যে বিষয়গুলোতে ঐক্যমত্য চাই প্যারিস সম্মেলনে

Protect Mother Earth

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রচণ্ড ঝুঁকির মুখে থাকা বিশ্ব পরিবেশ নিয়ে আলাপ-আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন বিশ্বনেতারা। ২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের এই শীর্ষ জলবায়ু সম্মেলনকে বিবেচনা করা হচ্ছে পৃথিবীর প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার অন্তিম সময় হিসেবে। এবার যদি পরিবেশ বিষয়ে একটা বৈশ্বিক আইনি চুক্তি না করা যায়, তাহলে অনেক দেরি হয়ে যাবে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিগত তিন দশক ধরে নানামুখী আলাপ-আলোচনায় অনেক কিছু জমা হয়েছে এজেন্ডা হিসেবে। তবে এবার প্যারিসে মূল কিছু বিষয়ে অবশ্যই ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে হবে বিশ্বনেতাদের।

paris_cop21_501868

গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস

পুরো বিশ্ব একমত হয়েছে যে, গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনের মাত্রা কমাতে হবে। যেগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করে পৃথিবীকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু এই নির্গমন কি হারে কমানো হবে?

জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুযায়ী, প্রাক শিল্পায়ন যুগের সাপেক্ষে বৈশ্বিক উষ্ণতা কোনোভাবেই দুই ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। তবে বিশ্বের গরীব ও নিচু স্থানে থাকা ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলো (যারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রথম ও প্রবল শিকার হবে) বলেছে, দুই ডিগ্রীও যথেষ্ট না।…

View original post 504 more words

পরিবেশ দূষণ রোধে শিশুদের পিটিশন!

সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়া অঙ্গীকার কবিরা কতই না করেছেন। কিন্তু আধুনিক বিশ্ব কবির সংকল্প অনুযায়ী চলছে না। দুনিয়াকে শিশুর বাসযোগ্য করে তোলা তো দূরের কথা; ক্রমাগত ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়ছে পৃথিবীর পরিবেশ। বায়ু দূষণের ফলে বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণের মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। ফলে বড়দের ওপর আস্থা হারিয়ে শিশুরাই দিচ্ছে পরিবেশ রক্ষার ডাক। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী, দিল্লির বায়ুদূষণ বণ্ধের আহ্বান জানিয়ে ভারতের শীর্ষ কোর্টে একটি পিটিশন দায়ের করেছে তিন শিশু।

ছয় মাসের এই তিন শিশুর পক্ষে রিট পিটিশনটি দায়ের করেছেন তাদের অভিভাবকরা। বায়ু দুষণকারী পটকা ও আতশবাজি নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে এই পিটিশনে। তাদের দাবি, পরিস্কার বাতাসে শ্বাস নেওয়াটা শিশুদের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু বায়ু দূষনের ফলে তাদের পড়তে হচ্ছে অনেক জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধির কবলে। অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে ফুসফুস ও নানাবিধ স্নায়ুজনিত রোগে। আর এই দুষণের জন্য অত্যাধিক পরিমান পটকা ও আতশবাজি পোড়ানোকে দায়ী করে সেটা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে পিটিশনকারী তিন শিশু ও তাদের অভিভাবকরা। ভারতের সুপ্রিম কোটও বিষয়টিকে শিশুদের মৌলিক অধিকারের জন্য হুমকি বিবেচনা করে পিটিশন গ্রহণ করেছে।

ব্যাপক হারে পটকা ও আতশবাজী পোড়ানোয় দূষিত হচ্ছে দিল্লির বায়ু

ব্যাপক হারে পটকা ও আতশবাজী পোড়ানোয় দূষিত হচ্ছে দিল্লির বায়ু

গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এই পিটিশন দায়ের করা হয়েছে দিওয়ালির ছয় সপ্তাহ আগে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান এই উৎসবে প্রচুর পটকা ও আতশবাজি পোড়ানো হয় ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। যা তৈরি করে একটা ঝাঁঝালো ধোঁয়া। পিটিশনে বলা হয়েছে, ‘উৎসবগুলোতে যে বিপুল পরিমাণে আতশবাজি পোড়ানো হয় তা পরিস্কারভাবে এই আবেদনকারী ও দিল্লির অন্যান্য শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। আতশবাজি পোড়ানোর মাধ্যমে হয় ক্ষণস্থায়ী ও অগভীর একটা আনন্দ পাওয়া যায়। কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাবগুলো দীর্ঘমেয়াদে পড়ে ফুসফুস ও স্নায়ুর ওপর, যা স্থায়ীভাবে ক্ষতির কারণ হয়।’

গত বছর পৃথিবীর ১৬০০টি শহরের ওপর গবেষণা চালিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা। সেখানে দেখা গেছে বায়ুবাহিত একধরণের ছোট্ট কণার পরিমাণ দিল্লিতেই সবচেয়ে বেশি। পিএম২.৫ নামে পরিচিত এই কণাগুলো খুব সহজেই ফুসফুসে প্রবেশ করে। এমনকি রক্তের মধ্য দিয়েও প্রবাহিত হতে পারে। তৈরি করে ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুস ক্যান্সার ও বিভিন্ন হৃদরোগ।

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন: গাছেরাও কি যাচ্ছে ধর্মঘটে?

জীবাশ্ম জ্বালানি আহরণের তাগিদে পরিবেশের প্রতি অবিচারই করে ফেলেছে মানব সভ্যতা। কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেনের মতো গ্রীনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ উত্তপ্ত করে ফেলেছে পৃথিবীর পরিবেশ। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে গাছ। শুষে নিচ্ছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতির চরম বন্ধু গাছও যেন নিয়েছে বিরুপ অবস্থান। ফলে বিজ্ঞানীরা প্রশ্ন তুলছেন যে: গাছেরাও কী যাচ্ছে ধর্মঘটে?

trees

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে বিগত কয়েক দশক ধরেই মধ্য ইউরোপে বসন্ত শুরু হচ্ছে আগেভাগেই। সেখানকার গাছগুলোও এতদিন সাড়া দিয়ে এসেছে প্রকৃতির এই পরিবর্তনে। আগে-ভাগেই ফোটাতে শুরু করেছে বসন্তের নতুন পাতা। ফলে কার্বন ডান অক্সাইড শুষে নেওয়ার কাজটাও তারা করেছে অনেক লম্বা সময় ধরে। এতদিন ব্যাপারটি বেশ ইতিবাচকভাবেই উপস্থাপিত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষক আলোচনাগুলোতে। কিন্তু বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ন্যাচারে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা লিখেছেন যে, গাছগুলো আগেভাগেই বসন্তের পাতা ফোটানোর হার কমিয়ে দিয়েছে। এ থেকে তাঁরা আশঙ্কা করছেন যে, এক সময় হয়তো তা পুরোপুরি বন্ধই হয়ে যেতে পারে। বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওনগোশুয়ো ফু বলেছেন, ‘আগাম বসন্তের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গাছগুলোর ধীর হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি ইঙ্গিত করে যে ভবিষ্যতে তারা আর বেশি কার্বন শুষে নিতে পারবে না। কারণ গাছগুলোর তাপমাত্রা সংবেদশীলতা কমে যাচ্ছে।’

গবেষণাটি পরিচালনার জন্য বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল বেছে নিয়েছিলেন ১২৪৫টি স্থানের খুব পরিচিত গাছগুলোকে। তাঁরা গবেষণা চালিয়েছেন ডেনমার্ক থেকে বসনিয়া পর্যন্ত মধ্য ইউরোপের অনেকগুলো স্থানে। গবেষণাটিতে তাঁরা ভাগ করেছেন দুইটি পর্যায়ে। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৪ সাল ও ১৯৯৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়কে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে গত তিন দশক ধরে গাছগুলো অগ্রিম বসন্তকে স্বাগত জানিয়ে আগেভাগেই নতুন পাতার জন্ম দিয়েছে। গড়ে প্রায় ১৩ দিন আগেভাগে শুরু হয়েছে নতুন পাতা আগমনের প্রক্রিয়া।

কিন্তু দুইটা সময়ের পর্যায়কে আলাদাভাবে বিবেচনায় নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। ১৯৯৯ থেকে ২০১৩ সাল সময় পর্যন্ত নতুন পাতা জন্মানোর হার কমে গেছে ৪০ শতাংশ হারে। ওনগোশুয়ো বলেছেন, ‘আমরা দেখেছি যে গত তিন দশকে আগাম বসন্তের প্রতি গাছদের সংবেদনশীলতা কমে গেছে। আর শীতের সময় আবহাওয়া আরও উষ্ণ থাকলে এটা আরও কমে যেতে পারে।’

শিল্পবিপ্লবের পর থেকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সেটা কোনোভাবেই যেন দুই ডিগ্রী সেলসিয়াসে না পৌঁছায়, সেজন্য তৎপরতা চালাচ্ছে জাতিসংঘ। বিজ্ঞানীদের ধারণা মধ্য ইউরোপের গাছগুলো চরম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকেই নিজেদের রক্ষা করতে চাচ্ছে।

বার্সেলোনার রাজনীতি, রাজনীতির বার্সেলোনা

 

ইউরোপের অন্যতম সেরা ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার খেলাগুলোতে দর্শকসারিতে প্রায়ই দেখা যায় একটা ব্যানার: “কাতালোনিয়া স্পেন না”। হ্যাঁ, স্পেন থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন একটা রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখছে কাতালোনিয়ার মানুষ। সত্যিই তেমনটা হয়ে গেলে ছোট আকারের একটা সশস্ত্র সামরিক বাহিনী গড়ার পরিকল্পনাও করছেন কাতালান রাজনীতিবিদরা। তবে কাতালোনিয়ার একটা নিরস্ত্র সেনাদল দীর্ঘদিন ধরে ছিল এবং এখনও আছে। আর তা হলো বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের সমর্থক। যারা প্রতি সপ্তাহান্তে ৯৯ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ন্যু ক্যাম্প স্টেডিয়ামকে সাজিয়ে দেন লাল-নীলের প্রতীকি সাজে। যেটা কাতালোনিয়ার জাতীয় পতাকাকে ইঙ্গিত করে। নতুন রাষ্ট্র হিসেবে কাতালোনিয়ার নাম সত্যিই যদি আসে, তাহলে বার্সেলোনা শহর হবে এই নতুন দেশের রাজধানী।

&MaxW=640&imageVersion=default&AR-150929622

আগামী রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে কাতালোনিয়া প্রদেশের পার্লামেন্ট নির্বাচন। ভোটাভুটিতে স্বাধীন কাতালোনিয়ার পক্ষের শক্তি জিতে গেলে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের কর্মকাণ্ড শুরু করা হবে বলে জানানো হয়েছে স্বাধীনতাকে ‘হ্যাঁ’ বলা জোটের নেতারা। কাতালোনিয়া যদি স্বাধীন হয়ে যায় তাহলে বার্সেলোনা আর স্প্যানিশ লিগে খেলতে পারবে না বলে জানিয়েছেন লা লিগার প্রেসিডেন্ট।

আন্তর্জাতিকভাবে যেভাবেই দেখানো হোক না কেন, বার্সা দীর্ঘদিন ধরেই বহন করছে কাতালান জাতীয়তাবাদের পতাকা। ন্যু ক্যাম্পে বার্সেলোনার খেলাগুলোতে দর্শকসারিতে দেখা যায় কাতালোনিয়ার পতাকার মতো লাল-নীলের আধিক্য। বার্সার প্রধান তারকা লিওনেল মেসির চেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় স্বাধীনতার ধ্বনি। সর্বশেষ স্প্যানিশ কাপ ফাইনালে ন্যু ক্যাম্পে স্পেনের জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর সময় দুয়োধ্বনি দিয়েছিলেন বার্সার সমর্থকেরা। এজন্য ৭৪ হাজার ডলার জরিমানা করা হয়েছিল বার্সাকে। ন্যু ক্যাম্প স্টেডিয়ামের এক পার্শ্বে পাকাপাকিভাবে একটা ব্যানার লাগানো থাকে। যেখানে লেখা আছে: “কাতালোনিয়া স্পেন না”।

catalonia

স্প্যানিশ লেখক মানুয়েল ভাজকেজ মোনতালবান বার্সাকে বর্ণনা করেছেন একটা ‘প্রতিকী ও নিরস্ত্র কাতালান সেনাবাহিনী হিসেবে।’। বিশেষত ১৯৩৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত, জেনারেল ফ্রাঙ্কোর সামরিক শাসনের সময়। ফ্রাঙ্কো চরমভাবে অবদমিত করে রেখেছিলেন কাতালান জাতীয়তা, ভাষা-সংস্কৃতির চর্চাকে। ইতিহাসবিদ চার্লেস সান্তানা বলেছেন, ‘বার্সেলোনা ক্লাব ছিল কাতালানদের স্বাধীনতার ঘাঁটি। এখানে এসে মানুষ নির্ভয়ে কাতালান ভাষায় কথা বলতে পারত। এমনকি গানও গেতে পারত।’ ১৯১৮ সালে কাতালোনিয়াকে স্ব-শাসনের ব্যবস্থা দেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছিল বার্সেলোনার পক্ষ থেকে। ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জোন লোপার্তা, বার্সেলোনার সভাপতি থাকার সময়ও স্বাধীন কাতালোনিয়ার পক্ষে সক্রিয় অবস্থায় দেখা গেছে ইউরোপের অন্যতম সফল ক্লাবটিকে। লোপার্তা খোলাখুলিভাবে স্বাধীন কাতালোনিয়ার সমর্থনে কথাবার্তা বলতেন। ২০১২ সালেও স্পেনের কেন্দ্রিয় সরকার দেশের প্রতিটি স্কুলে স্প্যানিশ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব তোলার পর কড়াভাবে এর সমালোচনা করেছিল বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব

তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা ভিন্ন অবস্থানে দেখা যাচ্ছে বার্সেলোনাকে। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের জন্য বার্সেলোনা কোনো পক্ষ নেবে না বলে জানিয়েছেন ক্লাব সভাপতি হোসেপ মারিয়া বার্তেমোউ। তিনি বলেছেন, ‘বার্সেলোনা এটা দেখিয়েছে যে তারা এই নির্বাচনী প্রচারণার বাইরে আছে। যা করার সেটা রাজনীতিবিদেরই করতে হবে। বার্সা নিরপেক্ষ থাকবে।’ বার্সার কিংবদন্তি ফুটবলার জাভিও মত দিয়েছেন ক্লাবকে রাজনীতির বাইরে রাখার পক্ষে। তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় বার্সাকে রাজনীতির সঙ্গে জড়ানো ঠিক হবে না। এই ক্লাবকেও না, ফুটবলকেও না। কিন্তু পরিস্থিতি ব্যাপারটাকে অনিবার্য করে তুলেছে।’

তবে বার্সার আরেক তারকা জেরার্ড পিকে বেশ জোরেসোরেই কথা বলছেন কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে। ১১ সেপ্টেম্বর কাতালোনিয়ার জাতীয় দিবসের র‍্যালিতে দেখা গেছে পিকেকে। সেসময় বার্সার এই ডিফেন্ডার বলেছিলেন, ‘এখানে খুবই বড় একটা আন্দোলন হচ্ছে। আর এটা সবার শোনা উচিৎ।’ সম্প্রতি স্পেনের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলার সময় পিকেকে দুয়োধ্বনিও শুনতে হয়েছে স্পেনেরই সমর্থকদের কাছ থেকে।

11setembre-14-pique

কাতালোনিয়া সত্যিই আলাদা হয়ে গেলে ইউরোপের ফুটবল অঙ্গনে বেশ বড় ধরণের তোলপাড় শুরু হবে। স্পেনের জাতীয় দলে খেলেন বেশ কয়েকজন বার্সেলোনার খেলোয়াড়। তারা তখন আর খেলতে পারবেন না স্পেনের হয়ে। বার্সেলোনাও যে তাহলে লা লিগায় অংশ নিতে পারবে না সেটাও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন স্প্যানিশ পেশাদার ফুটবল লিগের প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের তেবাস, ‘খেলার আইন খুব পরিস্কার: লা লিগায় স্পেনের ক্লাবগুলো ছাড়া অংশ নিতে পারবে শুধু আনডোরান ক্লাবগুলো। লা লিগা অনুষ্ঠিত হবে কাতালান ক্লাবগুলোকে বাদ দিয়েই।’ বার্সেলোনার সঙ্গে লা লিগার আরেক ক্লাব এসপানিওলেরও হবে একই দশা।

তাহলে কি সত্যিই আর দেখা যাবে না দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার ঐতিহ্যবাহী দ্বৈরথ? ফুটবল বিশ্ব কী বঞ্চিত হবে ‘এল ক্লাসিকো’র রোমাঞ্চ থেকে? উত্তরের জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে বার্সেলোনার রাজনীতির দিকে।

কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা, ইউরোপের মাথাব্যাথা

ইউরোপের ফুটবল অঙ্গনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় লড়াই, স্পেনের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার দ্বৈরথ। বিশ্ব ফুটবলে যা পরিচিত ‘এল ক্লাসিকো’ নামে। ইউরোপের সবচেয়ে সফল দুইটি ক্লাবও রিয়াল-বার্সা। ফলে ফুটবলের কারণে পুরো বছরজুড়েই বিশ্বের অনেক মানুষের নজর থাকে স্পেনের দিকে। এবার বিশ্বের দৃষ্টি স্পেনের দিকে পড়তে পারে রাজনৈতিক কারণেও। এখানেও একে-অপরের প্রবল প্রতিপক্ষ মাদ্রিদ (স্পেন) ও বার্সেলোনা (কাতালোনিয়া)।

Screen-Shot-2015-03-31-at-16.40.53

সম্প্রতি দীর্ঘদিন ধরে জারি থাকা স্বাধীনতার দাবিতে আবার মুখরিত হয়েছে কাতালোনিয়ার রাজপথ। ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কাতালোনিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচন। আর এই ভোটাভুটিকে দেখা হচ্ছে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ নির্ধারণী নির্বাচন হিসেবে। পার্লামেন্ট নির্বাচনে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষ জয়ী হলে জোরতালে শুরু হবে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কর্মকাণ্ড। বার্সেলোনা হবে সেই নতুন দেশের রাজধানী।

অন্যদিকে সমূহ বিপদের আশঙ্কায় কাতালানদের এই দাবি মেনে নিতে নারাজ স্প্যানিশ সরকার। কাতালোনিয়া স্বাধীন হয়ে গেলে খুবই ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে আগে থেকেই টালমাটাল অবস্থার মধ্যে থাকা স্প্যানিশ অর্থনীতি। খুব কাছেই সতর্কবার্তা হয়ে ঝুলে আছে গ্রীস ট্রাজেডি। গ্রীসের মতো ঋণগ্রস্থ স্পেনও আছে দেউলিয়া ঘোষণা হবার আশঙ্কায়। স্পেনের পাশাপাশি ইউরোপের মোড়লরাও হয়তো চাইবেন না কাতালোনিয়ার আলাদা হয়ে যাওয়া। কারণ তাহলে নতুন করে আরেকটি বড় সংকটের মধ্যে পড়তে হবে ইউরোপের নীতিনির্ধারকদের। এমনিতেই গ্রীস ও সাম্প্রতিক অভিবাসী পরিস্থিতি বেশ জর্জরিত করে রেখেছে তাদের। কিন্তু কাতালানরাও নাছোড়বান্দা। বহু দিনের লালিত স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে এবার বাস্তবে রূপ দিতে বদ্ধপরিকর কাতালোনিয়ার মুক্তিকামী মানুষ।

catalonia-map

১১৬৪ সাল পর্যন্ত খুবই শক্তিশালী একটা স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল কাতালোনিয়া। তারপর এটি যুক্ত হয় অ্যারাগনের সঙ্গে। আর ১৪৬৯ সালে অ্যারাগনের রাজা ফার্দিনান্দ ও স্পেনের রানী ইসাবেলার বিবাহবন্ধনের মধ্য দিয়ে স্পেনের সঙ্গে মিলন ঘটে অ্যারাগন ও কাতালোনিয়ার। তখন থেকেই ধীরে ধীরে স্পেনের কেন্দ্রীয় শাসনের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে থাকে কাতালানরা। ১৭১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করে দেওয়া হয় কাতালান রাষ্ট্র। তারপর থেকেই নিজেদের স্বকীয় সংস্কৃতি-ঐতিহ্য-ভাষা চর্চার স্বাধীনতা হারাতে হয়েছে বলে অভিযোগ কাতালোনিয়ার মানুষদের। যে নিপীড়ণের চরম রূপ দেখা গেছে জেনারেল ফ্রাঙ্কোর সামরিক শাসনের (১৯৩৯-১৯৭৫) সময়। ১৯৭০-এর দশকের শেষে স্পেনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর কাতালোনিয়াকে দেওয়া হয় স্পেনের ১৭টি স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা। তবে ভেতরে ভেতরে স্বাধীনতার সুপ্ত বাসনাটাও সবসময় লালন করে গেছে কাতালানরা। সেই দাবি আরও জোড়ালো হয়েছে ২০০৭-০৮ সালের অর্থনৈতিক ধ্বসের পর। নানাবিধ কৃচ্ছতানীতি যারপরনাই অসন্তোষ তৈরি করেছে কাতালোনিয়ায়। ২০১০ সালে কাতালানরা স্প্যানিশ সরকারকে কর দিয়েছে ৬১.৮৭ বিলিয়ন ইউরো। আর তাদের কাছে এসেছে ৪৫.৩৩ বিলিয়ন। কেন্দ্রীয় স্প্যানিশ সরকারের হাতে বিপুল পরিমাণ টাকা চলে না গেলে আরও উন্নয়ন করা যেত বলে কড়া মন্তব্য করেছিল কাতালোনিয়া সরকার।

গত বছরের নভেম্বরে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল একটি অনানুষ্ঠানিক গণভোট। মাদ্রিদে স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার অনেক চেষ্টা করেছিল সেটা রুখে দিতে। কিন্তু শেষপর্যন্ত সফল হয়নি। ২.২ মিলিয়ন ভোটারের ভোটে বিপুলভাবে জয়ী হয়েছিল স্বাধীনতার দাবি। ৮০.৭ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছিলেন কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে।

এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে অনেকখানি আনুষ্ঠানিক রূপ পেতে যাচ্ছে সেই স্বাধীনতার দাবি। কাতালোনিয়ান পার্লামেন্টের ১৩৫টি আসনের মধ্যে ৬৮টি আসনে জয়লাভ করলেই স্পেন থেকে পৃথক হওয়ার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে দেবে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিরা। ইতিমধ্যে তারা গঠন করেছে ‘জান্টস পেল সি’ বা ‘টুগেদার ফর ইয়েস’ নামের একটি জোট। যেখানে আছে কাতালোনিয়ার বর্তমান ও সাবেক তিন তিন প্রধানমন্ত্রীর পার্টি। এই জোট থেকে নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন বার্সেলোনার সাবেক কোচ পেপ গার্দিওলাও। এই জোটের সঙ্গে আলাদাভাবে কাজ করবে বামপন্থী দল সিইউপি। আর স্বাধীনতার বিপক্ষে লড়বে স্পেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মারিনো রাহোর পার্টি পার্তিদো পপুলার (পিপি) ও কাতালোনিয়ার সোশ্যালিস্ট পার্টি (পিএসসি)।

২৭ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হলে দ্রুতই স্বাধীন হওয়ার কাজ শুরু করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ‘টুগেদার ফর ইয়েস’ জোটের প্রার্থী রাউল রোমেভা। এল পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমরা স্বাধীনতার ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। আর সবাইকে এটা বুঝতে হবে যে আমরা সত্যিই এই প্রক্রিয়া শুরু করব। আমরা সম্ভাব্য সকল উপায়ে এটা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা (স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার) এটা আমাদের করতে দেয়নি। ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বরের গণভোটের পর আমরা যেটা করতে পারিনি সেটা করার সময় এবার এসে গেছে।’ নিজেদের স্বাধীন সব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন কাতালোনিয়ার প্রেসিডেন্ট আর্থার মাস। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, কর কর্তৃপক্ষ, কূটনৈতিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ছোট আকারের একটা সেনাবাহিনীও গড়ে তোলার কথা ভাবছেন মাস।

গত ১১ সেপ্টেম্বর কাতালোনিয়ার জাতীয় দিবসে বার্সেলোনার রাজপথ আবার মুখরিত হয়েছিল স্বাধীনতার দাবিতে। প্রায় ১.৪ মিলিয়ন মানুষ কাতালোনিয়ার পতাকা নিয়ে বর্ণিল র‍্যালি করেছিলেন বার্সেলোনার রাজপথে। তরুণ-তরুণীরা নেচে-গেয়ে উদযাপন করেছিলেন কাতালানদের স্বকীয় ঐতিহ্য-সংস্কৃতি। স্বাধীনতার দাবিতে গলা চড়িয়েছেন অনেক প্রবীনও। ফ্রাঙ্কোর একনায়ক শাসনামলে স্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে দীর্ঘদিন জেল খাটতে হয়েছিল ৯১ বছর বয়সী জোয়াকিম ব্যাটলকে। এখন তিনি হাঁটেন ক্রাচে ভর দিয়ে। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্রও কমেনি তাঁর স্বাধীনতার স্পৃহা। ব্যাটল বলেছেন, ‘আমি প্রবল আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার দিকে। আমরা এজন্য অনেক শতক ধরে অপেক্ষা করছি। আর আমার বিশ্বাস এখন সেই সময় চলে এসেছে।’

Demonstrators wave "Esteladas" (pro-independence Catalan flag) during celebrations of Catalonia's National Day (Diada) which recalls the final defeat of local troops by Spanish king Philip V's forces in 1714, in Barcelona on September 11, 2015. Hundreds of thousands of Catalans were set to pour into the streets today demanding independence, ahead of a regional election billed as an indirect vote on breaking away from Spain. AFP PHOTO/ GERARD JULIEN

২৭ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের পর স্পেন যদি সত্যিই স্বাধীনতার পথে হাঁটা শুরু করে তাহলে আবার বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে স্প্যানিশ অর্থনীতি। কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থমন্ত্রী লুইস ডি গুইনডোস অবশ্য সবাইকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন যে, এমন কিছু হওয়া কখনোই সম্ভব না। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা এতে আস্থা পাবেন কিনা, শেয়ারবাজারে অস্থিরতা শুরু হবে কিনা, সেটা নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা তখন শুধু স্পেনের সমস্যা হয়ে থাকবে না। পুরো ইউরোপকেই আবার পড়তে হবে নতুন টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে।

কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা নতুন করে ভাবাবে ইউরোপিয়ান ফুটবল অঙ্গনকেও। কাতালোনিয়া স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে গেলে বার্সেলোনা-ভ্যালেন্সিয়ার মতো দলগুলো স্প্যানিশ লিগে খেলবে কিনা, বার্সেলোনা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগে অংশ নিতে পারবে কিনা- ইত্যাদি প্রশ্ন ঝুলে আছে ইউরোপের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে।

প্রাসঙ্গিক: 

রাজনীতিতেও চলছে বার্সা-রিয়াল লড়াই

স্বাধীন কাতালোনিয়ার দাবি বার্সেলোনারও

এল ক্লাসিকো কি শুধুই ফুটবলীয় লড়াই?

যখন বার্সার ওপর ছিল মাদ্রিদের রাজত্ব

 

ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনে অন্যরকম ধানমণ্ডি

সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার ঢাকার সড়কগুলোতে থাকে সীমাহীন ব্যস্ততা। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন সেই পরিচিত সড়কে তৈরি করেছে ভিন্ন রকম পরিস্থিতি। অবরোধের ফলে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে ধানমণ্ডি-কলাবাগান সংলগ্ন প্রধান সড়কগুলোতে। আজ রোববার সকাল থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ, কলাবাগান থেকে আসাদ গেট, ধানমণ্ডির ২৭ নম্বর সড়ক, পান্থপথ মোড় ও সাত মসজিদ রোডের কিছু অংশে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি জানাচ্ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের।

18

অন্য দিন যেখানে এই সড়কগুলোতে দেখা যায় ব্যক্তিগত গাড়ি, গণপরিবহনের দ্রুত চলাচল, সেখানে আজ রাজপথ মুখরিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের বিক্ষুব্ধ স্লোগানে। ‘শিক্ষা কোনো পণ্য না, শিক্ষা আমার অধিকার’, ‘শিক্ষা কি পণ্য, ভ্যাট কি জন্য’, ‘ভ্যাট দেব না, গুলি কর’ ইত্যাদি স্লোগান মুহুর্মুহু শোনা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মুখে। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এই অবরোধ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

সড়ক অবরোধের ফলে ধানমণ্ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, কলাবাগানের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেও তৈরি হয়েছে যানজট। এ ছাড়া সায়েন্স ল্যাব থেকে ধানমণ্ডিগামী প্রধান সড়ক ও খামাড়বাড়ী মোড় থেকে মিরপুরগামী প্রধান সড়কেও ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কোনো যানবাহন না পাওয়ায় অনেকেই হেঁটে রওনা দিচ্ছেন গন্তব্যের দিকে। তবে ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, স্কুল-কলেজগামী বাস-ভ্যান, হজযাত্রীদের গাড়ি অবরোধের আওতামুক্ত রেখেছেন আন্দোলনকারীরা।

সড়ক অবরোধের ফলে সাধারণ মানুষকে ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে, এটা জেনেও কেন এমন কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হলো জানতে চাইলে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, ‘আমরা এই ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব শোনার পর নানাভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছি। স্মারকলিপি দিয়েছি। শেষপর্যন্ত ১০ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণের জায়গা থেকে সরে এলেও সরকার এখন ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করেছে। সরকার আমাদের শান্তিপূর্ণ আহ্বানে সাড়া দেয়নি। ফলে বাধ্য হয়েই আমরা রাজপথ অবরোধ করেছি।’

অবরোধ করে রাখা সড়কের বিভিন্ন অংশে বিক্ষিপ্তভাবে সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। কোথাও কোথাও দেখা গেছে খণ্ড খণ্ড মিছিল। বড় আকারের জমায়েত লক্ষ করা গেছে ধানমণ্ডি-২৭ নম্বর সড়কের দুই প্রান্তে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি ও স্টেট ইউনিভার্সিটির সামনে।

এ ছাড়া আসাদ গেট ও পান্থপথ মোড়েও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ জানাচ্ছেন। সামনে যে কোনো গাড়ি পড়লেই তারা সেখানে লিখে দিচ্ছেন, ‘No Vat’। কয়েক জায়গায় দেখা গেছে রিকশায় মাইক নিয়ে আন্দোলনকারী সহযোদ্ধাদের সতর্ক করছেন কেউ কেউ। বহিরাগত কেউ যেন আন্দোলনে ঢুকে পড়ে কোনো নাশকতা করতে না পারে সে জন্য সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানাচ্ছেন।

বিকেল ৫টা পর্যন্ত ধানমণ্ডি এলাকায় কোনো নাশকতা বা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটেনি। আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্য দেখা গেলেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাদের কোনো সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেনি।

সড়ক অবরোধ সোমবারও অব্যাহত রাখে শিক্ষার্থীরা। এই দিনই প্রবল আন্দোলনের চাপে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য প্রত্যাহার  হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর আরোপিত ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট।

আন্দোলনকারীদের তৃষ্ণা মেটাল পুলিশ

Police Water

 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যেকোনো বিক্ষোভ বা আন্দোলনকারীদের মধ্যে সম্পর্কটা প্রায় সবসময়ই হয় সাপে-নেউলে। বারবার সংঘর্ষেও জড়াতে দেখা যায় দুই পক্ষকে। চলমান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনের প্রথম দিনও পুলিশের সঙ্গে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে আন্দোলনের পঞ্চম দিনে আজ রোববার হঠাৎ করেই চোখে পড়েছে ভিন্ন রকম দৃশ্য। ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়কের সামনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা খাবার পানির গাড়ি থেকে পানি পান করে তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন কড়া রোদের মধ্যে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ওপর আরোপিত ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে কঠোর আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। শুরু হয়েছে ক্লাস বর্জন ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি। ঢাকার বেশ কয়েকটি স্থানে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ধানমণ্ডি ২৭ নং সড়কের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, ইবাইস, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, ইউল্যাব ও ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। পাশেই সতর্ক অবস্থানে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। মূলত তাঁদের জন্যই আনা হয়েছিল একটি খাবার পানির গাড়ি।

কিন্তু কড়া রোদের মধ্যে নিজেদের তেষ্টা মেটাতে শিক্ষার্থীরাও ভাগ বসিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পানির গাড়িতে। পুলিশ সদস্যরাও কোনো আপত্তি জানাননি। স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জামিল হোসেন পানি খাওয়ার পর পুলিশদের দিকে ইঙ্গিত করে মুচকি হেসে বললেন, ‘উনাদের জন্যই এটা আনা হয়েছে। কিন্তু আমরাও এখানে ভাগ বসিয়েছি। উনারা তো এখন পর্যন্ত কিছু বলেননি।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষও হয়েছে গত বুধবার। সে সময় পুলিশের গুলি ও টিয়ারশেলে আহত হন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। তবে পুলিশের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কও বজায় রাখতে চাইছেন আন্দোলনকারীরা। রাজধানীর কিছু জায়গায় পুলিশের হাতে ফুল তুলে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। হাসিমুখে সেলফিও তুলেছেন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে। আর এসব ছবি এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।

শিশুদের চলচ্চিত্রে শিশুরা কোথায়?

একটা সময় রুপালী পর্দায় শিশুরা, তাদেরই মতো দুষ্টু-সাহসী শিশুদের দেখে মজা পেত। কিন্তু এখনকার নির্মাতারা শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র বানাচ্ছেন শিশু চরিত্র বাদ দিয়েই। এমনকি কার্টুন-অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও। কেন এমনটা হচ্ছে, তা তথ্যসহ উপস্থাপন করেছেন কলিন হরগ্যান, নিজের ব্লগে। আর ব্লগের বরাত দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই বিশ্লেষণটি ছাপিয়েছে দ্য গার্ডিয়ানের অনলাইন সংস্করণ।

CLf1nUkXAAAuKFO

বিশালাকৃতির এক মিনিয়ন-বেলুন আটকে দিয়েছিল আয়ারল্যান্ডের মহাসড়কের যান চলাচল। সেটা কিন্তু একা একা ঐ সড়কে যায়নি। প্রচারণার জন্য খরচের কথাটা ভাবুন একবার! শিশুদের চলচ্চিত্র বা যেসব চলচ্চিত্র শিশুকিশোরদের লক্ষ্য করে নির্মিত হয়েছে, সেহুলো কখনোই এত বড় আকারে, প্রচুর অর্থ লগ্নি করে বানানো হয়নি। তারপরও অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রগুলো ভালোই দাপট দেখাচ্ছে বক্স অফিসে। ইউনিভার্সাল ও প্যারেন্টাল গাইডেন্স তকমা লাগানো সর্বকালের শীর্ষ ২০টি চলচ্চিত্রের দশটিই কিন্তু অ্যানিমেটেড ঘরানার। শীর্ষ দলের মধ্যে অ্যানিমেশন নিয়েছে ছয়টি স্থান। বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট (১৯৯৪) ছাড়া সব চলচ্চিত্রই প্রকাশ পেয়েছে এই শতাব্দী শুরুর পর।

সব ধরণের প্রাযুক্তিক উৎকর্ষ, ব্যবসা-বাণিজ্যের হিসেব ইত্যাদির বাইরে শিশুদের নিয়ে আধুনিক চলচ্চিত্রের অন্যতম লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, সেই চলচ্চিত্রগুলোতে খোদ শিশুদের উপস্থিতি খুবই কম। ১৯৮০ সাল থেকে শিশুদের জন্য যত চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলো দেখলে আমরা এই সত্যই দেখতে পাবো।

1

টেলিভিশনের জন্য নির্মিত, সরাসরি ডিভিডি আকারে প্রকাশিত ও অল্প কিছু বিদেশি চলচ্চিত্র বাদ দিয়ে আমরা পেয়েছি ৭৪৫টি চলচ্চিত্রের তালিকা। এটা নিশ্চিত যে শিশুদের জন্য নির্মিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা বেড়েছে। তালিকা অনুযায়ী দেখা যায়, ১৯৮০-এর দশকে নির্মিত হয়েছে ১০৬টি চলচ্চিত্র। ১৯৯০-এর দশকে ২২৪টি। নতুন শতাব্দীর প্রথম দশকে সংখ্যাটা আরও বেড়েছে- ২৬১টি। আর ২০১৫ সাল শেষ হতে হতে সংখ্যাটা ৩০০ ছাড়িয়ে যাবে। গত পাঁচ বছরে নির্মিত হয়েছে ১৫৪টি শিশুদের চলচ্চিত্র।

কিন্তু এত এত চলচ্চিত্রের মধ্যে শিশুরা কোথায়? প্রতি দশকে শিশুদের জন্য নির্মিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা বেড়ে চললেও একই ঘটনা যে চলচ্চিত্রে শিশুর উপস্থিতির ক্ষেত্রে ঘটেছে তা বলা যায় না। শিশুদের খুব বেশি দেখা যায়নি চলচ্চিত্রের মূল কোনো চরিত্রে। বা যেখানে শিশুরাই চলচ্চিত্রের ধারাবর্ণনা করছে। সাল ধরে ধরে জিনিসটা এভাবে হয়েছে:

2

চলচ্চিত্রের মূল চরিত্র থেকে শিশুর হারিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে, শিশুদের নিয়ে লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্রের সংখ্যা কমে যাওয়া। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝিতে (হয়ত এটাই শিশু চলচ্চিত্রের স্বর্ণালী সময়, যখন শিশুদের লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্র অনেক বেশি পরিমাণে বানানো হতো, তখন সেখানে শিশুদেরই প্রধান চরিত্র হিসেবে দেখা যেতো।

পরে লাইভ-অ্যাকশন শিশু চলচ্চিত্রে শিশুদেরকেই মূল চরিত্র হিসেবে দেখতে না পাওয়ার বিষয়টি আরও সংশয়পূর্ণ হয়ে ওঠে আরও দুইটা জিনিস বিবেচনা করলে। লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্র বানাতে খরচ কম হয় (টয় স্টোরি ৩ বানাতে খরচ হয়েছে ২০০মিলিয়ন ডলার। যেখানে হোম অ্যালোন বানাতে লেগেছে মাত্র ১৮ মিলিয়ন ডলার)। আর শিশু অভিনেতারা শুধু সর্বত্রই আছে এমন না, বরং তারা আগের চেয়ে আরও ভালো করছে।

3

কিন্তু এটা দিয়ে কী বোঝা যায়? শিশুরা চলচ্চিত্রে একটা সত্যিকারের শিশুকে দেখছে নাকি অ্যানিমেশন চরিত্র; তা কি কোনো পার্থক্য গড়ে দেয়? চলচ্চিত্রের পর্দায় শিশুরা অন্য শিশুদের কতখানি দেখতে চায়? চলচ্চিত্রের বার্তা বা নৈতিকতার শিক্ষা কী দুই আঙ্গিকেকই নেওয়া যায়?

এই প্রশ্নগুলো নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি বলেই প্রতিয়মান হয়। কিন্তু এটা ভেবে আমাদের মনে তো প্রশ্ন আসতেই পারে যে, চলচ্চিত্রের পর্দায় অ্যানিমেশন চরিত্র দেখতে দেখতে শিশুরা কি অন্য কোনো বাস্তব শিশুর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে অনিচ্ছুক হয়ে পড়বে?

১৯৮৫ সালের চলচ্চিত্র ‘দ্য গুনিজ’-এর মতো চলচ্চিত্রগুলো কমে যাচ্ছে কেন, এমন আলোচনা করতে গিয়ে একজন লিখেছেন, ‘গুনিজের মতো চলচ্চিত্র… এখন আর সম্ভব না। কারণ এ ধরনের চলচ্চিত্র নির্মানের জন্য শিশুদের জগতে অনুসন্ধান চালাতে হয়। যা বড়দের দুনিয়া থেকে অনেকটাই আলাদা। আর শিশুদের সেরকম জগতের এখন আর অস্তিত্বই নাই।’ তারা উপসংহারে এসেছিলেন যে, গুনিজের মতো চলচ্চিত্র শুধু স্বাধীনতাকেই উৎসাহিত করে না বরং স্বাধীন চিন্তাভাবনারও বিকাশ ঘটায়।

goonies

কিন্তু, এখনকার সময়ে শিশুদের জগতে অনুসন্ধান চালানোর ব্যাপার খুব বেশি ঘটে না। শিশুদের এমন একটা জগত আছে, যেটা বড়দের থেকে আলাদা। আর সেই জগত উপলব্ধি করার জায়গাও আছে। পার্থক্যটা হচ্ছে এই যে, আমরা সেই পার্থক্যটা এখন খুঁজতে যাই ফোন বা ট্যাব দিয়ে। যে কল্পিত জায়গায় কল্পনার কোনো স্থান আদৌ নেই। চলচ্চিত্র যেখানে একসময় শিশুদের চিন্তাভাবনার জগতে ঢুকতে চাইত, এখন সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে অবাস্তব কম্পিউটার স্টিমুলেশন। যেখানে শিশুদের উপস্থিতি খুব কমই দেখা যায়।

এখন সান্তনা এটাই যে, এসব চলচ্চিত্র বানিয়ে তাদের বিপণন বিভাগ অন্তত বড় বড় বেলুন বিক্রি করতে পারছে!

রুদ্র, হাতে মিলিয়ে যাওয়া হাওয়াই মিঠাই

ছোটবেলায় প্রথমবারের মতো বাজার থেকে হাওয়াই মিঠাই কিনেছিল এক দুরন্ত বালক। শৈশবের অপার বিস্ময় আর আনন্দ নিয়ে উপভোগ করতে চেয়েছিল রঙিন-সুদৃশ্য বস্তুটিকে। খুশিতে দৌড়েছিল অনেকটা পথ। তার পর বাড়িতে এসে যখন মুঠো খুলল তখন দেখল, সে মিঠাই হাওয়াতেই মিলিয়ে গেছে। হাতে শুধু কিছু রং লেগে আছে।

বালকটিকে আমরা চিনি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ নামে। দুনিয়ার দাবি না মিটিয়ে অকালে চলে যাওয়া এই কবির আজ মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯১ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে অন্যলোকে পাড়ি জমিয়েছিলেন সদা বিদ্রোহী এই কবি।

rudro

মৃত্যুর মাত্র একদিন আগে হাওয়াই মিঠাইয়ের গল্পটা রুদ্র নিজেই শুনিয়েছিলেন তাঁর বড় আপাকে। আক্ষেপ করেছিলেন। প্রায় পুরো জীবন ধরে করে আসা প্রচুর অনিয়ম, শরীরের প্রতি যত্ন না নেওয়ার জন্য দুষেছিলেন নিজেকে। পণ করেছিলেন নিয়মবদ্ধ হওয়ার। কিন্তু মৃত্যুর নির্মমতা থেকে রেহাই মেলেনি বাংলাদেশের ট্র্যাজিক এই বিপ্লবী কবির।

ছোটবেলায় যে বাজার থেকে হাওয়াই মিঠাই কিনে নিতে চেয়েছিলেন অপার আনন্দের স্বাদ, মংলার সেই মিঠেখালি বাজারের পাশে নিজ পৈতৃক বাড়িতে রুদ্র কাটিয়েছিলেন জীবনের শেষ কয়েকটি বছর। অনেক কিছু নতুন করে গড়তে চেয়েছিলেন। দিনবদলের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন নতুন করে। ‘ভালো আছি ভালো থেকো’র মতো জনপ্রিয় কিছু গান ও অনেক কবিতা রচেছিলেন শেষ জীবনের দিনগুলোতে। সম্প্রতি রুদ্রর মংলার বাড়িতে বসে সেসব গল্প তাঁর সর্বকনিষ্ঠ ভাই সুমেল সারাফাতের কাছ থেকে শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল লেখকের। সেই বিবরণের ওপর ভিত্তি করেই লেখা হয়েছে রুদ্রর শেষ জীবনের আখ্যানগুলো।

মংলার মিঠেখালিতে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর পৈত্রিক দোতালা বাড়ি

মংলার মিঠেখালিতে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর পৈত্রিক দোতালা বাড়ি। ছবি: সাদ্দাম হোসেন

সোনালী খামার

নন্দিত-নিন্দিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর ১৯৮৭ সালের শেষের দিকে অবসাদগ্রস্ত রুদ্র চলে আসেন মংলায়। এসে দেখেন ‘উপদ্রুত উপকূলে’র মানুষরা দিন কাটাচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। নিজের জমি থেকেও নেই। নামমাত্র কিছু টাকা দিয়ে বা না দিয়ে সেই জমি গায়ের জোরে দখল করে রেখেছে ক্ষমতাশালীরা। স্বভাবজাত রুদ্র স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবাদ করলেন এবং জমির ওপর কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চালালেন।

দুই বছর অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর ১৯৮৯ সালের দিকে এসে রুদ্র দেখতে পান সফলতার মুখ। কৃষকদের নিয়ে গড়ে তোলেন একটি সমবায় সমিতি। যেখানে কৃষকরা যুক্ত থাকবেন শেয়ারের ভিত্তিতে। আগে যেখানে নিজের জমির ওপর কোনো অধিকারই ছিল না, সেখানে কৃষক এখন নিজের জমির পরিমাণে লভ্যাংশ পাওয়ার কথা চিন্তা করতে পারছে। রুদ্র তাঁর সহজাত কবি ভাব থেকে এই প্রয়াসের নাম দিয়েছিলেন ‘সোনালী খামার’।

মংলা ফিরে এসে রুদ্র শুরু করেছিলেন ঠিকাদারি দিয়ে। চূড়ান্ত সৎ থাকার লোকসান গুনতে হয়। পরে ঘুষ না দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টাকা তুলতেও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। এমনকি একপর্যায়ে সরকারি এক কর্মকর্তাকে মারধরও করেছিলেন রুদ্র। ঠিকাদারির এসব ঠ্যাকা সামলাতে সামলাতেই অবশ্য চালিয়ে যাচ্ছিলেন ‘সোনালী খামারের’ কাজ। সে সময় তিনি একটা গান লিখেছিলেন, ‘ঘেরে ঘেরে ঘেরাও হলো চারিদিক/ঘেরের ঘোড়া চলছে ছুটে দিগ্বিদিক’।

অন্তর বাজাও

রুদ্রর গানের কথা আসলে অবধারিতভাবে চলে আসে ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ গানটির কথা। ‘আমার ভেতর-বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে’। এই অন্তর ছিল রুদ্রর গানের কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর কথা ছিল গান হবে অন্তর বাজিয়ে। তিনি একটা গানও লিখেছিলেন, ‘ঢোলক বাজাও দোতারা বাজাও, সুর মিলছে না/অন্তর বাজাও নইলে তাল মিলবে না’। আর তাঁর গানের দলের নাম ছিল ‘অন্তর বাজাও’।

মংলায় এসেই রুদ্র লিখেছিলেন ও সুর করেছিলেন তাঁর গানগুলো। ১৯৯৬ সালের দিকে গানগুলো নিয়ে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন রুদ্রর ছোটভাই সুমেল সারাফাত।

Rudra album

বাংলার আবহমান চিরায়ত সংস্কৃতির হারিয়ে যেতে বসা জিনিসগুলো আবার ফিরিয়ে আনার প্রয়াস দেখিয়েছিলেন রুদ্র। প্রায়ই আয়োজন করতেন জারিগান, কবিগানের। প্রতি সপ্তাহে বাড়ির পাশের নদীতে বসত নৌকাবাইচের আসর। আমুদে রুদ্র প্রায় সব সময়ই হইহুল্লোড় করে মেতে থাকতেন কিছু না কিছু নিয়ে। আবার রাতে একলা হওয়ার পর লিখে যেতেন একের পর এক কবিতা। মৃত্যুর আগ দিয়ে প্রায় তিনটি পাণ্ডুলিপি তিনি একেবারে প্রস্তুত করে গিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় কবিতার বই ‘এক গ্লাস অন্ধকার’, ‘অন্তরঙ্গ নির্বাসন’ ও নাট্যকাব্য ‘বিষ বিরিক্ষের বীজ’। মিঠেখালিতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন ‘অগ্রদূত ক্রীড়াচক্র’।

কিন্তু প্রতিভাবান ও উদ্যমী এই মানুষটা নিজের প্রতি খেয়াল খুব কমই রেখেছেন। ১৯৯১ সালের জুন মাসে আলসারের প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন রুদ্র। ভর্তি হন হাসপাতালে। কয়েক দিন সেখানে থেকে সুস্থও হয়ে গিয়েছিলেন প্রায়। বাড়িতেও ফিরে এসেছিলেন ২০ জুন। পরিবারের সবার সঙ্গে কাটিয়েছিলেন অনেক স্মৃতিকাতর সময়। কিন্তু সেই কলতান ছিল ক্ষণস্থায়ী। ২১ জুন সকাল ৭টায় হঠাৎ স্ট্রোক করে রুদ্র চলে যান না-ফেরার দেশে।

শেষ সময়টাতে রুদ্র নিজেই তাঁর বড় আপাকে শুনিয়েছিলেন হাতে মিলিয়ে যাওয়া হাওয়াই মিঠাইয়ের গল্পটি। রুদ্রর জীবনটাও কি সেই হাওয়াই মিঠাইয়ের মতোই নয়? তাঁর কিছু রং লেগে আছে আমাদের মাঝে। কিন্তু আমরা হাওয়াতেই হারিয়ে ফেলেছি মিঠাইটা।

ভানুসিংহ অনুপ্রাণিত ‘রাই-কৃষ্ণ পদাবলি’

 

কৈশোর ও প্রথম যৌবনের রবীন্দ্রনাথ; নোবেলজয়ী বিশ্বকবি হওয়ার প্রথম স্মারক রেখেছিলেন ‌’ভানুসিংহ’ ছদ্মনাম ধারণ করে। রাধা-কৃষ্ণের লীলা নিয়ে মধ্যযুগের কবিদের রচিত বৈষ্ণব পদাবলির অনুকরণে রচেছিলেন ভানুসিংহের পদাবলি। রবীন্দ্রনাথের কবি-জীবনের প্রথমার্ধে রচিত ব্রজবুলি ভাষার এই কবিতাগুলর অনুপ্রেরণাতেই তাঁর জয়ন্তীতে আয়োজিত হলো ‘রাই কৃষ্ণ পদাবলি’। শিল্পকলা একাডেমিতে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি আয়োজিত এই গীতিনাট্যের রচনাকার কবি শেখ হাফিজুর রহমান। সামগ্রিক ভাবনা ও পরিচালনা করেছেন সুকল্যাণ ভট্টাচার্য।

Rai Krishna

গীতিনাট্যটি রচিত হয়েছে সেই প্রেক্ষাপটে যখন বৃন্দাবনে ঘনিয়েছে বিরহের ছায়া। নিকট হয়েছে কৃষ্ণের মথুরা গমনের কাল। রাধা সহসা পায় না কৃষ্ণ-দর্শন। সুহৃদ সুবল, বৃন্দাবনের গোপীরাও পায় না কালার হদিস। কৃষ্ণ বিরহে রাধার আকুলতার মধ্যেই বেজে ওঠে মথুরার নতুন রাজা হতে চলা ‘মাধবের’ রথ-ধ্বনি। এদিকে শেষবারের মতো মথুরায় চলে যাওয়ার আগে কৃষ্ণও ব্যাকুল হন রাধা-মিলনের জন্য। কিন্তু অভিমানিনী রাধার মানও সহজে ভাঙার নয়। অতঃপর রূপের প্রশংসায়, মায়ার আস্তরণে, সখা-সখীদের দিয়ে রাস আয়োজন করে রাইয়ের মানভঞ্জন করেন কৃষ্ণ। অপার স্বর্গীয় শুদ্ধতা, শ্রদ্ধা ও প্রেম-মগ্নতায় রাধা নিজেকে সমর্পণ করেন কৃষ্ণের কাছে। নেচে-গেয়ে ব্যক্ত করেন মিলনের আনন্দের কথা। পরস্পরের সাথে পূনর্মিলনের আকাঙ্ক্ষার কথা। নৃত্যরত অবস্থায় রাধা-কৃষ্ণের স্বর্ণালি ও কৃষ্ণ বর্ণ যেন একীভূত হয়ে যাচ্ছিল আদি-অন্তহীন যুগল মূর্তির মতো। তাঁরা যেন ঘটাচ্ছিলেন পরম পবিত্র ও মৃত্যুহীন প্রেমের অনিন্দ্য প্রকাশ।

রাধা-কৃষ্ণের বিরহ ও মিলনকেন্দ্রিক এই পালায় সরব উপস্থিতি ছিল রবীন্দ্রনাথের। পরিবেশিত হয় ‘শ্যাম রে নিপট কঠিন মন তোর’, ‘বাদরবরখন নীরদগরজন’সহ ভানুসিংহ পদাবলির কয়েকটি গান। সঙ্গীত তত্ত্বাবধানে ছিলেন হৈমন্তী শুক্লা। পরিচালনা করেছেন রত্না চৌধুরি। কণ্ঠ দিয়েছেন হৈমন্তী শুক্লা, রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যা, মনমন ভট্টাচার্য প্রমুখ। গীতিনাট্যের ধারা বর্ণণা করেছেন উপমহাদেশের দুই প্রখ্যাত আবৃত্তিকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়। নৃত্যাংশে রাই ও কৃষ্ণের ভূমিকায় ছিলেন বাংলাদেশের নন্দিত দুই নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা ও শিবলী মোহাম্মদ।

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি আয়োজিত এই মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রাই-কৃষ্ণ পদাবলির আগে কাজী নজরুল ইসলামের অসাম্প্রদায়িক ভাবনার অনুপ্রেরণায় অনুষ্ঠিত হয় ‘চির উন্নত মম শির’ শিরোনামের নৃত্যানুষ্ঠান। পরিবেশনা করেন পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত থেকে আগত নৃত্যশিল্পী প্রসূন ব্যানার্জি এবং তাঁর দুই ছাত্রী সুমনা কান্দের ও স্নেহা দাস।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ সরণ। সভাপতিত্ব করেছেন বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সভাপতি ড. এ কে আজাদ চৌধুরী।

মক্কা যেন নতুন ‘লাস ভেগাস’

ইসলাম এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ক্রমেই বাড়ছে ইসলাম ধর্মের অনুসারী। যার শুরুটা হয়েছিল, ১৫০০ বছর আগে। সৌদি আরবের মক্কা নগরে। মহানবী হজরত মুহম্মদের (সাঃ) অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে মরুদেশের এই শহর ঘিরে। কিন্তু ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র এই শহর যেন ক্রমেই পরিণত হচ্ছে প্রমোদনগরে। পুরোনো সব ঐতিহাসিক স্থাপনায় বুলডোজার চালিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে আধুনিক শহর, হোটেল। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে বড় হোটেল নির্মানের পরিকল্পনা চলছে মক্কায়।

Abraj Kudai

২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার কথা বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই হোটেলটি। ৪৫ তলা উঁচু এই ভবনের ওপরে থাকবে চারটি হেলিপ্যাড। শয্যাকক্ষ থাকেব ১০ হাজারেরও বেশি। রেস্টুরেন্ট থাকবে ৭০টি। পাঁচটি তলা বিশেষভাবে থাকবে সৌদি রাজপরিবারের ব্যবহারের জন্য। ২.৪ বিলিয়ন ইউরো ব্যায়ে নির্মিত ‘আবরাজ কুদাই’য়ে থাকবে পাঁচ-তারা হোটেলের সব বিলাসব্যবস্থা। এ যেন শহরের মধ্যেই আরেক শহর!

মক্কার মানাফিয়া অঞ্চলের যে জায়গায় এই বিলাসবহুল হোটেলটি নির্মিত হচ্ছে তার মাত্র এক মাইল দক্ষিণেই অবস্থিত ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র ‘মসজিদ আল-হারাম’। আর এই ২০০০ ফুট উঁচু হোটেলটা গড়ে তোলা হয়েছে এমন এক জায়গায়, যেখানে একসময় ছিল একটা অটোমান আমলের দুর্গ। যে পাহাড়ের ওপর দুর্গটা বানানো হয়েছিল; সেই পাহাড়সহই দুর্গটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এই হোটেল নির্মানের জন্য।

শুধু এই অটোমান আমলের দুর্গই না। মহানবীর স্মৃতিবিজরিত অনেক স্থাপনাই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ‘আধুনিকিকরণের’ খাতিরে। হজরত মুহম্মদের (সাঃ) প্রথম স্ত্রী খাদিজার আদি বাড়ি ভেঙে বানানো হয়েছে একটি গণশৌচাগার। আবু বকরের বাড়ির ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে হিলটন হোটেল। আবু বকরের নাতির বাড়ি ভেঙ্গে বানানো হয়েছে রাজপ্রাসাদ।

ইসলামিক ইতিহাসে ঐতিহাসিক এসব স্থাপনার গুরুত্ব অনেক। কিন্তু সেগুলো ভেঙ্গে ফেলায় মক্কার ঐতিহাসিক চরিত্রটি নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামিক ঐতিহ্য গবেষণা ফাউন্ডেশনের প্রধান ইরফান আল-আওয়ালি। তিনি বলেছেন, ‘এখন আমরা মক্কার শেষ দিনগুলো দেখছি। এখানে আসা তীর্থযাত্রীদের খুবই সাধারণভাবে প্রার্থনা করার কথা। কিন্তু এখন তাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে প্রায় লাস ভেগাসের মতো। অনেক তীর্থযাত্রীরই সেই রকম জীবনযাপনের সামর্থ্য থাকে না।’ পুরোনো ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ভেঙে জাঁকজমকপূর্ণ নগর গড়ে তোলায় মক্কার ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যও নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ইরফান।

1

শুধু ধর্মীয় তীর্থযাত্রীরাই না, মক্কায় এখন অনেকেই আসছেন বিবাহ বা বড় কোনো কনফারেন্স আয়োজনের জন্য। পর্যটন থেকে বছরে প্রায় ৬ বিলিয়ন ইউরো আয় করে সৌদি আরব। আর ইসলাম ধর্মের জন্মভূমিকে আরও পর্যটনবান্ধব করে তোলার জন্য বানানো হচ্ছে আধুনিক বিলাসবহুল সব স্থাপনা। মক্কা নগরের পশ্চিম প্রান্তে বানানো হচ্ছে ২৬টি বিলাসবহুল হোটেলের একটা কমপ্লেক্স। যেখানে থাকবে প্রায় ৪০০ দোকান ও ৫০০ রেস্টুরেন্ট। সেখানে নির্মান করা হবে ছয়তলা একটি মসজিদ।

১৯৫০-এর দশকের মক্কার ছবি থেকে দেখা যায় খুবই সাধারণভাবে হজ পালন করতে আসছেন ইসলাম ধর্মানুসারীরা। কিন্তু এখন পবিত্র কাবাঘরকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল মসজিদ। যেজন্য ইতিমধ্যেই ভেঙে ফেলতে হয়েছে প্রাচীন অনেক স্থাপনা। ২০৪০ সাল নাগাদ সেটা আরও বড় করার পরিকল্পনা আছে সৌদি আরবের। এখন যেখানে ৩০ লক্ষ মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন; সেই জায়গায় সেটাকে ৭০ লক্ষ মানুষের উপসনালয়ে পরিণত করার চিন্তা করছে সৌদি কর্তপক্ষ। বহুতল এই মসজিদ এতটাই বড় হবে যে প্রান্তে দাঁড়ানো মানুষদের দিকভ্রষ্ট হওয়ারও সম্ভাবনা থাকবে বলে মত দিয়েছেন ইরফান। তিনি বলেছেন, ‘মসজিদটা হয়ে গেছে একটা বিমানবন্দরের টার্মিনালের মতো। মানুষ ভুল দিকে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছে। কারণ তারা জানেই না যে মূল মসজিদটা আসলে কোন দিকে।’

mecca2

আগামীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুমকি ছাত্রনেতাদের

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য। দোয়েল চত্বরে পুলিশের একটি ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে গেলেও হাইকোর্টের সামনে দ্বিতীয়বারের মতো ব্যারিকেডের মুখে পড়ে আর সামনে এগোতে পারেননি আন্দোলনকারীরা। সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর তারা ফিরে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে। সমাবেশে পাঁচদফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান নেতারা। দাবি না মানা হলে ভবিষ্যতে সব ব্যারিকেড ভেঙে দেওয়া ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারিও শোনা যায় সমাবেশ থেকে।

IMG_3065

বুধবার (২০ মে) দুপুর ১২টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জমায়েত হন প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যর নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে টিএসসি হয়ে দোয়েল চত্বরের সামনে গিয়ে পুলিশের প্রথম বাধার মুখে পড়েন তাঁরা। এসময় সেখানে রায়ট কার ও বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি ছিল।  নারী পুলিশ ছিলেন প্রথম সারিতে। বাধার মুখে পড়ে পুলিশের ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে এসময় তাদের কোনো বাধা দেননি পুলিশ সদস্যরা। তবে মিছিলটি আর বেশিদূর এগোতে পারেনি দ্বিতীয় দফায় ব্যারিকেডের মুখে পড়ে। হাইকোর্টের সামনে আবার ব্যারিকেডের মুখে পড়লেও সেটি আর অতিক্রম করতে যাননি আন্দোলনকারীরা। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে গিয়ে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক ও ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি এম এম পারভেজ লেলিন বলেন, ‘এই পুলিশ চাইছে আমরা তাদের ওপর হামলা করে এই আন্দোলনকে যেন নেতিবাচক দিকে নিয়ে যাই। আমরা এই আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাব। কিন্তু পুলিশের টোপে পা দেওয়া চলবে না।’

সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক বলেছেন, ‘এক মাস পার হয়ে গেলেও নিপীড়কদের গ্রেফতার করতে পারেনি আমাদের পুলিশবাহিনী। এই রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার বিরুদ্ধে আজকের ছাত্রসমাজ একটি প্রতিকী ব্যারিকেড ভেঙেছে। আগামী দিনে নিপীড়কদের গ্রেপ্তার করা না হলে তাহলে আমরা আমাদের ক্ষোভ শুধু প্রতিকী ব্যারিকেড ভাঙার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখব না।’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা করেন সমাবেশে বক্তব্য দেওয়া ছাত্রনেতারা।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি জনার্দন দত্ত নান্টু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী রিন্টু, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম সোহেল, ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক শান্তনু সুমন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ফয়সাল ফারুক অভি, ছাত্র ঐক্য ফোরামে আহ্বায়ক সরকার আল ইমরান, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সালমান রহমান, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক জাকি সুমন প্রমুখ।

এর আগে নববর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে যৌন হয়রানিকারীদের শাস্তির দাবিতে ১১ মে ছাত্র ইউনিয়নের ডাকা কর্মসূচিতে হামলা করে পুলিশ। ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা কাকরাইল-মগবাজার সড়কের সার্কিট হাউস মসজিদের সামনে অবস্থান নিলে পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করে এবং জলকামান দিয়ে হামলা চালায়। এতে সাতজন আহত হন। এ সময় ছাত্র ইউনিয়নের তিন কর্মীকে আটক করে পুলিশ।

‘হক কথা’ কেউ শুনছে কি?

‘ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের জন্য হিরোশিমা-নাগাসাকির চেয়েও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।’ কথাগুলো ৩৯ বছর আগে বলেছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। মজলুম জননেতার এই ভবিষ্যৎবাণী যে এত নির্মমভাবে বাস্তবে পরিণত হবে সেটা উপলব্ধি করার মতো দুরদর্শিতা তৎকালিন সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ছিল না বলেই প্রতীয়মান হয়। যে প্রমত্ত পদ্মা নদীর ‘সর্বনাশা’ রুপ নিয়ে লেখা হয়েছিল বিস্তর গান-কবিতা; সেই পদ্মা নদীর একটি বিশাল অংশ আজ ধুসর মরুভূমি। মাঝেমধ্যে এখানে ওখানে মরীচিকার মতো মেলে জলের দেখা।

bhasani

এমন পরিণতির কথা আশঙ্কা করেই ১৯৭৬ সালের ১৬ মে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ করেছিলেন মওলানা ভাসানী। প্রচণ্ড শারিরীক কষ্ট উপেক্ষা করে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হাজারো মানুষের মিছিলে। ৩৯ বছর আগের এই দিনে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দান থেকে শুরু হয়েছিল সেই লংমার্চ। সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ তাঁরা পৌঁছেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সেখানে রাত্রী যাপনের পর পরদিন সকাল আটটায় আবার শুরু হয় শিবগঞ্জের কানসাট অভিমুখে যাত্রা। মহানন্দা নদী পার হওয়ার জন্য হাজার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কৃত্রিম সেতু তৈরি করেছিলেন নৌকা দিয়ে। বাংলাদেশের সীমানার মধ্যেই লংমার্চ সমাপ্ত হলেও বিপুল মানুষের ঢল দেখে সেদিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল ভারতীয় সীমান্তে। কানসাটের জনসভায় মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, ‘আজ রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও কানসাটে যে ইতিহাস শুরু হয়েছে তা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করবে।’

বাংলার এই মজলুম জননেতার এই কথাটি অবশ্য সত্য হয়নি। ১৯৭৬ সালেরই ১৭ নভেম্বর পরলোকে পাড়ি জমান ভাসানী। আর তাঁর প্রতিরোধের অধ্যায় থেকে যায় অসমাপ্ত। ফারাক্কা টিকে থাকে, আরও শক্তিশালী হয়। আর প্রয়োজনে পানি পান না বাংলাদেশের মানুষ। অসময়ের স্রোত আবার ভাসিয়ে নিয়ে যায় ফসলি জমি, ঘর-বসতি।

আন্তর্জাতিক পানি বন্টন ও ভাগাভাগি নিয়ে দেশে দেশে যে বিরোধ বিদ্যমান, তার মধ্যে অন্যতম হলো ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা নদীর পানি বন্টন-সংক্রান্ত বিরোধ। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই ফারাক্কা বাঁধ নির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল ভারত। ১৯৫১-৭০ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই দশক ধরে আলোচনা হলেও কোনো কার্যকর সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি ভারত ও পাকিস্তান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবার শুরু হয় আলাপ-আলোচনা। ১৯৭৫ সালের এপ্রিলে ফারাক্কা বাঁধ সাময়িকভাবে চালুর ব্যাপারে সাক্ষরিত হয় একটি অন্তবর্তীকালীন চুক্তি। এই চুক্তি অনুযায়ী বাঁধটি চালু করার কথা ছিল এক মাস ১০ দিনের (২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে, ১৯৭৫) জন্য। কিন্তু মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ফারাক্কা বাঁধের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে ভারত। প্রতিবেশী দেশের অনায্য আচরণের বিরোধীতা করে এক বছর পর ১৬ মে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ করেছিলেন মওলানা ভাসানী।

কিন্তু তাতে কোনো ফল আসেনি। স্থায়ী সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০ বছর পর ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বন্টন সংক্রান্ত ৩০ বছর মেয়াদী চুক্তি সাক্ষরিত হয় ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে। কিন্তু সেই চুক্তিরও ছিল নানান সীমাবদ্ধতা। ফলে একতরফাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েই গেছে ভাটির দেশ বাংলাদেশ। নদীতে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় সেচকাজের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছেন কৃষকরা। তাতে যেমন বেড়েছে কৃষিব্যয়, তেমনি নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। গত কয়েক বছরে এলাকাভেদে পানির স্তর নেমে গেছে ২৫ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত। খরা, দাবদাহ বেড়েই চলেছে প্রতি বছর। আর্সেনিকে আক্রান্ত হচ্ছেন নদীপাড়ের অনেক মানুষ।

১৯৭৬ সালে মওলানা ভাসানীর লংমার্চ স্মরণে ১৬ মে পরিচিতি পেয়েছিল ‘ফারাক্কা দিবস’ হিসেবে। কিন্তু সংগ্রামী এই জননেতার শেষজীবনের কথাগুলোও আজ বিস্মৃতির পথে। ভাসানীর ‘হক কথা’ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে কালের গর্ভে। আর এভাবে চলতে থাকলে, ২০২৬ সালে গঙ্গার পানি বন্টন সংক্রান্ত চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই হয়তো শুকিয়ে যেতে পারে খালে পরিণত হওয়া নদীগুলোর পানিও।

১৯৯৫ সালে বিশ্বব্যাংকের তৎকালিন সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাজেলদিন বলেছিলেন, ‘এই শতাব্দীতে মানুষ যুদ্ধ করছে তেলের জন্য। কিন্তু পরবর্তী শতাব্দীতে যুদ্ধ হবে পানির অধিকার নিয়ে।’ তেমন নিষ্ঠুর পরিস্থিতির মুখে দাঁড়ালেই কী কেবল মনে পড়বে মওলানা ভাসানীর ‘হক কথা’গুলো?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফ্রাংকেনস্টাইন’ কাহিনী

১৮১৮ সালে ইংলিশ ঔপন্যাসিক ম্যারি শেলি রচিত ‘ফ্রাংকেনস্টেইন’ বেশ সাড়া জাগিয়েছিল পশ্চিমা বিশ্বে। পরে রুপালি পর্দাও কাঁপিয়েছে এটির চলচ্চিত্ররূপ। যেখানে দেখা যায় ভিক্টর ফ্রাংকেনস্টেইন নামের এক খ্যাপা বিজ্ঞানী গবেষণাগারে প্রাণ সৃষ্টি করে কীভাবে এক দানবের জন্ম দেন। এবং পরবর্তীকালে এই দানব একের পর এক বিধ্বংসী সহিংস কর্মকাণ্ড করতে থাকে। শেষটায় এই দানবকে থামাতে গিয়ে বহু পথ ছুটতে হয় বিজ্ঞানীকে। সফল হতে পারেন না। প্রাণ হারান ক্লান্তশ্রান্ত হয়ে। চরিত্র আর পরিস্থিতি একটু ওলটপালট করে দিলে অবাক বিস্ময়ে দেখতে পাওয়া যায় যে, ঠিক ঠিক এ রকম একটা ঘটনার পুনরাবৃত্তিই হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপটে।

শিবির আধিপত্যের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সময় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের কোনো প্রকাশ্য তৎপরতা প্রায় ছিলই না। সেখান থেকে কীভাবে এটার পুনর্জন্ম হলো; কীভাবে সে শক্তিশালী হয়ে উঠল এবং কীভাবে দানবীয় সব কর্মকাণ্ড করে নিজের পালন-পোষণকারীর অঙ্গহানি ঘটাতে থাকল; তা দারুণভাবে মিলে যায় ম্যারি শেলির ফ্রাংকেনস্টেইন উপন্যাসের সঙ্গে। যার একেবারে শেষ পর্যায়টা বোধহয় এখন রচিত হচ্ছে।

প্রাণসঞ্চার পর্ব

২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জরুরি অবস্থা জারির আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল ছাত্রশিবিরের আধিপত্য। বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো যেমন সব সময়ই একটা ক্ষুদ্র অবস্থান নিয়ে থাকে তেমনটা ছিল। মাঝে কিছু সময় জাসদ ছাত্রলীগও ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ছাত্রলীগের তৎপরতা সেভাবে চোখে পড়ত না বললেই চলে। জরুরি অবস্থার মধ্যে নিজ দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা এবং পরে তাদের জেলহাজতে থাকতে হলেও ছাত্রলীগের ব্যানার সম্বলিত কোনো মিছিল বা মানববন্ধন বা অন্য কোনো কর্মসূচি ক্যাম্পাসে ছিল না। এমন একটা জিনিসে প্রাণসঞ্চার করে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ ঘটায় ‘ভোট বিপ্লব’! আর সেই বিপ্লবী জোসে চাঙ্গা হয়ে ক্যাম্পাস থেকে শিবিরকে সরিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার তাগিদ বোধ করতে থাকে ছাত্রলীগ।

অবশেষে ১৩ মার্চ ছাত্রলীগ (আওয়ামী ও জাসদ) ও ছাত্রমৈত্রীর সঙ্গে শিবিরের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। মারা যান ছাত্রশিবিরের নেতা নোমানী। ক্যাম্পাস ‘অস্থিতিশীল’ হয়ে ওঠায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। আড়াই মাস বন্ধ থাকার পর ১ জুন খুলে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়।

কিন্তু শিবির মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে, আবার ক্যাম্পাসে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে- এমন দোহাই দিয়ে ক্যাম্পাসে জারি করা হয় ‘নয়া জরুরি অবস্থা’। যে কোনো ধরনের সভা-সমিতি-সমাবেশ-সেমিনার-জমায়েত-লিফলেট-প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা হয়।

ভয়াল মূর্তিধারণ পর্ব

ক্যাম্পাসকে শিবিরমুক্ত করার মিশন নিয়ে ছাত্রলীগকে অবাধ স্বাধীনতা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রলীগের সশস্ত্র ছেলেদের নিয়ে ক্যাম্পাস দাবড়ে বেড়াতে দেখা গেছে সেসময়ের সহকারী প্রক্টরকে। শিবির জুজ দেখিয়ে সবার মুখ বন্ধ করে দিয়ে ছাত্রলীগকে আদতে দেওয়া হয়েছিল অবাধ স্বেচ্ছাচারের সুযোগ। তার পরিণাম কী হয়েছে সেটা বোঝার জন্য অনেক অনেক ঘটনার মধ্য থেকে অল্প কিছু উল্লেখ করা যেতে পারে :

  •  ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট দলের অন্তঃকলহের জের ধরে খুন হন ছাত্রলীগকর্মী নাসরুল্লাহ নাসিম। এ ঘটনায় নয় ছাত্রলীগকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা হলেও আসামিরা জামিনে মুক্তি পায়।
  •  ২০১২ সালের ১৫ জুলাই পদ্মা সেতুর টাকা ভাগাভাগির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আহমেদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু গ্রুপের কর্মীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ছাত্রলীগকর্মী আব্দুল্লাহ আল হাসান সোহেল। সেই ঘটনায় দুজনকে বহিষ্কার করা হলেও পরে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
  •  ২০১৪ সালের ৩ এপ্রিল হলের রুমে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী আকন্দ। ছাত্রলীগ এই খুনের জন্য দায়ী করে শিবিরকে। কিন্তু এটাও সংগঠনটির পদ-ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফল বলে অভিযোগ আরো অনেকের। (তথ্যসূত্র : সাপ্তাহিক এই সময়)

এ ছাড়া ক্যাম্পাসে অস্ত্রবাজি-টেন্ডার-চাঁদাবাজি নিয়ে অনেকবার নেতিবাচকভাবে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে ছাত্রলীগ। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে থেকেছে। আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। বিনিময়ে নিজেরাও সাহায্য নিয়েছে এই ছাত্রসংগঠনটির। ব্যবহার করেছে শিক্ষার্থীদের স্বাধীন তৎপরতা, ন্যায্য দাবির আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়ার কাজে।

আত্মঘাত পর্ব

ছাত্রলীগকে এই অবাধ স্বেচ্ছাচারে মেতে ওঠার সুযোগ করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে নিজেদেরই আত্মঘাতী পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল সেটাও টের পাওয়া গেল সাম্প্রতিক সময়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তি উপাচার্য লাঞ্ছিত-অপমানিত হয়েছেন ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের হাতে। ভিসির পদত্যাগের দাবিতে মাঠে নেমেছেন ছাত্রলীগের ‘বিতর্কিত’ নেতাকর্মীরা। (তথ্যসূত্র : ২১ এপ্রিল, ২০১৫; যুগান্তর)

কীভাবে ও কেন ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াল, তা জানার জন্য আবারও একটু পেছনে ফিরতে হবে। ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাবির ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সোবহানকে উপাচার্য, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নুরুল্লাহকে উপ-উপাচার্য ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবদুল বারীকে রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল চার বছরের জন্য। সে অনুযায়ী ২০১৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তাঁদের মেয়াদ শেষ হয়। তার আগ দিয়ে চলে গণনিয়োগের ধুম। ২০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৪৪৭তম সভায় দলীয় ভিত্তিতে ১৮৪ জন কর্মচারী, ২৬ জন কর্মকর্তা, ২০ জন শিক্ষক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩১ জনকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। কিন্তু এতেও সন্তুষ্ট করা যায়নি চাকরিপ্রত্যাশী সরকার সমর্থকদের। তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে উপ-উপাচার্যের দপ্তরে হামলা চালান। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মাসুদ রানার নেতৃত্বে সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রশাসন ভবনে তালা লাগিয়ে দেন। সে সময় কিছুদিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ‘অভিভাবকত্বহীন’ অবস্থার মধ্যেও কাটিয়েছে। (তথ্যসূত্র : কালের কণ্ঠ; ২৫ ও ২৮  ফেব্রুয়ারি, ২০১৩)

নতুন করে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় মুহম্মদ মিজানউদ্দিনকে। এই আমলেও ছাত্রলীগ থেকে যায় বল্গাহীন ঘোড়া। ছুটতে ছুটতে একসময় তারা আবার চড়াও হয়ে বসে প্রশাসনের ওপর। ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল রাজশাহী-১ আসনের সাংসদ ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী টেবিল চাপড়ে উপাচার্যকে শাসান। একদিন পর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতারা উপাচার্যের দপ্তরে ঢুকে তাঁকেসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষককে গালাগাল ও হুমকি দেন। গায়ে হাত তোলার অভিযোগও শোনা গেছে। এতদিন যাদের ছত্রছায়ায়, প্রশ্রয়ের আলো-হাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগ ফুলেফেঁপে উঠেছে, তারা এবার দাঁড়িয়ে গেছে সেই প্রশাসনের বিরুদ্ধেই। আর প্রশাসনবিরোধী এই তৎপরতার নেতৃত্ব দিচ্ছে বিভিন্ন সময়ে অপকর্মের দায়ে ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত ও অস্ত্রবাজরা। (তথ্যসূত্র : যুগান্তর; ২১ এপ্রিল ২০১৫)

সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি-নিপীড়ন পর্ব

এই পর্বটি চলমান আছে দীর্ঘদিন ধরেই। ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষ, ছাত্রলীগের অন্তঃকলহের ফলে সংঘর্ষ, নিয়োগবাণিজ্য, নিষেধাজ্ঞার বেড়ি সব সময়ই রুদ্ধ করেছে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিকাশ, স্বাধীন তৎপরতা। ন্যায্য দাবির কথা বলতে গিয়ে খেতে হয়েছে লাঠি-গুলি-হুমকিধমকি। তার কিছু নমুনা :

  •  ২০১২ সালের ২ অক্টোবর : ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে গোলাগুলি চলাকালে পুলিশকে দর্শকের ভূমিকায় দেখা যায়। সংঘর্ষ চলাকালীন ছাত্রলীগের দুই নেতাকে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে পিস্তলে গুলি ভরতে এবং গুলি করতে দেখা যায়। আহত হয় বেশ কয়েকজন। অথচ তিন-চারদিন পরেই ভর্তি পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট মিছিল করলে সেখানে বাধা দেয় ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে পুলিশ। ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে এবং ছাত্রফ্রন্টের চার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে। (তথ্যসূত্র : ৩ ও ১১ অক্টোবর, প্রথম আলো)
  • ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি-বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও পুলিশের যৌথ হামলার প্রতিবাদে মিছিল করলে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের মিছিলে হামলা করে পুলিশ। আহত হয় ১০-১২ জন। গ্রেফতার করা হয় পাঁচজনকে। (তথ্যসূত্র : ১১ অক্টোবর, প্রথম আলো)
  • ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি ও বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্সবিরোধী আন্দোলনে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর শান্তিপূর্ণ সমাবেশে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে গুলি চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন শতাধিক শিক্ষার্থী। মামলা দেওয়া হয় ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনকারী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর নামে।
  • ২০১৫ সালের ৩ মার্চ মুক্তচিন্তক অভিজিৎ রায়কে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে মিছিল বের করলে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সহকারী কমিশনার রকিবুল আলম বলেন, ‘ক্যাম্পাসে শুধুই ছাত্রলীগ মিছিল করতে পারবে, আর কেউ না।’ (তথ্যসূত্র : ৪ মার্চ, ২০১৫; যুগান্তর)

এ ছাড়া বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগের স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ডের বলী হতে হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পঙ্গু হয়ে গেছে সাংস্কৃতিকভাবে। ক্যাম্পাসে এখন আর তেমন কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গান-পথনাটক-কবিতা-আলোচনা সভা-সেমিনার হয় না বললেই চলে। অথচ ১০-১২ বছর আগে শিবিরের রমরমার যুগে দারুণ সরব ছিলেন সাংস্কৃতিককর্মীরা। কোনো কোনো দিন একই সময়ে ক্যাম্পাসের দু-তিন জায়গায় পথনাটক আয়োজিত হতেও দেখা গেছে। আলোচনা-সেমিনার বন্ধ করে দিয়ে তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে মুক্তজ্ঞান চর্চার পরিবেশও রুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। এখানে-সেখানে এখন শুধু দেখা যায় অযাচিত নিষেধাজ্ঞার  দেয়াল-বেড়া-কাঁটাতার।

ভবিষ্যৎ পর্ব

এই পর্বটিই এখন রচিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটা হতে পারে পচে-গলে যাওয়ার পর্ব। বা হতে পারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ পর্ব। প্রশাসন ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি আরো দুর্বিষহ হতে উঠতে পারে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি আরো বাড়তে পারে। আর শিক্ষার্থীরা যদি নিজেদের ভালোমন্দের বিবেচনা করে সক্রিয় হন, কথা বলা শুরু করেন তাহলে শুরু হতে পারে নষ্ট ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত, প্রতিরোধের কাল।

ম্যারি শেলির উপন্যাসের খ্যাপা বিজ্ঞানী ভিক্টর ফ্রাংকেনস্টেইন তাঁর তৈরি করা দানবটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। পিছু ধাওয়া করতে করতে শেষটায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পরিণতিও হয়তো তেমনটাই হতে পারে। আর সেই উপন্যাসের দানবসত্তার মতো ছাত্রলীগও শেষটায় কোথায় চলে যাবে, তা কারোরই জানা থাকবে না। একমাত্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্ত-স্বাধীন তৎপরতাই পারে বিশ্ববিদ্যালয়কে আবার প্রাণবন্ত, মুক্ত জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রে পরিণত করতে। সে জন্য তুলে নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা। বন্ধ করতে হবে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ, পুলিশি নিয়ন্ত্রণ। তাহলেই কেবল আবার গান-বাজনায়, নাটক-কবিতায়, মুক্ত জ্ঞানচর্চার তর্ক-বিতর্কে মুখরিত হতে পারবে মতিহার চত্বর।

মা দিবস: ইতিহাস বিস্মৃত, বাণিজ্য মুখ্য

১৯১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া মা দিবস পেরিয়ে এসেছে ১০০ বছর। আর এই শত বছরে অনেকখানিই বিস্মৃত হয়ে গেছে বিশেষ দিনটির ইতিহাস। অন্য আরো অনেক দিবসের মতো মা দিবসও পরিণত হয়েছে রমরমা বাণিজ্যের উপলক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস ঘিরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করেন মার্কিন নাগরিকরা। অথচ যাঁর হাত ধরে এই দিবসের যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই আনা জার্ভিস আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন দিনটিকে ঘিরে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে। শেষটায় নিঃস্ব-রিক্ত অবস্থায় মারা গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি মানসিক হাসপাতালে।

Anna-Jarvis-3

মজার ব্যাপার হলো, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার আনা জার্ভিস নিজে কিন্তু নিঃসন্তান ছিলেন। ১৯০৫ সালে তাঁর মা রিভস জার্ভিসের মৃত্যু আনাকে অনুপ্রাণিত করে এই প্রয়াণ দিবস উদযাপনের উদ্যোগ নিতে। ১৯০৮ সালে তিনি প্রথমবারের মতো আয়োজন করেন মা দিবসের অনুষ্ঠান। সে বছরের ১০ মে তারিখে জার্ভিসের আদিনিবাস ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটন শহরের পরিবারগুলো একত্রিত হয়েছিল একটি চার্চে। সেই চার্চটি এখন পরিচিত আন্তর্জাতিক মা দিবসের মন্দির হিসেবে। একই সঙ্গে ফিলাডেলফিয়াতেও আয়োজিত হয় পৃথক একটি অনুষ্ঠান।

আনা জার্ভিসের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে ক্রমেই অন্যান্য শহর ও প্রদেশেও আয়োজিত হতে থাকে মা দিবসের অনুষ্ঠান। ১৯১৪ সালে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘মা দিবস’ বলে ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন। দিনটির তাৎপর্য আনার কাছে কেমন ছিল তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার অধ্যাপক ওয়েসলেয়ান আনতোলিনি বলেছেন, ‘জার্ভিসের জন্য এটা ছিল এমন একটা দিন, যখন আপনি বাড়ি গিয়ে মার সঙ্গে সময় কাটাবেন আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন।’

anna jarvis

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে দিনটি উদযাপনের গতিধারা বদলে যায় জার্ভিসের চোখের সামনে। দিনটি পরিণত হয় রমরমা বাণিজ্যের উপলক্ষে। সবাইকে উৎসাহিত করা হয় ফুল-চকলেট আর নানা রকম উপহার কিনে মাকে উপহার দেওয়ার জন্য। ব্যাপারটি গভীরভাবে আহত করেছিল আনাকে। দিনটিকে তার আদি তাৎপর্য ফিরিয়ে দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছিলেন তিনি। বয়কট করেছিলেন, মামলার হুমকি দিয়েছিলেন। এমনকি একবার আক্রমণ করেছিলেন ফার্স্ট লেডি এলেনর রুজভেল্টকেও। কোনো লাভ হয়নি। ১৯৪৮ সালে ৮৪ বছর বয়সে ফিলাডেলফিয়ার একটি হাসপাতালে নিঃস্ব অবস্থায় মারা যান আনা।

‘মেমোরাইজিং মাদারহুড : আনা জার্ভিস অ্যান্ড দ্য ডিফেন্স অব হার মাদারস ডে’ গ্রন্থের লেখক আনতোলিনি বলেছেন, ‘এই মানুষটা, যিনি স্মৃতিবিভ্রমে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন কপর্দকশূন্য অবস্থায়; তিনি চাইলে এই মা দিবস থেকে অনেক মুনাফা করতে পারতেন। কিন্তু যারা সেটা করেছে তাদের বিরুদ্ধে তিনি আজীবন লড়েছেন। আর এ জন্য তাঁকে কড়া মাশুল দিতে হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে, শারীরিকভাবেও।’

মা দিবসের মূল প্রোথিত আছে ইতিহাসের আরো গভীরে- আনা জার্ভিসের মা অ্যান রিভস জার্ভিসের সংগ্রামী জীবনের জমিনে। ১৮০০ শতকের মাঝামাঝিতে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার নারী সংগঠক রিভস জার্ভিস, মায়েদের সংগঠিত করেছিলেন নবজাতক মৃত্যুহার, শিশুখাদ্য-দুধের দুষণ ইত্যাদির বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার জন্য। ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত চলা মার্কিন গৃহযুদ্ধের সময় এই মায়েরা দুই পক্ষের সৈনিকদেরই সেবাশুশ্রূষা করতেন। যুদ্ধের পর দুই পক্ষের মধ্যে সন্ধিস্থাপন করে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য জার্ভিস ও তাঁর সহযোদ্ধারা আয়োজন করতেন মাদারস ফ্রেন্ডশিপ ডে পিকনিক। ১৮৭০ সালে ‘মা দিবসের ঘোষণা’ নামে একটি প্রকাশনা প্রকাশ করেন জুলিয়া ওয়ার্ড হাওয়ে। সেখানে তিনি নারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন, শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে নারীদের সক্রিয় রাজনৈতিক ভূমিকা নেওয়ার জন্য।

ann-jarvis

কিন্তু ইতিহাস বিস্মৃত হওয়ায় দিবসটি পরিণত হয়েছে বাণিজ্য করার দিনে। মার্কিনিরা এ বছর দিনটিতে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করবেন বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাইরে খাওয়ার জন্য মা দিবসই বছরের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছুটির দিন। হলমার্কের তথ্য থেকে জানা যায়, ক্রিসমাসের পর মা দিবসেই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় শুভেচ্ছা কার্ড।

খুলনার এক ‘দার্শনিক’ রিকশাওয়ালার গল্প

দর্শন মানে দেখা। কিছু না কিছু আমরা দেখতে থাকি সব সময়ই। সেই অর্থে প্রতিটা মানুষই আসলে দার্শনিক। শ্রেণিবিভক্ত সমাজে এখন অবশ্য খুব উচ্চপর্যায়ের চিন্তকদেরই দার্শনিক বলার চল।

নিম্ন শ্রেণির পেশাজীবী মানুষও যে কোনো বিষয়কে অনেক গভীরে তলিয়ে দেখার সামর্থ্য রাখেন, সেটা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। মাঝেমধ্যে সেটা মনে করিয়ে দেন খুলনার রিকশাচালক মুনির হাওলাদারের মতো মানুষ। তিনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়াম লিগ (আইপিএল) না দেখার কারণ হিসেবে অকপট যুক্তি দেন, ‘ওটা কে দেখে? জুয়ার খেলা!’ তিনি খুব দারুণভাবে বিশ্লেষণ করে যান খুলনা টেস্টের আদ্যোপান্ত। পরিচয় দেন গভীর রাজনৈতিক বিচক্ষণতার।

Rickshaw_by_onubhutiheen

খুলনা টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের লিড ছাড়িয়ে গেছে ২০০ রান। পাকিস্তানের রানপাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে ধুঁকছে বাংলাদেশ। স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে চেপে বসি মুনিরের রিকশায়। প্রথম দু-এক কথায় জানা গেল, তিনি মাঠে বসে খেলা দেখে খুব একটা তৃপ্তি পান না। টিভিতে বিশ্লেষণযুক্ত খেলা দেখতেই তিনি বেশি অভ্যস্ত। তাই বলে মাঠে বসে খেলা দেখার অভিজ্ঞতা যে একেবারেই নেই মুনিরের, তা নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুলনায় যে হাতে গোনা কয়েকটি ম্যাচ হয়েছে, সেগুলোর দু-একটিতে উপস্থিত ছিলেন মধ্যবয়সী এই রিকশাওয়ালা।

ক্রিকেটের খবরাখবর রাখেন, এমনটা জানার পর তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আইপিএল দেখেন না? প্যাডেল মারতে মারতেই মুনির জবাব দেন, ‘ওটা কে দেখে? জুয়ার খেলা! সাকিব থাকলে কলকাতার খেলা দেখি।’ সাকিব যে পাকিস্তানের বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজ শেষ করে আবার কলকাতায় পাড়ি জমাবেন সেই খবরও আছে তাঁর কাছে।

এরপর বাংলাদেশের খেলা নিয়ে কিছুক্ষণ আফসোস করলেন মুনির। ক্রিকেটারদের দুষলেনও খানিক। তবে অনেকখানি ব্যাটফুটে চলে গেলেও বাংলাদেশ যে টেস্টটা ড্র করতে পারবে সেটা মনপ্রাণ দিয়েই বিশ্বাস করেন তিনি। তাঁর সমীকরণ অনুযায়ী, দেড়দিনের মতো ব্যাটিং করতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। নিজের প্রত্যাশা পূরণের দাবি রেখে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দিকে ছুড়ে দিলেন মোক্ষম প্রশ্নটা : ‘আটজন ব্যাটসম্যান নিছে দলে। না পারলে হইব?’

খুলনা টেস্টের চতুর্থ দিনে (শুক্রবার) যে ভালো দর্শক হবে সেই আশাবাদ শোনা গেল মুনিরের কণ্ঠে। প্রথম তিনদিন অফিস করা মানুষগুলো তো সপ্তাহান্তে সত্যিই চাইবেন গ্যালারিতে বসে প্রিয় তারকাদের খেলা দেখতে। খুলনায় প্রথম তিনদিনের দর্শকসমাগমও ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু খুলনায় খুব বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজিত হয় না বলে আক্ষেপও করলেন মুনির।

সব শেষে দিলেন নিজের রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয়। তাঁর ধারণা, ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশন নির্বাচন থাকায় এবার খুলনাতে টেস্ট আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার পরে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজিত হয় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের মর্যাদা পেলেও সুন্দরবনের কোলঘেঁষা খুলনা খানিকটা উপেক্ষিতই থেকে গেছে। মুনিরের কথা শুনে সত্যিই মনে জাগল প্রশ্নটা- সত্যিই তো! ঢাকা-চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার কারণেই কি শিকে ছিঁড়েছে খুলনার ভাগ্যে?