Posts Tagged ‘ আশরাফুল ’

ফিরে আসুক ব্রিস্টলের স্মৃতি

বাঁচা-মরার লড়াইয়ে আজ চট্টগ্রামের জহুরুল হক স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গত ম্যাচের ভয়াবহ লজ্জার দুঃসহ স্মৃতি মুছে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়েই নিশ্চয়ই মাঠে নামবেন সাকিব-তামিমরা। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষও সেই প্রত্যাশা নিয়েই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অ্যাশেজ সাফল্যের পর এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিটের তকমা আাঁাটা ইংল্যান্ড এখনও পর্যন্ত খুব বেশি সুবিধা করে উঠতে পারে নি। ভারতের সঙ্গে টাই আর আয়ারল্যান্ডের কাছে হারের পর বেশ টলোমলো অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল স্ট্রাউস বাহিনী। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের অতি গুরুত্বপূর্ণ খেলাটাতে তারা শেষপর্যন্ত হারতে হারতেও পেয়েছে ৬ রানের অবিশ্বাস্য জয়। তার উপর পিটারসেন আর স্টুয়ার্ট ব্রডের ইনজুরিতেও কিছুটা ছন্দপতন হতে পারে ইংল্যান্ড শিবিরে।

চট্টগ্রামের জহুরুল হক স্টেডিয়ামে এই বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচটা প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফ্লাডলাইটের আলোয়। দিবা-রাত্রির এই গুরুত্বপূর্ণ লড়াইটার ক্ষেত্রে টসে জিতে ব্যাট করতে পারাটা একটা বাড়তি সুবিধা আনতে পারে বলে ধারণা করছেন ক্রিকেট বোদ্ধারা। গতকাল দুপুরে অনুশীলনের সময় বেশ কিছুক্ষণ ধরে চট্টগ্রামের হালকা বাদামী এই উইকেটটা পর্যবেক্ষণ করেছেন ইংলিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি স্ট্রাউস, বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ, গ্রান্ড ফ্লাওয়াররা। স্পিনাররা এই পিচে নিশ্চিতভাবেই একটা বড় ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করছেন অনেকে। সেক্ষেত্রে পিটারসেনের অফ স্পিনের অভাবটা কিছুটা টের পেতে পারেন স্ট্রাউস। আজ জিততে পারলেই কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিটটা অনেকখানিই নিশ্চিত করে ফেলতে পারবে ইংলিশরা।

অন্যদিকে বাংলাদেশের লড়াইটা প্রত্যাবর্তনের। ভয়াবহ দুঃসময়ের ঘোর কাটিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর। আজ নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের প্রধান প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে গত বছর ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ রানের সেই অসাধারণ জয়। সেই ম্যাচের জয়ের নায়ক মাশরাফি-বিন-মোর্তজাকে অবশ্য আজ মাঠে পাওয়া যাবে না। তবে এবারের ম্যাচটা কিন্তু হতে যাচ্ছে নিজেদের মাঠে। সাকিবরা পাশে পাবে বাংলাদেশের হাজার হাজার দর্শককে। এটাও নিশ্চয়ই বাড়তি শক্তি জোগাবে বাংলাদেশ শিবিরে।

আব্দুর রাজ্জাক, সাকিব আল হাসানের স্পিন আক্রমণ দিয়ে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের অল্প রানেই বেঁধে ফেলার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। কিন্তু টাইগারদের প্রধান দুশ্চিন্তার জায়গা নড়বড়ে ব্যাটিং অর্ডার। প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ২৮৩ রানের বড় স্কোর গড়ে আশা জাগালেও পরের দুইটা ম্যাচে শুধু ভয়াবহ হতাশাই উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। কোচ জিমি সিডন্সও গতকাল অনুশীলনে আলাদাভাবে সময় দিয়েছেন ইমরুল কায়েস, জুনায়েদ সিদ্দিকীদের। আজ মিডলঅর্ডারে আশরাফুলের পরিবর্তে মাঠে নামতে পারেন মাহমুদুল্লাহ। সেক্ষেত্রে বোলার মাহমুদুল্লাহর থেকে ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহর উপরই প্রত্যাশাটা বেশি থাকবে বাংলাদেশ সমর্থকদের।

গত বছর ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডকে হারিয়েই টেস্ট খেলুড়ে সবগুলো দেশকে পরাজয়ের স্বাদ দেওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল টাইগাররা। আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের অসময়ে আবারও সেই ব্রিস্টলের মধুর স্মৃতিটাই ফিরে আসুক— এই আশাতেই প্রহর গুনছে গোটা বাংলাদেশ।

আমরা এই আকালেও স্বপ্ন দেখি

আবারও আমার সেই বন্ধুর একটা উক্তি দিয়েই শুরু করি। ৫১ রানে ছয় উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সে বলল, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যদি দুই দিন মাঠে ঘাম ঝড়িয়ে প্রাকটিস না করে, শুধু ঘরে বসে গত মাচটা জেতার পর মানুষের বাধভাঙ্গা উচ্ছাসের ভিডিওগুলো দেখত, তাহলেও তারা অন্তত ১৫০টা রান করত’।

তখনো পর্যন্ত চরম আশাবাদীরা বুক বেঁধেছিলেন ১৫০ না হোক, অন্তত তিন অঙ্কের কোটাটা ‘টাইগার’রা পার করতে পারবে। ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ নদীটা পুরোপুরি পার না হতে পারলেও নাঈম, আশরাফুল, রাজ্জাকরা হয়তো তরীটা তীরের কিছুটা কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারবেন। আর তখনো তো উইকেটে আশরাফুল ছিলেন। তিনি যে আমাদের অনেক ভরসার প্রতীক! কিন্তু শেষরক্ষা হলো না। তরীটা ডুবল। খুব বিশ্রীভাবেই ডুবল। আমাদের আশা-ভরসা, মান-সম্মান, আস্থা, গর্ব-অহঙ্কার সবকিছুরই সলীল সমাধি ঘটল ‘টাইগার’দের উইকেট বৃষ্টির তোড়ে। আর ধীরে ধীরে ঘনিয়ে এল বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকারতম দিন। ক্ষুব্ধ-বাকহীন বাংলাদেশের সমর্থকরা দিশেহারা হয়ে গেল। হতাশা প্রকাশের ভাষা না পেয়ে তারা কিছুটা বাড়াবাড়িই করে ফেলল। কয়েক জায়গায় ভাঙচুর-পোস্টার ছেড়া এগুলো না হয় মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু উইন্ডিজ ক্রিকেট বাসে ইট পাটকেল ছোড়াটা কোনমতেই সমর্থনযোগ্য না। আমরা নিশ্চয়ই চাই না, আমাদের ক্রিকেট অঙ্গনটাও পাকিস্তানের মতো হয়ে যাক।

তবে এটাকে শুধুই উশৃঙ্খল কিছু মানুষের হঠকারি কার্যকলাপ বলে এককথায় নিন্দা প্রকাশ করে উড়িয়ে দেওয়াটাও বোধহয় উচিত হবে না। এই ক্ষোভের উত্স কী? এই প্রশ্নটাও সম্ভবত তোলার সময় এসেছে।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা জয়ের পেছনে সাকিব-শফিউলদের ক্রীড়ানৈপুনের সাথে সাথে মিরপুরের গ্যালারিভর্তি দশকেরও যে একটা বিশাল ভূমিকা ছিল, এটা নিশ্চয়ই সবাই সমর্থন করবেন। এমনকি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও তো ম্যাচ পরবতী সংবাদ সম্মেলনে সে কথা স্বীকার করেছিলেন। ও’ব্রায়েনদের একেকটা উইকেট পতনের পর যেন সাকিবদের পক্ষ থেকে সত্যিই হুঙ্কার দিয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের মানুষ। সে ম্যাচেও কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিং শেষে হার নিশ্চিত ধরে নিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু তবুও শেষ পর্যন্ত তারা সাহস ধরে রেখেছিলেন। চিত্কার করে, প্রার্থনা করে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের।

কিন্তু গতকাল তো মানুষ ‘টাইগার’দের পেছনে দাড়ানোর কোন সময়ই পেল না। চিত্কার করে সাহস জোগানোর সুযোগই পেল না। সূয অস্ত না যেতেই শেষ হয়ে গেল দিবা-রাত্রির এই অতি গুরুত্বপূণ লড়াই। যে মানুষগুলো রীতিমতো যুদ্ধ করে টিকিট জোগাড় করেছিল, বা অনেক আয়োজন করে খেলা দেখার পরিকল্পনা করেছিল, খেলা শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে যাওয়ার পর তারা যে কী পরিমাণ হতাশ হয়েছিলেন, সেই ভাষা বোঝার ক্ষমতা কী আমাদের আছে? বাংলাদেশের ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের বোধহয় সেই ভাষাটা অনুবাদ করা দরকার। প্রতি ম্যাচে মাঠে নামার আগে বোধহয় তাদের সবার আগে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের কথা ভাবা দরকার। যাদের হাসি-কান্না একদম ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে সাকিব-তামিমদের ব্যাট-বলের সঙ্গে। যারা তামিমদের একটা চারের মার দেখে অবর্ণনীয় খুশিতে ভেঙ্গে পরে। আবার উইকেট পতনের সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপ বাড়িয়ে ফেলে। আমাদের ‘টাইগার’রা কিন্তু সত্যিই আগামী ম্যাচগুলোর আগে এই প্রতিক্রিয়াগুলোর ভিডিও দেখে নিতে পারেন। কাজে লাগলেও লাগতে পারে।

কারণ এখনো তো আমাদের বিশ্বকাপটা শেষ হয়ে যায় নি। অনেকখানিই ফিকে হয়ে গেছে, এটা ঠিক। কিন্তু এখনো গ্রুপ পর্বের আরো তিনটা খেলা বাকিই থেকে গেছে। সাকিবরা নিশ্চয়ই এই লজ্জার তীব্র প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। এটাই প্রার্থনা। আর আশার কথা হলো এত ভয়াবহ দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তেও বাঙ্গালী তার রসবোধ হারায় নি। বাংলাদেশ মাত্র ৫৮ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর শাহবাগ মোড়ে দুইটা মেয়েকে খুব সেজেগুজে রিকশায় যেতে দেখে একজন বলে উঠল, ‘সামনে য্যায়েন না রে আপা, ‘টাইগার’রা খারায় আছে’! ঐ বিভীষিকাময় পরিস্থিতির বিচারেও কী এটাকে ইভ টিজিং বলবেন? তারচে বরং আপাতত ঐ আপাদের জায়গায় আমরা স্ট্রাউস, গ্রায়েম স্মিথ বা পিটার বোরেনদের নাম বসিয়ে দিতে পারি। লজ্জায় নীল, শোকে পাথর ‘টাইগার’রা এবার ভয়ঙ্কর গর্জন করে উঠবে, এই আশা তো আমাদের থাকতেই পারে। আর সর্বনিম্ন রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার এত লজ্জা, এত কলঙ্ক, হতাশার পরও তো দেখলাম একজন বলছেন, ’সাকিব তোমরা এগিয়ে যাও। হারলেও তোমাদের সাথে আছি. জিতলেও সাথে আছি।’ সাকিব-তামিমরা শুনতে পাচ্ছেন তো?

আশরাফুল নাকি আশার-ফুল?

‘তোমার উপর আমার বিরক্তির মাত্রাটা চরমে উঠল, যখন দেখলাম আশরাফুল রাজু ভাস্কর্যে আউট হয়েও টিএসসির সামনে ব্যাট করছে।’- বাংলাদেশের ব্যাটিং শেষে আমার এক বন্ধু মাথার চুল ছিড়তে ছিড়তে কাকে যেন এ কথাটা বলেছিল।

শাহবাগ এলাকায় খেলা দেখার অভিজ্ঞতা নাই, এমন অনেকেরই হয়তো কথাটা বুঝতে অসুবিধা হতে পারে। আসল ব্যাপারটা হলো, গোটা শাহবাগ এলাকায় যে তিন-চারটা বড় স্ক্রিনে খেলা চলে, সেগুলোর সম্প্রচারে ১৫ বা ২০ সেকেন্ডের কমবেশি হয়। ফলে একজায়গায় আশরাফুলের আউটটা একটু আগে দেখা গেছে, কোথাও একটু পরে দেখা গেছে। যাই হোক, একটু আগে-পরে হলেও আশরাফুল কিন্তু সত্যিই গতকাল গোটা বাংলাদেশকে হতাশার মহাসমুদ্রে ডুবিয়ে সাজঘরে ফিরেছিলেন মাত্র এক রান করে। এ হতাশা অবর্ণনীয়। সেই সময়টা ছিল দুঃখ-রাগ-ক্ষোভ-হতাশা মিলে তৈরি হওয়া একটা ভয়ানক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। স্কোরবোর্ডে মাত্র ১৫১ রান। আশরাফুল ফিরে গেলেন ছয় নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে। হতাশায় বেচাবিক্রি বাদ দিয়েছিলেন চায়ের দোকানদাররা। রাগে-ক্ষোভে আশরাফুলের কুশপুত্তুলিকা পোড়ানোর পরিকল্পনা শুরু করেছিলেন সমর্থকরা। আর অবর্ণনীয় গালাগালির কথা তো বাদই দিলাম।

কেন? কেন আলাদা করে শুধু আশরাফুলের উপরই রাগ বাংলাদেশের মানুষের? এক ম্যাচে না হয় খেলতে পারেন নি। কী হয়েছে তাতে? কিন্তু কাহিনীর শুরুটা তো শুধু এই একদিনেই হয় নি। এই রাগ-ক্ষোভ-হতাশার এক লম্বা ইতিহাস আছে।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ অনুষ্ঠানের যে উত্তাপ-উত্তেজনা, তার সঙ্গে প্রায় হাতে হাত ধরে হেটেছে আশরাফুল বিতর্ক। বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এই ব্যাটসমানটিকে দলে নেওয়া হবে, কি হবে না, সেই বিতর্ক। ব্যাট হাতে মাঠে নামলে যে রান করতে হয়, দীর্ঘদিন ধরে সেটাই যেন ভুলে গিয়েছিলেন আশরাফুল। তাই বিশ্বকাপ কাউন্টডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই উঠে গেল সেই মোক্ষম প্রশ্ন। কী হবে আশরাফুলের বিশ্বকাপ ভাগ্য? শেষমুহূর্তে এই প্রশ্নেই নড়েচড়ে উঠেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গন।

শুরুর দিকে নির্বাচকদের দলে জায়গা হয়েছিল আশরাফুলের। কিন্তু বিসিবির টেকনিক্যাল কমিটির নাকি সেই দল পছন্দ হচ্ছিল না। তারা নাকি দলে আশরাফুলের জায়গায় অলোক কাপালিকে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। নিবাচক কমিটির সদস্যরাও নাকি বদলে যাবে, এমন রিপোর্টও হয়েছে প্রথম আলোতে আর সেদিনই নিবাচকদের উপর টেকনিক্যাল কমিটির এই হস্তক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে একটা অগ্নিঝরা মন্তব্য প্রতিবেদন লিখলেন প্রথম আলোর ক্রীড়া-সম্পাদক উত্পল শুভ্র। ‘যাঁদের কাজ তাঁদেরই করতে দিন’- শিরোনামে। সেদিনই বিকেলবেলা ঘোষিত হলো বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল। প্রায় ছেড়ে দেওয়া একটা ট্রেনে শেষমুহূতে জায়গা পেলেন আশরাফুল।

সেসময়ই বিসিবির এই সিদ্ধান্ত খুশিমনে মেনে নিতে পারেন নি বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটপাগল মানুষ। আবার ‘ঠিক আছে মাঠে দেখা যাবে’ বলে মেনে নিয়েছিলেন অনেকে। এখানেই শেষ নয়। এরপর খবর পাওয়া গেল অনুশীলনে নাকি তার প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করছেন কোচ জিমি সিডন্স। আবার আরেকপ্রস্থ পত্রিকার শিরোনাম হলেন আশরাফুল। অবশেষে সব ঝক্কি-ঝামেলা শেষে মাঠে গড়ালো খেলা। ভারতের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচটা তিনি মাঠের বাইরে থেকেই দেখলেন। আর আজকের অবস্থা তো আগেই বলা হয়েছে। ফলে প্রায় সবাই বললেন, ‘আগেই বলেছিলাম ওকে দলে নেওয়াটা ঠিক হয়নি’। আর যারা আশরাফুলের অভিজ্ঞতা-সম্ভবনার উপর একটু ভরসা করেছিলেন, তারা হলেন চরম বিরক্ত, যারপরনাই হতাশ।

আশরাফুল কি ব্যাট হাতে নামার সময় একটুও ভেবেছিলেন যে, তাকে দলে জায়গা দেওয়া হয়েছে মাহমুদুল্লাহকে সরিয়ে? আগের ম্যাচে মাহমুদুল্লাহ যে ৬টি রান করেছিলেন, সেই অঙ্কটা অন্তত তার ছোয়া উচিত্? সেই ছয়টা রানই যে গতকালের ম্যাচের জন্য ছিল অনেক কিছু…।

ফিল্ডিং করতে মাঠে নামার সময় হয়তো এসব চিন্তাই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল আশরাফুলকে। তাই হয়তো বল হাতে দুইটা উইকেট নিয়ে কিছুটা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু বাংলাদেশের ২৭ রানের ঘামঝড়ানো জয়ের জন্য কিন্তু এটা যথেষ্ট ছিল না। আশরাফুল ধন্যবাদ দিতে পারেন শাফিউল ইসলামকে। স্বপ্নের মতো এক স্পেল (৬-১-১০-৪) দিয়ে বাংলাদেশকে রোমাঞ্চকর এক জয় এনে দিয়েছেন এই পেসার। এছাড়া হয়তো নিজেকে প্রতীকীভাবে পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারতেন না জনাব মো. আশরাফুল। আমাদের ক্ষুব্ধ সমর্থকরা আরো কতো কী করতে পারতেন আমরা অনুমান করে নিতে পারি।

সেদিকে শেষপযন্ত যেতে হয়নি, বাংলাদেশের বণিল বিশ্বকাপটা ফ্যাকাশে হয়ে যায় নি এটাই অবশ্য এখন সবচেয়ে বড় ব্যাপার। তবে আশরাফুল বিতর্কটা কিন্তু আবার নতুন করে জাগিয়ে তুললেন আশরাফুল নিজেই। আমরা কিন্তু বোলার আশরাফুলকে চিনি না। আমরা চিনি ব্যাটসম্যান আশরাফুলকে। যার অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুন্যে আমরা একদা হারিয়েছিলাম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে। গতকালের ম্যাচে সেই ব্যাটসম্যান আশরাফুলের পারফরমেন্স সম্পর্কে আমার ঐ বন্ধুর মন্তব্য দিয়েই শেষ করি। ‘আরে, আশরাফুল কী ‘ডাক’ মারার মতো ব্যাটসম্যান নাকি? ১ রান করছে মিয়া!’ আশরাফুল আর আশরাফুল-ভক্তরা কী এটাকেই সান্তনা ধরে নেবেন?