Archive for the ‘ হ জ ব র ল ’ Category

এখনো ভাবায়, সুকুমার রায়!

বেড়ালটা এখনো ফ্যাঁচ্‌ ফ্যাঁচ্‌ করে হেসেই চলেছে! জোরে জোরে বানান করছে চশমার, “চন্দ্রবিন্দুর চ, বেড়ালের তালব্য শ, আর রুমালের মা- হল চশমা । কেমন, হল তো?'”

হিজিবিজ্‌বিজ্‌-এর হাসি থেমেছে ভাবছ? হাহ! সে হেসেই চলেছে পেট ফাটিয়ে। কখনো তকাই নামে, কখনো বিস্কুট নামে…

শ্রীব্যাকরণ শিং, বি. এ. খাদ্য বিশারদ এখন পত্রিকায় কলাম লেখেন। সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে তাঁর নিত্য উপস্থিতি।

রাগ করে তো কোনো লাভ নেই। ন্যাড়াটাও তাই গান শুনিয়ে চলেছে। “মিশিপাখা শিখিপাখা আকাশের কানে কানে” — দারুন হিট করেছিল গত মৌসুমে!

‘মানহানির মোকদ্দমা’ও চলছে। “কালো ঝোল্‌লা-পরা হুতোম প্যাঁচা”র চোখ এখনো বোজা। তা-ই বলে মনে করেন না যে, তিনি ঘুমোচ্ছেন। উনার চোখে ব্যারাম আছে। সবাই সেটা বোঝে। শুধু হিজিবিজ্‌বিজ্‌টা বোঝে না। এখনো সে বেআক্কেলের মতো বলে ওঠে, “আরও অনেক জজ দেখেছি, তাদের সক্কলেরই চোখে ব্যারাম।”

উধো-বুধোর ফাইট আর দোস্তি– সেও কী আর থামবার মতো জিনিস? তাদের বয়স কতবার কমল-বাড়ল হিসেব রাখাও দায়। সত্যিই তো। বয়স বাড়তে বাড়তে শেষটায় বুড়ো হয়ে মরবে নাকি!! বালাই ষাট! তাই ১০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যেই তাদের নিত্য ওঠানামা।

আর শ্রীকাক্কেশ্বর কুচ্‌কুচে? দারুণ জমে উঠেছে তার হিসেবের ব্যবসা। কার মন ভালো করা চিঠিতে এক ফোটা কান্নার জল পড়েছিল– সেই হিসেবটা নিয়েই যা একটু হয়েছিল ভ্যাজাল। এছাড়া কিন্তু দারুণ চলছে তার। সমস্যা শুধু একটাই। প্রায়ই সে অভ্যাসবসে বলে বসে, ‘লেগে যা, লেগে যা- নারদ নারদ !’

অ্যাঁ? আর কার কতা কইচ? সুকুমার? সে আবার কী? মৃত্যু? দিবস? এসব আবার কী? কেউ কখনো মরে নাকি? আ মলো যা!!! কী আদিখ্যেতা!!!
—————-
হযবরল– শুনিয়েছেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়– https://youtu.be/G_W0obTSLEw

কলিম খানের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাঁর বইয়ের হদিশ

মানুষের মৃত্যু দুই ধাপে হয়। প্রথমটা শরীরের। প্রানটা বেরিয়ে যায়। দ্বিতীয়বারের মৃত্যুটা হয় স্মৃতিতে… যিনি যত পুণ্য সঞ্চয় করেন, তিনি জনমানসে ততদিন বেচে থাকেন। যার পুণ্য কম, তিনি দ্রুতই মিলিয়ে যান বিস্মৃতির অতলে…

গত ১১ জুন পরলোকে চলে যাওয়া কলিম খান আমাদের ভাবিয়েছেন। খুব কম লেখক-চিন্তকই এভাবে ভাবাতে পারেন।

ভদ্রলোকের শারিরিক মৃত্যু হয়েছে… কিন্তু তাকে আমরা বাচিয়ে রাখতে পারি। আমাদের চিন্তা-কর্ম দিয়ে। তার রচনা পাঠ করার মাধ্যমে। সেটাই বোধহয় উচিত হবে। এতো দ্রুত তাকে মরতে দেওয়াটা ঠিক হবে না… আপনার পুন্য এতো কম না কলিম খান…

এই কথাগুলোও তো আপনারই ভাবনাপ্রসুত…

অনলাইনে কলিম খানের গ্রন্থগুলো পাওয়া যাবে এখানে


কলিম খানের মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে Subhasis Chirakalyan Patra ফেসবুকে লিখেছিলেন:

গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাই যে, ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থবিধির অন্যতম রূপকার, বঙ্গীয় শব্দার্থকোষের অন্যতম প্রণেতা, ভাষাবিদ ও দার্শনিক কলিম খান আর আমাদের মধ্যে নাই। কিছুদিন যাবৎ তিনি দুরারোগ্য রক্তের ক্যান্সারে (AML) ভুগছিলেন।
আজ (১১.০৬.২০১৮) রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে কলকাতার বাঁশদ্রোণী এলাকায় নিজের বাসভবনে তিনি প্রয়াত হয়েছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সুকুমার রায় ছাড়া আর যে বাঙালী লেখক আমার মনকে গভীরভাবে আলোড়িত ও আপ্লুত করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি কলিম খান। তাঁর কাছ থেকেই আমি বুঝতে শিখেছি শব্দার্থের দর্শন, প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও ভারতীয় দর্শনকে। তিনি যে কাজের সূচনা করে গেলেন সেই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের। তাঁর মৃত্যুতে আমি হারালাম আমার এক পথপ্রদর্শক, সুহৃদ এবং অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় মানুষকে। তাঁকে আমার অন্তরের প্রণতি জানাই।

মহীনের ঘোড়াগুলি

Rock Revolution

MoheenerGhoraguli-group

আমরা যাইনি মরে আজো– তবু কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়ঃ
মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায় কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে,
প্রস্তরযুগের সব ঘোড়া যেনএখনও ঘাসের লোভে চরে
পৃথিবীর কিমাকার ডাইনামোর পরে

জীবনানন্দ দাশের ‘ঘোড়া’ কবিতাটির অন্য একটা বিশেষত্ব আছে। এটি লেখার দু-তিন দশক পরের এক কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তর থেকে কলকাতায় নেমে এসেছিলো সংবিগ্ন একদল ঘোড়া। সেই তখন থেকেই ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র নালহীন খুরের আওয়াজ, হ্রেষাধ্বনি, টগবগানো শুনছে বাংলা গানের গলিতে পায়চারী করা অসংখ্য পথচারী।

বাংলা ব্যান্ড-মিউজিকের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয়, শ্রোতাপ্রিয়, প্রবাদপ্রতিম ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’। তারা সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে এসেছিলো বাংলা গানে এক নতুন ধারার সঙ্গীত নিয়ে। ষাটের দশকে বব ডিলানের হাত ধরে যে ‘আরবান ফোক’ ধারার প্রচলন ঘটেছিলো, মহীনের ঘোড়াগুলিকে বাংলা গানে সেই জনরারই অনুসারী বলা হয়ে থাকে৷ সেই সময়টাতে সারা পৃথিবীতে বব ডিলান, বিটলস, জিম মরিসনরা গতানুগতিক সংগীতবোধের বাইরে গিয়ে রাজত্ব করছিলেন কিন্তু বাংলা গান তার গতানুগতিকতাকে ছাড়তে পারছিলো না। তখনকার সময়ে শ্রোতারা রোমান্টিক সুরেলা ঘরানার…

View original post 1,500 more words

কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা, ইউরোপের মাথাব্যাথা

ইউরোপের ফুটবল অঙ্গনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় লড়াই, স্পেনের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার দ্বৈরথ। বিশ্ব ফুটবলে যা পরিচিত ‘এল ক্লাসিকো’ নামে। ইউরোপের সবচেয়ে সফল দুইটি ক্লাবও রিয়াল-বার্সা। ফলে ফুটবলের কারণে পুরো বছরজুড়েই বিশ্বের অনেক মানুষের নজর থাকে স্পেনের দিকে। এবার বিশ্বের দৃষ্টি স্পেনের দিকে পড়তে পারে রাজনৈতিক কারণেও। এখানেও একে-অপরের প্রবল প্রতিপক্ষ মাদ্রিদ (স্পেন) ও বার্সেলোনা (কাতালোনিয়া)।

Screen-Shot-2015-03-31-at-16.40.53

সম্প্রতি দীর্ঘদিন ধরে জারি থাকা স্বাধীনতার দাবিতে আবার মুখরিত হয়েছে কাতালোনিয়ার রাজপথ। ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কাতালোনিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচন। আর এই ভোটাভুটিকে দেখা হচ্ছে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ নির্ধারণী নির্বাচন হিসেবে। পার্লামেন্ট নির্বাচনে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষ জয়ী হলে জোরতালে শুরু হবে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কর্মকাণ্ড। বার্সেলোনা হবে সেই নতুন দেশের রাজধানী।

অন্যদিকে সমূহ বিপদের আশঙ্কায় কাতালানদের এই দাবি মেনে নিতে নারাজ স্প্যানিশ সরকার। কাতালোনিয়া স্বাধীন হয়ে গেলে খুবই ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে আগে থেকেই টালমাটাল অবস্থার মধ্যে থাকা স্প্যানিশ অর্থনীতি। খুব কাছেই সতর্কবার্তা হয়ে ঝুলে আছে গ্রীস ট্রাজেডি। গ্রীসের মতো ঋণগ্রস্থ স্পেনও আছে দেউলিয়া ঘোষণা হবার আশঙ্কায়। স্পেনের পাশাপাশি ইউরোপের মোড়লরাও হয়তো চাইবেন না কাতালোনিয়ার আলাদা হয়ে যাওয়া। কারণ তাহলে নতুন করে আরেকটি বড় সংকটের মধ্যে পড়তে হবে ইউরোপের নীতিনির্ধারকদের। এমনিতেই গ্রীস ও সাম্প্রতিক অভিবাসী পরিস্থিতি বেশ জর্জরিত করে রেখেছে তাদের। কিন্তু কাতালানরাও নাছোড়বান্দা। বহু দিনের লালিত স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে এবার বাস্তবে রূপ দিতে বদ্ধপরিকর কাতালোনিয়ার মুক্তিকামী মানুষ।

catalonia-map

১১৬৪ সাল পর্যন্ত খুবই শক্তিশালী একটা স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল কাতালোনিয়া। তারপর এটি যুক্ত হয় অ্যারাগনের সঙ্গে। আর ১৪৬৯ সালে অ্যারাগনের রাজা ফার্দিনান্দ ও স্পেনের রানী ইসাবেলার বিবাহবন্ধনের মধ্য দিয়ে স্পেনের সঙ্গে মিলন ঘটে অ্যারাগন ও কাতালোনিয়ার। তখন থেকেই ধীরে ধীরে স্পেনের কেন্দ্রীয় শাসনের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে থাকে কাতালানরা। ১৭১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করে দেওয়া হয় কাতালান রাষ্ট্র। তারপর থেকেই নিজেদের স্বকীয় সংস্কৃতি-ঐতিহ্য-ভাষা চর্চার স্বাধীনতা হারাতে হয়েছে বলে অভিযোগ কাতালোনিয়ার মানুষদের। যে নিপীড়ণের চরম রূপ দেখা গেছে জেনারেল ফ্রাঙ্কোর সামরিক শাসনের (১৯৩৯-১৯৭৫) সময়। ১৯৭০-এর দশকের শেষে স্পেনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর কাতালোনিয়াকে দেওয়া হয় স্পেনের ১৭টি স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা। তবে ভেতরে ভেতরে স্বাধীনতার সুপ্ত বাসনাটাও সবসময় লালন করে গেছে কাতালানরা। সেই দাবি আরও জোড়ালো হয়েছে ২০০৭-০৮ সালের অর্থনৈতিক ধ্বসের পর। নানাবিধ কৃচ্ছতানীতি যারপরনাই অসন্তোষ তৈরি করেছে কাতালোনিয়ায়। ২০১০ সালে কাতালানরা স্প্যানিশ সরকারকে কর দিয়েছে ৬১.৮৭ বিলিয়ন ইউরো। আর তাদের কাছে এসেছে ৪৫.৩৩ বিলিয়ন। কেন্দ্রীয় স্প্যানিশ সরকারের হাতে বিপুল পরিমাণ টাকা চলে না গেলে আরও উন্নয়ন করা যেত বলে কড়া মন্তব্য করেছিল কাতালোনিয়া সরকার।

গত বছরের নভেম্বরে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল একটি অনানুষ্ঠানিক গণভোট। মাদ্রিদে স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার অনেক চেষ্টা করেছিল সেটা রুখে দিতে। কিন্তু শেষপর্যন্ত সফল হয়নি। ২.২ মিলিয়ন ভোটারের ভোটে বিপুলভাবে জয়ী হয়েছিল স্বাধীনতার দাবি। ৮০.৭ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছিলেন কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে।

এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে অনেকখানি আনুষ্ঠানিক রূপ পেতে যাচ্ছে সেই স্বাধীনতার দাবি। কাতালোনিয়ান পার্লামেন্টের ১৩৫টি আসনের মধ্যে ৬৮টি আসনে জয়লাভ করলেই স্পেন থেকে পৃথক হওয়ার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে দেবে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিরা। ইতিমধ্যে তারা গঠন করেছে ‘জান্টস পেল সি’ বা ‘টুগেদার ফর ইয়েস’ নামের একটি জোট। যেখানে আছে কাতালোনিয়ার বর্তমান ও সাবেক তিন তিন প্রধানমন্ত্রীর পার্টি। এই জোট থেকে নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন বার্সেলোনার সাবেক কোচ পেপ গার্দিওলাও। এই জোটের সঙ্গে আলাদাভাবে কাজ করবে বামপন্থী দল সিইউপি। আর স্বাধীনতার বিপক্ষে লড়বে স্পেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মারিনো রাহোর পার্টি পার্তিদো পপুলার (পিপি) ও কাতালোনিয়ার সোশ্যালিস্ট পার্টি (পিএসসি)।

২৭ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হলে দ্রুতই স্বাধীন হওয়ার কাজ শুরু করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ‘টুগেদার ফর ইয়েস’ জোটের প্রার্থী রাউল রোমেভা। এল পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমরা স্বাধীনতার ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। আর সবাইকে এটা বুঝতে হবে যে আমরা সত্যিই এই প্রক্রিয়া শুরু করব। আমরা সম্ভাব্য সকল উপায়ে এটা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা (স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার) এটা আমাদের করতে দেয়নি। ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বরের গণভোটের পর আমরা যেটা করতে পারিনি সেটা করার সময় এবার এসে গেছে।’ নিজেদের স্বাধীন সব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন কাতালোনিয়ার প্রেসিডেন্ট আর্থার মাস। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, কর কর্তৃপক্ষ, কূটনৈতিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ছোট আকারের একটা সেনাবাহিনীও গড়ে তোলার কথা ভাবছেন মাস।

গত ১১ সেপ্টেম্বর কাতালোনিয়ার জাতীয় দিবসে বার্সেলোনার রাজপথ আবার মুখরিত হয়েছিল স্বাধীনতার দাবিতে। প্রায় ১.৪ মিলিয়ন মানুষ কাতালোনিয়ার পতাকা নিয়ে বর্ণিল র‍্যালি করেছিলেন বার্সেলোনার রাজপথে। তরুণ-তরুণীরা নেচে-গেয়ে উদযাপন করেছিলেন কাতালানদের স্বকীয় ঐতিহ্য-সংস্কৃতি। স্বাধীনতার দাবিতে গলা চড়িয়েছেন অনেক প্রবীনও। ফ্রাঙ্কোর একনায়ক শাসনামলে স্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে দীর্ঘদিন জেল খাটতে হয়েছিল ৯১ বছর বয়সী জোয়াকিম ব্যাটলকে। এখন তিনি হাঁটেন ক্রাচে ভর দিয়ে। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্রও কমেনি তাঁর স্বাধীনতার স্পৃহা। ব্যাটল বলেছেন, ‘আমি প্রবল আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার দিকে। আমরা এজন্য অনেক শতক ধরে অপেক্ষা করছি। আর আমার বিশ্বাস এখন সেই সময় চলে এসেছে।’

Demonstrators wave "Esteladas" (pro-independence Catalan flag) during celebrations of Catalonia's National Day (Diada) which recalls the final defeat of local troops by Spanish king Philip V's forces in 1714, in Barcelona on September 11, 2015. Hundreds of thousands of Catalans were set to pour into the streets today demanding independence, ahead of a regional election billed as an indirect vote on breaking away from Spain. AFP PHOTO/ GERARD JULIEN

২৭ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের পর স্পেন যদি সত্যিই স্বাধীনতার পথে হাঁটা শুরু করে তাহলে আবার বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে স্প্যানিশ অর্থনীতি। কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থমন্ত্রী লুইস ডি গুইনডোস অবশ্য সবাইকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন যে, এমন কিছু হওয়া কখনোই সম্ভব না। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা এতে আস্থা পাবেন কিনা, শেয়ারবাজারে অস্থিরতা শুরু হবে কিনা, সেটা নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা তখন শুধু স্পেনের সমস্যা হয়ে থাকবে না। পুরো ইউরোপকেই আবার পড়তে হবে নতুন টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে।

কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা নতুন করে ভাবাবে ইউরোপিয়ান ফুটবল অঙ্গনকেও। কাতালোনিয়া স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে গেলে বার্সেলোনা-ভ্যালেন্সিয়ার মতো দলগুলো স্প্যানিশ লিগে খেলবে কিনা, বার্সেলোনা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগে অংশ নিতে পারবে কিনা- ইত্যাদি প্রশ্ন ঝুলে আছে ইউরোপের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে।

প্রাসঙ্গিক: 

রাজনীতিতেও চলছে বার্সা-রিয়াল লড়াই

স্বাধীন কাতালোনিয়ার দাবি বার্সেলোনারও

এল ক্লাসিকো কি শুধুই ফুটবলীয় লড়াই?

যখন বার্সার ওপর ছিল মাদ্রিদের রাজত্ব

 

রুদ্র, হাতে মিলিয়ে যাওয়া হাওয়াই মিঠাই

ছোটবেলায় প্রথমবারের মতো বাজার থেকে হাওয়াই মিঠাই কিনেছিল এক দুরন্ত বালক। শৈশবের অপার বিস্ময় আর আনন্দ নিয়ে উপভোগ করতে চেয়েছিল রঙিন-সুদৃশ্য বস্তুটিকে। খুশিতে দৌড়েছিল অনেকটা পথ। তার পর বাড়িতে এসে যখন মুঠো খুলল তখন দেখল, সে মিঠাই হাওয়াতেই মিলিয়ে গেছে। হাতে শুধু কিছু রং লেগে আছে।

বালকটিকে আমরা চিনি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ নামে। দুনিয়ার দাবি না মিটিয়ে অকালে চলে যাওয়া এই কবির আজ মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯১ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে অন্যলোকে পাড়ি জমিয়েছিলেন সদা বিদ্রোহী এই কবি।

rudro

মৃত্যুর মাত্র একদিন আগে হাওয়াই মিঠাইয়ের গল্পটা রুদ্র নিজেই শুনিয়েছিলেন তাঁর বড় আপাকে। আক্ষেপ করেছিলেন। প্রায় পুরো জীবন ধরে করে আসা প্রচুর অনিয়ম, শরীরের প্রতি যত্ন না নেওয়ার জন্য দুষেছিলেন নিজেকে। পণ করেছিলেন নিয়মবদ্ধ হওয়ার। কিন্তু মৃত্যুর নির্মমতা থেকে রেহাই মেলেনি বাংলাদেশের ট্র্যাজিক এই বিপ্লবী কবির।

ছোটবেলায় যে বাজার থেকে হাওয়াই মিঠাই কিনে নিতে চেয়েছিলেন অপার আনন্দের স্বাদ, মংলার সেই মিঠেখালি বাজারের পাশে নিজ পৈতৃক বাড়িতে রুদ্র কাটিয়েছিলেন জীবনের শেষ কয়েকটি বছর। অনেক কিছু নতুন করে গড়তে চেয়েছিলেন। দিনবদলের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন নতুন করে। ‘ভালো আছি ভালো থেকো’র মতো জনপ্রিয় কিছু গান ও অনেক কবিতা রচেছিলেন শেষ জীবনের দিনগুলোতে। সম্প্রতি রুদ্রর মংলার বাড়িতে বসে সেসব গল্প তাঁর সর্বকনিষ্ঠ ভাই সুমেল সারাফাতের কাছ থেকে শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল লেখকের। সেই বিবরণের ওপর ভিত্তি করেই লেখা হয়েছে রুদ্রর শেষ জীবনের আখ্যানগুলো।

মংলার মিঠেখালিতে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর পৈত্রিক দোতালা বাড়ি

মংলার মিঠেখালিতে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর পৈত্রিক দোতালা বাড়ি। ছবি: সাদ্দাম হোসেন

সোনালী খামার

নন্দিত-নিন্দিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর ১৯৮৭ সালের শেষের দিকে অবসাদগ্রস্ত রুদ্র চলে আসেন মংলায়। এসে দেখেন ‘উপদ্রুত উপকূলে’র মানুষরা দিন কাটাচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। নিজের জমি থেকেও নেই। নামমাত্র কিছু টাকা দিয়ে বা না দিয়ে সেই জমি গায়ের জোরে দখল করে রেখেছে ক্ষমতাশালীরা। স্বভাবজাত রুদ্র স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবাদ করলেন এবং জমির ওপর কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চালালেন।

দুই বছর অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর ১৯৮৯ সালের দিকে এসে রুদ্র দেখতে পান সফলতার মুখ। কৃষকদের নিয়ে গড়ে তোলেন একটি সমবায় সমিতি। যেখানে কৃষকরা যুক্ত থাকবেন শেয়ারের ভিত্তিতে। আগে যেখানে নিজের জমির ওপর কোনো অধিকারই ছিল না, সেখানে কৃষক এখন নিজের জমির পরিমাণে লভ্যাংশ পাওয়ার কথা চিন্তা করতে পারছে। রুদ্র তাঁর সহজাত কবি ভাব থেকে এই প্রয়াসের নাম দিয়েছিলেন ‘সোনালী খামার’।

মংলা ফিরে এসে রুদ্র শুরু করেছিলেন ঠিকাদারি দিয়ে। চূড়ান্ত সৎ থাকার লোকসান গুনতে হয়। পরে ঘুষ না দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টাকা তুলতেও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। এমনকি একপর্যায়ে সরকারি এক কর্মকর্তাকে মারধরও করেছিলেন রুদ্র। ঠিকাদারির এসব ঠ্যাকা সামলাতে সামলাতেই অবশ্য চালিয়ে যাচ্ছিলেন ‘সোনালী খামারের’ কাজ। সে সময় তিনি একটা গান লিখেছিলেন, ‘ঘেরে ঘেরে ঘেরাও হলো চারিদিক/ঘেরের ঘোড়া চলছে ছুটে দিগ্বিদিক’।

অন্তর বাজাও

রুদ্রর গানের কথা আসলে অবধারিতভাবে চলে আসে ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ গানটির কথা। ‘আমার ভেতর-বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে’। এই অন্তর ছিল রুদ্রর গানের কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর কথা ছিল গান হবে অন্তর বাজিয়ে। তিনি একটা গানও লিখেছিলেন, ‘ঢোলক বাজাও দোতারা বাজাও, সুর মিলছে না/অন্তর বাজাও নইলে তাল মিলবে না’। আর তাঁর গানের দলের নাম ছিল ‘অন্তর বাজাও’।

মংলায় এসেই রুদ্র লিখেছিলেন ও সুর করেছিলেন তাঁর গানগুলো। ১৯৯৬ সালের দিকে গানগুলো নিয়ে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন রুদ্রর ছোটভাই সুমেল সারাফাত।

Rudra album

বাংলার আবহমান চিরায়ত সংস্কৃতির হারিয়ে যেতে বসা জিনিসগুলো আবার ফিরিয়ে আনার প্রয়াস দেখিয়েছিলেন রুদ্র। প্রায়ই আয়োজন করতেন জারিগান, কবিগানের। প্রতি সপ্তাহে বাড়ির পাশের নদীতে বসত নৌকাবাইচের আসর। আমুদে রুদ্র প্রায় সব সময়ই হইহুল্লোড় করে মেতে থাকতেন কিছু না কিছু নিয়ে। আবার রাতে একলা হওয়ার পর লিখে যেতেন একের পর এক কবিতা। মৃত্যুর আগ দিয়ে প্রায় তিনটি পাণ্ডুলিপি তিনি একেবারে প্রস্তুত করে গিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় কবিতার বই ‘এক গ্লাস অন্ধকার’, ‘অন্তরঙ্গ নির্বাসন’ ও নাট্যকাব্য ‘বিষ বিরিক্ষের বীজ’। মিঠেখালিতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন ‘অগ্রদূত ক্রীড়াচক্র’।

কিন্তু প্রতিভাবান ও উদ্যমী এই মানুষটা নিজের প্রতি খেয়াল খুব কমই রেখেছেন। ১৯৯১ সালের জুন মাসে আলসারের প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন রুদ্র। ভর্তি হন হাসপাতালে। কয়েক দিন সেখানে থেকে সুস্থও হয়ে গিয়েছিলেন প্রায়। বাড়িতেও ফিরে এসেছিলেন ২০ জুন। পরিবারের সবার সঙ্গে কাটিয়েছিলেন অনেক স্মৃতিকাতর সময়। কিন্তু সেই কলতান ছিল ক্ষণস্থায়ী। ২১ জুন সকাল ৭টায় হঠাৎ স্ট্রোক করে রুদ্র চলে যান না-ফেরার দেশে।

শেষ সময়টাতে রুদ্র নিজেই তাঁর বড় আপাকে শুনিয়েছিলেন হাতে মিলিয়ে যাওয়া হাওয়াই মিঠাইয়ের গল্পটি। রুদ্রর জীবনটাও কি সেই হাওয়াই মিঠাইয়ের মতোই নয়? তাঁর কিছু রং লেগে আছে আমাদের মাঝে। কিন্তু আমরা হাওয়াতেই হারিয়ে ফেলেছি মিঠাইটা।

ভানুসিংহ অনুপ্রাণিত ‘রাই-কৃষ্ণ পদাবলি’

 

কৈশোর ও প্রথম যৌবনের রবীন্দ্রনাথ; নোবেলজয়ী বিশ্বকবি হওয়ার প্রথম স্মারক রেখেছিলেন ‌’ভানুসিংহ’ ছদ্মনাম ধারণ করে। রাধা-কৃষ্ণের লীলা নিয়ে মধ্যযুগের কবিদের রচিত বৈষ্ণব পদাবলির অনুকরণে রচেছিলেন ভানুসিংহের পদাবলি। রবীন্দ্রনাথের কবি-জীবনের প্রথমার্ধে রচিত ব্রজবুলি ভাষার এই কবিতাগুলর অনুপ্রেরণাতেই তাঁর জয়ন্তীতে আয়োজিত হলো ‘রাই কৃষ্ণ পদাবলি’। শিল্পকলা একাডেমিতে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি আয়োজিত এই গীতিনাট্যের রচনাকার কবি শেখ হাফিজুর রহমান। সামগ্রিক ভাবনা ও পরিচালনা করেছেন সুকল্যাণ ভট্টাচার্য।

Rai Krishna

গীতিনাট্যটি রচিত হয়েছে সেই প্রেক্ষাপটে যখন বৃন্দাবনে ঘনিয়েছে বিরহের ছায়া। নিকট হয়েছে কৃষ্ণের মথুরা গমনের কাল। রাধা সহসা পায় না কৃষ্ণ-দর্শন। সুহৃদ সুবল, বৃন্দাবনের গোপীরাও পায় না কালার হদিস। কৃষ্ণ বিরহে রাধার আকুলতার মধ্যেই বেজে ওঠে মথুরার নতুন রাজা হতে চলা ‘মাধবের’ রথ-ধ্বনি। এদিকে শেষবারের মতো মথুরায় চলে যাওয়ার আগে কৃষ্ণও ব্যাকুল হন রাধা-মিলনের জন্য। কিন্তু অভিমানিনী রাধার মানও সহজে ভাঙার নয়। অতঃপর রূপের প্রশংসায়, মায়ার আস্তরণে, সখা-সখীদের দিয়ে রাস আয়োজন করে রাইয়ের মানভঞ্জন করেন কৃষ্ণ। অপার স্বর্গীয় শুদ্ধতা, শ্রদ্ধা ও প্রেম-মগ্নতায় রাধা নিজেকে সমর্পণ করেন কৃষ্ণের কাছে। নেচে-গেয়ে ব্যক্ত করেন মিলনের আনন্দের কথা। পরস্পরের সাথে পূনর্মিলনের আকাঙ্ক্ষার কথা। নৃত্যরত অবস্থায় রাধা-কৃষ্ণের স্বর্ণালি ও কৃষ্ণ বর্ণ যেন একীভূত হয়ে যাচ্ছিল আদি-অন্তহীন যুগল মূর্তির মতো। তাঁরা যেন ঘটাচ্ছিলেন পরম পবিত্র ও মৃত্যুহীন প্রেমের অনিন্দ্য প্রকাশ।

রাধা-কৃষ্ণের বিরহ ও মিলনকেন্দ্রিক এই পালায় সরব উপস্থিতি ছিল রবীন্দ্রনাথের। পরিবেশিত হয় ‘শ্যাম রে নিপট কঠিন মন তোর’, ‘বাদরবরখন নীরদগরজন’সহ ভানুসিংহ পদাবলির কয়েকটি গান। সঙ্গীত তত্ত্বাবধানে ছিলেন হৈমন্তী শুক্লা। পরিচালনা করেছেন রত্না চৌধুরি। কণ্ঠ দিয়েছেন হৈমন্তী শুক্লা, রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যা, মনমন ভট্টাচার্য প্রমুখ। গীতিনাট্যের ধারা বর্ণণা করেছেন উপমহাদেশের দুই প্রখ্যাত আবৃত্তিকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়। নৃত্যাংশে রাই ও কৃষ্ণের ভূমিকায় ছিলেন বাংলাদেশের নন্দিত দুই নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা ও শিবলী মোহাম্মদ।

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি আয়োজিত এই মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রাই-কৃষ্ণ পদাবলির আগে কাজী নজরুল ইসলামের অসাম্প্রদায়িক ভাবনার অনুপ্রেরণায় অনুষ্ঠিত হয় ‘চির উন্নত মম শির’ শিরোনামের নৃত্যানুষ্ঠান। পরিবেশনা করেন পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত থেকে আগত নৃত্যশিল্পী প্রসূন ব্যানার্জি এবং তাঁর দুই ছাত্রী সুমনা কান্দের ও স্নেহা দাস।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ সরণ। সভাপতিত্ব করেছেন বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সভাপতি ড. এ কে আজাদ চৌধুরী।

মক্কা যেন নতুন ‘লাস ভেগাস’

ইসলাম এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ক্রমেই বাড়ছে ইসলাম ধর্মের অনুসারী। যার শুরুটা হয়েছিল, ১৫০০ বছর আগে। সৌদি আরবের মক্কা নগরে। মহানবী হজরত মুহম্মদের (সাঃ) অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে মরুদেশের এই শহর ঘিরে। কিন্তু ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র এই শহর যেন ক্রমেই পরিণত হচ্ছে প্রমোদনগরে। পুরোনো সব ঐতিহাসিক স্থাপনায় বুলডোজার চালিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে আধুনিক শহর, হোটেল। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে বড় হোটেল নির্মানের পরিকল্পনা চলছে মক্কায়।

Abraj Kudai

২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার কথা বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই হোটেলটি। ৪৫ তলা উঁচু এই ভবনের ওপরে থাকবে চারটি হেলিপ্যাড। শয্যাকক্ষ থাকেব ১০ হাজারেরও বেশি। রেস্টুরেন্ট থাকবে ৭০টি। পাঁচটি তলা বিশেষভাবে থাকবে সৌদি রাজপরিবারের ব্যবহারের জন্য। ২.৪ বিলিয়ন ইউরো ব্যায়ে নির্মিত ‘আবরাজ কুদাই’য়ে থাকবে পাঁচ-তারা হোটেলের সব বিলাসব্যবস্থা। এ যেন শহরের মধ্যেই আরেক শহর!

মক্কার মানাফিয়া অঞ্চলের যে জায়গায় এই বিলাসবহুল হোটেলটি নির্মিত হচ্ছে তার মাত্র এক মাইল দক্ষিণেই অবস্থিত ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র ‘মসজিদ আল-হারাম’। আর এই ২০০০ ফুট উঁচু হোটেলটা গড়ে তোলা হয়েছে এমন এক জায়গায়, যেখানে একসময় ছিল একটা অটোমান আমলের দুর্গ। যে পাহাড়ের ওপর দুর্গটা বানানো হয়েছিল; সেই পাহাড়সহই দুর্গটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এই হোটেল নির্মানের জন্য।

শুধু এই অটোমান আমলের দুর্গই না। মহানবীর স্মৃতিবিজরিত অনেক স্থাপনাই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ‘আধুনিকিকরণের’ খাতিরে। হজরত মুহম্মদের (সাঃ) প্রথম স্ত্রী খাদিজার আদি বাড়ি ভেঙে বানানো হয়েছে একটি গণশৌচাগার। আবু বকরের বাড়ির ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে হিলটন হোটেল। আবু বকরের নাতির বাড়ি ভেঙ্গে বানানো হয়েছে রাজপ্রাসাদ।

ইসলামিক ইতিহাসে ঐতিহাসিক এসব স্থাপনার গুরুত্ব অনেক। কিন্তু সেগুলো ভেঙ্গে ফেলায় মক্কার ঐতিহাসিক চরিত্রটি নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামিক ঐতিহ্য গবেষণা ফাউন্ডেশনের প্রধান ইরফান আল-আওয়ালি। তিনি বলেছেন, ‘এখন আমরা মক্কার শেষ দিনগুলো দেখছি। এখানে আসা তীর্থযাত্রীদের খুবই সাধারণভাবে প্রার্থনা করার কথা। কিন্তু এখন তাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে প্রায় লাস ভেগাসের মতো। অনেক তীর্থযাত্রীরই সেই রকম জীবনযাপনের সামর্থ্য থাকে না।’ পুরোনো ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ভেঙে জাঁকজমকপূর্ণ নগর গড়ে তোলায় মক্কার ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যও নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ইরফান।

1

শুধু ধর্মীয় তীর্থযাত্রীরাই না, মক্কায় এখন অনেকেই আসছেন বিবাহ বা বড় কোনো কনফারেন্স আয়োজনের জন্য। পর্যটন থেকে বছরে প্রায় ৬ বিলিয়ন ইউরো আয় করে সৌদি আরব। আর ইসলাম ধর্মের জন্মভূমিকে আরও পর্যটনবান্ধব করে তোলার জন্য বানানো হচ্ছে আধুনিক বিলাসবহুল সব স্থাপনা। মক্কা নগরের পশ্চিম প্রান্তে বানানো হচ্ছে ২৬টি বিলাসবহুল হোটেলের একটা কমপ্লেক্স। যেখানে থাকবে প্রায় ৪০০ দোকান ও ৫০০ রেস্টুরেন্ট। সেখানে নির্মান করা হবে ছয়তলা একটি মসজিদ।

১৯৫০-এর দশকের মক্কার ছবি থেকে দেখা যায় খুবই সাধারণভাবে হজ পালন করতে আসছেন ইসলাম ধর্মানুসারীরা। কিন্তু এখন পবিত্র কাবাঘরকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল মসজিদ। যেজন্য ইতিমধ্যেই ভেঙে ফেলতে হয়েছে প্রাচীন অনেক স্থাপনা। ২০৪০ সাল নাগাদ সেটা আরও বড় করার পরিকল্পনা আছে সৌদি আরবের। এখন যেখানে ৩০ লক্ষ মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন; সেই জায়গায় সেটাকে ৭০ লক্ষ মানুষের উপসনালয়ে পরিণত করার চিন্তা করছে সৌদি কর্তপক্ষ। বহুতল এই মসজিদ এতটাই বড় হবে যে প্রান্তে দাঁড়ানো মানুষদের দিকভ্রষ্ট হওয়ারও সম্ভাবনা থাকবে বলে মত দিয়েছেন ইরফান। তিনি বলেছেন, ‘মসজিদটা হয়ে গেছে একটা বিমানবন্দরের টার্মিনালের মতো। মানুষ ভুল দিকে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছে। কারণ তারা জানেই না যে মূল মসজিদটা আসলে কোন দিকে।’

mecca2

খুলনার এক ‘দার্শনিক’ রিকশাওয়ালার গল্প

দর্শন মানে দেখা। কিছু না কিছু আমরা দেখতে থাকি সব সময়ই। সেই অর্থে প্রতিটা মানুষই আসলে দার্শনিক। শ্রেণিবিভক্ত সমাজে এখন অবশ্য খুব উচ্চপর্যায়ের চিন্তকদেরই দার্শনিক বলার চল।

নিম্ন শ্রেণির পেশাজীবী মানুষও যে কোনো বিষয়কে অনেক গভীরে তলিয়ে দেখার সামর্থ্য রাখেন, সেটা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। মাঝেমধ্যে সেটা মনে করিয়ে দেন খুলনার রিকশাচালক মুনির হাওলাদারের মতো মানুষ। তিনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়াম লিগ (আইপিএল) না দেখার কারণ হিসেবে অকপট যুক্তি দেন, ‘ওটা কে দেখে? জুয়ার খেলা!’ তিনি খুব দারুণভাবে বিশ্লেষণ করে যান খুলনা টেস্টের আদ্যোপান্ত। পরিচয় দেন গভীর রাজনৈতিক বিচক্ষণতার।

Rickshaw_by_onubhutiheen

খুলনা টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের লিড ছাড়িয়ে গেছে ২০০ রান। পাকিস্তানের রানপাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে ধুঁকছে বাংলাদেশ। স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে চেপে বসি মুনিরের রিকশায়। প্রথম দু-এক কথায় জানা গেল, তিনি মাঠে বসে খেলা দেখে খুব একটা তৃপ্তি পান না। টিভিতে বিশ্লেষণযুক্ত খেলা দেখতেই তিনি বেশি অভ্যস্ত। তাই বলে মাঠে বসে খেলা দেখার অভিজ্ঞতা যে একেবারেই নেই মুনিরের, তা নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুলনায় যে হাতে গোনা কয়েকটি ম্যাচ হয়েছে, সেগুলোর দু-একটিতে উপস্থিত ছিলেন মধ্যবয়সী এই রিকশাওয়ালা।

ক্রিকেটের খবরাখবর রাখেন, এমনটা জানার পর তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আইপিএল দেখেন না? প্যাডেল মারতে মারতেই মুনির জবাব দেন, ‘ওটা কে দেখে? জুয়ার খেলা! সাকিব থাকলে কলকাতার খেলা দেখি।’ সাকিব যে পাকিস্তানের বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজ শেষ করে আবার কলকাতায় পাড়ি জমাবেন সেই খবরও আছে তাঁর কাছে।

এরপর বাংলাদেশের খেলা নিয়ে কিছুক্ষণ আফসোস করলেন মুনির। ক্রিকেটারদের দুষলেনও খানিক। তবে অনেকখানি ব্যাটফুটে চলে গেলেও বাংলাদেশ যে টেস্টটা ড্র করতে পারবে সেটা মনপ্রাণ দিয়েই বিশ্বাস করেন তিনি। তাঁর সমীকরণ অনুযায়ী, দেড়দিনের মতো ব্যাটিং করতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। নিজের প্রত্যাশা পূরণের দাবি রেখে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দিকে ছুড়ে দিলেন মোক্ষম প্রশ্নটা : ‘আটজন ব্যাটসম্যান নিছে দলে। না পারলে হইব?’

খুলনা টেস্টের চতুর্থ দিনে (শুক্রবার) যে ভালো দর্শক হবে সেই আশাবাদ শোনা গেল মুনিরের কণ্ঠে। প্রথম তিনদিন অফিস করা মানুষগুলো তো সপ্তাহান্তে সত্যিই চাইবেন গ্যালারিতে বসে প্রিয় তারকাদের খেলা দেখতে। খুলনায় প্রথম তিনদিনের দর্শকসমাগমও ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু খুলনায় খুব বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজিত হয় না বলে আক্ষেপও করলেন মুনির।

সব শেষে দিলেন নিজের রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয়। তাঁর ধারণা, ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশন নির্বাচন থাকায় এবার খুলনাতে টেস্ট আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার পরে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজিত হয় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের মর্যাদা পেলেও সুন্দরবনের কোলঘেঁষা খুলনা খানিকটা উপেক্ষিতই থেকে গেছে। মুনিরের কথা শুনে সত্যিই মনে জাগল প্রশ্নটা- সত্যিই তো! ঢাকা-চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার কারণেই কি শিকে ছিঁড়েছে খুলনার ভাগ্যে?

যে মানুষটা টাকা ছাড়া বাঁচে

Money-Trap (1)টাকায় ঘুরছে দুনিয়ার চাকা। আক্ষরিক অর্থেই। টাকাপয়সা ছাড়া জীবনের একটা মুহূর্তও কল্পনা করা কঠিনই বটে। আমাদের ভালো মন্দ, আশা-ভরসা, দুঃখ-দুর্দশা, বাঁচা-মরাই যেন বন্দী আছে হাতে হাতে ঘোরা ছাপানো কাগজগুলোর ভেতরে। এই টাকাই যেন আমাদের প্রাণভোমড়া। কাছে থাকলে সুখ-সাচ্ছন্দ্য-ঐশ্বর্য্য আর না থাকলে কষ্ট-ভয়-অসহায়ত্ব। কিন্তু এই যুগেও কিছু মানুষ একা একাই চেষ্টা করছেন টাকাবিহীন জীবন যাপন করার।

আয়ারল্যান্ডের মার্ক বয়েল টাকাপয়সার ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছেন ২০০৯ সালের নভেম্বরে। ব্রিস্টলে একটা অর্গানিক ফুড ফার্মের কাছে থাকেন একটা ক্যারাভানে। সেটা তিনি পেয়েছিলেন ফ্রিসাইকেলের কাছ থেকে, টাকাপয়সার লেনদেন ছাড়াই। বাজার থেকে না কিনে নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করার জন্য এই ফার্মে সপ্তাহে তিনদিন কাজ করেন বয়েল। রান্না-বান্নার জন্য ব্যবহার করেন একটা কাঠ জ্বালানোর চুলা। বিদ্যুত সরবরাহের জন্য ক্যারাভ্যানের সাথেই লাগানো আছে একটা সোলার প্যানেল। বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের মধ্যে আছে ল্যাপটপ আর মোবাইল। তবে মোবাইলটা চালু থাকে শুধুই ইনকামিং কলের জন্য। বয়েল নিজের এই চিন্তাভাবনার নাম দিয়েছেন ‘ফ্রিকোনোমি’। ২০০৭ সালে এটার প্রচার শুরুর পর এখন তাঁর এই অনলাইন নেটওয়ার্কে যোগ দিয়েছে ১৭ হাজার মানুষ। ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছে তার বই; টাকা ছাড়া মানুষটা: ফ্রিকোনোমি জীবনধারার এক বছর

টাকাবিহীন জীবনযাপনের গল্পটা শুনুন বয়েলের মুখেই:

সবকিছুর শুরুটা হয়েছিল একটা পাবে বসে। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে কথা বলছিলাম দুনিয়ার সমস্যাগুলো- সস্তা শ্রমের কারখানা, পরিবেশ বিপর্যয়, তেল-খনিজের জন্য যুদ্ধ ইত্যাদি নিয়ে। আর আমি উপলব্ধি করেছিলাম যে, সবগুলোই কোনো না কোনোভাবে টাকার সঙ্গে সম্পর্কিত।

Moneyless man1

এরপরই আমি টাকাবিহীন জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নিলাম। বেচে দিলাম আমার ব্রিস্টলের হাউজবোটটা। অরগ্যানিক ফুড কোম্পানির চাকরিটাও ছেড়ে দিলাম। এরপর যেসব জিনিস আমি এতদিন ধরে কিনতাম সেগুলোর একটা তালিকা বানালাম। আর চেষ্টা করলাম সেগুলো অন্য কোনো উপায়ে জোগাড় করার। টুথপেস্টের জন্য এখন আমি ব্যবহার করি কাটলফিশের হাড় ও একধরনের বুনো বীজের মিশ্রন। এইরকম জীবনযাপন করতে গেলে আইপডের মতো জিনিসগুলো আপনাকে অবশ্যই বাতিলের খাতায় রাখতে হবে। এখন অবশ্য রান্নাঘরের পাশের পাখিগুলোই হয়ে গেছে আমার নতুন আইপড।

টাকাবিহীন দুনিয়ায় সবকিছুতেই একটু বেশি সময় আর শ্রম দিতে হয়। ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোওয়ার কাজটা আমি মুহূর্তেই করতে পারতাম। কিন্তু এখন সেই কাজটা করতে আমার ঘন্টাদুয়েক সময় লেগে যায়।

আমি শুরুটা করেছিলাম এক বছরের কথা চিন্তা করে। কিন্তু এই জীবনধারাটা আমার এতই ভালো লেগেছে যে, আমি এভাবেই বাকি জীবনটা কাটাতে চাই। আমি জীবনে কখনোই এত খুশি আর সুস্থ ছিলাম না।

আমার শৈশবটা কেটেছে খুবই স্বাভাবিকভাবে। মনে হয়, প্রথমে আমার কাজকর্ম দেখে বাবা-মা খুব অবাকই হয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাঁরা আমাকে পুরোপুরি সমর্থন দিচ্ছেন। এমনকি তারা নিজেও এই রকম জীবনযাপনের চেষ্টা করবেন বলে ভাবছেন।

টাকাপয়সা ছাড়া সমাজের সবার সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টাটা অবশ্য মাঝেমধ্যে হতাশার জন্ম দেয়। আমি বড় হয়েছি উত্তর আয়ারল্যান্ডে, যেখানে বন্ধুবান্ধবকে কিছু কিনে দেওয়াটা পৌরুষত্বের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু এখন আমি তাদেরকে আমার ক্যারাভ্যানে আসার আমন্ত্রণ জানাই, আগুনের পাশে বসে হাতে বানানো আপেলের রস খাওয়ার জন্য।

মার্ক বয়েলের মতো টাকাবিহীন জীবন যাপন করছেন জার্মানির Heidemarie Schwermer, আমেরিকার ড্যানিয়েল সুয়েলোরা। আর সবাই বলে আসছেন একই কথা। টাকাবিহীন জীবনটা নতুন কোনো ধারণা নয়। বস্তুত টাকার বন্দোবস্তটাই খুবই সাম্প্রতিক সময়ের উদ্ভাবন। মনুষ্য ইতিহাসের খুবই ক্ষুদ্র একটা সময় ধরেই এটা চলছে। ইতিহাসের বেশিরভাগ সময়ই মানুষ কাটিয়েছে এমন সমাজে যেখানে এখনকার মতো টাকা-পয়সার হিসেবে জীবন নির্ধারণ হতো না।

গোঁফ দিয়ে যায় চেনা!

গোঁফ চুরি যাওয়ার অলীক কল্পনাতে কী ভয়ানক ক্ষ্যাপাটাই না ক্ষেপেছিলেন সুকুমার রায়ের সেই হেড অফিসের বড় বাবু! সব্বাইকে ইচ্ছেমতো গালমন্দ করে শেষে ভীষণ রেগে বিষম খেয়ে তিনি লিখে দিয়েছিলেন, ‘গোঁফকে বলে তোমার আমার- গোঁফ কী কারও কেনা? গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা।” সুকুমার রায়ের ‘গোঁফচুরি’ ছড়ার এই বড়বাবু নিছকই একটি কাল্পনিক চরিত্র। তবে গোঁফের প্রশ্নে সত্যিকারের দুনিয়াতেও কাউকে এমনভাবে উত্তেজিত হয়ে যেতে দেখলে অবাক হবেন না। নিজেদেরকে গোঁফ দিয়েই চেনানোর কাজটা কিন্তু সত্যিই করছে এই সময়ের একদল মানুষ।

movember

শুরুটা হয়েছিল ১০ বছর আগে এই নভেম্বর মাসেই। অস্ট্রেলিয়ার একটি পাবে বসে সমসামফিক ফ্যাশন নিয়ে কথা বলছিলেন দুই বন্ধু ট্রেভিস গারোনে আর লুক স্ল্যাটারি। হঠাৎই একজন মজা করে বলে বসেছিলেন গোঁফটাকেও ফ্যাশন হিসেবে ফিরিয়ে আনার কথা। সূত্রপাতটা এখানেই। ঠাট্টাচ্ছলে বলা এই কথাটাই পরে রুপ নিল পুরুষদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির মতো গুরুতর আলোচনায়। শুধু ফ্যাশন হিসেবে না, গোঁফ রাখার ব্যাপারটিকে তারা অচিরেই নিয়ে আসলেন প্রোস্টেট ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে, যেটা বিশেষভাবে পুরুষদেরই হয়ে থাকে। গোঁফের ইংরেজি মুশটাস (moustache)-এর ম, আর নভেম্বরের ভেম্বর মিলিয়ে এই মাসটাকেই এখন অনেকে ডাকেন মভেম্বর বলে। বিশ্বব্যাপি পুরো নভেম্বর মাস জুড়েই সচেতনভাবে গোঁফ রাখার অভ্যাস তৈরি করছেন তাঁরা।
শুরুটা হাসি-ঠাট্টাচ্ছলে হলেও এখন এটা শুধুই মজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এই তৎপরতার একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা যেমনটা বলেছেন, ‘পুরুষদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিস্থিতির পরিবর্তন করাই মভেম্বরের লক্ষ্য।’ ২০০৪ সালে গ্রারোনে আর স্ল্যাটারি প্রতিষ্ঠা করেছেন মভেম্বর ফাউন্ডেশন। অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠানটি প্রোস্টেট ক্যান্সার, টেস্টিকুলার ক্যান্সার ও বিষণœতা বিষয়ে বিশেষভাবে পুরুষদের মধ্যেই সচেতনতা তৈরির জন্য অর্থ সংগ্রহ ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। ২০১২ সালে তারা এই উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করেছিল ১৩০ মিলিয়ন ডলার। সেবছর এটা গ্লোবাল জার্নালের শীর্ষ ১০০ এনজিও-র তালিকাতেও স্থান পেয়েছিল। প্রাপ্ত অর্থের একটা বড় অংশ ব্যায় করা হয় প্রোস্টেট ক্যান্সার, টেস্টিকুলার ক্যান্সার নিয়ে গবেষণার পেছনে। ২১টিরও বেশি দেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে এই মভেম্বর ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম।
বিশ্¦ব্যাপী পুরুষদের মধ্যে প্রস্টেট ক্যান্সারটি খুবই পরিচিত ধরণের ক্যান্সার। পুরুষদের মধ্যে যতজন ক্যান্সার আক্রান্ত হয় তার ৩০ শতাংশই এই প্রস্টেট ক্যান্সার। আর ১৫-৩৪ বছর বয়সী পুরুষরা আক্রান্ত হয়ে থাকেন টেস্টিকুলার ক্যান্সারে। আর এটা ক্রমশই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। গত ৪০ বছরে টেস্টিকুলার ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে দুই গুন। প্রতি ২৭০ জন পুরুষের মধ্যে একজন জীবনের কোনো এক সময় ভোগেন এই ক্যান্সারে। মভেম্বর তৎপরতা পুরুষদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করার পথে সত্যিই বেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
২০০৩ সালের নভেম্বরে এই উদ্যোগটা নেওয়ার বছর তারা কোনো অর্থ সংগ্রহ করতে পারেননি। পরের বছর অস্ট্রেলিয়ার প্রোস্টেট ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের জন্য তাঁরা সংগ্রহ করেছিলেন ৫৪ হাজার ডলার। আর এখন পর্যন্ত ৩০০ মিলিয়ন পাউন্ড তারা সংগ্রহ করেছেন প্রোস্টেট ও টেস্টিকুলার ক্যান্সারের চিকিৎসা গবেষণার জন্য। আর এই সময়ের মধ্যে হাজার হাজার পুরুষ এই বিষয়ে সচেতন হয়েই গোঁফ রেখেছেন। রোগগুলো নিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন যেটার প্রচলন আগে অতটা ছিল না।

movember3
মভেম্বর তৎপরতার সবচেয়ে বড় প্রভাবটা পড়েছে গবেষণার ক্ষেত্রে। প্রতি বছর যুক্তরাজ্যের প্রোস্টেট ক্যান্সার মভেম্বরের কাছ থেকে পায় ১৫ মিলিয়ন পাউন্ড। যেটা ব্যয় করা হয় গবেষণা ও অন্যান্য সামাজিক সহায়তা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা বিভাগের প্রধান আইন ফ্রেমের মতে, এটা একটা বড় ধরনের বদল এনেছে, ‘এখন পর্যন্ত ব্রেস্ট ক্যান্সারের তুলনায় অনেক কম বিনিয়োগ আসত প্রস্টেট ক্যান্সার নিয়ে গবেষণার জন্য।’ কম বিনিয়োগের একটা কারণ হতে পারে যে, এটা খুবই জটিল একটা অসুখ। কিন্তু প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা গত ১০ বছরে দ্বিগুন হয়ে গেছে। আর আমরা দেখতে পাচ্ছি যে গত চার বছর ধরে মভেম্বরের প্রভাবটা কিভাবে পড়ছে। বিনিয়োগের পরিমাণ প্রচুর পরিমানে বাড়ার খতিয়ানটা দেখলেই সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়।

চিকিৎসা যেখানে হায়েনার সঙ্গে বসবাস

somalia chained man

যুদ্ধবিধ্বস্ত সোমালিয়ায় মানসিক অসুস্থতার হার খুবই বেশি। পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটির প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন ভোগে মানসিক অসুস্থতায়। বিশ্বজুড়ে যে হারটা দশজনে একজন। বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধের ফলে সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাও আছে খুবই বিপর্যস্ত অবস্থায়। বেশিরভাগ রোগীই কোনো চিকিৎসা সাহায্য পায় না। প্রথাগত নিয়ম অনুসারে এই ধরনের ব্যক্তিদের উপর চালানো হয় নিষ্ঠুর চিকিৎসা পদ্ধতি।

সোমালিয়াতে সামাজিকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ব্যক্তিদের উপর কোনো আত্মা ভর করেছে। এবং তাদের সামনে একমাত্র পথটাই থাকে যে, ঐ ব্যক্তিকে জোরপূর্বক বেঁধে ফেলা ও শেখকে (স্থানীয় ওঝা) খবর দেওয়া। এই শেখরা এরপর ঐ ব্যক্তির উপর প্রয়োগ করতে থাকেন বিচিত্র সব চিকিৎসা পদ্ধতি। শেকল দিয়ে বেঁধে রাখাটা খুবই সাধারণ ব্যাপার। কাউকে কাউকে এমনকি সারাজীবনই বেঁধে রাখা হয় বলে জানতে পেরেছে ইতালিয়ান একটি এনজিও। কখনো কখনো আত্মাকে তাড়ানোর জন্য রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় হায়েনার সঙ্গে একই খাঁচায় রাত কাটানোর জন্য।

caged_hyena_somalia
সোমালিয়ানরা বিশ্বাস করে যে, হায়েনা মানুষের সবকিছুই দেখতে পায়, অশুভ আত্মার উপস্থিতিও। আর হায়েনারাই এই মানসিক সমস্যায় ভোগা মানুষদের মধ্যে থেকে অশুভ শক্তিকে বিতাড়িত করতে পারবে, তাদেরকে খামচে, কামড়ে দিয়ে। নির্মম এই পদ্ধতির শিকার অনেক মানুষ প্রাণও হারিয়েছেন।
আশ্চর্য্যজনক ব্যাপার যে, বর্বর এই চিকিৎসা পদ্ধতিটা বেশ দামীও বটে। পরিবারের প্রিয়জনকে হায়েনার সঙ্গে একই খাঁচায় ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য খরচ করতে হয় ৫৬০ ডলার। যেটা সোমালিয়ানদের গড় বাৎসরিক আয়ের চেয়েও বেশি।
সহিংসতায় পূর্ণ দেশটির যে অংশগুলো বেশি যুদ্ধবিধ্বস্ত, সেখানকার বেশিরভাগ মানুষই মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। খুবই খারাপ কোনো অভিজ্ঞতার পর চাপজনিত মানসিক ব্যাধি হয়ে পড়ে খুবই সাধারণ ব্যাপার। আর সোমালিয়ার সমাজে মানসিক বিপর্যস্ততা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় প্রথাগত পদ্ধতির পথেই হাঁটতে হয় সেখানকার মানুষদের। কারো মধ্যে অস্বাভাবিকতার কোনো ছাপ অনুমান করলেই সবাই উত্তেজিত হয়ে পড়ে তাকে বেঁধে ফেলতে। মোগাডিশুর রেডিও স্টেশনে দিনে তিনবার করে চলা বিজ্ঞাপনটাতে যেমন দেখানো হয়েছে: সবাই চিৎকার করে বলছে, “ও পাগল হয়ে গেছে! ও দৌড়ে পালাচ্ছে! বেঁধে ফেল, বেঁধে ফেল!” সোমালিয়াতে এই দৃশ্যটা খুবই সুপরিচিত।
তবে বিজ্ঞাপনের পরের দৃশ্যটি কিছুটা অন্যরকম, যেটা আশার সঞ্চার করেছে আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে। যেখানে একটি কণ্ঠকে বলতে শোনা যায়, “শেকল দিয়ে বেঁধ না। তাকে ডা. হাবের হাসপাতালে নিয়ে চল! কেউ যদি মানসিক সমস্যায় ভোগে, তাহলে তাকে বেঁধ না, নিয়ে যাও ডা. হাবের কাছে। তিনি সাহায্য করবেন।”

dr hab_Somalia
ডা. হাবের এই কর্মকা-টা শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালে এরকম একটা ঘটনা স্বচক্ষে দেখার পর। তিনি দেখেছিলেন কিছু নারীকে সড়কে তাড়া করছে একদল তরুণ। এই ঘটনাটাই নাড়া দিয়েছিল হাবকে। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ‘আমি সোমালিয়ার প্রথম মানসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করব।’ মোগাডিশুতে হাবের পাবলিক হেলথ হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সোমালিয়ার ছয়টি আলাদা জায়গায় এটার শাখা আছে।
ডা. হাবের পুরো নাম আবদি রহমান আলি আওয়ালে। সত্যিকারের কোনো মানসিক রোগের চিকিৎসকও তিনি নন। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে তিন মাসের একটা বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ নিয়েই তিনি মিশনটা শুরু করেছিলেন। এবং তাঁর দাবি অনুযায়ী, তিনি বহুবিধ বিষন্নতা থেকে শুরু করে স্কিজোফ্রেনিয়া পর্যন্ত চিকিৎসা করতে পারেন। একই সঙ্গে এসম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজটাও করে যাচ্ছেন ডা. হাব। তিনি বলেছেন, ‘আমরা সবাইকে দেখানোর চেষ্টা করছি যে, (প্রথাগত পদ্ধতিগুলো) একেবারেই অর্থহীন। মানুষ আমাদের রেডিও বিজ্ঞাপন শুনছে আর তারা জানছে যে, মানসিক অসুস্থতাও অন্য একটা অসুখের মতো যেটার চিকিৎসা প্রয়োজন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসারে।’- বিবিসি অনলাইন

Somaliya mental illness treatment

অ্যামাজনে জরিপ চালাবে ব্রাজিল সরকার

Amazon_rain+forest

অ্যামাজন রেইনফরেস্টের প্রানবৈচিত্র নিয়ে জরিপ চালানোর পাহাড়সম কাজ হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে ব্রাজিল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই রেইনফরেস্টের গাছ, মাটি ও জীববৈচিত্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের এই কাজটি আগামী চার বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে দেশটির বনবিভাগ। ব্রাজিল সরকারের এই জরিপটি পরিচালনার জন্য ৩৩ মিলিয়ন ডলার বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে জাতীয় উন্নয়ন ব্যাংক।
শেষবারের মতো এই ধরনের পুঙ্খানুপুঙ্খ জরিপ চালানো হয়েছিল ৩০ বছর আগে। অবাধে গাছ কাটার ফলে সেসময় থেকেই ব্রাজিলিয়ান অ্যামাজনের প্রাণবৈচিত্র ক্রমাগতভাবে হুমকির মুখে পড়তে শুরু করেছিল। ১৯৮৩ সালে প্রকাশ করা হয়েছিল সেই বিস্তৃত জরিপটির ফলাফল। বনমন্ত্রী হামেল বলেছেন যে, এবারের জরিপের ফলাফলটি বার্ষিক অগ্রগতির ভিত্তিতে প্রকাশ করা হবে।
ব্রাজিল সরকারের এবারের উদ্যোগটাও নেওয়া হয়েছে অ্যামাজনের এই ডিফরেস্টেশন রুখে দেওয়ার প্রত্যয় থেকে। ২০০৯ সালে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, ২০২০ সালের মধ্যে গাছ কাটার হার ৮০ শতাংশ কমিয়ে আনা হবে। সেই কাজে ইতিমধ্যে তারা কিছু সফলতাও পেয়েছে ২০১২ সালে। সরকারের তথ্য অনুযায়ী, সেবছরই বন ধ্বংসকারী কর্মকা-ের মাত্রা ছিল গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। তবে আরও ফলপ্রসূভাবে কাজ করার জন্য আরও নির্ভূল তথ্য প্রয়োজন বলে মনে করছেন ব্রাজিলের মন্ত্রীরা।
বনমন্ত্রী হামেল এই জরিপের ঘোষণা দিয়ে গত জানুয়ারীতে বলেছিলেন, ‘আমরা রেইনফরেস্টটাকে আরও ভেতর থেকে জানতে যাচ্ছি।’ এই নতুন জরিপটা পরিবেশগত বিষয়ে নীতি নির্ধারণের সময়ও সরকারের অনেক সহায়ক হবে বলে মনে করছেন ব্রাজিলের পরিবেশ মন্ত্রী ইসাবেলা টেইক্সেইরা। তিনি বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিতর্কগুলোতে আমরা বলতে পারব যে আমাদের কী পরিমান বনাঞ্চল, কী অবস্থায় আছে (…), আমরা অনেক জীব প্রজাতি আবিস্কার করতে পারব, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিগুলো সম্পর্কেও আমরা জানতে পারব। সেই সঙ্গে আমরা এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ক্ষেত্রেও অনেক তথ্য পাব।’

গভর্নমেন্ট শাটডাউন: কী হতে যাচ্ছে আমেরিকায়?

government shutdown, government shutdown 1995, national debt, us debt, us national debt, federal budget

১৭ বছর পর আবারও বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছে আমেরিকার সরকারব্যবস্থার অচলাবস্থা। গণমাধ্যমের ভাষায় যেটা ‘গভর্নমেন্ট শাটডাউন’। সোমবার মধ্যরাত থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে জাতীয় পার্ক, পরিবেশবিষয়ক সংস্থা, মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা)সহ কেন্দ্রিয় সরকারের বহু সেবাখাত। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান চালু থাকবে আংশিকভাবে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরিরত প্রায় সাত লাখ মানুষকে বিনা বেতনে বাধ্যতামূলক ছুটিতে চলে যেতে হবে। প্রভাব পড়বে মার্কিন অর্থনীতিতেও।
অর্থনীতিবীদরা হিসেব করে দেখেছেন যে, দুই সপ্তাহের অচলাবস্থা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে দিতে পারে ০.৩ শতাংশ। আর যদি এই ‘শাটডাউন’ তিন বা চার সপ্তাহ ধরে চলে তাহলে এটা কমে যাবে ১.৪ শতাংশ। ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে এই অচলাবস্থা স্থায়ী হয়েছিল ২১ দিন। এবারের পরিস্থিতিটা বারাক ওবামা প্রশাসনের জন্য অস্বস্তিকরই হওয়ার কথা। কারণ অদ্ভুত শোনালেও সত্যি যে, বেশ নাজুক অবস্থার মধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্রটির অর্থনীতি।
সেবাখাতে অর্থ বরাদ্দ সংক্রান্ত বিল অনুমোদন নিয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে না পারায় শুরু হয়েছে এই অচলাবস্থা। ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকানদের এই রেশারেশি যদি চলতেই থাকে তাহলে খুব দ্রুতই আরও বড় সমস্যার মধ্যে পড়তে পারে মার্কিন সরকার। কারণ এই মাসেই তারা অতিক্রম করে যাবে ‘ঋণ গ্রহণের সর্বশেষ সীমা’। নতুন করে ঋণ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি না হলে দেশটির অর্থনীতিতে নানামুখী বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আসলে গত ১৯ মে তারিখেই ১৬.৬৯৯ ট্রিলিয়ন ডলারের সর্বশেষ সীমাটি অতিক্রম করা হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ বিশেষ দক্ষতায় সবকিছু পরিচালিত করে যাচ্ছে। কিন্তু সেটা খুব বেশিদিন সম্ভব হবে না। কংগ্রেস যদি এই ‘ঋণ গ্রহণের সর্বশেষ সীমা’টা বাড়িয়ে না নিতে পারে তাহলে আগামী ১৭ অক্টোবরের পর থেকেই মুদ্রাসংকট শুরু হবে রাজস্ব বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এরপর এতদিন ধরে ধার করা অর্থের সুদ পরিশোধ করার মতো অবস্থাও থাকবে না মার্কিন সরকারের।
যদিও অনেকেই এটাকে খুব বড় সমস্যা হিসেবে নাও দেখতে পারেন। কারণ ১৯৬০ সালের পর থেকে এই ‘ঋণ গ্রহণের সর্বশেষ সীমা’টা বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে ৭৮ বার। কাজেই আরও একবার সেইটা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়াটা হয়তো খুব বেশি কঠিন হবে না। কিন্তু ঋণ বোঝাটা যে ক্রমশই ফুলেফেঁপে উঠছে, সেটাও আড়াল করার কোনো সুযোগ নেই। আর এবার ধার করা টাকা দিয়েই আগের ঋণগুলোর সুদ পরিশোধ করার সুযোগও আমেরিকা হয়তো পাবে না।

government shutdown, government shutdown 1995, national debt, us debt, us national debt, federal budget
এর আগে কোনোবারই আরও বেশি দেনা করার ন্যায্যতা নিয়ে রাজনৈতিক দরকষাকষি হয়নি, বরং সত্যিকারের বিতর্কটা হয়েছে এটা কোন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হবে সেটা নিয়ে। কিন্তু বর্তমানের দ্বিধাবিভক্ত কংগ্রেসে এটা পরিণত হয়েছে গণবিধ্বংসী রাজনৈতিক অস্ত্রে।
সরকারের অচলাবস্থার চেয়ে এই ‘ঋণ গ্রহণের সর্বশেষ সীমা’র বিষয়টিকেই মার্কিন অর্থনীতির জন্য বেশি হুমকি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতিবীদ পল অ্যাশওয়ার্থ বলেছেন, ‘‘ঋণ গ্রহণের সর্বশেষ সীমা’ বাড়িয়ে নেওয়ার বিষয়ে যে আলোচনা হওয়ার কথা, বর্তমান এই অচলবস্থাটা সেটার জন্য খুব ভালো ইঙ্গিত বহন করছে না। নি¤œকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান নেতৃবৃন্দ যেভাবে এই অচলাবস্থা তৈরি করেছে, তাতে ঋণ সংক্রান্ত আলোচনায় তাদের অবস্থানটা খুব বিপদজনকই হবে।’

government shutdown, government shutdown 1995, national debt, us debt, us national debt, federal budget
১৭ অক্টোবর আমেরিকান ট্রেজারির হাতে থাকবে মাত্র ৩০ বিলিয়ন ডলার। সারা দিনে সরকারের সব খরচ বহন করার জন্য যেটা যথেষ্ট না। সাধারণত এক দিনে সরকারের খরচ হয় প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার। তারপরে আসলে কী হবে সেটা এখনো কেউই জানে না। কারণ এরকম অবস্থায় আমেরিকাকে আগে কখনোই পড়তে দেখা যায়নি। সেরকম পরিস্থিতি যে এই ‘গভর্নমেন্ট শাটডাউনের’ চেয়েও খারাপ কিছু হবে, সেটা ইতিমধ্যেই স্বীকার করে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বলেছেন, ‘ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথমবারের মতো ঘটবে। গভর্নমেন্ট শাটডাউনের চেয়ে সেটা অনেক বেশি ভয়ঙ্কর হবে। সেটা হবে একটা অর্থনৈতিক অচলাবস্থা।’
কাজেই আগামী কয়েক সপ্তাহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর যে পুরো বিশ্ব অর্থনীতিরই কৌতুহলী নজর থাকবে, সেটা সহজেই অনুমান করা যায়।

আলটাইয়ের প্রাকৃতিক বিপর্যয়: বিজ্ঞান আর বিশ্বাসের লড়াই

Altai_01

আলটাই পর্বতমালার উকক মালভূমিকে খুবই পবিত্র একটা স্থান বলে বিবেচনা করেন স্থানীয় আদিবাসীরা। ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় স্থান করে নেওয়া আলটাই পর্বতমালার একেবারে মধ্যমনি বলা যায় উকক মালভূমিকে। কিন্তু সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে এলাকাটির প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে গলতে শুরু করেছে মাটির নিচে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা বরফ। আলটাইয়ের আদিবাসীরা অবশ্য প্রকৃতির এই ভারসাম্যহীনতাটা টের পাচ্ছেন অন্য কারণে। তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, প্রাচীন আমলের সব সমাধিস্থল পুনপ্রতিষ্ঠা করা, যেগুলো বৈজ্ঞানিকরা তুলে নিয়ে গেছেন গবেষণার জন্য। তারা মনে করে, এই পবিত্র সমাধিস্থলগুলোই আলটাই আর তার মানুষদের সুরক্ষিত রেখেছে বছরের পর বছর।

২৪০০ বছর আগে, এক উষ্ম গ্রীষ্মের দিনে এই উকক মালভূমিতেই চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছিলেন যাযাবর পাজর্ক গোত্রের এক জ্ঞানী নারী। তাঁকে সমাহিত করা হয়েছিল অনেক বড় একটা সমাধিতে। নানা ধরনের ঔষধি লতাপাতা, গাছের বাকল, নরম লোমওয়ালা চামড়ার কোট জড়িয়ে বানানো হয়েছিল তাঁর মমি। একটাই বড় কাঠের গুঁড়ি দিয়ে বানানো হয়েছিল বিশালাকার কফিনটা। সঙ্গে উত্সর্গ করা হয়েছিল ছয়টি ঘোড়া। খুবই সুসজ্জিত ঘোড়াগুলো সদাপ্রস্তুত তাঁকে মৃত্যুপরবর্তী রাজ্যে নিয়ে যেতে।

১৯৯৩ সালের আরেক গ্রীষ্মে এই রহস্যময়ীর সন্ধান পান রাশিয়ার একদল গবেষক। এটাকে গত শতকের অন্যতম সেরা প্রত্নতাত্তিক আবিস্কার বলে প্রায়শই বিবেচনা করা হয়। এই আবিস্কারটার ফলেই পাজর্ক সমাজ ও জীবনের আরও গভীরে উঁকি দেওয়ার সুযোগ মিলেছে, যেটা এতদিন আধুনিক বিজ্ঞানের কাছে অজানাই ছিল। কিন্তু পাজর্ক সমাজে তাঁর অবস্থান কী? এখনকার আলটাই আদিবাসীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটাই বা কী? কে এই রহস্যময়ী নারী? কোনো শাসক নাকি কোনো পবিত্র আধ্যাত্মিক চরিত্র?

Altai_02

স্থানীয় আদিবাসীদের কাছে তিনি পরিচিত উককের রাজকন্যা কাদান নামে। আর তাদের কোনই সন্দেহ নেই যে, এই রাজকন্যার সঙ্গে আলটাইয়ের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। অনান্য আরও অনেক ক্ষমতাধর পুরোহিতদের মতো, আলটাইয়ের এই কন্যাকেও সমাহিত করা হয়েছিল উকক মালভূমির পবিত্র পাহাড়ি উপত্যকায়। উত্তরসূরীদের সমাজে শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য।

রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ এই ধরনের আবেগকে অবৈজ্ঞানিক ও পশ্চাতপদ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, গবেষণা থেকে এমন কিছুই বেরিয়ে আসেনি যা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, রাজকন্যা কাদান বা সাইবেরিয়ার বরফকুমারীর দেহাবশেষের সঙ্গে বর্তমানের আলটাই মানুষদের কোনো সংযোগ আছে। জীনগতভাবেও নয়, এমনকি রুপকার্থেও না।

অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের এই ধরণের কথাবার্তার কোন বাস্তব ভিত্তিই খুঁজে পায় না স্থানীয় আদিবাসীরা। তাদের চোখে রাজকন্যা কাদান আর আলটাই অঞ্চলটি এক ও অভিন্ন। পূর্বসূরীদের আত্মাকে বিরক্ত না করা, তাদের সমাধিস্থল সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারা না পারার উপরেই নির্ভর করছে পুরো এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য, সমাজের সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি।

উকক মালভূমিতে গবেষণারত কিছু বিজ্ঞানীও আদিবাসীদের এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সহানুভূতিশীল। আর হবেন না-ই বা কেন? বিষদভাবে গবেষণার জন্য কাদান রাজকন্যার সমাধি মাটি থেকে তোলার পর আশ্চর্য্যজনকভাবে নষ্ট হতে শুরু করেছে ঐ এলাকার ভারসাম্য। ঘটছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।

খননকার্যের সময়ই সেখানে একটা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার খবর শোনা যায়। ২০০৩ সালে সেখানে আঘাত হেনেছিল ৭.৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। যেটা পুরো আলটাই গ্রামকেই মিশিয়ে দিয়েছিল মাটির সঙ্গে। সেখানকার আদিবাসীরা মনে করেন, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য রাজকন্য কাদানকে অবশ্যই ফিরে আসতে হবে তাঁর জন্য নির্ধারিত সুসজ্জিত স্থানটিতে।

Altai_03

রাজকন্যা কাদানকে তাঁর সুরক্ষিত স্থানে ফিরিয়ে আনতে অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছেন সেখানকার আদিবাসীরা। রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে যেভাবে দেখছে তাতে আদিবাসীদের কাজটা যে কঠিন, তা সহজেই অনুমান করা যায়। তারপরও ধরা যাক, তাঁরা সফলও হলেন। কিন্তু রাজকন্যা কী সত্যিই সুরক্ষিত থাকতে পারবেন তাঁর সমাধিস্থলে? মাটির নিচে জমে থাকা যে বরফগুলো প্রাচীন এই সমাধিস্থল সুরক্ষিত রেখেছিল, সেগুলো সম্প্রতি গলতে শুরু করেছে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে। জলবায়ু পরিবর্তন আক্ষরিক অর্থেই গলিয়ে দিচ্ছে আলটাই আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারগুলো। অন্তত এটাই এখন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈজ্ঞানিকদের কাছে।

বিংশ শতাব্দিতে আলটাইয়ের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেসব জায়গায় উকক মালভূমির পবিত্র সমাধিগুলো সুরক্ষিত ছিল হাজার হাজার বছর ধরে, সেসব জায়গা আছে ভয়াবহ ঝুঁকির মখে। আলটাইয়ের অন্যান্য অঞ্চলগুলোতে ইতিমধ্যেই গলতে শুরু করেছে ভূগর্ভস্থ বরফ। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে তাতে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন ২০৮০ সাল নাগাদ এখানকার তাপমাত্রা বাড়বে ৩ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তেমনটা হলে হয়তো পুরোপুরিই গায়েব হয়ে যাবে আলটাইয়ের ভূগর্ভস্থ বরফগুলো। ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসবে আলটাইয়ের পাহাড়ি উপত্যকায়।

বিজ্ঞানীরা এই প্রাকৃতিক ভারসাম্যটা রক্ষা করার জন্য লড়ে যাচ্ছেন প্রাণপনেই। ‘আলটাইয়ের বরফ সমাধি’গুলো সূর্যের তাপ থেকে বাঁচানোর জন্য সেগুলো ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করতে যাচ্ছেন ইউনেসকো ও গেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।

বৈজ্ঞানিকভাবে তো চেষ্টা চলছেই, প্রাচীনপন্থী আদিবাসী মানুষদের বিশ্বাসকে সম্মান জানালেও তো খুব বেশি ক্ষতি নেই। পার্জক গোত্রের রহস্যময়ী রাজকন্যা কাদানকেও ফিরিয়ে দেওয়া হোক তাঁর বহুদিনের পুরোনো আশ্রয়ে। তিনিও তো চেষ্টা করতে পারেন প্রকৃতির রুদ্ররোষ প্রশমনের জন্য!?

বিয়ে ফুটবল মাঠে, উপহার ডাগআউট বেঞ্চ!

MASONS_WEDDING_DUGOUT_10.jpg

বন্ধুর বিয়ের উপহার কিনতে গিয়ে নাকাল হতে হয় অনেককেই। কোনটা সবচেয়ে জুতসই হবে ঠিক বুঝে ওঠা যায় না। তবে যদি বন্ধুর আগ্রহ, পছন্দ সম্পর্কে জানা থাকে, তাহলে হয়তো সহজ হয়ে যেতে পারে উপহার কেনার ওই কঠিন কাজটাই। যেমনটা হয়েছে ইংল্যান্ডের জন আভেসের বেলায়। তাঁর ফুটবল অনুরাগের কথা জানা ছিল বলেই অভিনব এক উপহার দিয়ে চমকে দেওয়া গেছে নবদম্পতিকে। ফুটবল-পাগল জন আভেসকে পুরো একটা ডাগআউট বেঞ্চই উপহার দিয়েছেন তাঁর বন্ধুস্বজনেরা।

খুব ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলার পাগল আভেস। সমর্থন করেন ক্যামব্রিজ সিটিকে। বর্তমানে তিনি দলটির ফিজিও হিসেবে দায়িত্ব পালনও করছেন। দলের প্রতি আভেস এতই নিবেদিতপ্রাণ, বিয়ের অনুষ্ঠানটাও তিনি আয়োজন করেছিলেন প্রিয় ক্লাবের মাঠে। অন্যরা যেখানে বিয়ের পর চার্চের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন, সেখানে ৫৯ বছর বয়সী আভেস নববধূকে নিয়ে ছবি তুলেছেন ডাগআউটে বসে।

এ রকম একজন ফুটবলপ্রেমী বিয়ের উপহার হিসেবে ডাগআউট বেঞ্চ পেয়ে যে প্রচণ্ড উচ্ছ্বসিত হবেন, তাতে আর অবাক হওয়ার কি আছে! কিছুটা বিস্ময় নিয়ে তিনি ব্রিটিশ দৈনিক ‘মেট্রো’কে বলেছেন, ‘১৯৬২ সালে যখন প্রথমে বাবার হাত ধরে এখানে খেলা দেখতে এসেছিলাম, তখন থেকেই আমি ক্যামব্রিজ সিটির ভক্ত। সত্তরের দশকের মাঝামাঝিতে আমি ক্লাবের সেক্রেটারি ছিলাম। আর এখন দায়িত্ব পালন করছি ফিজিও হিসেবে। আমি জানতাম যে ক্লাব অনেক জিনিস নিলামে বিক্রি করছে। আমার কোনো ধারণাই ছিল না যে বন্ধুরা আমার জন্য এই ডাগআউট কিনে ফেলবে। এটা আমার জন্য সত্যিই খুব চমকপ্রদ একটা ব্যাপার।’

মিসেস আভেস অবশ্য কিছুটা চিন্তিত বিশালাকার ডাগআউট বেঞ্চটি তাঁদের বাগানে কীভাবে জায়গা করে নেবে, সেটা নিয়ে। ৩৯ বছর বয়সী ক্যারোলিন বলেছেন, ‘আমাদের এটা দুই ভাগ করে ফেলতে হতে পারে। কারণ, এটা আমাদের বাগানের অর্ধেক জায়গা দখল করে নেবে।’ প্রিয় ক্লাবের ডাগআউট বেঞ্চটি দুই খণ্ডে ভাগ করতে গিয়ে না আবার ঝগড়া বেধে যায় আভেস দম্পতির! দ্য মেট্রো, ব্রিটেন।