Posts Tagged ‘ আগ্নেয়গিরি ’

যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি ইয়েলোস্টোন আগ্নেয়গিরি

২০১২ সিনেমায় দেখানো এই দৃশ্য বাস্তবেও তৈরি হওয়ার মতো অনেক উপাদান ইয়েলোস্টোন পার্কের সুপ্ত অতিকায় আগ্নেয়গিরিতে আছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ছবি: ওয়েবসাইট

বিশ্ব মোড়ল, পরাক্রমশালী ও মহাশক্তিধর—আরও কত উপাধি যুক্তরাষ্ট্রের! তাবত দুনিয়ায় আধিপত্যকারী এই দেশটির জন্য এক ভয়ংকর বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। আগ্নেয়গিরির প্রচণ্ড অগ্ন্যুত্পাতে কোনো একসময় তাদের সুখের রাজ্য বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে।
এটা কোনো জ্যোতিষীর ভবিষ্যদ্বাণী নয়, বিজ্ঞানীদের তথ্য-প্রমাণনির্ভর যুক্তি। একদল মার্কিন বিজ্ঞানী ও আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ বলছেন, আমেরিকার ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের অতিকায় আগ্নেয়গিরিটি ধীরে ধীরে তার পেট থেকে লাভা উদিগরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আগ্নেয়গিরিটির পাথরমিশ্রিত গলিত লাভাগুলো দীর্ঘদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও ২০০৪ সাল থেকে সেটা রেকর্ড হারে জেগে উঠছে। রেকর্ড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত তিন বছরে আগ্নেয়গিরির লাভাস্তর তিন ইঞ্চি করে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, ইয়েলোস্টোন আগ্নেয়গিরির লাভা উদিগরণে দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে। জ্বলন্ত লাভা ছড়িয়ে পড়বে আকাশজুড়ে। বিষাক্ত ছাইয়ের ১০ ফুট পুরু আস্তরণ তৈরি হবে আশপাশের প্রায় এক হাজার মাইলজুড়ে। কোটি কোটি মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়তে হবে। ভেঙে পড়তে পারে বিমান চলাচলের ব্যবস্থা।
ইয়েলোস্টোন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাতের ভয়াবহতা সাম্প্রতিক আইসল্যান্ড আগ্নেয়গিরি উদিগরণকেও বহুগুণে ছাড়িয়ে যেতে পারে। এমনকি ১৯৮০ সালে মাউন্ট হেলেনস আগ্নেয়গিরির উদিগরণ থেকেও হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী হবে ইয়োলোস্টোন আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ।
মানুষের ইতিহাসে ছয় লাখ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এ ধরনের একটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত না থাকায় এ মুহূর্তে তাঁরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
উথাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইয়েলোস্টোন আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ বব স্মিথ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, ‘আগ্নেয়গিরির লাভাস্তর ওপরে ওঠার ঘটনা খুবই আশঙ্কাজনক। প্রথম দিকে আমরা শুধু এটা থেকে উদিগরণ ঘটতে পারে কি না সেদিকেই নজর রাখছিলাম। একসময় আমরা দেখলাম, গলিত লাভাটা ১০ কিলোমিটার নিচে আছে। সে জন্য আমরা অত বেশি চিন্তিত ছিলাম না। কিন্তু গলিত লাভার এই স্তরটা যদি দুই বা তিন কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসে, তাহলে সেটা আমাদের জন্য বড় ধরনের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক রবার্ট স্মিথ সম্প্রতি এই আগ্নেয়গিরি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে, ভূগর্ভস্থ স্তরের পুরোটাই গলিত পাথর দিয়ে ভর্তি। কিন্তু আমাদের কোনো ধারণা নেই যে কবে বা কখন এই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাত ঘটতে পারে অথবা গলিত পাথরগুলোর চঞ্চলতা স্থিমিত হয়ে আগ্নেয়গিরিটা আবার ঘুমিয়ে পড়তে পারে।—ডেইলি মেইল অনলাইন।

ঘুমন্ত দৈত্য

আপনাকে যদি বলা হয় আপনি বসে আছেন এমন এক জায়গায় যেখান থেকেই একবার এই পৃথিবীর বুকে ঘটে গেছে প্রলয়ঙ্করী এক বিস্ফোরণ? কেমন লাগবে আপনার? আসলে এ ধরণের প্রশ্নের সম্মুখিন হওয়ার কথা আমরা হয়তো মনেও আনি না। কি রাশিয়ার কিছু অঞ্চলের অধিবাসীদের দিকে সত্যিই এমন একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সমপ্রতি তাঁরা এক গবেষণায় দাবি করেছেন যে, ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর প্রায় সকল প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছিল বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এক অতিকায় আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে। আর সেই ঘুমন্ত দৈত্যটার অবস্থান রাশিয়ার আশপাশ জুড়ে। যার আয়তন গোটা ইউরোপ মহাদেশের চেয়েও কিছুটা বড়! সম্প্রতি স্তব্ধ করে দেওয়ার মতো এই খবরটা দিয়েছে ডেইলি মেইল অনলাইন।

পার্মিয়ান যুগে ( ২৯৯-২৫১ মিলিয়ন বছর আগে) পৃথিবীর সর্বশেষ প্রলয়ঙ্করী দুর্যোগে প্রায় সকল প্রাণির বিলুপ্তি ঘটেছিল বলে আগে থেকেই বিশ্বাস করতেন ইতিহাসবিদ ও বিজ্ঞানিরা। এটা গ্রেট ডাইয়িং নামেও পরিচিত। ধারণা করা হয় পৃথিবীর জলজ প্রাণীর প্রায় ৯৫% ও ভূমির ৭০% প্রাণী এসময় বিলুপ্ত হয়েছিল। এই ধারণাটা বিজ্ঞানীমহলে একপ্রকার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করলেও তারা শক্ত কোন প্রমাণ পাচ্ছিলেন না যে, আসলে এর সঠিক কারণটা কী? সমপ্রতি কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দাবি করেছেন যে, পার্মিয়ান যুগের ঐ মহাপ্রলয়ের কারণটা ছিল ভয়াবহ আকারের অস্নুৎপাত। কানাডায় প্রাপ্ত এক পাথরের গায়ের কয়লার স্তর বা আবরণ থেকে বিজ্ঞানীরা এর প্রমাণ পেয়েছেন। ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. স্টিভ গ্রাসবে বলেছেন, ‘এটা খুব ভালোভাবেই পার্মিয়ান যুগের প্রাণী বিলুপ্তির কারণটা ব্যাখ্যা করে। আমাদের এই গবেষণাটাই প্রথম প্রমাণ করতে পারবে যে, পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই অস্নুৎপাতের ফলে যে ব্যাপক পরিমাণ কয়লা দহন হয়েছিল সেটাই আজকের গ্রিনহাউজ গ্যাস সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ।’
ড. গ্রাসবি পাথরের গায়ে অদ্ভুত ধরণের এই কয়লার আবরণটা আরো ভালোমতো পরীক্ষা করার জন্য ভূবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. বেনোইট বিউচ্যাম্প ও পরিবেশ ভূ-রসায়নের অধ্যাপক ড. হামিদ সানেইয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এবং সম্মিলিতভাবেই তাঁরা উপরোক্ত ঐ সিদ্ধানে- পৌঁছেছেন। তাঁরা এটাও চিহ্নি‎ত করেছেন যে, আদি বিলুপ্তির কারণ ভয়াবহ এই আগ্নেয়গিরির অবস্থান বর্তমান রাশিয়ার উত্তরে। জায়গাটা সাইবেরিয়ান ফাঁদ নামেও পরিচিত। উত্তর রাশিয়া, তুরা, উকুটস, নোরিলস্ক ও ইরাকুটস্ক অঞ্চল ঘিরে এই আগ্নেয়গিরির বিস্তৃতি। পুরো এলাকাটার আয়তন দুই মিলিয়ন স্কয়ার কিলোমিটার। যা ইউরোপ মহাদেশের চেয়েও খানিকটা বড়। এই অস্নুৎপাতের ছাই গিয়েই জমা হয়েছিল কানাডায় বিজ্ঞানীদের প্রাপ্ত কয়লার আস্তরণজমা ঐ পাথরে। ড. বেনোইট বিউচ্যাম্প বলেছেন, ‘আমরা ঐ পাথরটাতে প্রচুর পরিমাণ জৈব উপাদান পেয়েছি। আর এগুলো থেকে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি যে, এগুলো কয়লা-ছাইয়ের স্তর। আধুনিক কয়লা পোড়ানোর পাওয়ার প্লান্টগুলোতে যেমনটা দেখা যা। ড. সানেই আরো যোগ করেছেন, ‘আমাদের এই আবিস্কারটাই প্রথম এই নিশ্চয়তা দিতে পারবে যে, আদি বিলুপ্তির ঐ সময়ে কয়লা ছাইয়ের উদগিরন হয়েছিল যা আগে চি‎হ্নত করা যায় নি।’
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন যে, সেসময়ের সেই ছাই উদগিরনটাই বর্তমান সময়ের এই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, পরিবেশ বিপর্যয়ের আদি কারণ। ঐ আগ্নেয়গিরি থেকে যে ছাই উদগিরন হয়েছিল সেটা ছিল খুবই বিষাক্ত।
তবে এখন আবার এই আগ্নেয়গিরি থেকে নতুন করে অস্নুৎপাতের সম্ভাবনা আছে কিনা সে সম্পর্কে এখনো কিছু জানান নি বিজ্ঞানীরা। তবে পরিবেশের যা হালচাল তাতে কিছুটা সাবধান হওয়ার সময় বোধহয় এসেছে। সময় এসেছে পরিবেশ নিয়ে বাণিজ্য-রাজনীতি না করে সত্যিই যেন ভয়ঙ্কর সুপ্ত এই দৈত্যটা জেগে না ওঠে সেদিকে নজর দেবার।