বৈশ্বিক উষ্ণায়ন: গাছেরাও কি যাচ্ছে ধর্মঘটে?
জীবাশ্ম জ্বালানি আহরণের তাগিদে পরিবেশের প্রতি অবিচারই করে ফেলেছে মানব সভ্যতা। কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেনের মতো গ্রীনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ উত্তপ্ত করে ফেলেছে পৃথিবীর পরিবেশ। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে গাছ। শুষে নিচ্ছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতির চরম বন্ধু গাছও যেন নিয়েছে বিরুপ অবস্থান। ফলে বিজ্ঞানীরা প্রশ্ন তুলছেন যে: গাছেরাও কী যাচ্ছে ধর্মঘটে?
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে বিগত কয়েক দশক ধরেই মধ্য ইউরোপে বসন্ত শুরু হচ্ছে আগেভাগেই। সেখানকার গাছগুলোও এতদিন সাড়া দিয়ে এসেছে প্রকৃতির এই পরিবর্তনে। আগে-ভাগেই ফোটাতে শুরু করেছে বসন্তের নতুন পাতা। ফলে কার্বন ডান অক্সাইড শুষে নেওয়ার কাজটাও তারা করেছে অনেক লম্বা সময় ধরে। এতদিন ব্যাপারটি বেশ ইতিবাচকভাবেই উপস্থাপিত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষক আলোচনাগুলোতে। কিন্তু বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ন্যাচারে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা লিখেছেন যে, গাছগুলো আগেভাগেই বসন্তের পাতা ফোটানোর হার কমিয়ে দিয়েছে। এ থেকে তাঁরা আশঙ্কা করছেন যে, এক সময় হয়তো তা পুরোপুরি বন্ধই হয়ে যেতে পারে। বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওনগোশুয়ো ফু বলেছেন, ‘আগাম বসন্তের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গাছগুলোর ধীর হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি ইঙ্গিত করে যে ভবিষ্যতে তারা আর বেশি কার্বন শুষে নিতে পারবে না। কারণ গাছগুলোর তাপমাত্রা সংবেদশীলতা কমে যাচ্ছে।’
গবেষণাটি পরিচালনার জন্য বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল বেছে নিয়েছিলেন ১২৪৫টি স্থানের খুব পরিচিত গাছগুলোকে। তাঁরা গবেষণা চালিয়েছেন ডেনমার্ক থেকে বসনিয়া পর্যন্ত মধ্য ইউরোপের অনেকগুলো স্থানে। গবেষণাটিতে তাঁরা ভাগ করেছেন দুইটি পর্যায়ে। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৪ সাল ও ১৯৯৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়কে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে গত তিন দশক ধরে গাছগুলো অগ্রিম বসন্তকে স্বাগত জানিয়ে আগেভাগেই নতুন পাতার জন্ম দিয়েছে। গড়ে প্রায় ১৩ দিন আগেভাগে শুরু হয়েছে নতুন পাতা আগমনের প্রক্রিয়া।
কিন্তু দুইটা সময়ের পর্যায়কে আলাদাভাবে বিবেচনায় নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। ১৯৯৯ থেকে ২০১৩ সাল সময় পর্যন্ত নতুন পাতা জন্মানোর হার কমে গেছে ৪০ শতাংশ হারে। ওনগোশুয়ো বলেছেন, ‘আমরা দেখেছি যে গত তিন দশকে আগাম বসন্তের প্রতি গাছদের সংবেদনশীলতা কমে গেছে। আর শীতের সময় আবহাওয়া আরও উষ্ণ থাকলে এটা আরও কমে যেতে পারে।’
শিল্পবিপ্লবের পর থেকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সেটা কোনোভাবেই যেন দুই ডিগ্রী সেলসিয়াসে না পৌঁছায়, সেজন্য তৎপরতা চালাচ্ছে জাতিসংঘ। বিজ্ঞানীদের ধারণা মধ্য ইউরোপের গাছগুলো চরম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকেই নিজেদের রক্ষা করতে চাচ্ছে।
No trackbacks yet.