Posts Tagged ‘ আয়ারল্যান্ড ’

ইউরো কাপের আদিকথা ও চিনপরিচয়

১৯৬০ সালে প্রথম উয়েফা ইউরোপিয়ান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপটা যখন বাস্তবে মাঠে গড়িয়েছিল, তখন আসলে পূরণ হয়েছিল হেনরি ডুলানির আজন্ম লালিত একটা স্বপ্ন। দীর্ঘদিন ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের অগ্রণী ব্যক্তি হিসেবে কাজ করা ডুলানিই ১৯২৭ সালে প্রথমবারের মতো প্রস্তাব করেছিলেন ইউরোপভিত্তিক জাতীয় এই ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজনের। এরপর দীর্ঘদিন বর্তমানের এই ইউরো কাপটার বাস্তব রুপ দেওয়ার জন্য কাজ করে গেলেও সফল হননি তিনি। ১৯৫৫ সালে চিরনিদ্রায় শায়িত হন এসময়ের অন্যতম শীর্ষ এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার স্বপ্নদ্রষ্টা। তাঁর মৃত্যুর তিন বছর পরে, ১৯৫৮ সালে সিদ্ধান্ত হয় সেসময়ের উয়েফা ইউরোপিয়ান ন্যাশনস কাপ। ডুলানির স্মরণে ১৯৬০ সালে প্রথমবারের আসরটি আয়োজন করা হয়েছিল ফ্রান্সে। শিরোপাজয়ী দলকে যে শিরোপাটা তুলে দেওয়া হয় তাতেও ছিল ডুমিনির নাম। প্রথম আসরে এক উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালে যুগোস্লোভিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের শিরোপাটা জিতেছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন।
তৃতীয় আসর (১৯৬৮) থেকে প্রতিযোগিতাটির নাম দেওয়া হয় উয়েফা ইউরোপিয়ান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। আর গত আসর থেকে সংক্ষেপে সালভিত্তিক নামকরণের প্রচলন হয়। ইউরো ২০০৮ এর মতো এবারের আসরকেও ডাকা হচ্ছে ইউরো ২০১২। আর মাত্র ১৬ দিন পর থেকে পোল্যান্ড ও ইউক্রেনের মাটিতে শুরু হতে যাচ্ছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় এই জাতীয় ফুটবলের প্রতিযোগিতা। স্বাগতিক দুই দেশ ছাড়াও এবারের আসরে অংশ নিতে যাচ্ছে ক্রোয়েশিয়া, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, গ্রীস, ইতালি, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া সুইডেন ও গতবারের শিরোপাজয়ী স্পেন। চারটি করে গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রথমে গ্রুপ পর্বে অংশ নেবে মোট ১৬টি দেশ। গ্রুপের প্রতিটি দলের মুখোমুখি লড়াইয়ের পর গ্রুপ তালিকার শীর্ষ দুইটি করে দল অংশ নেবে কোয়ার্টার ফাইনালে। এরপর সেমিফাইনাল এবং চূড়ান্ত ও অন্তিম লড়াই, ফাইনাল। এখানেই নির্ধারিত হবে যে, কোন দেশ পাবে আগামী চার বছরের জন্য ইউরোপসেরার খেতাব।
বিগত ১৩টি আসরের ইউরো কাপ শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছে মোট নয়টি দেশ। সবচেয়ে বেশি, তিনবার শিরোপা জিতেছে জার্মানি। ফ্রান্স ও স্পেন শিরোপার দেখা পেয়েছে দুইবার করে। আর একবার করে জিতেছে ইতালি, চেকোস্লোভিয়া, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক, গ্রীস ও তৎকালিন সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিন্তু সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখন পর্যন্ত টানা দুইটি শিরোপা জিততে পারেনি কোন দেশই। এ থেকে এই প্রতিযোগিতার চরম প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ পরিস্থিতি সম্পর্কেও বেশ ভালোই অনুমান করা যায়। তবে এইবার সেই নতুন ইতিহাস গড়ার সুযোগ আছে স্পেনের সামনে। ২০০৮ সালে গত আসরের শিরোপা জিতেছিল বর্তমানে ফুটবলের এই এক নম্বর দলটি। দুই বছর পর বিশ্বকাপ জিতে বিশ্ব ফুটবলেও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন ক্যাসিয়াস-জাভি-ইনিয়েস্তারা। আর এবারের ইউরো কাপেও তারা নিশ্চিতভাবেই বিবেচিত হবে শিরোপার অন্যতম প্রধান দাবিদার হিসেবে। এখন যদি তারা এক মাসের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর শেষ হাসি হাসতে পারে, তাহলে স্পেনই হবে টানা দুইটি ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপ জয়ী প্রথম দল।

ফিরে আসুক ব্রিস্টলের স্মৃতি

বাঁচা-মরার লড়াইয়ে আজ চট্টগ্রামের জহুরুল হক স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গত ম্যাচের ভয়াবহ লজ্জার দুঃসহ স্মৃতি মুছে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়েই নিশ্চয়ই মাঠে নামবেন সাকিব-তামিমরা। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষও সেই প্রত্যাশা নিয়েই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অ্যাশেজ সাফল্যের পর এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিটের তকমা আাঁাটা ইংল্যান্ড এখনও পর্যন্ত খুব বেশি সুবিধা করে উঠতে পারে নি। ভারতের সঙ্গে টাই আর আয়ারল্যান্ডের কাছে হারের পর বেশ টলোমলো অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল স্ট্রাউস বাহিনী। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের অতি গুরুত্বপূর্ণ খেলাটাতে তারা শেষপর্যন্ত হারতে হারতেও পেয়েছে ৬ রানের অবিশ্বাস্য জয়। তার উপর পিটারসেন আর স্টুয়ার্ট ব্রডের ইনজুরিতেও কিছুটা ছন্দপতন হতে পারে ইংল্যান্ড শিবিরে।

চট্টগ্রামের জহুরুল হক স্টেডিয়ামে এই বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচটা প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফ্লাডলাইটের আলোয়। দিবা-রাত্রির এই গুরুত্বপূর্ণ লড়াইটার ক্ষেত্রে টসে জিতে ব্যাট করতে পারাটা একটা বাড়তি সুবিধা আনতে পারে বলে ধারণা করছেন ক্রিকেট বোদ্ধারা। গতকাল দুপুরে অনুশীলনের সময় বেশ কিছুক্ষণ ধরে চট্টগ্রামের হালকা বাদামী এই উইকেটটা পর্যবেক্ষণ করেছেন ইংলিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি স্ট্রাউস, বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ, গ্রান্ড ফ্লাওয়াররা। স্পিনাররা এই পিচে নিশ্চিতভাবেই একটা বড় ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করছেন অনেকে। সেক্ষেত্রে পিটারসেনের অফ স্পিনের অভাবটা কিছুটা টের পেতে পারেন স্ট্রাউস। আজ জিততে পারলেই কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিটটা অনেকখানিই নিশ্চিত করে ফেলতে পারবে ইংলিশরা।

অন্যদিকে বাংলাদেশের লড়াইটা প্রত্যাবর্তনের। ভয়াবহ দুঃসময়ের ঘোর কাটিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর। আজ নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের প্রধান প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে গত বছর ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ রানের সেই অসাধারণ জয়। সেই ম্যাচের জয়ের নায়ক মাশরাফি-বিন-মোর্তজাকে অবশ্য আজ মাঠে পাওয়া যাবে না। তবে এবারের ম্যাচটা কিন্তু হতে যাচ্ছে নিজেদের মাঠে। সাকিবরা পাশে পাবে বাংলাদেশের হাজার হাজার দর্শককে। এটাও নিশ্চয়ই বাড়তি শক্তি জোগাবে বাংলাদেশ শিবিরে।

আব্দুর রাজ্জাক, সাকিব আল হাসানের স্পিন আক্রমণ দিয়ে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের অল্প রানেই বেঁধে ফেলার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। কিন্তু টাইগারদের প্রধান দুশ্চিন্তার জায়গা নড়বড়ে ব্যাটিং অর্ডার। প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ২৮৩ রানের বড় স্কোর গড়ে আশা জাগালেও পরের দুইটা ম্যাচে শুধু ভয়াবহ হতাশাই উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। কোচ জিমি সিডন্সও গতকাল অনুশীলনে আলাদাভাবে সময় দিয়েছেন ইমরুল কায়েস, জুনায়েদ সিদ্দিকীদের। আজ মিডলঅর্ডারে আশরাফুলের পরিবর্তে মাঠে নামতে পারেন মাহমুদুল্লাহ। সেক্ষেত্রে বোলার মাহমুদুল্লাহর থেকে ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহর উপরই প্রত্যাশাটা বেশি থাকবে বাংলাদেশ সমর্থকদের।

গত বছর ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডকে হারিয়েই টেস্ট খেলুড়ে সবগুলো দেশকে পরাজয়ের স্বাদ দেওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল টাইগাররা। আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের অসময়ে আবারও সেই ব্রিস্টলের মধুর স্মৃতিটাই ফিরে আসুক— এই আশাতেই প্রহর গুনছে গোটা বাংলাদেশ।

‘সাবধান ভারত, আগামীতে তোমরাই!’

অস্কার মনোনয়নপ্রাপ্ত ভারতীয় চলচ্চিত্র লগনের কথা নিশ্চয় মনে আছে অনেকের। ছবিটির নায়ক আমির খানের নেতৃত্বে ক্রিকেটের মাঠে ব্যাট-বলের লড়াই দিয়ে ব্রিটিশ শাসকদের অত্যাচার-শোষণের প্রতিশোধ নিয়েছিল ভারতের একটি গ্রামের অধিবাসীরা। রুপালি পর্দার মতো নাটকীয়তা না থাকলেও গত বুধবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের জয়টা কিন্তু কম রোমাঞ্চকর ছিল না। ভারতের মতো আয়ারল্যান্ডও দীর্ঘদিন ছিল ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে। রূপকথার মতো জয়টা দিয়ে যেন তারা লগন ছবির মতোই তাদের সাবেক শাসকদের একটু চোখ রাঙিয়ে নিল। বুঝিয়ে দিল, এককালে তোমরা আমাদের অধীন করে রাখলেও, এখন আমরাও পারি তোমাদের দমিয়ে দিতে। পরের সবগুলো ম্যাচ হেরে দেশে ফিরলেও আইরিশ ক্রিকেটাররা যে নায়কোচিত সংবর্ধনা পাবেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, তাঁরা খুব ভালোমতো চপেটাঘাত করতে পেরেছে ইংলিশদের জাত্যাভিমানে। এক আইরিশ সমর্থক বলেছেন, ‘আমরা যদি বিশ্বকাপের বাকি সবগুলো ম্যাচে হেরেও যাই, তাতে কিছুই যায় আসে না। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, আমরা হারাতে পেরেছি ইংলিশদের।’ শুধু এ একটা ম্যাচ দিয়েই আইরিশদের এবারের বিশ্বকাপ মিশন পুরোপুরি সফল বলে মন্তব্য করেছে অনেক সমর্থক। বাকি যা পাওয়া যাবে সেটা উপরি পাওনা। সমর্থকদের প্রত্যাশা অনেকাংশে পূরণ হয়ে গেলেও পোর্টারফিল্ড, ও’ব্রায়েনরা হয়তো তাদের স্বপ্নের গণ্ডি আরও কিছুটা বাড়িয়ে নিয়েছেন ঐতিহাসিক এ জয়ের পর। আর যেভাবে তারা ইংল্যান্ডকে পরাস্ত করেছে, তাতে সেই প্রত্যাশাটা খুব অন্যায্যও বলা যাবে না। বিশ্বকাপে আইরিশদের পরবর্তী প্রতিপক্ষ ভারত। একটা দিক দিয়ে মানসিকভাবে খুব কাছাকাছি আছে ভারতীয় উপমহাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের মানুষেরা। এ দুই অঞ্চলের মানুষই ইংল্যান্ডের অন্যায়-অন্যায্য বঞ্চনার শিকার হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। গত বুধবার বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামেও টের পাওয়া গেছে এ নৈকট্যটা। ও’ব্রায়েনের বাউন্ডারিগুলোর পর আইরিশদের সঙ্গে গলা ফাটিয়ে চিত্কার করতে দেখা গেছে ভারতীয়দেরও। খেলা শেষে এক আইরিশ সমর্থক ভারতীয়দের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘তারা খুবই ভালো, খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ।’ মানসিক দিক দিয়ে নৈকট্য থাকলেও মাঠে কিন্তু কেউই কাউকে ছাড় দেবে না। সেদিন কিন্তু এই চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামেই দুই দিকে থাকবে আয়ারল্যান্ডের ‘গ্রিন আর্মি’ আর ভারতীয় সমর্থকেরা। ইংল্যান্ড বধ করার পর এবার মহেন্দ্র সিং ধোনিদের দিকেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন এক আইরিশ সমর্থক। ‘সাবধান ভারত, পরবর্তীকালে তোমরাই!’ সত্যিই কিন্তু সাবধান হতে হবে ধোনিদের। ক্রিকইনফো।

গিবসের ‘ছয়’ ছক্কা

২০০৭ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছিল বেশ কয়েকটি নতুন দেশ। স্কটল্যান্ড, বারমুডা, আয়ারল্যান্ড। একেবারেই নবাগত এই দলগুলোকে বিশ্বকাপের আসরে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য আইসিসির সমালোচনাও করেছিলেন কেউ কেউ। অনেকেই মত দিয়েছিলেন যে, এতে বিশ্বকাপে মতো একটা বড় আসরের চরিত্র নষ্ট হবে। অনেক ম্যাচই অগুরুত্বপূর্ণ-একতরফা রুপ ধারণ করবে। টুর্নামেন্ট কিছুদিন গড়াতেই সমালোচকরা তাঁদের কথার পিঠে মোক্ষম যুক্তিও পেয়ে গেলেন।

বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচেই স্কটল্যান্ড ২০৩ রানে হেরে গেল অস্ট্রেলিয়ার কাছে। পরের দিনই শ্রীলঙ্কা, বারমুডাকে হারাল আরো বড় ব্যবধানে। ২৪৩ রানে। আর এই ধরণের ম্যাচগুলো দেখার পর পরেরদিন অনেকেই আর আগ্রহ বোধ করেন নি হল্যান্ড-দক্ষিন আফ্রিকা মধ্যকার বিশ্বকাপের সপ্তম ম্যাচটির প্রতি। তবে যারা ‘একতরফা ম্যাচ খুব বিরক্তিকর বা দেখতে ভালো লাগে না’ জাতীয় মন্তব্য করে এই খেলাটা দেখতে বসেন নি, তারা পরে খুব ভালোমতোই টের পেয়েছিলেন যে, সব একতরফা ম্যাচই বিরক্তিকর হয় না। কিছু কিছু সময় একতরফা ম্যাচগুলো থেকেও পাওয়া যায় প্রচণ্ড উত্তেজনার উত্তাপ।

১৬ মার্চ এরকমই একটা ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল হল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচ শুরুর আগেই শুরু হয়েছিল বৃষ্টির উত্পাত। একে তো আগে থেকেই একতরফা ম্যাচ ভেবে অনেকেই খুব বেশি আগ্রহ দেখান নি। তার উপর খেলার শুরুতেই এ ধরণের প্রতিবন্ধকতার ফলে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে রেখেছিলেন ম্যাচটা থেকে। কেউ তখন ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারেন নি যে, বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাস গড়া এক খেলা থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন তারা। সেদিন দক্ষিণ আফ্রিকান ইনিংসের ২৯তম ওভারে রচিত হয়েছিল এক অনন্য রেকর্ড। একদিনের ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো ছয় বলে ছয় ছক্কা মারার বিরল কীর্তি গড়েছিলেন হারশেল গিবস।

বৃষ্টির কারণে খেলার দৈর্ঘ্য কমিয়ে আনা হয়েছেল ৪০ ওভারে। ভেজা উইকেটের ফায়দা তুলতে টসে জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নেদারল্যান্ড অধিনায়ক লুক ভন ট্রস্ট। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে স্কোরবোর্ডে কোন রান যোগ না হতেই এ বি ডি ভিলিয়ার্স ধরলেন সাজঘরের রাস্তা। আনন্দ ছড়িয়ে পড়ল নেদারল্যান্ড শিবিরে। তখনও কেউ অনুমানই করতে পারেন নি যে, এই ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্তটা আসলে কী সর্বনাশটা ডেকে এনেছে নেদারল্যান্ড বোলারদের ভাগ্যে।

দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৯ ওভারে ১১৪ রান তুলেছিলেন গ্রায়েম স্মিথ ও জ্যাক ক্যালিস। স্মিথ ৫৯ বলে ৬৭ রানের ইনিংস খেলে ফিরে যাওয়ার পর ইতিহাস গড়া ইনিংস খেলতে উইকেটে এসে দাঁড়ালেন হারশেল গিবস। ম্যাচ শুরুর আগের বৃষ্টির মতো তিনিও ব্যাট হাতে ঝড়াতে শুরু করলেন বাউন্ডারির বৃষ্টি। নেদারল্যান্ড বোলারদের রীতিমতো নাভিশ্বাস তুলে দিলেন তাঁর স্বভাবসুলভ মারকুটে ব্যাটিং দিয়ে।

ইতিহাস গড়া ২৯ তম ওভারটাতে বল করতে আসলেন লেগস্পিনার ডান ভন বাঙ্গ। প্রথম বলটায় উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে লঙ অন দিয়ে উড়িয়ে মারলেন গিবস। ছয়। দ্বিতীয় বলটায় গিবস আবারও ব্যাট চালালেন একই ভঙ্গিতে। এবার বলটা সীমানার বাইরে পড়ল লঙ অফ দিয়ে। তৃতীয় বলে আবারও ঐ লঙ অফ দিয়েই বল সীমানার বাইরে পাঠিয়ে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন গিবস। এই ৫০ রান এসেছিল মাত্র ৩৬ বলে। এরপর কিছুক্ষণ যেন জিরিয়ে নিলেন ডানহাতি এই মারকুটে ব্যাটসম্যান। যেন প্রস্তুত হয়ে নিলেন পরবর্তী তিনটি বলের জন্য। চতুর্থ বল সীমানার বাইরে পাঠালেন ডিপ মিডউইকেট দিয়ে। পঞ্চম বলটা বুলেট গতিতে আছড়ে ফেললেন লঙ অফের উপর দিয়ে। আবারও প্রসারিত হলো আম্পায়ার মার্ক বেনসনের হাত। ছয়! ষষ্ঠ বলটা আবারও ডিপ মিডউইকেট দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠিয়েই গড়ে ফেললেন ইতিহাস। পা রাখলেন একদিনের ক্রিকেটের এমন এক অঞ্চলে যেখানে এতদিন অন্য কেউ যেতে পারেন নি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে তো বটেই, সর্বোপরি একদিনের ক্রিকেটেও স্মরণীয় হয়ে থাকল ভন বাঙ্গের সেই ওভারটা। ৪ ওভার বল করে সেদিন তিনি দিয়েছিলেন ৫৬ রান। তবে মজার ব্যাপার হলো বিশাল এই ‘কীর্তি’ গড়ার পরও তিনিই কিন্তু সবচেয়ে খরুচে বোলার ছিলেন না। চার ওভার বল করে সর্বোচ্চ ৫৯ রান দিয়েছিলেন খোদ নেদারল্যান্ড অধিনায়ক লুক ভন ট্রস্ট।

সাতটি ছয় ও চারটি চার দিয়ে সাজানো ৭২ রানের ইনিংসটি খেলতে গিবসের লেগেছিল মাত্র ৪০ বল। আর নির্ধারিত ৪০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোরবোর্ডে যোগ হয়েছিল ৩৫৩ রান। ম্যাচটি নেদারল্যান্ড হেরেছিল ২২১ রানে।