আয়ারল্যান্ড থেকে গ্রীস: ইউরোর অঘটনগুলো

প্রতিটা ফুটবল প্রতিযোগিতাতেই থাকে ‘চুনোপুঁটি’ হিসেবে বিবেচিত কিছু ছোট দল। আন্ডারডগ বলেও ডাকেন অনেকে। ভাবা হয় যে, এই দলগুলোর জন্য শুধু অংশগ্রহণ করাটাই যথেষ্ট। কিন্তু এই চুনোপুঁটিরাই ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের আসরে রীতিমতো নাকাল করে ছেড়েছে অনেক বড় দলকে। ইউরো কাপের এই অঘটনগুলো নিশ্চিতভাবেই মনে করিয়ে দেয় যে শুধু সংখ্যা বাড়ানোর জন্যই অংশ নেয়না এই আন্ডারডগরা। বড় কিছু করার সামর্থ্য ও সম্ভাবনাও সুপ্ত থাকে তাদের মধ্যে।

১৯৮৮ সালের গ্রুপ পর্ব
১৯৮৮ সালের ইউরো কাপে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। আর ইংল্যান্ডের জন্য সেটা ছিল তৃতীয় আসর। একেবারেই নবাগত আয়ারল্যান্ড গ্রুপ পর্বের খেলায় ঘটিয়েছিল ইউরোর প্রথম অঘটন। ১-০ গোলে হেরে মাঠ ছেড়েছিল ইংল্যান্ড। সেসময় তাদের এই দলে ছিলেন গ্যারি লিনেকার, পিটার শেলটন, জন বার্নেসদের মতো কিংবদন্তী ফুটবলাররা। কিন্তু তারপরও হারের স্বাদ পেতে হয়েছিল ইংলিশদের। প্রথমার্ধের ৬ মিনিটে আয়ারল্যান্ডকে জয়সূচক গোলটি এনে দিয়েছিলেন আইরিশ মিডফিল্ডার রে হুজটন। এরপর পুরো খেলায় গোল শোধের আপ্রাণ চেষ্টা করলেও সফল হয়নি ইংল্যান্ড। কারণ আয়ারল্যান্ডের এই ১-০ গোলের জয়ের নেপথ্যে বেশ বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন গোলরক্ষক প্যাট্রিক বোনার।

১৯৯২ সালের গ্রুপ পর্ব আগের আসরের মতো এবারও অঘটনের শিকার হয়েছিল ইংল্যান্ড। এবার তাদেরকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল আন্ডারডগ সুইডেন। আর এই হারের ফলে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল ইংল্যান্ডকে। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে প্রথমার্ধের মাত্র ৪ মিনিটেই ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দিয়েছিলেন ডেভিড প্লাট। প্রথমার্ধটা ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই শেষ করেছিল ইংলিশরা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে চমত্কারভাবে ঘুড়ে দাঁড়ায় স্বাগতিক সুইডেন। ৫১ মিনিটে গোল শোধ করে খেলায় সমতা ফেরান ডান এরিকসন। আর ৮২ মিনিটে দলকে জয়সূচক গোলটি এনে দেন সুইডিশ স্ট্রাইকার টমাস ব্রোলিন।

১৯৯২ সালের ফাইনাল
একই আসরের ফাইনালেও অঘটনের জন্ম দিয়েছিল ডেনমার্ক। সেবারের আসরে তারা বাছাই পর্বের বাধাই পেরোতে পারেনি। কিন্তু চূড়ান্ত আসর শুরুর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে যুগোশ্লোভিয়াকে টপকে ইউরো কাপে খেলার সুযোগ পায় তারা। আর একমাস পরে তারাই পায় শিরোপা জয়ের স্বাদ। ফাইনালে তারা ২-০ গোলে হারিয়েছিল সেবারের অন্যতম ফেভারিট জার্মানিকে। প্রথমার্ধের ১৮ মিনিটে ডেনমার্কের পক্ষে প্রথম গোলটি করেছিলেন জেনসেন। আর দ্বিতীয়ার্ধের ৭৮ মিনিটে ডেনমার্কের ইতিহাসগড়া ম্যাচটির জয় নিশ্চিত করা গোলটি এসেছিল কিম ভিলফোর্টের পা থেকে।

১৯৯৬ সালের গ্রুপ পর্ব
ইউরো কাপের এই আসরে প্রথম ম্যাচটাতেই জার্মানির কাছে ২-০ গোলে হারের মুখ দেখেছিল চেক রিপাবলিক। দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ১৯৯৪ সালের ফাইনালিস্ট ইতালি। এই ম্যাচটা হয়তো চেকদের জন্য ছিল কিছু একটা করে দেখানোর। আর সেটা খুব ভালোমতোই করেছিল তারা। ইতালিকে হারিয়েছিল ২-১ গোলে। এই হারের ফলে ইতালি ছিটকে পড়ে গ্রুপ পর্ব থেকেই। আর চেক রিপাবলিক শুধু পরবর্তী পর্বেই না, চলে গিয়েছিল সেই আসরের ফাইনাল পর্যন্তও। ইতালির বিপক্ষে এই ম্যাচটাতে প্রথমার্ধের ৫ মিনিটে চেক রিপাবলিককে এগিয়ে দিয়েছিলেন পাভেল নেদভেদ। কিন্তু ১৩ মিনিট পরেই খেলায় সমতা ফেরান ইতালিয়ান স্ট্রাইকার এনরিকো চিয়েসা। ৩৫ মিনিটে আবার চেক রিপাবলিককে চালকের আসনে বসান রাদেক বেজবেল। এই গোলটাই শেষপর্যন্ত ম্যাচের জয়সূচক গোল হিসেবে থেকে যায়।

২০০৪ সালের গ্রুপ পর্ব
এই আসরে প্রথমবারের মতো বড় কোন ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পায় দক্ষিণ ইউরোপের ছোট্ট দেশ লাটভিয়া। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই চেক রিপাবলিকের কাছে হেরেছিল ২-১ গোলে। দ্বিতীয় ম্যাচে যখন তারা তিনবারের ইউরো ও তিনবারের বিশ্বকাপশিরোপাজয়ী জার্মানীর মুখোমুখি হয়েছিল, তখন সবাই হয়তো অনুমান করেছিলেন যে, গোলবন্যায় ভাসতে যাচ্ছে লাটভিয়া। কিন্তু সবাইকে হতবাক করে দিয়ে জার্মানিকে রুখে দিয়েছিল তারা। সেই ম্যাচের গোলশূণ্য ড্র ফলাফলটাই ছিল একটা বিশাল অঘটন। জার্মানিকেও এই অঘটনের মাশুল দিতে হয়েছিল ভালোভাবেই। সেবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল ইউরোপের এই ফুটবল পরাশক্তিকে।

২০০৪ সালের ফাইনাল
১৯৯২ সালে ডেনমার্ক যেমন স্বাগতিক হওয়ার ফায়দা তুলে শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিল, এক যুগ পরে ঠিক তেমনই একটা সুযোগ পেয়েছিল পর্তুগাল। সেসময়টা ছিল পর্তুগিজ তারকা লুইস ফিগো, রুই কস্তাদের সোনালি যুগ। ডেকো, রিকার্দো কারভালহোরা ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও তখন প্রতিশ্রুতিশীল তরুন তুর্কি। নিজেদের মাটিতে আয়োজিত এই আসরই ছিল পর্তুগালের ইউরোপসেরা হওয়ার সবচেয়ে সুবর্ণ সুযোগ। স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তেও চলে এসেছিল পর্তুগিজরা। কিন্তু ফাইনালে এসে অঘটনের শিকার হতে হয় স্বাগতিকদের। গ্রীসের কাছে ১-০ গোলে হেরে শেষ হয় তাদের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৭ মিনিটে গ্রীসের পক্ষে জয়সূচক গোলটি করেন অ্যাঙ্গেলোস চারিস্তেস।

  1. No trackbacks yet.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

%d bloggers like this: