_457840020952511_1059102782_n

নাস্তিকতার বিভ্রান্তি দূর হবে কিভাবে?

556684_10151485313048104_1449525823_n

প্রচণ্ড কোনঠাসা অবস্থার মধ্যে পড়েও জামায়াত-শিবিরই মনে হয় এখন পর্যন্ত কৌশলগত দিক থেকে সফল। শুরুতেই তারা রাজীব হায়দারকে খুন করে শাহবাগ আন্দোলনটাকে ‘আস্তিক-নাস্তিক’ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। ভেবেছিলাম এই কৌশলটা ধোপে টিকবে না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে, এই পরিকল্পনা দারুণভাবে সফলতা অর্জন করেছে। এখন জামায়াত-শিবিরের বদলে হেফাজতে ইসলামকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিভাবে দূর করা যাবে এই নাস্তিকতার বিভ্রান্তি? কি পরিকল্পনা গণজাগরণ মঞ্চের? সরকারের?

ধোঁয়াশাপূর্ণ সব বক্তব্য দিয়ে আন্দোলন-কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। জিজ্ঞাসা করলে কোন প্রশ্নের উত্তর তাঁরা স্পষ্ট করে দিতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। ‘নাস্তিক ব্লগার-নাস্তিক ব্লগার’ রব তুলে তারা সবার মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু ব্লগিং বা নাস্তিকতা সম্পর্কে তাদের কোন স্বচ্ছ ধারণাই নেই বলে প্রতিয়মান হয়।

গতকাল রাতে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবু বলেন, ‘আমাদের দাবি হলো, বর্তমানে যে ব্লগাররা আছে, যারা রাসুল (সা.)-এর অবমাননাকারী, ইসলামের বিদ্বেষী, নাস্তিক্যবাদী, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। সরকার যেন তাদের উচিত শাস্তি দেয়।’ আপনি যেসব ব্লগারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন, তারা অসলে কী লিখেছে, আপনি কি একটা বলতে পারবেন? আপনি নিজে তা পড়েছেন? বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, পড়ি নাই। না পড়লেও সমস্যা নাই, আমার যারা কর্মী আছে, কর্মীদের আমরা দায়িত্ব দিছি। তারা পড়েছে। তারা আমাদের শুনাইছে। তারা তো সেইগুলা আমাদের সামনে নিয়া আসছে।’ সেই সব ব্লগারের উচিত শাস্তিটি কী—বিবিসির এই প্রশ্নের উত্তরে মাওলানা জুনায়েদ বাবু বলেন, ‘আমাদের দাবি হলো উচিত শাস্তি দিতে হবে, তারা যেন এই সমস্ত কাজ আর না করে।’

আগে জানতাম নেতারাই পড়াশোনা করে কর্মীদের হেদায়েত দান করেন, সবার নানারকম প্রশ্নের জবাব দেন। এখন তো দেখা যাচ্ছে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরাই নেতাদেরকে সবকিছু জানানোর দায়িত্বটা পালন করছে। ভালো কথা, তা করুক। কিন্তু কোন সুনির্দিষ্ট যৌক্তিক বক্তব্য কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না এই নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে। তারা দাবি করছে যারা এই সমস্ত কাজ করে তাদের উচিত্ শাস্তি দিতে হবে। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, কি কাজ, কে করেছে, কবে করেছে, প্রমাণ কিছু আছে কিনা— কোন কিছুই বুঝি না, তারপরও বিচার চাই। এর চেয়ে হাস্যকর-অযৌক্তিক কোন বিষয় এই একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে হতে পারে?

এখন পুরো ব্যাপারটা দেখা হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সংযুক্তি-সম্পৃক্ততার বিষয় হিসেবে। কিন্তু এই দিক দিয়ে জিনিসটা মোকাবিলা করতে গেলে আরও প্যাঁচ লেগে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। বাংলাদেশে ধর্মভীরু মুসলমানের সংখ্যা কম নয়। কয়েকদিন আগেই সাঈদীকে চাঁদে দেখিয়ে অনেক মানুষকে উন্মত্ত করে তুলেছিল জামায়াত-শিবির। ভবিষ্যতে যদি হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধেও শাহবাগ আন্দোলনের প্রকাশ্য বিরোধ শুরু হয়ে যায়, তাহলে তার পরিণাম বোধহয় ভালো হবে না। গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে ধর্ম বিষয়ক বিভ্রান্তি দূর করার সর্বোচ্চ চেষ্টাই আমার ধারণা করা হয়েছে। শাহবাগ চত্বরে বারবার উচ্চারিত হয়ে যে, ‘এই আন্দোলনের সঙ্গে ধর্মের কোন বিরোধ নেই, ধর্ম যার যার, দেশ সবার’ ইত্যাদি। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ইসলামপন্থী ওলামা-মাশায়েখ ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দও সোচ্চার হয়েছেন। তাঁরাও দৃঢ়কণ্ঠে জানিয়েছেন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি। তারপরও এই ধর্ম-নাস্তিকতার কার্ড খেলে যাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে কোন আলোচনাতে যেতেও রাজি নয় তারা। তাহলে এখন এই বিভ্রান্তিমূলক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কি?

285661_586128814749514_2133248007_n

এখন বোধহয় এ বিষয়ে সরকারের অনেক কিছু করার আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে দেশ চালানোর কাজে নিযুক্ত সব্বাই তো শাহবাগের গণজাগরণকে সমর্থন জানিয়েছিলেন একবাক্যে। তারা কি করছেন আসলে? কেন দূর করছেন না এই বিভ্রান্তি? বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় কি করছে? তাদের দিক থেকে কোন বিবৃতি নেই কেন? সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে শুনতে চাওয়া হোক হেফাজতে ইসলামের অভিযোগসমূহ। কোন ব্লগারের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নিতে বলছেন? কোন ব্লগগুলোকে তারা “প্রিয় নবীজির (সা.) শানে বেয়াদবির” সামিল বলে মনে করছে? কোন বিষয়গুলোকে তারা “জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার” সামিল বলে মনে করছে? সুনির্দিষ্টভাবে শুনতে চাওয়া হোক। তাহলেই তো সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে তাদের অবস্থান। অযথাই কান নিয়ে গেছে চিলে বলে দিশাবিহীন দৌড়াদৌড়ি করার কি দরকার?

এই মুহূর্তে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা খোঁজার চেয়ে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে চাওয়াটাই তো মনে হয় বেশি জরুরি। কারণ জামায়াত-শিবির আজ হেফাজতে ইসলামের আড়ালে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, কাল অন্য কিছুর আড়ালে আশ্রয় নেবে। এর মূলে হাত দেওয়াটাই কি জরুরি না?

ব্লগ বনাম বোমা: শাহবাগ-জামায়াতের সাইবার যুদ্ধ

shibir-hacked1s

বাংলাদেশের প্রগতিশীল জনগোষ্ঠী ও মৌলবাদীদের মধ্যে সুস্পষ্ট একটা রেখা টেনে দিয়েছে শাহবাগ আন্দোলন।  আর এই দুইটা বিপরীতমুখী চিন্তাধারার দ্বন্দ্ব, সমাজের প্রতিটা ধাপে, প্রতিটা শ্রেণীর মানুষের উপরেই প্রভাব ফেলছে।

জামায়াতে ইসলামী ও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের মধ্যে একটা পুরোদস্তুর সাইবার যুদ্ধ চলমান আছে। এই দ্বন্দ্বটা এতটাই ঘনীভূত হয়েছে যে, অনলাইন তত্পরতা নজরদারিতে রাখার জন্য সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কোন ব্লগে বা ফেসবুকে উস্কানিমূলক কোন পোস্ট দেওয়া হচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারে নজর রাখছে এই কমিটি।

৭১-এর গণহত্যার সঙ্গে জড়িত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে চলমান শাহবাগ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ব্লগাররা। [যুদ্ধাপরাধী সংগঠন] জামায়াত ই ইসলামী ও তাদের রাজনৈতিক মিত্র দলগুলো এখন এই গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে অনলাইন প্রচারণা চালানো শুরু করেছে। তারা শাহবাগ আন্দোলনের প্রগতিশীল নেতাকর্মীদের আখ্যা দিয়েছে ‘ইসলামের শত্রু’ হিসেবে।

জামায়াতের কর্মীরা শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেক ব্লগারের ব্লগ-ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রামের একজন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট বলেছেন, ‘জামায়াত-শিবির প্রায়শই আমাদের ওয়েবসাইট-ব্লগগুলো হ্যাক করে সেগুলোর লেখাপত্র বিকৃত করছে।’ শাহবাগ আন্দোলনের আরেক সংগঠক শাহ আসিফ বলেছেন, ‘চট্টগ্রামে  গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশের বিরোধীতাকারী ধর্মীয় সংগঠন হেফাজত-ই-ইসলাম আমাদের অভিযুক্ত করেছে নাস্তিক/ধর্মের নিন্দাকারী হিসেবে। আমরা আমাদের কিছু ব্লগ খুলে দেখি, সেগুলো হ্যাক করে ভিতরের পোস্টগুলো বিকৃতি করা হয়েছে।’ বিপরীতে এই সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য একই রকম রণকৌশল অবলম্বন করছে শাহবাগপন্থী অ্যাক্টিভিস্টরা। তারা হ্যাক করছে জামায়াতের ব্লগগুলো।

বাংলাদেশের প্রধানতম অনলাইন সংবাদপত্রের সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালেদি অবশ্য শাহবাগের এই সাইবার অ্যাক্টিভিজমকে শুধুই একটা ভার্চুয়াল জগতের আন্দোলন হিসেবে দেখতে রাজি নন। তাঁর মতে, অনলাইন মিডিয়া এখন বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমের পরিপূর্ণ অংশ। মালয়েশিয়ায় চারজন ব্লগারের সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করার উদাহরণ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে, প্রায় ৩২ মিলিয়ন মানুষের ইন্টারনেট প্রাপ্যতা আছে। নেটিজেন জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ ইন্টারনেট সংযুক্ত হন তাদের সেলফোন দিয়ে।’

শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী ও চলচ্চিত্রনির্মাতা ইমরান ফেরদৌস স্বীকার করেছেন যে, অনলাইন প্রচারণা দিয়ে সত্যিই একটা পরিবর্তন আনা সম্ভব। বিপরীতদিকে জামায়াতও এত সহজে হাল ছেড়ে দেবে না। কারণ তাদের খুবই শক্তিশালী অর্থনৈতিক সহায়তা আছে। এছাড়াও আছে একটা সুসংগঠিত ক্যাডারবাহিনী। জামায়াতের এই সুসংবদ্ধ সংগঠন ও অর্থনৈতিক ক্ষমতাকে মোকাবিলা করাই শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জ।

– লেখাটি টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে ১৪ মার্চ, ২০১৩ তারিখে

কিভাবে হবে সাংস্কৃতিক আন্দোলন?

Shahbag Square protest reaches Day 9

গণজাগরণের ঢেউ দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। ছয় দফা দাবি আদায়ের পর দেশজুড়ে একটা সাংস্কৃতিক আন্দোলন পরিচালনার পরিকল্পনাও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকদের আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বিডিনিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, ‘সবাই আমাদের ছয় দফা দাবি সম্পর্কে জানেন। এগুলো পূরণ হয়ে গেলে আমরা দেশজুড়ে একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন পরিচালনার কথা ভাবছি, যার মূল লক্ষ্য হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া। এতে করে আমাদের দেশের রাজনীতি থেকে ময়লাগুলো সব ধুয়ে যাবে।’ নিঃসন্দেহে খুবই ভালো ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। সাংস্কৃতিক প্রচার চালানো অবশ্যই জরুরি। পুরো দেশের মানুষের কাছে শাহবাগের গণজাগরণ বার্তা সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়াটার উপরই আসলে নির্ভর করছে নতুন প্রজন্মের এই মুক্তিযুদ্ধের সাফল্য। কিন্তু এই কাজটা করা হবে কিভাবে?

যদি বিষয়টা এমন হয় যে, একেক দিন একেকটা শহরে শুধু একটা করে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে, তাহলে কার্যকরী কোন প্রভাব ফেলা যাবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। হয়তো ঐ দিনটাতে একটা শহরে একটু উত্তাপ-উত্তেজনা ছড়াবে, মানুষ কৌতুহল নিয়ে দেখতে আসবে, খুব বেশি হলে আরও কিছুদিন এলাকা সরগরম থাকবে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় পুরো দেশে বিরাজমান সাংস্কৃতিক-শিক্ষাগত বৈষম্য/ব্যবধান দূর করা যাবে না। মানুষের মনোজগতে কার্যকরী প্রভাব ফেলতে গেলে হয়তো আরও জনসম্পৃক্ততামূলক পদ্ধতির কথা ভাবতে হবে শাহবাগ চত্বরকে। মানুষের মনে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা অনেক সন্দেহ-সংশয়, বিভ্রান্তি দূর করার কাজটা সহজ না।

আজকে আমরা শিবিরের পেজগুলোকে এখন এত প্রকটভাবে উন্মোচিত হতে দেখছি। ছাগুদের কীর্তি-কারবার নিয়ে হাসাহাসি করছি, এগুলোর বিরুদ্ধে সাইবার যুদ্ধ করছি। কিন্তু এগুলো ক্রিয়াশীল ছিল তো অনেকদিন ধরে। এবং সরকারের নিরন্তর সমালোচনা করে তারা সত্যিই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। সেইসব সমালোচনার পেছনে যে এই জামায়াত-শিবির আছে, সেটা আমরা খেয়ালই করে দেখিনি। কারণ সমালোচনা করার যৌক্তিক কারণ ছিল। পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারির পর যদি কোন পেজ থেকে আবুল হোসেনের একটি কেরিকেচার-যুক্ত ছবি পোস্ট করা হতো, তাহলে কি কেউ বুঝতে পারতেন যে, সেটা জামায়াত-শিবিরের পেজ? সেইরকম সমালোচনা তো অনেকেরই ছিল সরকারকে নিয়ে। ফলে সরকার-আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের কুকীর্তিকে পুঁজি করেই কিন্তু এতদিন ধরে অনেকের “লাইক” পেয়ে এসেছে এই ‘বাঁশের কেল্লা’গুলো। এটা তো শুধু ফেসবুকের কথা হলো। এর বাইরেও গ্রামে-বন্দরে, হাটে-বাজারে-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে-সর্বত্রই নানাবিধ প্রচারণা চালিয়ে এসেছে, সরকার বা আওয়ামী লিগের বিরুদ্ধে। এবং সেগুলো এখনকার মতো মিথ্যা প্রচারণা দিয়েও করতে হয়নি। সরকার, তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ যেভাবে গত চার বছর ধরে নানাবিধ দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারীতা চালিয়ে গেছে, তাতে তাদের উপরে মানুষের আস্থা প্রায় তলানিতে নেমে এসেছিল। সেগুলোর প্রভাব তো হুট করে চলে যাবে না। জামায়াত-শিবির মানুষের ভেতরে এতদিন ধরে যে প্রচারণা চালিয়েছে এবং তারা যে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সমর্থন আদায় করার কাজটা করে গেছে, জনসমাজে সেটার প্রভাব এক-দুইটা মহাসমাবেশ করে উড়িয়ে দেওয়া কি সম্ভব?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুবাদে খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে যে, শিবির কিভাবে পরিচালিত হয়, কিভাবে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করে। কিভাবে তারা একজন ছাত্রকে সংগঠনটির উপর নির্ভরশীল করে ফেলে। শিবিরের স্বর্ণযুগে, ভর্তিপরীক্ষার আগ দিয়ে প্রতিটা হলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করত ছাত্রশিবির। সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অতি ভালো ব্যবহার করা হতো। এরপর যারা যারা ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, তাদেরকে সেই সুখবরটা জানানোর কাজটিও করতেন ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। একজন গরীব বা অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীর হলে থাকার ব্যবস্থা, প্রয়োজনে খাবার খরচটিও বহন করে সংগঠনটি। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর সঙ্গে গড়ে তোলে পারিবারিক সম্পর্ক। তাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক সহযোগিতাও করে শিবিরের নেতারা। এবং কখনোই তাদেরকে মিছিল-মিটিং-মারামারির ভেতরে ঢোকানো হয় না। ফলে এই রকম অনেক শিক্ষার্থী কৃতজ্ঞতাবশই শিবিরের প্রতি সমর্থন জানান। ক্যাডারদের জন্যও থাকে আলাদা ব্যবস্থা। সেটার ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি অন্য ধরণের। এভাবে খুবই সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয় ছাত্রশিবির। ভালো ফলাফল করে পাস করা শিক্ষার্থীদের চাকরির ব্যবস্থাও অনেকাংশে করে দেওয়া হয় ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে। এভাবেই তারা ছড়িয়ে পড়ে পেশাগত জায়গায়। প্রভাব বিস্তার করে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে। দীর্ঘদিনের সুসংগঠিত কর্মতত্পরতা আর প্রচারণার মাধ্যমে জনমানসে শক্ত খুঁটি গেড়েছে জামায়াত-শিবির।

এবং তাদেরকে সাংস্কৃতিকভাবে মোকাবিলা করার মতো কার্যকর তত্পরতা কিন্তু এতদিন ধরে প্রগতিশীলদের দিক থেকে তেমনভাবে ছিল না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংস-বল প্রয়োগের মাধ্যমে ছাত্রশিবিরকে ক্যাম্পাস থেকে উত্খাত করা গিয়েছে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু সফলতা কতখানি আর এই সহিংস বলপ্রয়োগের পথ বেছে নেওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি হয় সেটা এখনকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালেই সবাই দেখতে পারবেন। বিগত চার বছরে ছাত্রশিবিরকে রুখার নামে ছাত্রলীগকে দেওয়া হয়েছিল অবাধ স্বাধীনতা। আব্দুস সোবহান প্রশাসনের শেষসময়ে সেই ছাত্রলীগই ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে চড়াও হয়েছে প্রশাসনের উপর। নিয়োগ বাণিজ্যে অসন্তুষ্ট হয়ে প্রশাসন ভবনে ভাঙচুর করেছে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের কিছু নেতা-কর্মী। আর উপাচার্য,-উপ-উপাচার্যবিহীন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে পড়েছে অভিভাবকহীন। পরিহাসের কথাটি হচ্ছে, এই অভিভাবকত্বহীনতার সুযোগ নিয়ে নাকি এখন ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসে গোলযোগ তৈরি করতে পারে। শেষ শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সভাপতির পদটিও হারিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা। তাহলে কী প্রতিরোধ করলেন উনারা এতদিন? আমার ধারণা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত ৪টি বছর থেকে শিক্ষা নিতে পারে এখনকার শাহবাগ আন্দোলন। দুই ক্ষেত্রেই ইস্যুটা একই। জামায়াত-শিবির প্রতিরোধ। গত চার বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েও শিবির উত্খাত করতে পারেনি ছাত্রলীগ ও প্রশাসন। তাদের তো পূর্ণ ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়কে শিবির মুক্ত করা। কেন পারলো না? তাহলে কী পদ্ধতিতে কোন ভুল ছিল? আমার ধারণা এই দিকটি ভাবার দাবি রাখে।

শত্রুপক্ষের প্রচারণা নিয়ে শুধু হাসাহাসি করলেই তো সমস্যার সমাধান হবে না, সেগুলো মোকাবিলার জন্য কার্যকর কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, সেই কথাটা ভাবতে হবে। আর এখন যেভাবে র্যাব-পুলিশ দিয়ে সহিংসভাবে জামায়াত-শিবির রুখার বা জনসাধারণকে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, সেটা কোন সমাধান না। ব্লগার রাজীব খুন হওয়ার পর যেমন আমরা শ্লোগান দেই যে, ‘এক রাজীব লোকান্তরে, লক্ষ্য রাজীব ঘরে ঘরে’। তেমনি তারাও ‘শহীদ’দের লাশ দেখিয়ে জেহাদে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করে অন্য দশজন তরুণকে। পিঠ একদম দেওয়ালে ঠেকে যাওয়ার পর, আর কোন উপায়ান্তর না দেখলে হয়তো এই তরুণদের মধ্যেই কেউ কেউ হয়ে উঠতে পারে আত্মঘাতি বোমাবাহক। তেমন পরিস্থিতি কি তাহলে আরও খারাপ হবে না?

Somabesh

গতকাল ছিল ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক্ষুদে যোদ্ধা অপূর্ব’র বেশে সত্যিই যেন ফিরে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর ৭ই মার্চের ভাষণটি হুবহু অনুকরণ করে অজস্র মানুষকে আবারও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত করেছেন অপূর্ব। আবারও মুষ্ঠিবদ্ধ হাতের ঐক্যবদ্ধতায় উচ্চারিত হয়েছে মুক্তির সংগ্রাম করার অঙ্গীকার। সত্যিই আজ আমরা আবার রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীমুক্ত স্বাধীন ‘সোনার বাংলা’ গড়ার দৃঢ় শপথ নিয়েছি। কিন্তু প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করব কিভাবে, কোন পদ্ধতিতে, সেটাও আমাদের ভাবতে হবে। জামায়াত-শিবিরের গোড়া কোন পর্যন্ত বিস্তৃত, এবং এটা কেন বিস্তৃত হতে পেরেছে সেটাই আমাদের সবার আগে ভাবা উচিত্। গ্রাম-গঞ্জের, জেলা-উপজেলার সাধারণ মানুষের কাছে গণজাগরণের বার্তা সত্যিই পৌঁছে দিতে চাইলে আপামর জনসাধারণের মনে জমে থাকা অনেক অনেক প্রশ্ন, সন্দেহ-সংশয়ের সঠিক জবাব দিতে পারতে হবে শাহবাগ আন্দোলনের সংগঠকদের। শুধু জবাব না, অনেক অনেক প্রশ্নের কথাই আগে ভাবতে হবে।