Archive for the ‘ ফিচার ’ Category

কাজাকিস্তানের ঘুমন্ত মায়াপুরী!

Teaser sleeping

এ যেন ঠিক সেই রুপকথার মায়াপুরী। অদ্ভুত কোনো এক জাদুর মায়ায় দিনের পর দিন ঘুমিয়ে থাকছেন সেই মায়াপুরীর বাসিন্দারা। রুপকথার গল্প সত্যি হয়ে ফুটে উঠেছে কাজাকিস্তানের ছোট্ট শহর কালাচিতে। সোভিয়েত ইউনিয়ন আমালের একটি ইউরেনিয়াম খনির পাশে অবস্থিত এই শহরে কোনো এক রহস্যময় নিদ্রা অসুখে আক্রান্ত হয়ে দুই থেকে ছয় দিন পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকছেন সেখানকার অধিবাসীরা। জেগে ওঠার পর ভুগছেন স্মৃতিবিভ্রমে।

২০১০ সালে প্রথম দেখা যায় এই অদ্ভুত ব্যাপারটি। আর ২০১৩ সালের মার্চ মাস থেকে সেটা ক্রমেই বাড়ছে। ঘুমিয়ে যাওয়া ছাড়াও রহস্যময় এই রোগের অন্য উপসর্গগুলো হচ্ছে ঝিমঝিম ভাব, দাঁড়িয়ে থাকতে না পারা ও চরম শারিরীক অবসাদ। রাশিয়ান টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একদিন এক স্কুলে হঠাৎ করেই আটজন শিশু ঘুমিয়ে পড়ে। কয়েক মাস পরে দেখা যায় একই দিনে ৬০ জন হঠাৎ করে নিদ্রার কোলে ঢলে পড়ে।

ম্যাশেবলের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে, এই রহস্যের কিনারা করার জন্য কিছু বিজ্ঞানী ও ডাক্তার উড়ে যান কালাচিতে। কিন্তু পরিবেশ থেকে শুরু করে রোগীর তথ্য উপাত্ত পরীক্ষা করেও কোনো উপসংহারে পৌঁছাতে পারেননি তারা। ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাল পরীক্ষার ফল নেতিবাচক। আফ্রিকান ট্রাইপানোসোমিয়াসিস নামের একটি অসুখে এধরণের উপসর্গ দেখা যায়। কিন্তু সেটা যে কারণে হয়ে থাকে তার কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি কালাচির মানুষদের মধ্যে।

ইউরেনিয়াম খনির তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানিরা। কিন্তু সেটারও কোনো পাকাপোক্ত তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে পারছেন না তাঁরা। কাজাকিস্তানের জাতীয় নিউক্লিয়ার সেন্টারের রেডিয়শন সেফটি এন্ড ইকোলজি ইন্সটিটিউটের পরিচালক সার্গেই লুকাশেঙ্কো বলেছেন যে তিনি মনে করেন ব্যাপারটি বর্ণহীন, তেজস্ক্রিয় গ্যাস রোডনের কারণে হচ্ছে না। সার্বিয়ান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘এটা কার্বন মনোক্সাইডের কারণে হতে পারে। এই অঞ্চলের অদ্ভুত অবস্থান ও আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে আমাদের কেউ কেউ এমন সন্দেহ করছে। এখানে চিমনির ধোঁয়া ওপরে উঠে যাওযার বদলে নিচে ও চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। কার্বন মনোক্সাইডের কারণে প্রায়ই মাথাব্যাথা, বমি ও অবসন্ন ভাব আসতে পারে। কিন্তু এই উদ্ভট ঘুমিয়ে পড়ার ব্যাপারটা সেটা দিয়েও ব্যাখ্যা করা যায় না।’

Uranium_mine

অদ্ভুত এই রোগের কারণে কালাচি শহরের অনেকেই পাড়ি জমিয়েছেন অন্য কোথাও। যারা আছেন তাঁরাও এখন অন্য কোথাও চলে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তেমনই একজন ওলগা সামুসেঙ্কো জানালেন নিজের ভয়াল অভিজ্ঞতার কথা, ‘সেপ্টেম্বরের এক তারিখে আমরা ছেলেমেয়েদের স্কুল প্যারেডে গিয়েছিলাম। আমার বাচ্চাটা ছোট। ফলে আমরা শুধু দেখতেই গিয়েছিলাম। তারপর (দুই বছর বয়সী) স্টানিস্লাভ বাড়ির উঠোনে কিছুক্ষণ খেলে ৪টা নাগাদ বাড়িতে ফিরেছে। ফিরেই সে ঝুপ করে মাটিতে পড়ে যায়। সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না। বসতেও পারছিল না। আমি তাকে দাঁড়া করানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সে বারবার পড়ে যায়। তার দৃষ্টি ছিল অন্য কোথাও। মনে হচ্ছিল যেন মাতাল হয়ে আছে। খুবই ভয় পেয়েছিলাম। আমাদের এখন এখান থেকে চলে যেতে হবে। এখানে কোনো ভবিষ্যৎ নেই। সবাই চলে যাচ্ছে। অনেকেই তাদের ছেলেমেয়েকে দূরে অন্য কোনো শহর বা গ্রামে রেখে এসেছে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। কেউ কিছু ব্যাখ্যাও করতে পারছে না। আমরা কেউই জানি না কী ঘটছে।’

Sleeping Disorder

পাবলো নেরুদা কী খুন হয়েছিলেন?

সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী পাবলো নেরুদা ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিনদিন পর মারা গিয়েছিলেন, ইতিহাসে এমনটাই প্রতিষ্ঠিত। তবে এবার হয়তো সেই ইতিহাসটা একটু অন্যভাবেও লিখতে হতে পারে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকা একটা গুঞ্জনের সত্যতা এবার প্রথমবারের মতো যাচাই করার সুযোগ মিলছে। পাবলো নেরুদা কী খুন হয়েছিলেন? এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার জন্য, চিলির বিশ্বখ্যাত এই সাহিত্যিকের মৃত্যু আসলেই কীভাবে হয়েছিল তা আবার তদন্ত করে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির আদালত।

১৯৭১ সালের নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক পাবলো নেরুদা চিলির কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। সেসময়ের চিলির প্রেসিডেন্ট সালভেদর আলেন্দের সঙ্গেও বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল তাঁর। লাতিন আমেরিকার ইতিহাসে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রথম মার্ক্সবাদী রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিবেচনা করা হয় সালভেদর আলেন্দেকে। কিন্তু ১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় তাঁকে। আলেন্দে শেষপর্যন্ত আত্মসমর্পণ না করে আত্মহননের পথ বেছে নেন। দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন অগাস্তো পিনোচেট। শুরু হয় সামরিক শাসন। অনেকেরই ধারণা দেশের নাটকীয় রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও ঘনিষ্ঠ এই বন্ধুর মৃত্যু সংবাদে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন পাবলো নেরুদা। যার ফলে তাঁর ক্যান্সার গুরুতর আকার ধারণ করে। কিন্তু অভ্যুত্থানকারী সামরিক জান্তাও পাবলো নেরুদাকে খুন করে থাকতে পারে বলে ধারণা অনেকের। কারণ সেনাবাহিনী সেসময় তাঁর ইসলা নেগ্রার সাগরতীরের বাড়িতে হানা দিয়েছিল। এই বাড়িতে বসেই তিনি তাঁর আত্মজীবনীটি লিখেছিলেন। আর এই বইয়ের শেষটাও হয়েছিল সামরিক অভ্যুত্থান ও জেনারেল অগাস্তো পিনোচেটের প্রতি চরম নিন্দা জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে। বইটি লিখে শেষ করার পরদিনই হাতপাতালে ভর্তি করা হয় নেরুদাকে। আর তার তিনদিন পরেই তিনি ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। হাসপাতালেই তাঁকে গোপনে বিষ দেওয়া হয়েছিল বলে সন্দেহ নেরুদার সেসময়ের ব্যক্তিগত সহযোগী ও গাড়িচালক ম্যানুয়েল আরায়ার। সম্প্রতি আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে সেসময়ের কথা বিস্তারিকভাবে জানিয়েছেন তিনি। বিস্তারিত পড়ুন

রেইন ফরেস্টের মুক্তিপন দাবি ইকুয়েডরের

প্রকৃতির বিস্ময় অ্যামাজন রেইন ফরেস্টের একাংশে বিশাল অঙ্ক মূল্যের এক তেল খনির সন্ধান পেয়েছে ইকুয়েডর সরকার। কিন্তু অনাবিল প্রাকৃতিক নৈসর্গ ও বৈচিত্রে পরিপূর্ণ এই অংশটি থেকে তেল উত্তোলন শুরু করলে প্রায় ধ্বংসের মুখে পড়ে যাবে পূর্ব ইকুয়েডরের ইয়াসুনি ন্যাশনাল পার্কের প্রাণবৈচিত্র্য। বিধ্বস্ত হবে এলাকাটির স্বর্গীয় প্রাকৃতিকতা। আবার বর্তমান বিশ্ববাজারে এই তেল বিক্রির যে টাকাটা পাওয়া যাবে, সেটাও খুব করেই প্রয়োজন লাতিন আমেরিকার উন্নয়নশীল এই দেশটির। তাই এখন, ইকুয়েডরের হুমকিযুক্ত দাবি: অ্যামাজনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার বিনিময়ে আমাদের অর্থসাহায্য দাও, নয়তো আমরা তেল উত্তোলনের উদ্যোগ নেব। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী রাজি হবে এই প্রস্তাবে? বিস্তারিত পড়ুন

ফেসবুকে ফিরছেন ‘নার্সিসাস’!

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো মানুষকে নিজ ভুবনকেন্দ্রিক ভাবনার তাড়না যোগাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে একটা সন্দেহ-সংশয় বিশেষজ্ঞদের বেশ কিছুদিন যাবতই ছিল। আর সম্প্রতি এই সন্দেহের যথেষ্ট ভিত্তি আছে বলে জানান দিয়েছেন গবেষকরা। তাঁদের দাবি অনুসারে, একটা মানুষ কতখানি আত্মকেন্দ্রিক সেটা তার ফেসবুকের বন্ধু সংখ্যা এবং এর অন্যান্য ব্যবহার দেখে অনুমান করা সম্ভব। শুধু তাই না, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে গ্রীক দেবতা নার্সিসাস আবার নতুনভাবে ফিরে আসছেন বলে বলেও মন্তব্য করেছেন ওয়েস্টার্ন ইলিনিয়স বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষকরা। বিস্তারিত পড়ুন

প্রিয় বন্ধু বানাতে মানা!

ছোটবেলায় খুবই প্রিয়, সবচেয়ে কাছের বন্ধুটির সঙ্গে রাগারাগি, ভুল বোঝাবুঝির কারণে অনেক দুঃখ পাওয়ার অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই অনেকেরই আছে। প্রিয় বন্ধুটির বিরহে মানসিকভাবে খানিকটা বিপর্যস্তও হয়ে পড়ে অনেক বাচ্চা। কোমলমতি শিশুদের এই মানসিক বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নতুন ধরনের এক উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাজ্যের সাউথইস্ট লন্ডন, কিন্সটন ও সারের কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা প্রিয় বা বিশেষ বন্ধু বানানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, দলবদ্ধভাবে খেলা বা সময় কাটানোর জন্য উত্সাহিত করছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাচ্চাদের। তবে মহান উদ্দেশ্য থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা শিশুদের জন্য মঙ্গলজনক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা-বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞানী গায়নর বুট্টনির বরাত দিয়ে এই খবরটি জানিয়েছে দ্য সান। ব্রিটিশ এই পত্রিকাটিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, ‘আমি খেয়াল করেছি যে শিক্ষকেরা বাচ্চাদের বলছেন, তাদের কোনো প্রিয় বা বিশেষ বন্ধু থাকা উচিত না। বরং তাদের সবার সঙ্গে মিলে দলবদ্ধভাবে খেলাধুলা করা উচিত। শিক্ষকেরা এটা করছেন কারণ তাঁরা বাচ্চাদের এই বিশেষ বন্ধু ছুটে যাওয়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে চান। কিন্তু কিছু কিছু বাচ্চার বিশেষ বন্ধু গড়ে উঠতেই পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক। যদি তাদের সম্পর্কটা নষ্টই হয়ে যায়, তাহলে তাদের সেই বেদনা ভোগ করতেই হবে। কারণ তারা এর মধ্য দিয়েই এ বিষয়ে শিখতে পারবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শিক্ষকদের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য রাসেল হবি এভাবে প্রিয় বন্ধু গড়ে তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। খুব বেশিসংখ্যক বিদ্যালয়ে এই চর্চা করা না হলেও এটা যে ঘটছে, তা তিনি স্বীকার করেছেন। বাচ্চাদের মানসিক বিপর্যয়ের কথা বিবেচনা করে এই নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা যে মোটেই ভালো ফল বয়ে আনবে না, তা স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন ক্যাম্পেইন ফর রিয়াল এডুকেশনের মুখপাত্র ক্রিস ম্যাকগোভের্ন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না যে কীভাবে আপনি জোর করে বাচ্চাদের প্রিয় বন্ধু গড়ে তোলা বন্ধ করতে পারবেন। আমরা সারা জীবন ধরেই এ রকম সম্পর্ক গড়ে তুলি। আর বাচ্চারা সবকিছুই খুব গুরুত্ব দিয়ে নেয়। যদি আপনি তাদের বলেন যে তারা কোনো বিশেষ কাছের বন্ধু গড়ে তুলতে পারবে না, তাহলে সেটাই তাদের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হবে। সম্পর্ক কীভাবে গড়ে ওঠে, এ বিষয়েও তো তাদের জানার প্রয়োজন আছে।’

রাগ কমানোর নতুন কৌশল!

সবসময়ই রেগে থাকেন, এমন ধরণের লোকের দেখা এই দুনিয়ায় প্রায়ই পাওয়া যায়। আর হুট করেই অনেক রেগে যান, এমন লোকের সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও মানুষ কম করে না। নানা রকম ধ্যান করার মাধ্যমেও অনেকে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালান। এ ধরণের মানুষদের জন্য একটু ভিন্ন ধরণের একটা উপায় বাতলে দিয়েছেন নিউ সাউথ ওয়েলসের অধ্যাপক ড. থমাস ডেনসন। ডানহাতি মানুষরা যদি টানা দুই সপ্তাহ তাদের বাম হাত দিয়ে কম্পিউটারের মাউস ব্যবহার, চায়ে চিনি গোলানো বা দরজা খোলার অভ্যাস করেন তাহলে তারা অনেক সফলভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে ও বিনয়ী হয়ে উঠতে পারবেন বলে এক গবেষণায় দাবি করেছেন ড. ডেনসন। আর বামহাতি মানুষদের ব্যবহার করতে হবে তাদের ডানহাত।

সম্প্রতি ড. ডেনসনের এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে সাইকোলজিক্যাল সায়েন্সের জার্নালে। তাঁর মতে আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই মানুষ নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘মানুষের সাধারণ অভ্যাস হলো নিজেদের শক্তিশালী হাতটার ব্যবহার করা। কিন্তু অপর হাতটা দিয়ে মাউস ব্যবহার, কফিতে চিনি মেশানো বা দরজা খোলা ইত্যাদি ধরণের কাজগুলো করার মাধ্যমে মানুষ আত্ম নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন করতে পারে।’

অপরাধবিজ্ঞানী ও সামাজিক বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই বিশ্বাস করেন যে, যাদের আত্ম নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কম, সেই ধরণের মানুষ সুযোগ পেলে সহিংস অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এই তথ্য জানিয়ে ড. ডেনসন বলেছেন, ‘একধরণের ঝোঁকের বশে এরকম কাজগুলো করা হয়।’ গত ১০ বছর ধরে মনোবিজ্ঞানীরা আত্ম নিয়ন্ত্রণ করার নতুন উপায় খোঁজার জন্য গবেষণা করছেন। তার তাঁরা দেখেছেন যে, আগ্রাসনের মনোভাব খুবই গভীরভাবে সম্পর্কিত আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে পারা না পারার সঙ্গে।  গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, যখন মানুষকে কিছু সময়ের জন্য নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাধ্য করার হয়, তারপর তারা আরও বেশি আগ্রাসী আচরণ করে। ড. ডেনসন বলেছেন, ‘আমার কাছে, এই গবেষণার সবচেয়ে আকর্ষণীয় তথ্য হলো, যদি আপনি রাগী মানুষকে তাদের আত্ম নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা উন্নয়নের সুযোগ দেন, তাহলে তাদের আগ্রাসী মনোভাব অনেক কম হয়ে আসে।’

তবে ব্যাপারটা এরকমও নয় যে, রাগী মানুষরা নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা একেবারেই করেন না। মুশকিলটা হচ্ছে, তাদের অনেকেই এটা ভালোমতো করার উপায়টা সনাক্ত করতে পারেন না। ফলে যারা নিজেদের রাগ বা সহিংস আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে চান, তারা এই নতুন কৌশলগুলো অনুসরণ করলে ফল পেতেও পারেন বলে বিশ্বাস ড. ডেনসন ও তাঁর গবেষক সহকর্মীদের।— ডেইলি মেইল অনলাইন

গাদ্দাফীর ‘অষ্টম আশ্চর্য’

দীর্ঘ ৪২ বছরের শাসনামলে অনেক নিন্দা-সমালোচনা কুড়িয়ে কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফী। আরব বসন্তের নবজাগড়নে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর লিবিয়ায় পতন হয়েছে গাদ্দাফী সরকারের। কয়েকদিন আগে বিদ্রোহীদের হাতে নির্মমভাবে হত্যার পর গতকাল সাহারা মরুভূমির কোন এক অজ্ঞাত স্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন এই স্বৈরশাসক। তবে বরাবরই কঠোর শাসরে জন্য পশ্চিমা বিশ্ব ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বদনাম কুড়ালেও লিবিয়ার এইড মরুপ্রান্তরেই অনন্য এক কীর্তি গড়ে গেছেন লৌহমানব গাদ্দাফী। দেশবাসীদের বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সমগ্র লিবিয়াজুড়ে তিনি যে ভূগর্ভস্থ পাইপ নেটওয়ার্ক নির্মান করেছিলেন তা পরিচিতি পেয়েছে ‘বিশাল মনুষ্যনির্মিত নদী’ নামে। বিশ্বের বৃহত্তম এই সেচ প্রকল্পটিকে খোদ গাদ্দাফী বলতেন ‘পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য।’

সির্তে, ত্রিপোলি, বেনগাজিসহ লিবিয়ার অন্যান্য মেরু অঞ্চলে খাবার পানি সরবরাহ ও সেচকার্যের জন্য পুরো দেশটি জুড়ে ২৮৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভূগর্ভস্থ পাইপ নেটওয়ার্ক নির্মিত হয়েছে এই প্রকল্পটিতে। ইতিহাসে এযাবত্কালের সবচেয়ে বড় এই পাইপ নেটওয়ার্কটিতে আছে ১৩০০-রও বেশি কুয়া। যেগুলোর বেশিরভাগই ৫০০ মিটারেরও বেশি গভীর। এখনও লিবিয়াতে প্রতিদিন ৬৫ হাজার ঘনমিটার বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দিচ্ছে গাদ্দাফীর এই ‘অষ্টমাশ্চার্য।’

১৯৫৩ সালে লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে তেল অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিশালায়তনের এক ভূগর্ভস্থ জলাধারের খোঁজ পাওয়া যায়। ১৯৬০ সালের শেষে ৪০ হাজার বছর পুরোনো এই জলাধার থেকে ‘বিশাল মনুষ্যনির্মিত নদী প্রকল্প’ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়। তবে বাস্তবে কাজ শুরু হতে হতে অতিক্রান্ত হয় আরও ২৪ বছর। ১৯৮৩ সালে লিবিয়ার কনগ্রেসে এই প্রকল্প প্রস্তাবটি পাস হয়। এক বছর পরে সারির এলাকায় নির্মানকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গাদ্দাফি। কোন প্রকার বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান ছাড়াই, পুরোপুরি গাদ্দাফি সরকারের অর্থায়নে বিশাল এই কর্মযজ্ঞের নকশা প্রণয়ন করে আমেরিকান প্রকৌশলী কোম্পানি ব্রাউন এন্ড রুট ও প্রাইস ব্রাদার্স। বিশালাকৃতির কনক্রিট পাইপগুলো নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান রপ্তানি করা হয় ইতালি, স্পেন, জার্মানি, জাপানসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ থেকে। পুরো প্রকল্পটি সফলভাবে শেষ করার জন্য খরচ হয়েছিল ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ। ১৯৯০ সাল থেকে এই প্রকল্পে নিযুক্ত প্রকৌশলীদের কারিগরী প্রশিক্ষণ দিয়েছে ইউনেসকো।

এ বছর গাদ্দাফী সরকারের পতনকামী বিদ্রোহী জনতার সমর্থনে এগিয়ে আসা ন্যাটোর বোমা হামলায় এই মনুষ্যনির্মিত নদীর কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলস্বরুপ বিশুদ্ধ খাবার পানির সরবরাহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে অনেক লিবিয়বাসী।— উইকিপিডিয়া অবলম্বনে

সম্ভব হবে সময় পরিভ্রমণ?

আলোর গতির চেয়েও বেশি হতে পারে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরমাণু কণিকার গতি। যুগান্তকারী এই নতুন তত্ত্বটি পাল্টে দিতে পারে আধুনিক পদার্থবিদ্যার গতিপথ। তিন বছরের গবেষণার পর সম্প্রতি এই তথ্যটি জানিয়েছেন ইউরোপের পারমানবিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (সার্ন) বিজ্ঞানীরা। লার্জ হাড্রন কলিডারের মাধ্যমে বিশ্বব্রক্ষান্ডের উত্পত্তি বিষয়ক গবেষণা করতে গিয়ে এই যুগান্তকারী তথ্যটি বের হয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি নিউট্রিনো নামের এই অদৃশ্য পরমাণু কনিকাটি ৭৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে মাত্র ৬০ ন্যানো সেকেন্ডে। আলোর চেয়েও অনেকগুন বেশি গতিতে। এই দাবি সত্যি হলে বিশ্বব্রক্ষান্ডের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে নতুন ধারণা পাওয়া যাবে বলে অনুমান করছেন পদার্থবিজ্ঞানীরা। সেই সঙ্গে সময় পরিভ্রমণের মতো বহু-কল্পিত বিষয়টিও র’প নিতে পারে বাস্তবে।
ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্টিক্যাল ফিজিক্স বিভাগের অধ্যাপক জেফ ফোরশ বলেছেন, ‘সার্নের বিজ্ঞানীদের এই দাবি সত্য হলে আমরা অন্তত তত্ত্বীয়ভাবে হলেও কোন তথ্য অতীতে প্রেরণ করতে পারব। অন্যভাবে বললে বলা যায়, এর মাধ্যমে আমরা অতীত সময়ে পরিভ্রমন করতে পারব। অবশ্য তার মানে এই না যে, আমরা এখনই টাইম মেশিন বানানো শুর’ করছি।’ সার্নের বিজ্ঞানীদের এই দাবি সত্যি হলে গোটা পদার্থবিদ্যার জগতকেই নড়েচড়ে বসতে হবে। ভুল প্রমাণিত হবেন আধুনিক পদার্থবিদ্যার জনক আলবার্ট আইনস্টাইনও। কারণ ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন বলেছিলেন যে, আলোর গতি একটা মহাজাগতিক ধ্র’বক এবং কোনকিছুর বেগই এর চেয়ে বেশি না। যুক্তরাষ্ট্রের ফিজিক্স রিসার্চ সেন্টারে কর্মরত প্রফেসর জেনি থমাস বলেছেন, ‘নিউট্রিনোর গতিবেগের এই পরিমাপ সঠিক হলে এর প্রভাব হবে খুবই ব্যাপক।’
তবে সার্নের এই তথ্যটি নিয়ে এখনও সংশয়ে আছেন স্টিফেন হকিংসহ বিশ্বেও অনেক শীর্ষ পদার্থবিজ্ঞানীরা। হকিং বলেছেন, ‘এখনই এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করার মতো পরিস্থিতি আসে নি। আরও অনেক গবেষণা ও নিশ্চিত হওয়ার মতো তথ্য দরকার।’ জ্যোর্তিপদার্থবিজ্ঞানী মার্টিন রিস বলেছেন, ‘যুগান্তকারী কোন দাবি প্রমাণের জন্য অনেক তথ্য-উপাত্ত দরকার। আর এটা নিঃসন্দেহে একটা যুগান্তকারী দাবি।’—রয়টার্স

মাটিতে পড়ছে নাসার উপগ্রহ!

পৃথিবী বায়ুমন্ডলের উপরিভাগ, ওজোন স্তর সম্পর্কে আমাদের ধারণা গড়ে তুলতে গুর’ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের পর অবশেষে মাটিতে আছড়ে পড়তে যাচ্ছে নাসার কৃত্রিম উপগ্রহ ইউএআরএস। আজ শনিবার কোন এক সময় এটা খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে পৃথিবীর বুকে নেমে আসবে বলে জানিয়েছে নাসা। তবে উপগ্রহটি ঠিক কখন ও কোথায় নেমে আসবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা। তবে ধারণা করা হচ্ছে ছয় টন ওজনের কৃত্রিম উপগ্রহটির বেশিরভাগ বর্জ্য প্যাসিফিক মহাসমুদ্রেই পড়বে। আর এতে কোন ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও খুব কম। ইতিমধ্যেই কানাডার ওকোটোকস শহরে উপগ্রহটির অল্প কিছু অংশ পড়েছে বলে টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

১৯৯১ সালে পৃথিবীর উপরিভাগের বায়ুমন্ডল, বিশেষত ওজোন স্তরের উপর নিবিড় পর্যবেক্ষনের জন্য ইউএআরএস উেক্ষপন করে নাসা। এরপর প্রায় ১৪ বছর ধরে ওজোন স্তর ও বায়ুমন্ডলের উপরিভাগের পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেক গুর’ত্বপর্ণ তথ্য দিয়েছে এই উপগ্রহটি। ওজোন স্তরে ফুটো হয়ে যাওয়ার খবরটাও আমরা জেনেছিলাম এই ইউএআরএস-এর কল্যানে। ২০০৫ সালে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলার পর ২০১০ সালে এটিকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় নাসা। তবে এই কৃত্রিম উপগ্রহটি মহাকাশে উেক্ষপনের সময় নাসা চিন্তা করে নি যে, আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার সময় এটাকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ফলে এখন পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ার সময় তারা কিছু ধারনা দিতে পারলেও নিশ্চিতভাবে কোন কিছু জানাতে পারছেন না।

অনিয়ন্ত্রিতভাবে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে এমন মহাকাশযানের মধ্যে এই ৩৫ ফুট লম্বা ও ১৫ ফুট ব্যাসের উপগ্রহটি অন্যতম। তবে পৃথিবীতে এর আগেও আছড়ে পড়েছে আরও বেশ কিছু কৃত্রিম উপগ্রহ ও মহাকাশযান। নাসার ৭৫ টন স্কাইল্যাব স্টেশন পৃথিবীতে নামিয়ে আনা হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। ২০০১ মালে প্যাসিফিক মহাসমুদ্রে নিয়ন্ত্রিতভাবে আছড়ে ফেলা হয়েছিল রাশিয়ার শেষ স্পেসস্টেশন মির।

পৃৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশের সময় নাসার এই আপার অ্যাটমোসফিয়ার রিসার্চ স্যাটেলাইটটির বেশিরভাগ অংশই পুড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। তবে ২৬টি খন্ড আছড়ে পড়বে পৃথিবীতে। যার ওজন প্রায় ৫০০ কেজি। তবে এতে কারও ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম বলে আশ্বস্ত করেছেন তাঁরা।— রয়টার্স

দ্র’ত গলছে আর্কটিক সমুদ্রের বরফ!

খুব দ্র’তই গলছে আর্কটিক সমুদ্রের বরফ। আর গত ৪০ বছরের মধ্যে বরফের পরিমাণ এখনই সবচেয়ে কম বলে এক গবেষণায় প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। এই শতকেরই কোন এক গ্রীস্মে এই বরফাচ্ছাদিত সমুদ্রের সব বরফ গলে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। তবে ঠিক কখন এটা ঘটবে, তা নিয়ে এখনও ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।

গত সপ্তাহে আর্কটিক সমুদ্রের বরফের পরিমান নির্নয় করতে গিয়ে এসব তথ্য জানতে পারেন বারমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রমেন্ট ফিজিক্স বিভাগের সদস্যরা। বর্তমানে আর্কটিক সমুদ্রের বরফের পরিমাণ ৪.২৪ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার। এটা কয়েকদিন পরে আরও কমে যাবে। কারণ বরফ গলার মৌসুম শেষ হতে এখনও দুই সপ্তাহ বাকি। এর আগে ২০০৭ সালে এখানে সর্বনিম্ন বরফের পরিমাণ পরিমাপ করা হয়েছিল ৪.১৩ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার। যেখানে ৭০-এর দশকের শুর’তে এটা ছিল প্রায় ৭ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার। বারমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রমেন্ট ফিজিক্স বিভাগ পরিচালিত ফিজিক্যাল অ্যানালাইসিস অব রিমোট সেন্সিং ইমেজ ইউনিটের প্রধান জর্জ হেস্টার বলেছেন, ‘সেপ্টেম্বরের ৮ তারিখে, আর্কটিক সমুদ্রের বরফের পরিমাণ ছিল ৪.২৪ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার। ৭০-এর দশকে এই বরফের পরিমাপ শুর’ করার পর থেকে এটাই এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে আছে।’

আর্কটিক সমুদ্রের বরফ গলার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অনেক বেড়ে যেতে পারে এবং প্রাণ-প্রকৃতির উপর অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আর্কটিকের এই বরফগুলো সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত করে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধ করে। কিন্তু যখন বরফগুলো গলে যায়, তখন নীল সমুদ্রের জলগুলো সূর্য থেকে আগত তাপগুলো শুষে নেয়। ফলে তাপমাত্রাও অনেক বেড়ে যায়। এই উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে গলে যেতে পারে গ্রীনল্যান্ডের বিশাল বিশাল বরফখণ্ড। এবং যার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে ৭ মিটার পর্যন্ত। আর্কটিকের এই বরফ-গলন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে ঐ অঞ্চলের বন্যপ্রাণীদের উপরেও। গবেষকরা তাদের প্রতিবেদনে লিখেছেন, ‘ছোট ছোট প্রাণী, মাছ থেকে শুর’ করে পোলার বিয়ারদের জীবনধারণ করা আরও কঠিন হয়ে উঠবে। আর এটা এই বরফ গলার সরাসরি প্রভাব।’

প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার বছর আগে পৃথিবী একবার এই আর্কটিক সমুদ্রকে বরফশূণ্য অবস্থায় দেখেছিল। এইভাবে বরফ গলতে থাকলে আবারও আমরা এধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারি বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এবং এটাকে খুব গুর’ত্ব দিয়ে বিবেচনা করার প্রতিও জোর দিয়ে দিয়েছেন তারা। সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটির ক্লাইমেট সায়েন্স ডিরেক্টর শেন উল্ফ বলেছেন, ‘আর্কটিক সমুদ্রের এই দ্র’ত বরফ-গলন সবার জন্য একটা সতর্কবার্তা। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল আমরা হাতেনাতে পাচ্ছি। আর এগুলো গোটা দুনিয়াতেই অনেক বিধ্বংসী প্রভাব ফেলছে।— ডেইলি মেইল

ধূমপান ছাড়া এত কঠিন কেন?

সবাই জানে, ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। সিগারেটের প্যাকেটের গায়েও বেশ বড় বড় করে লেখা থাকে “ধূমপান ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ”। কিন্তু তারপরও ধূমপায়ীরা এই সিগারেটের নেশাটা ছাড়তে পারেন না। ধূমপান ছাড়তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ব্যক্তিও ‘আজকেই শেষ’, ‘এটাই শেষ’ বলতে বলতে সিগারেটটা খেতেই থাকেন। প্রশ্নটা হচ্ছে কেন? কেন তারা ছাড়তে পারেন না এই সর্বনাশা নেশাটা?

সিগারেটে একবার টান দেওয়ামাত্রই প্রচুর পরিমাণ নিকোটিন মুহূর্তের মধ্যেই মস্তিস্কে ক্রিয়া-বিক্রিয়া শুরু করে। নিকোটিনের অনুগুলো মস্তিস্কের রিসেপটরগুলোকে আঁকড়ে ধরে এবং ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটায়। যার ফলে ধূমপায়ীরা একটা সূখানুভূতি পেতে শুরু করে। ডোপামিন ছাড়াও এটি এন্ডোজেনাস ওপিওড নামক একটি রাসায়নিক মস্তিস্কে ছড়িয়ে দেয়। এতে করে ধূমপায়ীরা একটা ইতিবাচক অনুভূতি পেতে পারে। ২০০৪ সালে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এসব তথ্য দেন।

সিগারেট কোম্পানিগুলোও ধূমপান ছাড়ার কাজটা অনেকগুন কঠিন করে দিয়েছে। ২০১০ সালে ইউএসএ টুডের একটি রিপোর্টে দেখা যায়, কোম্পানিগুলো সিগারেটে সেসব দ্রব্যের সংযুক্তি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন, যেগুলোর ফলে শুরুর দিকের ধূমপায়ীদের কাছে এটা অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। আর দীর্ঘদিনের ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে নেশাটা আরও বেশি জাঁকিয়ে বসে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় অ্যামোনিয়ার কথা। সিগারেটে এর উপস্থিতির ফলে নিকোটিন মস্তিস্কে পৌঁছায় অনেক তাড়াতাড়ি।

ধূমপানটা একেবারে ছেড়ে দিতে গেলে মস্তিস্কের নিকোটিন গ্রাহকগুলো সক্রিয় হওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে ধূমপায়ীরা যে পরিমাণ ডোপামিন নিঃসরণে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, তার যোগানটাও কমে যায়। তৈরি হয় একটা অহেতুক ‘ফাঁকা ফাঁকা’ ভাব। এমনকি ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, সিগারেট ছাড়ার পর একটা কৃত্রিম হতাশা ও দুশ্চিন্তা মস্তিস্কে কাজ করে প্রায় ৩১ দিন পর্যন্ত। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিগারেট ছেড়ে দেওয়ার কঠিন পণ করার পরও অনেকে আবার ধূমপান শুরু করেন।

নিকোটিনের প্রভাবটা কিশোরদের শরীরে অনেক বেশি। সেজন্যই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই অনেকে সিগারেটে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় ৪,০০০ কিশোর-কিশোরী প্রথমবারের মতো সিগারেট খাওয়ার অভিজ্ঞতা নিতে যায়। আর এদের মধ্যে ১০০০ জনের ক্ষেত্রেই এটা নেশায় পরিণত হয়।

যাঁরা ফিল্টারের সাহায্যে বা লাইট সিগারেট খেয়ে ভাবেন যে, এটা শরীরের পক্ষে কম ক্ষতিকর, তাঁদেরকেও সতর্কবার্তা শুনিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ধূমপানের এই বিকল্প ব্যবস্থাগুলোও শরীরের ক্ষতিকারক দিকগুলো এড়াতে পারে না। বরং এটা সিগারেট একেবারে বাদ দিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টাকেই দমিয়ে রাখে।

বিশ্বের বৃহত্তম গুহা

১৯৯১ সালের কোন এক সময়ে গ্রামবাসীদের অদ্ভুত এক খবর শুনিয়েছিলেন ভিয়েতনামের এক হতদরিদ্র কৃষক হো কানাহ। জঙ্গলে কাঠ কাটতে গিয়ে তিনি নাকি অতিকায় এক বিশাল গুহার খোঁজ পেয়েছেন। স্বভাবতই প্রথমে কেউ বিশ্বাসই করতে চায় নি কথাটা। কাউকে যে নিয়ে গিয়ে জায়গাটা দেখাবেন সেটারও উপায় ছিল না। দুর্গম জঙ্গলের মধ্য দিয়ে কোন পথে যে সেই জায়গাটায় গিয়েছিলেন, সেটাই মনে করতে পারছিলেন না তিনি। পরবর্তীতে অদ্ভুত সেই জায়গাটা কানাহ খুঁজে বেরিয়েছিলেন দীর্ঘ ১৮টি বছর। ২০০৯ সালের এপ্রিলে বহু কষ্টে তিনি আবার যখন সেই বহু আরাধ্য জায়গাটায় আবার আসতে পারলেন, তখন জানা গেল, তিনি আসলে খুঁজে পেয়েছেন পৃথিবীর সর্ববৃহত্ গুহাটি। অত্যাধুনিক লেসার প্রযুক্তি দিয়ে মাপজোক করে ব্রিটিশ একটি অভিযাত্রী দল ঘোষণা করলেন যে, মালয়েসিয়ার ডিয়ার কেভ নয়, ভিয়েতনামের সন ডং-ই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গুহা।

ডিয়ার কেভের প্রায় প্রতিটি জায়গাই উচ্চতায় ও প্রস্থে ৯১ মিটার (৩০০ ফিট)। কিন্তু এটা লম্বায় মাত্র ১.৮ কিলোমিটার। যেখানে সন ডং গুহায় অভিযাত্রীরা ৪.৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটেছেন। ধারণা করা হচ্ছে এটার দৈর্ঘ্য আরও অনেক বেশি। আর উচ্চতা ও প্রস্থে কখনো কখনো এটি ১৪০ মিটারও (৪৬০ ফিট) ছাড়িয়ে গেছে।

ব্রিটিশ অভিযাত্রী দলের সদস্য স্পিলান গুহাটির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘ভিয়েতনামের এই জায়গাটা খুবই দুর্ভেদ্য। জঙ্গলের মূল রাস্তা থেকে গুহাটা অনেক দূরে। আর এটা এতই গহীনে যে, গুগল আর্থের সাহায্যেও এর হদিশ পাওয়া যায় নি। একেবারেই কাছাকাছি না গেলে এই গুহাটি লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যেত। এ কারণেই, আগের অভিযানগুলোতে অনেকে গুহাটির মাত্র ১০০ মিটারের মধ্যে গিয়েও এর প্রবেশ পথ খুঁজে পায় নি।’

গুহাটিতে প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় প্রকোষ্ঠ আছে বলে ধারণা করছেন অভিযাত্রীরা। তবে এখন পর্যন্ত গুহাটির শেষ পর্যন্ত যেতে পারেন নি তাঁরা। প্রথমবারের অভিযানে প্রায় ২০০ ফুট উঁচু একটি চুনাপাথরের দেয়ালের সামনে এসে থমকে যেতে হয় তাঁদের। তবে খুব দ্রুতই হয়তো এই গুহার শেষপর্যন্ত যেতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করছেন অভিযানপ্রিয় মানুষরা।

যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি ইয়েলোস্টোন আগ্নেয়গিরি

২০১২ সিনেমায় দেখানো এই দৃশ্য বাস্তবেও তৈরি হওয়ার মতো অনেক উপাদান ইয়েলোস্টোন পার্কের সুপ্ত অতিকায় আগ্নেয়গিরিতে আছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ছবি: ওয়েবসাইট

বিশ্ব মোড়ল, পরাক্রমশালী ও মহাশক্তিধর—আরও কত উপাধি যুক্তরাষ্ট্রের! তাবত দুনিয়ায় আধিপত্যকারী এই দেশটির জন্য এক ভয়ংকর বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। আগ্নেয়গিরির প্রচণ্ড অগ্ন্যুত্পাতে কোনো একসময় তাদের সুখের রাজ্য বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে।
এটা কোনো জ্যোতিষীর ভবিষ্যদ্বাণী নয়, বিজ্ঞানীদের তথ্য-প্রমাণনির্ভর যুক্তি। একদল মার্কিন বিজ্ঞানী ও আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ বলছেন, আমেরিকার ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের অতিকায় আগ্নেয়গিরিটি ধীরে ধীরে তার পেট থেকে লাভা উদিগরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আগ্নেয়গিরিটির পাথরমিশ্রিত গলিত লাভাগুলো দীর্ঘদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও ২০০৪ সাল থেকে সেটা রেকর্ড হারে জেগে উঠছে। রেকর্ড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত তিন বছরে আগ্নেয়গিরির লাভাস্তর তিন ইঞ্চি করে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, ইয়েলোস্টোন আগ্নেয়গিরির লাভা উদিগরণে দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে। জ্বলন্ত লাভা ছড়িয়ে পড়বে আকাশজুড়ে। বিষাক্ত ছাইয়ের ১০ ফুট পুরু আস্তরণ তৈরি হবে আশপাশের প্রায় এক হাজার মাইলজুড়ে। কোটি কোটি মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়তে হবে। ভেঙে পড়তে পারে বিমান চলাচলের ব্যবস্থা।
ইয়েলোস্টোন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাতের ভয়াবহতা সাম্প্রতিক আইসল্যান্ড আগ্নেয়গিরি উদিগরণকেও বহুগুণে ছাড়িয়ে যেতে পারে। এমনকি ১৯৮০ সালে মাউন্ট হেলেনস আগ্নেয়গিরির উদিগরণ থেকেও হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী হবে ইয়োলোস্টোন আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ।
মানুষের ইতিহাসে ছয় লাখ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এ ধরনের একটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত না থাকায় এ মুহূর্তে তাঁরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
উথাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইয়েলোস্টোন আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ বব স্মিথ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, ‘আগ্নেয়গিরির লাভাস্তর ওপরে ওঠার ঘটনা খুবই আশঙ্কাজনক। প্রথম দিকে আমরা শুধু এটা থেকে উদিগরণ ঘটতে পারে কি না সেদিকেই নজর রাখছিলাম। একসময় আমরা দেখলাম, গলিত লাভাটা ১০ কিলোমিটার নিচে আছে। সে জন্য আমরা অত বেশি চিন্তিত ছিলাম না। কিন্তু গলিত লাভার এই স্তরটা যদি দুই বা তিন কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসে, তাহলে সেটা আমাদের জন্য বড় ধরনের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক রবার্ট স্মিথ সম্প্রতি এই আগ্নেয়গিরি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে, ভূগর্ভস্থ স্তরের পুরোটাই গলিত পাথর দিয়ে ভর্তি। কিন্তু আমাদের কোনো ধারণা নেই যে কবে বা কখন এই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাত ঘটতে পারে অথবা গলিত পাথরগুলোর চঞ্চলতা স্থিমিত হয়ে আগ্নেয়গিরিটা আবার ঘুমিয়ে পড়তে পারে।—ডেইলি মেইল অনলাইন।

ঘুমন্ত দৈত্য

আপনাকে যদি বলা হয় আপনি বসে আছেন এমন এক জায়গায় যেখান থেকেই একবার এই পৃথিবীর বুকে ঘটে গেছে প্রলয়ঙ্করী এক বিস্ফোরণ? কেমন লাগবে আপনার? আসলে এ ধরণের প্রশ্নের সম্মুখিন হওয়ার কথা আমরা হয়তো মনেও আনি না। কি রাশিয়ার কিছু অঞ্চলের অধিবাসীদের দিকে সত্যিই এমন একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সমপ্রতি তাঁরা এক গবেষণায় দাবি করেছেন যে, ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর প্রায় সকল প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছিল বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এক অতিকায় আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে। আর সেই ঘুমন্ত দৈত্যটার অবস্থান রাশিয়ার আশপাশ জুড়ে। যার আয়তন গোটা ইউরোপ মহাদেশের চেয়েও কিছুটা বড়! সম্প্রতি স্তব্ধ করে দেওয়ার মতো এই খবরটা দিয়েছে ডেইলি মেইল অনলাইন।

পার্মিয়ান যুগে ( ২৯৯-২৫১ মিলিয়ন বছর আগে) পৃথিবীর সর্বশেষ প্রলয়ঙ্করী দুর্যোগে প্রায় সকল প্রাণির বিলুপ্তি ঘটেছিল বলে আগে থেকেই বিশ্বাস করতেন ইতিহাসবিদ ও বিজ্ঞানিরা। এটা গ্রেট ডাইয়িং নামেও পরিচিত। ধারণা করা হয় পৃথিবীর জলজ প্রাণীর প্রায় ৯৫% ও ভূমির ৭০% প্রাণী এসময় বিলুপ্ত হয়েছিল। এই ধারণাটা বিজ্ঞানীমহলে একপ্রকার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করলেও তারা শক্ত কোন প্রমাণ পাচ্ছিলেন না যে, আসলে এর সঠিক কারণটা কী? সমপ্রতি কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দাবি করেছেন যে, পার্মিয়ান যুগের ঐ মহাপ্রলয়ের কারণটা ছিল ভয়াবহ আকারের অস্নুৎপাত। কানাডায় প্রাপ্ত এক পাথরের গায়ের কয়লার স্তর বা আবরণ থেকে বিজ্ঞানীরা এর প্রমাণ পেয়েছেন। ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. স্টিভ গ্রাসবে বলেছেন, ‘এটা খুব ভালোভাবেই পার্মিয়ান যুগের প্রাণী বিলুপ্তির কারণটা ব্যাখ্যা করে। আমাদের এই গবেষণাটাই প্রথম প্রমাণ করতে পারবে যে, পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই অস্নুৎপাতের ফলে যে ব্যাপক পরিমাণ কয়লা দহন হয়েছিল সেটাই আজকের গ্রিনহাউজ গ্যাস সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ।’
ড. গ্রাসবি পাথরের গায়ে অদ্ভুত ধরণের এই কয়লার আবরণটা আরো ভালোমতো পরীক্ষা করার জন্য ভূবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. বেনোইট বিউচ্যাম্প ও পরিবেশ ভূ-রসায়নের অধ্যাপক ড. হামিদ সানেইয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এবং সম্মিলিতভাবেই তাঁরা উপরোক্ত ঐ সিদ্ধানে- পৌঁছেছেন। তাঁরা এটাও চিহ্নি‎ত করেছেন যে, আদি বিলুপ্তির কারণ ভয়াবহ এই আগ্নেয়গিরির অবস্থান বর্তমান রাশিয়ার উত্তরে। জায়গাটা সাইবেরিয়ান ফাঁদ নামেও পরিচিত। উত্তর রাশিয়া, তুরা, উকুটস, নোরিলস্ক ও ইরাকুটস্ক অঞ্চল ঘিরে এই আগ্নেয়গিরির বিস্তৃতি। পুরো এলাকাটার আয়তন দুই মিলিয়ন স্কয়ার কিলোমিটার। যা ইউরোপ মহাদেশের চেয়েও খানিকটা বড়। এই অস্নুৎপাতের ছাই গিয়েই জমা হয়েছিল কানাডায় বিজ্ঞানীদের প্রাপ্ত কয়লার আস্তরণজমা ঐ পাথরে। ড. বেনোইট বিউচ্যাম্প বলেছেন, ‘আমরা ঐ পাথরটাতে প্রচুর পরিমাণ জৈব উপাদান পেয়েছি। আর এগুলো থেকে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি যে, এগুলো কয়লা-ছাইয়ের স্তর। আধুনিক কয়লা পোড়ানোর পাওয়ার প্লান্টগুলোতে যেমনটা দেখা যা। ড. সানেই আরো যোগ করেছেন, ‘আমাদের এই আবিস্কারটাই প্রথম এই নিশ্চয়তা দিতে পারবে যে, আদি বিলুপ্তির ঐ সময়ে কয়লা ছাইয়ের উদগিরন হয়েছিল যা আগে চি‎হ্নত করা যায় নি।’
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন যে, সেসময়ের সেই ছাই উদগিরনটাই বর্তমান সময়ের এই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, পরিবেশ বিপর্যয়ের আদি কারণ। ঐ আগ্নেয়গিরি থেকে যে ছাই উদগিরন হয়েছিল সেটা ছিল খুবই বিষাক্ত।
তবে এখন আবার এই আগ্নেয়গিরি থেকে নতুন করে অস্নুৎপাতের সম্ভাবনা আছে কিনা সে সম্পর্কে এখনো কিছু জানান নি বিজ্ঞানীরা। তবে পরিবেশের যা হালচাল তাতে কিছুটা সাবধান হওয়ার সময় বোধহয় এসেছে। সময় এসেছে পরিবেশ নিয়ে বাণিজ্য-রাজনীতি না করে সত্যিই যেন ভয়ঙ্কর সুপ্ত এই দৈত্যটা জেগে না ওঠে সেদিকে নজর দেবার।

দ্বিতীয় সূর্য?!

স্টার ওয়ার্স সিনেমাতে লুক স্কাইওয়াকারকে দেখা গিয়েছিল দুই সূর্যওয়ালা কল্পিত এক গ্রহে। বাস্তবে পৃথিবীর মানুষও পেতে পারেন এ ধরণের বিরল অভিজ্ঞতা।

এ বছরই একটা অভূতপূর্ব বিরল ঘটনার সাক্ষী হতে পারেন পৃথিবীর বাসিন্দারা। প্রত্যক্ষ করতে পারেন দ্বিতীয় সূর্যের উপস্থিতি। ফলে রাতেও টের পাওয়া যাবে সূর্যের উজ্জ্বলতা। কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব? তাহলে কী প্রকৃতির নিয়ম ভেঙে প্রলয়ংকরী কোনো ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে পৃথিবীর বুকে? না, ব্যাপারটা সে রকম কিছু নয়। বিজ্ঞানীদের নতুন একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল অনলাইন জানিয়েছে, বহু দূরে একটা উজ্জ্বল নক্ষত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় পৃথিবীবাসীর এই বিরল অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ৬৪০ আলোকবর্ষ দূরে ‘বেটেলগুস’ নামের একটি নক্ষত্র খুব তাড়াতাড়িই প্রচুর শক্তি বিকিরণ করে ধীরে ধীরে ঢলে পড়বে মৃত্যুর কোলে। আর নক্ষত্রটি শক্তি বিকিরণের শেষ মুহূর্তে এমন এক বিস্ফোরণ ঘটাবে যার ফলে প্রায় এক বা দুই সপ্তাহ ধরে পৃথিবীর মানুষ প্রত্যক্ষ করতে পারবে দ্বিতীয় সূর্যের উপস্থিতি। তবে এই ঘটনাটি ঠিক কবে ঘটতে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। জ্যোর্তিবিজ্ঞানের নিয়মানুয়ায়ী অনুমান করা হচ্ছে, ‘বেটেলগুস’ অদূর ভবিষ্যতেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। তবে তার মানে এই না যে, আপনাকে এখনই সানগ্লাস কেনার জন্য দৌড়াতে হবে।
অস্ট্রেলিয়ার সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্রাড কারটেল বলেছেন, ‘২০১২ সালের আগেই এই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটতে পারে। নক্ষত্রটি খুব দ্রুতই তার কেন্দ্রের জ্বালানি শক্তি হারাচ্ছে। এই জ্বালানির জন্যই নক্ষত্রটি আলো বিকিরণ করতে পারে। জ্বালানি ভান্ডার শেষ হয়ে গেলে আক্ষরিক অর্থেই এটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কিন্তু পুরোপুরি শেষ হয়ে যাওয়ার আগে এটি একটা প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটাবে। এই বিস্ফোরণের ফলে আমরা পৃথিবীতে কয়েক সপ্তাহব্যাপী অবিশ্বাস্য আলোকিত একটা পরিবেশ পাব। তারপর এটা আস্তে আস্তে মিইয়ে যেতে শুরু করবে। এবং একসময় এটিকে আর দেখাই যাবে না।’
নতুন এই বিস্ময়কর খবরে অবশ্য ‘মহাপ্রলয়’, ‘পৃথিবীর শেষ’ ইত্যাদি নানাবিধ জল্পনা-কল্পনায় তোলপাড় হচ্ছে ইন্টারনেট দুনিয়া। মায়ান দিনপঞ্জী অনুয়ায়ী ২০১২ সালেই পৃথিবীতে একটা মহাপ্রলয় হবে, এমন ধারণা আগে থেকেই বেশ চালু আছে। তার ওপর ‘বেটেলগুস’ নামের অর্থ শয়তান, এই তথ্যটি এসব কল্পনায় যোগ করেছে নতুন মাত্রা। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এ ধরনের সম্ভাবনা একেবারেই আমল দেননি। তাঁরা বেশ স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন, নক্ষত্রের বিস্ফোরণটা পৃথিবী থেকে এত দূরে হবে যে, তাতে পৃথিবীর কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। ডেইলি মেইল অনলাইন।