Posts Tagged ‘ ইতালি ’

আয়ারল্যান্ড থেকে গ্রীস: ইউরোর অঘটনগুলো

প্রতিটা ফুটবল প্রতিযোগিতাতেই থাকে ‘চুনোপুঁটি’ হিসেবে বিবেচিত কিছু ছোট দল। আন্ডারডগ বলেও ডাকেন অনেকে। ভাবা হয় যে, এই দলগুলোর জন্য শুধু অংশগ্রহণ করাটাই যথেষ্ট। কিন্তু এই চুনোপুঁটিরাই ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের আসরে রীতিমতো নাকাল করে ছেড়েছে অনেক বড় দলকে। ইউরো কাপের এই অঘটনগুলো নিশ্চিতভাবেই মনে করিয়ে দেয় যে শুধু সংখ্যা বাড়ানোর জন্যই অংশ নেয়না এই আন্ডারডগরা। বড় কিছু করার সামর্থ্য ও সম্ভাবনাও সুপ্ত থাকে তাদের মধ্যে।

১৯৮৮ সালের গ্রুপ পর্ব
১৯৮৮ সালের ইউরো কাপে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। আর ইংল্যান্ডের জন্য সেটা ছিল তৃতীয় আসর। একেবারেই নবাগত আয়ারল্যান্ড গ্রুপ পর্বের খেলায় ঘটিয়েছিল ইউরোর প্রথম অঘটন। ১-০ গোলে হেরে মাঠ ছেড়েছিল ইংল্যান্ড। সেসময় তাদের এই দলে ছিলেন গ্যারি লিনেকার, পিটার শেলটন, জন বার্নেসদের মতো কিংবদন্তী ফুটবলাররা। কিন্তু তারপরও হারের স্বাদ পেতে হয়েছিল ইংলিশদের। প্রথমার্ধের ৬ মিনিটে আয়ারল্যান্ডকে জয়সূচক গোলটি এনে দিয়েছিলেন আইরিশ মিডফিল্ডার রে হুজটন। এরপর পুরো খেলায় গোল শোধের আপ্রাণ চেষ্টা করলেও সফল হয়নি ইংল্যান্ড। কারণ আয়ারল্যান্ডের এই ১-০ গোলের জয়ের নেপথ্যে বেশ বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন গোলরক্ষক প্যাট্রিক বোনার।

১৯৯২ সালের গ্রুপ পর্ব আগের আসরের মতো এবারও অঘটনের শিকার হয়েছিল ইংল্যান্ড। এবার তাদেরকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল আন্ডারডগ সুইডেন। আর এই হারের ফলে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল ইংল্যান্ডকে। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে প্রথমার্ধের মাত্র ৪ মিনিটেই ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দিয়েছিলেন ডেভিড প্লাট। প্রথমার্ধটা ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই শেষ করেছিল ইংলিশরা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে চমত্কারভাবে ঘুড়ে দাঁড়ায় স্বাগতিক সুইডেন। ৫১ মিনিটে গোল শোধ করে খেলায় সমতা ফেরান ডান এরিকসন। আর ৮২ মিনিটে দলকে জয়সূচক গোলটি এনে দেন সুইডিশ স্ট্রাইকার টমাস ব্রোলিন।

১৯৯২ সালের ফাইনাল
একই আসরের ফাইনালেও অঘটনের জন্ম দিয়েছিল ডেনমার্ক। সেবারের আসরে তারা বাছাই পর্বের বাধাই পেরোতে পারেনি। কিন্তু চূড়ান্ত আসর শুরুর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে যুগোশ্লোভিয়াকে টপকে ইউরো কাপে খেলার সুযোগ পায় তারা। আর একমাস পরে তারাই পায় শিরোপা জয়ের স্বাদ। ফাইনালে তারা ২-০ গোলে হারিয়েছিল সেবারের অন্যতম ফেভারিট জার্মানিকে। প্রথমার্ধের ১৮ মিনিটে ডেনমার্কের পক্ষে প্রথম গোলটি করেছিলেন জেনসেন। আর দ্বিতীয়ার্ধের ৭৮ মিনিটে ডেনমার্কের ইতিহাসগড়া ম্যাচটির জয় নিশ্চিত করা গোলটি এসেছিল কিম ভিলফোর্টের পা থেকে।

১৯৯৬ সালের গ্রুপ পর্ব
ইউরো কাপের এই আসরে প্রথম ম্যাচটাতেই জার্মানির কাছে ২-০ গোলে হারের মুখ দেখেছিল চেক রিপাবলিক। দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ১৯৯৪ সালের ফাইনালিস্ট ইতালি। এই ম্যাচটা হয়তো চেকদের জন্য ছিল কিছু একটা করে দেখানোর। আর সেটা খুব ভালোমতোই করেছিল তারা। ইতালিকে হারিয়েছিল ২-১ গোলে। এই হারের ফলে ইতালি ছিটকে পড়ে গ্রুপ পর্ব থেকেই। আর চেক রিপাবলিক শুধু পরবর্তী পর্বেই না, চলে গিয়েছিল সেই আসরের ফাইনাল পর্যন্তও। ইতালির বিপক্ষে এই ম্যাচটাতে প্রথমার্ধের ৫ মিনিটে চেক রিপাবলিককে এগিয়ে দিয়েছিলেন পাভেল নেদভেদ। কিন্তু ১৩ মিনিট পরেই খেলায় সমতা ফেরান ইতালিয়ান স্ট্রাইকার এনরিকো চিয়েসা। ৩৫ মিনিটে আবার চেক রিপাবলিককে চালকের আসনে বসান রাদেক বেজবেল। এই গোলটাই শেষপর্যন্ত ম্যাচের জয়সূচক গোল হিসেবে থেকে যায়।

২০০৪ সালের গ্রুপ পর্ব
এই আসরে প্রথমবারের মতো বড় কোন ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পায় দক্ষিণ ইউরোপের ছোট্ট দেশ লাটভিয়া। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই চেক রিপাবলিকের কাছে হেরেছিল ২-১ গোলে। দ্বিতীয় ম্যাচে যখন তারা তিনবারের ইউরো ও তিনবারের বিশ্বকাপশিরোপাজয়ী জার্মানীর মুখোমুখি হয়েছিল, তখন সবাই হয়তো অনুমান করেছিলেন যে, গোলবন্যায় ভাসতে যাচ্ছে লাটভিয়া। কিন্তু সবাইকে হতবাক করে দিয়ে জার্মানিকে রুখে দিয়েছিল তারা। সেই ম্যাচের গোলশূণ্য ড্র ফলাফলটাই ছিল একটা বিশাল অঘটন। জার্মানিকেও এই অঘটনের মাশুল দিতে হয়েছিল ভালোভাবেই। সেবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল ইউরোপের এই ফুটবল পরাশক্তিকে।

২০০৪ সালের ফাইনাল
১৯৯২ সালে ডেনমার্ক যেমন স্বাগতিক হওয়ার ফায়দা তুলে শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিল, এক যুগ পরে ঠিক তেমনই একটা সুযোগ পেয়েছিল পর্তুগাল। সেসময়টা ছিল পর্তুগিজ তারকা লুইস ফিগো, রুই কস্তাদের সোনালি যুগ। ডেকো, রিকার্দো কারভালহোরা ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও তখন প্রতিশ্রুতিশীল তরুন তুর্কি। নিজেদের মাটিতে আয়োজিত এই আসরই ছিল পর্তুগালের ইউরোপসেরা হওয়ার সবচেয়ে সুবর্ণ সুযোগ। স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তেও চলে এসেছিল পর্তুগিজরা। কিন্তু ফাইনালে এসে অঘটনের শিকার হতে হয় স্বাগতিকদের। গ্রীসের কাছে ১-০ গোলে হেরে শেষ হয় তাদের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৭ মিনিটে গ্রীসের পক্ষে জয়সূচক গোলটি করেন অ্যাঙ্গেলোস চারিস্তেস।

ইউরো কাপের আদিকথা ও চিনপরিচয়

১৯৬০ সালে প্রথম উয়েফা ইউরোপিয়ান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপটা যখন বাস্তবে মাঠে গড়িয়েছিল, তখন আসলে পূরণ হয়েছিল হেনরি ডুলানির আজন্ম লালিত একটা স্বপ্ন। দীর্ঘদিন ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের অগ্রণী ব্যক্তি হিসেবে কাজ করা ডুলানিই ১৯২৭ সালে প্রথমবারের মতো প্রস্তাব করেছিলেন ইউরোপভিত্তিক জাতীয় এই ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজনের। এরপর দীর্ঘদিন বর্তমানের এই ইউরো কাপটার বাস্তব রুপ দেওয়ার জন্য কাজ করে গেলেও সফল হননি তিনি। ১৯৫৫ সালে চিরনিদ্রায় শায়িত হন এসময়ের অন্যতম শীর্ষ এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার স্বপ্নদ্রষ্টা। তাঁর মৃত্যুর তিন বছর পরে, ১৯৫৮ সালে সিদ্ধান্ত হয় সেসময়ের উয়েফা ইউরোপিয়ান ন্যাশনস কাপ। ডুলানির স্মরণে ১৯৬০ সালে প্রথমবারের আসরটি আয়োজন করা হয়েছিল ফ্রান্সে। শিরোপাজয়ী দলকে যে শিরোপাটা তুলে দেওয়া হয় তাতেও ছিল ডুমিনির নাম। প্রথম আসরে এক উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালে যুগোস্লোভিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের শিরোপাটা জিতেছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন।
তৃতীয় আসর (১৯৬৮) থেকে প্রতিযোগিতাটির নাম দেওয়া হয় উয়েফা ইউরোপিয়ান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। আর গত আসর থেকে সংক্ষেপে সালভিত্তিক নামকরণের প্রচলন হয়। ইউরো ২০০৮ এর মতো এবারের আসরকেও ডাকা হচ্ছে ইউরো ২০১২। আর মাত্র ১৬ দিন পর থেকে পোল্যান্ড ও ইউক্রেনের মাটিতে শুরু হতে যাচ্ছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় এই জাতীয় ফুটবলের প্রতিযোগিতা। স্বাগতিক দুই দেশ ছাড়াও এবারের আসরে অংশ নিতে যাচ্ছে ক্রোয়েশিয়া, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, গ্রীস, ইতালি, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া সুইডেন ও গতবারের শিরোপাজয়ী স্পেন। চারটি করে গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রথমে গ্রুপ পর্বে অংশ নেবে মোট ১৬টি দেশ। গ্রুপের প্রতিটি দলের মুখোমুখি লড়াইয়ের পর গ্রুপ তালিকার শীর্ষ দুইটি করে দল অংশ নেবে কোয়ার্টার ফাইনালে। এরপর সেমিফাইনাল এবং চূড়ান্ত ও অন্তিম লড়াই, ফাইনাল। এখানেই নির্ধারিত হবে যে, কোন দেশ পাবে আগামী চার বছরের জন্য ইউরোপসেরার খেতাব।
বিগত ১৩টি আসরের ইউরো কাপ শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছে মোট নয়টি দেশ। সবচেয়ে বেশি, তিনবার শিরোপা জিতেছে জার্মানি। ফ্রান্স ও স্পেন শিরোপার দেখা পেয়েছে দুইবার করে। আর একবার করে জিতেছে ইতালি, চেকোস্লোভিয়া, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক, গ্রীস ও তৎকালিন সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিন্তু সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখন পর্যন্ত টানা দুইটি শিরোপা জিততে পারেনি কোন দেশই। এ থেকে এই প্রতিযোগিতার চরম প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ পরিস্থিতি সম্পর্কেও বেশ ভালোই অনুমান করা যায়। তবে এইবার সেই নতুন ইতিহাস গড়ার সুযোগ আছে স্পেনের সামনে। ২০০৮ সালে গত আসরের শিরোপা জিতেছিল বর্তমানে ফুটবলের এই এক নম্বর দলটি। দুই বছর পর বিশ্বকাপ জিতে বিশ্ব ফুটবলেও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন ক্যাসিয়াস-জাভি-ইনিয়েস্তারা। আর এবারের ইউরো কাপেও তারা নিশ্চিতভাবেই বিবেচিত হবে শিরোপার অন্যতম প্রধান দাবিদার হিসেবে। এখন যদি তারা এক মাসের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর শেষ হাসি হাসতে পারে, তাহলে স্পেনই হবে টানা দুইটি ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপ জয়ী প্রথম দল।

সভ্যতার আদল গড়া নিউরনগুলো

স্নায়ুবিজ্ঞানী বিলয়ানুর রামাচন্দ্রন কথা বলেছেন মিরর নিউরনের আকর্ষণীয় কার্যাবলী নিয়ে। খুব সাম্প্রতি আবিস্কৃত হয়েছে যে, এই নিউরণগুলোর মাধ্যমে আমরা কিভাবে জটিল সামাজিক আচরণবিধিগুলো দ্রুত শিখে ফেলি। যেগুলোর কিছু কিছু আমাদের চেনাজানা মনুষ্য সভ্যতারই ভিত্তি গড়ে দিয়েছে।

আমি আজ আপনাদের সামনে কথা বলতে চাই মনুষ্য মস্তিস্ক নিয়ে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এই বিষয়টা নিয়েই গবেষণা করি। এক মুহূর্তের জন্য এই সমস্যাটা নিয়ে একটু ভাবুন। এই হল একটা মাংস পিণ্ড। মোটামুটি তিন পাউন্ড ওজনের, যেটা আপনি আপনার হাতের তালুর মধ্যেই ধরতে পারেন। কিন্তু এটা এই আর্ন্তনক্ষত্রিক জগতের বিশালত্বকেও ধারণ করতে পারে। এটা অসীমের অর্থকে ধারণ করতে পারে। আপনি আপনার নিজের অস্তিত্বের অর্থ নিয়েও প্রশ্ন করতে পারেন। প্রশ্ন করতে পারেন ঈশ্বরের প্রকৃতি নিয়েও।

আর এটা সত্যিই এই দুনিয়ার সবচেয়ে বিস্ময়কর জিনিস। এটা্ই মনুষ্য প্রজাতির কাছে একটা বিশাল রহস্য। কিভাবে এ-সব কিছু এল? তো, এই মস্তিস্কটা, যেমনটা আপনি জানেন, তৈরি হয়েছে নিউরন দিয়ে। আমরা এখানে নিউরনগুলোকে দেখছি। পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের মস্তিস্কে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরন থাকে। আর মস্তিস্কের মধ্যে এই প্রতিটি নিউরন প্রায় ১০০০ বা ১০,০০০ অন্যান্য নিউরনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এটা মাথায় রেখে, মানুষ হিসেব করেছে যে, এই পরিমাণ মস্তিস্ক কার্যকলাপের permutation ও combination -এর অঙ্কটা মহাবিশ্বের সব মৌলিক কনিকার সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যায়।

তো, আপনি কিভাবে এই মস্তিস্ক নিয়ে জানাবোঝাটা শুরু করবেন? একটা পদ্ধতি হলো, সেইসব রোগীদের নিয়ে পরীক্ষা করা যাদের মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশে ক্ষত আছে, এবং এটার উপর নির্ভর করে তাদের আচরণের পরিবর্তন পর্যালোচনা করা। এটা নিয়েই আমি TED এ গতবার কথা বলেছি। আজ আমি একটা ভিন্ন ধরণ নিয়ে কথা বলব। যেটা হলো: মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশে ইলেকট্রোড লাগানো। যেন সত্যি সত্যিই মস্তিস্কের একেকটা স্বতন্ত্র স্নায়ুকোষের কার্যকলাপ রেকর্ড করা যায়।

এখন, খুব সমপ্রতি একটা আবিস্কার সাধিত হয়েছে ইতালির পারমায়। জিয়াকোমো রিজোলাত্তি ও তাঁর সহকর্মী গবেষক দলের দ্বারা। সেটি হলো, এক ধরণের গুচ্ছ নিউরণের উপস্থিতি। যাদেরকে বলা হয় মিরর নিউরন। যেগুলো থাকে মস্তিস্কের সামনে, ফ্রন্টাল লোবসে। এখন, এই আবিস্কারটা এতদিন ধরে জানা একটা ধারণাকে উল্টে দেয় যে, মস্তিস্কের সামনে থাকা নিউরনগুলো সাধারণ মোটর কমান্ড নিউরন। এটাই আমরা জানি বিগত ৫০ বছর ধরে। এই নিউরনগুলো সক্রিয় হবে, যখন কোন ব্যক্তি কোন নির্দিষ্ট একটা কাজ করতে যাবেন। উদাহরণ হিসেবে, যদি আমি এটা করতে যাই, একটা আপেলের কাছে পৌঁছাতে চাই ও সেটা ধরতে চাই, তাহলে আমার মস্তিস্কের সামনে থাকা একটা মোটর কমান্ড নিউরন সক্রিয় হবে ও আমাকে নির্দেশ দিবে সেই বস্তুটা ধরে ফেলতে। এইগুলো হলো মোটর কমান্ড নিউরন। এটাই আমরা জানি একটা লম্বা সময় ধরে।

কিন্তু রিজোলাত্তি যা পেয়েছেন, তা হলো এই নিউরনগুলোরই একটা সাবসেট। সম্ভবত এগুলোর ২০ শতাংশ মতো। এই নিউরনগুলো সক্রিয় হবে, যখন আমি অন্য কাউকেও ঐ একই কাজ করতে দেখব। তো, এগুলো সেই নিউরন, যেটা সক্রিয় হবে যখন আমি নিজে কোন কাজ করতে যাব এবং তখনও, যখন আমি জো-কে কোন একটা বস্তুর কাছে পৌঁছাতে ও ধরতে দেখব। আর এটা সত্যিই তাক লাগানোর মতো। কারণ ব্যাপারটা এরকম যে, এই নিউরনগুলো অন্য মানুষদের দৃষ্টিভঙ্গিটাও গ্রহণ করছে। এই নিউরনগুলো মস্তিস্কের মধ্যে অন্য মানুষদের কার্যকলাপের একটা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি স্টিমুলেশন তৈরি করে।

এখন, এই মিরর নিউরনগুলোর গুরুত্বটা কোথায়? একটা হলো, এগুলো নিশ্চিতভাবেই কোন ব্যক্তিকে অনুকরণ ও তার সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা করা জাতীয় জিনিসের সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ একটা জটিল কাজ অনুকরণ করতে হলে আমার মস্তিস্ককে অন্য মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে পারতে হবে। তো, এটা অনুকরণ করা ও কারও সমকক্ষ হতে পারার জন্য জরুরি। আচ্ছা, এটা গুরুত্বপূর্ণ কেন? এবার আমরা নজর দেই পরবর্তী স্লাইডে। তো, আপনি কিভাবে এই অনুকরণ করেন? কেনই বা এটা গুরুত্বপূর্ণ? মিরর নিউরন আর অনুকরণ, কারও সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা?

এখন আমরা একটু নজর দেই সংস্কৃতির দিকে। মনুষ্য সংস্কৃতি প্রত্যয়টার দিকে। আপনি যদি প্রায় ৭৫ হাজার থেকে একশ হাজার বছর পিছিয়ে গিয়ে মানুষের বিবর্তনটা দেখেন, তো দেখবেন, প্রায় ৭৫ হাজার বছরের কাছাকাছি সময়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটেছিল। আর সেটা হলো একটা তড়িত্ উত্থান ও দ্রুতই খুব দক্ষতাপূর্ণ কর্মকাণ্ড, যেগুলো মানুষেরই বিশেষত্ব, যেমন হাতিয়ার, আগুন, বাসস্থানের ব্যবহার এবং অবশ্যই ভাষার ব্যবহার। এবং অন্য কোন মানুষের চিন্তা অনুমান করতে পারার ও সেই মানুষের আচরণ অনুধাবন করতে পারার ক্ষমতা। এই সবকিছুই হয়েছিল তুলনামূলক দ্রুততার সঙ্গে।

যদিও মনুষ্য মস্তিস্ক তার বর্তমান আকারটা পেয়েছিল প্রায় তিন বা চারশ হাজার বছর আগে। কিন্তু একশ হাজার বছর আগে এই সবকিছু ঘটেছিল খুবই খুবই দ্রুত। আর আমার দাবি হলো, এ সবকিছুর মূলে ছিল একটা সুক্ষ মিরর নিউরন ব্যবস্থার উদ্ভব। যেটা আপনাকে অন্য মানুষদের কাজের অনুকরণ ও তার সমকক্ষ হতে সামর্থ্য যোগায়। তো, তার ফলে যখন কোন গোষ্ঠীর একজন সদস্য একটা আকস্মিক আবিস্কার করে ফেলে, ধরেন, আগুনের ব্যবহার বা নির্দিষ্ট কোন হাতিয়ারের ব্যবহার আবিস্কার করে ফেলে, তখন পরবর্তীতে তা বিস্মৃত হয়ে যাওয়ার বদলে এটা দ্রুতই সমগ্র জনমানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত হয়।

তো, এর ফলে বিবর্তনটা হঠাত্-ই ডারউইনিয়ান বিবর্তন না হয়ে, হয়ে পড়ে লামারকিয়ান বিবর্তন। ডারউইনিয়ান বিবর্তন খুব ধীরগতির, এটা নেয় কয়েকশ হাজার বছর। একটা পোলার বিয়ার থেকে কোট বানাতে এটা নেয় কয়েক হাজার প্রজন্ম। হয়ত একশ হাজার বছর। কিন্তু একটা মানুষ, একটা বাচ্চা, শুধু তার মা-বাবাকে একটা পোলার বিয়ার মেরে ফেলে সেটার চামড়াটা গায়ে জড়াতে দেখে। আর একধাপেই সেটা শিখে ফেলে। একটা পোলার বিয়ার যা শিখতে একশ হাজার বছর সময় নেয়, সেটা একটা মানুষের বাচ্চা ৫ মিনিটেই শিখতে পারে। বা ১০ মিনিটে। আর যখন এটা শেখা হয়ে গেল, তখন তা বাকি জনসমষ্টির মধ্যে ছড়িয়ে যায় গানিতিক হারে।

এটাই হলো ভিত্তি। জটিল কাজগুলোর অনুকরণ করতে পারাই হলো, যেটাকে আমরা বলি সংস্কৃতি আর এটাই সভ্যতার ভিত্তি। এখন, মস্তিস্কে আরেক ধরণের মিরর নিউরণ আছে, যেগুলো কিছুটা ভিন্ন ধরণের কাজে সম্পৃক্ত থাকে। কোন কাজের জন্য যেমন মিরর নিউরন থাকে। তেমনি কিছু মিরর নিউরন আছে স্পর্শ অনুভবের ক্ষেত্রে। অন্যভাবে বলা যায়, যদি কেউ আমাকে স্পর্শ করে, আমার হাত স্পর্শ করে, তাহলে মস্তিস্কের, সেনসোরি অঞ্চলের স্টোমাটোসেন্সরি কোরটেক্স-এর নিউরন সক্রিয় হবে। কিন্তু, এই একই নিউরন, কিছু ক্ষেত্রে সক্রিয় হয়ে উঠবে, যখন আমি অন্য কোন মানুষকেও স্পর্শ পেতে দেখবে। তো, এটা অন্য মানুষের স্পর্শ পাওয়ার অনুভূতির সঙ্গেও একাত্ম বোধ করছে।

তো, এই নিউরনগুলো বেশিরভাগই সক্রিয় হবে, যখন আমি শরীরের বিভিন্ন অংশে স্পর্শানুভূতি লাভ করব। ভিন্ন ভিন্ন অংশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিউরন সক্রিয় হবে। কিন্তু এগুলোর একটা সাবসেটও সক্রিয় হবে, যদি আমি শুধু অন্য কাউকে শরীরের সেই একই অংশে স্পর্শ পেতে দেখি। তো, এখানে আবার আমরা কিছু নিউরন পাচ্ছি, যেগুলো অন্য কারো স্পর্শানুভূতির সঙ্গে একাত্মতা জানাচ্ছে। এখন, তাহলে প্রশ্নটা ওঠে যে: যদি আমি শুধু অন্য একজন ব্যক্তিকে স্পর্শ পেতে দেখি, তাহলে আমি কেন কনফিউসজড হয়ে যাই না, আর কেন শুধু অন্য ব্যক্তির স্পর্শানুভূতি দেখে আমি আক্ষরিকভাবেই সেই স্পর্শ অনুভব করি না? আমি বলতে চাচ্ছি যে, আমি ঐ ব্যক্তির আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলাম, কিন্তু আমি তো সত্যি সত্যিই সেই স্পর্শটা অনুভব করলাম না। এর কারণ হচ্ছে, আপনার ত্বকে কিছু রিসেপটর আছে। স্পর্শ ও ব্যাথা অনুভবের রিসেপটর। এগুলো আপনার মস্তিস্কে ফিরে যায়, আর গিয়ে বলে, “চিন্তা করো না, তোমাকে স্পর্শ করা হয় নি।” তো, অন্য ব্যক্তির আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের মাধ্যমে আপনি সত্যি সত্যিই স্পর্শ অনুভব করেন না। এছাড়া হয়তো আপনি বিভ্রান্ত হয়ে পড়তেন ও তালগোল পাকিয়ে ফেলতেন।

আচ্ছা। তো, এই রিসেপটরগুলোর ফিরতি সাড়া, মিরর নিউরনের সিগন্যালগুলোকে বাতিল করে দেয়। ফলে আপনি সচেতনভাবে সেই স্পর্শ অনুভব করেন না। কিন্তু যদি আপনি আপনার একটা হাত সড়িয়ে ফেলেন, আপনি হাতটাকে অবশ করে ফেলেন, আপনি আমার হাতে একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে ব্রাচিয়াল প্লেক্সাস অবশ করে ফেললেন, এখন আমার হাত একেবারে সাড়হীন। এর মধ্য দিয়ে আর কোন অনুভূতি প্রবাহিত হচ্ছে না। এখন যদি আমি আপনাকে স্পর্শ পেতে দেখি, তাহলে আমি সত্যি সত্যিই আমার হাতে সেই স্পর্শ অনুভব করতে পারব। অন্যভাবে বললে, আপনি আপনার ও অন্য মানুষদের মধ্যে বিদ্যমান ব্যারিয়ার সড়িয়ে দিয়েছেন। তো, আমি এদেরকে ডাকি গান্ধি নিউরন বলে। বা একাত্মতার নিউরন (হাসি)

আর এটা কোন বিমূর্ত রূপক অর্থে না। আপনাকে, তার কাছ থেকে অন্য মানুষদের কাছ থেকে দূরে সড়িয়ে রেখেছে আপনার ত্বক। ত্বকটা সড়িয়ে ফেলুন, আপনি আপনার মাথায় অন্য মানুষদের স্পর্শানুভূতিও অনুভব করতে পারবেন। আপনি আপনার ও অন্য মানুষদের মধ্যে বিদ্যমান ব্যারিয়ার সড়িয়ে ফেলতে পারবেন। আর এটাই, বেশিরভাগ প্রাচ্য দর্শনের ভিত্তি, যে, অন্য মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সত্যিকারের কোন স্বাধীন-স্বতন্ত্র মনুষ্য সত্তা নেই। আপনারা, বস্তুত শুধু ফেসবুক বা ইন্টারনেট দিয়েই যে সংযুক্ত আছেন, তা-ই নয়। বরং আপনারা সত্যিকার অর্থে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত আছেন আপনাদের নিউরন দিয়ে। আর এই মুহূর্তে এই ঘরে এই নিউরনগুলোর একটা বন্ধন আছে। তারা কথা বলছে পরস্পরের সঙ্গে। আর সত্যিই আপনার সচেতনতা ও অন্য কারও সচেতনতার মধ্যে কোন ভিন্নতা নেই।

আর এটা কোন আউল-ফাউল দর্শন না। এটা গড়ে উঠেছে আমাদের স্নায়ুবিজ্ঞানের গোড়ার দিককার বোঝাপড়া থেকে। তো, আপনার কাছে অলীক হাতওয়ালা কোন ব্যক্তি আছে। যদি হাতটা সড়িয়ে দেওয়া হয় আর আপনার কাছে ঐ অলীক হাতটা আসে, তখন যদি আপনি অন্য কাউকে স্পর্শ পেতে দেখেন, তাহলে আপনি আপনার ঐ অদৃশ্য হাতে সেই স্পর্শ অনুভব করবেন। আরও মজার জিনিস হলো, যদি আপনি আপনার ঐ অলীক হাতটাতে ব্যাথা অনুভব করেন, তাহলে আপনি অন্য কোন ব্যক্তির হাত মালিশ করে দিতে দেখলেও আপনার ব্যাথার নিরাময় অনুভব করতে পারবেন। একদম যেন, এই নিউরনগুলো আপনাকে ব্যাথার উপশম করে দিচ্ছে শুধুই অন্য কারও হাত মালিশ করতে দেখে।

তো, এবার আমার শেষ স্লাইড। দীর্ঘদিন যাবত মানুষ বিজ্ঞান ও মানবিক— এই দুইটাকে জ্ঞানচর্চার দুইটা পৃথক শাখা হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে। সি.পি.স্নো বলেছেন দুইটা ভিন্ন সংস্কৃতির কথা। একদিকে বিজ্ঞান, অন্যদিকে মানবিক। কখনোই এই দুইয়ের মিলন হয়নি। মিরর নিউরন ব্যবস্থার কার্যকলাপের উপর দৃষ্টিপাত করে আমি বলতে চেয়েছি, এটা আপনাকে সুযোগ করে দেয় সচেতনতা, আত্মসত্তার উপস্থাপন, কী আপনাকে অন্য মানুষদের থেকে পৃথক করে রাখে, কিভাবে আপনি অন্য মানুষদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আরেকবার চিন্তা করার। এমনকি সংস্কৃতি ও সভ্যতার উদ্ভব কেমন করে হলো তা নিয়েও। যে বিষয়গুলো খোদ মনুষ্য প্রজাতিরই বিশেষত্ব। ধন্যবাদ। (হাততালি)

কে হচ্ছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী?

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার নতুন সংস্কার বিলটি পাস হওয়ার পরপরই ইতালির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন সিলভিও বেরলুসকোনি। এর মধ্য দিয়ে তাঁর ১৭ বছরব্যাপী ইতালি শাসনের অবসান হলো। ঋণসংকট থেকে মুক্তি পেতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আহ্বানে দেশটির পার্লামেন্টের এই অর্থনৈতিক সংস্কার বিলটি উত্থাপন করা হয়। এখন অর্থনৈতিক সংকটপূর্ণ ইতালির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হতে যাচ্ছেন, তাই নিয়েই চলছে জল্পনা-কল্পনা। বেরলুসকোনির দীর্ঘদিনের শাসনের পর এখন সেখানে একটি নতুন অনির্বাচিত অন্তবর্তী সরকার গঠন করা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকৈরা। ইতালির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সম্ভাব্য কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছে বিবিসি।

 মারিও মন্টিইতালির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খুবই শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে মারিও মন্টিকে। জার্মানির শক্তিশালী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লড়াই এবং জেনারেল ইলেকট্রিক ও হানিওয়েলের একীভূতকরণ ঠেকানোর মধ্য দিয়ে ‘সুপার মারিও’ নাম অর্জন করেন মারিও মন্টি। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ বাজার ও সেবার কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ৬৮ বছর বয়সী মন্টি। লোম্বার্ডির সাবেক এই অর্থনীতির অধ্যাপককে সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক বাজারের ভবিষ্যত্-বিষয়ক একটি প্রতিবেদন লেখার জন্যও নিযুক্ত করেছে ব্রাসেলস। ইতালির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের স্পিকার জিয়ানফ্রাংকো ফিনি, মারিও মন্টি সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাঁর অনেক অভিজ্ঞতা আছে। পুরো ইউরোপে তাঁকে খুবই শ্রদ্ধেয় ইতালীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়।’

জিয়ান্নি লেত্তা

ইতালির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় বেশ জোড়ালোভাবে এসেছে জিয়ান্নি লেত্তার নাম। জিয়ান্নি লেত্তাকে অনেকেই ডাকেন বেরলুসকোনির ডানহাত হিসেবে। সাবেক সাংবাদিক ও টেলিভিশনের উপস্থাপক বেরলুসকোনির তিন দফার সরকারেই গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে ছিলেন। ২০০৬ সালে ইতালির রাষ্ট্রপতি পদের জন্যও নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন জিয়ান্নি। কিন্তু সফলতার মুখ দেখেননি।

অ্যাঞ্জেলিনো আলফানো

এ বছরের জুলাইয়ে খোদ সিলভিও বেরলুসকোনি তাঁর উত্তরাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন অ্যাঞ্জেলিনো আলফানোর নাম। আধুনিক ইতালির ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে কম বয়সে বিচারমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। ডেইলি টেলিগ্রাফ অনুসারে, ৪১ বছর বয়সী আলফানো সবচেয়ে বেশি পরিচিত চরম বিতর্কিত কিছু আইনের নকশা প্রণয়নের জন্য। যেগুলো বেরলুসকোনিকে রক্ষা করেছে অনেক অপরাধ মামলা থেকে। ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি থেকেই বেরলুসকোনির একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে গণ্য হয়েছেন সিসিলির সাবেক আইনজীবী আলফানো। তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে বয়সটাই প্রধান বাধা হিসেবে থাকতে পারে বেরলুসকোনির আশীর্বাদপ্রাপ্ত আলফানোর সামনে।

রেনাতো শিফানি

আলফানোর মতো রেনাতো শিফানিও বেরলুসকোনির রাজনৈতিক দলের দীর্ঘদিনের অনুসারী। ইতালির সিনেটের এই স্পিকারও এসেছেন সিসিলি থেকে। বর্তমান পদ অনুসারে ইতালির বর্তমান প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হলে এই দায়িত্ব বর্তাবে শিফানির কাঁধে। ৬১ বছর বয়সী শিফানিকে অনেকেই রাজনৈতিক বিচক্ষণতার দিক থেকে আলফানোর চেয়ে এগিয়ে রেখেছেন। তবে এই মুহূর্তে বেরলুসকোনির বেশি ঘনিষ্ঠ হওয়াটাকেই শিফানির রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন অনেকে।

লুট হচ্ছে লিবিয়ার প্রত্নসম্পদ

গাদ্দাফীর মৃত্যুর পর এখন বিজয়োল্লাসে মেতে আছে লিবিয়ার বিদ্রোহীরা। প্রতিশোধস্পৃহায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে গাদ্দাফীর দুর্গ-বাসভবন। কিন্তু এসবের ডামাডোলে খুবই দুঃখজনক কিছু ঘটনাও ঘটে চলেছে নবজাগড়নের লিবিয়ায়। বেনগাজির ন্যাশনাল কমার্শিয়াল ব্যাংকে রক্ষিত অমূল্য সব প্রত্নসম্পদ লুট করে নিচ্ছে সুযোগসন্ধানী লুটেরা গোষ্ঠী। বিপুল পরিমাণ সোনা ও রুপার কয়েন হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাকে বিশেষজ্ঞরা দেখছেন ‘প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাসের অন্যতম বড় চুরি’ হিসেবে। ‘বেনগাজির সম্পদ’ নামে পরিচিত এই ধনসম্পদের মধ্যে আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেটের আমলের সোনা-রুপার মুদ্রাও আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বেনগাজির ন্যাশনাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের কনক্রিটের ছাদ ভেঙ্গে এই দুর্মূল্য প্রত্নসম্পদ লুট করছে লুটেরারা। সোনা-রুপার মুদ্রার বাইরেও এখানে অনেক ভাস্কর্য, ব্রোঞ্জের মূর্তি, অলঙ্কারাদি, হাতির দাঁত চোরদের হস্তগত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এটাকে লিবিয়ার সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের একটা অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে দেখছেন ইতালির প্রত্নতত্ত্ববিদ সেরেনেলা ইসোলি। তিনি বলেছেন, ‘এই প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদগুলো এখনও ভালোমতো পর্যবেক্ষণ করা যায়নি। এগুলোর চুরি যাওয়াটা লিবিয়ার সংস্কৃতির জন্য একটা বিশাল ক্ষতি।’

১৯১৭ থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে আর্টেমিসের মন্দির থেকে এই প্রত্নসম্পদগুলো সংগ্রহ করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রোমের ইতালিয়ান আফ্রিকা জাদুঘরে প্রদর্শিত হয় এই ‘বেনগাজি সম্পদ’।  এরপর১৯৬১ সালে আবার লিবিয়ার মাটিতে ফিরিয়ে আনা হয় এই অমূল্য প্রত্নসম্পদগুলো। তারপর থেকে এগুলো বেনগাজির ন্যাশনাল কমার্শিয়াল ব্যাংকে সংরক্ষিত ছিল।— ডেইলি মেইল

গাদ্দাফীর ‘অষ্টম আশ্চর্য’

দীর্ঘ ৪২ বছরের শাসনামলে অনেক নিন্দা-সমালোচনা কুড়িয়ে কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফী। আরব বসন্তের নবজাগড়নে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর লিবিয়ায় পতন হয়েছে গাদ্দাফী সরকারের। কয়েকদিন আগে বিদ্রোহীদের হাতে নির্মমভাবে হত্যার পর গতকাল সাহারা মরুভূমির কোন এক অজ্ঞাত স্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন এই স্বৈরশাসক। তবে বরাবরই কঠোর শাসরে জন্য পশ্চিমা বিশ্ব ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বদনাম কুড়ালেও লিবিয়ার এইড মরুপ্রান্তরেই অনন্য এক কীর্তি গড়ে গেছেন লৌহমানব গাদ্দাফী। দেশবাসীদের বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সমগ্র লিবিয়াজুড়ে তিনি যে ভূগর্ভস্থ পাইপ নেটওয়ার্ক নির্মান করেছিলেন তা পরিচিতি পেয়েছে ‘বিশাল মনুষ্যনির্মিত নদী’ নামে। বিশ্বের বৃহত্তম এই সেচ প্রকল্পটিকে খোদ গাদ্দাফী বলতেন ‘পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য।’

সির্তে, ত্রিপোলি, বেনগাজিসহ লিবিয়ার অন্যান্য মেরু অঞ্চলে খাবার পানি সরবরাহ ও সেচকার্যের জন্য পুরো দেশটি জুড়ে ২৮৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভূগর্ভস্থ পাইপ নেটওয়ার্ক নির্মিত হয়েছে এই প্রকল্পটিতে। ইতিহাসে এযাবত্কালের সবচেয়ে বড় এই পাইপ নেটওয়ার্কটিতে আছে ১৩০০-রও বেশি কুয়া। যেগুলোর বেশিরভাগই ৫০০ মিটারেরও বেশি গভীর। এখনও লিবিয়াতে প্রতিদিন ৬৫ হাজার ঘনমিটার বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দিচ্ছে গাদ্দাফীর এই ‘অষ্টমাশ্চার্য।’

১৯৫৩ সালে লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে তেল অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিশালায়তনের এক ভূগর্ভস্থ জলাধারের খোঁজ পাওয়া যায়। ১৯৬০ সালের শেষে ৪০ হাজার বছর পুরোনো এই জলাধার থেকে ‘বিশাল মনুষ্যনির্মিত নদী প্রকল্প’ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়। তবে বাস্তবে কাজ শুরু হতে হতে অতিক্রান্ত হয় আরও ২৪ বছর। ১৯৮৩ সালে লিবিয়ার কনগ্রেসে এই প্রকল্প প্রস্তাবটি পাস হয়। এক বছর পরে সারির এলাকায় নির্মানকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গাদ্দাফি। কোন প্রকার বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান ছাড়াই, পুরোপুরি গাদ্দাফি সরকারের অর্থায়নে বিশাল এই কর্মযজ্ঞের নকশা প্রণয়ন করে আমেরিকান প্রকৌশলী কোম্পানি ব্রাউন এন্ড রুট ও প্রাইস ব্রাদার্স। বিশালাকৃতির কনক্রিট পাইপগুলো নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান রপ্তানি করা হয় ইতালি, স্পেন, জার্মানি, জাপানসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ থেকে। পুরো প্রকল্পটি সফলভাবে শেষ করার জন্য খরচ হয়েছিল ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ। ১৯৯০ সাল থেকে এই প্রকল্পে নিযুক্ত প্রকৌশলীদের কারিগরী প্রশিক্ষণ দিয়েছে ইউনেসকো।

এ বছর গাদ্দাফী সরকারের পতনকামী বিদ্রোহী জনতার সমর্থনে এগিয়ে আসা ন্যাটোর বোমা হামলায় এই মনুষ্যনির্মিত নদীর কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলস্বরুপ বিশুদ্ধ খাবার পানির সরবরাহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে অনেক লিবিয়বাসী।— উইকিপিডিয়া অবলম্বনে

গাদ্দাফি-অধ্যায়ের অবসান

১৯৬৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রায় ৪২ বছর ধরে তেলসমৃদ্ধ দেশ লিবিয়া শাসন করেছেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহ দানা বাঁধতে শুরু করার পর প্রতিটি ঘর খুঁজে খুঁজে বিদ্রোহীদের দমন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন এই স্বৈরশাসক। কিন্তু এই হুমকিতে দমে না গিয়ে গাদ্দাফি সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক প্রতিরোধ শুরু করে বিদ্রোহীরা। টানা সাত মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংঘর্ষের পর পতন ঘটে গাদ্দাফি সরকারের। লিবিয়া পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ (এনটিসি)। এর পর থেকেই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান গাদ্দাফি। তাঁর জন্মশহর সারতে গাদ্দাফি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার তিনি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে এনটিসি।

১৯৪২ সালে সারতের উপকূলীয় অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন গাদ্দাফি। বেনগাজি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হলেও পরে সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য পড়াশোনায় ইতি টানেন তিনি। ১৯৬৯ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে রক্তপাতহীন এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতা দখল করেন। ইসলামী মূল্যবোধ ও সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতার মিশেলে তিনি গড়ে তোলেন তাঁর রাজনৈতিক দর্শন। তিনি তাঁর নতুন প্রণীত এই রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের বিকল্প হিসেবেই বর্ণনা করেছিলেন। তাঁর প্রস্তাবিত ‘ইউনাইটেড স্টেটস অব আফ্রিকা’র ধারণাটা বাস্তবে রূপ না পেলেও ২০০২ সালে আফ্রিকান ইউনিয়ন গঠনে বেশ ভালোই প্রভাব রেখেছিল। ২০০৯-২০১০ সাল পর্যন্ত এই ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন গাদ্দাফি।

নিজ দেশে ভিন্নমতাবলম্বীদের কঠোর হস্তে দমনের জন্য কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন এই সামরিক স্বৈরশাসক। তাঁর শাসনামলে হাজার হাজার লোককে মৃত্যুদণ্ড ও কারাগারে পাঠানো হয় বলে অভিযোগ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর।

পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বরাবরই বৈরীভাবাপন্ন ছিলেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি। কলম্বিয়ার ফার্ক বা আয়ারল্যান্ডের আইআরএর মতো ‘সন্ত্রাসী’ চিহ্নিত অনেক সংগঠনকে সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ১৯৮৬ সালে বার্লিনের একটি নাইট ক্লাবে বোমা হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ত্রিপোলি ও বেনগাজিতে বোমা হামলা চালালে ৩৫ লিবীয় নাগরিক নিহত হয়। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রিগান গাদ্দাফিকে অভিহিত করেছিলেন ‘পাগলা কুকুর’ হিসেবে। ১৯৮৮ সালে লকারবিতে একটি বিমানে বোমা হামলার জন্য দায়ী করা হয় গাদ্দাফিকে। অনেক বছর ধরে তা অস্বীকার করলেও ২০০৩ সালে এই হামলার দায়দায়িত্ব স্বীকার করে গাদ্দাফি সরকার।

২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তৃতা করতে গিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে আল-কায়েদার মতোই সন্ত্রাসী সংগঠন বলে উল্লেখ করেন গাদ্দাফি। সেই সঙ্গে আফ্রিকার ঔপনিবেশিক শাসকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবেও দাবি করেন তিনি। ২০১০ সালে ইতালি সফরে গিয়ে হাজার হাজার তরুণীকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পরামর্শ দিয়েও তিনি বেশ আলোচিত হয়েছিলেন। চলতি বছরে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর তিনি এটাকে আল-কায়েদা ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেন। বিদ্রোহীরা ত্রিপোলি দখল করার আগে তাঁর শেষ ভাষণে তিনি এই বিদ্রোহকে লিবিয়া ধ্বংসের জন্য আল-কায়েদা ও পশ্চিমা বিশ্বের যৌথ কারসাজি বলে উল্লেখ করেছিলেন। আল-জাজিরা।