Posts Tagged ‘ আর্জেন্টিনা ’

শ্রমিকদের স্ব-ব্যবস্থাপনা: আর্জেন্টিনার বসবিহীন কারখানা!

একুশ শতকের শুরুতেই বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল আর্জেন্টিনা। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে দেশজুড়ে শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ, দাঙ্গা পরিস্থিতি। সেসময় অনেক মানুষ, বিশেষত শ্রমিকশ্রেণীর মানুষ তাদের চাকরি খুইয়েছিল। হাজারো শ্রমিক আকস্মিকভাবে পড়ে গিয়েছিলেন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে।


এমন পরিস্থিতিতে মুষড়ে পড়া, আবার নতুন করে চাকরির সন্ধান, কৃচ্ছতাসাধনের পথেই যেতে হয় শ্রমিকদের। আর্জেন্টিনাতেও তেমনটাই হয়েছিল। ব্যতিক্রম ছিল অবশ্য একটি কারখানা। দক্ষিণ আর্জেন্টিনার প্যাটাগোনিয়ার একটি কারখানার শ্রমিকরা হাহাকার করা বাদ দিয়ে সবকিছু নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
জ্যানোন নামের এই সিরামিক টাইল কারখানার শ্রমিকরা চাকরি হারানোর খবর শোনার পর সহজে সেটা ছেড়ে দিয়ে আসতে চাননি। তারা কারখানা দখল করে নিয়েছিলেন। সরকারী কর্তৃপক্ষ, কারখানার ম্যানেজারদের পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা চালানো হয়েছিল শ্রমিকদের কারখানা থেকে বের করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সব চেষ্টাই বিফলে গেছে।


নিজেরাই কারখানা দখল করে উৎপাদন চালিয়ে যেতে থাকেন শ্রমিকরা। এবং কিছুদিন যেতে না যেতেই দেখা যায় যে উৎপাদন কোটা ঠিকঠাক রেখেই খুব নিঁখুতভাবে কারখানাটা চালাচ্ছেন শ্রমিকরা, নিজেরাই। আর এটার মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের চাকরি তো বাঁচালেনই, সেই সঙ্গে তৈরি করলেন কারখানায় স্ব-ব্যবস্থাপনার উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত। 


শুরুতে আঞ্চলিকভাবে, তারপর জাতীয়ভাবে এবং শেষপর্যন্ত পুরো বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগিয়েছে আর্জেন্টাইন শ্রমিকদের এই স্ব-ব্যবস্থাপনার ঘটনাটি। ২০০৯ সালে আর্জেন্টিনার আঞ্চলিক আইনসভায় কারখানাটিকে শ্রমিকদের কোঅপারেটিভের হাতে আইনিভাবে হস্তান্তর করে দেওয়ার ভোট পাস হয়। তিন বছর ঝুলিয়ে রাখার অবশেষে সেটির আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
কোঅপারেটিভের কাছে আইনিভাবে মালিকানা হস্তান্তরের পর সেটার নতুন নাম দেওয়া হয়েছে Fasinpat। Factoria Sin Patrones- এর সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে Fasinpat। যার অর্থ Factory Without Bosses, বসবিহীন কারখানা। মালিকানা হস্তান্তরের পর থেকে কারখানাটি আরও লাভজনক হয়ে উঠেছে। 


মুনাফার অংশ দিয়ে এলাকার নানা উন্নয়নমুখী প্রকল্পে হাত দিয়েছে শ্রমিকদের এই কোঅপারেটিভ। গড়ে তুলেছে একটি হাসপাতাল। কারখানার কাঁচামাল, কাদামাটি কেনার জন্য তারা স্থানীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গেও গড়ে তুলেছে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। যেখান থেকে দুই পক্ষই সমানভাবে লাভবান হতে পারছে।
শ্র

স্পেন হতে চায় ‘সব পেয়েছির দেশ’

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, বিশ্বকাপ, অলিম্পিকের সোনা—কী নেই স্পেনের ট্রফি কেসে। ফুটবলের প্রায় সব কটি বড় শিরোপা জয়েরই স্বাদ পেয়েছে ইউরোপের ফুটবলের বর্তমান সম্রাটরা। কিন্তু তার পরও একটা আফসোস আছেই স্পেন-সমর্থকদের মনে। এখন পর্যন্ত ফিফা কনফেডারেশনস কাপের শিরোপাটা যে ঘরে তুলতে পারেনি এই সময়ের সেরা এ দলটি। ২০০৯ সালে সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েও বিফল হতে হয়েছিল স্পেনকে। এবার সেই আক্ষেপটা ঘোচাতে চান ভিসেন্তে দেল বস্কের শিষ্যরা। হয়ে যেতে চান ‘সব পেয়েছির দেশ’।

MK-BE444_SP_WC1_G_20100711184931

২০০৮ সালে স্পেনের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ভিসেন্তে দেল বস্ক। ওই বছর থেকে বিশ্বমঞ্চে স্পেনের জয়যাত্রারও শুরু। ২০০৮ সালে স্পেনকে ইউরো জিতিয়েই বিদায় নেন কোচ লুইস আরাগোনেস। ১৯৬৪ সালের পর প্রথম কোনো ট্রফি জেতে স্পেন। এত দীর্ঘ অপেক্ষা ছিল বলেই হয়তো ফুটবল-দেবী দুই হাত উপচে দিতে শুরু করে লা ফুরিয়া রোজাদের। ২০১০ সালে আজন্ম আরাধ্যের প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফির স্বাদ পায় স্পেন। ২০১২ সালে গড়ে অনন্য ইতিহাস। ইউরোপ-সেরার মুকুট ধরে রেখে প্রথম দল হিসেবে ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো—এই শিরোপাত্রয়ী জেতে।

Euro-2012-final-Spain-v-Italy-Spain-celebrating-victory-spain-national-football-team-31321204-594-412

সবই আছে। নেই শুধু কনফেডারেশনস কাপটাই। এবারই সেই আক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগ এসেছে স্পেনের সামনে। ২০১০ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের ১২ জন খেলোয়াড় নিয়েই সেই শূন্যস্থান পূরণের মিশনে নামছেন দেল বস্ক। এখন ক্রমাগত জিততে থাকা এই মেশিনটাকে ঠিকমতো সচল রাখতে পারলেই বাজিমাত করতে পারবেন। তবে কাজটা যে খুব একটা সহজ না, সেটাও বুঝতে পারছেন স্পেনের সফলতম এই কোচ। সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে দেল বস্ক বলেছেন, ‘আমরা জানি যে, ফুটবলে প্রতি এক বা দুই বছর পর অনেক কিছুর বদল ঘটে। আর আমরা ২০০৮ সাল থেকে যে জয়যাত্রা অব্যাহত রেখেছি, সেটার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখাটাও খুব কঠিন। তার পরও ক্রমাগত চেষ্টা করে যাওয়াটাই আমাদের বাধ্যবাধকতা।’

বরাবরের মতো স্পেন জাতীয় দলের মেরুদণ্ড গড়ে উঠছে বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলারদের দিয়ে। মোট ১৩ জন খেলোয়াড় থাকছেন স্পেনের শীর্ষ এই দুই ক্লাব থেকে। কিন্তু এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল থেকে এই দুই দলেরই বিদায় স্পেনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ হয়তো কিছুটা বাড়িয়ে দেবে। এর পাশাপাশি আছে সদ্যই শেষ হওয়া দীর্ঘ, স্নায়ুখরা মৌসুমের উপজাত হিসেবে পাওয়া ইনজুরির সমস্যা। কুঁচকির চোটের কারণে এরই মধ্যে ছিটকে পড়েছেন মাঝমাঠের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড় জাবি আলোনসো। সার্জিও রামোস, আলভারো আরবেলোয়া, জাভি ও সার্জিও বুসকেটসও ভুগছেন ইনজুরির সমস্যায়।

আক্রমণভাগের রণকৌশলও কিছুটা ভিন্নভাবে সাজাতে হতে পারে দেল বস্ককে। কারণ, এবারের ইউরোপিয়ান ফুটবল মৌসুমে খুব একটা ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি স্পেনের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ডেভিড ভিয়া। সেস ফেব্রিগাস আর ফার্নান্দো তোরেসও ভুগেছেন ফর্মহীনতায়। তাই দেল বস্কের ভরসা হয়ে উঠতে পারেন ভ্যালেন্সিয়ার স্ট্রাইকার রবার্তো সলদাদো। লা লিগার এবারের মৌসুমে ২৪টি গোল করে কোচের নজর কেড়েছেন ২৮ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার। তাঁর আক্রমণাত্মক মানসিকতা, দ্রুতগতি আর হেড থেকে গোল করার দক্ষতাকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন দেল বস্ক। তবে এক জায়গায় তাঁর আস্থার কোনো সমস্যা নেই। রিয়ালের মরিনহো-জমানায় ব্রাত্য হয়ে পড়লেও অধিনায়কের বাহুবন্ধনীটা ইকার ক্যাসিয়াসের হাতেই তুলে দেবেন বস্ক।

ফেবারিটের তকমা এঁটেই এবারের কনফেডারেশনস কাপে অংশ নিতে যাচ্ছে স্পেন। গ্রুপ পর্বে তাদের প্রতিপক্ষ উরুগুয়ে, নাইজেরিয়া ও নবাগত দল তাহিতি। ২০০৯ সালে সেমিফাইনাল থেকে স্পেনের বিদায়টা অঘটন হিসেবেই বিবেচিত হয় ফুটবল বিশ্বে। সেবার গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচ জিতলেও শেষ চারের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২-০ গোলে হেরে গিয়েছিল তারা। এবার হয়তো তাই ‘চুনোপুঁটিদের’ নিয়ে একটু বেশিই সতর্ক থাকবে স্পেন। কে জানে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আর্জেন্টিনা আর ফ্রান্সের মতো তারাও এবারই হয়ে যেতে পারে ‘সব পেয়েছির দেশ’।