Archive for the ‘ খেলাধুলা ’ Category

হাঙরের কামড় খেয়ে হাঙর বাঁচানোর আন্দোলন!‍

সবাই তাঁকে ডাকে ‘শার্ক বয়’ বা ‘শার্কি’ বলে। বিশ্বজুড়ে হাঙর নিধনের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ দক্ষিণ আফ্রিকার আচমাত হাশেইম। গত বছর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পেয়েছেন ‘গ্লোবাল শার্ক গার্ডিয়ান’-এর খেতাব। অথচ এটা জানলে চমকে যেতে হবে যে, বছর দশেক আগে এই হাঙরের কামড় খেয়েই প্রাণ হারাতে বসেছিলেন হাশেইম। অনেক কষ্টে জীবন বাঁচাতে পারলেও ডান পা-টা হারিয়েছেন হাঙরের কামড়ে। তবে কোনো কিছুতেই দমে যাননি দক্ষিণ আফ্রিকার এই সাঁতারু। এখন তিনি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন প্যারা-অলিম্পিকের সুইমিং পুল।

shark-boy

২০০৬ সালের ১৩ আগস্ট ঘটেছিল হাশেইমের জীবন বদলে দেওয়া সেই ঘটনা। দক্ষিণ আফ্রিকার মুইজেনবার্গ সমুদ্রসৈকতে সাঁতার কাটছিলেন তিনি। হঠাৎ করেই দেখতে পান কিছু একটা ধেয়ে আসছে তাঁর ভাই তারিকের দিকে। শুরুতে ভেবেছিলেন সেটা ছিল ডলফিন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারেন যে সেটা আসলে একটা হাঙর। ছোট ভাইকে বাঁচানোর জন্য পানিতে শব্দ করে হাঙরটির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন হাশেইম। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি ধেয়ে আসে তাঁর দিকে। অনেক চেষ্টা করেও হাঙরের কামড় থেকে বাঁচতে পারেননি তিনি। ডান পায়ের প্রায় পুরোটাই চলে গেছে ১৫ ফুট দীর্ঘ সেই হাঙরের পেটে।

হাশেইমের স্বপ্ন ছিল পেশাদার ফুটবলার হওয়ার। কিন্তু ডান পা হারানোর ফলে শেষ হয়ে যায় তাঁর ফুটবল ক্যারিয়ার। পরবর্তী সময়ে হাশেইমকে সুইমিং পুলে নামার পরামর্শ দেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্যারা-অলিম্পিক সাঁতারু নাতালি দু টোইট। অনুপ্রেরণা দেন প্যারা-অলিম্পিকে অংশ নিতে।

টোইটের এই পরামর্শই বদলে দেয় হাশেইমের জীবন। এক পা নিয়েই শুরু করেন সাঁতার। অলিম্পিক পর্যন্ত আসতেও খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি হাশেইমকে। ২০০৮ সালে বেইজিং প্যারা-অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ২০১২ সালে লন্ডন প্যারা-অলিম্পিকে জিতেছিলেন ব্রোঞ্জপদক। এখনো প্রতিবার সুইমিং পুলে নামার সময় সেই হাঙরের কথাই স্মরণ করেন হাশেইম, ‘সাঁতারের সময় আমি সেই ভয়টাকেই কাজে লাগাই। কল্পনা করি যে ১৫ ফুট লম্বা হাঙরটি আমার দিকে ধেয়ে আসছে। আমার ওপরে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করছে।’

এবারের রিও প্যারা-অলিম্পিক শেষেই সুইমিং পুলকে বিদায় বলবেন হাশেইম। এর পর নেমে পড়বেন হাঙর রক্ষা আন্দোলনে। যে হাঙরের কামড় খেয়ে প্রাণ হারাতে বসেছিলেন, তার প্রতি বিন্দুমাত্র ঘৃণা বা রাগ নেই হাশেইমের। বরং বিশ্বজুড়ে যেভাবে হাঙর নিধন করা হচ্ছে তাতে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন তিনি, ‘পরিসংখ্যান খুবই ভয়াবহ। প্রতিবছর প্রায় ১০ কোটি হাঙর মারা হচ্ছে।’ এভাবে চলতে থাকলে সমুদ্রের খাদ্য শৃঙ্খলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন হাশেইম।

হেলমেট এলো কেমন করে?

হেলমেট ছাড়া ব্যাটিং করতে নামার কথা হয়তো কল্পনাও করেন না এখনকার ব্যাটসম্যানরা। ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ফিলিপ হিউজের মৃত্যুর পর আরও সতর্ক হয়ে গেছে ক্রিকেট অঙ্গন। ব্যাটসম্যানদের মাথায় উঠছে আরও শক্তিশালী-সুরক্ষিত হেলমেট। অথচ একটা সময় ক্রিকেটে এই হেলমেটের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। মাথায় কোনো কিছু না পরেই জোয়েল গার্নার, জেফ থমসন, ম্যালকম মার্শালদের মতো দুর্ধর্ষ পেসারদের মুখোমুখি হতেন ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু কবে থেকে শুরু হয়েছিল হেলমেট পরার চল? কে পরেছিলেন প্রথম হেলমেট? কেমন ছিল তার ধরনধারন?

helmets

১৯৩২-৩৩ মৌসুমের কুখ্যাত বডিলাইন সিরিজের কথা ক্রিকেটপ্রেমীরা কমবেশি সবাই জানেন। ডন ব্রাডম্যানের দুর্দান্ত অস্ট্রেলিয়ান দলকে বেঁধে রাখার জন্য সরাসরি ব্যাটসম্যানের শরীর লক্ষ্য করে বোলিং করার কৌশল গ্রহণ করেছিলেন ইংলিশ বোলাররা। সেই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যান আহত হয়েছিলেন বলের আঘাতে।  তখনও ক্রিকেট অঙ্গনে আসেনি হেলমেটের ভাবনা। ১৯৩০-এর দশকে অবশ্য ইংল্যান্ডের এক ব্যাটসম্যান প্যাটসি হেনড্রেন বানিয়েছিলেন বিশেষ এক ধরণের টুপি। কাউকে কাউকে মাথায় তোয়ালে জড়িয়েও দেখা গেছে ব্যাট হাতে মাঠে আসতে। ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সুনিল গাভাস্কারও মাথা বাঁচানোর জন্য বানিয়েছিলেন বিশেষ এক ধরণের টুপি। কিন্তু কোনো কিছুকেই হেলমেটের উত্তরসূরি বলা যায় না।

ব্যাটসম্যানের মাথায় প্রথমবারের মতো হেলমেট সদৃশ বস্তু দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত। সে সময় ক্রিকেট অঙ্গন কাঁপিয়ে তুলেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসাররা। জোয়েল গার্নার, মাইকেল হোল্ডিং, অ্যান্ডি রবার্টস, ম্যালকম মার্শাল, কলিন ক্রফটরা কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন ব্যাটসম্যানদের মনে। অস্ট্রেলিয়ার পেস জুটি ডেনিস লিলি ও জেফ থম্পসনও ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। বল না, ব্যাটসম্যানদের দিকে যেন একেকটা আগুনের গোলাই ছুঁড়ে দিতেন দুর্ধর্ষ এই পেসাররা। তাঁদের ভয়ঙ্কর সব ইয়র্কার থেকে বাঁচার জন্যই মাথায় হেলমেট পরার কথা ভাবতে হয়েছিল সেসময়ের ব্যাটসম্যানদের।

dennisক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম হেলমেট অবশ্য কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে না, দেখা গিয়েছিল কেরি পেকারের বাণিজ্যিক টুর্নামেন্ট ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটের সৌজন্য। ১৯৭৭ সালে ওয়ার্ল্ড সিরিজের প্রথম মৌসুমে অ্যান্ডি রবার্টের বাউন্সারে চোয়াল ভেঙে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান ডেভিড হুকসের। এই ঘটনার পরেই নিজের মাথা বাঁচাতে হেলমেট পরে ব্যাট করতে আসেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান ডেনিস অ্যামিস। সেটা ছিল একটা মোটরসাইকেলের হেলমেট। সেসময় অনেকেই কাপুরুষ বলে গালি দিয়েছিলেন অ্যামিসকে। কিন্তু অ্যামিসের সেই সিদ্ধান্তটিই অনেকটা বদলে দেয় ক্রিকেট বিশ্বকে। তার দেখাদেখি টনি গ্রেগসহ আরও অনেকে পরা শুরু করেন হেলমেট।

grahamআন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথমবারের মতো হেলমেট পরেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার গ্রাহাম ইলোপ। ১৯৭৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময়। সেটিও ছিল মোটরসাইকেলের হেলমেটের মতো। বলাই বাহুল্য যে, শুরুর দিকের সেই হেলমেট পরে খেলতে বেশ কষ্টই হতো ব্যাটসম্যানদের। অনেক ভারী সেই হেলমেটগুলোয় বাতাস চলাচলের সুবিধা ছিল না বললেই চলে। সামনে মোটা প্লাস্টিকের গ্লাস থাকায় বল দেখার ক্ষেত্রেও পড়তে হতো অসুবিধায়। তারপরও মহামূল্যবান মাথা বাঁচানোর তাগিদে সেগুলোই মাথায় দিয়ে মাঠে নামতে শুরু করেছিলেন সে যুগের ব্যাটসম্যানরা। এরপর ধীরে ধীরে গ্লাভস-প্যাডের মতো হেলমেটটাও হয়ে ওঠে ব্যাটসম্যানদের একটি আবশ্যিক সুরক্ষা উপাদান।

ভিভ রিচার্ডসের মতো কিছু ব্যাটসম্যান অবশ্য আছেন যাঁরা কখনোই মাথায় চাপাতে চাননি হেলমেট নামের এই ‘বোঝা’টিকে। ১৯৭৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ১২১টি টেস্ট ও ১৮৭টি ওয়ানডে খেলা রিচার্ডস সব সময়ই মাঠে নেমেছেন টুপি পড়ে।

বার্সেলোনার রাজনীতি, রাজনীতির বার্সেলোনা

 

ইউরোপের অন্যতম সেরা ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার খেলাগুলোতে দর্শকসারিতে প্রায়ই দেখা যায় একটা ব্যানার: “কাতালোনিয়া স্পেন না”। হ্যাঁ, স্পেন থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন একটা রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখছে কাতালোনিয়ার মানুষ। সত্যিই তেমনটা হয়ে গেলে ছোট আকারের একটা সশস্ত্র সামরিক বাহিনী গড়ার পরিকল্পনাও করছেন কাতালান রাজনীতিবিদরা। তবে কাতালোনিয়ার একটা নিরস্ত্র সেনাদল দীর্ঘদিন ধরে ছিল এবং এখনও আছে। আর তা হলো বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের সমর্থক। যারা প্রতি সপ্তাহান্তে ৯৯ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ন্যু ক্যাম্প স্টেডিয়ামকে সাজিয়ে দেন লাল-নীলের প্রতীকি সাজে। যেটা কাতালোনিয়ার জাতীয় পতাকাকে ইঙ্গিত করে। নতুন রাষ্ট্র হিসেবে কাতালোনিয়ার নাম সত্যিই যদি আসে, তাহলে বার্সেলোনা শহর হবে এই নতুন দেশের রাজধানী।

&MaxW=640&imageVersion=default&AR-150929622

আগামী রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে কাতালোনিয়া প্রদেশের পার্লামেন্ট নির্বাচন। ভোটাভুটিতে স্বাধীন কাতালোনিয়ার পক্ষের শক্তি জিতে গেলে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের কর্মকাণ্ড শুরু করা হবে বলে জানানো হয়েছে স্বাধীনতাকে ‘হ্যাঁ’ বলা জোটের নেতারা। কাতালোনিয়া যদি স্বাধীন হয়ে যায় তাহলে বার্সেলোনা আর স্প্যানিশ লিগে খেলতে পারবে না বলে জানিয়েছেন লা লিগার প্রেসিডেন্ট।

আন্তর্জাতিকভাবে যেভাবেই দেখানো হোক না কেন, বার্সা দীর্ঘদিন ধরেই বহন করছে কাতালান জাতীয়তাবাদের পতাকা। ন্যু ক্যাম্পে বার্সেলোনার খেলাগুলোতে দর্শকসারিতে দেখা যায় কাতালোনিয়ার পতাকার মতো লাল-নীলের আধিক্য। বার্সার প্রধান তারকা লিওনেল মেসির চেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় স্বাধীনতার ধ্বনি। সর্বশেষ স্প্যানিশ কাপ ফাইনালে ন্যু ক্যাম্পে স্পেনের জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর সময় দুয়োধ্বনি দিয়েছিলেন বার্সার সমর্থকেরা। এজন্য ৭৪ হাজার ডলার জরিমানা করা হয়েছিল বার্সাকে। ন্যু ক্যাম্প স্টেডিয়ামের এক পার্শ্বে পাকাপাকিভাবে একটা ব্যানার লাগানো থাকে। যেখানে লেখা আছে: “কাতালোনিয়া স্পেন না”।

catalonia

স্প্যানিশ লেখক মানুয়েল ভাজকেজ মোনতালবান বার্সাকে বর্ণনা করেছেন একটা ‘প্রতিকী ও নিরস্ত্র কাতালান সেনাবাহিনী হিসেবে।’। বিশেষত ১৯৩৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত, জেনারেল ফ্রাঙ্কোর সামরিক শাসনের সময়। ফ্রাঙ্কো চরমভাবে অবদমিত করে রেখেছিলেন কাতালান জাতীয়তা, ভাষা-সংস্কৃতির চর্চাকে। ইতিহাসবিদ চার্লেস সান্তানা বলেছেন, ‘বার্সেলোনা ক্লাব ছিল কাতালানদের স্বাধীনতার ঘাঁটি। এখানে এসে মানুষ নির্ভয়ে কাতালান ভাষায় কথা বলতে পারত। এমনকি গানও গেতে পারত।’ ১৯১৮ সালে কাতালোনিয়াকে স্ব-শাসনের ব্যবস্থা দেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছিল বার্সেলোনার পক্ষ থেকে। ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জোন লোপার্তা, বার্সেলোনার সভাপতি থাকার সময়ও স্বাধীন কাতালোনিয়ার পক্ষে সক্রিয় অবস্থায় দেখা গেছে ইউরোপের অন্যতম সফল ক্লাবটিকে। লোপার্তা খোলাখুলিভাবে স্বাধীন কাতালোনিয়ার সমর্থনে কথাবার্তা বলতেন। ২০১২ সালেও স্পেনের কেন্দ্রিয় সরকার দেশের প্রতিটি স্কুলে স্প্যানিশ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব তোলার পর কড়াভাবে এর সমালোচনা করেছিল বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব

তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা ভিন্ন অবস্থানে দেখা যাচ্ছে বার্সেলোনাকে। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের জন্য বার্সেলোনা কোনো পক্ষ নেবে না বলে জানিয়েছেন ক্লাব সভাপতি হোসেপ মারিয়া বার্তেমোউ। তিনি বলেছেন, ‘বার্সেলোনা এটা দেখিয়েছে যে তারা এই নির্বাচনী প্রচারণার বাইরে আছে। যা করার সেটা রাজনীতিবিদেরই করতে হবে। বার্সা নিরপেক্ষ থাকবে।’ বার্সার কিংবদন্তি ফুটবলার জাভিও মত দিয়েছেন ক্লাবকে রাজনীতির বাইরে রাখার পক্ষে। তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় বার্সাকে রাজনীতির সঙ্গে জড়ানো ঠিক হবে না। এই ক্লাবকেও না, ফুটবলকেও না। কিন্তু পরিস্থিতি ব্যাপারটাকে অনিবার্য করে তুলেছে।’

তবে বার্সার আরেক তারকা জেরার্ড পিকে বেশ জোরেসোরেই কথা বলছেন কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে। ১১ সেপ্টেম্বর কাতালোনিয়ার জাতীয় দিবসের র‍্যালিতে দেখা গেছে পিকেকে। সেসময় বার্সার এই ডিফেন্ডার বলেছিলেন, ‘এখানে খুবই বড় একটা আন্দোলন হচ্ছে। আর এটা সবার শোনা উচিৎ।’ সম্প্রতি স্পেনের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলার সময় পিকেকে দুয়োধ্বনিও শুনতে হয়েছে স্পেনেরই সমর্থকদের কাছ থেকে।

11setembre-14-pique

কাতালোনিয়া সত্যিই আলাদা হয়ে গেলে ইউরোপের ফুটবল অঙ্গনে বেশ বড় ধরণের তোলপাড় শুরু হবে। স্পেনের জাতীয় দলে খেলেন বেশ কয়েকজন বার্সেলোনার খেলোয়াড়। তারা তখন আর খেলতে পারবেন না স্পেনের হয়ে। বার্সেলোনাও যে তাহলে লা লিগায় অংশ নিতে পারবে না সেটাও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন স্প্যানিশ পেশাদার ফুটবল লিগের প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের তেবাস, ‘খেলার আইন খুব পরিস্কার: লা লিগায় স্পেনের ক্লাবগুলো ছাড়া অংশ নিতে পারবে শুধু আনডোরান ক্লাবগুলো। লা লিগা অনুষ্ঠিত হবে কাতালান ক্লাবগুলোকে বাদ দিয়েই।’ বার্সেলোনার সঙ্গে লা লিগার আরেক ক্লাব এসপানিওলেরও হবে একই দশা।

তাহলে কি সত্যিই আর দেখা যাবে না দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার ঐতিহ্যবাহী দ্বৈরথ? ফুটবল বিশ্ব কী বঞ্চিত হবে ‘এল ক্লাসিকো’র রোমাঞ্চ থেকে? উত্তরের জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে বার্সেলোনার রাজনীতির দিকে।

এল ক্লাসিকো কি শুধুই ফুটবলীয় লড়াই?

ফুটবল বিশ্বে ‘ডার্বি’ বলতে বোঝানো হয় ‘একই শহর বা এলাকার দুইটা দলের দ্বৈরথ’। যেমন একই শহর ম্যানচেস্টারের দুই ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও সিটির লড়াই। বা ইতালির মিলান শহরের এসি মিলান ও ইন্টার মিলানের লড়াই। সেই অর্থে রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনার ধ্রুপদী লড়াইকে কেন ডার্বি বলা হবে; তা ভেবে অবাক হতে হয়। দুইটা দল এক শহরের না, এক এলাকার না; এমনকি তাদের ‘জাতীয়তা’ও আলাদা।

স্বাধীনতার দাবিতে যুগ যুগ ধরে তোলপাড় হয়ে আসছে কাতালোনিয়া। ফ্রান্স ও ভূমধ্যসাগরীয় সীমান্তবর্তী কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনা। অন্যদিকে কেন্দ্রীভূত স্প্যানিশ রাষ্ট্রের মধ্যমনি মাদ্রিদ। স্পেনের ম্যাপের একেবারে মাঝামাঝি মাদ্রিদের অবস্থান। কিন্তু ভৌগলিকভাবে অনেক দুরত্ব থাকার পরও রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনার দ্বৈরথ কেন এমন ধ্রুপদী লড়াই হয়ে উঠল, তা জানার জন্য আমাদের নজর দিতে হবে দেশটির রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসের দিকে।

স্প্যানিশ ফুটবলের সঙ্গে দেশটির রাজনীতি খুব ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। ইউরোপের অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে স্পেনেই সম্ভবত দুইয়ের মিশেলটা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। ‘এল ক্লাসিকো’ বা রিয়াল-বার্সার ধ্রুপদী লড়াইয়ের সঙ্গে রাজনীতি-সংস্কৃতি, নিপীড়ণ আর প্রতিরোধগাথা এত অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে, যেটা আর অন্য কোনো ফুটবল ম্যাচে দেখা যায় না।

বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব সবসময় ছিল কাতালোনিয়া জাতীয়তাবাদের প্রতীক। ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত, তিন বছরের রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের পর স্বৈরশাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো যখন ক্ষমতা দখল করলেন তখন বার্সেলোনার ওপর নেমে আসে নির্মম অত্যাচার। এর একটা অন্যতম প্রধান কারণ: ১৯৩৬ সালে ফ্রাঙ্কোর সেনাবাহিনীর ক্যু’র বিরুদ্ধে প্রথম আওয়াজ এসেছিল বার্সেলোনা থেকে। সেবছর বার্সার সভাপতি জোসেফ সুনিয়োলকে গ্রেপ্তার করে হত্যা করে ফ্রাঙ্কোর সেনাবাহিনী। ১৯৩৬ সালের পর ফ্রাঙ্কোর শাসনামলে নিষিদ্ধ করা হয় কাতালান ভাষা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় কাতালান ভাষায় লেখা বহু বই। সামরিক শাসনামলে এসবের প্রতিবাদ জানানোর মঞ্চ হিসেবে কাতালোনিয়ার মানুষ বেছে নিয়েছিল ফুটবল মাঠকে। বার্সেলোনার মাঠ ন্যু ক্যাম্প পরিণত হয়েছিল নিপীড়ত মানুষের মুখ খোলবার জায়গা। এখানেই কোনো দ্বিধা-ভয় ছাড়াই তারা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারত মাতৃভাষায়। এভাবেই সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিল একটা ফুটবল মাঠ ও ক্লাব। বার্সেলোনা এখনও সেই উত্তরাধিকার বহন করে। এখনও তাদের শ্লোগান: ‘ক্লাবের চেয়েও বেশি কিছু’।

Catalonia vs Argentina

অন্যদিকে ফ্রাঙ্কোর মদমপুষ্ট হয়ে রিয়াল মাদ্রিদ পরিণত হয় শাসকদের আভিজাত্যের প্রতীককে। উঁচু পদ পাওয়ার আশায় জেনারেল ফ্রাঙ্কোর দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য রিয়ালের স্যান্টিয়াগো বার্নাব্যু স্টেডিয়ামে হাজির হতেন স্পেনের অভিজাতরা। সেনা কর্মকর্তা-ব্যবসায়ীরা। ফ্রাঙ্কোও রিয়াল মাদ্রিদের সাফল্যকে ব্যবহার করতেন নিজের ক্ষমতার যৌক্তিকতা টিকিয়ে রাখার জন্য। এর জন্য নিজের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকে নগ্নভাবে ব্যবহার করতেও পিছপা হতেন না স্পেনের কুখ্যাত স্বৈরশাসক। বার্সেলোনার খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখানো, রেফারিদের কিনে নেওয়া ইত্যাদি নানা উপায়ে বার্সার ওপর আধিপত্য বজায় রেখেছে মাদ্রিদ। ১৯৭৫ সালের ২০ নভেম্বর ফ্রাঙ্কোর মৃত্যুসংবাদ শুনে কুখ্যাত এই স্বৈরশাসকের মূর্তি নিয়ে আনন্দে লোফালুফি করেছিলেন বার্সেলোনার সেক্রেটারি জাউম রোসেল ও পরিচালক হুয়ান গ্রানাডোস। একটা নিপীড়ণ-নির্যাতনমূলক যুগের অবসান হওয়ায় তাঁরা যে কী পরিমাণ খুশি হয়েছিলেন তা স্পষ্টই বোঝা যায়।

ফুটবলে রিয়াল-বার্সার লড়াই যে মহা গুরুত্বপূর্ণ তা নতুন করে বলার কিছু নেই। একই সঙ্গে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিকভাবেও নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইউরোপের অন্যতম সেরা দুই ক্লাব। খুব সাম্প্রতিক সময়েও, ২০১৩ সালে স্বাধীন কাতালোনিয়ার দাবিতে ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ জায়গা জুড়ে মানববন্ধন করেছেন সেখানকার অধিবাসীরা। হাতে-হাত রেখে এই প্রতিবাদের ঢেউ বয়ে গেছে বার্সেলোনার ন্যু ক্যাম্প স্টেডিয়ামের ভেতর দিয়েও। তার আগের বছর স্বাধীন কাতালোনিয়া ও তার ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিও দিয়েছে বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব।

CATALONIA Human chain

তাই ‘ডার্বি’র প্রথাগত সংজ্ঞার সঙ্গে ঠিকঠাক না মিললেও রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনা লড়াই পরিণত হয়েছে ইউরোপের অন্যতম প্রধান দ্বৈরথে। এর সঙ্গে মেসি-রোনালদো, বেল-নেইমারের ফুটবলীয় লড়াইয়ের উন্মাদনা যেমন আছে। ঠিক তেমনি আছে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের উত্তাপ-উত্তেজনা।

যখন বার্সার ওপর ছিল মাদ্রিদের রাজত্ব

স্প্যানিশ লিগে বরাবরই দেখা যায় বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদের আধিপত্য। ১৯৯৭-৯৮ সাল থেকে বর্তমান ফরম্যাটের প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পর ১৭টি মৌসুমের মধ্যে ১৩বারই শিরোপা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছে স্পেনের শীর্ষ এই দুই ক্লাব। এর মধ্যে আটবারই জিতেছে বার্সা। রিয়াল জিতেছে পাঁচবার।

সাম্প্রতিক সময়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালের চেয়ে বার্সেলোনা কিছুটা এগিয়ে থাকলেও একটা সময় বার্সেলোনার ওপর আক্ষরিক অর্থেই রাজত্ব করত মাদ্রিদ। ফুটবল মাঠে শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে তো বটেই, এমনকি রাজনৈতিকভাবেও।

১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পর ক্ষমতা দখল করেন স্বৈরশাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো। এবং সাধারণ মানুষের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য খুব দ্রুতই তিনি ফুটবল মাঠে রিয়াল মাদ্রিদের সাফল্যকে কাজে লাগাতে শুরু করেন। কিন্তু সেসময় তাদের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ছিল কাতালোনিয়া ও বাস্ক জাতিগোষ্ঠীর স্বকীয়তার প্রতীক দুই ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা ও অ্যাথলেটিক বিলবাও।

franco real madrid

১৯৩৬ সালে স্প্যানিশ রিপাবলিকের বিরুদ্ধে সামরিক অভুত্থান শুরু করেন ফ্রাঙ্কো। সেসময় এই ক্যু’র বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধটা এসেছিল বার্সেলোনা থেকে। ফলে কাতালান জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের প্রতি বিশেষভাবেই ক্ষুব্ধ ছিলেন ফ্রাঙ্কো। ফুটবল মাঠে বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদের ওপর আধিপত্য করবে এটা মানতে পারেননি এই স্বৈরশাসক। রিয়ালের সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য নিজের ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করতেও বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করেননি ফ্রাঙ্কো।

আদিতে বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের নাম ছিল কাতালান এফসি বার্সেলোনা। কিন্তু কাতালোনিয়ার স্বকীয়তা-স্বাধীনতার দাবি যেন মাথাচাড়া না দেয়, সেজন্য তিনি ক্লাবের নাম পরিবর্তন করতে বাধ্য করেন। তাদের নতুন নাম হয় বার্সেলোনা সিএফ।

রিয়াল মাদ্রিদের সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য ফ্রাঙ্কো নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার কিভাবে করেছেন, তার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ ১৯৪৩ সালে কিংস কাপের (এখনকার কোপা ডেল রে) সেমিফাইনাল। প্রথম লেগে ৩-০ গোলের জয় দিয়ে ফাইনালের পথে অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছিল বার্সা। কিন্তু দ্বিতীয় লেগের খেলায় অংশ নিতে বার্সার ফুটবলাররা যখন মাদ্রিদে গেলেন, তখন আকস্মিকভাবে তাদের সাজঘরে হাজির হয়েছিলেন স্পেনের স্টেট সিকিউরিটির ডিরেক্টর। বার্সার খেলোয়াড়দের যে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছিল, তা স্পষ্টই বোঝা যায় সেই ম্যাচের ফলাফল দেখলে। রিয়ালের মাঠে ১১-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল বার্সেলোনা।

1943 barcelona defeat1943 barcelona defeat2

রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি ফুটবলার আলফ্রেড ডি স্টেফানোকে দলে ভেড়ানো নিয়েও বেধেছিল বিপত্তি। ১৯৫৩ সালে আর্জেন্টাইন এই ফুটবলারকে প্রথমে দলে ভিড়িয়েছিল বার্সেলোনা। কিন্তু সেসময় ফ্রাঙ্কো একটা ডিক্রি জারি করেন যে বিদেশী কোনো খেলোয়াড় কেনা যাবে না। শেষপর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনা সমঝোতার ভিত্তিতে এমন ঐক্যমত্যে পৌঁছানো হয় যে, ডি স্টেফানো এক মৌসুম-এক মৌসুম করে খেলবেন দুই দলের হয়েই। এই ঘটনার কিছুদিন পরই বার্সেলোনার সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান এনরিক মার্টি কোয়েত্তো। কিছুদিন পরে ডি স্টেফানোকে এককভাবেই দখল করে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ।

di stefano

আর্জেন্টাইন এই জাদুকরের দুর্দান্ত নৈপুন্যে ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত, ১৪ মৌসুমের মধ্যে নয়বারই শিরোপা ওঠে রিয়ালের ঘরে। ১৯৩৩ সালের পর ১৯৫৩-৫৪ মৌসুমেই প্রথমবারের মতো লা লিগা শিরোপা ওঠে রিয়ালের ট্রফি কেসে। ১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হয় রিয়াল। সেসময় মাদ্রিদ সত্যিই রাজত্ব করত বার্সেলোনার ওপর।

ক্রিকবোমিও পরিস্থিতি: কোন দিকে যাবে ক্রিকেট?

ক্রিকেট নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের উত্তেজনার অন্ত নেই… এ তো জানা কথা। কিন্তু ব্যাট-বলের এই খেলাটা যে অনেক ক্ষমতাও ধরে, সেটা অদ্যই জানা গেল।
এসএসসি পরীক্ষা, ইজতেমা… সাধারণ মানুষের নাজেহাল দশা; কোনো কিছুই টলাতে পারেনি আমাদের আপোষহীন নেত্রীকে। হরতাল-অবরোধ অব্যাহত ছিল। কিন্তু হাজার হাজার মাইল দূরে মাশরাফি-সাকিবরা একটা ম্যাচ জিতে সত্যিই স্বস্তি দিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষকে। এক দিনের জন্য হলেও হরতাল শিথিল করার ডাক এসেছে আন্দোলনরত ২০ দলের পক্ষ থেকে। ১৪ দলের সরকারি পক্ষ থেকেও এসেছে অনেক অনেক শুভেচ্ছাবার্তা, আর্থিক পুরস্কারের ঘোষণা।

team celebration

তার মানে দেশের মানুষের শিক্ষাদীক্ষা, প্রথাগত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন, মানুষের রোজকার বাঁচা-মরার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের ক্রিকেট। এ কিন্তু অনেক বড় ব্যাপার একটা দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য। প্রশ্ন হচ্ছে: আমাদের ক্রিকেটারদের কাছে এটার গুরুত্ব কতটুকু? ক্রিকেটারদের সঙ্গে সমাজ-রাষ্ট্রের সম্পর্কই বা কী? আদৌ আছে কিনা…

ইতিহাস বলে সম্পর্ক আছে। ১৯৮০ সালের দিকে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলার মাধ্যম হিসেবে ফুটবল মাঠকেই বেছে নিয়েছিলেন ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার সক্রেটিস। করিন্থিয়ান ক্লাবের মাধ্যমে সংগঠিত করেছিলেন স্বৈরতন্ত্রবিরোধী পাঠাতন। মানুষকে ভাবাতে শুরু করিয়েছিলেন যে তাদেরও বলার অনেক কিছু আছে। স্পেনে জেনারেল ফ্রাঙ্কোর একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে জোর আওয়াজ উঠত বার্সেলোনার ন্যু ক্যাম্প বা অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের সান মেমে স্টেডিয়ামে। নিজেদের স্বকীয়তা-স্বাধীনতার কথা জানান দেওয়ার জন্য ফুটবল ম্যাচগুলোই ছিল কাতালান-বাস্ক জাতিগোষ্ঠীর প্রধান মাধ্যম। খুব সাম্প্রতিককালেও আইভরি কোস্টের স্ট্রাইকার দিদিয়ের দ্রগবা অনেক লড়েছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য।

কোনো স্পোর্টিং ইভেন্ট যে সত্যিই একটা জাতীয় পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলতে পারে, তার বড় প্রমাণ ১৯৮৩ সালে ভারতের ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়। অনেকের মতেই, সেটা ছিল ভারতের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া একটা মুহূর্ত। ১৯৫৩ ও ৫৪ সালে দুইটি ফুটবল ম্যাচের কারণে চূর্ণ হয়েছিল সাম্রাজ্যের অহঙ্কার আর নিপীড়িত মানুষের মনে জাগিয়েছিল স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন। হাঙ্গেরি ৬-৩ ও ৭-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। ১৯৫৬ সালের হাঙ্গেরিয়ান বিপ্লবের সঙ্গে এই ম্যাচদুটির প্রত্যক্ষ যোগসূত্র ছিল বলেই দাবি করেছিলেন দেশটির প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক পিটার টিমার। ১৯৯৯ সালে তাঁর পরিচালিত ‘৩-৬’ সিনেমাটিতে দেখানো হয়েছিল, রেফারির শেষ বাঁশি বাজার পর রাজনৈতিক বন্দীদের সঙ্গে কোলাকুলি করে বিজয় উদযাপন করেছিলেন কারাগারের রক্ষীরা। দুই বছর পরে অনেকেই একজোট হয়ে লড়েছিলেন সোভেয়েত ট্যাঙ্কের বিরুদ্ধে। খুঁজলে হয়তো এমন আরও অনেক কিছু পাওয়া যাবে।

আবার ঠিক উল্টোভাবে খেলাধুলা শাসকদের লাঠি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে যুগ যুগ ধরে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়কে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার সুযোগ হিসেবে দেখেছিলেন দুই দেশের সামরিক জান্তারা। হিটলার জার্মান জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার জন্য খেলাধুলাকে বেছে নিয়েছিলেন। স্পেনের জেনারেল ফ্রাঙ্কোও ফুটবলকে অনেকভাবে ব্যবহার করেছেন নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য। হাঙ্গেরি ও সোভিয়েত সরকারের কাছে খেলাধুলা, বিশেষত ফুটবলটা ছিল কমিউনিজমের আদর্শ প্রতিষ্ঠার লড়াই। হাঙ্গেরির জাতীয় দল ছিল পুরোপুরি সরকারের কর্তৃত্বাধীন। সেসময়ের কোচ গুসতাভ সেবেস বলেছিলেন, ‘পুঁজিবাদ ও কমিউনিজমের লড়াইটা শুধু আমাদের সমাজেই না, চালাতে হবে ফুটবল মাঠেও।’

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসে বিশাল মাপের বাণিজ্যক্ষেত্রেও পরিণত হয়েছে খেলাধুলা। বৈশ্বিক বাণিজ্যের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। বাংলাদেশেও ক্রিকেটকে খুব সুচতুরভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে নিজেদের পণ্য বিকানোর জন্য। ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানানোর নাম করে অমুক বিজ্ঞাপন, তমুক বিজ্ঞাপন… এমনকি ৬৪ জেলায় কনসার্ট পর্যন্ত আয়োজন করা হয়। যেটা স্রেফ ব্যবসা ছাড়া আর কিছুই না| মূলধারার গণমাধ্যমের ভাষায়, ‘ক্রিকেটটা মানুষ খায়’- তাই ক্রিকেটের মোড়ক দিয়ে সাজিয়ে নানাবিধ পণ্য পাবলিককে খাওয়ানো যায় খুব সহজে। আবেগে গদগদ হয়ে আমরা খেতেও থাকি ভোগবাদ, শাসকতা-নাশকতার বড়ি।

সবকিছু শেষে প্রশ্ন হচ্ছে একটাই: আমরা কোনদিকে এগুবো??? বাংলাদেশের ক্রিকেট কী শাসক-নাশকদের স্বৈরতন্ত্র জারি রাখার লাঠি হিসেবে ব্যবহার হবে? বেনিয়াদের ব্যবসাপাতির সামগ্রী হবে নাকি সত্যিই মুক্তির স্বপ্ন দেখাবে মানুষকে?

নাইকি বনাম অ্যাডিডাস: বিশ্বকাপের অন্য লড়াই!


21আর মাত্র ৪০ দিন পরেই ফুরোবে অপেক্ষার প্রহর। পর্দা উঠবে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-এর। কার মাথায় উঠবে ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট—সেই আলোচনাতেই বিভোর ফুটবল বিশ্ব। মাঠের লড়াইয়ের আগে কথার লড়াইয়েও মশগুল হয়ে উঠবেন তারকা ফুটবলাররা। তবে এসব বাদ দিয়ে সবার অলক্ষ্যে আরেকটি লড়াইয়ের ময়দানও কিন্তু তৈরি হয়ে গেছে ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে। যেখানে লড়তে দেখা যাবে নাইকি, অ্যাডিডাসের মতো বহুজাতিক করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে। বিশ্বব্যাপী নিজেদের বিপণন বাণিজ্য ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টায় তারাও নিয়োগ করবে সর্বোচ্চ শক্তি। ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা কিংবা মেসি-রোনালদো লড়াইয়ের চেয়েও এই লড়াই কিন্তু কোনো অংশে কম আকর্ষণীয় নয়।

অ্যাডিডাস-নাইকি, দুটোই ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। একই ধরনের পণ্য উত্পাদনকারী হিসেবে পণ্যের বিপণন বাণিজ্যে এই দুটি প্রতিষ্ঠান সব সময়ই একে অন্যকে ছাড়িয়ে যেতে চায়। বিশ্বকাপের বছরে এই ‘ছাড়িয়ে যাওয়ার লড়াই’ পায় ভিন্ন মাত্রা। এবারের আসরটা ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে উত্তাপটা আরও বেশি ছড়াচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে ব্রাজিলিয়ানদের মতো ফুটবলপাগল জাতি যে খুব কমই আছে। আর এটার তাত্পর্য বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছেন নাইকির ব্রান্ড প্রেসিডেন্ট ট্রেভর এডওয়ার্ড। সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, ‘এবারের বিশ্বকাপ ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি উত্তেজনাকর ব্যাপার আর কী হতে পারে? পুরো বিশ্বেই এর অনুরণন দেখা যাবে।’ এডওয়ার্ড তো ভালোমতোই জানেন যে, যত বেশি উন্মাদনা, ততই বেশি বেচাকেনা! পাঁচ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থের এই বিশাল বাজারে সর্বোচ্চ মুনাফা তুলে আনার চেষ্টাই করে যাচ্ছে নাইকি-অ্যাডিডাস। ফুটবলপ্রেমী ক্রেতাদের সামনে ছড়িয়ে দিয়েছে আকর্ষণীয় সব পণ্যের পসরা।

অ্যাডিডাসের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৫০ সালে। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যের কারণে বরাবরই অন্যদের চেয়ে তারা কিছুটা এগিয়ে থাকে। ফুটবল-সংক্রান্ত বাণিজ্যে বরাবরই অন্যদের পেছনে ফেলেছে জার্মানিভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি। ফুটবল জগেক তারা বিবেচনা করে নিজেদের অঞ্চল হিসেবে। কিন্তু অনেক পরে যাত্রা শুরু করেও অ্যাডিডাসকে বেশ ভালোই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে নাইকি। আমেরিকান এ প্রতিষ্ঠানটি ফুটবল অঙ্গনে পা রেখেছিল ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে। এরপর থেকে অ্যাডিডাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই লড়ছে তারা।

এবারের বিশ্বকাপে স্বাগতিক ব্রাজিলসহ মোট ১০টি দেশের ক্রীড়াসামগ্রীর জোগান দেবে নাইকি। ইংল্যান্ড, পর্তুগাল, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডসের খেলোয়াড়েরা মাঠে নামবেন নাইকির প্রস্তুতকৃত বুট-জার্সি পরে। অন্যদিকে অ্যাডিডাস স্পন্সর করছে নয়টি বিশ্বকাপ দলকে। যার মধ্যে আছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন, জার্মানি, আর্জেন্টিনার মতো শীর্ষ দলগুলো। এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম অফিশিয়াল স্পন্সরও অ্যাডিডাস। প্রতিবারের মতো এবারও অ্যাডিডাসের তৈরি করা বল দিয়েই খেলা হবে বিশ্বকাপ।

ক্রীড়াবিশ্বের সবচেয়ে বড় এই আসর সামনে রেখে নতুন নতুন আকর্ষণীয় সব পণ্যও বাজারে এনেছে নাইকি-অ্যাডিডাস। গত শুক্রবারেই নাইকি উন্মুক্ত করেছে তাদের নতুন বুট— ‘মারকিউরিয়াল সুপারফ্লাই’। এর আকর্ষণীয় এক বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েছেন রোনালদো-নেইমার-ওয়েইন রুনির মতো তারকারা। হালকা এই বুট পায়ে দিয়ে ফুটবলাররা আরও জোরে দৌড়াতে পারবেন বলেই দাবি নাইকির।

অন্যদিকে এবারের বিশ্বকাপ আয়োজক ব্রাজিলের কথা মাথায় রেখে অ্যাডিডাস বাজারে এনেছে ‘সাম্বা’ নামের বিশেষ বুট। জার্সি তৈরির ক্ষেত্রেও অনেক নতুনত্ব এনেছে অ্যাডিডাস। নতুন এই জার্সিগুলো অনেক হালকা এবং খেলোয়াড়েরা এগুলো গায়ে দিয়ে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন বলেই দাবি করেছে তারা। আর্জেন্টিনার মেসি, স্পেনের জাভি-ইনিয়েস্তা, জার্মানির ওজিল-মুলাররা বিশ্বকাপ খেলবেন অ্যাডিডাসের এই জার্সি গায়েই।

ফুটবল অঙ্গনের এই বিশাল বাজারের প্রায় ৮০ ভাগই আছে নাইকি আর অ্যাডিডাসের দখলে। তবে জার্মানির আরেক প্রতিষ্ঠান পুমাও থাকছে এই বিশ্বকাপের লড়াইয়ে। ইতালি, সুইজারল্যান্ড ও আফ্রিকার চারটি দেশসহ মোট আটটি দেশের ফুটবলাররা বিশ্বকাপে মাঠে নামবেন পুমার তৈরি জার্সি গায়ে। বিশ্বকাপ সামনে রেখে এ বছরের শুরুতেই ‘ইভোপাওয়ার’ নামে নতুন একটি বুট তৈরি করেছিল পুমা। তাদের জার্সিগুলোতেও থাকবে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া। গায়ের সঙ্গে সেঁটে থাকা এই জার্সিগুলো নাকি খেলোয়াড়দের পেশিগুলোকে উদ্দীপিত করবে।

অ্যাডিডাস-নাইকি-পুমাদের এই লড়াইয়ে ফুটবলাররাও নিশ্চিতভাবেই রাখবেন বিশাল ভূমিকা। নেইমারের ব্রাজিল বা রোনালদোর পর্তুগাল যদি ফাইনালে যায় বা শিরোপা জেতে তাহলে ব্যাপকহারে বেড়ে যাবে নাইকির জার্সি বিক্রির হার। অন্যদিকে অ্যাডিডাস বিশ্বকাপ শিরোপাটা দেখতে চাইবে স্পেন, জার্মানি বা আর্জেন্টিনার হাতে। মেসি-রোনালদো-নেইমার-জাভিদের দিকে শুধু তাঁদের সমর্থকেরাই না, তীক্ষ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে থাকবেন অ্যাডিডাস-নাইকির বিপণন কর্মকর্তারাও।

ক্রিকেট বিশ্বের বর্তমান সংকটঃ থার্ড আম্পায়ারের ভূমিকা নিবে কে?

আদনান শাহরিয়ার তপু

১৯৯৩ সাল । তখন দাবা বলতে মানুষ কাসপরভকেই বুঝতো । ফিদে’র (দাবার বিশ্বসংস্থা) আয় রোজগারও বেশিরভাগ আসতো কাসপরভের অংশ নেওয়া টুর্নামেন্ট থেকেই । আর তার ব্যক্তিগত স্পন্সরেরও অভাব ছিলো না । বোধহয় সে কারনেই হঠকারী এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি । সেবারের বিশ্বদাবা চ্যাম্পিয়নশিপে কাসপরভের মুখোমুখি হওয়ার কথা ববি ফিশারের । ফিদে তাদের নিয়মনীতির ব্যাতয় ঘটিয়ে তড়িঘড়ি চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করলো ম্যানচেস্টারে । অপ্রস্তুত ববি ফিশার যোগাযোগ করলেন কাসপরভের সাথে । অর্থকড়ি নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আগে থেকেই ফিদের উপরে ক্ষিপ্ত কাসপরভ ঘোষণা দিলেন ফিদে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার । নিজের তৈরি পিসিএ’র অধীনে ববি ফিশারের সঙ্গে আয়োজন করলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ । ফিদেও কেড়ে নিলো তাদের সদস্যপদ, রেটিং পয়েন্ট ।

cricket

ডালমিয়া আইসিসির প্রধান হন ১৯৯৭ সালে । মূলত তার প্রচেষ্টাতেই বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পায় সত্যি কিন্তু এর পেছনে তার ক্রিকেট বিশ্বায়ন নামের সুন্দর চেতনার আড়ালে যে অর্থকড়ির সংস্থানের ধুরন্ধর মস্তিস্কটি ছিলো তা চিরতরে বদলে দিলো ক্রিকেটকে । স্পন্সরশিপ, বাজার অর্থনীতি দিয়ে ভারত হয়ে গেলো সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড আর বদলে যেতে শুরু করলো ক্ষমতার সমীকরণ । ক্রিকেটে ব্যবসা যেমন এনে দিয়েছে পেশাদারিত্ব তেমনি কেড়ে নিয়েছে নীতিবোধ । খুব স্বাভাবিকভাবেই অর্থের ছড়াছড়ি প্যান্ডরার বাক্স ভেঙ্গে বের করে এনেছে লোভ । আর সেই লোভকে পুজি করে জুয়াড়িরা পকেটে ভরছে বিশ্বাসযোগ্যতা আর বিসিসিআই চাইছে এককেন্দ্রিক ক্ষমতা । আইপিএলে যত হাজার কোটি টাকার জুয়ায় লেনদেন হয় সেটা জানার পর এটাতে আর কোনও সন্দেহই থাকেনা যে, বিসিসিআই আইসসিসির পুরো ক্ষমতা পেলে ক্রিকেট খেলাটা আসলে নিয়ন্ত্রিত হবে জুয়াড়িদের লাভক্ষতির হিসেব নিকেশে ।

Cartoon-741738


ক্ষমতার নেশায় বিসিসিআই এখন আলাদা হয়ে যাওয়ার হুমকি দিতেও পিছু হটছে না । কিন্তু তারা ভুলে যাচ্ছে তারা ক্রিকেট খেলাটার উর্ধে না । ক্রিকেটের জন্য বিসিসিআই , বিসিআই এর জন্য ক্রিকেট না । আজ তারা স্পন্সরদের ঘাড়ে পা রেখে ভয় দেখাচ্ছে, কিন্তু আলাদা হয়ে যাওয়ার পর যখন শুধু তিন দেশের মধ্যে তাদের খেলা সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে তখন স্পন্সরাও কি সেটা ভালো ভাবে নেবে?? কে দেখতে চাইবে ঘুরে ফিরে তিন দেশের খেলা ?? কাসপরভ ফিদে থেকে আলাদা হয়ে দুই বছর কোনোওক্রমে পিসিএ চালানোর পর আবার ফিদের সাথে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন এবং পরে তিনি স্বীকার করেন, ফিদেকে ছেড়ে যাওয়া তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো ! কারণ, ওই নির্দিষ্ট কয়েকজন প্রতিযোগীর সাথে ঘুরে ফিরে কাসপরভের খেলা কারোরই বেশিদিন আগ্রহের কেন্দ্রে থাকেনি।

আমরা মানতে যতই ঘৃণা করিনা কেনও সত্যি কথাটা হলো, ক্রিকেট অর্থনীতি ভারতের বাজারের উপর অনেক অংশেই নির্ভর । সেই বাজার হারিয়ে ফেললে, ক্রিকেটারদের আর্থিক সচ্ছলতা কমবে তবে এই চরম স্বার্থপরতার যুগে ক্রিকেটের মূল চেতনা ফিরে আসবে বলে যারা আশা করছেন তা নিতান্তই দুরাশা । বরং দুই দিকে দুইরকম আর্থিক পরিস্থিতি এক চরম বিশৃঙ্খল অর্থনৈতিক অসাম্যের জন্ম দিবে । একসময় এটিই এই খেলা থেকে দর্শক, স্পন্সর সবাইকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করবে । মৃত্যু হবে খেলাটির । যেমন, কাসপরভ চলে যাওয়ার পর ফিদের উপর অসন্তুষ্ট স্পন্সরদের কারনে, ফিদের আবার নতুন করে গুছিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লেগেছিলো ।


সব মিলিয়ে ক্রিকেট এখন এক কঠিন সঙ্কটে । ভারতের অসম্ভব প্রস্তাব মেনে নেওয়া যায়না , একদিন না একদিন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠতই । আবার ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড আলাদা হয়ে গেলে অন্যান্য ক্রিকেটাররা আর সেসব জায়গায় খেলতে পারবে না এটা মেনে নেওয়াও কঠিন , কারণ কে জানে একজন ক্রিকেটারের ক্রিকেট সামর্থ্যের বড় পরীক্ষাটাই হয় অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডে ।

যদিও আমার আবেগে টইটুম্বুর মন, বারবার বলছে, যাক বিসিসিআই জাহান্নামে ! তারপর একটা শিক্ষা হোক তাদের । কিন্তু সমস্যা হলো, তাতে ক্রিকেটেরই ক্ষতি। তাই প্রার্থনা, বর্তমানে যেমন আছে তেমনই থাক ক্রিকেট । ক্রিকেটের বড় ভাইরা বুঝুক, গৃহবিবাদে কারও লাভ হয়না । কেউ তাদের বোঝাক, জমিদারী প্রথা কিংবা দুই মেরুর ক্রিকেট বিশ্ব দুটোই চরম ক্ষতিকর ক্রিকেট খেলাটির জন্য ।

কিন্তু প্রশ্ন একটাই, এই সঙ্কটে থার্ড আম্পায়ারের ভূমিকা নিবে কে ??

যে ম্যাচটা নাড়িয়ে দিয়েছিল ইউরোপের মনোজগত

১৯৫৩ সালের ২৫ নভেম্বর। ফুটবলের তীর্থস্থান ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল তৎকালিন ইউরোপিয়ান ফুটবলের দুই পরাশক্তি ইংল্যান্ড ও হাঙ্গেরি। সেসময় ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড ছিল অদম্য। ইউরোপের কোনো দেশই ইংল্যান্ডে গিয়ে তাদেরকে হারাতে পারেনি। অপরদিকে ‘মারভেলাস ম্যাগিয়ার্স’ নামে খ্যাত হাঙ্গেরি ছিল অবধ্য। টানা তিন বছর ধরে তারা ছিল অপরাজিত। হাঙ্গেরি আর ইংল্যান্ডের এই লড়াইটা বিশ্ব গণমাধ্যমে পরিচিত পেয়েছিল ‘শতাব্দীর সেরা ম্যাচ’ হিসেবে। তবে শুধু ফলাফল বা মাঠের পারফরম্যান্সের জন্যই ম্যাচটা স্মরণীয় না। ৬০ বছর আগের এই লড়াইটা নাড়িয়ে দিয়েছিল ইউরোপের মনোজগত। চূর্ণ করেছিল সাম্রাজ্যের অহঙ্কার আর নিপীড়িত মানুষের মনে জাগিয়েছিল স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন।

1953

ম্যাচ শুরুর আগে অধিনাক বিলি রাইট, স্ট্যানলি ম্যাথুউ, আলফ রামসেসহ অন্যান্য ইংলিশ খেলোয়াড়রা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে ছিলেন প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। ইংলিশ সাম্রাজ্যের মতো তাঁরাও তখন আছেন নিজেদের সর্বোচ্চ শিখরে। নভেম্বরে এই ম্যাচটির কয়েক মাস আগেই ইংল্যান্ড পরিচালিত অভিযাত্রায় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছেন এডমুন্ড হিলারি। তার কিছুদিন পরেই রাজ্যাভিষেক হয়েছে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের। পুরো ইংল্যান্ড জুড়েই তখন বইছে সাম্রাজ্য দাম্ভিকতার হাওয়া। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশের শাসন ছেড়ে দিতে হলেও সেসময় আফ্রিকার একটা বড় অংশ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দখলে।

অপরদিকে হাঙ্গেরির অবস্থা পুরোপুরিই ভিন্ন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে দেশটি বেশ কয়েক বছর ধরেই পার করছিল দুর্বিসহ সময়। জার্মানির নাৎসি শাসন থেকে মুক্ত হতে না হতেই আবার পড়তে হয়েছিল স্টালিনের সোভিয়েত শাসনের খপ্পরে। হাঙ্গেরির তৎকালিন রাষ্ট্রপতি কমিউনিস্ট নেতা রাকোস্কি, স্টালিনের আদর্শে কায়েম করেছিলেন একটা পুলিশি রাষ্ট্র। সোভিয়েত সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ উপস্থিতিও ছিল পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে। হাজার হাজার হাঙ্গেরিয়ানকে পাঠানো হয়েছিল জেলে বা কনসেনন্ট্রেশন ক্যাম্পে। হাঙ্গেরি ও সোভিয়েত সরকারের কাছে খেলাধুলা, বিশেষত ফুটবলটা ছিল কমিউনিজমের আদর্শ প্রতিষ্ঠার লড়াই। হাঙ্গেরির জাতীয় দল ছিল পুরোপুরি সরকারের কর্তৃত্বাধীন। সেসময়ের কোচ গুসতাভ সেবেস ছিলেন সরকারের একজন সদস্য। তিনি বলেছিলেন, ‘পুঁজিবাদ ও কমিউনিজমের লড়াইটা শুধু আমাদের সমাজেই না, চালাতে হবে ফুটবল মাঠেও।’
চেকোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে একটা ম্যাচে হারের পর আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হয়েছিল হাঙ্গেরির অধিনায়ক ফেরেঙ্ক পুসকাসকে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল ‘মাঠে গা ছেড়ে দিয়ে খেলার’ অভিযোগ। কয়েক মাস পরে অবশ্য ক্ষমাও করা হয়েছিল। কারণ হাঙ্গেরিকে ফুটবল জগতের শিখরে নিয়ে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল এই বাম পায়ের জাদুকরের। শতাব্দীর সেরা ম্যাচটা ইংল্যান্ড হেরেওছিল কিংবদন্তি এই ফুটবলারের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে।

Soccer - World Cup Switzerland 54 - Final - Hungary v West Germany
হাঙ্গেরি আর ইংল্যান্ডের ম্যাচটা শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে এক ইংলিশ ধারাভাষ্যকার পুসকাসকে দেখে বলেছিলেন, ‘ছোট, বেঢপ খেলোয়াড়’। তাদের তখন বিন্দুমাত্রও ধারণা ছিল না যে এই ছোট্ট মানুষটাই কিভাবে তাদের তারকা ফুটবলাদের জীবন দুর্বিসহ করে দেবে। খেলা শুরুর ৪৫ সেকেন্ড পরেই ইংল্যান্ড হজম করেছিল প্রথম গোলটা। ২৭ মিনিট পরেই স্কোর: হাঙ্গেরি ৪ : ০ ইংল্যান্ড। পরের দুইটি গোলই করেছিলেন পুসকাস। তাঁর দ্বিতীয় গোলটা এখনো ফুটবল বিশ্বে বিখ্যাত হয়ে আছে ‘ড্রাগ ব্যাক গোল’ নামে।
দ্বিতীয়ার্ধের ৫৭ মিনিট পরে হাঙ্গেরি এগিয়ে ছিল ৬-৩ গোলে। বাকি ৩৩ মিনিটে তারা আরও তিন-চারটা গোল অনায়াসেই দিতে পারত। কিন্তু ম্যাচটা শেষ হয় ঐ ৬-৩ গোলের ব্যবধানেই। লজ্জাজনক এই হারের পর ইংল্যান্ডের ডিফেন্ডার সিড ওয়েন হতাশ কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছিল আমরা অন্য গ্রহের মানুষের সঙ্গে খেলছি।’
ওয়েম্বলির এই ম্যাচ ভেঙ্গে দিয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দম্ভ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতনের শুরুর সময় হিসেবেও ৫০-এর দশকের শুরুকেই ইঙ্গিত করেন ইতিহাসবিদরা। এই একটা ম্যাচের কারণেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতনের শুরু হয়েছিল এটা বলাটা হয়তো বাড়াবাড়িই হয়ে যাবে কিন্তু ইংলিশদের শ্রেষ্ঠত্বের অহঙ্কারে সত্যিই নাড়া দিয়েছিল এই হারটা। সাম্রাজ্যের পতন হয়েছিল তখন, যখন ইংল্যান্ডের নাগরিকরা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব-অপরাজেয়ত্বের ওপর আর বিশ্বাস রাখতে পারেননি। কয়েক মাস বাদে ইংল্যান্ড ফুটবল অঙ্গনের পরিস্থিতিটা হয়েছিল আরও করুণ। ১৯৫৪ সালের মে মাসে হাঙ্গেরির মাঠে গিয়ে ইংল্যান্ড হেরেছিল ৭-১ গোলের ব্যবধানে। এটাই তাদের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের রেকর্ড। অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে টানা দুইটি হারের ফলে দুনিয়া সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হয়েছিল ইংলিশরা।
ফুটবলের আবিষ্কারক হিসেবে ইংল্যান্ডের ধারণা ছিল খেলাটার প্রতি স্বাভাবিকভাবেই তাদের দখল অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। বাইরের কোনো দেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলাটাকেও একসময় তারা নিজেদের মর্যাদার জন্য হানিকর বলেই ভাবত। ১৯৫০ সালের আগে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেও অংশ নেয়নি। কিন্তু নাক উঁচু ইংলিশদের বাস্তবতার মাটিতে নামিয়ে এনেছিল হাঙ্গেরি। ইংলিশ ফুটবলে এসেছিল আমূল পরিবর্তন।
১৯৫৪ সালের আগ পর্যন্ত ইংল্যান্ড ফুটবল দল খেলত বহুদিনের পুরোনো ডব্লিউএম ফরম্যাটে (৩-২-২-৩)। হাঙ্গেরির কাছে হারের পর প্রথমবারের মতো কৌশল পরিবর্তনেও বাধ্য হয় ইংল্যান্ড। বিদেশি ফুটবলারদের বিপক্ষে আরও বেশি করে খেলার ওপরও জোর দিয়েছিলেন অনেকে। হাঙ্গেরির খেলার ধরন, কোচিং পদ্ধতি অনুসরণ করেছিল লিভারপুল, টটেনহাম ও ওয়েস্টহামের মতো ইংলিশ ক্লাবগুলোও।
ইংল্যান্ডের জ্যাত্যাভিমান যখন ধুলোয় লুটিয়েছে, তখন হাঙ্গেরির কমিউনিস্ট শাসকরা মেতেছেন বিজয়োল্লাসে। তাদের দৃষ্টিতে এটা ছিল কমিউনিস্ট সমাজব্যবস্থারই বিজয়। যদিও এই দৃষ্টিভঙ্গিটাও ছিল নিছকই ভ্রান্তধারণা। পুসকাসদের ইংল্যান্ড বধের কীর্তিটা আসলে রচনা করেছিল হাঙ্গেরির নিপীড়িত মানুষের অভ্যুত্থানগাথা। তাদের মনে জাগিয়েছিল অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রেরণা। হাঙ্গেরির সাধারণ মানুষ ভেবেছিল যদি আমরা ওয়েম্বলিতে ইংল্যান্ডকে হারাতে পারি তাহলে হয়তো দখলদার সোভিয়েত বাহিনীকেও হটিয়ে দিতে পারব। ১৯৫৬ সালের হাঙ্গেরিয়ান বিপ্লবের সঙ্গে ওয়েম্বলির সেই ম্যাচটির প্রত্যক্ষ যোগসূত্র ছিল বলেই দাবি করেছিলেন দেশটির প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক পিটার টিমার। ১৯৯৯ সালে তাঁর পরিচালিত ‘৩-৬’ সিনেমাটিতে দেখানো হয়েছিল, রেফারির শেষ বাঁশি বাজার পর রাজনৈতিক বন্দীদের সঙ্গে কোলাকুলি করে বিজয় উদযাপন করেছিলেন কারাগারের রক্ষীরা। দুই বছর পরে অনেকেই একজোট হয়ে লড়েছিলেন সোভেয়েত ট্যাঙ্কের বিরুদ্ধে।

Hungarian Revolution-C
১৯৫৬ সালের সেই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সোভিয়েত বাহিনীকে হটিয়েও দিয়েছিল হাঙ্গেরির সাধারণ মানুষ। দুঃখের বিষয় বিপ্লবী সেই অভ্যুত্থানটা স্থায়ী হয়েছিল মাত্র কয়েকদিন। হাঙ্গেরি ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও আবার ফিরে এসেছিল সোভিয়েত সেনাবাহিনী। আক্ষরিক অর্থেই গুঁড়িয়ে দিয়েছিল  মানুষের মুক্তিমুখীন আকাঙ্ক্ষা। সেটা ইতিহাসের এক বেদনাময় আর করুণ অধ্যায়।

মেক্সিকোর ফুটবলারদের দিকে তাকিয়ে ব্যবসায়ীরাও

mexico-gold-cup-fans

বিশ্বকাপে অংশ নিতে না পারলে মেক্সিকোর ফুটবলপ্রেমীরা হতাশ তো হবেনই, বিশ্বকাপের সময়টা তাঁদের কাটবে আফসোস আর হা-হুতাশ করেই। কিন্তু বিশ্বকাপে একটি দলের জায়গা না পাওয়া শুধু সমর্থকদের হতাশার ফ্রেমে আবদ্ধ নয়, বরং এর পেছনে আছে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ। মেক্সিকো হতে পারে এর ভালো উদাহরণ। আগামী বিশ্বকাপের টিকিট না পেলে প্রায় ৬৫ কোটি ডলার ক্ষতির মুখে পড়বে উত্তর আমেরিকার দেশটি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যেটি পাঁচ হাজার ৬৬ কোটি টাকারও বেশি!

দেশটির ফুটবল সংস্থা তো বটেই, মেক্সিকোর সম্ভাব্য বিশ্বকাপ-ব্যর্থতা ভাবিয়ে তুলেছে দেশটির গণমাধ্যমকেও। বিশেষ করে মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের যেসব টেলিভিশন নেটওয়ার্কের হাতে বিশ্বকাপের সম্প্রচার স্বত্ব আছে, মেক্সিকান ফুটবলাররা বিশ্বকাপে না থাকলে নিশ্চিতভাবেই ক্ষতির মুখে পড়বে তারা। এ ছাড়াও যেসব কোম্পানি জাতীয় দলের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করছে, তারাও আছে হুমকির মুখে।

শুধু বিশ্বকাপ চলাকালেই নয়, দীর্ঘ মেয়াদেও এটি মেক্সিকান ফুটবলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করছেন ক্রীড়াভিত্তিক বিপণন প্রতিষ্ঠান ড্রেয়াম্যাচ সলিউশনের পরিচালক রোয়া। সম্প্রতি রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, ‘ক্রীড়া ও বাণিজ্যিক দিক থেকে মেক্সিকোর ব্যর্থতা হবে হতাশাজনক। আমাদের ওপর এর প্রভাবটাও পড়বে মারাত্মকভাবে। এটা হবে ফুটবল অর্থনীতির জন্য খুবই বিপর্যয়পূর্ণ পরিস্থিতি। দীর্ঘ মেয়াদে এটা প্রভাব ফেলবে মেক্সিকান লিগের ওপর। সেখানে স্পন্সরশিপ ও ব্র্যান্ড মর্যাদা অনেক কমে যাবে।’

মেক্সিকোর বিশ্বকাপ যাত্রার অনেক প্রস্তুতিই ইতিমধ্যে সেরে ফেলেছে জাতীয় দলের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলো। তৈরি করা হয়ে গেছে নতুন জার্সিও। বাছাইপর্বের শেষ দুটি ম্যাচে এই নতুন জার্সি গায়েই মাঠে নেমেছিলেন মেক্সিকান ফুটবলাররা। আর ব্যর্থতার মুখ দেখলে বিশ্বকাপ চলাকালে যে এই জার্সি ও অন্যান্য ফুটবল সামগ্রী দেদারসে বিক্রির আশা করা হচ্ছে, সেটা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মেক্সিকোজুড়ে ২৩০টি দোকান পরিচালনাকারী ক্রীড়াসামগ্রী প্রতিষ্ঠান গ্রুপো মারতির বিপণন পরিচালক এমিলিও ট্রাবালসে বলেছেন, ‘এখন শুধু বাদ পড়ার আশঙ্কাটা অনুমানই করা হচ্ছে। এটা এখনো ঘটেনি। যদি মেক্সিকো প্লে-অফের বাধা উতরে যায়, তা হলে সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলবে। আর কোনো কারণে যদি সেটা না ঘটে, তা হলে আমাদের ভাবতে হবে যে, জাতীয় দলের পণ্যগুলো নিয়ে আমরা কী করব।’

মেক্সিকো বিশ্বকাপে অংশ নিতে না পারলে সেটা খারাপ প্রভাব ফেলবে আয়োজক ব্রাজিলের ওপরও। মেক্সিকোতে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত খুব করেই চাইছেন যেন তেমনটা না ঘটে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বকাপ চলার সময় ছয় লাখ বিদেশি পর্যটক আশা করছি, যার মধ্যে ৫০ হাজারই হতে পারে মেক্সিকান। বন্ধুত্ব ও বাণিজ্যিক স্বার্থে আমরা একসঙ্গেই সমর্থন করব মেক্সিকান ফুটবলারদের, যেন তারা বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পায়।’

১৯৯০ সালের পর থেকে প্রতিবারই বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে মেক্সিকো। কিন্তু এবার বাছাইপর্বের বাধা সরাসরি ডিঙাতে পারেনি। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশটির বিশ্বকাপ আশা এখন ঝুলে আছে প্লে-অফে। দুই লেগের এই আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফে মেক্সিকোর প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। প্রথম লেগের খেলা ১৩ নভেম্বর। আশাবাদীরা অবশ্য মেক্সিকোর বাদ পড়ার আশঙ্কা খুব একটা দেখছেন না। তাঁরা আশাবাদী, দুই লেগের খেলায় নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েই বিশ্বকাপের টিকিট কাটবে মেক্সিকো।

বর্তমান পরিস্থিতিটাকে তারা বর্ণনা করেছেন স্নায়ুপরীক্ষা হিসেবে। দেশটির রাস্তায় একটা বিজ্ঞাপনে যেমনটা লেখা হয়েছে, ‘বাদ পড়ব? আমরা শুধুই আমাদের স্নায়ুপরীক্ষা করছি। মেক্সিকানরা সবকিছুই ছেড়ে দেয় শেষ মুহূর্তের ওর।’— রয়টার্স।

রাজনীতিতেও চলছে বার্সা-রিয়াল লড়াই

catalonia human chain 

‘রিয়াল মাদ্রিদ যখন বার্সেলোনার বিপক্ষে খেলে তখন বিশ্ব থেমে যায়।’- এল ক্লাসিকোর জনপ্রিয়তা বর্ণনা করতে গিয়ে ঠিক এই বাক্যটিই ব্যবহার করেছিলেন রিয়ালের সাবেক কোচ হোসে মরিনহো। খুব বেশি বাড়িয়ে হয়তো বলেননি এই পর্তুগিজ কোচ। গত বছরের অক্টোবরে রিয়াল-বার্সা দ্বৈরথে অংশ নিতে স্পেনে ছুটেছিলেন ২৮টি দেশের ৬৮০জন সাংবাদিক। খেলাটি সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার ৩০টিরও বেশি দেশে। খেলাটি একযোগে দেখেছিল ৪০ কোটি মানুষ। ফুটবলপ্রেমী, অথচ এল ক্লাসিকোর নাম শোনেননি এমনটা হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না। রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনার দ্বৈরথটা শুধু স্পেনেই না, সমগ্র ফুটবল বিশ্বেরই আকর্ষণ।

স্প্যানিশ এই দুইটি শহরের মধ্যে চলমান আরও একটি লড়াই হয়তো অচিরেই কেড়ে নিতে পারে সমগ্র বিশ্বের মনোযোগ। কারণ শুধু ফুটবলেই না, স্পেনের রাজনীতিতেও চলছে বার্সা-মাদ্রিদ লড়াই। সম্প্রতি স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা দাবি করে একটি মানববন্ধন করেছিলেন কাতালোনিয়ার বাসিন্দারা। স্বাধীনতার দাবি হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছিল প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। স্প্যানিশ সরকারের প্রতি কাতালানদের দাবি, খুব তাড়াতাড়ি একটা গণভোট আয়োজন করতে হবে, যা থেকে নির্ধারিত হবে যে, তাদের একটা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ে তোলার অধিকার আছে কিনা।

catalan1

‘কাতালোনিয়া স্পেন নয়’, ‘আমরা স্বাধীন হতে চাই’ ইত্যাদি ব্যানার লিখে লাখ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন এই মানববন্ধনে। লাল-হলুদের এই ঢেউটা অতিক্রম করেছে বার্সেলোনার বিখ্যাত ন্যু ক্যাম্প স্টেডিয়ামের ভেতর দিয়েও। কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনায় উপস্থিত ছিলেন সরকারি চাকুরিজীবী ইস্টার সারামোন। এখানকার অন্য অনেক বাসিন্দাদের মতো সারামোনও মনে করেন যে, কেন্দ্রিয় সরকার কাতালানদের উপর অনায্য আচরণ করছে। ট্যাক্স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে, ভাষার অধিকারসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক ইস্যুর ক্ষেত্রে। তিনি বলেছেন, ‘স্বাধীনতার পক্ষে সংখ্যাগরীষ্ঠ মানুষ আছে কিনা, সেটা দেখার জন্য আমরা একটা গণভোট চাই। কিন্তু সমস্যা হলো স্পেন এটা শুনবে না। আমাদের একটাই আশা যে, ইউরোপ আর বাকি বিশ্ব এটার জন্য স্প্যানিশ সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে পারে।’

স্বাধীন কাতালোনিয়ার দাবিটা অনেকদিন ধরেই ছিল। সেটা আরও জোরদার করেছে ইউরোপের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। ইউরো অঞ্চলের আর্থিক সংকটের সর্বশেষ শিকারে পরিণত হয়েছে স্পেন। যার ফলে এখন আন্তর্জাতিক সাহায্য চাওয়ার চিন্তাভাবনাও আছে ইউরোপের অন্যতম বড় অর্থনীতির এই দেশটির। নানা ধরনের কৃচ্ছনীতি আরোপের ফলে স্পেনের কেন্দ্রিয় সরকারও হয়ে পড়েছে ব্যপকভাবে অজনপ্রিয়। ট্যাক্স বৃদ্ধি, জনসেবামূলক খাতে বরাদ্দ ঘাটতির বিষয়গুলো মেনে নিতে পারছে না কাতালানরা। সেই সঙ্গে কাতালান ভাষার উপর আধিপত্যশীল আচরণও ক্ষুব্ধ করেছে এই অঞ্চলের মানুষদের। গত বছরের শেষের দিকে স্পেনের প্রতিটা স্কুলে স্প্যানিশ ভাষায় পাঠদানের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করার একটি প্রস্তাবও উস্কে দিয়েছে কাতালানদের স্বাধীকার আন্দোলন। সব মিলিয়ে বেশ খারাপ পরিস্থিতিতেই আছে স্পেনের কেন্দ্রিয় সরকার।

কিন্তু স্পেনের সবচেয়ে ধনী ও অন্যতম শিল্পায়িত অঞ্চলটিকে খুব সহজে স্বাধীনতাও দিতে চাইবে না মাদ্রিদের নীতিনির্ধারকরা। অর্থনৈতিক দিকগুলো বাদ দিয়ে শুধু ফুটবল দলটার দিকে তাকালেও স্পষ্ট বোঝা যায় কাতালানরা স্পেনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কাতালোনিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে দিলে স্পেনকে দল গঠন করতে হবে কার্লোস পুয়োল, জরডি আলবা, সেস ফেব্রিগাস, জেরার্ড পিকে, জাভি, সার্জিও বুসকেটস, ক্রিশ্চিয়ান টেলোদের ছাড়া। তেমনটা হলে ফুটবল বিশ্বে সর্বজয়ী স্পেনের আধিপত্য কতটা বজায় থাকবে সন্দেহ আছে।

barcelona

যদিও স্বাধীন কাতালোনিয়ার দাবি দিনদিন বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে কাতালোনিয়ার ৭.৫ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ৮১ শতাংশই চায় স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। বার্সেলোনা ফুটবল দলও গত ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছিল স্বাধীন কাতালোনিয়া ও তার ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণের দাবি, ‘আমাদের স্বাধীন দেশের পরিচয় তৈরির একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আমাদের ভাষা। ঠিক যেমনটা আমাদের ক্লাব। আমরা খুব দৃঢ়ভাবে কাতালান ভাষা চর্চা ও শিক্ষার অধিকার রক্ষা করতে চাই।’

কাতালোনিয়া আর স্পেনের এই লড়াইয়ের কেন্দ্রে রয়েছে বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদ। দুইটি শহরই দুই অঞ্চলের রাজধানী। তাই এখন হয়তো সমান্তরালেই চলতে পারে ফুটবলের ধ্রুপদী লড়াই আর রাজনীতির মারপ্যাঁচটা। মাঠের লড়াইয়ে আগামী মাসেই মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ¦ী এই দুই ফুটবল ক্লাব। ন্যু ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত হবে এবারের মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো। সেদিন হয়তো ঘুঁচেও যেতে পারে খেলা আর রাজনীতির সীমানা। স্বাধীনতার দাবি সম্বলিত ব্যানার নিয়েই হয়তো হাজির হয়ে যেতে পারেন বার্সেলোনার সমর্থকেরা।

অদ্ভুতুড়ে জার্সি নম্বর!

numbers১ নম্বর জার্সিটার কথা মাথায় এলেই ভেসে ওঠে দলের গোলরক্ষকের কথা। ঠিক যেরকম ৯ নম্বর জার্সিধারীকে ভাবা হয় দলের প্রধান স্ট্রাইকার, ১০ নম্বরকে দলের প্রাণভোমরা। তবে সব সময়ই হিসাবটা এ রকম সাদাসিধে থাকে না। প্রচলিত প্রথা ভেঙে প্রায়ই ‘উল্টাপাল্টা’ জার্সি পরতে দেখা যায় ফুটবলারদের। সম্প্রতি যেমনটা করতে চলেছেন হল্যান্ডের সাবেক তারকা খেলোয়াড় এডগার ডেভিস। মিডফিল্ডার হওয়া সত্ত্বেও এবার তিনি গায়ে চড়াবেন ১ নম্বর জার্সিটা।

ইংল্যান্ডের ছোট্ট ক্লাব বারনেটে ডেভিসের ভূমিকা বহু বিচিত্র। অ্যাজাক্স, এসি মিলান, বার্সেলোনা, জুভেন্টাসের মতো শীর্ষস্থানীয় ক্লাবগুলোতে খেলার পর গত বছর চতুর্থ বিভাগের এ দলটিতে যোগ দিয়েছেন ৪০ বছর বয়সী ডেভিস। তারপর থেকে তিনি পালন করছেন কোচের দায়িত্ব। একই সঙ্গে অধিনায়কত্বের বাহুবন্ধনীও উঠেছে তাঁরই হাতে। তিনিই যে দলটির সর্বেসর্বা, সেটা স্পষ্টই বোঝা যায়। এ সুবিধাটা কাজে লাগিয়েই বোধ হয় দলে কিছুটা নতুনত্ব আনতে চাইছেন ডেভিস। নিজের অদ্ভুত এই খেয়ালটি সম্পর্কে তাঁর ভাষ্য, ‘এবারের মৌসুমে এটাই আমার নম্বর। আমি এ ধারাটাই চালু করতে চাই।’ ডেভিসের এই আবদার মেটানোর জন্য দলের নিয়মিত গোলরক্ষক গ্রাহাম স্টার্ককে পরতে হবে ২৯ নম্বর জার্সি।

ফুটবলে এই অদ্ভুতুড়ে জার্সির খেয়ালটা অবশ্য ডেভিসেরই প্রথম নয়। এর আগেও এমন অনেক ঘটনাই ঘটেছে। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত গ্রিক ক্লাব অলিম্পিকোসে খেলার সময় প্লেমেকার প্যান্টেলিস কাফেস পরেছেন ১ নম্বর জার্সি। কখনো হয়তো বাধ্য হয়েও এমন প্রথাবিরোধী জার্সি পরতে হয়েছে কোনো কোনো ফুটবলারকে। ২০০৮ সালে স্ট্রাইকার ডেরেক রিয়োর্ডানকে দেওয়া হয়েছিল ১ নম্বর জার্সি। কারণ ১০ বা ৯ নম্বর জার্সিটির দখল ইতিমধ্যেই অন্য কারও কাছে ছিল।

মরক্কোর স্ট্রাইকার হিশাম জেরোউলিকে ‘০’ নম্বর জার্সি পরার অনুমতি দিয়েছিল তাঁর ক্লাব আবেরডিন। কারণ জেরোউলির ডাকনাম ছিল ‘জিরো’।

পছন্দসই জার্সি নম্বর পরতে গিয়ে দর্শকদের তোপের মুখেও পড়তে হয়েছিল ইতালিয়ান গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফনকে। ২০০০ সালে হঠাত্ করে তিনি বেছে নিয়েছিলেন ৮৮ নম্বর জার্সি। এতে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল ইতালির ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে। কারণ তাদের কাছে ইংরেজি ৮টাকে মনে হয়েছিল ‘H’। আর দুইটা ৮ মিলে ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছিল ‘HH’; যার অর্থ দাঁড়াতে পারে নািস স্যালুট ‘হেইল হিটলার’রের মতো। বুফন অবশ্য ভিন্নরকম একটা ব্যাখ্যাই দিয়েছিলেন, ‘আমি ৮৮ নম্বরটা বেছে নিয়েছিলাম। কারণ, এটা আমাকে চারটা বলের কথা মনে করিয়ে দিত। আর ইতালিতে বলের অর্থ কী, সেটা সবাই জানে—শক্তিমত্তা, দৃঢ়সংকল্প।’

শীর্ষ ইউরোপিয়ান ফুটবল প্রতিযোগিতায় প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৯৯ নম্বর জার্সিটা পরেছিলেন পোর্তোর ভিক্টর বাইয়া। ২০০৩-০৪ মৌসুমে মোনাকোর বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে এই জার্সি গায়েই শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন পোর্তোর গোলরক্ষক।

তবে এই অদ্ভুতুড়ে জার্সি নম্বর পছন্দ করার ক্ষেত্রে হয়তো সবাইকে পেছনে ফেলে দেবে চিলির কিংবদন্তি স্ট্রাইকার ইভান জামরানোর কাহিনিটা। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে লা লিগা শিরোপা জেতার সময় জামরানো পরতেন ৯ নম্বর জার্সি। ১৯৯৬ সালে তিনি পাড়ি জমান ইন্টার মিলানে। সেখানেও পেয়ে যান ৯ নম্বর জার্সিটাই। কিন্তু গোল বাধে ১৯৯৮ সালে রবার্তো ব্যাজ্জিও ইন্টারে আসার পর। ইতালির এই তারকা মিডফিল্ডার ১০ নম্বর জার্সিটির দাবি জানান, যেটা তখন ছিল ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার রোনালদোর দখলে। ব্যাজ্জিওর কথা মেনে নিয়ে ১০ নম্বর জার্সিটি ছেড়ে দেন রোনালদো। কিন্তু তাঁকে ৯ নম্বর জার্সিটি দেওয়া হয় জামরানোকে বঞ্চিত করে। ৯ নম্বর জার্সিটির ওপরে জামরানোর এতটাই আসক্তি ছিল যে কোনোভাবেই সেটা ছাড়তে রাজি ছিলেন না। কিন্তু একই নম্বরের জার্সি তো আর দুজন পরতে পারেন না। তাই নতুন এক ফন্দিই বের করেছিলেন জামরানো। জার্সির নম্বরটা ৯ রাখার জন্য তিনি পরতেন ‘১+৮’ লেখা একটি জার্সি। এভাবেই ইন্টার মিলানে বাকি দুই বছর খেলেছিলেন এই চিলিয়ান স্ট্রাইকার।

Davids_Image

স্পেন হতে চায় ‘সব পেয়েছির দেশ’

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, বিশ্বকাপ, অলিম্পিকের সোনা—কী নেই স্পেনের ট্রফি কেসে। ফুটবলের প্রায় সব কটি বড় শিরোপা জয়েরই স্বাদ পেয়েছে ইউরোপের ফুটবলের বর্তমান সম্রাটরা। কিন্তু তার পরও একটা আফসোস আছেই স্পেন-সমর্থকদের মনে। এখন পর্যন্ত ফিফা কনফেডারেশনস কাপের শিরোপাটা যে ঘরে তুলতে পারেনি এই সময়ের সেরা এ দলটি। ২০০৯ সালে সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েও বিফল হতে হয়েছিল স্পেনকে। এবার সেই আক্ষেপটা ঘোচাতে চান ভিসেন্তে দেল বস্কের শিষ্যরা। হয়ে যেতে চান ‘সব পেয়েছির দেশ’।

MK-BE444_SP_WC1_G_20100711184931

২০০৮ সালে স্পেনের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ভিসেন্তে দেল বস্ক। ওই বছর থেকে বিশ্বমঞ্চে স্পেনের জয়যাত্রারও শুরু। ২০০৮ সালে স্পেনকে ইউরো জিতিয়েই বিদায় নেন কোচ লুইস আরাগোনেস। ১৯৬৪ সালের পর প্রথম কোনো ট্রফি জেতে স্পেন। এত দীর্ঘ অপেক্ষা ছিল বলেই হয়তো ফুটবল-দেবী দুই হাত উপচে দিতে শুরু করে লা ফুরিয়া রোজাদের। ২০১০ সালে আজন্ম আরাধ্যের প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফির স্বাদ পায় স্পেন। ২০১২ সালে গড়ে অনন্য ইতিহাস। ইউরোপ-সেরার মুকুট ধরে রেখে প্রথম দল হিসেবে ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো—এই শিরোপাত্রয়ী জেতে।

Euro-2012-final-Spain-v-Italy-Spain-celebrating-victory-spain-national-football-team-31321204-594-412

সবই আছে। নেই শুধু কনফেডারেশনস কাপটাই। এবারই সেই আক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগ এসেছে স্পেনের সামনে। ২০১০ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের ১২ জন খেলোয়াড় নিয়েই সেই শূন্যস্থান পূরণের মিশনে নামছেন দেল বস্ক। এখন ক্রমাগত জিততে থাকা এই মেশিনটাকে ঠিকমতো সচল রাখতে পারলেই বাজিমাত করতে পারবেন। তবে কাজটা যে খুব একটা সহজ না, সেটাও বুঝতে পারছেন স্পেনের সফলতম এই কোচ। সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে দেল বস্ক বলেছেন, ‘আমরা জানি যে, ফুটবলে প্রতি এক বা দুই বছর পর অনেক কিছুর বদল ঘটে। আর আমরা ২০০৮ সাল থেকে যে জয়যাত্রা অব্যাহত রেখেছি, সেটার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখাটাও খুব কঠিন। তার পরও ক্রমাগত চেষ্টা করে যাওয়াটাই আমাদের বাধ্যবাধকতা।’

বরাবরের মতো স্পেন জাতীয় দলের মেরুদণ্ড গড়ে উঠছে বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলারদের দিয়ে। মোট ১৩ জন খেলোয়াড় থাকছেন স্পেনের শীর্ষ এই দুই ক্লাব থেকে। কিন্তু এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল থেকে এই দুই দলেরই বিদায় স্পেনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ হয়তো কিছুটা বাড়িয়ে দেবে। এর পাশাপাশি আছে সদ্যই শেষ হওয়া দীর্ঘ, স্নায়ুখরা মৌসুমের উপজাত হিসেবে পাওয়া ইনজুরির সমস্যা। কুঁচকির চোটের কারণে এরই মধ্যে ছিটকে পড়েছেন মাঝমাঠের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড় জাবি আলোনসো। সার্জিও রামোস, আলভারো আরবেলোয়া, জাভি ও সার্জিও বুসকেটসও ভুগছেন ইনজুরির সমস্যায়।

আক্রমণভাগের রণকৌশলও কিছুটা ভিন্নভাবে সাজাতে হতে পারে দেল বস্ককে। কারণ, এবারের ইউরোপিয়ান ফুটবল মৌসুমে খুব একটা ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি স্পেনের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ডেভিড ভিয়া। সেস ফেব্রিগাস আর ফার্নান্দো তোরেসও ভুগেছেন ফর্মহীনতায়। তাই দেল বস্কের ভরসা হয়ে উঠতে পারেন ভ্যালেন্সিয়ার স্ট্রাইকার রবার্তো সলদাদো। লা লিগার এবারের মৌসুমে ২৪টি গোল করে কোচের নজর কেড়েছেন ২৮ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার। তাঁর আক্রমণাত্মক মানসিকতা, দ্রুতগতি আর হেড থেকে গোল করার দক্ষতাকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন দেল বস্ক। তবে এক জায়গায় তাঁর আস্থার কোনো সমস্যা নেই। রিয়ালের মরিনহো-জমানায় ব্রাত্য হয়ে পড়লেও অধিনায়কের বাহুবন্ধনীটা ইকার ক্যাসিয়াসের হাতেই তুলে দেবেন বস্ক।

ফেবারিটের তকমা এঁটেই এবারের কনফেডারেশনস কাপে অংশ নিতে যাচ্ছে স্পেন। গ্রুপ পর্বে তাদের প্রতিপক্ষ উরুগুয়ে, নাইজেরিয়া ও নবাগত দল তাহিতি। ২০০৯ সালে সেমিফাইনাল থেকে স্পেনের বিদায়টা অঘটন হিসেবেই বিবেচিত হয় ফুটবল বিশ্বে। সেবার গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচ জিতলেও শেষ চারের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২-০ গোলে হেরে গিয়েছিল তারা। এবার হয়তো তাই ‘চুনোপুঁটিদের’ নিয়ে একটু বেশিই সতর্ক থাকবে স্পেন। কে জানে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আর্জেন্টিনা আর ফ্রান্সের মতো তারাও এবারই হয়ে যেতে পারে ‘সব পেয়েছির দেশ’।

ওয়েম্বলিতেই কেন চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল?

২০১১ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ভেন্যু ছিল ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম। সেই আসর শেষ হওয়ার পর যখন ২০১৩ সালের ফাইনাল ভেন্যু হিসেবেও ঐ একই স্টেডিয়ামের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন হয়তো অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। কারণ এর আগে কখনোই এত অল্প সময়ের ব্যবধানে একই ভেন্যুতে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই প্রতিযোগিতার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়নি। বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে লন্ডনের এই ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামকেই কেন নির্বাচন করা হয়েছিল এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ভেন্যু হিসেবে?

Wembley-Stadium_All german final

বিশ্ববাসীকে ফুটবল নামক খেলাটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ড। ১৮৬৩ সালে ইংল্যান্ডই তৈরি করেছিল বিশ্বের প্রথম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। সেসময়ই গড়ে উঠেছিল আধুনিক ফুটবলের অনেক নিয়ম-কানুন। এবছর উদযাপিত হতে যাচ্ছে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটির ১৫০তম বার্ষিকী। ফুটবল ইতিহাসের প্রথম অ্যাসোসিয়েশন গঠনের ১৫০তম বার্ষিকীটি স্মরণীয় করে রাখার জন্যই, ব্যতিক্রমী উদাহরণ গড়ে এবছরের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ভেন্যু নির্বাচন করা হয়েছে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামকে। ২০১১ সালের জুনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে উয়েফা সভাপতি মিশেল প্লাতিনি বলেছিলেন, ‘১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনই (এফএ) ইতিহাসের সবচেয়ে পুরোনো জাতীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। আর ২০১৩ সালে এটি উদযাপন করবে তার ১৫০তম বার্ষিকী। এটা ফুটবল ইতিহাসেরই একটা স্মরণীয় মুহূর্ত। এই বছর আমরা এই খেলাটির অনেক নিয়মকানুনেরও ১৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করব। এসব মাথায় রেখে  বিশেষ উপায়ে এই বার্ষিকীটা উপযাপন করা আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করেছি। একারণেই আমরা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালটাকে ফুটবলের মাতৃভূমি ইংল্যান্ডে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশেষভাবে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে, যেটা ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের মূল স্টেডিয়াম।’ মিশেল প্লাতিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয় ইতিহাসের প্রথম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন গঠনের ১৫০তম বার্ষিকী উদযাপনটাকে সম্মান জানানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আজ এখানে সমবেত হয়েছি কারণ ১৫০ বছর আগে ইংল্যান্ডেরই কিছু মানুষ ফুটবলের নিয়ম-কানুনগুলো তৈরি করেছিলেন। আমি বিশ্বাস করি, এটা একটা সম্মান জানানোর মতো মুহূর্ত। যদি আমরা ইতিহাসকে স্মরণ না করি, তাহলে আমরা কোন ভবিষ্যত্ও পাব না।’

_67727320_zepwemb

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপনা হিসেবে নির্মান করা হয়েছিল ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম। সেসময় এটি পরিচিত ছিল এম্পায়ার স্টেডিয়াম হিসেবে। ১৯২৪ সালের ২৩ এপ্রিল এই স্টেডিয়ামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন ইংল্যান্ডের রাজা জর্জ-৫। তারপর থেকে ইংলিশ ফুটবলের মূলকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় এই স্টেডিয়াম। ২০০৩ সালে নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য ভেঙ্গে ফেলা হয় পুরোনো স্টেডিয়ামটি। নতুন স্থাপনার কাজ শেষ হয় ২০০৭ সালে। এটি ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্টেডিয়াম।

এর আগে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ছয়টি চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল। শেষবার ২০১০-১১ মৌসুমে স্বাগতিক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিল স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা।

‘সময় থমকে থাকে শচীনের সামনে’

Sachin_Tendulkar_Wallpaper_1_ovdee‘সময় যখন এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের সামনে গিয়ে নিজের শুল্ক আদায় করবে, তখন মনে হয় সে শুধু একটা মানুষকেই ছাড় দেবে। সময় শচীনের সামনে থমকে থাকে। আমরা অনেক চ্যাম্পিয়ন পেয়েছি, আমরা অনেক কিংবদন্তী পেয়েছি। কিন্তু মনে হয় আরেকজন শচীন টেন্ডুলকারকে আমরা কখনোই পাব না।’ সদ্যই একদিনের ক্রিকেটকে বিদায় জানানো ভারতের ব্যাটিং বিস্ময় শচীন টেন্ডুলকারকে এভাবেই শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছে টাইম ম্যাগাজিন।

এবছরের মার্চে এশিয়া কাপে শেষবারের মতো ওয়ানডে ম্যাচের রঙ্গিন জার্সি গায়ে টেন্ডুলকারকে দেখতে পেয়েছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। সেখানেই বাংলাদেশের বিপক্ষে ইতিহাসগড়া শতকটি করেছিলেন লিটল মাস্টার। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শততম শতকটি পূর্ণ করে শুধু নিজেকে বা দেশকে নয়, পুরো ক্রিকেট বিশ্বকেই তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন নতুন উচ্চতায়। তারপর এই অবিস্মরণীয় ও প্রায় অলঙ্ঘনীয় কীর্তিটিকে সম্মান জানিয়ে গত মে মাসে টেন্ডুলকারকে নিজেদের প্রচ্ছদে তুলে এনেছিল টাইম ম্যাগাজিন। এবার বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ারের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তির পর শচীনকে আকুণ্ঠ শ্রদ্ধা জানিয়েছে আমেরিকার শীর্ষ এই পত্রিকাটি।

শচীনের একটি অন্যতম প্রধান বিশেষত্ব এই জায়গায় যে, ২৩ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে তিনি শুধু নিজেকেই না, পুরো ক্রিকেট খেলাটাকেই নতুন উচ্চতায় পৌঁছিয়েছেন। সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন একেরপর এক বিস্ময়কর মাইলফলকের সঙ্গে। আর আগামী প্রজন্মের কাছে রেখে গিয়েছেন সেই প্রায় অলঙ্ঘনীয় রেকর্ডগুলো ভাঙ্গতে পারার আহ্বান। ক্রীড়াজগতের অন্যান্য অঙ্গনে অনেক খেলোয়াড়েরই অনেক উত্থান পতন দেখা গেছে, অনেক নতুন নতুন তারকার আবির্ভাব হয়েছে। কিন্তু ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকার যেন এক দীর্ঘস্থায়ী নাম। সময়ের যেন আসলেই থমকে আছে শচীনের সামনে। কিংবদন্তী এই ব্যাটসম্যানের এই খেলোয়াড়ী জীবনের বিস্ময়কর স্থায়ীত্ব স্মরণ করেই হয়তো টাইম ম্যাগাজিনের নিজেদের ওয়েবসাইটে বলেছে, ‘যখন শচীন টেন্ডুলকার পাকিস্তানে গিয়েছিলেন তত্কালিন ক্রিকেটের অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণের মোকাবিলা করতে তখন মাইকেল শুমাখার কোন ফরমুলা ওয়ান রেসে অংশ নেননি, ল্যান্স আর্মস্টং ফ্রান্স ট্যুরে পা রাখেননি, ডিয়েগো ম্যারাডোনা তখন শুধুই বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়ক আর পিট সাম্প্রাস তখনও একটি গ্রান্ড স্ল্যামও জেতেননি। টেন্ডুলকার যখন ইমরান খানদের দুর্দান্ত ডেলিভারিগুলো সামলাচ্ছেন, তখন কেউ রজার ফেদেরারের নামও শোনেনি। লিওনেল মেসি ছোট্ট শিশু, উসাইন বোল্ট জ্যামাইকার একটা অজানা ছেলে, বার্লিন দেয়াল তখনও অটুট, সোভিয়েত ইউনিয়ন একটা বিশাল বিশাল বড় দেশ, ড. মনমোহন সিং তখনও কোনো নেহেরুপন্থী অর্থনীতির সূচনা করেননি।’

১৯৮৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল শচীন টেন্ডুলকারের। এরপর দীর্ঘ ২৩ বছরের ক্যারিয়ারে ৪৬৩টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ৪৯টি শতক ও ৯৬টি অর্ধশতক দিয়ে সাজানো বিস্ময়কর ক্যারিয়ারে ১৮,৪২৬ রান এসেছে টেন্ডুলকারের ব্যাট থেকে। একদিনের ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বিশতক করার অবিস্মরণীয় কৃতিত্বটিও নিজের দখলে নিয়েছিলেন ভারতের ক্রিকেট দেবতা।